দিনের ক্লান্তি শেষে যখন সন্ধ্যা নামে, মুমিনের জন্য আসে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। রাতের বেলায় কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা আমাদের সারারাতকে বরকতময় এবং নিরাপদ করতে পারে। এই আমলগুলো শুধু আত্মিক শান্তিই বয়ে আনে না, বরং আমাদের দুশ্চিন্তামুক্ত ও প্রশান্তিময় ঘুমের ব্যবস্থা করে।
ক্ষমা প্রার্থনা ও জান্নাতের সোপান
প্রতিদিন সন্ধ্যায় যে আমলটি মুমিনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হতে পারে, তা হলো 'সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার' বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের বেলায় বিশ্বাসের সাথে এটি পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগে ইন্তেকাল করে, সে জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে রাতের বেলায় এটি পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার আগে ইন্তেকাল করে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।
দোয়াটি হলো: আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানি ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লি, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন, আমি তা স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া পাপরাশি ক্ষমা করার কেউ নেই।’ (বুখারি, ৬৩০৬)
অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা ও আল্লাহর প্রশংসা
সন্ধ্যায় কিছু নির্দিষ্ট জিকির ও দোয়া পাঠ করা সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার ঢাল হিসেবে কাজ করে-
১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি: প্রতিদিন সন্ধ্যায় ১০০ বার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' (অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি) পাঠ করলে কিয়ামতের দিন এর চেয়ে উত্তম আমলকারী আর কেউ থাকবে না। (মুসলিম,২৬৯২)
বিপদাপদ থেকে মুক্তির দোয়া: যেকোনো অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী।
‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।’
অর্থ: ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম, ২৭০৯)
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা: সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।’
অর্থ: ‘এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ এই আমলের বিনিময়ে দশটি সওয়াব লাভ হয়, দশটি গুনাহ মাফ হয় এবং দশ স্তর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। (আবু দাউদ, ৫০৭৭)
আত্মিক প্রশান্তি ও স্বাবলম্বীতার জন্য দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমা (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছিলেন, সকালে বা সন্ধ্যায় যেন এই দোয়াটি পাঠ করা হয়।
ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন।
অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।’
এই আমলগুলো প্রতিদিন সন্ধ্যায় পালন করার মাধ্যমে একজন মুমিন যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে, তেমনি দুনিয়ার সকল বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাবে। ইনশাআল্লাহ। আপনার সন্ধ্যা হোক প্রশান্তিময়, আর রাত কাটুক নিরাপদে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক