প্রশ্ন: বর্তমানে আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেক বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে নামমাত্র অর্থ ধার্য করা হয় যেমন: ৭, ১৪, ২১ টাকা, এমনকি ৩ টাকা। অথচ হাদিসে সর্বনিম্ন দেনমোহরের পরিমাণ ১০ দিরহামের কথা বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, ১০ দিরহামের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের মুদ্রায় কত এবং এর চেয়ে কম দেনমোহর ধার্য করলে বিয়ে সহিহ হবে কি না? যদি সহীহ হয়, তবে এর বিধান কী?
উত্তর: দেনমোহর হলো বিয়ের একটি অপরিহার্য শর্ত, যা স্ত্রীর প্রতি স্বাদমীর একটি আর্থিক সম্মাননা। ইসলামে এর একটি সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে, যাতে নারীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। হাদিস অনুযায়ী, দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো দশ দিরহাম।
১০ দিরহামের মূল্যমান
ইসলামি ফিকাহ অনুযায়ী, ১০ দিরহাম রূপার মূল্যের সমতুল্য। দেশীয় হিসাব অনুযায়ী, এর পরিমাণ হলো দুই ভরি বা দুই তোলা এবং দশ আনা রূপা। বর্তমানে প্রতি ভরি রূপার বাজারমূল্য প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা বা এর কাছাকাছি হতে পারে। সেই হিসেবে, দুই ভরি দশ আনা রূপার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকার মতো। এই মূল্য বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তনশীল হতে পারে, তাই সঠিক হিসাবের জন্য রূপার বর্তমান বাজারমূল্য জেনে নেওয়া উত্তম।
দেনমোহর কম হলে বিয়ের বিধান
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে, যদি কেউ ১০ দিরহামের চেয়ে কম দেনমোহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে কি সেই বিয়ে সহিহ হবে? ফিকাহ শাস্ত্রের আলোকে এর উত্তর হলো হ্যাঁ, বিয়ে সহিহ হয়ে যাবে।দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ১০ দিরহামের কম দেনমোহরে সম্মত হন, তবুও বিয়েটি বৈধ বলে গণ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে স্বামীর ওপর শরীয়তসম্মতভাবে সর্বনিম্ন পরিমাণ, অর্থাৎ ১০ দিরহামের সমমূল্য দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে পরিশোধ করা আবশ্যক।
উদাহরণস্বরূপ, যদি দেনমোহর ২১ টাকা ধার্য করা হয়, তবে এই বিয়ে শুদ্ধ। কিন্তু স্বামীকে তার স্ত্রীকে ১০ দিরহামের সমপরিমাণ অর্থ, অর্থাৎ দুই ভরি দশ আনা রূপার মূল্যের টাকা দেনমোহর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। এই বিধানটি নারীর অধিকার রক্ষার জন্য এবং দেনমোহরের উদ্দেশ্য পূরণ নিশ্চিত করার জন্য দেওয়া হয়েছে।
[তথ্যসূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/৩০৩), ফাতাওয়া তাতারখানিয়া (১/৩৭৫), আলবাহরুর রায়েক (৩/১৪৩) এবং আদ্দুররুল মুখতার (৩/১০২)]