ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

‘একটা গরুর রান ভিক্ষা দেন গো’ ভিডিও, সমালোচনার মুখে দম্পতি

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
‘একটা গরুর রান ভিক্ষা দেন গো’ ভিডিও, সমালোচনার মুখে দম্পতি
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

কোরবানির মাংস নিয়ে অসহায় মানুষকে উপহাস করে ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে আপলোডের পর সমালোচনার মুখে পড়েছেন এক দম্পতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভিডিওর প্রতিবাদ জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ওই দম্পতির বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায়।

জানা গেছে, ভিডিওর ওই নারীর নাম শ্যামলী চৌধুরী। তিনি সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সঙ্গে থাকা পুরুষ তার স্বামী সেলিম চৌধুরী।

তিন কন্যা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘একটা গরুর রান ভিক্ষা দেন গো’ ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। পোস্টটি আপলোড হওয়ার পরই বিভিন্ন মানুষ কমেন্টে প্রতিবাদ করতে থাকেন।

ভিডিওতে শ্যামলী চৌধুরী এবং তার স্বামীর সঙ্গে আরও দুটি শিশু এবং এক তরুণীকে দেখা গেছে। অসহায় মানুষের অভিনয়ে থাকা এই দম্পতিকে বিভিন্ন বাক্য বলতে শোনা গেছে।

ভিডিওর শুরুতে শ্যামলীর স্বামী একটি বাড়ির দরজার সিঁড়ির সামনে বসে ঘরের ভেতর থাকা মানুষকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কিগো বৃষ্টির মাঝে বইয়া রইছি একটু গোস্ত দেন না গো।’ ঠিক তখনই স্ত্রীও বলে ‘দেন না গো একটু গোস্ত।’

এরপর আবারও স্বামী বলেন, ‘আপনারা বড়লোক মানুষ আপনারা একটা রান দিয়া দিলেই হইবো। পারলে আমাগো একটা রান দিয়া দেন বাড়িতে গিয়া খামুনে, আপনেগো লাইগা দোয়া করমুনে।’

কথার পর স্বামীকে উদ্দেশ করে শ্যামলী বলেন, ‘তুই খালি রান চাস কেন? হেতে তোরে গোস্তই দিতো না। দেনগো আমাগো দুগা গোস্ত দেন। মেঘের মধ্যে আসছি, গোস্ত দিলে আল্লাহ আপনেগো বরকত দিবো। কালকে দেইখা গেছি আপনাগো গরুটা বড় আছে।’

একপর্যায়ে ঘরের ভেতর থেকে এক পোটলা গোস্ত এনে তাদের হাতে তুলে দেন এক তরুণী। পরে মাংসের পোটলাটা হাতে নিয়ে উভয়ে বলে উঠলেন এতটুকু? এ সময় ভিডিওতে থাকা দুই শিশুর উদ্দেশে দম্পতির ভাষ্য ছিল, ‘দেখ পুতেরা দেখ কতটুকু গোস্ত দিছে, বড়লোক মানুষ কতটুকু গোস্ত দিছে।’

শেষদিকে ওই তরুণীকে উদ্দেশ করে তার স্বামী বলেন, ‘আমাগো মোট ১০টা পোলা। তাদের জন্য ১০ পিস দিলেও তো হতো।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ লাভের আশায় অসহায়-গরীব মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ঠাট্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অসংখ্য মানুষ। ওই ভিডিওর কমেন্টে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। দেখা গেছে বেশ কয়েকজন মানুষ এই ভিডিওর প্রতিবাদ জানিয়ে মন্তব্য করেছেন।

আকিব হাসান পলাশ নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘ভাগ্যিস চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। যদি এই মহিলার চেয়ারম্যান পদ বহাল থাকতো তাহলে মানুষের কি যে হতো আল্লাহই জানে। পুরাই নাটকবাজ।’

জার্নালিস্ট শিকদার নামে একজন বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যেন এইভাবে ভিক্ষা করায়।’

এ বিষয়ের বক্তব্যের জন্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামলী চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে  সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি অসুস্থ আছেন বলে কলটি কেটে দেন। পরে আবারও বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

ইমরান হোসেন/অমিয়/

রাস্তায় লাফিয়ে পড়া সিংহের ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:২২ পিএম
রাস্তায় লাফিয়ে পড়া সিংহের ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের
ছবি: সংগৃহীত

গেল দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সিংহ রাস্তায় লাফিয়ে নেমে দৌড়াচ্ছে। সামনে থাকা এক নারীকে আহত করে পালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, এই সিংহটি পোষা। পাকিস্তানের লাহোরের একটি ফার্মহাউস থেকে পালিয়ে আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। সিংহটি এক নারী এবং তার দুই ছোট বাচ্চাকে আক্রমণ করে। সিংহের মালিক সামনে থাকলেও হস্তক্ষেপ না করে দেখেছিলেন।

যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিংহটিকে সাফারি পার্কে পাঠানো আগে লাহোরের রাস্তায় আতঙ্ক  সৃষ্টি করেছিল।

আহত নারীর স্বামীর মতে, সিংহটি তার মালিকের সামনেই আক্রমণ করে। এই ঘটনায় তারা আনন্দিত হয়েছিলেন।

পরে তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।

ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সিংহটি রাস্তায় মানুষের ওপর আক্রমণ করার আগে একটি সীমানা প্রাচীরের উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ফুটেজে দেখা যায়, সিংহটি মহিলার পিঠে লাফিয়ে উঠে। তাকে কামড় দিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারে। পাশের এক ব্যক্তি ওই নারী এবং তার সন্তানদের রক্ষা করতে ছুটে আসেন।

বুধবার (২ জুলাই) রাতে এই ঘটনা ঘটে। পরে সিংহটিকে আটক করে তার মালিকদের ফার্মহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাস্তায় সিংহের আক্রমণের খবরে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাহায্যের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছেন।

অমিয়/

এবার পিনাকী, ইলিয়াস ও কনকের ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করল ভারত

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
এবার পিনাকী, ইলিয়াস ও কনকের ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করল ভারত
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সারওয়ার। ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সারওয়ার এবং জুলকারনাইন সায়েরের ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করেছে ভারত। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। এর আগে বাংলাদেশের অন্তত ছয়টি টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে ভারত।

শনিবার (১০ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভারতে ইউটিউব চ্যানেল ব্লক হওয়ার বিষয়টি জানান পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমার, ইলিয়াসের এবং কনকের ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করে দেওয়া হয়েছে ভারতে। ভারতমাতা তার শত্রুদের চিনে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কারা পিনাকী, ইলিয়াস আর কনকের শত্রু, তাদের কি এখন চিনতে পারেন?’

এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের কথা জানান ইলিয়াস হোসেন। রবিবার (১১ মে) ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আমার, পিনাকী ভট্টাচার্য এবং কনক সারওয়ারের ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করেছে ভারত। আমাদের তিনজনকে আলাদা ই-মেইলে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ভারত সরকারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ভারতে আমাদের চ্যানেল বন্ধ করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

এর আগে গত শুক্রবার ডিসমিসল্যাব জানিয়েছিল, যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচার ভারত থেকে বন্ধ করেছে ইউটিউব। গত শনিবার ডিসমিসল্যাব তাদের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের আরও দুটি টেলিভিশন চ্যানেল- সময় টিভি এবং ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচারও ভারত থেকে বন্ধ করা হয়েছে। এই ছয়টি চ্যানেলই ইউটিউব ভেরিফায়েড (স্বীকৃত)। এদের মোট সাবস্ক্রাইবার ৫ কোটি ৪২ লাখের বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতে এসব চ্যানেলের অনলাইন ঠিকানায় প্রবেশ করলে এই বার্তা দেখাচ্ছে- ‘এটি বর্তমানে এই দেশে প্রদর্শনের জন্য অনুমোদিত নয়, কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ভিত্তিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।’ ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৬৯(ক) ধারার অধীনে, সরকারের কাছে এমন অধিকার রয়েছে- যদি কোনো তথ্য জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তবে সেটি বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে পারে।

এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ইউটিউবের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে। যদি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চিন্ময় ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি ফরহাদ মজহারের

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ পিএম
আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম
চিন্ময় ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি ফরহাদ মজহারের
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে কলামিস্ট ও গবেষক ফরহাদ মজহার। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেছেন কলামিস্ট ও গবেষক ফরহাদ মজহার।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি করেন।

ফরহাদ মজহারের ফেসবুক পোস্টটি কোনো সম্পাদনা ছাড়াই পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- 

‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, সনাতন ধর্মাবলম্বিসহ ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করুন, আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করুন।

হিন্দু মানেই দিল্লির দালাল, বিজেপির এজেন্ট, হিন্দুত্ববাদী এই ধরণের ঘৃণাবোধক সাম্প্রাদায়িক ট্যাগিং পরিহার করুন। 

সর্বোপরি আমাদের বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশের পক্ষে নয়, বরং বিরুদ্ধে। মোটা মাথা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সেটা মোকাবেলা করা যাবে না। মূর্খতা পরিহার করুন। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করেন ও ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এন্টেনা সাফ ও তীক্ষ্ণ করুন। 

জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করবার যে শর্ত তৈরী হয়েছে, তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা সম্ভব যদি আমরা পরস্পরের সাথে কথা বলি এবং  জাতীয় ঐক্যমত তৈরীর মধ্য দিয়ে গণরাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী করে তুলি। চাই সকলের আন্তরিক চেষ্টা। 

আমাদের মধ্যে শুভবুদ্ধি জাগ্রত হউক। আসুন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমরা আশা করবো সরকার অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিবেন।

১. জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে অন্তর্বতীকালীন উপদেষ্টা সরকার গঠিত হয়েছে। একদিকে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট, অন্যদিকে তথাকথিত আইন ও সাংবিধানিকতার আওয়ামি ফাঁদ – উভয়ের টানাপড়েনে পুরানা ফ্যাসিস্ট আওয়ামি রাষ্ট্রই আসলে কায়েম রয়েছে। আমরা অত্যন্ত দুর্বল, অকার্যকর এবং ভাত দেবার মুরোদ নাই কিল মারার গোঁসাই টাইপের একটি অথর্ব সরকার পেয়েছি। 

২. এই বাস্তবতায় হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণরাজনৈতিক ধারাকে শক্তিশালী করাই আমাদের কাজ। জাতি, ধর্ম, নারীপুরুষ ভেদের নিরসন এবং ঘৃণা, বিদ্বেষ , বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির বিপরীতে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমাদের দাঁড়াতে শিখতে হবে। কিন্তু পুরানা ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার আমদের চেষ্টাকে ব্যাহত করে চলেছে। গুজব, মিথ্যা অপপ্রচার ও নানান কিসিমের আজগবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে জনগণের দুষমণরা ক্রমাগত জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বাংলাদেশকে বিদেশী শক্তির লীলাভূমিতে পরিণত করছে। আমরা দেখছি, অলস মস্তিষ্কের নানান প্রকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ভূয়া খবর ও গুজব ছড়িয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। জুলাই ২০২৪ গণভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করবার জন্য পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোকে প্রধান কৌশল হিশাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। 

৩. এই আত্মঘাতী বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণের সুরক্ষার কথা আমাদের ভাবতে হবে। দরকার একদিকে দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা সরকারকে রক্ষা করা, অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিরোধী জনগণকে সচেতন, সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করা। 

৪. কিন্তু সরকার ও প্রশাসনে ঘাপ্টি মেরে বসে থাকা গণবিরোধী ও বাংলাদেশ বিরোধী চক্র বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত এঁটে চলেছে।  বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তার সর্বশেষ প্রমাণ হল চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোন এক পুলিশের অনুরোধে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া। কারা এই পুলিশ যাদের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চেয়েও অধিক, এমনকি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চেয়েও তারা পরাক্রমশালী? 

৫. গত ৩১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ের মোহরা এলাকার ফিরোজ খান চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সহ ১৯ জন সনাতন ধর্মাবলম্বির বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করেন। উল্লেখ করা দরকার, ফিরোজ খান চট্টগ্রাম নগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। 

৬. বন্ধুরা, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফল। গণ বিপ্লব আমাদের চেতনাগত রূপান্তর ঘটায়। এটা বুঝার জন্য সম্প্রতি রংপুর মহা সমাবেশে তাঁর বক্তৃতা শুনুন। খেয়াল করুন, তিনি কিভাবে জুলাই বিপ্লবের শহিদ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে থাকা আমাদের বীরদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার অনুসারীদের বাংলাদেশের পতাকা মাথায় বেঁধে সমাবেশে আসতে বলেছেন। তিনি অকুন্ঠ চিত্তে রংপুর মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসা করেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সকলের চেতনার স্তরে যে গুণগত রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করেছে সেই সম্ভাবনা অমূল্য। ওই অমূল্য ধন হারানোর অর্থ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিত্তি হারিয়ে ফেলা। আমাদের কাজ হচ্ছে এই রূপান্তরকে আরো দ্রুততর করা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ক্ষোভ বিক্ষোভ দুঃখ কষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে উপলব্ধি করে অবিলম্বে সকলকে বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। আমাদের বুঝতে হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশের নাগরিক। ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। তা করতে হলে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ক্ষোভ বিক্ষোভ ব্যথা বেদনা অবশ্যই আমাদের সকলকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে শুনতে হবে। সমাধান বের করতে হবে। 

৭. কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠেছে সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট চক্রসহ  পুলিশ ও প্রশাসনের একটি মহল। যারা এখনও ক্ষমতায় বহাল পুরানা আওয়ামি-প্রশাসনে যেমন অন্তর্ঘাতমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য দিল্লির স্বার্থে বাংলাভাষী, বাঙালি ও বাংলাদেশীদের মধ্যে পুরানা কলোনিয়াল সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রবল করা, যেন কোন অবস্থাতেই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারি। যে সকল দুষমন বাংলাদেশে ও উপমহাদেশে  অসাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।  সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বীজ ক্রমাগত রোপন করে যাওয়া বাংলাদেশের সর্বনাশের কারন হয়ে উঠবে। আমাদের সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। ধৈর্য, সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।’

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমে লাঠি হাতে যুবকের ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৬ এএম
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমে লাঠি হাতে যুবকের ভিডিও ভাইরাল
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে লাঠি হাতে এক যুবক ঢুকে বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে লাঠি, মাথায় কালো কাপড়, পরনে হাফ হাতা সাদা গেঞ্জি ও কালো প্যান্ট পরিহিত যুবক লেকচার রুমে ঢুকে মেঝেতে লাঠি ঠুকে ঠুকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন।

এতে ভয় পেয়ে যান শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন ছাত্রী চিৎকার করে তাড়াহুড়ো করে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যান।

এই ঘটনার পরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশ ও র‍্যাবকে জানায়। তবে তারা পৌঁছার আগেই ওই ব্যক্তি সেখান থেকে চলে যায় বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাজহারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘লেকচার থিয়েটারের দোতলায় ওই যুবক হাতে লাঠি নিয়ে ঢুকেছিল। তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে মনে হয়েছে। পুলিশ ও র‍্যাবকে জানিয়েছি। তারা কলেজে পৌঁছার আগেই সে চলে গেছে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তাই আগামীকাল সোমবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কলেজে এসে বিশদভাবে তদন্ত করবে।’

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হাসান বলেন, আমরা কলেজে গিয়ে ওই যুবককে পাইনি।  ওই যুবক মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে শুনেছি।

এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অমিয়/

ঘামের ঘ্রাণে গ্রামের টান

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ০৫:২০ পিএম
ঘামের ঘ্রাণে গ্রামের টান
ছবি: লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে

আচমকা ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। অপরিচিত সব মুখ। কিন্তু ‘চাচা’ ডাক যে কন্ঠের সেটা খুব পরিচিত মনে হলো। পেছনে ফিরে দেখি কালু। আমাদের গ্রামের ছেলে। ওর বাবার নাম ভাদ্রু। চৌকিদার ছিল ভাদ্রু ভাই। তাকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম এবারের যুগান্তর ঈদ সংখ্যায়। গল্পটার নাম ‘সোনা-রুপা’।

আমি হাঁটছিলাম গুলশান-২ হয়ে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের দিকে। যখন দেখা হলো তখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। কালু বৃষ্টিতে ভিজছিল। ওর ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালাম। কতদিন পর দেখা ওর সাথে আমার? ১০-১২ কিংবা ১৫ বছরেরও বেশি হতে পারে। এর মধ্যে কত পরিবর্তন হয়েছে কালুর। সেই দুরন্ত-দূর্বার কালু এখন পুরোদস্তুর যুবক। আমাকে দেখেই বলে উঠে- ‘চাচা, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি ভাদ্রু চৌকিদারের ছেলে কালু।’ সারা শরীর ঘামে ভেজা উস্কোখুস্কো চুলের কালুকে চিনতে দেরি হলো না এক মুহুর্ত।
 
কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই কালু দু’হাত দিয়ে জড়িলে ধরলো আমাকে। আনন্দের ঝিলিক তখন ওর চোখ-মুখে। কালুর ঘাম থেকে আমার গ্রামের গন্ধ পেলাম। গন্ধ পেলাম সোঁদা মাটির। গন্ধ পেলাম ভাঁটফুলের, কদম, কৃষ্ণচূড়া, জবা আর বামুনিয়া মোড়ে থাকা অসংখ্য শিমুল-পলাশ ফুলের। আমাকে অনেকক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখলো কালু আর আমার বামুনিয়া গ্রাম।

তালগাছের মতো লিকলিকে লম্বা হয়েছে কালু। বাবা ভাদ্রুর মতো পুরো অবয়ব ওর শরীরজুড়ে। গুলশান-বনানীর অলগলিতে রিকশা চালায়। দরদর করে ঘাম ঝরে ওর শরীর থেকে। রিকশা চালিয়ে মাসে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা কামায়। এখান থেকে টাকা পাঠায় ওর ছোট ভাই হুমায়ুনকে। ‘হুমায়ুন ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই চাচা, আব্বা আমার হাতেই ওকে তুলে দিয়ে গেছে।’ কণ্ঠে তার অনুভব বিহ্বলতা।

আলাপেই জানলাম- কালু বিয়ে করেছিল একবার। লোহাগাড়া হাটের এক মেয়েকে। শ্যামলা গড়ন সেই মেয়েটিকে ভীষণ ভালোবেসেছিল ও। বছরখানেক টিকেছিল মাত্র। ওর ছোট ভাই হুমায়ুনকে তার বউ একদিন বেধড়ক পিটুনি দেওয়ায় সেদিনই বিয়ের পাট চুকিয়ে ফেলে কালু। তখন থেকে আজ অবধি বিয়ে করেনি। কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছোট ভাই হুমায়ুনকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে এখন ব্যস্ত সে।
 
এর মধ্যেই কালুর ফোন বেজে উঠে। দু’ভাই আলাপ শুরু করে। কথা বলতে গিয়ে কালু আমার নাম বলাতেই হুমায়ুন আমার সাথেও কথা বলে। অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে- ‘ইয়েল চাচা কেমন ছি (আছো)?’, ‘কুরবানি ঈদোত বাড়ি ওসপোনি (আসবে না)’। আমি বললাম- যাবো। ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।

নাস্তা-পানি খাইয়ে বিদায় দেওয়ার সময় ভীষণ হাসিমাখা মুখ নিয়ে কালু জানাল- সে এবার চার শতক জমি কিনেছে। এই ঈদে ওখানে নতুন বাড়ি করবে। টিনের চাল দিবে তাতে। একটা ছোট রান্নাঘর আর একটা কলপাড় করবে।

কালু রিকশা চালিয়ে চলে যাচ্ছে বনানীর ১১/০৭ বি রোডে। তখন বৃষ্টি সামান্য বেড়েছে। খানিক দূরে গিয়ে হাত উঁচিয়ে আবার তাকায় কালু। সে তাকানোয় মন কেমন করা এক মায়া। এক অজানা ঘোর। আমি সেই ঘোর নিয়েই গাড়িতে উঠি।

এ এস এম হাফিজুর রহমান, এডিসি ট্রাফিক গুলশান (দক্ষিণ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

[ছবি ও লেখা লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে]