
উপস্থাপক ঘোষণা করলেন, এখন আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা, নয়নের মণি, আশার ভরসা, সুখ-দুঃখের সাথী হেকমত আলী ভাই।
নেতা হেকমত আলী বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন। তিনি যখন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন, তখন উপস্থাপক তার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলেন। চিরকুটটার দিকে তাকিয়ে নেতা হেকমত আলী মুচকি হাসলেন। তারপর শুরু করলেন, উপস্থিত আমার প্রাণপ্রিয় ভাই ও বোনেরা। প্রথমেই আমি আপনাদের সবাইকে প্রাণঢালা ভালোবাসা জানাচ্ছি। আমাকে ঘোষক আগেই বলে দিয়েছেন যে, বক্তব্য যেন সংক্ষিপ্ত করি। তা ছাড়া এই চিরকুটটাতেও একই কথা বলা হয়েছে। পরামর্শের জন্য আমি ঘোষককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি মনে করি, কারও বক্তব্য দীর্ঘ করা উচিত না। এখানে আরও অনেক বক্তা বসে আছেন। তাদেরও মূল্যবান কিছু বলার আছে। আমি একাই যদি লম্বা সময় গ্রহণ করি, তো তারা সময় পাবেন কোথায়? আজকাল অনেকেই সময়ের মূল্য বোঝে না। মাইক্রোফোন সামনে পেলে আর ছাড়তে চায় না। এমনভাবে আঁকড়ে ধরে রাখে, যেন মাইক্রোফোনটা তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি।
যা হোক, আমি বক্তব্য দীর্ঘ করব না। আমি সময়ের মূল্য বুঝি। অযথা আপনাদের সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কবি বলেছেন, সময় চলে যায়, নদীর স্রোতের মতো প্রায়। অর্থাৎ সময় আর নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। যে সময় একবার চলে যায়, শত চেষ্টায়ও তাকে আর ফেরানো যায় না। সময়ের মূল্য বোঝার জন্য স্কুলজীবন থেকেই আমরা পরীক্ষার খাতায় ‘সময়ের মূল্য’ রচনা লিখতে শুরু করি। সেই আমরাই যদি বড় হয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে শ্রোতাদের সময় নষ্ট করি, তাহলে আমরা কী শিখলাম? তা ছাড়া প্রবন্ধকার প্রথম চৌধুরী-এখানে আমার একটু সন্দেহ আছে, প্রথম চৌধুরী নাকি প্রমথ চৌধুরী হবে তা ঠিক মনে নাই। যাকগে সেটা কোনো বিষয় না। প্রথম চৌধুরী বলেছেন, যে কহে বিস্তর, সে কয়ে বিস্তর মিছা। তাই বিস্তর কিছু বলা ঠিক না। এখন সময়টা খুব ফাস্ট। এই ফাস্ট এজ-এ এসে...।
এমন সময় উপস্থাপক নেতা হেকমত আলীর হাতে আরেকটা চিরকুট দিলেন। চিরকুটের দিকে তাকিয়ে নেতা বললেন, এই চিরকুটে আমাকে বলা হয়েছে মূল বক্তব্যে যেতে। কথা হলো ইঁদুর বা বিড়ালের মতো। ইঁদুর-বিড়ালের যেমন লেজ থাকে, গোঁফ থাকে, কথারও তেমন লেজ-গোঁফ থাকে। কথা বলার সময় এসব লেজ-গোঁফ ছেঁটে কথা বলতে হয়। অনেকে এই ব্যাপারটা বোঝে না। বোঝে না বলেই অনেক বাড়তি কথা বলতে গিয়ে মূল বক্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। অনেকে আবার কথাকে ঘামাচির সঙ্গে তুলনা করে থাকে। ঘামাচি যেমন একটা গালালে তিনটা ওঠে, কথাও তাই। একটা বলতে গেলে তিনটা সামনে চলে আসে। তবে সামনে এলেই তা ধরা যাবে না। ছেড়ে দিতে হবে, তাহলেই মূল বক্তব্যে যাওয়া যাবে।
আপনারা তো আব্রাহাম লিংকনের সেই বিখ্যাত গেটিসবার্গ স্পিচের কথা জানেন। তিন মিনিটের ২৭২ শব্দের ভাষণ ছিল সেটা। তিনি কথার লেজ, গোঁফ কেটে ভাষণটি দিয়েছিলেন। তাই তো সেটি এতটা বিখ্যাত হতে পেরেছিল। তিনি সরাসরি মূল বক্তব্যে চলে গিয়েছিলেন, তাই তো ভাষণটি এতটা কার্যকর হতে পেরেছিল। সুতরাং উপস্থিত ভাই-বোন-বন্ধু, আমি আর কথা বাড়াব না, সরাসরি মূল বক্তব্যে চলে যাব। আমি বলতে চাই...! হ্যালো...! হ্যালো মাইক্রফোন টেস্টিং...!
মাইকে কথা বের হচ্ছে না। মাইকে অথবা মাইক্রোফোনে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিছুতেই সে সমস্যা ঠিক করা গেল না। নেতা হেকমত আলী মন খারাপ নিয়ে বললেন, অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকায়া যায়। মাইক নষ্ট হয়ে গেল। আমি মূল বক্তব্যে যেতে পারলাম না। সামনে অন্য কোনো সভায় আমি সরাসরি মূল বক্তব্যে চলে যাব। আপনারা ভালো থাকুন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।