
শুনেছি নাক ঘামলে নাকি সুন্দরী বউ পাওয়া যায়। তাই সুন্দরী বউ পাওয়ার লোভে বিয়ের আগে আমি প্রচণ্ড গরমেও ফ্যান অফ করে ঘুমাতাম।
এত চেষ্টার পর সুন্দরী বউ না পেলেও রাগী এবং দোষ ধরতে ওস্তাদ বউ পেয়েছি। দোষ ধরার ওপর নোবেল পুরস্কার থাকলে নিশ্চয় এতদিনে আমার বউ নিতু দুই-চারটা নোবেল পুরস্কার জয় করে ফেলত।
এই মেয়ে আমার সবকিছুতেই নাক গলায়, পারে তো গলা পর্যন্ত গলিয়ে দেয়। ভাবছি একটা রুটির দোকান দেব। সে বলল, দোকানের নাম দাও, নান অফ ইউর বিজনেস!
নিতুর ধারণা, তার জীবনে কোনো ভুল নেই। তবে আমার জীবনে ভুল গিজগিজ করছে। আমি যা কিছু করি, সে একটা ভুল খুঁজে পাবেই। আমি হাসলে দোষ, কাঁদলে দোষ, এমনকি চুপচাপ বসে থাকলেও দোষ। আতঙ্কে আছি, কোনোদিন জানি বলে বসে, ৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ লেগেছিল আমার দোষে। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই মেয়ে বউ হয়ে এসেছে শুধু আমার দোষ ধরার জন্য।
ভয়ে আমার ভালো-মন্দ কিছুই তাকে জানাই না। কেননা তার হাতে মলম না থাকলেও লবণ ঠিকই আছে। কাটা ঘায়ে লবণ ছিটাতে সে ওস্তাদ।
নিতু ভয়ানকভাবে মোবাইল ফোনে আসক্ত। মানুষ ঘুমালে শরীর রেস্ট পায় আর নিতু ঘুমালে তার মোবাইল রেস্ট পায়। সে কিছুটা বোকা কিসিমের হওয়া সত্ত্বেও তার লক্ষাধিক ফলোয়ার। আমার মনে হয়, শুধু সাজুগুজু করে হাই-হ্যালো করে লক্ষাধিক ফলোয়ার বানানো শুধু আমাদের বঙ্গদেশেই সম্ভব।
নিতুকে আমি বিয়ে করতে চাইনি। মা-বাবার পছন্দের বিয়ে। বিয়ের আগে একটা মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম। সকাল-বিকেল কথা বলতাম। হিসু চেপে হলেও তার মেসেজের রিপ্লাই দিতাম। এরপরও সেই মেয়ে বলত, আমি নাকি তাকে কেয়ার করি না! শেষে মেয়েকে তো পেলামই না, মাঝখান থেকে হিসু চেপে রাখার কারণে কিডনির অবস্থা কাহিল হয়ে গেল।
বাধ্য হয়ে নিতুকে বিয়ে করতে হলো।
বাসর রাতে লোকজন কত মিষ্টি কথা কয়, ঘোমটা না খুলেই নিতুর প্রথম ডায়ালগ ছিল, এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছ?
এই কথার কী উত্তর হতে পারে তা ভেবে যখন অস্থির। নিতুর দ্বিতীয় ডায়ালগ, সত্যি কথা বলবা, না আঙুল বাঁকা করতে হবে? আমি ঘাড়ত্যাড়া মানুষ। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আমাকে কিন্তু আঙুল বাঁকা করতে হবে। আমার মা এটা বলে দিয়েছে।
কথা শুনে সেদিনই আমি বুঝে গেলাম, এটা আমার বাসর রাত নয়, বসের রাত। আমার ভাগ্য আর নিজের হাতে নেই, নিতুর মায়ের হাতে চলে গেছে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আঙুল বাঁকা করার দরকার কী, তোমার মাকে বলো একটা চামচ কিনে পাঠিয়ে দিতে। মায়ের কাছ থেকে আর কী কী শিখেছ? তুমি তোমার বাড়িতে ঘাড়ত্যাড়ামি করেছ ভালো কথা, আমার সঙ্গেও করবে?
নিতু ঘোমটা পুরোটা খুলতে খুলতে বলল, অবশ্যই। স্বামীরটা খাব, স্বামীরটা পরব, স্বামীর সঙ্গে ঘাড়ত্যাড়ামি করব- এজন্যই তো বিয়ে করেছি। নইলে বিয়ে করে কোন গাধা? আমার বাড়িতে কি খাবারের অভাব?
এরপরে আর কথা চলে না।
আমি কোনো কথাই তাকে বুঝিয়ে বলতে পারি না। আগরতলা বললে চৌকির তলা খুঁজে বের করে ফেলে, হাঁসের মাংসের তরকারির কথা বললে সে পারে তো বাঁশের তরকারি রেঁধে দেয়। একবার তাকে আমাদের পরিবার নিয়ে দুঃখের গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলাম, আমরা একটা অভাবী পরিবার থেকে এসেছি।
সে কথা শুনে মুখ কিছুক্ষণ চুকচুক করে বলল, আহা, তোমাদের বুঝি কোনো ভাবি ছিল না? পাড়াপ্রতিবেশী ভাবিও ছিল না?
আমি ব্রিটিশ শাসন দেখিনি, তবে এখন বউয়ের শাসন দেখছি। মাঝে মধ্যে ভাবি, হায়রে! আমি তার স্বামী না আসামি? বিয়ে করেছি কি সকাল-বিকেল গালি খাওয়ার জন্য?
আজকে দুপুরে বউকে বললাম, আমাদের ফ্ল্যাটের উপরতলায় যে হাসিখুশি ভাবি থাকে, তিনি তো বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। আজকে সকালে তিনি কোমায় চলে গেছেন।
বউ মোবাইল চালাতে চালাতে মুখ ঝামটি মেরে বলল, তারা বড়লোক মানুষ টাকা-পয়সা আছে। যেখানে খুশি যাক। তাতে তোমার সমস্যা কী? তার জামাই তারে কোমায় পাঠাইছে, তোমার মুরোদ আছে টাকা-পয়সা খরচ করে বউকে কোমায় পাঠানোর?
আমি মনে মনে বললাম, লে হালুয়া! বলি কী, এই বান্দা বুঝে কী!
অনেক কাহিনি করে তাকে বোঝাতে পেরেছি, কোমায় যাওয়া মানে সেন্স আউট হয়ে যাওয়া। ভাবি যায় যায় অবস্থা।
সে কী বুঝল কে জানে, শুধু বলল, ওহ!
নিতুকে বললাম, ১০ মিনিটে রেডি হও, ভাবিকে দেখতে হাসপাতালে যাব। বেচারা বোধহয় বাঁচবে না।
বলেই আমি দ্রুত বাথরুমে ঢুকে ১০ মিনিটের আগেই ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলাম। বউ গোসলে সময় নিল ৪০ মিনিট। এক ঘণ্টা পর খোঁজ নিয়ে দেখি সবেমাত্র শাড়ি পাল্টাচ্ছে। তাড়া দিতেই বলল, তুমি আর পাঁচ মিনিট ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করো, আমি ২০ মিনিটেই চলে আসব।
আধা ঘণ্টা পরে আবার তার রুমে নক দিলাম। দেখি সে সব গহনা বের করে ম্যাচিং করে পরতে শুরু করেছে। আমি বিরক্ত গলায় বললাম, তুমি রোগী দেখতে যাবে না ফ্যাশন শো করতে যাবে? এত গহনা পরার দরকার আছে? হাসপাতালে গেলে তো যে কেউ ভেবে বসবে, তুমি সিনেমার শুটিং করতে গিয়েছ।
নিতু গহনা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, অবশ্যই দরকার আছে। তুমি এত গাধার মতো কথা বলো কীভাবে? রোগী দেখতে যাচ্ছি এটা তুমি জানো, রাস্তার লোকজন কী জানে? আমি কি ছেঁড়া কাপড় পরে বের হব? তোমার মান থাকবে তাতে? যাও, ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসো, পাঁচ মিনিট পরেই আসছি।
আমি আবার ড্রয়িংরুমে এসে চুপচাপ বসে রইলাম।
আবার আধা ঘণ্টা পরে গিয়ে দেখি সে গহনা পরা শেষ করে চুল ঠিক করছে। আমাকে দেখেই রাগী গলায় বলল, হায় রে! মানুষ এত বোকা হয়! তোমাকে বারবার বলছি পাঁচ মিনিট পরই চলে আসছি, তুমি গাধার মতো আধা ঘণ্টা পরপর এসে বারবার আমাকে বিরক্ত করো কেন? বলি, তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি হবে কবে? হায়রে! এমন বোকা জামাই নিয়ে সংসার করা যায়?
নিতুর কথা শুনে আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে বসলাম, আসলেই আমি একটা গাধা। আমার বুদ্ধি হবে কবে!