ঢাকা ২০ কার্তিক ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

সংসদে ১৭ আইনজীবী, মন্ত্রী হলেন পাঁচজন

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫৪ এএম
সংসদে ১৭ আইনজীবী, মন্ত্রী হলেন পাঁচজন

নতুন সরকারের নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদে দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী। তাদের প্রত্যেকেই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। এই পাঁচ মন্ত্রীসহ সদ্য সম্পন্ন নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের ১৭ আইনজীবী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া এই পাঁচ আইনজীবী হলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আনিসুল হক, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী। তাদের মধ্যে চারজন সদ্যসমাপ্ত সরকারের মন্ত্রিপরিষদেও ছিলেন। এর মধ্যে মুহিবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন উপমন্ত্রী। অন্য তিনজন আনিসুল হক, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও দীপু মনি ছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী।

সংসদ সদস্য হওয়া এই ১৭ আইনজীবীর মধ্যে চারজন নারী ও ১৩ জন পুরুষ আইনজীবী। তাদের মধ্যে ১৬ জন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, আর একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচিত চার নারী আইনজীবী হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, দীপু মনি, উম্মে কুলসুম স্মৃতি ও নিলুফার আনজুম পপি। আর পুরুষ আইনজীবীরা হলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নুরুল ইসলাম সুজন, শ ম রেজাউল করিম, বিপ্লব হাসান পলাশ, ময়েজ উদ্দিন শরীফ, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মুহিবুল হাসান চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তাদের মধ্যে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে শিরীন শারমিন চৌধুরী রংপুর-৬, শামসুল হক টুকু পাবনা-১, আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর-১, নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ঢাকা-২ আসন থেকে মো. কামরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৩ থেকে সংসদ নিলুফার আনজুম পপি, কুড়িগ্রাম-৪ থেকে বিপ্লব হাসান পলাশ, হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে ময়েজ উদ্দিন শরীফ, নরসিংদী-৪ আসন থেকে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে মুহিবুল হাসান চৌধুরী, নাটোর-৩ আসন থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক ও ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন শাহজাহান ওমর। আর হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

গানের আড়ালে চলত তাপসের অপকর্ম

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
গানের আড়ালে চলত তাপসের অপকর্ম
কৌশিক হোসেন তাপস

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান ও সুরকার, সংগীতপরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাপসকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানার পুলিশ।

সোমবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে হাজির করা হলে তাপসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় আগামীকাল ৬ নভেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

মিডিয়া অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত কৌশিক হোসেন তাপস। তার ব্যাপারে জানতে যত গভীরে যাওয়া হচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে কুকীর্তির কথা। মিডিয়া মাফিয়া তাপস সংগীতাঙ্গনকে যেভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন, তা নজিরবিহীন। তার দখল করা ‘গান বাংলা চ্যানেলে’ গানের আড়ালে চলত রঙ্গলীলা। দেশি-বিদেশি অভিনেত্রী-শিল্পীদের ব্যবহার করা হতো প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী ও আমলাদের মনোরঞ্জনের জন্য। বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী নারীরা এসব বিষয়ে তাপসের বিরুদ্ধে যথাযথ স্থানে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু ওপরের মহলের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত তাপস সব সময় ছিলেন অধরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে তাপসের সাজানো বাগানেও ধস নামে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে তাপসের কুকীর্তির ফিরিস্তি জানা গেছে। 

আওয়ামী লীগের আমলে জিরো থেকে হিরো হন তাপস। নিজের স্ত্রীর কাঁধে ভর দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের থেকে নিয়েছেন সুবিধা, বিনিময়ে তাদের টাকাও বিদেশে পাচার করেন এই দম্পতি।

তাপসের উত্থান: 
২০০৬-০৭ সালের দিকে একটি টেলিভিশনে প্রোগ্রামের আয়োজন করেন তাপস। এর মাধ্যমে মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন তিনি। সখ্য বাড়ে মিডিয়া অঙ্গনে ও সংগঠনে। এই সুযোগে পরিচয় হয় মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা করা এক ব্যক্তির স্ত্রী ফারজানা মুন্নির সঙ্গে। যিনি রূপচর্চা ও ফ্যাশন এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত। তাপসের কথায় ও গিটারের সুরে মুগ্ধ হন মুন্নি। সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের তথাকথিত ভাতিজি মুন্নি প্রেমে পড়েন তাপসের। আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে তাপসকে বিয়ে করেন যুব মহিলা লীগের নেত্রী মুন্নি। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ান হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন মুন্নি। এভাবে আওয়ামী লীগের অঙ্গনে তাপসের প্রবেশ ঘটে। 

লোটাস কামালের প্রভাব খাটিয়ে মিডিয়া অঙ্গনে নিজেকে মাফিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন তাপস। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবৃত্তিশিল্পী রবিশঙ্কর মৈত্রীর গান বাংলা চ্যানেলটি দখল করেন তাপস। রবিশঙ্করকে সপরিবারে প্রাণনাশের হুমকি দেন তাপস। সেই ভয়ে সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেও শাস্তি পেতে হয় তাকে। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তাপস প্রভাব খাটিয়ে রবিশঙ্করের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠিও দিয়েছেন রবিশঙ্কর। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। দখল করা গান বাংলার মাধ্যমে মিডিয়া জগতে আধিপত্য শুরু হয় তাপসের। 

প্রভাবশালীরা ছিলেন তাপসের ঘনিষ্ঠ:
কুরুচিপূর্ণ বাংলা গানের মূল হোতা তাপস গণভবনে যাতায়াত করা ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। বিদেশ থেকে নারী অভিনেত্রী ও শিল্পীদের দেশে এনে গানের আড়ালে প্রভাশালীদের মনোরঞ্জেনের কাজে লাগাতেন তিনি। বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশি শিল্পীরা যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন সে লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসের খুরশিদ আলমের সঙ্গে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেহব্যবসার জাল বিস্তার করেছিলেন তাপস। কর ফাঁকি দিয়ে গান বাংলার নাম করে ইউক্রেন-রাশিয়া-ইন্ডিয়া-দুবাই থেকে নারী এনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনে পাঠাতেন তিনি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিকবার বিদেশি কয়েকজন নারীকে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তখন শাহরিয়ার ও খোকনকে ফোন করে তাদের ছাড়িয়ে নেন তাপস। 

তাপসের সঙ্গে দেশের আর্থিক খাতের মাফিয়া সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের অপকর্ম চালিয়ে গেছেন তাপস। ২০২২ সালে নিজের মেয়ের বিয়েতে নাচাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে সাবেক পর্নো তারকা সানি লিওনকে ঢাকায় আনেন। এতে পরোক্ষ সহযোগিতা করেন প্রভাবশালী সালমান এফ রহমান। কলকাতার নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তীসহ অনেকে তার মেয়ের বিয়েতে যোগ দেন। বলিউড নায়িকা নার্গিস ফাখরিও তার হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন। এসবের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জন করা। 

বিদেশি শিল্পীদের দেশে আনার পেছনে বড় একটা কারণ ছিল তাপস-মুন্নির। তাদের আনা-নেওয়ার মাধ্যমে প্রভাবশালীদের মোটা অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করতেন এই দম্পতি।

তাপসের কাজ হাতিয়ে নেওয়ার স্টাইল:
তাপসের স্ত্রী মুন্নি শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ান হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মুন্নির ওঠাবসা ছিল। সেটাকেই কাজে লাগান তাপস। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক অনুষ্ঠানে যাতায়াত শুরু করেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে গেলে নানা কায়দায় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন তাপস। তা আবার ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করতেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাগিয়ে নিতে তিনি এসব কৌশল প্রয়োগ করেন। 

আওয়ামী লীগের আমলের সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন মিডিয়া মাফিয়া তাপস। এই সুবাদে মুজিববর্ষের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একক নিয়ন্ত্রণে নেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আয়োজিত লাল-সবুজের মহোৎসব ও ২০২২ সালে চট্টগ্রাম-বরিশালে ‘জয়বাংলা উৎসব’ নামে একাধিক কনসার্ট করেন তাপস। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা এসব অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করতেন। সেখানে সালমান এফ রহমান, স্থানীয় মেয়র ও প্রভাবশালী নেতারা অতিথি থাকতেন। কনসার্টে অংশ নেওয়া শিল্পীদের বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ নিজের পকেটে নিতেন তাপস। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তাপস। 

আইসিটিতে তাপসের থাবা:
নারী সাপ্লাই দিয়ে সরকারে উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রী-সচিবদের নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন তাপস-মুন্নি দম্পতি। তাদের দুজনের সঙ্গে সখ্য ছিল সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। এই মন্ত্রণালয়ে সরকারি সব কাজেও তাপসের হাত ছিল। বিশেষ করে তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের মন্ত্রী পলকের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতেন। এভাবে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতেন তাদের। বিনিময়ে কাজের মোট টাকার নির্দিষ্ট একটি পার্সেন্টিস পেতেন তাপস। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মো. এ আরাফাতের সঙ্গেও তাপসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

উঠতি গায়িকারা ছিলেন তাপসের হাতে বন্দি:
নাইটক্লাবের মতো রাত যত গভীর হয় তাপসের গান বাংলা টেলিভিশন তত বেশি জমজমাট হয়ে উঠত। মধ্যরাতে অফিসে প্রবেশ করতেন তাপস ও মুন্নি। রাত গভীর হলেই গান বাংলার অফিসে উঠতি বয়সী গায়িকা এবং দেশের খ্যাতনামা অভিনেত্রীদের আনাগোনা বাড়ত। উঠতি বহু গায়িকা ছিল তাপসের হাতে বন্দি। তাপসের ইশারায় এই শিল্পীরা প্রভাবশালী নেতা ও আমলাদের মনোরঞ্জনে নিয়োজিত ছিল। এই শিল্পীদের মিডিয়া অঙ্গনে তাপসের গায়িকা হিসেবে ডাকা হতো। বিনিময়ে গায়িকাদের নিজের টেলিভিশনে ও কনসার্টে গান গাওয়ার সুযোগ করে দিতেন তাপস। দেশের বিখ্যাত গানগুলো বিকৃত করেছেন সেসব গায়িকারা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ঠিক চার দিন আগে নিজের খোলস পাল্টেছেন সমালোচিত এই তাপস। নিজের ফেসবুক পেজের প্রোফাইল ও কাভার পিকচার লাল করে ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার অপকর্মের কারণে শেষ রক্ষা হয়নি তাপসের। গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মো. মহিবুল্লাহ অভিযুক্তের সাত দিনের রিমান্ড আবেদনে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মামলায় তাপসের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাকে জামিন দেওয়া হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, তদন্তে ব্যাঘাতসহ আসামির দেশত্যাগেরও শঙ্কা রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সক্রিয় এই কর্মী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের দমনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরও উসকানি দিয়েছেন। মামলার আলামত উদ্ধার করতে এবং জড়িত বাকি আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য আসামিকে পুলিশি হেফাজতে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। এ সময় তাপসের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করলেও আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ২৯ অক্টোবর ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। এ মামলাতেই তাপসকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ ব্যবসায়ী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

পছন্দের জমি নিয়ে নিতেন নিক্সন চৌধুরী

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
পছন্দের জমি নিয়ে নিতেন নিক্সন চৌধুরী
নিক্সন চৌধুরী

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে টানা তিনবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে চটকদার বক্তৃতা আর হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করে তিনি লাইমলাইটে আসেন। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার কথা বিশ্বাস করে ভোট দেন ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন এলাকার মানুষ। হারিয়ে দেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরুল্লাহকে। 

এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্ষমতা। শেখ পরিবারের আত্মীয় পরিচয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। বাড়তে থাকে সম্পদের পরিমাণ। 

অভিযোগ আছে, যে জমির দিকে তার চোখ পড়ত, কিছুদিন পর তিনি সেই জমির মালিক হয়ে যেতেন। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নামমাত্র মূল্যে স্থানীয়দের তার কাছে জমি বিক্রি করতে হতো। কেউ দ্বিমত পোষণ করলেই তাকে নিক্সন চৌধুরীর বাগানবাড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাতেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙ্গার আজিমনগরের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে নিক্সন চৌধুরী যে বাগানবাড়ি করেছেন, সেই জমিটিও নামমাত্র মূল্যে কিনেছিলেন। মহাসড়কের কাছাকাছি এসব ফসলি জমি বিঘাপ্রতি তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় কিনে নেন। কিন্তু তখন জমির প্রকৃত মূল্য ছিল কেনা দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি। 

ভাঙ্গার সূর্যনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিক্সন চৌধুরীর বাগানবাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই সড়কের দুই পাশে হাজারেরও বেশি বিঘা ফসলি জমি আর কিছু খাস জমি তিনি দখলে নিয়েছেন। জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়মান আইল্যান্ড’। 

এলাকাবাসী জানান, জমি দখলে নিতে নিক্সন চোধুরী বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতেন। তাদের বলা হতো, সেখানে হাসপাতাল, পার্ক ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। কিন্তু পরে তিনি মহাসড়কের পাশে, পদ্মা সেতুর কাছাকাছি জায়গাগুলো প্লট আকারে বিক্রি করতে শুরু করেন।

ওই এলাকার কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা জানান, আয়মান আইল্যান্ডের জন্য তাদের ফসলি জমি হারাতে হয়েছে। পরে তাদের বসতভিটাও চাওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক পালাবদল না হলে হয়তো বাড়িও ছেড়ে দিতে হতো। 

সম্রাট শিকদার নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হতো।’

এমপি হওয়ার পর বাড়তে থাকে সম্পদ
জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ১০ বছর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ওই সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার নামে কোনো জমি ছিল না। বর্তমানে আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়ায় ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ (২০ একর) জমির মালিক তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকার অনেক হিন্দু পরিবারের জমি তিনি নামমাত্র দাম দিয়ে কিনে নেন। তারা বিভিন্ন সময় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলেও তাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। 

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিক্সন চৌধুরী প্রথম পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) ৯৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ জমির মালিক হয়েছিলেন। পরের পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২৩) ওই জমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১০৬৪ দশমিক ০৫ শতাংশ জমি। এখন ওই এলাকায় তার জমির পরিমাণ ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় নির্মাণাধীন দোতলা ভবনসহ সম্পদ দেখিয়েছিলেন ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ওই ভবনের দাম দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি নতুন করে একতলা অফিস রুম, মিটিং রুম, রান্নাঘর, ডরমেটরি, সিসি রাস্তা, সীমানা প্রাচীর ও পুকুরঘাট বাবদ আরও ৩৪ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ দেখানো হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কৃষি জমির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৯১০ টাকা, যা পাঁচ বছরে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ১৬০ টাকায় দাঁড়ায়।

ফরিদপুরের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে রয়েছে একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নীপা পরিবহন লিমিটেড, রিতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, স্বাধীন বাংলা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিসিং স্টেশন, এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজ ফার্ম অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে বলে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে নিজেকে তিনি অপ্রতিরোধ্য ভেবেছিলেন। ভিন্নমত দমনে তার আজিমনগরের বাড়িতে তৈরি করেছিলেন টর্চার সেল। তার কথা কেউ না শুনলে ওই বাগানবাড়িতে ধরে এনে শীতের রাতে পুকুরে চোবানো হতো। এর সঙ্গে চলত শারীরিক নির্যাতন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা কখনই মুখ খোলার সাহস পেতেন না। মাদারীপুরের শিবচরের লোকজন তার এই বাড়ি পাহারাদারের মতো ঘিরে বসে থাকতেন। শুধু এলাকাবাসী নয়, স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও ভয়ে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতেন না।

শেখ পরিবারের পরিচয়ে অপ্রতিরোধ্য
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এবং সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ছোট ভাই নিক্সন। শুধু শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে এসে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্যবনে যান। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন। এ পদ দিয়েই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় হয়ে ওঠেন এক এবং অদ্বিতীয় নেতা। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তার ছিল ব্যাপক প্রভাব। বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করে তার পক্ষে এক প্রবাসীকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে দেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তারই প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী জাফরউল্লাহর এক কর্মী। দুজন ভাগ করে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ। 

তখন কথা ওঠে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী জেলায় থাকার পরও কেন ‘অযোগ্যদের’ হাতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ তুলে দেওয়া হলো? এ ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তখন কথা বলে জানা যায়, দুজনকে এ পদ পাইয়ে দিতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ঠিক একই ভাবে জেলা যুবলীগের কমিটিতেও ভাগ বসান নিক্সন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে নিক্সন চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। এরই মধ্যে আদালত থেকে তার দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় তার নামে মামলা হয়েছে। তবে এখনো তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় অনেকেই তার সীমাহীন অত্যাচারের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তার পরও তারা নিক্সন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।

তারা বলছেন, নিক্সনের অনেক টাকা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা। তিনি হয়তো সব কিছু ম্যানেজ করে আবার ভাঙ্গায় ফিরে আসবেন। 

সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক ছিলেন কবির বিন আনোয়ার

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক ছিলেন কবির বিন আনোয়ার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সিরাজগঞ্জে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল কবির বিন আনোয়োর (অপু)। তার ছিল ক্যাডার বাহিনী। অনেকে তাকে ডাকতেন ‘দাদা ভাই’ বলে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে এই দাদা ভাই ছিলেন সিরাজগঞ্জের শেষ কথা। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক থাকাকালে কবির বিন আনোয়োর বনে যান সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক। 

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে ক্ষমতা অপব্যবহার করে নিজ এলাকায় তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিসকে ব্যবহার করতেন নিজের অফিস হিসেবে। সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়ন ছিল তার নখদর্পণে। এ ইউনিয়নের যে জমিতে তার চোখ পড়ত, তিনি তা গ্রাস করতেন। মাদরাসা নির্মাণের কথা বলে কাওয়াখোলা চরের কৃষকদের শত বিঘা জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলেছেন গো-খামার ও তেলের মিল। একই ইউনিয়নের বড়ইতলাই ছিল তার আধুনিক মানের বিশাল একটি রিসোর্ট। রিসোর্ট থেকে যতদূর চোখ যায়, পুরো জায়গাটিই ছিল তার দখলে। এ রিসোর্টে অস্ত্রের পসরা সাজিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিলেন তিনি। 

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ এবং ড্রেজিং প্রকল্প ছিল কবির বিন আনোয়ারের দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৭ কিলোমিটার নদীপথ খনন আর ৬৫০ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ নিয়ে ইতোমধ্যে পাউবোকে চিঠি দিয়েছে দুদক।

কবির বিন আনোয়ার সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কালীবাড়ির আনোয়ার হোসেন রতুর ছেলে। তার বাবা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গ্রামের মানুষকে ইউরোপের স্বপ্ন দেখানো কবির বিন আনোয়ার ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। খোঁজ নেই তার পোষ্য বাহিনীর। সর্বশেষ দুই বিএনপি কর্মী ও এক যুবদল নেতা হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাওয়াখোলা চরের জমিতে চাষাবাদ করে স্থানীয় কৃষকরা একসময় জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে কবির বিন আনোয়ার মাদরাসা নির্মাণের কথা বলে এ চরের কৃষকদের শত বিঘা জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলেছেন গো-খামার, তেলের মিল ও বিলাসবহুল রিসোর্ট। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ দিয়ে ভরাট করা হয় এসব জমি। এ ছাড়া এতিমখানা নির্মাণের কথা বলে ১৯ জন ছাত্র দিয়ে পাউবোর বিআরই ডিভিশন অফিস দখল করেন তিনি।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে যমুনার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ এবং বাঙালি, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুড়াসাগর নদী ড্রেজিং এবং তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারের দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। তার মধ্যে ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৭ কিলোমিটার নদীপথ খনন আর ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে নেই কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন। এ সময় কবির বিন আনোয়ারের ইশারায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে নদী থেকে বালু উত্তোলন আর বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। এদিকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর তীরবর্তী সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, কাগজপত্রে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিজ লোকজনকে দিয়ে লোপাট করা হয় প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা। 

স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করে পাউবো। দীর্ঘ পাঁচ বছরে এ প্রকল্পের সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ঠিকাদারদের পরিশোধ করা হয়। অথচ সাড়ে ৩ হাত নদীর তীর পাড়ও দৃশ্যমান হয়নি এখনো। এদিকে এ প্রকল্পের কাজে অবহেলার কারণে গত কয়েক বছরে শত শত বাড়িঘর ও কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি হারিয়ে অনেক মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো ভাঙনে দিশেহারা হচ্ছেন নদীপারের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে এ প্রকল্পের টাকার নয়ছয় করেছেন সাবেক পানিসম্পদ সচিব।

হাটপাচিল গ্রামের যুবক ইয়াসিন চতুর বলেন, ‘সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার নদী তীর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের ১৭টি প্যাকেজের ঠিকাদার ছিলেন কবির বিন আনোয়ারের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। এমন কৌশলে টাকাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে, তা এলাকার মানুষ জানতেও পারেনি। অথচ নদীর কাজ না করায় আমরা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার মতো অনেকেই ভিটামাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’ 

আরেক বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘কবির বিন আনোয়ার যখন সচিব ছিলেন, তখন সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন সফিকুল ইসলাম। দুজনের যোগসাজশে ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজের ১৭টি প্যাকেজ থেকে শুধু টাকা উত্তোলন করে গেছেন। দু-চারটি বালুর বস্তা ফেলে ছবি তুলে নিয়ে যেতেন ঠিকাদারের লোকজন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাওয়াখোলা চরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের জমিতে মাদরাসা করার কথা ছিল, অথচ করছেন রিসোর্ট, গরুর ফার্ম ও তেলের মিল। একসময় এ জমিতে পাট ও ভুট্টার আবাদ করতাম। তা দিয়ে সংসার চলত। কিন্তু সচিব জমি দখল করার পর পরিবার নিয়ে কষ্ট করছি। তার বিরুদ্ধে কিছু বললেই মামলা দিয়েছে জেলে ঢুকিয়ে দিতেন। মাফিয়ারা আমাদের জমি জবরদখল করেছে। অথচ আমরা কিছু বলতে গেলে মামলা-হামলা করে ভয় দেখাতেন।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় আমাদের ড্রেজিং করার কোনো ক্ষমতা নেই। আগে কী হয়েছে তা আমি জানি না। তবে এখানে সব কাজ দরপত্র মেনেই করা হয়েছে বলে আমি জানি। এনায়েতপুর থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫২ ভাগ শেষ হয়েছে। এবার শুষ্ক মৌসুমে পুরো কাজ দৃশ্যমান হবে।’

দুই ভাইয়ের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
দুই ভাইয়ের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছিলেন নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনের সংসদ সদস্য। আর তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। দুই ভাই ওপরে ওপরে বিরোধ দেখালেও ভেতরে ভেতরে একে অপরের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য।

১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। তখন ওই সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার ওই ক্ষমতার জোরে ছোট ভাই কাদের মির্জা হয়ে ওঠেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৯৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নেন বসুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদ।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ১ হাজার ৩৭১ ভোটে হারিয়ে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য’ নির্বাচিত হন। পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও পরিবর্তিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এক যুগের বেশি সময় একই পদে থেকে নিজের এবং পরিবারের আখের গুছিয়েছেন তিনি। তার প্রভাবে মন্ত্রণালয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এ ছাড়া ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী, ভাই, ভাগিনাসহ তাদের আত্মীয়স্বজন এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। এমনকি তার ব্যক্তিগত কর্মচারীরাও আজ শতকোটি টাকার মালিক।

২০১৮ সালে টানা তৃতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কাদের মির্জা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালের পর মিডিয়ায় বিভিন্ন কথা বলে আলোচনায় এসে ফেসবুক লাইভে ‘সবকিছু’ ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন ভাইকে। তবে ওপরে দুই ভাইয়ের বিরোধ দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে তারা গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির মহাস্বর্গরাজ্য।

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকার এমপিদের মনোনয়ন-বাণিজ্য, দলের জেলা-উপজেলা কমিটি-বাণিজ্য, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ থেকে টাকা আদায়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকাজ থেকে ১০ পারসেন্ট হারে কমিশন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকে ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে টাকা হাতিয়ে নিতেন কাদের মির্জা।

অভিযোগ রয়েছে, স্কুল মাস্টারের ছেলে ওবায়দুল কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরালেও দুই যুগের ব্যবধানে তারা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। চতুর ওবায়দুল দেশের চাইতে বিদেশে সম্পদ গড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে আবদুল কাদের মির্জা নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে দেশে ব্যাপক সম্পদ গড়েছেন।

ওবায়দুল কাদেরের এপিএস বরিশালের আবদুল মতিন, পিএ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মো. জাহাঙ্গীর কবিরও শতকোটি টাকার মালিক। এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেওয়া চাকর নুরুল করিম জুয়েলও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন।

এ ছাড়া ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে ইস্কান্দার মির্জা শামীম ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন দপ্তর থেকে হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে আলী হায়দার রতন নামে কথিত এক ভাগিনাকে দিয়ে দেশের বড় বড় প্রকল্পের কাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে টাকা পাচার করে সম্পদ গড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আইয়ুব আলী, চরহাজারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগের বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ এস এম মাঈন উদ্দিন পিন্টুর মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের ও কাদের মির্জা হাজার হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। মাঈন উদ্দিন পিন্টু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অ্যাংকর ট্রাভেলসের মালিক। অন্যদিকে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর ভাই জিয়াউর রহমান নিউইয়র্কের বড় ব্যবসায়ী। আইয়ুব আলীও ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন।

বড় ভাই ওবায়দুল কাদের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ার কারণে টানা সাড়ে ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকাকালে ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার কাছে জিম্মি ছিলেন গোটা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে কাদের মির্জা টানা তৃতীয়বারের মতো বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তার বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলেরই নেতা-কর্মীরা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের মতো কাদের মির্জারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাইজ্যাক করা জমিতে আ.লীগ অফিস
ছোট ভাই কাদের মির্জাকে দিয়ে অন্যের জমি হাইজ্যাক করে নিজের এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানানোর অভিযোগ আছে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। বসুরহাট বাজারের আরডি শপিংমল দখলের হুমকি দিয়ে মার্কেটের মালিক নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর ওরফে হেলালকে কাদের মির্জার মাধ্যমে জিম্মি করে ৭ শতাংশ জমি টাকা ছাড়া নিজের নামে লিখে নেন তিনি। পরে হাইজ্যাক করা ওই জমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নামে দান করে দাতা সাজেন ওবায়দুল কাদের। 

নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতার দাপটে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তার লোকজন দিয়ে আমার মার্কেট দখলের পাঁয়তারা করেন। পরে প্রাণভয়ে নিরুপায় হয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার জমি বিনা টাকায় তাদের নামে লিখে দিতে বাধ্য হই। গত ১৫ আগস্ট এ বিষয়ে আমি ওবায়দুল কাদের ও আবদুল কাদের মির্জাকে আসামি করে নোয়াখালী দেওয়ানি আদালতে মামলা করি। আমি আমার জমি ফেরত চাই।’

চাঁদা ছাড়া কাজ করা যেত না
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় যেকোনো উন্নয়নকাজ করতে গেলে কাদের মির্জাকে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো ঠিকাদারদের। আবার এসব কাজের বেশির ভাগ পেতেন তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা। গত ১৫ বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় মোট উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৫৭৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে পৌরসভায় উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার। আর বাকি উন্নয়নকাজ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে। প্রতিটি কাজে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন কাদের মির্জা। সেই হিসাবে কমিশনের টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি।

বেশির ভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। পছন্দের ঠিকাদারের বাইরে কাজ পেয়ে বিপাকে পড়া এক ঠিকাদার নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর আবদুল জলিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার প্রতিষ্ঠান জলিল ট্রেডার্স কোম্পানীগঞ্জে ৪০ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ পায়। কাজ পাওয়ার খবর পৌঁছে যায় কাদের মির্জার কাছে। ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং দাবি করেন ৫ শতাংশ কমিশন। আবদুল জলিল বলেন, ‘কাদের মির্জার এক লোক আমাকে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে ৫ শতাংশ কমিশন চান কাদের মির্জা। বাধ্য হয়ে ২ লাখ টাকা দিতে হয় কাদের মির্জাকে।’

এদিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে কাদের মির্জাকে দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতেন ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালীর প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাকে চাঁদা দিয়ে মনোনয়নসহ এলাকার কাজ করতে হতো। ২০২১ সালে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর কাছ থেকে চাহিদামতো চাঁদা না পেয়ে আবদুল কাদের মির্জাকে দিয়ে শাসিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।

বেপরোয়া কাদের মির্জার মাধ্যমে এলাকার অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো সাত্তার ব্রাদার্স (সাত্তার বেকারি), ফখরুল ক্লথ স্টোর, হুমায়ূন টিম্বার, ফিরোজ অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফেন্সি হোটেল, আজমির হোটেল, গাজী অ্যান্ড সন্স, ছায়েদ ম্যানশন (৬ তলা বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবন), মাওলা শপিং সেন্টার, মডার্ন হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হেলাল হার্ডওয়্যার, সেলিম স্টোর, মেহরাজ প্লাজা। নানা অজুহাতে এগুলো বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে চাঁদা নিয়ে খুলে দেন।

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বসুরহাট বাজারের আমিন মার্কেটের মালিক আশিক-ই-রসুলকে কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান কাদের মির্জা। পৌর সচিব কাদের মির্জার নামে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই মার্কেটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন কাদের মির্জা। আশিক-ই-রসুল বলেন, ‘টাকা দেওয়ার পর আমার মার্কেটের তালা খুলে দেওয়া হয়।’ 

এ ছাড়া পৌর এলাকায় আবু ছায়েদ নামের এক লন্ডনপ্রবাসীর চার ও ছয়তলার দুটি ভবন পাঁচ বছর আগে দখল করে নেন কাদের মির্জা। চারতলা ভবনটি কাদের মির্জা তার স্ত্রী আক্তার জাহান বকুলের নামে লিখে নেন। এসব ভবনের নিচে দোকান ও ওপরে আবাসিক ফ্ল্যাট। ছয়তলা ভবনটি থেকে পৌরসভার নামে ভাড়া তুলতেন কাদের মির্জা। তবে ৫ আগস্টের পর ভবনটি দখলমুক্ত করেছেন আবু ছায়েদ।

ফেরদৌস মাহমুদ নামে বসুরহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাদের মির্জা নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন। শত শত দোকান দখল করে পৌরসভার নামে ভাড়া তুলতেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের গত ১৫ বছরে যতবার নোয়াখালী গেছেন একবারও বাড়িতে কিংবা নোয়াখালী জেলার কোনো সার্কিট হাউসে ছিলেন না। তিনি ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর তত্ত্বাবধানে ফেনী সার্কিট হাউসে অথবা নিজাম হাজারীর বাগানবাড়িতে থাকতেন। দেশের বড় বড় ঠিকাদার ওই বাড়িতে গিয়ে বস্তায় ভরে টাকা দিয়ে আসতেন। 

হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনী গঠন
কোম্পানীগঞ্জের মানুষের কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল কাদের মির্জার হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী। হেলমেট বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা, বসুরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা রাসেল, হামিদ ওরফে কালা হামিদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মারুফ, সাধারণ সম্পাদক মো. তন্ময়, বসুরহাট পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিসান আহমেদ, শহিদ উল্যা ওরফে কেচ্ছা রাসেল, বাংলা বাজারের পিচ্চি মাসুদ ওরফে ডাকাত মাসুদ। কেচ্ছা রাসেল ও পিচ্ছি মাসুদ কোম্পানীগঞ্জের চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ মে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুরের অনুসারীদের দিকে গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে গ্রেপ্তার হলেও কাদের মির্জার তদবিরে কিছুদিন পরই কেচ্ছা রাসেল জামিনে ছাড়া পান।

এই বাহিনীর হামলার শিকার হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খান, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান ওরফে রিপনসহ অনেকে।

মিজানুর রহমান বাদল বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করেও সব সময় আতঙ্কে ছিলাম। দুই ভাই মিলে পুরো এলাকাকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছেন।’

এদিকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাদের মির্জা ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে থাকলে তার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল দলের একাংশ। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাপরাশির হাটে প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা চালায় কাদের মির্জার বাহিনী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন ওরফে মুজাক্কির। এ ঘটনায় মামলা হলেও কারও নাম উল্লেখ করার সাহস পায়নি মুজাক্কিরের পরিবার।

এ ছাড়া হেলমেট বাহিনী স্থানীয় সাংবাদিক প্রশান্ত সুভাষ চন্দর (৪৭) বাড়িতে হামলা চালায়। কুপিয়ে আহত করা হয় প্রশান্ত এবং তার মা ও ছেলেকে। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মির্জা বাহিনীর সদস্যরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আরেক সাংবাদিক নাজিম উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে কাদের মির্জার এক অনুসারী বাদী হয়ে নাজিমের বিরুদ্ধে উল্টো মাদক আইনে মামলা করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারেননি। 

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০৩টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর কোম্পানীগঞ্জে ৬৯ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় হেলমেট বাহিনী। এই বাহিনীর অত্যাচারে বসুরহাট বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।

দখলেও সিদ্ধহস্ত কাদের পরিবার
উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় কাদের মির্জা ৬০০ একরের বেশি খাসজমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলের পর ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ওই জমি আবার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুছাপুর ক্লোজার এলাকার ছোট ফেনী নদী থেকে গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি দেখভাল করতেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী। দল ক্ষমতা হারানোর পর তিনিও পলাতক রয়েছেন।

২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পৌরসভার কলালিয়া এলাকায় কাদের মির্জার নেতৃত্বে হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। দুটি এক্সক্যাভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে ভেতরের বিভিন্ন মালামাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে মেয়রের অনুসারীরা সেখানে ‘শিশুপার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।

হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলের মালিক ফিরোজ আলম মিলন বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে আমরা জায়গার মালিক। সেই জমি ব্যাংকে বন্ধকও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ওই জমি ‘খাস’ দাবি করে আমাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার পর আদালতের রায়ও অমান্য করেন কাদের মির্জা। পরে তিনি আবার আদালতে গেলে কাদের মির্জা দখল ছাড়েন।’

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে খাসজমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ও মুছাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার খাসজমি দখলকারীদের তালিকা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দখলকারী যারাই আছেন, তাদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বড় ভাই প্রভাবশালী হওয়ায় কাদের মির্জার কাছে প্রশাসন ছিল অসহায়। শত অপকর্ম জানার পরও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বসুরহাট পৌরসভাকেন্দ্রিক যত উন্নয়নকাজ, তার সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন কাদের মির্জা। প্রতি মুহূর্তে প্রচণ্ড চাপে থাকতে হতো এখানে। একটু এদিক-সেদিক হলে গালমন্দ করতেন মির্জা। এখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনও জিম্মি ছিল।’

সুখের সন্ধানে গিয়ে লাশ হলেন নিজাম

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ এএম
সুখের সন্ধানে গিয়ে লাশ হলেন নিজাম
বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত বাংলাদেশি নিজাম উদ্দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক নিজাম উদ্দিন (৩২)। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ১২ বছর আগে তিনি পাড়ি জমান লেবাননে। কিন্তু সুখ তার অধরাই থেকে যায়। গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন তিনি।

নিজামের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে লেবানন থেকে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে এলাবাকাসী ও নিজামের স্বজনদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। 

নিজাম উদ্দিন কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। 

রবিবার (৩ নভেম্বর) নিজামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনে বসে আছেন নিজামের দুই বোন সায়েরা বেগম ও পারুল বেগম। পারুল বেগম আদরের ছোট ভাইয়ের ছবি হাতে নির্বাক বসে আছেন। আর তার চোখ দুটো জলে টলমল করছে। তার পাশে বসা বড় বোন সায়েরা বেগম অঝোরে কাঁদছেন।

সায়েরা বেগম বলেন, ‘৭ লাখ টাকা ধার করে লেবাননে গিয়েছিল আমার ভাই। লেবাননে যে কাজে গিয়েছিল, তাকে সে কাজ দেওয়া হয়নি। নির্ধারিত কাজ না পাওয়ায় তার ভালো উপার্জন ছিল না। তবু অনেক কষ্টে বিদেশে থেকেছে। ১২ বছর ভাইয়ের মুখটা দেখতে পাইনি। কে জানত, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসবে।’

আরেক বোন পারুল বেগম বলেন, ‘শনিবার লেবাননের বৈরুতের একটি হোটেলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিজাম মারা যায়। ওই রাতেই তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে নিজামের মৃত্যুর খবর আসে। আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি, নিজাম এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। প্রবাসে চাকরি করে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে না পারলেও মায়ের থাকার জন্য নিজাম একটি টিনের ঘর বানিয়েছিল। ঘর বানানোর ৬ মাস পর মা (আনোয়ারা বেগম) মারা যান। বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে নিজাম দেশেও আসতে পারছিল না। কাগজপত্র ঠিক করে আর কিছুদিন পর দেশে আসার কথা ছিল তার। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত নিজামের লাশ দেশে ফিরিয়ে এনে দিক। শেষবারের মতো যেন ভাইয়ের মুখটা দেখতে পারি।’

শামছু মিয়া নামে নিজামের এক প্রতিবেশী জানান, অনেক ধারদেনা করে নিজামকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। লেবাননে গিয়ে বৈধ কাগজপত্রের কারণে সে তেমন ভালো কোনো কাজ করতে পারেনি। তাই এত বছর বিদেশে থেকেও সে পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে পারেনি। তাই সরকার যেন এ অসহায় পরিবাররের পাশে দাঁড়ায়। তাহলে নিজামের পরিবার উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার জানান, আমাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। বৈরুতের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই নিজামের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।