
ইসলামি শরিয়তে জিনদের অস্তিত্ব বাস্তব এবং কোরআন-হাদিসে তা বারবার এসেছে। বহু মানুষের অভিযোগ থাকে যে, তাদের ওপর কোনো জিন বা অদৃশ্য সত্তা প্রভাব বিস্তার করছে বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এসব বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, যা জানা একজন মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআনুল কারিমের সুরা আর-রাহমানের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা জান্নাতের হুরদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সেখানে (জান্নাতে) রয়েছে আয়তলোচনা রমণীরা, যাদের আগে কোনো মানুষ কিংবা কোনো জিন স্পর্শ করেনি।’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার এই বাণী প্রমাণ করে যে, জিনদের নারী ও পুরুষ উভয়ই মানব নারী-পুরুষের সঙ্গে সহবাস করতে সক্ষম।’
এই প্রেক্ষাপটে, ইসলামি শরিয়তে জিন ও মানুষের সহবাসের বিষয়টিকে প্রধানত তিনটি অবস্থায় বিবেচনা করা হয়-
১. স্বপ্নে সহবাসের অনুভূতি: ঘুমের মধ্যে যদি কোনো নারী বা পুরুষ এমন কিছু অনুভব করে যা স্বামী বা স্ত্রীর সহবাসের সময় হয়ে থাকে এবং ঘুম ভাঙার পর বীর্য (শুক্রাণু) দেখতে পায়, তাহলে তার ওপর গোসল ফরজ হবে। আর যদি বীর্য দেখতে না পায়, তবে তা সাধারণ স্বপ্নদোষ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে গোসল ফরজ হবে না।
২. জিনের মানুষের আকৃতিতে সহবাস: যদি কোনো জিন বা পরি মানুষের আকৃতি ধারণ করে কোনো নারী বা পুরুষের সঙ্গে সহবাস করে, তাহলে বীর্যপাত হোক বা না হোক, এমতাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। কারণ এমনটা বাস্তবে বিরল হলেও ইসলামি ফিকহে তা সম্ভব হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. অদৃশ্য জিনের সহবাস: যদি কোনো জিন অদৃশ্য থেকে কোনো জাগ্রত মানুষের সঙ্গে সহবাস করে এবং সেই অনুভূতিও সহবাসের মতোই হয়, তাহলে চার মাজহাবের অধিকাংশ ফকিহের মতানুসারে, যদি বীর্যপাত ঘটে তবেই গোসল ফরজ হবে, অন্যথায় নয়।
এ বিষয়ে শরিয়তের নির্দেশনা স্পষ্ট। যেকোনো অবস্থায় শুক্রাণু নির্গত হলে গোসল ফরজ হয়। তবে এমন ঘটনায় মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে। তাই এসব বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ইসলামি শরিয়ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়, যা আমাদের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক