ঢাকা ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
English

পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ইলিশ-পাঙাশের প্রেম

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ইলিশ-পাঙাশের প্রেম

নদীর মাছেরা যদি সিনেমা বানাত তাহলে গল্প কিন্তু এমনই হতো। লিখেছেন রুহুল আমিন ভুইয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে নায়ক পাঙাশ আর নায়িকা ইলিশের সামনা-সামনি ধাক্কা। ইলিশের হাত থেকে পড়ে গেল বই।

ইলিশ: এই যে মিস্টার, দেখে চলতে পারেন না?

পাঙাশ: (ইলিশের বই তুলে দিতে দিতে) সরি ম্যাডাম, নদীর পানি এত ময়লা যে খালি চোখে কিছুই দেখতে পাই না। আচ্ছা আপনার নাম জানতে পারি?

ইলিশ: হাউ ডেয়ার ইউ? ধাক্কা দিয়ে আবার নাম জানতে চান? যত্ত সব কম পানির মাছ এসে পড়েছে বেশি পানিতে... 
মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেল নায়িকা ইলিশ আর অপমানিত মুখে দাঁড়িয়ে রইল নায়ক পাঙাশ। কয়েক দিন পর বিপদে পড়ল নায়িকা ইলিশ। বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় আটকা পড়ল এক জেলের জালে।

ইলিশ: ছেড়ে দে, ছেড়ে দে শয়তান। তোর ঘরে কি আর ইলিশ মাছ নেই?

জেলে: চুপ...একটা কথা বলবি না।

ইলিশ: শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি; কিন্তু মন পাবি না।

জেলে: তোর দেহটাই দরকার সুন্দরী, কেজিতে হাজার টাকা...হু হু হা হা।

ইলিশ: (সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার) বাঁচাও, বাঁচাও, কে আছো বাঁচাও...গুন্ডারা আমাকে তুলে নিয়ে গেল।
অনেক দূরে নায়ক পাঙাশ তখন ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করছিল। ইলিশের চিৎকারে মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে সে হাজির হলো ঘটনাস্থলে। দাঁত দিয়ে কেটে দিল জাল, মুক্ত করল নায়িকা ইলিশকে।

ইলিশ: কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব! আপনি না থাকলে যে আজ কী হতো। (আগের ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় একটু ইতস্তত বোধ করে) ইয়ে...আসলে মাছ চিনতে আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। আমাকে ক্ষমা করুন প্লিজ। আমি ইলিশ, আপনি?

পাঙাশ: আমি পাঙাশ।

ইলিশ: দেশি, না আফ্রিকান... 
এভাবেই পরিচয়...পরিণয়...অতঃপর গান...‘ইলিশ লো...তোর রুপালি রুপালি আঁশ...বাজারেতে কিনতে গেলে খাওয়া লাগে বাঁশ...ইলিশ লো...’ 
নেচে-গেয়ে চলতে থাকল ইলিশ আর পাঙাশের প্রেম। এদিকে সময়ের পরিক্রমায় বের হলো পাঙাশের রেজাল্ট।

পাঙাশ: (দৌড়ে ঘরে ঢুকে চিৎকার দিয়ে) মা মা, আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি।

মা পাঙাশ: আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকত...(চোখে পানি)।

পাঙাশ: বাবার কী হয়েছিল মা?

মা পাঙাশ: তুই যখন পোনা ছিলি, তখন মানুষেরা তোর বাবাকে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে।

পাঙাশ: (চোখ মুছতে মুছতে) মাছ হয়ে ভালো রেজাল্ট করে লাভ নেই মা, শেষমেশ মানুষের পেটে যেতে হয়...
এদিকে ইলিশ তার বাবার সঙ্গে পাঙাশের পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এল ঘরে। কিন্তু মেয়ের প্রেমিকের প্রজাতি দেখে মনঃক্ষুণ্ন হলেন বাবা।

ইলিশের বাবা: সামান্য দেশি পাঙাশ হয়ে কোন সাহসে তুমি আমার মেয়ের দিকে পাখনা বাড়িয়েছ?

পাঙাশ: ভালোবাসা কখনো মাছের প্রজাতি দেখে না। ইলিশকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

ইলিশের বাবা: তুমি জানো, আমার মেয়ের লেজের দাম দিয়ে তোমার মতো কয়েক ডজন পাঙাশকে বাজার থেকে কিনে নেওয়া যাবে।

পাঙাশ: ইলিশ সাহেব, টাকা দিয়ে মাছ কেনা যায়, কিন্তু মাছের ভালোবাসা কেনা যায় না। আমরা গরিব মাছ হতে পারি, কিন্তু ছোট মাছ নই।

ইলিশের বাবা: আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে তোমাকে ইলিশের মতো চলাফেরা করতে হবে। শরীরে ইলিশের ঘ্রাণ থাকতে হবে। নইলে এ বাড়ির দরজা তোমার জন্য বন্ধ।

শুনে নায়ক পাঙাশের তৎক্ষণাৎ প্রস্থান। বাবা ইলিশ ঘরে বন্দি করলেন তার মেয়েকে।

ইলিশের বাবা: আজ থেকে তোমার বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ। আমার বন্ধুর ছেলে রুইয়ের সঙ্গে শিগগিরই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

ইলিশ: না বাবা, না! পাঙাশকে আমি ভালোবাসি। পাঙাশকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওই ফরমালিন দেওয়া পচা রুইকে আমি মেনে নিতে পারব না।

ইলিশের বাবা: (লেজ দিয়ে মেয়ের গালে চটাশ করে চড় মেরে) আমার মুখের ওপর আর একটা কথা না। তোমার এত অধপতন হবে জানলে জাটকা থাকতেই গলা টিপে মেরে ফেলতাম।

ওদিকে নায়ক পাঙাশ এত সহজে হাল ছাড়ল না। অনেক পরিশ্রম করে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে ফেলল। এরপর সেই টাকা দিয়ে বাজার থেকে ইলিশের গন্ধওয়ালা দামি ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে কিনে আনল। শরীরে স্প্রে করা মাত্র পাঙাশের শরীর থেকে ভুরভুর করে ইলিশের গন্ধ বের হলো। শুধু তা-ই না, আশপাশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মেয়ে মাছ পাগলের মতো তার দিকে ছুটে আসা শুরু করল! 

পাঙাশের এই বুদ্ধি কাজে দিল। ইলিশের বাবা পাঙাশের সঙ্গে ইলিশের বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হলো গুন্ডা রুই মাছ। সে তার দলবল নিয়ে অপহরণ করে নিয়ে এল নায়িকা ইলিশ আর তার বাবাকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল দুজনের শরীর। গুন্ডাদের আস্তানায়।

রুই: সোজা বড়শিতে মাছ না উঠলে তাতে কেঁচো দিতে হয়, ইলিশ সাহেব। আজ থেকে ইলিশ আমার, ইলিশের সব সম্পত্তিও আমার...মু হু হু হু হা হা হা।

ইলিশের বাবা: তোর জিব আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব বদমাশ। ইলিশ দেখেছিস, ইলিশের কাঁটা দেখিসনি।

রুই: মু হু হু হু হা হা হা...সে সুযোগ তুই পাবি না। তোকে খুন করে তোর লাশ দিয়ে সরষে ইলিশ রান্না করা হবে। মু হু হু হু হা হা হা। তোর মেয়ে ইলিশ এখন আমার সামনে নাচবে...এই কে আছিস, ইলিশের বাঁধন খুলে দে...

খুলে দেওয়া হলো ইলিশের বাঁধন। ইলিশ আবার আধুনিক মেয়ে, মুক্ত হয়েই সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল Gundara amake tule niyese, monta onek kharap। লোকেশনে লিখে দিল ‘Rui er astana’। তারপর গান গেয়ে গেয়ে নাচা শুরু করল।

এদিকে স্ট্যাটাস দেখা মাত্র পাঙাশ ছুটে এল রুইয়ের আস্তানায়। দেয়াল ভেঙে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল গুন্ডা রুইয়ের ওপর।

পাঙাশ: শয়তান, আজ আমি তোকে মেরেই ফেলব।

গুন্ডারা গুলি করা শুরু করল ঢিশা...ঢিশা...ঢিশা... (৭০ রাউন্ড গুলি, নিহত শূন্য)। নায়ক পাঙাশও গুলি করা শুরু করল ঢিশা... ঢিশা (২ রাউন্ড গুলি, নিহত ৭০)। সব গুন্ডাকে মারার পর বাকি রইল শুধু রুই। অন্য গুন্ডাদের হাতের নিশানা খারাপ হলেও রুইয়ের হাতের নিশানা ভালো। নায়কের দিকে তাক করে গুলি করল সে। ঢিশুয়া...কিন্তু, ইলিশের বাবা দৌড়ে এসে বুক পেতে দিলেন পাঙাশের সামনে। গুলি এসে লাগল তার পেটিতে। এমন সময় পুলিশ মাছের আগমন। ‘আইন নিজের পাখনাতে তুলে নেবেন না’ বলে গ্রেপ্তার করা হলো গুন্ডা রুইকে। 

বাবা ইলিশ (রক্তমাখা পেটিতে ধরে): বাবা পাঙাশ, আমার মেয়েকে তুমি দেখে রেখ, বাবা। ওকে তোমার পাখনাতে দিয়ে গেলাম। আ আ আহ্।
ইলিশ: না বাবা, তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না, আ আ না আ আ।

অতঃপর পাঙাশ আর ইলিশ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। কিছুদিন পর পাঙাশ+ইলিশ থেকে ‘পালিশ’ নামক নতুন মৎস্য প্রজাতি পেল বাংলাদেশ।

কলি

একদিন গরুর হাটে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
একদিন গরুর হাটে
এঁকেছেন মাসুম

আবুল আলী কোরবানির পশু কেনার জন্য গাবতলীর হাটে গিয়ে দেখেন সব পশু কথা বলা শিখে গেছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন, ভালোই হলো। এবারের পশু কেনার সময় পশুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কেনা যাবে। দেরি না করে তিনি কোরবানির জন্য পশু দেখতে শুরু করলেন। প্রথমে এগিয়ে গেলেন এক মোটাতাজা গরুর দিকে।
আবুল: কী রে গরু, কেমন আছিস?
গরু: তুই-তুকারি করেন কেন আংকেল? গরু বলে আমাদের কি কোনো মানসম্মান নেই?
আবুল: সরি, ভুল হয়ে গেছে। কথা বলা শেখার পর তোদের মানসম্মান যে একটু বেড়েছে তা স্বীকার করতেই হয়। আচ্ছা এবার আপনি করে বলছি। গরু সাহেব কেমন আছেন?
গরু: এই তো লাইনে এসেছেন। আমি খুব একটা ভালো নেই।
আবুল: তাই নাকি? তা ভালো নেই কেন, কোরবানির টেনশনে?
গরু: আসলে সে জন্য নয়। কয়েক মাস ধরে আমার শরীরটা মোটেই ভালো যাচ্ছে না।
আবুল: অবাক কাণ্ড! আপনি এত স্বাস্থ্যবান অথচ বলছেন শরীর ভালো নেই। ঘটনাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
গরু: মোটাতাজা হলেই যে তার স্বাস্থ্য ভালো হবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। এই যে আমার এত স্বাস্থ্য দেখছেন এগুলো কৃত্রিমভাবে করা। চার-পাঁচ মাস ধরে আমার স্বাস্থ্য ফোলানোর জন্য মালিক আমার শরীরে অনবরত নানা ধরনের হরমোন ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছেন।
আবুল: তাই নাকি?
গরু: তাহলে আর বলছি কী। সেই হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই সারা দিন শরীরটা শুধু ম্যাজ ম্যাজ করে। কিচ্ছু ভালো লাগে না।
আবুল: খাইছে আমারে। তাহলে আপনার এই ইনজেকশন দেওয়া গোশত খেলে আমার অবস্থা কী হবে কে জানে।
অগত্যা আবুল আলী সাহেব সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এলেন। তিনি এবার সিদ্ধান্ত নিলেন, একটা মোটা গরু কেনার বদলে দুটি শুকনা গরু কিনলেই চলবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি একটা শুকনা গরু দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলেন।
আবুল: গরু সাহেব, কেমন আছেন?
গরু: আপনে আন্ধা নাকি আংকেল?
আবুল: এমন প্রশ্ন করলেন কেন?
গরু: না কইরা উপায় আছে। আপনে তো আমারে খেয়াল কইরাই দেখেন নাই। দেখলে বুঝতেন আমি গরু না, ষাঁড়।
আবুল: ও সরি সরি! আমি আসলেই খেয়াল করে দেখিনি। তা আপনাকে বেশ শুকনা দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই আপনার মালিক আপনাকে ফোলানোর জন্য কোনো হরমোন ইনজেকশন দেয়নি?
ষাড়: কী সব উল্টাপাল্টা বলেন আংকেল। আমার মালিক বাঁইচা থাকলে না আমারে হরমোন দেবে।
আবুল: মালিক বেঁচে নেই? আহারে! তা ভাইজানের কী হইছিল?
ষাড়: তার কিছু হয় নাই। হইছিল আমাগো খোঁয়াড়ের গরুগুলোর।
আবুল: আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ষাড়: আচ্ছা সব বুঝাইয়া বলতাছি। আমার মালিকের মোট গরু ছিল দশটা। আর আমি একাই ষাঁড়। সব মিলিয়ে মোট ১১ জন। কী আরামে ছিলাম বুঝতেই পারতাছেন। কিন্তু একদিন আমাগো খোঁয়াড়ের সব গরুকে অ্যানথ্রাক্স আক্রমণ করল। একে একে আমার চোখের সামনে আমার সব প্রেমিকা তাদের জীবন দিল। সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আমি সহ্য করতে পারলেও আমার মালিক পারলেন না। শেষ গরুটা মরার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে বসলেন।
আবুল: হাউ প্যাথেটিক। তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম না। আপনার মালিক না থাকলে আপনাকে গাবতলীর হাটে আনল কে?
ষাড়: আমাকে কেউ নিয়ে আসে নাই আংকেল। আমি একাই এখানে আসছি।
আবুল: তার মানে?
ষাড়: আমার দশ-দশটা প্রেমিকার একটাও বেঁচে নাই। তাই ভাবলাম, এই জীবন রেখে আর লাভ কী। তাই আত্মহত্যা করার জন্য গাবতলী চলে এলাম।
আবুল আলী সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। আস্তে করে সেখান থেকে কেটে পড়ে মনে মনে বললেন, ‘অ্যানথ্রাক্স এলাকার গরু। এটা খেলে কী থেকে কী হয় কে জানে। তার চেয়ে না কেনাই ভালো।’ 
এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, টাকা বেশি লাগে লাগুক, এবার একটা উটই কিনে ফেলবেন। উট মোটাতাজা করার জন্য কেউ হরমোন দেয় না, আবার এটাতে অ্যানথ্রাক্সের ভয়ও নেই। অতঃপর রওনা দিলেন উট মার্কেটের দিকে। একটু পরেই তিনি উটের মার্কেটে চলে এলেন। এদিক ওদিক চোখ রাখতেই একটা উট তার পছন্দ হয়ে গেল। আরব দেশের প্রাণী উট। বাংলা কথা বোঝে কি না বোঝে ভেবে তিনি বললেন, ‘আহলান ওয়া সাহলান।’
উট: আপ কী বলতাছেন হাম কুছ নেহি বুঝতে পারতাছি।
আবুল আলী উটের মুখে সেমি বাংলা সেমি হিন্দি শুনে কিছুটা অবাক হয়ে মনে মনে ভাবলেন, আরে এটা দেখি হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কথা বলে। তিনি উটকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আরব দেশীয় উট ভেবে আরবিতে শুরু করেছিলাম। এখন দেখি আপনি হিন্দি মেশানো বাংলাতে কথা বলেন। তা আপনার কান্ট্রি কী?’
উট: আমার কান্ট্রি বাংলাদেশ।
আবুল অবাক হয়ে বললেন, ‘উট আবার বাংলাদেশি হয় নাকি?’
উট বললেন, ‘আসলে আগে বাংলাদেশে উট হতো না। কিন্তু এখন বাংলাদেশে উটের ফার্ম আছে। সেখানে উটের লালন-পালন করা হয়। তেমনই এক ফার্মে আমার জন্ম। তাই বললাম আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি।’ 
আবুল আলী সাহেব এবার কিছুটা হতাশ হয়ে উটের বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘বাড়িতে নেওয়ার পর উট যদি বাংলায় কথা বলে তাহলে তো আর ইজ্জত থাকবে না। তার চেয়ে ঝামেলা না করে একটা খাসি নিয়ে যাই। যে যা বলুক, এবার খাসিই কোরবানি দেব।’

জঙ্গলে একদিন

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
জঙ্গলে একদিন

কয়েক দিন আগের কথা। আফ্রিকার এক জঙ্গলে সবে বিকেল নেমেছে। জঙ্গলের বাসিন্দা জিরাফের মন খারাপ। প্রেমিকা কিছুক্ষণ আগে তাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মন ভালো করার একটাই উপায় জানা আছে তার। সেটা হচ্ছে গাঁজা। গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকলে মনের দুঃখ নিমিষে উধাও হয়ে যায়। তাই সময় নষ্ট না করে গাঁজা ধরালেন তিনি। মাত্র কল্কেতে একটান দিয়েছেন, এমন সময় খরগোশ হাজির।
খরগোশ: ছিঃ জিরাফ। এইটা কী করছ?
জিরাফ চুপ। গাঁজা ধরানোয় লজ্জা লাগছে তার।
খরগোশ বলল, এর চেয়ে চলো বনের ভেতর একটু দৌড়াদৌড়ি করি। দৌড়ালে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
জিরাফ গাঁজার কল্কে রেখে দিয়ে খরগোশের সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করল। তারা দুজন দৌড়াতে দৌড়াতে এক জায়গায় এসে ভালুকের সঙ্গে দেখা। ভালুক শিরায় সুঁই ফুটাচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে খরগোশ মন খারাপ করল।
খরগোশ: ছিঃ ভালুক। এই বয়সে নেশা করা কি ঠিক। ছেলে মেয়েরা কী বলবে? 
ভালুক চুপ করে থাকে।
খরগোশ: তোমার শরীরের জন্য ড্রাগ খারাপ। এর চেয়ে বরং চলো বনের ভেতর একটু দৌড়াই। রক্ত চলাচল বাড়ুক।
ভালুক লজ্জা পেল এবং তার ভুল বুঝতে পারল। খরগোশ আর জিরাফের সঙ্গে সেও দৌড় শুরু করল। কিছুক্ষণ পর বাঘের সঙ্গে দেখা। বাঘ মাত্র আফিম নেওয়ার জোগাড়যন্ত্র রেডি করছে।
খরগোশ: ছিঃ বাঘ।
বাঘ কিছু বলে না।
খরগোশ: এইসব ছাইপাঁশ না নিয়ে বরং একটু দৌড়াই চলো...
বাঘ এই কথা শুনেই খরগোশকে ধরে মারতে লাগল। ভালুক আর জিরাফ এসে তাকে থামাল। শেষবারের মতো খরগোশকে একটা লাথি মেরে বাঘ বলল, তুই আজকে জাস্ট বাইচ্যা গেলি।
ভালুক বলল, ছিঃ বাঘ ভাই। খরগোশ তো ভালো কথাই বলছে।
বাঘ: হ! তা তো বলছেই। বদমাইশটা যখন ইয়াবা খায় তখন ভালো ভালো কথা বলে আর সবাইকে নিয়ে পুরো জঙ্গল দৌড়ায়।

উপদেশ

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
উপদেশ
ছবি এআই

বাতেন আলী সাহেব রসমালাই কিনতে মিষ্টির দোকানে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘটল দুর্ঘটনাটা। একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিল পেছন থেকে। বাতেন আলী সাহেব ছিটকে রাস্তার পাশের ড্রেনে গিয়ে পড়লেন। মুহূর্তেই জ্ঞান হারালেন তিনি।
রাস্তার পাশের মুদি দোকানদার জানে আলমের চোখের সামনে ঘটল পুরো ঘটনাটা। একটা লোককে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেল বিরাট এক ট্রাক। জানে আলম দেরি না করে দোকানের শাটার বন্ধ করে ছুটে গেলেন ড্রেনের দিকে। শার্টের কলার ধরে টেনে তুললেন আহত ভদ্রলোককে। তারপর দ্রুত সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালেন।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ঢুকিয়ে দিয়ে জানে আলম আহত ভদ্রলোকের মোবাইল ফোনটা হাতে নিলেন। কল লিস্ট বের করে লাস্ট ডায়ালে থাকা নাম্বারে ফোন করলেন তিনি। দুইবার রিং হতেই কলটা রিসিভ হলো। জানে আলম কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে এক ভদ্রলোক বললেন, ‘হ্যালো বাবা, একটু আগেই তো কথা হলো। আবার ফোন করলে যে...!’
জানে আলম গলার স্বর যতটা সম্ভব নামিয়ে এনে বললেন, ‘আমি আপনার বাবা না ভাইজান। একটু আগে আপনার বাবা...।’
আধঘণ্টার মধ্যে বাতেন আলী সাহেবের চার ছেলে, তিন মেয়ে এবং দুই বউ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে হাজির হলেন। ততক্ষণে বাতেন সাহেবের জ্ঞান ফিরেছে। ছেলে মেয়েদের দেখে বাতেন সাহেব নার্সকে বললেন, ‘সিস্টার, একটা শলার ঝাড়ু দেন তো।’
মুহূর্তেই ঝাড়ু হাজির হলো। বাতেন সাহেব একটি ঝাড়ুর কাঠি নিয়ে পট করে ভেঙে ফেললেন। এটা দেখিয়ে তিনি ছেলেদের বললেন, ‘দেখলি তো, একটা কাঠি সহজেই ভেঙে যায়।’
এরপর দশটি ঝাড়ুর কাঠি হাতে নিয়ে ছেলেদের সেদিকে তাকাতে বললেন। তারপর চেষ্টা করলেন সেটা ভাঙতে। ভেঙে গেল। এভাবে কাঠি ভেঙে যেতে দেখে বাতেন সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ধুর! ভেবেছিলাম, খুব ভালো একটা উপদেশ দেব তোদের! হলো না!’

ব্যাংক ডাকাতি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
ব্যাংক ডাকাতি

সকাল ১০টা বাজতেই জাফর আহমেদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুলতানা বেগম লেনদেন ব্যাংকের শিয়ালবাড়ি শাখায় প্রবেশ করলেন। জাফর আহমেদ সাহেব এই শাখায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী সুলতানা বেগমও এখানেই চাকরি করেন। তিনি জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। সত্যি কথা বলতে, চাকরি করতে এসে তাদের পরিচয়। সেখান থেকে বিয়ে। তবে প্রথম দিকে দুজনের সংসারে শান্তি থাকলেও এখন তা নেই। প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রীতে খিটিমিটি লেগেই আছে। গত রাতেও মশারি টাঙানো নিয়ে দুজনে ঝগড়া করেছেন। ঝগড়ার একপর্যায়ে জাফর আহমেদ চৌধুরী মশারি ছিঁড়ে ফেললে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
জাফর আহমেদ চৌধুরী তার রুমে প্রবেশ করতেই কালো ষণ্ডামতো এক লোক বন্দুক হাতে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন। বন্দুক দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। রুমের বাইরে তাকিয়ে দেখেন আরও ছয়-সাতজন লোক সেখানে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত এরা ডাকাতি করতে এসেছে।
ডাকাতরা কাজে বেশ পটু। আধা ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংকের ভল্ট খুলে ২ কোটি টাকা তাদের বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে শুধু দেখেছেন। বন্দুকের সামনে তাদের করার কিছুই নেই। সবাই যার যার কাঁধে টাকার বস্তা তুলে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। এমন সময় ডাকাতদের সর্দার ক্যাশিয়ার সোলেমানকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই কি আমাকে ডাকাতি করতে দেখেছিস?’
সোলেমান মিনমিনিয়ে বলল, ‘জি স্যার, দেখেছি।’
তারপরই দুম করে গুলির শব্দ হলো। সোলেমান শেষ। এবার সে দাঁড় করাল ডিউটি অফিসারকে। তাকেও একই প্রশ্ন করতেই সে জবাব দিল, ‘দেখেছি’। আওয়াজ হলো, ‘দুম’। এবার দাঁড় করালেন ম্যানেজার জাফর আহমেদ চৌধুরীকে। সর্দার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই দেখেছিস আমাকে ডাকাতি করতে?’ 
জাফর আহমেদ চৌধুরী বললেন, ‘না স্যার, দেখিনি। তবে আমার বউ মনে হয় দেখেছে!’

প্রাণ

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম
প্রাণ
এঁকেছেন মাসুম

সিনেমার শুটিং চলছে আউটডোরে। মুভির নাম বরবাদের তুফান। পরিচালক আরিয়ান মির্জা ছবির দৃশ্য নায়ককে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। মুভির নায়ক নতুন মুখ। তার নাম নিশো খান।
— বস, এইটা মুভির ক্লাইমেক্স দৃশ্য। এই দৃশ্যে আপনি মারা যাবেন। দৃশ্যটা আমরা এমনভাবে শুট করব পাবলিক যেন হতবাক হয়ে যায়। তারা যেন এই ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরে যে, নায়ক কেন মরল? আসলেই কি মারা গেল, নাকি তার ডামি মারা গেল? কে তাকে মারল?
— আমি নায়ক মারা যাব! তাহলে মানুষ মুভি দেখবে কেন?
— বস, মুভির সিকুয়েলের জন্য আমরা এই দৃশ্য রাখছি। যদি এই পর্বে আপনার মৃত্যুদৃশ্য থেকে থাকে, তাহলে এই মুভির সিকুয়েল দেখতেও পাবলিক আসবে। জানতে চাইবে মরা মানুষ জ্যান্ত হলো কীভাবে! 
— ওকে। ওকে। কীভাবে মরতে হবে আমাকে? 
— বস, পুলিশ অফিসার খারুশ মণ্ডল হাসতে হাসতে আপনার বুকে গুলি করবে। আপনি চিত হয়ে পড়ে যাবেন। 
কীভাবে পড়ে যেতে হবে সেটা অভিনয় করে দেখালেন পরিচালক। 
— রক্ত লাগবে না? বুকে রক্তের ব্যাগ সেট করতে হতে হবে না?
— লাগবে না বস। গ্রাফিক্সের সাহায্যে রক্তের ছবি বসাব আমরা। আপনি শুধু শটটা ওকে করে দেন বস।
— ওকে। 
পুলিশ অফিসার খারুশ মণ্ডল সেজে দাঁড়িয়ে ছিল সাজু আহমেদ। পরিচালক অ্যাকশন বলা মাত্র নায়ক চিত হয়ে পড়লেন। কাট বলার আগেই নিশোর চোখ পিটপিট করতে লাগল।
— বস, আমি কাট না বলতেই আপনি চোখ খুলে ফেললেন!
— আরে আমি কী করব! পায়ে যে মশা কামড়াচ্ছে।
— এই কে আছিস, বসের পায়ের কাছে অ্যারোসল স্প্রে কর।
— বস অ্যারোসল তো নেই। 
মুখ শুকনো করে বলল সহকারী পরিচালক। 
— আরে হাদারাম কিনে নিয়ে আয়। তাড়াতাড়ি যা।
তারপর হিরোর দিকে তাকিয়ে বললেন, বস অ্যারোসল আনতে পাঠিয়েছি। ততক্ষণ আপনি আর সাজু মিলে দৃশ্যটার রিহার্সাল যদি করে দিতেন।
ঠাণ্ডা চোখে পরিচালকের দিকে তাকালেন নিশো খান।
— বিরিয়ানি আনাও। বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। বিরিয়ানি খেয়ে শট দেব।
বিরিয়ানি আনতে আনতে দুপুর হয়ে গেল। সেই বিরিয়ানি খেয়ে নায়ক নিশো খান মৃত্যুদৃশ্য অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত হলেন। এবার নায়ক গুলি খেয়ে পড়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু একটু পরই চোখ খুলে হেসে উঠলেন।
— বস, মৃত্যুর দৃশ্যে আপনি চোখ খুলে হাসছেন? 
করুণ কণ্ঠে বললেন পরিচালক। 
— আরে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর কী যেন শার্টের ভেতর ঢুকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। দেখ আমি মিথ্যা বলছি কি না। 
সবার সামনে শার্ট খুলে ফেললেন নায়ক নিশো খান। পরিচালক দেখলেন, কয়েকটি পিঁপড়ে নায়কের পিঠের ওপর।
পরিচালক বললেন, বস এই মৃত্যুদৃশ্যটা ইনডোরে শুটিং করব। আমি ব্যবস্থা করছি। ক্যামেরা, লাইট, প্রপস ইত্যাদি ইনডোরে সেট করতে করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। পরিচালক আবার বসলেন নায়ক নিশো খানকে নিয়ে।
— বস, এই মৃত্যুদৃশ্যটা এই মুভির সিকুয়েল তৈরির টার্নিং পয়েন্ট। আমি চাই এই মৃত্যুদৃশ্যটাতে আপনি এমন প্রাণ সৃষ্টি করুন- যেন দর্শক মনে করে আপনি সত্যিই মারা গেছেন, ওকে?
নিশো খান মাথা নাড়লেন। এবার এক টেকেই নেওয়া গেল দৃশ্যটা। গুলি খেয়ে নিশো খান পড়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু আর উঠলেন না। পরিচালক কাট বলার পরও চোখ খুললেন না। সহকারী পরিচালক দৌড়ে এলেন পরিচালক আরিয়ান মির্জার কাছে।
— স্যার, বসের পালস পাচ্ছি না।
জান উড়ে গেল পরিচালকের।
— গেল! সিকুয়েলের পরিকল্পনা বোধহয় বাদই দিতে হবে।
তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনা হলো। 
নায়ক নিশো খানকে নিয়ে যাওয়া হলো স্থানীয় হাসপাতালে। ডাক্তাররা ছুটে এলেন। স্টেথোস্কোপ  যখন বুকের ওপর বসালেন তখনই চোখ খুললেন নিশো খান। উঠে বসলেন। হাই তুললেন। তার পর পরিচালকের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, কী! মৃত্যুদৃশ্যটা কেমন হয়েছে? 
পরিচালক এতক্ষণ মৃতপ্রায় হয়েছিলেন। মাত্র প্রাণ ফিরে পেলেন।