
বিপাশা বাজারের ব্যাগ হাতড়াতে হাতড়াতে বলল, এইটা কী?
রিফাত বলল, মুরগির ডিম।
আমি তো ভাবছিলাম চড়ুইপাখির ডিম। এত ছোট কেন? ডিম কি তুমি নিজে পাড়ছিলা? ডিম পাড়তে খুবই কষ্ট হচ্ছিল? কী মাছ আনছ?
ইলিশ মাছ।
বিপাশা ব্যাগ থেকে মাছ বের করে নাড়াচাড়া করে বলল, তুমি নিজেই তো ডিমপাড়া পাবলিক, ডিমওয়ালা ইলিশ আনছ কোন আক্কেলে? ডিমওয়ালা ইলিশ কেউ খায়? কী উৎকট গন্ধ আসছেরে বাবা! এই মাছ তো মনে হচ্ছে আওরঙ্গজেবের আমলে ধরেছিল, বেচতে না পেরে তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। এমন পচা মাছ আনলা কী ভেবে? বেগুনও তো আনছ পোকায় খাওয়া।
রিফাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, মাছওয়ালা তো বলছে টাটকা মাছ...!
মাছওয়ালা বুঝে গেছে তুমি পৃথিবী বিখ্যাত বলদ, এজন্য এই মাছ তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। আর কখনো এই মাছওয়ালার ধারেকাছেও যাইবা না, মনে থাকবে? আর বেগুন ফেরত দিয়ে আসবা। যারা তোমাকে ঠকায়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিয়া দিবা।
রিফাত ভালো করে জানে, সবকিছুতে জামাইয়ের ভুল ধরা বিপাশার অভ্যাস। জিনিস ভালো হলেও।
সে মিনমিনে গলায় বলল, কী বলো এসব? তোমার বাবাও তো আমাকে ঠকাইছে। ভালো মেয়ে বলে তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। আমি কী তোমার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিছি?
কথা শুনে বিপাশা আগুন চোখে জমাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
বিপাশা রিফাতকে পৃথিবীর সেরা অপদার্থ মনে করে। সে বিশ্বাস করে অপদার্থদের নোবেল পুরস্কার দিলে সবার আগে তার জামাই পাইত, শুধু একটুর জন্য ফসকে যাচ্ছে।
মাছ কুটতে কুটতে প্রায় ৪০ মিনিট ভাঙা রেডিওর মতো বাজিয়ে গেল। তার ব্যাটারি সহজে শেষ হয় না, গালিও থামে না। এর মধ্যে রিফাত জেনে গেল, তার বংশে কার চরিত্র কেমন, কে কার চেয়ে বেশি খারাপ! সব ইতিহাস বিপাশা গড়গড় করে বলে গেল।
রিফাত জবাব না দিয়ে তব্দা খেয়ে বসে রইল।
জামাইয়ের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তার কথার স্টক শেষ হয়ে গেল। এবার শুরু করল কান্না। এই কান্না মিসাইলের চেয়েও ভয়ংকর। কাঁদতে কাঁদতে বলল, তোমার মতো অপদার্থ আমি জীবনে দেখি নাই। বাবা যে কী দেখে এমন বলদ পছন্দ করেছে কে জানে। এত বোকা মানুষ হয়! একটা কাজও ঠিকঠাক পারে না।
রিফাত সান্ত্বনার সুরে বলল, থাক, নিজের বাপকে নিয়ে আর টানাটানি কইরো না, তুমি তার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতা, লোকটা কতটা বিপদে পড়ে আমার মতো অপদার্থের ঘাড়ে তোমাকে গছিয়ে দিতে পারে। তোমার যোগ্যতা নিয়ে তার কতটা ভয় ছিল বুঝে নাও। বেশি টেনশন কইরো না, আমি বেশিদিন বাঁচব না। আমি মরে গেলে তুমি সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবা।
বিপাশা কান্না থামিয়ে প্রশ্ন করে, তুমি মরে যাবা মানে কী?
রিফাত হাসতে হাসতে বলল, না মানে বলছিলাম কী, ভালো মানুষ তো বেশিদিন বাঁচে না, তাই।
কে বলেছে তুমি ভালো মানুষ?
তোমার বাবা বলেছে। সেজন্যই তো হাতেপায়ে ধরে তোমার মতো অচল মাল আমার ঘাড়ে তুলে দিয়েছে। কী আর করা। সুখী হওয়ার মতো ভাগ্য আমার হাতের রেখায় নাই। মনে হয় ছোটবেলায় আচার খাওয়ার সময় চেটেপুটে খেয়ে ফেলেছি।
তুমি একটা বদ, তুমি একটা খচ্চর, তুমি, তুমি...
তাদের ঝগড়া শুনে রিফাতের মা এগিয়ে এলেন কী হয়েছে তা জানার জন্য। বিপাশাকে ডেকে বললেন, কী হয়েছে বউমা?
বিপাশা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, আম্মা, আপনার ছেলের তো অনেক দোষ, কয়টা বলব?
রিফাতের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, জানি তো মা, আমার ছেলের অনেক দোষ, সেজন্যই তো তাকে কোনো ভালো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে পারি নাই।
বলেই তিনি হনহন করে চলে গেলেন।
রিফাতও বেরিয়ে যাচ্ছিল, বিপাশা ডেকে বলল, যাও কই?
নরকে যাই।
তাহলে সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে যাও।
রিফাত রেগে গিয়ে বলল, নরকে যাইতে হলে ব্যাগ লাগে নাকি!
তা লাগে না, তবে যদি কোনোকালে নরক থেকে ফিরে আসতে মন চায় তাহলে সঙ্গে করে দুই কেজি আলু নিয়ে আসবা। ঘরে একটাও আলু নাই।
রিফাত ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেল।