ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কপাল খুলতে পারে মিত্রদের

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৪৮ পিএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম
কপাল খুলতে পারে মিত্রদের
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ১০ জনের মতো সংসদ সদস্য ও একাধিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা। বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থীও। তাদের বাদ পড়ায় কপাল খুলতে পারে আওয়ামী লীগের একাধিক নতুন মিত্র দলের। বাছাইয়ে বাদ পড়া সংসদ সদস্যদের আসনে তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টির একাধিক নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখা যেতে পারে।

যেসব সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা হলেন- বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী, গণ ফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুন, দিদারুল আলম, মামুনুর রশীদ কিরণ প্রমুখ।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নেতারা নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তির পর বোঝা যাবে গতকাল মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না।

বিকল্প ধারা বাংলাদেশ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুটি আসনে জয় পায়। দলের মহাসচিব আব্দুল মান্নান নোয়াখালী-৪ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য হন। এবারও তারা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে গতকাল দুই নেতার মনোনয়নপত্রই বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ঋণখেলাপির অভিযোগে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সন্তান মাহী বি চৌধুরী এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আশায় ছিলেন। কিন্তু গতকাল খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় মাহীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিমা হুদা প্রার্থী হয়েছেন। তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে এ আসনে অন্তরা সেলিমা হুদাকে সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নানের আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি নোয়াখালী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। এবার কপাল খুলতে পারে একরাম চৌধুরীর।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ মনোনয়ন ফিরে না পেলে আসনটিতে মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। কল্যাণ পার্টি দীর্ঘদিন বিএনপি জোটে থাকলেও সম্প্রতি তারা জোট থেকে বেরিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দলের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইয়াহইয়াহ চৌধুরীর মনোনয়নপত্র স্থগিত হয়েছে। কর-সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এ আসনটি বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। 

পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়নপত্র স্থগিত হয়েছে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান  রুহুল আমিন হাওলাদারের। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন।

নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি জাকের পার্টি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থীর মনোয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ওই আসনে সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদ ভোটার স্বাক্ষর প্রশ্নে
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদ পড়েছেন এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন পূরণ করতে না পারা এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণে। আর বেশির ভাগ দলীয় প্রার্থী বাদ পড়েছেন হলফনামায় তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপির কারণে। দেশের ৪০টি আসন থেকে খবরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে।

ঝালকাঠি-১ আসনে ভোটারদের স্বাক্ষর গরমিলে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির, ইসমাইল হোসেন, নুরুল আলম ও ব্যারিস্টার আবুল কাশেম মো. ফকরুল ইসলাম।

বরগুনা-১ আসনে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর পাওয়ায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

বরগুনা-২  আসনে ভোটারদের স্বাক্ষরে গরমিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঝালকাঠি-২ আসনে আয়কর জমা না দেওয়ায় জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দীন ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

ভোলা-১ আসনে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তথ্য ঠিক না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

সাতক্ষীরা-২ আসনে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আব্দুল আজিজের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রাজশাহীর ছয়টি আসনে ৬০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগই বাদ পড়েছেন ১ শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে।

রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, আগে কখনো নির্বাচিত হননি, আবার দলীয় প্রার্থীও নন এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। তারা প্রার্থীদের দেওয়া এই স্বাক্ষর থেকে ১০ জন করে ভোটারের তথ্য যাচাই করেছেন। এতে কারও কারও তালিকায় গরমিল পাওয়া গেছে। আবার কারও মামলা কিংবা ঋণসংক্রান্ত সমস্যা আছে। সেই কারণে ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ জনের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। অন্য ৩৬টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গাজীপুর-১ আসনে ঋণখেলাপির অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা এম এম নিয়াজ উদ্দিনের প্রার্থিতা  বাতিল করা হয়েছে।

জামালপুর-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির গোলাম মোস্তফা হলফনামা সঠিকভাবে দাখিল না করায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক ও মাহবুবুল হাসানের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী আব্দুল হালিম মণ্ডল হলফনামা সঠিকভাবে দাখিল না করায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া, এম এম শাহিনুজ্জামান ও শাহজাহান আলী মণ্ডলের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলামের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ভোটারদের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় শরীয়তপুর-১ আসনের  স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এবং শরীয়তপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. খালেদ শওকত আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

নড়াইল-২ আসনে ভোটার স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু ও নুর ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। 

মেহেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা  হলেন অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম জুয়েল, নুরুল ইসলাম রিন্টু, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, ডক্টর আশরাফুল ইসলাম ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুকুল। 

তারা ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের শর্ত পূরণ করতে পারেননি।

ফরিদপুর-১ আসনে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আরিফুর রহমান দোলনের ফরমে মনোনীত প্রার্থীর ঘরে স্বাক্ষর না থাকায় তা বাতিল বলে ঘোষণা দেন রিটার্নিং অফিসার।

অর্থঋণ আদালত: ৯০ শতাংশ মামলাই নিষ্পত্তি হয় একতরফা

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
অর্থঋণ আদালত: ৯০ শতাংশ মামলাই নিষ্পত্তি হয় একতরফা

ঢাকার অর্থঋণ আদালতে গত জুলাই মাসে দোতরফা ও একতরফা মিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৭০০টি। এর মধ্যে মাত্র ৬৮টি মামলা দোতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে, আর বাকি ৬৩২টি মামলাই নিষ্পত্তি হয়েছে একতরফা। শতাংশের হিসাবে দেখলে মামলাগুলোর মধ্যে দোতরফা নিষ্পত্তির হার ১০ শতাংশেরও কম, কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তির হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। এর বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ (এডিআর) অন্যান্য পদ্ধতিতেও কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ওই মাসে।

আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ে আসা ‘ঢাকা জেলা জজশিপের জুলাই ২০২৪ ইং মাসের দেওয়ানি মোকদ্দমার কার্যবিবরণী’তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে গত এপ্রিলের কার্যবিবরণীও দৈনিক খবরের কাগজের হাতে আসে। পরের মাস মে মাসে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন এই বিবরণীতে স্বাক্ষর করার পর তা সলিসিটর কার্যালয়ে আসে।

ওই বিবরণী অনুসারে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে গত এপ্রিল মাসে দোতরফা ও একতরফা মিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২৩টি। এর মধ্যে মাত্র ৪৬টি মামলা দোতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে, কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৭৭টি। শতাংশের হিসাবে দেখলে এর মধ্যে দোতরফা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, যখন একতরফা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৯১ দশমিক ২০ শতাংশ।

এর বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ (এডিআর) অন্যান্য পদ্ধতিতেও ১৬২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সেটি হিসাবে আনলে ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতে নিষ্পন্ন মোট ৬৮৫টি মামলার মধ্যে দোতরফা ও একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭ ও ৭০ শতাংশ। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ে আসা ‘ঢাকা জেলা জজশিপের এপ্রিল ২০২৪ মাসের দেওয়ানি মোকদ্দমার কার্যবিবরণী’তে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সলিসিটর দপ্তরে আসা এর আগের মাস অর্থাৎ গত মার্চে মামলা নিষ্পত্তির চিত্রও প্রায় একই। ওই মাসে দোতরফা ও একতরফা মামলার সঙ্গে এডিআরসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে নিষ্পন্ন মামলার মোট সংখ্যা ৮০২টি। যেখানে দোতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার ৮ শতাংশেরও কম, কিন্তু একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার প্রায় ৭২ শতাংশ।

দোতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার এত নগণ্য বা একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার এত বেশি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জানতে চাইলে সাবেক বিচারক শাহজাহান সাজু দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘নানা কারণেই মামলা একতরফা নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়, তাদের অনেকেই হয়তো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় করতে গিয়ে সফল হননি, দেউলিয়া হয়ে গেছেন। পরে ব্যবসায় গুটিয়ে অফিসে তালা ঝুলছে। 

কিন্তু মামলা হওয়ার পর হয়তো ওই ঠিকানাতেই আদালতের সমন বা সব কাগজপত্র যায়। আমার বিশ্বাস এসব কারণে তারা আদালতের সমন বা কাগজপত্র পান না। ফলে মামলাও একতরফা নিষ্পত্তির দিকে এগোয়। কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তির পর যখন দেখে যে তার বিরুদ্ধে ক্রোক/ডিক্রি বা এমন রায় হয়ে গেছে, তখন টনক নড়ে, আদালতে এসে দোতরফা নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করে।’

কিন্তু কেউ তো মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলার জন্যেও আদালতের সমন রিসিভ না করে এড়িয়ে চলতে পারেন, কারণ পরে দোতরফা নিষ্পত্তির জন্য আদালতে আবেদন করা যাবে- বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে বাদীর উচিত হবে আদালতের আদেশ বিবাদীকে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে পাঠানো। 

যেমন- মেসেজ, বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি। তাহলে একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী আবেদন করলে তিনি তা আদালতকে অবহিত করতে পারবেন যে সময়ে সময়ে বিবাদীতে এসব বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তথ্য পাঠানো হয়েছিল, তিনি তা দেখেছেন, কিন্তু এখন আদালতকে অসত্য তথ্য দিয়ে মামলাটিকে দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলতে চান। তাতে আদালতের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধরুন, আপনি একজনকে একটা চেক দিয়েছেন, কিন্তু চেক ডিজঅনার হয়েছে। এখন এই টাকা তো আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। এই অবস্থায় চেক ডিজঅনার মামলা হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো তেমন কিছু এলে, আপনার হাতে তো নেই। 

এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে আদালতের ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপ করে থাকেন। তখন মামলাটি একতরফা নিষ্পত্তির দিকে যায়। পরবর্তী সময়ে সেকশন-১৯-এর অধীনে আবেদন করে। তখন আবার দোতরফা নিষ্পত্তির দিকে মামলা এগোয়। এতে করে মূলত দেনা পরিশোধে সময়ক্ষেপণ করা যায়।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে আইন পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (লিগ্যাল কনসালট্যান্সি ফার্ম) ‘সাত্তার অ্যান্ড কোং’-এর প্রধান সামির সাত্তার বলেন, ‘এমন কেউ তো থাকতেই পারেন, যিনি সত্যিই কোনো কারণে আদালতের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেননি বা আদালতের নির্দেশ তার কাছে পৌঁছায়নি। 

তাই তার জন্য তো একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ থাকতে হবে। না হলে তো তার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। আর আইন তো সবার জন্যই সমান, সবাই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তাই অন্য কেউ ভুক্তভোগী না হয়েও এই সুযোগ নিয়ে মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেললেও আপাতত কিছু করার নেই।’

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য ২০২১ সালে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ব্যাংকিং ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান যেসব বিষয় অধস্তন আদালতকে মোকাবিলা করতে হয়, সেগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রায় সব বিষয়েই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। 

দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিষয়গুলো ওয়েল সেটেল্ড। মামলার পক্ষগুলোও আসলে জানে, এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। তাই কেউ কেউ একটা অপকৌশলের আশ্রয় নিতে পারে যে মামলায় আদালতের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া। তাতে করে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি একতরফাভাবে হলেও আদালতকে নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু একতরফাভাবে নিষ্পত্তি হলে এর বিরুদ্ধে আবার আদালতে আবেদন করা যাবে। এতে করে মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলা যায়, অর্থাৎ দেনা পরিশোধে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়। এক কথায় বলতে গেলে, মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলার অপকৌশল হিসেবে কেউ এটা করতে পারেন।’

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস এখনো পিছিয়ে পল্লি অঞ্চলের মানুষ

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ এএম
এখনো পিছিয়ে পল্লি অঞ্চলের মানুষ
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

সাক্ষরতার হারে দেশের পল্লি অঞ্চলের মানুষ এখনো শহরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ পিছিয়ে আছে। একই চিত্র দেখা গেছে নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এমন বাস্তবতায় আজ ৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাক্ষরতার হারে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেও বৈষম্য আছে। সাক্ষরতার জন্য আলাদা কোনো কর্মসূচি কোথাও নেই। যেটুকু আছে তা প্রকল্পভিত্তিক। আমরা অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছি, এই প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। কারণ প্রকল্প যখন শেষ হয়ে যায়, প্রকল্প শুরু হতে হতে আবার ভুলে যায় (যা শিখেছে)। সাক্ষরতার হারে যে বৈষম্যগুলো আছে, সেগুলো যদি নিরসন করতে হয়, তাহলে একটা দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪-এর ইউনেসকো নির্ধারিত প্রতিপাদ্য হচ্ছে, বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) ২০২৩ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্থূল সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে একজন ব্যক্তি যদি সাধারণভাবে কোনো বাক্য লিখতে পারে, এসভিআরএসে তাকে স্বাক্ষর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

বিবিএসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাত বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সাক্ষরতার হার পল্লি জনসংখ্যার তুলনায় শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। পল্লি অঞ্চলে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, আর শহরাঞ্চলে এ হার ৮৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। 

বিভাগ পর্যায়ের হিসাবে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে সাত বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি (৮৪.৩০ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৯ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে তা ৭৯ দশমিক ২২ শতাংশ। সর্বনিম্ন সাক্ষরতার হার পাওয়া গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

সাক্ষরতার হারে পল্লি ও শহরের মধ্যে ব্যবধান ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। পুরুষ ও নারী উভয়ের সাক্ষরতার হারের ক্ষেত্রেই এ ব্যবধান বিদ্যমান। পল্লি ও শহরের পুরুষ জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হারের ব্যবধানের প্রান্তসীমা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

তবে সাক্ষরতার সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়ে ভিন্নমত জানিয়ে গণসাক্ষরতার নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, সাক্ষরতার সংজ্ঞা বিবেচনা করা হয়েছে বিবিএসের হিসাবে, সেটা হলো যে লিখতে পারে, পড়তে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংজ্ঞাটা বিবেচনা করা উচিত। যেটা ইউনেসকো দিয়েছে। যে লিখতে পারে, পড়তে পারে, অঙ্ক করতে পারে কিন্তু বুঝতেও পারে। বুঝেশুনে লিখতে পারে। যেটাকে কমপ্রিহেনশন বলে। এখানে যে সাক্ষরতা মাপা হয়েছে এটা আংশিক। এটা সংজ্ঞাগত পার্থক্য। এই সংজ্ঞাগত পার্থক্য আছে বলেই সাক্ষরতার হার বেশি আসছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪’ পালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সচিব বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো রাজধানীর তেজগাঁওয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে উদযাপিত হয়ে আসছে।

ওবায়দুল কাদেরের ভিআইপি পিআরও

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
ওবায়দুল কাদেরের ভিআইপি পিআরও
ওবায়দুল কাদেরের পাশে দাঁড়ানো শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ

আলাদিনের চেরাগ হাতে না পেলেও মাত্র ১০ বছরে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক তদবিরের পাশাপাশি সড়ক ও সেতু বিভাগে সিন্ডিকেট তৈরি করে পারসেন্টেজ নিতেন ওয়ালিদ। তিনি বদলি, পদোন্নতি ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণেও ছিলেন যুক্ত। এসব করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন ওয়ালিদ, তার মূল দায়িত্ব তথ্যসেবা দেওয়ার কথা হলেও তিনি এই ক্ষেত্রে সময়ও দিতে পারতেন না। দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা ফোন করে ওয়ালিদকে কখনোই পেতেন না- এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা ওয়ালিদকে ‘ভিআইপি পিআরও’ বলেও সম্বোধন করতেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তথ্য ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। শেখ পরিবারের এক নেতার বিশেষ তদবিরে সুযোগ পান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) হিসেবে চাকরি করার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় ওবায়দুল কাদেরের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন শেখ ওয়ালিদ। পিআরও হলেও মূলত ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট ও আস্থাভাজন। মন্ত্রণালয়ে তৈরি করেন ‘পারসেন্টেজ সিন্ডিকেট’। শুধু তা-ই নয়, সরকারের কর্মচারী হয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (শীর্ষ পদ) ওবায়দুল কাদেরের পদের প্রভাবও বিস্তার করতে শুরু করেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। নিজের ঘনিষ্ঠ লোকদের জন্য ওবায়দুল কাদেরকে দিয়ে করাতেন তদবির। এই তদবিরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাজই নয়, রাজনৈতিক পদবি, দলীয় নমিনেশন (চেয়ারম্যান), বদলি বাণিজ্যও করাতেন শেখ ওয়ালিদ। হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে সেতু বিভাগের পিআরও হিসেবে যোগ দেন শেখ ওয়ালিদ। সড়ক বিভাগের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে সড়ক ও সেতু দুই বিভাগেরই তথ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পান ওয়ালিদ। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস মহিদুল হক আপেল, রাজনৈতিক সচিব আব্দুল মতিন, পিও জাহাঙ্গীর আলম ও শুখেন চাকমাকে নিয়ে ওয়ালিদ মন্ত্রণালয়ে গড়ে তোলেন পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেট। সড়ক বিভাগের সাবেক পিআরও নাসিরকে আর মন্ত্রীর কছে ভিড়তে দেয়নি এই সিন্ডিকেট। শুধু তা-ই নয়, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ‘সব ঠিক চলছে’ বলে মন্ত্রণালয়েও আসতে নিরুৎসাহিত করত। এই সিন্ডিকেট জোট হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাব-কন্ট্রাক্টরি, বিভিন্ন তদবির করত এবং এসব কাজের পারসেন্টেজ সবাই মিলে ভাগ করে নিতেন। এর মধ্য থেকে একটি পারসেন্টেজ মন্ত্রীর পকেটে যেতো। 

এদের দাপটের সময়ে দেশের মেগা প্রকল্পগুলো থেকে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল ও চার লেন সড়কের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা হাতে রেখে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উপকরণ মাটি, বালু, ইট-পাথর, রড সরবরাহের ঠিকাদারদের কাছ থেকেও নিতেন পারসেন্টেজ। পাশাপাশি সড়ক ও সেতু বিভাগ, অধিদপ্তরগুলোতে টাকার বিনিময়ে কর্মকর্তাদের পদায়ন করতেন এই সিন্ডিকেট সদস্যরা। একই সঙ্গে কাজের বিল নিয়ে নয়ছয়, বিল পাস করিয়ে দেওয়া, পদোন্নতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ হেন কোনো কাজ নেই যা তারা করেননি। কেউ এই অর্থ পরিশোধ করতে বিলম্ব করলে কাজ অন্য ঠিকাদারদের হাতে চলে যেত।

আওয়ামী লীগের আমলে সড়ক ও সেতু বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আর এই সুযোগে নামে-বেনামে নানা খাত সৃষ্টি করে কয়েক শ কোটি টাকা কামিয়েছেন ওয়ালিদ ও তার সিন্ডিকেট। দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে কোথাও যথাযথভাবে সময় দিতে পারেননি ওবায়দুল কাদের। এই সুযোগটাই কাজে লাগান ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা। ওয়ালিদ শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের তদবির করতেন তা নয়, আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের পদ-পদবির তদবিরও করাতেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন হওয়ায় অর্থের পেছনে নয়, অবৈধ অর্থই ছুটেছে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজের পেছনে।

এই টাকা দিয়ে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ সাধারণ জীবনযাপনের বদলে রাজকীয় জীবনযাপন শুরু করেন। অবৈধ অর্থ দিয়ে শুরু করেছিলেন হাউজিং ব্যবসা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় জমি কিনে মাটি ভরাটের পর প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন সরকারের এই কর্মচারী। ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেও অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট থাকার খবর পাওয়া গেছে। কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরে কিনেছেন জমি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকটি স্থানে ওবায়দুল কাদেরের তদবিরে হাঁকিয়েছেন দোকান। এসব সম্পদ নিজের নামে না করলেও ভাইবোন ও ঘনিষ্ঠদের নামে করেছেন শেখ ওয়ালিদ। 

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, জেলার চিতলমারী উপজেলার বড়গুনী গ্রামের শেখ ফয়জুল্লাহর ছেলে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন এই পিআরও নিজ উপজেলায়ও প্রভাব খাটাতেন। ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদে তিনি নিজের উপজেলা-ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের জন্য নানা সুপারিশ করতেন। পাশাপাশি বোনকেও চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। তার মেজো বোন মিলিয়া আমিনুল গোপালগঞ্জ জেলার ২ নম্বর বর্নি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এলাকায় আত্মীয়স্বজন সবার জন্য তদবির করাতেন ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে।

আধিপত্য কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের এবং ভাইবোনের নামে করেছেন অঢেল সম্পত্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ ওয়ালিদ অবৈধ অর্থে নানান কিছু গড়ে তোলেন। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পাঁচ বিঘা পেলেও নিজের তদবির বাণিজ্যের অর্থের মাধ্যমে এখন তিনি ৯ বিঘা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, অবৈধ অর্থে আরও গড়েছেন দুটি মৎস্যঘের ও একটি কলার বাগান।

ওয়ালিদের বাবার সেমিপাকা বাড়ি ছিল। তবে ওবায়দুল কাদেরের বদৌলতে করেছেন বাগানবাড়ি। পুরো এক বিঘা জায়গার ওপর ইটের উঁচু প্রাচীরঘেরা তার বাড়িটি। ইতোমধ্যে দোতলা একটা বাড়ি তৈরি হয়েছে। পাশে একতলা নির্মাণাধীন বাড়ি করতেও দেখা যায়। এ ছাড়া শেখ ওয়ালিদের শ্বশুরের দোতলা নির্মাণাধীন আলিশান বাড়ি রয়েছে। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রভাবে ২০২৩ সালে বেদখলে থাকা ২ একর ২৯ শতক জমি প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়েছেন। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই আত্মগোপনে যান ওবায়দুল কাদের। এরপর কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে চলেন সেই ভিআইপি পিআরও ওয়ালিদ। এখন তিনি তথ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। 

যদিও নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমার কোথায় বাড়ি-গাড়ি রয়েছে তা আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন। আমি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে আপনাদের (সাংবাদিক) সম্পর্ক ভালো। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এখন টেন্ডার বা তদবির বাণিজ্য আমার কাজ নয়। রাজনৈতিক তদবির তো আমার কাজও না। বাগেরহাট নিজের এলাকার সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা-দাদার আমল থেকে আমরা কিছু সম্পত্তি পেয়েছি। সেগুলো দিয়ে কিছু কৃষিকাজ ও মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। এর বাইরে এত কিছু নেই।’

ভারতীয় ঋণে রেল প্রকল্প ঝুলে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ এএম
ঝুলে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবা বিস্তৃতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া ছয়টি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কোনো কোনোটির মেয়াদ ফুরালেও এখনো চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। গত ১০ বছরে দুইটি প্রকল্পের কাজই শুরু করা যায়নি, কাজ শুরু হলেও বন্ধ আছে তিনটি প্রকল্প। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার কাজ ঝুলে গেছে বলে জানা গেছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় রেলের মোট প্রকল্প রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে খুলনা-মোংলা রেলপথের। সেটিও কয়েকবার সময় বাড়িয়ে শেষ করা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলো হলো বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্প, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প, পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়েল গেজ লাইন প্রকল্প।

এলওসি ঋণের শর্তে বলা হয়েছে, প্রকল্পগুলোর ৭৫ শতাংশ অর্থায়ন আসবে ভারত থেকে, বাকি ২৫ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ। আর ভারতীয় ঋণের সব প্রকল্পের অর্থ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। চুক্তি অনুসারে ৭৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে, বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারতের বাইরে থেকে কেনা যাবে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রেলের এসব প্রকল্পের কাজে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। কারণ ভারতের ঋণে চলমান প্রকল্পের ঠিকাদাররা নিরাপত্তার কারণে ৫ আগস্টের পর ভারতে চলে গেছেন। তারা কবে এসে প্রকল্পের কাজে যুক্ত হবেন, তা নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। 

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রেলওয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে রেলওয়ের এলওসি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। 

এদিকে এলওসি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব প্রকল্পের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়ে প্রকল্প কর্মকর্তারা একাধিক চিঠি দিলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জবাব দেয় না সময়মতো। তা ছাড়া অর্থছাড়েও কালক্ষেপণ করে ভারতের কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এলওসি প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে অনুমোদনের শর্ত দিয়েছে ভারত। ভারতীয় ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগের বাধ্যবাধকতাও দিয়েছে দেশটি। 

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রকল্প, সাড়া দিচ্ছে না ভারতের এক্সিম ব্যাংক
২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু হয় ভারতের এলওসির আওতায় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের কাজ। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ ফুরানোর কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। পরে সময় আরও বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত। 

প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড় নিয়ে ভারতের এক্সিম ব্যাংককে চিঠি দিলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো চিঠির উত্তর দেয়নি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। শর্ত মোতাবেক এলওসির আওতাভুক্ত হওয়ায় প্রাথমিক ঠিকাদার নির্বাচন করবে এক্সিম ব্যাংক। ওই ব্যাংক ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলে দরপত্র আহ্বান করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে গত বছরের অক্টোবরে ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য ভারতকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো জবাব আসেনি। ফলে প্রকল্পটি কবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। সব ধরনের কাগজপত্র ভারতের এক্সিম ব্যাংককে পাঠানো আছে। ঋণ ছাড় হলে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। 

চার দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্প
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। প্রকল্প অনুমোদনের কয়েক বছর পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন; ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৮ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু যথাসময়ে প্রকল্প শেষ হয়নি; মেয়াদ বাড়ানো হয় চার দফায়। জানা গেছে, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প কাজের চতুর্থ দফা বর্ধিত মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৫ শতাংশ। এরই মাঝে পঞ্চম দফা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

প্রকল্প পরিচালক মো. সুলতান আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পে এখন বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছেন। ভারতের কর্মকর্তারা কেউ নেই। তাদের এখন মন্ত্রণালয় থেকে আসার অনুমতি দেয়নি। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডাবল লাইন 
রাজধানী ঢাকায় রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১২ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ভারত যুক্ত হওয়ার পর এই প্রকল্পে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ঋণ দিতে রাজি হয়। বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পে ৫২১ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পে নির্মাণ ও পরামর্শক ব্যয় ভারত দেবে। বাংলাদেশ দেবে ট্যাক্স, ভ্যাট ও জনবল খাতের ব্যয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া জানান, এ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতেই লেগেছে ছয় বছর। আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ায় বাস্তবায়ন নকশার পরিবর্তন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের এক্সিম ব্যাংক এখন অর্থায়ন করবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা আর দেবে কি না জানি না।’

খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্পে ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি
বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা থেকে দর্শনা জংশন সেকশনে সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করার জন্য ২০১৮ সালে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। 

এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। যথাসময়ে শেষ হয়নি বলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শুরু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছয় বছর ধরে এই প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এলওসির এই প্রকল্পে এখনো অর্থ ছাড় করেনি ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এ ছাড়া এখনো ঠিকাদার নিয়োগ করা যায়নি। 

প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, ‘রেলওয়ে ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করতে প্রস্তুত। এতে এই প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বাড়বে। কত টাকা ব্যয় বাড়বে তা ভারতকে জানাব, তারপর এই প্রকল্পের কী হবে বলতে পারব।’ 

পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়েল গেজে রূপান্তর
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পুরোনো লাইনের পাশ দিয়েই নতুন ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ঋণসহায়তা পাওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি এখনো। এখনো চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। এই প্রকল্পেও ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সিম ব্যাংক পরামর্শক নিয়োগের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্মতি দিতে সময়ক্ষেপণ করে। এর ফলে প্রস্তাবিত মেয়াদের শেষের দিকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান জাবির বলেন, ‘এখনো যেহেতু সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে, তাই নতুন মেয়াদ ঠিক করা হয়নি। এটি শেষ হলে নতুন মেয়াদ ঠিক করা হবে।’ 

কী বলছে কর্তৃপক্ষ 
গত ৩০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এলওসি প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। 

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এসব প্রকল্পের বিষয়ে রেলপথ সচিব আবদুল বাকীকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সচিব জানিয়েছেন তারা বসে আলোচনা করে দেখবেন কী কী প্রকল্প এমন অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পগুলোর বর্তমান কী অবস্থা তা জেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হবে। এরপর হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত আসবে।’ 

যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভারত এলওসির আওতায় লোন দিয়ে বলেছে, তাদের দেশ থেকে ৭৫ শতাংশ পণ্য নিতে হবে। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে তারা তো এভাবে নির্দেশনা জারি করতে পারে না। এলওসি প্রকল্পগুলো অ্যানালাইসিস করলে দেখা যাবে, কীভাবে এসব প্রকল্পের অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এলওসি বা জিটুজি প্রকল্প যা-ই বলি না কেন, শর্তে বলা থাকে সফট লোনের কথা। পরে আমরা দেখতে পাই, সিন্ডিকেটেড কনট্রাক্টররা কীভাবে ঋণের টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন। কনট্রাক্ট তো ওপেন টেন্ডারে হয় না, তাই লিমিটেড টেন্ডারে কাজ বাগিয়ে নেওয়া কনট্রাক্টররা নানাভাবে প্রজেক্ট ঝুলিয়ে দেন। যখন আমরা এলওসি প্রজেক্ট ওপেনের কথা বলি, ওরা তাড়াহুড়ো করে এমনভাবে প্রজেক্ট হস্তান্তর করে যার গুণগত মান একদমই থাকে না, প্রজেক্ট টেকসইও হয় না। পরে প্রকল্পের যে খরচ তা আদতে টানতে হয় বাংলাদেশের জনগণকে।’

এলওসি প্রকল্পের বিষয়ে অধ্যাপক শামসুল আলমের পরামর্শ হলো, এলওসি প্রকল্পের মধ্যে যেগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছে সেগুলো দ্রুততম সময়ে শেষ করা। তবে তার আগে ঠিকাদারের কাছে গুণগত মান বুঝে নিতে হবে রেলওয়েকে। আর যে প্রকল্পগুলো অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে, সেগুলো সম্পন্ন করতে এলওসির ওপর ভরসা না করে অন্য কোনো ঋণে সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। এতে করে রেলওয়ে কিছু খরচ বাঁচাতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিপাকে ‘লীগপন্থি’ ছোট দলগুলো

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ এএম
বিপাকে ‘লীগপন্থি’ ছোট দলগুলো
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের টোপে পা দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে ১৬টি ছোট রাজনৈতিক দল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সেই সময় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের ‘আওয়ামীপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘জাতীয় বেইমান’ তকমাও দিয়েছিল। নির্বাচনের ঠিক সাত মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এমপি-মন্ত্রীদের পাশাপাশি এসব ছোট দলের নেতারাও পড়েছেন বেকায়দায়। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বৈঠক করলেও এখনো আমন্ত্রণ পায়নি এই ১৬টি দল। সরকারের এক মাস পার হলেও বৈঠক বা কোনো ধরনের সাক্ষাতের সুযোগ পাননি ওই দলগুলোর নেতারা। এসব নেতার অনেকেই জনসমক্ষে আসছেন না, নেই দলীয় কর্মসূচিও।

গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের বাইরে দেশের রাজনীতিতে ‘‌ছোট দল’ বলে পরিচিত ১৬টি দলের ৮২৭ জন প্রার্থী ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। বিএনপির ভোট বর্জনের সুযোগে এমপি হওয়ার আশায় তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসব দলের নেতাদের কেউ কেউ সাক্ষাৎ করেন। শুধু কল্যাণ পার্টি ছাড়া আর কোনো দল একটি আসনেও জয়লাভ করেনি। অধিকাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আপাতভাবে তারাও পড়েছেন মহাসংকটে। 

বেশ কয়েকটি দলের নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের খোঁজখবর রাখছেন না কেউ। অন্তর্বর্তী সরকার, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন সমমনা জোট; উভয়ের কাছে ক্রমেই তারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম তাদের ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কি না, এমন ভাবনা থেকে আরও চিন্তিত অনেকেই। ফলে দলগুলোর ভবিষ্যৎ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সংকটে পড়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

গত নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে ১৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘যুক্তফ্রন্ট’ জোট গঠন করে ভোটে অংশ নেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক)। কক্সবাজার-১ আসন থেকে এমপিও হয়েছিলেন। এখন তিনি বাসা থেকে তেমন একটা বের হন না। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, কোনো যোগাযোগও হয়নি। আমরাও যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। কারণ বিষয়টি তাদের এখতিয়ারে। ওনাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সরকারের কাছে সব দলের নাম ও ঠিকানা রয়েছে, তাদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও অবগত আছেন।’

নির্বাচনের আগে কিংস পার্টি হিসেবে আলোচনায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি। ২০২৩ সালে এ দল দুটি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়। বিএনএমে যোগদান করেন বিএনপির সাবেক এমপি শাহ আবু জাফর, প্রফেসর আব্দুর রহমান এবং তৃণমূল বিএনপিতে শমসের মবিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সেই সময়ে অভিযোগ ওঠে, এই দুই দলে বিএনপির নেতাদের ভিড়িয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। একদিকে তারা বিএনপিসহ সমমনাদের বিরাগভাজন হয়েছেন, অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেখা করারও কোনো স্পেস পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তবে বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির নেতাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার যখনই সাক্ষাতের জন্য ডাকবেন, তখন অবশ্যই তারা যাবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে নিজেদের উদ্যোগে লিখিত আবেদন করবেন বলেও জানান।

বিএনএম চেয়ারম্যান শাহ আবু জাফর খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংলাপের জন্য তাদের এখনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সবার সঙ্গে কথা বলে লিখিত আবেদন করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলের যারা অংশ নেওয়ার মতো ছিল তাদের ওপর চাপ ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের কোনো নেতা-কর্মী বাইরে বের হলে কোনো সমস্যায় পড়েছেন, তা জানা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার খবরে কাগজকে বলেন, তার দলকে সংলাপে কেন ডাকা হয়নি তা তিনি জানেন না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য লিখিত আবেদন করবেন বলেও জানান।

নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেই নির্বাচনের দৃশ্যপটে আসেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সভাপতি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ার‌ম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন প্রমুখ। তখন বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের উল্টো দিকে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলগুলোকে ‘আওয়ামীপন্থি ইসলামি দল’ বলে অভিহিত করা হয়। যদিও দলগুলোর দাবি, তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হুমকি ও চাপ দেওয়া হয়েছিল। 

ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার) সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে, তবে কোনো কাজে ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দেব। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে একটা জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে ফেলেছিল। রাষ্ট্র সংস্কার ও ছাত্র-জনতার বিজয়কে সুসংগঠিত করতে দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এক ব্যক্তি বা এক দলকেন্দ্রিক সবকিছু যদি হয়, তাহলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাকে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১২ দিন গুম করে রেখেছিল। নেতা-কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে দলের মহাসচিব মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ও ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে আলেম-ওলামা সমাজ থেকে একজন মুরব্বিকে সামনে রেখে এগোনোর চেষ্টা করছি।’ 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারাও যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। বর্তমানে দল গুছিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারী খবরে কাগজকে বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারপ্রধান সংলাপের আমন্ত্রণ জানালে তারা যাবেন। রাষ্ট্র সংস্কার করতে গেলে কোনো দলকে বাদ দিয়ে এগোনো যাবে না। সব দলকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে।

জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল) চেয়ারম্যান আ ন ম সিরাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনে আমাদের সমর্থন ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। সরকার সংলাপের জন্য ডাকলে অংশ নেব। সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।’

বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এখনো সব দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, তাদের চিঠির অপেক্ষায় রয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য লিখিত আবেদন করব।’ তার দাবি, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্র, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের বিকল্প নেই। 

নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হলো জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (আম), গণফ্রন্ট (মাছ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হাতের পাঞ্জা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন)।