বাংলাদেশে ২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদযাপিত হতে পারে ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি তারিখে। যা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত ও শ্রদ্ধার। তবে চূড়ান্ত তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল।
১২ রবিউল আউয়াল এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন ইসলামের শেষ নবি, বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আশ্চর্যের বিষয়, একই দিনে তিনি ইন্তেকালও করেন। তাই দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে স্মরণ ও শ্রদ্ধার, আবেগ ও ভালোবাসার।
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত পরিবারে মা আমিনার কোলজুড়ে জন্ম নেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ তাঁর জন্মের আগেই ইন্তেকাল করেন, মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। সেই এতিম শিশুই একদিন হয়ে উঠেন বিশ্বের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয়, প্রভাবশালী ও ন্যায়নিষ্ঠ পুরুষ।
আল্লাহতায়ালা তাঁকে প্রেরণ করেন রহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে সারা বিশ্বজগতের জন্য রহমত ও করুণার উৎস রূপে। নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরব সমাজ ছিল চরম অবক্ষয়ের মধ্যে। পৌত্তলিকতা, নারী অবমাননা, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়নের করাল গ্রাসে আচ্ছন্ন ছিল মানবতা। সেই সময়ের সমাজকে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতার যুগ।
এই অন্ধকার যুগেই তিনি আগমন করেন সত্য, শান্তি ও ন্যায়ের আলোকবর্তিকা হয়ে। শৈশব থেকেই তিনি সততা, ধৈর্য, সহমর্মিতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য পরিচিত ছিলেন। আরব সমাজ তাঁকে আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত করে।
৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি প্রথম ওহি নাজিল হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় ইসলামের নবযাত্রা একটি ঐশী ধর্মের উদ্ভব, যা আজ প্রায় ২০০ কোটি অনুসারীর বিশ্বাস ও জীবনপদ্ধতি।
পরবর্তী ২৩ বছর তিনি মহান আল্লাহর পথনির্দেশনায় ইসলামের আহ্বান ছড়িয়ে দেন। দুঃসহ প্রতিকূলতা, নিরবচ্ছিন্ন ত্যাগ ও অমানুষিক কষ্ট সহ্য করেও তিনি মানবতার কল্যাণে ইসলামের আলো পৃথিবীর কোণে কোণে ছড়িয়ে দেন।
ঈদে মিলাদুন্নবি উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান নবিজির স্মৃতিচারণায় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় মেতে উঠেন। মসজিদে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও জীবন গঠনের আলোচনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। এ দিনটি শুধুই আনন্দ বা উৎসবের নয় বরং বিশ্বনবির আদর্শ ও জীবনচর্যার অনুসরণে নিজেকে প্রস্তুত করার এক মহান উপলক্ষ।