ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

'আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়'

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
'আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়'
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চোখে গুলিবদ্ধ মারুফ। ছবি: খবরের কাগজ

‘রাত হলেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ জ্বালাপোড়া করে, অতিরিক্ত চুলকায়। আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়। মোবাইল, টিভির দিকে তাকাতে পারি না। কবে যে এই দুর্দশার শেষ হবে জানি না। এই চোখ কি আদৌ ভালো হবে?’

কথাগুলো বলছিলেন মো. মারুফ (২৭)। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার এই বাসিন্দা চট্টগ্রাম মহানগরের নিউমার্কেট মোড়ে গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। শিক্ষার্থীদের ওই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। 

আত্মরক্ষার্থে কয়েকজন শিক্ষার্থী দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন পাশের একটি গলিতে। তাদের সঙ্গে ছিলেন মারুফও। সেদিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে ধরে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় তাদের হাতে পরা চুরির আঘাত লাগে তার ডান চোখে। একপর্যায়ে তারা মারুফের নিতম্বে ছুরিকাঘাত করে। 

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি বর্তমানে সীতাকুণ্ডের গ্রামের বাড়িতে আছেন। কিন্তু ডান চোখে দেখতে পাবেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা মারুফ চান উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে। কিন্তু অর্থসংকট তার সেই প্রত্যাশাকে ম্লান করে দিচ্ছে। 

মারুফ জানান, যারা তাকে মারছিল তাদের সবার হাতে চুরি ছিল। তারা যখন তার মুখে, চোখে আঘাত করছিল তখন ওইসব চুরির আঘাত লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাকে নেতৃত্বদানকারী ভেবে নিতম্বে ছুরিকাঘাত করে তারা। 

তিনটি ঘাই মেরে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় তারা। সেদিন তাকে কয়েকজন মিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পর থেকে কয়েক ঘণ্টা বোধহীন ছিলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারেন তিনি চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। 

মারুফ আরও জানান, তাকে ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্য হাসপাতালে পাঠায়। কেননা তার ডান চোখের অবস্থা ছিল শোচনীয়। তাকে মহানগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চোখের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কিন্তু কিছুতেই তার চোখের উন্নতি হচ্ছিল না। কয়েক দিন পর লায়ন্স হাসপাতাল, চিটাগাং আই ইনফারমারি, বাংলাদেশ আই হসপিটালে চিকিৎসা নেন তিনি। তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসার পরও তার চোখের কোনো উন্নতি নেই। আঘাতের ২৩ দিন পরও তিনি ডান চোখে দেখছেন না। সীমাহীন এক যন্ত্রণা নিয়ে তিনি দিন গুনছেন। কবে তার এই দুর্দশা শেষ হবে তা জানা নেই। 

মারুফ বলেন, চিকিৎসকরা তার চোখ পুরোপুরি ভালো হওয়ার ব্যাপারে বার্তা দিচ্ছেন না। এতে তিনি হতাশ। তারা বলছেন, তার চোখের পেছনে কালো রক্ত জমে গেছে। সেগুলো দূর করতে হবে। তাকে শুধু ড্রপ দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহারেও কোনো ফল পাচ্ছেন না তিনি। 

এদিকে তার বাবা নুরুল আক্তার দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে যেতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভাগ্য ফিরে তাকাচ্ছে না। মারুফ মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করে পরিবার চালাতেন। এখন চোখেই দেখতে পারছেন না। তাই কাজ করতে পারছেন না। ফলে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। 

মারুফের বাবা জানান, এই পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা, নিরীক্ষায় তার জন্য অর্ধ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এর পরও তার ছেলের চোখ ভালো হয়নি। 

মারুফদের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের হাশেম নগর (নতুন পাড়া) গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মারুফকে তার এলাকার বন্ধুরা মিলে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তিনি কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের সংসারে ছন্দপতন ঘটেছে। আমরা তার সুস্থতার পাশাপাশি তাকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বৈশাখের উপাখ্যান

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম
বৈশাখের উপাখ্যান
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

কমলামুখী মেয়ে কুড়োয় শুকনো
ঝরা পাতা
বৈশাখের ব্যাকুল হাওয়া জড়িয়ে থাকে গলা
কমলামুখী মেয়ে কুড়োয় শুকনো ঝরা পাতা
যেন রাজকুমারী নুয়ে আছে মুক্তমালার ভারে
গাল বেয়ে তার ঝরছে কেবল অহংকারী ঘাম
আগুনমুখো ছেলে কুড়োয় কী যে
ঘাসের ঘাড়ে হাত বুলিয়ে কাকে যে ডেকে আনে
ঝিঁঝিঁ পোকার রানিকে নাকি পাতাল কুমারীকে
ফিসফিসানি শব্দ শুনে মেয়েটি শুধু হাসে 

ঘামের ধারে ঘাস কেটে যায় রাস্তা জেগে ওঠে
তখন ছেলে রক্তমুখী সন্ধ্যা ধরে আনে
হঠাৎ মেয়ে ককিয়ে ওঠে চাবুক খাওয়ার মতো 
আকাশে আজ চাঁদ ওঠেনি
আধার ঝেঁপে আসে
অনেক ক্রোশ বাড়ি আমার ঘামের পথে
একলা যাওয়া ভার
তখন দূরে কামার শালায় গনগনিয়ে জ্যোৎস্না জেগে ওঠে
পাশেই লবণ নদী
জোয়ার এসে বাঘের মতো মেয়েকে নিয়ে ধায় 
জলদস্যুর বেশে ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে
কমলামুখী মেয়েকে তোলে মনের উপকূলে
ফিসফিসিয়ে হাওয়ার স্বরে বলে:
এমন অসীম ঘর পেয়েছো- কোথায় যাবে আর
ফিসফিসানি শব্দ শুনে মেয়েটি শুধু হাসে
শুকনো পাতার শব্দ শুনে ছেলেটি শুধু হাসে

বৈশাখও ব্যাপৃত যুদ্ধে

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫০ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৩ এএম
বৈশাখও ব্যাপৃত যুদ্ধে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

–তুমি কার প্রতিধ্বনি?
–সময়ের। প্রগতির। কল্যাণের।
–কী তোমার শক্তি ও পাথেয়?
–স্বপ্ন ও সুন্দর। মানবিক শুদ্ধতা প্রত্যয়।
–কী তুমি হটাতে চাও?
–অশান্তি কলুষ হিংসা অনৈক্য সংঘাত।
–বৈশাখ তোমার মধ্যে মুখরতা কেন?
–জাগিয়ে তুলতে চাই ঘুমন্ত মানব সত্তা।
–তারপর? অন্বিষ্ট কী আছে কিছু আর?
–প্রতিষ্ঠা সাম্যের। অবসান সমস্ত যুদ্ধের।
–এ স্বপ্ন পূরণ হওয়া কতটা সম্ভবপর?
–অনেক অনেকটাই। চলবে লড়াই। যুদ্ধই জীবন।

পরিযায়ী নববর্ষ

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০১ এএম
পরিযায়ী নববর্ষ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মনের সঙ্গে মনের মিলে শুরু মনহর্ষ
ক্ষণের সঙ্গে ক্ষণের মিলে শুরু নববর্ষ।

এমন বর্ষ এমন হর্ষ সব মানুষের আছে
স্থানে-কালে নানান মঞ্চে নানান মানুষ নাচে।

চান্দ্র বর্ষ সৌর বর্ষ, বর্ষে বর্ষে হেরফের,
পরিযায়ী মানুষ কিন্তু সবকিছুই পায় টের।

যে যার মতো গণনা করে, শুরু ও শেষ ভিন্ন,
মূর্ত কিংবা বিমূর্ত হোক, স্বকৃতির এই চিহ্ন।

দূর পারস্যের ‘নওরোজ’ হয়ে বঙ্গ নববর্ষ,
সময়স্রোতে আকবর আর ফতে-খাঁর উৎকর্ষ।

সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তেই দিনের শুরু-শেষ,
নিশিরাতে আমপান্তার আমানি অশেষ।

আসল কথা দুই মুহূর্তে সেতুভঙ্গ নাই,
চলছে ঘুমে-জাগরণে সংস্কৃতি ছিপ-নৌকাই। 

বছরশেষে হালখাতা আর শুরুর সঙ্গে নবান্ন, 
ইলিশপান্তার সঙ্গে আজও সংক্রান্তি ও শাকান্ন।

উড়াল ডানায় সময়পঙ্খী, সাম্যসুখী সুকৃতি
লাল-সবুজের বাংলাদেশে বিভেদবিহীন সংস্কৃতি।

বিশ্ব মানবজাতিও চায় মানুষরা হোক সুনন্দন,
শুরু থেকে শেষ অবধি মানবজাতির সুবন্ধন।

ব্যক্তি গোত্র জাতি সত্যে জাতিসত্তার শুরু হয়;
সকল জাতির মিত্রানন্দে জাতিসংঘ স্বত্বময়।

সমতলের বর্ষযাপন, জুম্মজাতির বৈসাবি,
নানান দেশে নানান জাতির বৈচিত্র্যের এই দাবি।

বিশ্বজাতির মিলনসূত্র মানবমৈত্রী নান্দনিক; 
নানান জাতির নানান কৃতীর কর্মধর্ম মানবিক।

সময় শুরু সময় শেষের ঘ্রাণে ঘ্রাণে পরিত্রাণ, 
বহমান এই কালের স্রোতে মূর্ত মানুষ-সর্বপ্রাণ।

নানান জাতির নানান বর্ষে আছে অভেদসুন্দর
মানবজাতির এক পৃথিবী একভিটা এক খামার ঘর।

কাঠগোলাপ তোমাকে ডাকছে

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০২ এএম
কাঠগোলাপ তোমাকে ডাকছে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দক্ষিণের বারান্দার সদানন্দ বেলিগাছটি মরে গেছে। কোনো বিউগল বাজেনি। এখনো লড়ে যাচ্ছে নিঃসঙ্গ কাঠগোলাপ। পত্রপুষ্পহীন। আহা, কাঠগোলাপ! দিগন্তজুড়ে উড়ছে গনগনে বালির পতাকা। তপ্ত হাওয়ারা সোল্লাসে বলে: ‘সব ঝুট হ্যায়’।
পুড়ে গেছে চোখধাঁধানো পাতার বাহার, শুধু সারি সারি কঙ্কাল জেগে আছে ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে। হিজলের তমালের। তবু অদম্য ঠুনঠুনি পাখিটি বারংবার প্রিয় নাম ধরে ডাকে: ‘বাগানবিলাস, বাগানবিলাস’। বাগান বিলাপ করে বিমুখ প্রান্তরজুড়ে। ওরা বলে, ‘ঝিনুক নীরবে সহো’!
যমুনার দুর্গম চরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ধরিত্রী। অদূরে হায়েনার চোখের মতো গর্জমান বুভুক্ষু চিতার আগুন। মুমূর্ষু যমুনা হাঁকে চিরবিদ্রোহী বেহুলার মতো: ‘বালির শৃঙ্খল ভেঙে, ওরে রুদ্র ওরে খ্যাপা, দুকূল ভাসিয়ে নিয়ে তুই আয়। আয়। আয়।’ 
কাঠগোলাপ তোমাকে ডাকছে।

হে রুদ্রসখা, হে বৈশাখ

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০২ এএম
হে রুদ্রসখা, হে বৈশাখ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বৃষ্টির রূপকে ঢুকে পড়েছে বৈশাখ
                     অন্দরমহলে
আমি এক বিব্রত ময়ূর
ভুলে গেছি পেখম তোলার গান
কী এক ঘোর জড়িয়ে ধরেছে 
                              আষ্টেপৃষ্ঠে
বৃষ্টির জলে তলিয়ে যাচ্ছি
উদ্দাম ঝোড়ো হাওয়া
বিজুলি চমকায় থেকে থেকে
গমকে গমকে আমি চমকে উঠি!
ঝোড়ো বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাচ্ছে 
                           যতসব গ্লানি
হে তেজোগর্ভ বৈশাখ
প্রিয় রুদ্রসখা
             ছড়িয়ে দাও তোমার দীপ্তি
                         অন্ধকারে
                                     জীর্ণ কুটিরে
                    বিষণ্ন লোকালয়ে
গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে...
হে মুক্তকচ্ছ বৈশাখ
মুমূর্ষু প্রাণে তোলো ঢেউ যৌবনের
শিশুর সারল্যে হেসে উঠুক
                         স্তনবৃন্ত 
                             জঙ্ঘা-জঘন
                                জখমি হৃদয় 
হে রুদ্র বৈশাখ
যত দ্বন্দ্ব মন্দ অন্ধ নাচে, নাচুক
এসো জয়, এসো কল্যাণ
প্রাণে প্রাণ রেখে বাঁচুক
দিশেহারা অযুত প্রাণ!