ছুটির দিন। কোথায় ঘুম ভাঙার পর বিছানায় একটু অজগর সাপের মতো গড়াগড়ি খাব তা না, আম্মা সাতসকালে বাজারে পাঠিয়ে দিল। সাধারণত বাজারের কাজ আমার ছোট ভাই করে। বাসার কোনো কাজে ওর কোনো আগ্রহ নেই। শুধু বাজার করার জন্যই ওর যত আগ্রহ। কী যে এর কারণ কে জানে। ওর সামনে পরীক্ষা, তাই আমাকেই এই দায়িত্ব নিতে হলো।
বাজারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হওয়ার আগে ছোট ভাই বলে উঠল, পচা মাছ-টাছ আনিও না। তোমার তো ওই দিকেই বেশি খেয়াল।
আমি কিছু বললাম না। ছুটির দিনে মেজাজ খারাপ করতে কে চায়?
রিকশা ঠিক করতে গিয়ে রিকশাওয়ালার কথা শুনে মনে হলো, আমাকে তার মামার মতো লাগছে মনে হয়। ২০ টাকার ভাড়া চাইছে ৪০ টাকা।
বললাম, শুধু যাব। আসব না তো।
সে আমার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে লুঙ্গির কোঁচড় থেকে বিড়ি বের করে ধরিয়ে ফেলল।
অবশেষে ৪০ টাকাতেই রাজি হয়ে গেলাম। ছুটির দিনে মেজাজ খারাপ করতে কে চায়?
বাজারের গলিতে ঢোকার আগেই একটা চায়ের দোকান আছে। এসব দোকানে
কাতালানদের স্বাধীনতার খবর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ টিমের কোনো ব্যাটসম্যানের কীভাবে খেলা দরকার ছিল এসব খবর জানা যায়। অনেকদিন এসব দোকানে বসি না। আজ সুযোগ পাওয়া গেছে তাই ঢুকে পড়লাম।
ঢুকে দেখি আজ বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা হচ্ছে।
একজন বলল, পেঁয়াজের ভরি নাকি ৭০ টাকা চলতেছে!
আরে ওই দিন এক বিয়েতে খাসির রেজালার দিকে কেউ তাকাচ্ছেই না।
কেন?
সালাদের মধ্যে পেঁয়াজ ছিল। গোল গোল করে কাটা। সবাই ওই প্লেট নিয়ে টানাটানি।
আমার মেয়ে চুলে আগে পেঁয়াজের রস দিত। ভাবতেই গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
বলেন কী। আপনার মেয়ের তো তাহলে ছেলের অভাব হবে না। ছেলেপক্ষ যখন শুনবে মেয়ের চুলে পেঁয়াজের রস পাওয়া যেতে পারে।
সবাই হেসে উঠল।
আরেকজন বলল, এখন পান্তাভাত ফার্মের মুরগি দিয়ে খেলেই ভালো।
মুরগি দিয়ে কেন?- আমি আমার বড় নাকটা গলিয়ে দিলাম।
কাঁচা মরিচের কেজি কত?- আমাকে সেই লোক উল্টো প্রশ্ন করল।
কত?- আমি একটু অবাক হলাম।
জানেন না আপনি?
না তো।
কোন দেশ?- লোকটি ভুরু নাচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল।
মানে?- বুঝলাম যে আমাকেই মুরগি বানানো হচ্ছে।
কোন দেশ থেকে আসছেন?
আমার থতমত অবস্থা দেখে আরেকজন লোক এগিয়ে এল।
ভাই এখন কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা। ফার্মের মুরগির কেজিও ২৬০ টাকা। আগে মানুষ পান্তাভাত দিয়ে কাঁচা মরিচ খেত। এখন ফার্মের মুরগি দিয়ে খাবে।
আরেক প্রস্থ হাসাহাসি হলো।
আর সবজি? কোনটা কিনবেন বলেন। যেসব শাকসবজি আমরা আগে গ্রামে গরু-ছাগলদের খাওয়াতাম সেগুলোও তো খেতে পারছি না।
আরে এসবের মধ্যে যে বিষ খাব সেই উপায়ই তো নেই।
কেন কী হইছে?- এক বয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করছে।
বাসায় ইঁদুর বেড়ে যাওয়ায় ওই দিন ইঁদুর মারার বিষ কিনতে গেছিলাম। ওইটারও দেখি দাম বাড়ছে!
সবাই হো হো করে হেসে ফেলল।
না না ভাই হাসিয়েন না। এটা আসলেই সিরিয়াস ইস্যু। বিষ খেয়ে মরতে চাইলেও পারবেন নাকি?
এখন সস্তা আছে একটা জিনিসই। সেটা হচ্ছে মানুষের জীবন। রাস্তাঘাটে, বাসের ধাক্কায়, পানির তোড়ে খালি মানুষই ভেসে যাচ্ছে।
সস্তা আছে একটা জিনিসই সেটা হচ্ছে ম্যাচের বাক্স। ২ টাকাতে পাওয়া যাচ্ছে এখনো।
আমি চায়ের দামটা মিটিয়ে বাজারের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এক লোককে আসতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই কী অবস্থা?
ফাটতেছে!- এক শব্দে জবাব দিলেন ভদ্রলোক।
আমার সঙ্গে সঙ্গে সেই জোকসটা মনে পড়ে গেল।
বাজারের পাশে এক দর্জির রমরমা ব্যবসা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম শুনে লোকজনের প্যান্ট ফেটে গেলেই সে রিপু করে দিচ্ছে। ১৬০০ টাকা ইলিশের কেজি শুনে এক লোকের প্যান্ট ফেটে গেছে। দর্জির কাছে রিপু করাতে গেল সে।
রিপু কত?- রিপু শেষে প্যান্ট পরে দর্জিকে জিজ্ঞাসা করল লোকটি।
৫০ টাকা।
লোকটি একটা ১০০ টাকার নোট দর্জিকে দিয়ে বলল আপনার রিপুর দাম শুনে আবার ফেটে গেছে!
বাজারের দিকে গেলামই না। খালি এক ডজন ম্যাচ কিনে বাসার দিকে চললাম। ম্যাচেরও আবার কখন দাম বেড়ে যাবে কে বলতে পারে।
মেহেদী আল মাহমুদ