ঢাকা ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কীভাবে হয়

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ এএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কীভাবে হয়
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও বাসভবন হোয়াইট হাউস। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপ শুরু হয় ভোটের বেশ আগে থেকেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সরগরম থাকে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো দেশটির প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় বেশ ভিন্ন তাদের ব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একজনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথম শর্ত, তাকে অবশ্যই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, তার বয়স হতে হবে অন্তত ৩৫ বছর। আর তৃতীয় শর্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বছর বসবাসের রেকর্ড থাকতে হবে তার। একটি ক্ষেত্রে শেষের শর্তটির ব্যত্যয় হয়। যদি প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য হন, সেক্ষেত্রে শেষের শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরও বাধা নেই। উল্টো দেশটির সংবিধান নিশ্চিত করেছে যাতে কোনো রাজনৈতিক বন্দি প্রার্থী হতে চাইলে তাকে বাধা না দেওয়া হয়।

তবে রাজনৈতিক বন্দি যদি দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জড়িত থাকেন বা শত্রুদের সহায়তা করেন, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না। এই বিধান প্রথমে ছিল না। পরবর্তী সময়ে ১৪তম সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি লড়াইয়ের দ্বার উন্মুক্তই থাকে। তবে দুটি প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের সংখ্যাকে সীমিত করে আনা হয়। এই দুটি প্রক্রিয়ার না- প্রাইমারি ও ককাস।

প্রাইমারি ও ককাস মূলত কী
প্রাইমারি ও ককাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলগুলো তাদের প্রার্থী বাছাই করে। নির্বাচনি বছরে বসন্তের প্রথম ভাগে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোয় এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বাধীন প্রার্থী ছাড়া অন্যদের নির্বাচনে লড়ার জন্য নিজ অঙ্গরাজ্যে দলের অধীনে নিবন্ধন করতে হয়।

প্রাইমারির ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দল রায় দেয় কোন প্রার্থীকে তারা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে ককাসের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা থাকে না। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা একত্রিত হয়ে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে নেন। মূলত প্রাইমারি ও ককাসের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় একজন প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। এই ধাপের পরপরই শুরু হয়ে যায় জাতীয় কনভেনশনের ধাপ। 

জাতীয় কনভেশনে কী হয়
অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারি ও ককাস শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় কনভেনশনের (সম্মেলন) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী (রানিং মেট) বাছাই করে।

কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ডেলিগেটরা (প্রতিনিধি) মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য ভোট দেন। ডেলিগেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট যে প্রার্থী পান, তিনিই হন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। 

ডেলিগেটদের মধ্যে দুটি ভাগ থাকে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ক্ষেত্রে থাকে- প্লেজড বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আনপ্লেজড বা অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাউন্ড বা বাধ্যতামূলক এবং আনবাউন্ড বা বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ/বাধ্যতামূলক ডেলিগেটরা অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারিতে জিতে আসা প্রার্থীদেরই শুধু ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ/বাধ্যতামূলক নন এমন ডেলিগেটরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডেলিগেটরা শুধু দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ভোট দিতে পারেন।

নির্বাচন
জাতীয় কনভেনশনের পর শুরু হয়ে যায় নির্বাচনি দৌড়। সরগরম প্রচার চলতে থাকে। একে অপরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন প্রার্থীরা। জনমত জরিপের লড়াইও এ সময় থেকে চোখে পড়ে। অবশেষে নির্বাচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার শহরে ভোট হয়। নিবন্ধিত যেকোনো মার্কিন নাগরিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তবে চূড়ান্ত আরও একটি ধাপ তখনো বাকি।

ইলেকটোরাল কলেজ
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে নয়, ইলেকটোরাল কলেজ ঠিক করে দেয়- কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থায় ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত হন। তারা শেষ নাগাদ নির্ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে চলেছেন।

ইলেকটোরাল কলেজে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি থাকেন। মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষ মিলিয়ে ওই অঙ্গরাজ্যের যত প্রতিনিধি, সেটাই তার ইলেকটরদের সংখ্যা।

হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে একটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ভর করে অঙ্গরাজ্যটির জনসংখ্যার ওপর। অন্যদিকে সিনেটে প্রতি অঙ্গরাজ্যের আসন থাকে দুটি করে। সব মিলিয়ে ৫০ অঙ্গরাজ্যের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেনটেটিভ ও ১০০ জন সিনেটর থাকে। অতিরিক্ত হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার তিনজন ইলেকটর থাকেন। সবমিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকে ৫৩৮টি। ইলেকটোরাল ভোট সবচেয়ে বেশি রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার, ৫৪টি। আর সবচেয়ে কম ইলেক্টোরাল ভোট ভারমন্টের, মাত্র তিনটি। 

নির্বাচনে জিততে হলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। সংখ্যার হিসেবে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে 

সড়কে ভুয়া নেমপ্লেটে বিলাসবহুল গাড়ি

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
সড়কে ভুয়া নেমপ্লেটে বিলাসবহুল গাড়ি
জব্দ করা দুটি বিলাসবহুল গাড়ি। ছবি: খবরের কাগজ

জালিয়াতি ও শুল্কফাঁকির মাধ্যমে আনা বিলাসবহুল গাড়ি চলছে চট্টগ্রামের সড়কে। ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়া একাধিক নম্বরপ্লেট। কাস্টম হাউস ও বিআরটিএর কাছে তথ্য নেই এসব গাড়ির। ফলে দেশে প্রবেশ কীভাবে করছে বিলাসবহুল অত্যাধুনিক গাড়ি? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করার পর তদন্তে নেমেছে সংস্থাটি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, প্রায় ১০ কোটি টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ না করেই ‘নিশান সাফারি’ আনা হয় দেশে। গত সোমবার চট্টগ্রামের খুলশী থেকে বিলাসবহুল নিশান সাফারি গাড়িটি জব্দ করা হয়। এ গাড়ির আমদানির কোনো তথ্য নেই কাস্টম হাউসে। 

এর আগে ‘বিএমডব্লিউ সেভেন’ সিরিজের একটি গাড়ি আটক করে কাস্টমস গোয়েন্দা। এরপর ওই গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি ও অর্থ পাচারের ঘটনা আলোচনায় আসে। আমদানির সময় গাড়ির মডেল, তৈরির সালসহ সবকিছু জালিয়াতি করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়।

এই দুটি গাড়ির মধ্যে একটির শুল্ক ফাঁকির তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। অপরটির শুল্ক পরিশোধের কোনো তথ্য যেমন কাস্টম হাউসে নেই, তেমনি সড়কের চলাচলের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছেও কোনো তথ্য নেই। অথচ গাড়িটি ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে সড়কে চলছে। 

শুল্ক গোয়েন্দাদের ধারণা, এসব অপরাধে শুধু আমদানিকারকই নয়, ক্রেতাদের প্রতারণার তথ্য মিলছে হরহামেশা। একশ্রেণির প্রতারক এসব গাড়ি দেশে নিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে ২০২০ সালের ৩ মে ব্র্যান্ড নিউ বিএমডব্লিউ প্রাইভেট কারটি খালাস করে নেয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ‘নাগোয়া করপোরেশন’। খালাসের সময় গাড়িটি বিএমডব্লিউ-৫ সিরিজের ‘৫৩০-ই’ মডেলের ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ গাড়িটি বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের ‘৭৪০-ই’ মডেলের। উৎপাদন হয় ২০১৭ সালে। তবে আমদানির সময় উৎপাদন সাল দেখানো হয় ২০১৯।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনজাহ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরপর দুটি গাড়ি আমরা জব্দ করেছি। এসব গাড়ির কোনো ধরনের তথ্য নেই কাস্টম হাউসের কাছে। এ ছাড়া সড়কে চলছে কিন্তু বিআরটিএর কাছেও কোনো তথ্য নেই। অথচ গাড়ির পেছনে নম্বরপ্লেট রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এক শ্রেণির প্রতারক চক্র সরকারকে অন্ধকারে রেখে জালিয়াতির মাধ্যমে এ কারবার করছে। আমরা এই চক্রকে ধরার জন্য কাজ করছি। সম্প্রতি জব্দ করা গাড়িটি মেঘনা গ্রুপের নামে কেনা। প্রবাসী ওসমান গণি মেঘনা গ্রুপ থেকে স্টাম্পে দলিলের মাধ্যমে গাড়িটি কিনেছেন। এ দলিল ছাড়া আর কোনো তথ্য আমাদের কাছেও নেই। আমরা মেঘনা গ্রুপ, কাস্টম হাউস ও বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছি। অথচ এই গাড়িটি একাধিক নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে সড়কে চলছে। আর আগে জব্দ করা গাড়িতে প্রায় ছয় কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। নিশান সাফারিতে দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি। এ দুই গাড়ির বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

যেভাবে জব্দ হলো নিশান সাফারি গাড়ি 
গত সোমবার চট্টগ্রামের খুলশী থেকে বিলাসবহুল নিশান সাফারি গাড়ি জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। পশ্চিম খুলশী ১ নম্বর রোডের রোজ ভ্যালির হাছান টাওয়ারের নিচতলার পার্কিংয়ে নিশান সাফারি গাড়িটি রাখা ছিল। গাড়িটির গায়ে নিশান পেট্রোল লেখা থাকলেও গাড়িটির চেসিস নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে সার্চ করে নিশান সাফারি পাওয়া যায়।

মো. ওসমান গণি নামে এক দুবাইপ্রবাসী মেঘনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেঘনা সিডস ক্রাসিং লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় গাড়িটি কিনেছেন। এমন স্টাম্প দেখিয়েছেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৩২৪ রেজিস্ট্রেশনধারী গাড়িটি জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টম গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘উপযুক্ত দলিলপত্র ছাড়া শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন উপায়ে বা মিথ্যা ঘোষণায় চোরাচালানের মাধ্যমে নিশান সাফারি গাড়িটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে। যা কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ধারা ২(২৪), ১৮, ৩৩, ৮১, ৯০-এর আইনের লঙ্ঘন এবং অপরাধ হিসেবে গণ্য। গাড়িটির মোট আমদানি শুল্ক ৮২৭ শতাংশ এবং আনুমানিক শুল্ক-কর ১০ কোটি টাকা।’ 

তিনি জানান, দেশে পাঁচ থেকে সাতটির মতো রয়েছে এ গাড়ি। অত্যাধুনিক গাড়িটি সঠিক উপায়ে কিনতে হলে বাজারে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা পড়বে। কিন্তু জব্দকৃত গাড়ির কোনো ধরনের তথ্য নেই। কীভাবে দেশে এল এটিই প্রশ্ন। এই গাড়িতে ছয় সাতটি নম্বরপ্লেট পাওয়া গেছে।

বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের ‘৭৪০-ই’ মডেলের কার জব্দ
গত ১৩ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপে সার্ভিসিংয়ের সময় গাড়িটি আটক করা হয়। পরে গাড়িটি কাস্টমস হাউস ঢাকার শুল্ক গুদামে জমা দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা। গাড়িটির মূল্য এক লাখ ডলারের মতো ছিল। অথচ আমদানি নথিতে গাড়িটির দাম ২০ হাজার মার্কিন ডলার ঘোষণা দেওয়া হয়। শুল্কায়ন করা হয় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দেখিয়ে। গাড়িটি আমদানি হয় চট্টগ্রামের এক গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাগোয়া করপোরেশনের নামে। কিন্তু গাড়িটি বিক্রি করে এলএনবি অটোমোবাইলস। এটি অনুপ বিশ্বাস নামের চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী কেনেন। এতে ৬০ হাজার ডলার কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। হাত বদল হয়ে গাড়িটি সম্প্রতি কিনেছে চৌধুরী ফ্যাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চট্ট মেট্রো-গ-১৪-১৭৪৫ নম্বরের গাড়িটি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ২৮ ইকবাল রোড ফিশারিঘাটের ঠিকানায় অনুপ বিশ্বাসের নামে নিবন্ধিত।

শুল্কগোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমদানি করা গাড়িটি মিথ্যা ঘোষণায় দলিলাদি জালিয়াতি করে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে কাস্টমস আইন-২০২৩-এর সেকশন ১৮, ৩৩, ৯০, ১২৬ এর ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। পাশাপাশি একই আইনের ২(২৪) ধারা অনুসারে চোরাচালান হিসেবে গণ্য হবে।

ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সবুজ খান ছিলেন ‘ছোট মন্ত্রী’

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সবুজ খান ছিলেন ‘ছোট মন্ত্রী’
মো. সবুজ উদ্দিন খান

মো. সবুজ উদ্দিন খান ছিলেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তিনি ‘ছোট মন্ত্রী’ বলে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সওজের কর্মকর্তাদের মধ্যে গাড়িতে মন্ত্রীর পাশে একমাত্র তিনিই বসতে পারতেন।

শুধু তাই নয়, সওজের যেকোনো কাজে কারও তদবিরের প্রয়োজন হলে সবুজই ছিলেন ভরসা। মন্ত্রী কাদের তার কথার বাইরে কিছুই করতেন না। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের তদবিরও মন্ত্রীর কাছে ছিল তুচ্ছ। সবুজ খানের সিদ্ধান্তই ছিল শেষ কথা। এ কারণে সওজের কমকর্তা-কর্মচারীরা আড়ালে তাকে ‘ছোট মন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করতেন।

অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত এই সবুজকে এখন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে সরিয়ে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর বাইপাস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। 

জানা গেছে, ২০১১ সালে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ওবায়দুল কাদেরের আনুগত্য লাভের আশায় মরিয়া হয়ে ওঠেন চতুর প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান। সেই লক্ষ্যে কাদেরকে দামি উপহার দেওয়া শুরু করেন। কাদের তার ওপর সন্তুষ্ট- এটি বুঝতে পেরেই সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সবুজ চলতেন রাজনৈতিক নেতাদের মতো।

আওয়ামী লীগের আমলে সড়কে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে, তবে ঢাকা বিভাগে সড়কে যত মেগা প্রকল্প হয়েছে, সেখানেই মেগা দুর্নীতি করেছেন প্রকৌশলী সবুজ। শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সবুজ নিজের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার পান্নাকে নৌকার মনোনয়নে এমপি বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই লক্ষ্যে কাদেরের প্রভাব খাটিয়ে নিজ এলাকা পাবনায় একক বলয় তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। 

সরকারি কর্মকর্তা হয়েও মন্ত্রীর এতই আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন যে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একই গাড়িতে যাতায়াত করতেন সবুজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা কাদের তার আস্থাভাজন সবুজের গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। 

কাদেরের আমলে ঘুরে-ফিরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকা সার্কেলে সংযুক্ত থাকতেন দাপুটে প্রকৌশলী সবুজ। কিন্তু সরকার পতনের পর সবুজের রাজত্বে ভাটা পড়ে। 

ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা (নেতা-কর্মীরা) যখন মন্ত্রীর (কাদের) কাছে কাজের জন্য যেতাম তখন তিনি প্রকৌশলী সবুজের সঙ্গে দেখা করতে বলতেন। কিন্তু সবুজ দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ না দিয়ে নিজের পছন্দের লোকদের সড়কের কাজ দিতেন। কারণ বাইরের লোকদের দেওয়া হলে পার্সেন্টেজও বেশি পেতেন। ওবায়দুল কাদেরের কাছে তার বিরুদ্ধে বিচার দিলেও কোনো লাভ হতো না। কারণ সবুজ মন্ত্রীর কাছে নেতা-কর্মীদের চেয়েও আস্থাভাজন ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন সড়কের প্রকল্প পরিদর্শনে মন্ত্রীর সঙ্গে গাড়িতে যেতেন সবুজ। নামে-বেনামে মন্ত্রীকে দিয়ে নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতেন সবুজ। আর নতুন প্রকল্প মানেই সবুজের টাকা আসার রাস্তা।’ 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগে কোনো প্রকল্প অনুমোদন করাতে পারলেই তৎকালীন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর জন্য বিদেশ থেকে উপহার আনাতেন সবুজ। এর মধ্যে ছিল কাদেরের পছন্দের হাতের ঘড়ি, জুতা, কোট পিন, চশমা ও কটি ইত্যাদি। একেকটা উপহারের দাম সাত লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীকেও বিদেশি উপহার পাঠাতেন সরকারি এই কর্মকর্তা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কে সরকারি কাজের বরাদ্দকৃত অর্থের মন্ত্রী কাদেরের পার্সেন্টেজ জমা থাকত সবুজের কাছে। বিশ্বস্ত হওয়ায় সবুজের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। সরকার পতনের পরে সবুজের গ্রামের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার কোনো একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন কাদের। এলাকাবাসী ও কাদেরের ঘনিষ্ঠরা এমনটাই জানিয়েছেন। 

নিজে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় পাবনা-২ আসন থেকে নির্বাচনের ইচ্ছা থাকলেও করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আসনটিতে স্ত্রীকে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচন করানোর পরিকল্পনা ছিল সবুজের। এই লক্ষ্যে জনসংযোগও শুরু করেছিলেন এই দম্পতি। এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন, সাংবাদিকদের মাসিক ভিত্তিতে ও বিভিন্ন উৎসবে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহার পাঠাতেন তারা।

জানা গেছে, অবৈধ ঘুষের টাকা জায়েজ করতে স্ত্রীকে দিয়ে সমাজসেবার নাটক করতেন সবুজ। ফেসবুকে ‘১০০+’ নামে একটি গ্রুপ চালান সবুজের স্ত্রী। অভিযোগ আছে, সেই গ্রুপের মাধ্যমে সবুজের পরিবারকে মহৎ ও দানশীল হিসেবে প্রচার চালানো হয়। এসব প্রচারে শতাধিক কর্মী নিয়োগ দেওয়া ছিল তাদের। এদের প্রতিজনকে মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। এই ‘বাহিনী দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে সবুজের পরিবার। এই প্রভাবশালীদের মতের বাইরে কেউ গেলে কাদেরের প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজ করা হতো। আর দুর্বল কেউ হলে এই বাহিনী দিয়ে লাঞ্ছিত করা হতো। সবুজের পরিবারের এই বিশাল বাহিনীর ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রায় আট বছর সড়ক বিভাগে যুক্ত ছিলেন প্রকৌশলী সবুজ খান। এই সময়ের মধ্যে ধীরে ধীরে ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হয়ে ওঠায় একপর্যায়ে সবুজের হাতের ইশারায় চলতে শুরু করে সড়ক বিভাগ।

অনেকের মতে, কাদেরের ব্যক্তিগত ও গোপন বিষয় যা কিছু আছে সবই সবুজের জানা। এই গোপনীয়তা জানায় সবুজকে কেউ ঘাঁটাতে সাহস করেননি। দূরে সরাতে পারেননি মন্ত্রী নিজেও। আর এই সুযোগ সরকার পতনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজে লাগিয়েছেন সবুজ। 

মন্ত্রীকে নিয়ে একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে সবুজ টেন্ডারের কাজ দিতেন তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আর এসব প্রকল্পের পার্সেন্টেজ দিয়েই কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। অবৈধ এ অর্থ দিয়ে নিজের পরিবারের নামে গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি। রাজধানীর উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে সবুজের রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। যদিও বাড়িটি স্ত্রী পান্না ও দুই শ্যালিকা নুরজাহান আক্তার ও নারগিস আক্তার হীরার নামে লেখা। বাড়িটিতে সবুজ খান নিজে না থাকলেও তার শ্যালিকা সপরিবারে বসবাস করেন। আর সবুজ থাকেন রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।

উত্তরায় সবুজের একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, যা পরিচালনা করেন তার বোনের ছেলে (ভাগনে) সুরুজ। এ ছাড়া কক্সবাজারের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে সবুজের বিলাসবহুল দুটি রিসোর্ট রয়েছে। পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের মীরপুর চরে ১০০ বিঘা জমি রয়েছে সবুজের পরিবারের। জাতসাখিনী ইউনিয়নের নান্দিয়ারা ও গাজানার বিলে স্ত্রীর নামে ৮০ বিঘা জমি রয়েছে।

গ্রামে ২০ বিঘা জমির ওপর সবুজের রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। যার বর্তমান মূল্য অন্তত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। এর পাশে স্ত্রীর নামে ৫০ বিঘা জমির ওপর স্কুল ও গরুর ফার্ম করেছেন সবুজ। এর মধ্যে অন্তত ৪০ বিঘা জমিই প্রভাব খাটিয়ে দখলের অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্ত্রীর নামে ‘সিনথি চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের’ জন্য চাঁদা তুলতেন সবুজ। সেই টাকা দিয়ে এলাকায় সমাজসেবা করতেন স্বামী-স্ত্রী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে পাবনায় যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন সবুজ দম্পতি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: মৌলিক প্রাধিকার বনাম সংস্কার

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: মৌলিক প্রাধিকার বনাম সংস্কার
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। সেই সরকার কয়েকদিন হলো তাদের ১০০ দিন পূর্ণ করেছে। অনেকেই এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। সরকার কী অর্জন করল, কী কী সমস্যার সম্মুখীন হলো- সেসব নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্নরকম কথাবার্তা বলেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন অগ্রগতি হলো ইত্যাদি। সেখানে প্রথম কথা হচ্ছে- আমাদের বৈদেশিক নীতি বা বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ যে অবস্থা তার থেকে বৈশ্বিক সম্পর্কগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সবই আমাদের বহিঃসম্পর্ককে বড় আকারে প্রভাবিত করে। সেদিক থেকে আমাদের আগে বুঝতে হবে যে, আমাদের দেশের ভিতরে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে? আমরা আসলে কী চাচ্ছি? কারণ বৈদেশিক নীতিতে আমাদের বেশ কিছু চাহিদা আছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ আছে। বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সেগুলোকে অর্জন করতে হবে। সে লক্ষ্যে সফলতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। সুতরাং, আগে আমাদের বুঝতে হবে দেশের ভিতরে কী হচ্ছে?

বর্তমান সরকার অনেককিছু করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলেছে। বস্তুত, যে বিষয়গুলো সরকারের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত, সেখানে দৃশ্যত তাদের সাফল্য খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ছে। মানুষ অধৈর্য হয়ে পড়ছে। যারা সরকার চালাচ্ছেন তাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা ও অস্থার অভাব বিরাজ করছে। তাদের কথাবার্তার ভিতর দিয়েও সেটা প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের মূল শক্তি সাধারণ মানুষ এবং তারা গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের মূল শক্তি। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন পর্যন্ত জনগণের খুশি হওয়ার মতো তেমন কিছু হয়নি। তারা ক্রমাগত অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো হচ্ছে- খাদ্যসামগ্রীসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। সেখানেও মানুষ ভীষণভাবে নিরাশ। বস্তুত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বরং অবনতি ঘটছে।

প্রশাসন পরিচালনায় নতুন গতির সঞ্চার হয়নি। সেখানে এক ধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভ্যাসগতভাবে কিছু কিছু পরিষেবা হয়তো সরকার দিচ্ছে। এটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু যে গতি থাকার কথা, সেরকম কিছু কার্যত দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও নানান ধরনের স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। সেসব কারণে বর্তমান সরকার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে এগিয়ে যেতে পারছে না। ফলে, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অনেকেই মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আসলে সরকার মৌলিক সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার না দিয়ে সংস্কার নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ সংস্কারই সময়সাপেক্ষ ও চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মধ্যে কেবল মাত্র নির্বাচনব্যবস্থার উপযুক্ত সংস্কার প্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি এবং বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে এক ধরনের লোক দেখানো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের সরকারপ্রধান বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন স্তরের লোকজন যেমন- প্রধান উপদেষ্টা, পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা, আইনবিষয়ক উপদেষ্টা- এরা সবাই সম্প্রতি দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন সম্মেলনে যোগদান করেছেন। সেখানেও তাদের কথাবার্তা, তাদের পারফরমেন্স নতুন করে খুব একটা আশাব্যাঞ্জক কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

এখন খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে- সরকারকে ভালো করে আবার সব বিষয়ে চিন্তা করে দেখার! দেশের অভ্যন্তরীণ যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলোর প্রাধিকার নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাহলেই কেবল আমাদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হবে। তবে একটা কথা বলতেই হবে, আর তা হলো, আমাদের একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। তার ফলে আমাদের বৈশ্বিক সম্পর্কগুলোর মধ্যেও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের নতুন সরকার আসার পরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে এক ধরনের নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। এর ফলে আমাদের সম্পর্কে যে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছিল, সেই গতি কিছুটা স্থিমিত হতে পারে। অন্যদিকে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের মানোন্নয়নে সরকার চেষ্টা করছেন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরপরই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। সেই টানাপোড়েনটা কমিয়ে ফেলা যায় কীভাবে, সরকার সেই চেষ্টা করছে এবং আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। ভারতের দিক থেকেও চেষ্টা হচ্ছে যে, এই সম্পর্কটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় কীভাবে? যদিও খুব বেশি অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে বড় রকমের কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। এই পরিবর্তনের ফলে বড় কোনো চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়নি- তবে সেখানে নতুন করে আবার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপার আছে। আমাদের বড় রকমের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সবকিছুর মধ্যে নতুন করে শুরু করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

সে ক্ষেত্রে একইরকমভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার ব্যাপারেও আলাপ-আলোচনা করে সহযোগিতার কার্যক্রমগুলো নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। সেদিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারে আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন এবং সেভাবেই চেষ্টা করছেন। মনে রাখতে হবে, এটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদেরও কিছুটা সময় দিতে হবে। বিশেষ করে, অভ্যন্তরীণ যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো সরকারকে মোকাবিলা করতে সহযোগিতা করতে হবে। সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে প্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের মৌলিক চাহিদার বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এসব অগ্রাধিকারগুলো মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১০০ দিন মানে যে বিশাল একটা লম্বা সময়, তা না হলেও এটা খুব কম নয়। অনেকেই সময়টুকু মাইল ফলক হিসেবে ধরেন। সেজন্য এটা নিয়ে অনেক বেশি আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে বড় রকমের পরিবর্তন হয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে, তার ফলে সরকারকে সম্মিলিতভাবে আরও কিছুদিন সময় দিতেই পারি! সরকার যেন তাদের রোডম্যাপটা ঠিক করতে পারে এবং সে ব্যাপারে ঘোষণা দিতে পারে। তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করবে। সে দিনের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং আমরা অপেক্ষা করে আছি! ১০০ দিন পার হওয়ার পর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি কিছুটা বলার চেষ্টা করেছেন যে, আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। বর্তমানে সরকার কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছে। তিনি যেমন আশার বাণী শুনিয়েছেন, তেমন নিজেরাও যথেষ্ট সন্তুষ্ট মনে হয়। তার এবং অন্যান্য উপদেষ্টার কথায় প্রায়ই নৈরাজ্য, অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ প্রকাশ পাচ্ছে। এ ইতিবাচক দিক হচ্ছে নিজেদের দুর্বলতা সম্বন্ধে সরকারের সচেতনতা। সে জন্য আমরা আশান্বিত হতে পারি। সরকার তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারছে এবং তা সমাধানে সচেষ্ট থাকবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. সদরুল আমিন শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার জরুরি

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার জরুরি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের শিক্ষা সংস্কারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী- এসব বিষয় নিয়ে খবরের কাগজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র সহসম্পাদক সানজিদ সকাল

খবরের কাগজ: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের বড় একটি সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। শিক্ষা সংস্কারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? 

ড. সদরুল আমিন: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিক্ষা সংস্কার অবশ্যই জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভিসি ছিলেন তাদের স্থলে নতুন করে যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাদের হওয়া উচিত যারা অত্যন্ত মেধাবী, কর্মঠ এবং দক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। যেসব শিক্ষক রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের পুনরায় উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে নির্বাচন করা উচিত। সবচেয়ে বড় যে বিষয় তা হলো- শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যদি ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া না হয়, তাহলে মেধাবীরা এই মহৎ পেশায় আসতে চাইবে না। তবে শিক্ষকদের জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।  

খবরের কাগজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল পরিবেশ জরুরি হয়ে উঠেছে, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।  

ড. সদরুল আমিন: বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণা ও আর্টিকেলগুলো প্রকাশ করা হয়, যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি বিশেষ করে পিএইচডি ও এমফিল-এর যত গবেষণা ও আর্টিকেল আছে তা সংরক্ষণ করা উচিত। কেউ যদি দেশের বাইরে গিয়েও গবেষণা করতে চায় সরকারের উচিত তাদের সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।  
 
খবরের কাগজ: শিক্ষা-সংস্কার ও কমিশন গঠন কেন জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

ড. সদরুল আমিন: শিক্ষাব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের শিক্ষানীতি এমনভাবে করতে হবে যাতে সবাই তা দেখতে ও বুঝতে পারে। সেখানে রাজনীতির কোনো বিষয় থাকবে না। মেধার বিকাশ ঘটানোর জন্যই শিক্ষা সংস্কার করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগও মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক আছেন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক উচ্চতর গবেষণার জন্য বিদেশে গেছেন তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দেশের মানুষের উপকার হবে। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিদেশে গবেষণা করতে গিয়ে আর দেশে ফিরে আসেন না। এটা মোটেও ঠিক না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চতর গবেষণা শেষে তাদের অর্জিত জ্ঞান দেশের তরুণদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে। অনেক শিক্ষক বিদেশে যেসব বিষয়ে গবেষণা করছেন এবং তদের সেই থিসিস আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জমা দেন না। ফলে এ দেশের শিক্ষার্থীরা জানতে পারে না তাদের গবেষণার বিষয় কী ছিল। তাই বিদেশে যারা গবেষণা করছেন তাদের প্রকাশনা অবশ্যই দেশে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।  

খবরের কাগজ: ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? সাম্প্রতিককালে আপনি মানবিক অবক্ষয় লক্ষ্য করছেন কিনা?
 
ড. সদরুল আমিন: শিক্ষক হিসেবে আমি সব সময় ছাত্রদের পাশে থেকেছি। শিক্ষকদের অবশ্যই সব ছাত্রকে একনজরে দেখা উচিত। ছাত্রদের প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করা উচিত নয়। শিক্ষকদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিলে অবশ্যই তারা ক্লাসে মনোযোগ দেবেন। শিক্ষকরা যখন ছাত্রদের সঙ্গে সময় দেবেন, তখন  ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি ব্যাংকের চাইতেও খারাপ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা আজ ভালো নেই। যারা সিভিল সার্ভিসে চাকরি করছেন, সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদে আছেন তাদের সঙ্গে তুলনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান ও আর্থিক সুবিধা কোনোটায় নেই। যে কোনো সার্ভিসেই শিক্ষক থাকুক না কেন, তাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ সম্মানি ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিটি যেন শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হয়ে ওঠে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। 

খবরের কাগজ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানবিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

ড. সদরুল আমিন: ছাত্ররা কোনো শিক্ষককে প্রকৃত শিক্ষক মনে করলে সেই ছাত্ররা কখনোই তার স্যারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে না। কোনো ছাত্রই খারাপ নয়। সব ছাত্রই শিক্ষককে সম্মান করে। কোনো ছাত্রই শিক্ষককে অসম্মান ও অমর্যাদা করতে পারে না। যদি কোনো ছাত্র শিক্ষককে অসম্মান করে তাহলে বুঝতে হবে তার পেছনে কোনো রাজনীতি নিহিত আছে। এখানে আমি ছাত্রের মধ্যে তেমন দোষ খুঁজে পাই না। দোষ রাজনীতির, দোষ সমাজের। বাংলাদেশে এমন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে ছাত্রদের কেউ খারাপ কাজে ব্যবহার করতে না পারে। 

খবরের কাগজ: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি কতটুকু প্রয়োজন বলে আপনি মনে করছেন? 

ড. সদরুল আমিন: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি করার মতো সুস্থ পরিবেশ থাকা দরকার। রাজনীতিকে অপব্যবহার করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পরিবর্তন আনা দরকার। যদি আবাসিক হলগুলোতে পুরনো ধারাই অব্যাহত থাকে, তাহলে আবারও ছাত্ররা রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে খারাপভাবে ব্যবহার করবে। সবকিছু গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত। ছাত্ররা রাজনীতি না করলে দেশে রাজনীতিবিদ কারা হবে? কিন্তু রাজনীতিরও একটা সীমা থাকা উচিত। ছাত্ররাই তো সবকিছু করবে। ছাত্ররা হলে মারামারি করবে, হল দখল করবে এগুলো ছাত্ররাজনীতির মধ্যে পড়ে না। ছাত্ররা সেমিনার করবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে- এমন রাজনীতি হওয়া উচিত। ছাত্ররাজনীতির  দরকার আছে। অনেক সময় দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময়ও ছাত্ররা উচ্চ শব্দে মিছিল করেছে ও গান বাজিয়েছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদের অবশ্যই সহনশীল হতে হবে। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ছবি নিয়ে আগে অনেক গণ্ডগোল হতো, আমরা উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। অবশেষে মারামারি বন্ধ হয়েছে। আমি ছাত্রদের যা বলেছি ওরা সব শুনেছে, কোনোদিন আমার অবাধ্য হয়নি ছাত্ররা। আমি যদি পরীক্ষার হলে থাকি কোনো ছাত্রনেতাও নকল করবে না, চুপচাপ পরীক্ষা দেবে। সেটাই আমি দেখেছি। শিক্ষকরা  যদি পরীক্ষার হলে বসে থাকে, ছাত্রদের সুযোগ তৈরি করে দেয়, তাহলে ছাত্ররা সুযোগ তো নেবেই। আমরা মানুষ, ফেরেস্তা না, সুযোগ দিলে সবাই সুযোগ নিতে চায়। শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে, যাতে তারা অনৈতিক কোনো কাজ না করে।

খবরের কাগজ: বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে মাঠে আন্দোলনে নেমেছে, এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? 

ড. সদরুল আমিন: বর্তমানে দেশে যে আন্দোলনগুলো হচ্ছে তার উৎস কোথায় আমাদের বুঝতে হবে। দেশে এখন যত আন্দোলন হচ্ছে তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক। আন্দোলনগুলো হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য। যারা কোনোদিন দাবি তোলেনি, তারাও এখন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এসব আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিহীকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা মোটেও ঠিক হয়নি। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অবশ্যই ক্ষুণ্ন হয়েছে। সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় জরিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং অনেকটা নিচের দিকে নেমে গেছে। যে সরকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা যে কেন করেছে তার কারণ আমি আজও খুঁজে পাই না। বর্তমানে যেসব কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি উঠেছে, সরকারের সেসব কলেজ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুললেই হবে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অবকাঠামোর দরকার হয়। দেশে এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে তেমন অবকাঠামো নেই। এমন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে দরকার নেই। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশের পুরাতন ভালো কলেজ ও অন্যান্য কলেজ নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে। সাত কলেজের জন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে। ইডেন কলেজ, হোম ইকোনোমিক্স,বদরুন্নেসা ও অন্যান্য কলেজ নিয়ে মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ অন্যান্য কলেজ নিয়ে ছেলেদের জন্য স্বতন্ত্র কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। ঢাকার মধ্যে সুন্দর জায়গা নির্বাচন করাটাও বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে নিয়ে পুনরায় ভাবা উচিত। 

খবরের কাগজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ড. সদরুল আমিন: খবরের কাগজকেও ধন্যবাদ।

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ পিএম
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লব এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এই বিপ্লব প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে আকস্মিক বলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরের ইতিহাসে শেখ হাসিনার শাসনামলকে নজিরবিহীন স্বৈরতন্ত্র চর্চার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। বিশেষ করে হাসিনা সরকারের শাসনামল মৌলিকভাবে বিপরীত দিকে চলে গিয়েছিল। গুম, খুন, হত্যা, গায়েবি হামলা, নির্যাতন  প্রতিদিনের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সর্বত্র নানারকম অত্যাচার হয়েছে। মানুষকে ন্যায়নীতিহীন দুঃসহ যাতনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। কোথাও কোনো নিয়মনীতি ছিল না। দেশের সাধারণ মানুষ মুখ বুজে সহ্য করছিল। কিন্তু আর নিতে পারছিল না। অনেকদিন থেকেই সাধারণ মানুষের মনের কথা ছিল যে, মানুষ পরিবর্তন চায়। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নানারকম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ আন্দোলন সংগঠিত করতে পারছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো যা দেখাতে পারেনি ছাত্ররা বেপরোয়া সাহস দেখিয়ে মানুষকে সাহসী করে তুলেছিল। সে কারণে জনগণ তাদের সঙ্গে মাঠে নেমে এসেছিল। একপেশে পুলিশি শক্তির ওপর নির্ভর করে এতদিন শেখ হাসিনার শাসন টিকে ছিল। সেই স্তম্ভ নড়বড়ে হয়ে ভেঙে পড়ায় দ্রুত সরকারের পতন হয়। আবু সাঈদ এবং অন্য অনেকের আত্মত্যাগ ও সাহস সেই ভয়কে ভেঙে দেয়। ভয় ভেঙে যাওয়ার এই মনস্তাত্ত্বিক উত্তরণ সরকারের পতন ঘটায়। ছাত্রদের আন্দোলনে যুক্ত হয় জনতা। সরকার এতদিন তাসের ঘরের মধ্যে ছিল। শুরুতে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যদিয়ে সরকারকে যেতে হয়েছে। এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। একই সঙ্গে তা কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকারের প্রধান কাজ ছিল মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশকে সুসংহত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের উচিত ছিল মানুষের সঙ্গে কথা বলা। জনগণের কাছে যাওয়া। তাদের কথা শোনা অর্থাৎ ব্যাপকভাবে জনবান্ধবমূলক উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। জনগণের আস্থাভাজন হতে এই কাজগুলো করা দরকার ছিল। এটা একটা রাজনৈতিক কাজ। একথা সত্যি যে, এই সরকার প্রচলিতভাবে রাজনৈতিক সরকার না হলেও তাদের কাজটা রাজনৈতিক। যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই পরিবর্তন নেতারা আনেননি। এই পরিবর্তন দেশের আমজনতা এনেছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ জরুরি ছিল। 

পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে আমলাতন্ত্র- সবখানেই তাদের সহচর রয়ে গেছে। তাদের পাল্টা আঘাত হানা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করা আমরা দেখেছি। কাজেই সেটি মোকাবিলা করাও একটি বড় কাজ ছিল; যা সরকার মোকাবিলা করেছে। কিন্তু গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগানোর বৃহত্তর কাজটি হলো কিনা, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের অর্থনীতি মূলত চলে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। তারা সক্রিয় হবে কিনা, তা নির্ভর করবে তাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে কিনা, তার ওপরে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খোলামেলা এনগেজমেন্ট কোথায়? ব্যবসায়ী মানে শুধু এফবিসিসিআই নয়। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের উদ্যোগ তো দেখছি না। সংকট সামাল দেওয়া একটা প্রায়োগিক কাজ। এটা তাদের করতে হবে। অর্থনীতির মূল কাজ আস্থা তৈরি ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি। বিবেচনা করতে হবে সরকার কাজটি করছে কিনা। দেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে। তাদের নিয়ে আমরা কীভাবে এগোব, সেই কার্যকর উদ্যোগ দরকার ছিল। উপদেষ্টাদের মাঠে-ময়দানে বেশি করে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ সাধারণ মানুষ তাদের দেখতে পেলে বুঝতে পারবে, সরকার কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে সেটা দেখা যাচ্ছে না। 

এখন মূল সমস্যা হচ্ছে, এই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার স্টাইলে। সবার আগে সরকারের নিজেকেই একটা বড় ঝাঁকুনি দিতে হবে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে। জনগণের কাছে যাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এটা সাধারণ মানুষের বড় উদ্বেগ। কোটা সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান; কিন্তু কর্মসংস্থানের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করলে আমরা কী উত্তর দেব জানি না। এ ব্যাপারে মনোযোগ কোথায়, উদ্যোগ কোথায়? সরকারকে অনেক দ্রুততার সঙ্গে কাজটি করতে হবে। বন্যার পর সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমলাতান্ত্রিকভাবে এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে গেলে দুই বছর বসে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের এখনই কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ দিয়ে দিতে হবে। আমাদের দেরি করার সময় নেই। 

দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতা, মানুষের প্রতি অত্যাচার, সীমাহীন পর্যায়ে গিয়েছিল। তিনটি আকাঙ্ক্ষা এখানে সর্বজনীন। প্রথমত, দৈনন্দিন সমস্যার সহনীয় সমাধান ও সমাধানের দৃশ্যমান ও কার্যকর চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, স্থিতিশীল পরিবেশ ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অন বোর্ড রাখতে কার্যকর বয়ান নির্মাণ। তৃতীয়ত, টেকসই ও নৈতিকতার ছাপ আছে এমন রাজনৈতিক উত্তরণের রোডম্যাপ তৈরি। অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা আলাদা অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে; কিন্তু এসব উদ্যোগ সামগ্রিক কোনো আস্থার পরিবেশ তৈরি করছে বলে মনে হয় না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের স্টাইল দৃশ্যত আমলা, বিশেষজ্ঞ ও ছাত্রদের ওপর অতি নির্ভরশীলতার ঘেরাটোপে ঘুরপাক খাচ্ছে। শেয়ারমার্কেট কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি; কিন্তু অনেক ছোটখাটো দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সরকারকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

রাজনৈতিক উত্তরণের টেকসই ও কার্যকারিতার বিবেচনায় এ মুহূর্তে পদে আসীন ব্যক্তির যোগ্যতার চেয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বহু গুণ বেশি বিবেচ্য বিষয়। তবে পদে আসীন ব্যক্তির কোনো হঠকারী প্রচেষ্টার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখাও জরুরি। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি লক্ষ্য হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য। যার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি পদটির দায়িত্ব ও ক্ষমতার একটি কার্যকর পর্যালোচনা ও সঠিক করণীয় নির্ধারণ। এটি গভীর মনোযোগের দাবি রাখে। সংবিধান সংস্কার নিয়ে একটি কেতাবি আলোচনা বেশ বেগবান হয়েছে। শূন্য থেকে শুরু করা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। সাংবিধানিক শূন্যতা রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য মারাত্মক হুমকি। মানুষের মর্যাদার অধিকারগুলো সংজ্ঞায়িত ও যুক্ত করে সংবিধানের ধারাগুলো সাজাতে হবে। ৫ আগস্টের পর যে শব্দটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে ন্যায়বিচার বা জাস্টিস। সর্বোতভাবে এটি নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার পাশাপাশি একই সঙ্গে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সমন্বয় করে আমাদের কাজ করতে হবে। 

সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য ফেরানো একটি জরুরি কাজ হলেও বৃহত্তর কাজ হচ্ছে অর্থনীতির চাকাকে আরও চাঙা অবস্থায় ফেরানো। যাতে কর্মসংস্থান ত্বরান্বিত হতে পারে। বিনিয়োগ বাড়তে পারে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় করার জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি হতে পারে। আইএমএফের কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ শত শত বিলিয়নের সম্ভাবনার দিকেই নজর দিতে হবে। তা দিতে হবে কার্যকরভাবে, শুধু ঘোষণা ও আমলাতান্ত্রিক আশ্বাসের মধ্যদিয়ে নয়। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি থেকে সহায়তা পাওয়া অবশ্যই স্বস্তির জায়গা। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রকট দুর্বলতাগুলো কাটাতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মনে হয়।  

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কীভাবে সংশোধন করবে, বাংলাদেশকে নিজের জন্য একটি মানসিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম বার্তা হচ্ছে- বাংলাদেশ কোনো ধরনের আধিপত্যবাদী চাপ বরদাশত করবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আর আধিপত্যবাদী চাপকে রুখে দাঁড়ানো- এ দুটি আলাদা বিষয়। আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অবশ্যই সুসম্পর্ক রক্ষা করব এবং একই সঙ্গে কোনো আধিপত্যবাদী মনোভাবকে মেনে নেব না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরা এবং এ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আমাদের ঠিক করতে হবে বাংলাদেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতীকে পরিণত হওয়া কোনো অলীক কল্পনা নয়। তৃতীয়ত, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সংকীর্ণ মাইন্ডসেটআপে আবদ্ধ রয়েছি। এই মানসিক পরিসর বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশের মানসিক শক্তির যে বিকাশ ঘটেছে, এখন থেকে বৈশ্বিক দক্ষিণকেও আমাদের অন্যতম বিচরণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং ধাপে ধাপে বৈশ্বিক দক্ষিণের অন্যতম জাতিরাষ্ট্রে উন্নীত করতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে জনগণের মনে অনেক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে সুযোগও তৈরি হয়েছে। সরকার যাতে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালোমতো সেই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে, আমাদের সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চেষ্টা করে যেতে হবে। 

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, পিপিআরসি

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });