এঁকেছেন মাসুম
কী রে জান, কী করস? রুহেল জানতে চাইল। ক্লাসমেট হলেও মেহেরকে ও জান বলেই ডাকে।
আর বলিস না দোস্ত! জীবনটা লাইফ হয়ে যাচ্ছে! বাসায় খালি মেহমান আর মেহমান। আম্মা বলছে আমি যেন বাসা থেকে এক পা-ও না নড়ি।
তোদের বাসায় না অনেক কাজের লোক। তোকে কেন থাকতে হবে?
আরে দোস্ত তুই বুঝবি না। বাসায় মেহমান আসার কী যে প্যারা! যতগুলা মেহমান বাসায় আসল, সবার সঙ্গে একটা-দুইটা করে পিচ্চি। আর পিচ্চিগুলা যে কী পরিমাণ মিচকা শয়তান না দেখলে বুঝবি না। কেউ আমার ল্যাপটপ নিয়ে টানাটানি করে। কেউ আমার গিটার লইয়া টুংটাং করে। অসহ্য! জীবনটা একদম বরবাদ হয়ে যাচ্ছে দোস্ত।
বরবাদ দেখছস। তোর বাড়ির সামনেই তো সিনেপ্লেক্স। হেসে জানতে চাইল রুহেল।
আরে এই বরবাদই তো আমার জীবনটা বরবাদ কইরা দিতাছে! লতায় পাতায় যত মামাতো-খালাতো ভাইবোন আছে, সব এই সিনেপ্লেক্সে বরবাদ দেখতে আসতেছে আর আমাদের বাসায় ঢুইক্যা সেমাই-মিষ্টি খাইয়া হাইসা হাইসা বলতেছে, আপু তুমি কিন্তু বরবাদ দেইখো। নাইলে কিন্তু তোমার জীবনটাই বরবাদ। কেউ সিনেপ্লেক্সে যাওনের সময় জিগায়ও না আপু বরবাদ দেখবা!
তুই তাইলে বরবাদ দেখস নাই, জান?
না রে দোস্ত! কোথাও টিকিটই পাচ্ছি না। সব জায়গায় সোল্ড আউট। সত্যি সত্যিই লাইফটা বরবাদ মনে হইতাছে রে দোস্ত। হতাশ গলায় বলল মেহের।
ঠিক আছে জান। ভাবছিলাম তোরে নিয়া বরবাদ দেখমু, কিন্তু তুই তো আবার ব্যস্ত। কী আর করা, একটা টিকিট নষ্টই হইব মনে হইতাছে। বিষণ্নতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করল রুহেল।
এক মিনিট! তুই কই থিকা কথা কইতে আছস। আমাগো বাড়ির সামনের সিনেপ্লেক্স থাইক্যা?
না রে জান। আমি আছি বসুন্ধরায়। অনেক কষ্টে দুইটা টিকিট পাইছিলাম। তুই তো আবার আইতে পারবি না।
কয়টার শোয়ের টিকিট পাইছস? জানতে চাইল মেহের।
চারটার।
ঠিক আছে। আমি আইতাছি। তুই কিন্তু হারাইস না কইলাম।
হাতে সময় আছে মাত্র আধাঘণ্টা। এর মধ্যে তুই কি আইতে পারবি? রুহেল বলল।
আরে দোস্ত ঈদের পর রাস্তা তো খালিই আছে। ধানমন্ডি থাইক্যা বসুন্ধরা যাওন কুনো ব্যাপার হইলো! তুই থাক আমি আইতাছি।
সত্যি সত্যিই শো শুরুর ১০ মিনিট আগেই বসুন্ধরায় পৌঁছে গেল মেহের।
সিনেমা হলের সিটে বসে উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটতে শুরু করল ও।
দোস্ত কত কিছু বইল্যা যে আম্মারে ম্যানেজ করলাম, শুনলে বিশ্বাস করবি না। খালি বরবাদের টিকিট পাইছস শুইনা আমারে আইতে দিল। নাইলে দিত না।
তুই আম্মারে আমার কথা কইছস! বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চাইল রুহেল।
আরে পাগল নাকি! আম্মারে কইছি লাইলি আমারে বরবাদ মুভি দেখাইব।
আর তোর আম্মা যদি এখন লাইলিরে ফোন দেয়?
আচ্ছা, খাড়া অরে একটা ফোন দিয়া লই। সিনেমা শুরু হইলে তো আর কল দিবার পারুম না। ফোন বের করল মেহের।
লাইলি, আমি কিন্তু বরবাদ মুভি দেখবার আইছি। হ হ, টিকিট পাইছি। হ, আমি এহন বন্ধুগো লইয়া বরবাদ মুভি দেখতে আইছি। আম্মা তরে ফোন করলে কইস যে আমি তর লগেই আছি।
কল কাটতেই পেছন থেকে একজন দর্শক বলল, আপা আপনি মনে হয় ভুল সিনেমা হলে ঢুকে পড়েছেন। এই হলে বরবাদ মুভি দেখাবে না।
ঝট করে রুহেলের দিকে তাকাল মেহের।
তুই বরবাদ-এর টিকিট কাটস নাই?
পাই নাই।
তাইলে কি এই হলে জংলী মুভি দেখাইব?
না।
তাইলে কি দাগি মুভি?
না।
তাইলে এই হলে কোন মুভি চলতাছে? রুহেলের শার্ট খামছে ধরল মেহের।
জ্বীন-৩।
শয়তান! তুই জানস না আমি ভূত-প্রেত-জিনকে ভয় পাই। প্রায় চিৎকার করে বলল মেহের।
জানি তো। জানি বইলাই তো কাটছি। তুই এই মুভিটা দেখতে দেখতে ভয় পাইয়া আমারে জড়াইয়া ধরবি হের লাইগা এই মুভির টিকিট কাটছি, বুঝলিরে জান।
এক কথাতেই মেহেরের মুভি দেখার ইচ্ছেটাই বরবাদ করে দিল রুহেল।