এঁকেছেন মাসুম
আবুল আলী কোরবানির পশু কেনার জন্য গাবতলীর হাটে গিয়ে দেখেন সব পশু কথা বলা শিখে গেছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন, ভালোই হলো। এবারের পশু কেনার সময় পশুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কেনা যাবে। দেরি না করে তিনি কোরবানির জন্য পশু দেখতে শুরু করলেন। প্রথমে এগিয়ে গেলেন এক মোটাতাজা গরুর দিকে।
আবুল: কী রে গরু, কেমন আছিস?
গরু: তুই-তুকারি করেন কেন আংকেল? গরু বলে আমাদের কি কোনো মানসম্মান নেই?
আবুল: সরি, ভুল হয়ে গেছে। কথা বলা শেখার পর তোদের মানসম্মান যে একটু বেড়েছে তা স্বীকার করতেই হয়। আচ্ছা এবার আপনি করে বলছি। গরু সাহেব কেমন আছেন?
গরু: এই তো লাইনে এসেছেন। আমি খুব একটা ভালো নেই।
আবুল: তাই নাকি? তা ভালো নেই কেন, কোরবানির টেনশনে?
গরু: আসলে সে জন্য নয়। কয়েক মাস ধরে আমার শরীরটা মোটেই ভালো যাচ্ছে না।
আবুল: অবাক কাণ্ড! আপনি এত স্বাস্থ্যবান অথচ বলছেন শরীর ভালো নেই। ঘটনাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
গরু: মোটাতাজা হলেই যে তার স্বাস্থ্য ভালো হবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। এই যে আমার এত স্বাস্থ্য দেখছেন এগুলো কৃত্রিমভাবে করা। চার-পাঁচ মাস ধরে আমার স্বাস্থ্য ফোলানোর জন্য মালিক আমার শরীরে অনবরত নানা ধরনের হরমোন ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছেন।
আবুল: তাই নাকি?
গরু: তাহলে আর বলছি কী। সেই হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই সারা দিন শরীরটা শুধু ম্যাজ ম্যাজ করে। কিচ্ছু ভালো লাগে না।
আবুল: খাইছে আমারে। তাহলে আপনার এই ইনজেকশন দেওয়া গোশত খেলে আমার অবস্থা কী হবে কে জানে।
অগত্যা আবুল আলী সাহেব সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এলেন। তিনি এবার সিদ্ধান্ত নিলেন, একটা মোটা গরু কেনার বদলে দুটি শুকনা গরু কিনলেই চলবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি একটা শুকনা গরু দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলেন।
আবুল: গরু সাহেব, কেমন আছেন?
গরু: আপনে আন্ধা নাকি আংকেল?
আবুল: এমন প্রশ্ন করলেন কেন?
গরু: না কইরা উপায় আছে। আপনে তো আমারে খেয়াল কইরাই দেখেন নাই। দেখলে বুঝতেন আমি গরু না, ষাঁড়।
আবুল: ও সরি সরি! আমি আসলেই খেয়াল করে দেখিনি। তা আপনাকে বেশ শুকনা দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই আপনার মালিক আপনাকে ফোলানোর জন্য কোনো হরমোন ইনজেকশন দেয়নি?
ষাড়: কী সব উল্টাপাল্টা বলেন আংকেল। আমার মালিক বাঁইচা থাকলে না আমারে হরমোন দেবে।
আবুল: মালিক বেঁচে নেই? আহারে! তা ভাইজানের কী হইছিল?
ষাড়: তার কিছু হয় নাই। হইছিল আমাগো খোঁয়াড়ের গরুগুলোর।
আবুল: আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ষাড়: আচ্ছা সব বুঝাইয়া বলতাছি। আমার মালিকের মোট গরু ছিল দশটা। আর আমি একাই ষাঁড়। সব মিলিয়ে মোট ১১ জন। কী আরামে ছিলাম বুঝতেই পারতাছেন। কিন্তু একদিন আমাগো খোঁয়াড়ের সব গরুকে অ্যানথ্রাক্স আক্রমণ করল। একে একে আমার চোখের সামনে আমার সব প্রেমিকা তাদের জীবন দিল। সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আমি সহ্য করতে পারলেও আমার মালিক পারলেন না। শেষ গরুটা মরার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে বসলেন।
আবুল: হাউ প্যাথেটিক। তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম না। আপনার মালিক না থাকলে আপনাকে গাবতলীর হাটে আনল কে?
ষাড়: আমাকে কেউ নিয়ে আসে নাই আংকেল। আমি একাই এখানে আসছি।
আবুল: তার মানে?
ষাড়: আমার দশ-দশটা প্রেমিকার একটাও বেঁচে নাই। তাই ভাবলাম, এই জীবন রেখে আর লাভ কী। তাই আত্মহত্যা করার জন্য গাবতলী চলে এলাম।
আবুল আলী সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। আস্তে করে সেখান থেকে কেটে পড়ে মনে মনে বললেন, ‘অ্যানথ্রাক্স এলাকার গরু। এটা খেলে কী থেকে কী হয় কে জানে। তার চেয়ে না কেনাই ভালো।’
এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, টাকা বেশি লাগে লাগুক, এবার একটা উটই কিনে ফেলবেন। উট মোটাতাজা করার জন্য কেউ হরমোন দেয় না, আবার এটাতে অ্যানথ্রাক্সের ভয়ও নেই। অতঃপর রওনা দিলেন উট মার্কেটের দিকে। একটু পরেই তিনি উটের মার্কেটে চলে এলেন। এদিক ওদিক চোখ রাখতেই একটা উট তার পছন্দ হয়ে গেল। আরব দেশের প্রাণী উট। বাংলা কথা বোঝে কি না বোঝে ভেবে তিনি বললেন, ‘আহলান ওয়া সাহলান।’
উট: আপ কী বলতাছেন হাম কুছ নেহি বুঝতে পারতাছি।
আবুল আলী উটের মুখে সেমি বাংলা সেমি হিন্দি শুনে কিছুটা অবাক হয়ে মনে মনে ভাবলেন, আরে এটা দেখি হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কথা বলে। তিনি উটকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আরব দেশীয় উট ভেবে আরবিতে শুরু করেছিলাম। এখন দেখি আপনি হিন্দি মেশানো বাংলাতে কথা বলেন। তা আপনার কান্ট্রি কী?’
উট: আমার কান্ট্রি বাংলাদেশ।
আবুল অবাক হয়ে বললেন, ‘উট আবার বাংলাদেশি হয় নাকি?’
উট বললেন, ‘আসলে আগে বাংলাদেশে উট হতো না। কিন্তু এখন বাংলাদেশে উটের ফার্ম আছে। সেখানে উটের লালন-পালন করা হয়। তেমনই এক ফার্মে আমার জন্ম। তাই বললাম আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি।’
আবুল আলী সাহেব এবার কিছুটা হতাশ হয়ে উটের বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘বাড়িতে নেওয়ার পর উট যদি বাংলায় কথা বলে তাহলে তো আর ইজ্জত থাকবে না। তার চেয়ে ঝামেলা না করে একটা খাসি নিয়ে যাই। যে যা বলুক, এবার খাসিই কোরবানি দেব।’