
বিশ্বাসীদের জন্য দুষ্ট জিন ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত থাকার বেশকিছু উপায় ইসলামে বাতলানো হয়েছে। এগুলো নিয়মিত আমল করলে আল্লাহর রহমতে জিনদের খারাপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্রথমত. জিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যখনই শয়তান তোমাদের কোনো প্ররোচনা দেয়, সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আশ্রয়-প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি (আশ্রয়-প্রার্থনা) শ্রবণকারী এবং সম্যক জ্ঞাত।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি দোয়ার কথা বলেছেন, যা কোথাও যাওয়ার পর বিপদে পড়লে সেখান থেকে প্রস্থান করার আগ পর্যন্ত কোনো ক্ষতি স্পর্শ করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত. প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করা। এই দুটি সুরা বিশেষভাবে জিন ও অন্যান্য অনিষ্ট থেকে হেফাজত লাভের অত্যন্ত কার্যকরী।
তৃতীয়ত. রাতে ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়বে, সারা রাত শয়তান তার ধারেকাছেও আসতে পারবে না।
চতুর্থত. ঘরে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে বিরান কবরস্থানের মতো বানিও না। যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, শয়তান সেই ঘরের কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
পঞ্চমত. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ঘুমানোর আগে পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেন, এর অর্থ হলো এই দুই আয়াত পাঠকারী জিন ও মানুষের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।
ষষ্ঠত. সুরা মুমিনের প্রথম তিন আয়াত এবং আয়াতুল কুরসি সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকা যায়। যদিও এ সংক্রান্ত হাদিসের সনদ দুর্বল বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এর বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অপরিসীম।
সপ্তমত. আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পাঠ করবে, সে দশজন গোলাম আজাদ করার সাওয়াব পাবে, তার জন্য একশটি নেকি লেখা হবে এবং একশটি গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
অষ্টমত. হাদিসে বর্ণিত শব্দে ও পদ্ধতিতে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার অথবা সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম ইত্যাদি। কারণ যে অন্তর আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ থাকে, সেখানে শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
নবমত. সর্বদা ওজু অবস্থায় থাকা এবং সময়মতো সালাত আদায় করা। এমন ব্যক্তির অন্তর পবিত্র থাকে এবং আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকে।
দশমত. বেশি কথা বলা, বেশি খাওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম জিনিস বারবার দেখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) কুদৃষ্টিকে ইবলিসের বিষাক্ত তীর বলেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কুদৃষ্টি ত্যাগ করে, সে তার অন্তরে ঈমানের স্বাদ অনুভব করে। এই কাজগুলো শয়তানকে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেয়।
এই দশটি উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর রহমতে জিন ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। নিয়মিত আমল ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসাই এর মূল চাবিকাঠি।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক