
▶ রাতের খাবারের পর এক খিলি পান খাওয়া মোকসেদের পুরোনো অভ্যাস। সেই মোতাবেক হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে বানানো পানটা মুখে চালান দিতেই চোখজুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এল তার। পান খেতে খেতে টিভিতে খবর দেখতে ভালোবাসেন, কিন্তু আজ আর সেটা করতে ইচ্ছে করছে না। নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে জোগালির কাজ করেন তিনি। নিচ থেকে উপরে ইট, সিমেন্ট রড আনা-নেওয়া করতে হয়। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার কারণে শরীরটা বিশ্রাম নিতে চাইছে। মোকসেদ দেরি করলেন না। মশারি টাঙিয়ে বাতি বন্ধের সুইচটা টিপে দিলেন।
চোখ দুটো সবে লেগে এসেছে ঠিক তখনই শব্দটা শুনতে পেলেন মোকসেদ। এক নাগারে ডেকে চলেছে কুকুরগুলো। সেই শব্দে ঘুমের বারোটা বেজে গেল।
একই ঘটনা ঘটল পরপর কয়েক রাত। ঠিকমতো ঘুমাতে না পেরে শরীর ভেঙে যেতে শুরু করল মোকসেদের। কাজে মন লাগাতে পারলেন না। উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বাসার পাশেই একজন ডাক্তার বসেন। চমৎকার রোগ সারাতে পারেন বলে এলাকায় নাম-ডাক আছে তার। মোকসেদ পরদিন সকালেই ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলেন।
ডাক্তারকে সব খুলে বললেন তিনি, ‘বাসার পাশের রাস্তায় কুকুরগুলো রোজ রাতে নিয়ম করে হল্লা করে। কিছুতেই ঘুমাতে পারি না।’
ডাক্তার বললেন, ‘এই ঘুমের বড়িটা নতুন এসেছে। খুব ভালো কাজ দেয়। নিয়ে যান। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করবেন।’
মোকসেদ ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তবে এক সপ্তাহ না যেতেই আবার হাজির হলেন ডাক্তারের চেম্বারে, ‘এখনো আমার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে ডাক্তার সাব।’
উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিন্তু ওষুধটা তো বেশ ভালো। অনেকেরই কাজ হয়েছে।’
মোকসেদ আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘ভালো-মন্দ বুঝবারই তো পারলাম না। সারা রাত কুকুরগুলোকে ধাওয়া করে একটা যদিও ধরতে পারি, কিছুতেই বদমাশটাকে ওষুধ গেলানো যায় না। ওষুধের মোজেজা কেমনে বুঝুম, কন?’
▶ ক্লাস শেষের ঘণ্টাটা বাজতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন নীতু। জাভেদ স্যারের ক্লাস এতটাই বোরিং যে, ভার্সিটির কেউই তার ক্লাস করতে চায় না। কিন্তু পাস তো করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই সময় মতো হাজির হন আর অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন শেষ হবে এই বোরিং লেকচার।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে সোজা শিমুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ালেন নীতু। কিছুক্ষণের মধ্যে রিনি এসে পড়বেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে কয়েকটা রেফারেন্স বই দেখে নোট করতে হবে তাদের। নীতু একা একা করতে পারতেন কাজটা, কিন্তু সঙ্গে একজন ভালো স্টুডেন্ট থাকলে নোটটা যেমন ভালো হয় তেমনি গল্পে গল্পে সময়টাও কেটে যায় দ্রুত।
বলতে না বলতে রিনি এসে হাজির হলেন শিমুল গাছের নিচে। তারপর আর দাঁড়িয়ে থাকা মানায় না। দুজনে হাঁটতে শুরু করলেন লাইব্রেরির দিকে। ঠিক এমন সময় অপরিচিত নাম্বার নীতুর মোবাইলে ফোন এল। রিসিভ করতেই আচমকা পাশ থেকে প্রশ্ন এল, ‘আপনার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?’
থতমত খেয়ে নীতু বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে, আপনি কে?’
‘আমি তোমার বড় ভাই! খবর আছে তোমার! ওয়েট করো, বাসায় এসে নিই আমি!’ জবাব এল ওপাশ থেকে।
‘ভাইয়া’ বলেই নীতু ভয়ে অস্থির হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর নীতুর মোবাইলে আরেকটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এল, ‘তোমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?’
এবার নীতু ভুল করলেন না, ‘না না, কেউ নেই! আমি সিঙ্গেল!’
‘কী? আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড মামুন, তুমি চিনতে পারোনি? মানুষকে তাহলে এই বলে বেড়াও?’
রাগ হয়ে বললেন কেউ ওপাশ থেকে। ‘না না, মামুন, আই অ্যাম সরি। আমি ভেবেছি তুমি আমার বড় ভাই! রাগ করে না, প্লিজ!’ বললেন নীতু।
অপর প্রান্তের ভদ্রলোক বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি ঠিক ধরেছ! আমি তোমার বড় ভাই! দাঁড়াও বাসায় আসতেসি!’