যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে। এগুলোর কোনোটি ব্লু, আবার কোনোটি রেড স্টেট হিসেবে পরিচিত। নীল অঙ্গরাজ্যগুলো ডেমোক্র্যাটদের। আর লালগুলো থাকে রিপাবলিকানদের দখলে। বেশির ভাগেরই ভোট আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি অঙ্গরাজ্য রয়েছে যেগুলোর ভোট পরিবর্তিত হয়। এই ধরনের অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য।
এসব দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মোট সাতটি অঙ্গরাজ্য পেয়েছে দোদুল্যমানের তকমা। এগুলো হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর জনমত জরিপের তথ্য বলছে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান খুবই সামান্য।
অ্যারিজোনা
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন স্টেট’ নামেও পরিচিত। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ অঙ্গরাজ্য থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। কিন্তু ২০২০ সালে এসেই সে হিসাব পাল্টে যায়। স্বল্প ব্যবধানে ট্রাম্পকে পরাজিত করে বিজয়ী হন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো বাইডেন।
এর মধ্য দিয়ে অনেক বড় এক রেকর্ডেরও ইতি ঘটে। এ শতাব্দীর মধ্যে বাইডেন বাদে আর কোনো ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ওই অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হতে পারেননি। অ্যারিজোনাকে অভিবাসন, অধিবাসীতে পরিবর্তন আসা- ইত্যাদি নানা কারণে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হয় ইলেক্টোরাল ভোটের মাধ্যমে। এই অঙ্গরাজ্যটির হাতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১১টি।
জর্জিয়া
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যটিও এবারের নির্বাচনে দোদুল্যমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটির হাতে রয়েছে ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। ১৯৯২ সালে জর্জিয়া থেকে জয়ী হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিল ক্লিনটন। তারপর দীর্ঘ সময় আর কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ওই অঙ্গরাজ্যে জয়ের দেখা পাননি।
২০২০ সালে এসে রিপাবলিকান পার্টির হাত থেকে ছুটে যায় অঙ্গরাজ্যটি। সেবার জয়ী হন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তার এই বিজয়ের পেছনে অন্যতম যে বিষয়টি ভূমিকা রেখেছিল, তা হলো- কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের উপস্থিতি। এবারের নির্বাচনেও আগের ধারবাহিকতা বজায় থাকে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
মিশিগান
মিশিগানে বেশির ভাগ সময়ই ডেমোক্র্যাটরা বিজয়ের দেখা পান। তবে মাঝেমধ্যে যে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীরা এতে জয়ী হননি, তা নয়। ২০২০ সালের নির্বাচনে মিশিগানে জিতে যান বাইডেন। অথচ আগের নির্বাচনেই ২০১৬ সালে ওই অঙ্গরাজ্যে জিততে পারেননি হিলারি ক্লিনটন।
সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, অর্থনীতিকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে থাকে এই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা। সেখানে বসবাসকারী শ্রমজীবী শ্রেণিকে যে দল টানতে পারে, সে দলই বিজয়ী হয়। অঙ্গরাজ্যটির হাতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১৫টি।
নেভাডা
অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় নেভাডার ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা কম, মাত্র ছয়টি। কিন্তু এই অঙ্গরাজ্যটি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট। গত চার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধরে এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিই জিতেছে। তবে ব্যবধান ক্রমশ কমছে। ফলে এটি রিপাবলিকান পার্টির হাতে চলে যাবে কি না, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না।
২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন এবং ২০২০ সালে জো বাইডেন বিজয়ী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান ছিল খুবই কম। এই অঙ্গরাজ্যটি এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেভাডার মোট অধিবাসীর প্রায় ৩০ শতাংশ হিস্পানিক বা স্প্যানিশ ভাষাভাষী। এ অঙ্গরাজ্যের অধিবাসীরাও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে ভোট দেন।
নর্থ ক্যারোলাইনা
নর্থ ক্যারোলাইনা রিপাবলিকান পার্টি ঘেঁষা অঙ্গরাজ্য। তবে তাদের ভোট কমতে শুরু করেছে। ২০২০ সালে ট্রাম্প এ অঙ্গরাজ্যে মাত্র ১.৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে জয়ী হন। ডেমোক্র্যাটরা এবার এ অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন। এই অঙ্গরাজ্যের হাতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১৬টি।
পেনসিলভানিয়া
২০২০ সালে এই অঙ্গরাজ্যে জয়ের দেখা পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো বাইডেন। এর আগের ২০১৬ সালের নির্বাচনে অঙ্গরাজ্যটি জিতে নেন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন খুব বেশি ব্যবধানে জিততে পারেননি। প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। অঙ্গরাজ্যটির হাতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১৯টি। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট এই অঙ্গরাজ্যের হাতেই।
উইসকনসিন
এক সময় উইসকনসিনকে বিবেচনা করা হতো ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবেই। তবে ২০১৬ সালে হিসাব পাল্টে যায়। ট্রাম্প বিজয়ী হন অঙ্গরাজ্যটিতে। এর মধ্য দিয়ে অনেকটা পাকাপোক্তভাবেই ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে নাম লেখায় উইসকনসিন। পরে বাইডেন ২০২০ সালে এসে জয়ী হন অঙ্গরাজ্যটিতে।
২০২৪ সালে কমলা ও ট্রাম্প- দুই প্রার্থীই উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করেছেন অঙ্গরাজ্যটিতে। কেউই উইসকনসিনের ১০টি ইলেক্টোরাল ভোট হাতছাড়া করতে চাইছেন না। সূত্র: ইউএসনিউজ