রাঙামাটির লংগদু সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় পিবিআই চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবু হানিফ এই নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটি জেলা কার্যালয়েও অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকও বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ও রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম রাষ্ট্রের পক্ষে বিবিধ মামলা করেন। (বিবিধ মামলা নং-০১/২০২৪, তারিখ-২৩ জানুয়ারি ২০২৪)। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে একই ঘটনায় অবসরে যাওয়া তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার ও ঋণ অফিসারের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম থেকে দুটি পৃথক তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আরও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সেখানে যে বা যাদেরকেই জড়িত পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ওই ঋণ জালিয়াতি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি ‘দৈনিক খবরের কাগজ’ ও ২০ জানুয়ারি অন্য একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের কপি আদালতে দাখিল করা হয়। জনহয়রানি বন্ধ ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ প্রদান সংক্রান্ত বেআইনি কার্যকলাপ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বাদী।
বিষয়টি আমলে নিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হানিফ লিখিত আদেশে উল্লেখ করেন, প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ পাঠ ও দর্শন করে অত্র আদালতের আপাতদৃষ্টে এরূপ ধারণা হয় যে, লংগদু থানাধীন সোনালী ব্যাংক পিএলসি, লংগদু শাখা, রাঙামাটির এক বা একাধিক কর্মকর্তা/কর্মচারীসহ উক্ত ব্যাংকের ঋণ প্রদান সংক্রান্ত বিভাগের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা/কর্মচারীর যোগসাজশে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যাংকে রক্ষিত জনগণের মূল্যবান অর্থ আত্মসাৎ করা বা অন্যবিধ বেআইনি কার্যকলাপে ব্যবহারের নিমিত্ত জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা ও ভুয়া ঋণ গ্রহণের কাগজপত্র তৈরি করে টাকা তুলে বেআইনিভাবে পাঁচ শতাধিক মানুষকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এহেন কার্যকলাপ দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ সহ বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুসারে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে। এমতাবস্থায়, এসব বেআইনি কার্যক্রম ও অপরাধ চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামকে নির্দেশ দেওয়া হলো। আগামী ৫ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন প্রাপ্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার শেষের পাতায় ‘লংগদুতে সোনালী ব্যাংকের কাণ্ড, ৩০ কোটি টাকার ভুয়া ঋণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে বলা হয়েছে- রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ও বগাত্বর ইউনিয়নের তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে লংগদু সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ভুয়া ঋণের নোটিশ ঝুলছে। সরকারি সহায়তা দেওয়ার নামে ১২ বছর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে এ ঋণ তুলে নেয় একটি চক্র। সম্প্রতি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন ভুক্তভোগীরা। এতেই বিপাকে পড়েন সহায় সম্বলহীন নিম্ন আয়ের এই মানুষরা।
এই ভুয়া ঋণের বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারি লংগদু উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা। সেখানে ভুয়া ঋণের দায় থেকে মুক্তি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যাদের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে তাদেরকে এনআইডি কার্ডের প্রথম অংশ বগাচত্বর ও ভাসান্যাদম এবং দ্বিতীয় অংশে সোনাই ও মাইনীমুখ ইউনিয়ন দেখিয়ে জালিয়াতি করেছে স্থানীয় দালাল চক্র ও তৎকালীন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মামলা দায়েরের বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ও রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনহয়রানি বন্ধ ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঋণ প্রদান সংক্রান্ত বেআইনি কার্যকলাপ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটি জেলা কার্যালয়েও অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদক যদি মনে করে সেখানে দুর্নীতি হয়েছে তারাও তদন্ত করে দেখতে পারে।’
এ ব্যাপারে রাঙামাটি সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অবসরে যাওয়া তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার ও ঋণ অফিসারের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম থেকে দুটি পৃথক তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আরও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সেখানে যে বা যাদেরকেই জড়িত পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।