ঢাকা ২৭ কার্তিক ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

ওষুধের নামে মাদক, যৌন উত্তেজক আমদানি

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১২ এএম
ওষুধের নামে মাদক, যৌন উত্তেজক আমদানি
প্রতীকী ছবি

গত ছয় মাসে বন্দর থেকে আমদানি নিষিদ্ধ মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক সামগ্রীর ১৯টি চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এসব চালান শিল্পের কাঁচামাল, জরুরি ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রীর নামে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এসব জানা যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এসব চালানে প্রায় ৬১২ কোটি টাকার রাজস্ব জড়িত ছিল। এসব চালানের বেশির ভাগ এক সময় চালু থাকলেও এখন বন্ধ রয়েছে অথবা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন সব প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা হয়েছে। এ ছাড়া, দেশের নামিদামি হাসপাতাল, ওষুধ কোম্পানি, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামেও আনা হয়েছে। অথচ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কিছুই জানে না।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক আমদানিতে দেশের মধ্যে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। এসব ব্যক্তি বিদেশি একাধিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে মাদকের এ কারবার চালাচ্ছেন। আমদানি করা মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজকের চালান ধরা পড়লেও আমদানিকারকদের সন্ধান মেলেনি। সারা দেশের কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করে এসব আমদানি নিষিদ্ধ মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। চালান আটকের পর কেউ তা ছাড় করাতে আসেননি। 

দলের নেতারা আড়ালে থেকে মদ, মাদক, যৌন উত্তেজক সামগ্রীর কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমদানিকারক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানি নিষিদ্ধ মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক সামগ্রী বহনকারীরা এককালীন আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। 

কিছু ব্যক্তি এসব পণ্য বন্দর থেকে ছাড় করিয়ে বন্দরের বাইরে এনে অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বন্দরের বাইরে পণ্য হাতে পেয়ে দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে দিয়েছেন। এক্ষেত্রেও পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। নির্দিষ্ট ঠিকানা থেকে অন্য কেউ সারা দেশে বিভিন্ন ঠিকানায় বিক্রির জন্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। এসব ব্যক্তিদের কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। এসব কাজে একই ব্যক্তিকে বারবার ব্যবহার করা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নতুন ব্যক্তি নেওয়া হয়। এদের কেউই দলের মূল নেতাকে চেনেন না বা তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় না। আবার অনেকে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। কাজের বিনিময়ে এসব ব্যক্তির সাধারণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হয়

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এসব কারবারি দেশি-বিদেশি এজেন্ট দিয়েও বিদেশ থেকে মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক সামগ্রী আনছেন। এসব ব্যক্তি সাধারণ যাত্রী হয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে ব্যাগেজে কৌশলে গোপনে এসব পণ্য রাখেন। পরে বন্দরের বাইরে নিয়ে গিয়ে অন্য কারও কাছে দিয়ে দেন। এ কাজে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। 

আমদানি করা মদ, মাদক, যৌন উত্তেজক সামগ্রী রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নামিদামি এলাকাতে বাসা ভাড়া করে রাখা হয়। এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, কোচিং সেন্টারের আশপাশের অনেক ফাস্টফুডের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, স্টেশনারি বিক্রির দোকানসহ অন্যান্য দোকানে পৌঁছে দেওয়া হয়। এসব দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরাঁতে গোপনে নিষিদ্ধ এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিক নিষিদ্ধ এসব কারবারের বিষয় জানেনই না। অনেক ক্ষেত্রে বিক্রয়কর্মীরা জড়িত থাকেন। অনেকে আবার ব্যাগে করে নিয়ে এসে বিক্রি করেও চলে যান।
 
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মধ্যে সরকারকে বিতর্কিত করতেও অনেক অসাধু ব্যক্তি এসব নিষিদ্ধ পণ্য এনেছেন। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেশের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এই সুযোগে সারা দেশে এসব নিষিদ্ধ পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু মিথ্যা ঘোষণায় আনা হয়েছে তা নয়, ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা দিয়েও ব্যাগেজে খুব কৌশলে গোপনে মাদক আনা হয়েছে। অন্যদিকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই পুরোপুরি প্রস্তুতি না নিতেও অনেক নিষিদ্ধ এসব পণ্য এনেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমদানি নিষিদ্ধ মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ সামনে রেখে বিভিন্ন বন্দরে নজরদারি বাড়াতে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। বিশেষভাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কোনো কার্টনে বা প্যাকেটে মিথ্যা ঘোষণায় মদ, মাদক ও যৌন উত্তেজক আনছে এমন সন্দেহ হলে জব্দ করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শুধু তাই না, কোনো যাত্রীর ব্যাগেজে আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য আছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হয়েছে। যাত্রী যত প্রভাবশালীই হোক না তাকে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্কুল-কলেজ, কোচিং বা বাসা-বাড়ির কাছাকাছি একই রেস্তোরাঁয় কিশোর-কিশোরী একা, বন্ধু-বান্ধবী বা পরিচিতজনদের নিয়ে ফাস্ট ফুড বা মজাদার দামি খাবার খেতে এলে মূলত সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁ থেকে ওই কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করা হয়। এক্ষেত্রে রেস্তোরাঁয় খাবার সরবরাহকারীরা এসব পণ্য কৌশলে বিক্রি করে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা এসবের ভয়াবহতা সম্পর্কে না জেনেই কিনে থাকে। একবার দুইবার খেলে বা ব্যবহার করলে আকর্ষণ তৈরি হয়। পরে আসক্ত হয়ে পড়লে কিশোর-কিশোরীরা জেনে-শুনে উচ্চ মূল্যে কিনে সেবন করে থাকে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখনো আমদানি করা সব কার্টনের মধ্যে কি আছে তা দেখে ছাড় করা সম্ভব হয় না। এর মূল কারণ এনবিআরের লোকবলের সংকট। বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তির সাহায্যে কার্টনের মধ্যে কী আছে তা নিশ্চত হওয়া সম্ভব। কিন্তু এখনো এনবিআর সেই সক্ষমতা অর্জন করেনি। এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। তাহলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি অনেক কমে যাবে।’ 

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিটউ অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনবিআরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি যে মিথ্যা ঘোষণায় আনা সব পণ্য আটকানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে এনবিআরকে আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’ 

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফখরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দারা জনগণের জন্য ক্ষতিকর পণ্য আমদানি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে। আমরা সব বন্দরে তৎপরতা বাড়িয়েছি।’

পাউবোর প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না স্থানীয়রা

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
পাউবোর প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না স্থানীয়রা
পানি উন্নয়ন বোর্ড

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না নীলফামারীর জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার মানুষ। এ কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বুড়ি তিস্তা রিজার্ভার পুনর্খনন প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

তবে কাজ হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পাউবো।

এ বিষয়ে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জুলফিকার রহমান বলেন, ‘জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার সীমায় ১ হাজার ২১৭ একরের মধ্যে ৬৬৭ একর পুনর্খননে ২০২২ সালের এপ্রিলে ৯৮ কোটি টাকায় নিয়োগ করা হয় ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে মে মাসেই বন্ধ হয়ে যায় খননকাজ। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় এক্সক্যাভেটর। মারধর করা হয় নিরাপত্তা কর্মীদের। এ ছাড়া হামলার শিকার হয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তাসহ অনেকে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী তিস্তা। পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা নদীর ৬৯ কিলোমিটারের পানিপ্রবাহ কাজে লাগাতে ১৯৬০ সালে শুরু হয় ‘বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন কাজ। দেশের প্রথম এ সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। এই বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পেরই অংশ ‘বুড়ি তিস্তা রিজার্ভার’।

এলাকাবাসী জানান, পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এলাকায় চাষাবাদ সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৬০ বছর আগে এ প্রকল্প বস্তবায়ন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের কথা বলে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জমিও নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেচের পানি নিশ্চিত করতে পারেনি। এ অবস্থায় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আর নতুন করে জমি দিতে রাজি নন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য যে জমি নেওয়া হচ্ছে, তা সরকারি। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, ‘যেসব জমি নেওয়া হচ্ছে তা ব্যক্তিমালিকাধীন। মালিকানা প্রমাণ করার মতো কাগজপত্রও আছে তাদের কাছে।’ এ নিয়ে দুই পক্ষের বিতর্ক। এর জেরে ধরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এরপর সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পাউবো ১০টি মামলা করেছে। এতে প্রকল্প এলাকার অন্তত ৯০০ মানুষকে আসামি করা হয়।

অন্যদিকে এলাকাবাসী পাউবোর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের পাশাপাশি গেছেন উচ্চ আদালতেও। এ হামলা-মামলার কারণে এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। পাউবোর কর্মকর্তারা এখন প্রকল্প এলাকায় যেতে পারছেন না।

পাউবোর দাবি, মূলত কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার ২১৮ জন দখলদার প্রকল্পভুক্ত সরকারি জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে।
 
এদিকে এলাকার মানুষের দাবি, এসব জমির খারিজ ও খাজনার রসিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। 
এ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘সফলভাবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। বছরে প্রায় ২৬ হাজার টন ফসল উৎপাদন করা যাবে। যার মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পানির গ্রাভিটি ইরিগেশন ১২ কোটি টাকার ফসল বেশি দেবে। এ ছাড়া জলাধার থেকে পাওয়া যাবে অতিরিক্ত মাছ। সেচের কাজে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সার বাবদ খরচ কমবে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হবে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমবে।’

তিনি দাবি করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সড়ক যোগযোগ উন্নত হবে। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ৯টি ব্রিজসহ বেশ কিছু পাকা অবকাঠামো।
 
মো. নাছির উদ্দিন নামের ডিমলা উপজেলার শালহাটি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এ প্রকল্পে আমার বাপ-দাদার ১৮ বিঘা জমি গেছে। তাতে নির্মাণ করা হয়েছে ৬টি গেট। কিন্তু এতে আমার কী উপকার হয়েছে?’

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরোধিতা করা একই উপজেলার সদরহাটা এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে মো. তৈহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে এ প্রকল্পে বাপ-দাদার ৩০ বিঘা জমি গেছে। কিন্তু তাতে আমাদের এলাকার তেমন কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আজও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেচ সুবিধা দিতে পারেনি। তারা এখন আবার জমি চাচ্ছে। আমরা তা দেব না।’
 
কিন্তু পাউবোর দাবি, প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ জমিই সরকারি এবং গত বছর পর্যন্ত তারা খাজনা দিয়েছে। ডিমলার কুঠির ডাঙ্গা গ্রামের মো. রজব আলীর ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় পাউবোর জায়গা আছে মাত্র ১০০ দশমিক ২৪ একর। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে ১ হাজার ২৬০ একর জায়গাই তাদের।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যে জায়গা দাবি করছে, সেসব জায়গা আমাদের বাপ-দাদার, কিছুদিন আগেও আমরা সরকারকে খাজনা দিয়েছি কিন্তু তারা হুকুম দখলের প্রস্তুতি নেওয়ার পর ‘লাল পতাকা’ লাগিয়ে দিলে ভূমি অফিস আমাদের খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’
 
এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব মামলা দিয়েছে সেগুলো হয়রানিমূলক। এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি তাদের একই সঙ্গে তারা ফিরে পেতে চান পূর্বপুরুষদের জমি। 

ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ অসচেতনতা

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম
ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ অসচেতনতা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

চলতি মাসে (নভেম্বর) ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলেও ডেঙ্গুর বাড়ার কারণ নাগরিকদের অসচেতনতা।

ফলে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সহসাই এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু এ মৌসুমের যেকোনো মাসের প্রথম ১০ দিনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
রবিবার (১০ নেভম্বর) সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৬ জন, মারা গেছেন ৫৮ জন। চলতি বছর এ পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত রোগটিতে ৩৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমবে না। তারা বলেছেন, সারা দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় গলদ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থাসহ অন্য আরও বেশকিছু কারণে ডেঙ্গু কমছে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১০৫৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩৯ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে ৩১১ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৫ জনের। এপ্রিলে ৫০৪ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ২ জনের। মে মাসে ভর্তি হন ৬৪৪ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৮ জনের। জুলাই মাসে ভর্তি হন ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের।
 
জুলাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি রোগী শনাক্ত হয় আগস্টে। এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে। আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি হন ১৮ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয় ৮০ জনের। অক্টোবরে ভর্তি হন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন, মৃত্যু হয় ১৩৪ জনের।

ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। সে সময় ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান। এর আগে ২২ সালে মারা যান ২৮১ জন। ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০ সালে করোনার কারণে ডেঙ্গুর প্রভাব বোঝা যায়নি। ১৯ সালে মৃত্যু হয় অন্তত ৩০০ জনের।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু থেকে নাগরিকদের রক্ষায় সরকার জনসচেতনতা সৃষ্টি, মশার প্রজননস্থল বিনষ্ট করা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং লার্ভা ও মশা নিধন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধন অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে। এসব কার্যক্রম সমন্বয় ও নিবিড় তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ১০টি কমিটি গঠন করেছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগী ও মারা যাওয়া রোগীর নামের তালিকা (ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ) সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোয় নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুদে বার্তা ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

শূন্য থেকে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক ইয়াছিন

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম
শূন্য থেকে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক ইয়াছিন
ইয়াছিন আলী

একসময় পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতেই হিমশিম খেতেন ইয়াছিন আলীর বাবা আব্দুল বারী। অভাবের তাগিদে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের দায়ে প্রায় ১১ বছর জেলও খেটেছেন তিনি। বাবার অভাবের সংসারে বড় হওয়া সেই ইয়াছিন আলী হঠাৎ করেই যেন হাতে পেলেন আলাদিনের চেরাগ। শূন্য থেকে বনে গেলেন কয়েক শ কোটি টাকার মালিক। 

ইয়াছিন আলীর হঠাৎ এমন বিত্তশালী হওয়া রূপকথার গল্পকেও যেন হার মানায়। এখন তার কাছে রয়েছে প্রচুর নগদ অর্থ। বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। তার নামে নিজ উপজেলা, জেলা ও রাজধানীতে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। বিদেশেও রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১০ বছরে শূন্য থেকে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ইয়াছিন আলী। দিনাজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। ইয়াছিন বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। দেশে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসাও রয়েছে তার। মাসে কয়েকবার বিদেশ না গেলে চলেই না তার। বীরগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাটখোলা গ্রামে তাদের বাড়ি। 

ইয়াছিনের বাবার মৃত্যুর পর তৎকালীন দিনাজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ব্যাপক চাটুকারিতার মাধ্যমে সাবেক এমপি গোপালের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এর পরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক এমপি গোপালের কমিশন-বাণিজ্যের মূল হোতা ছিলেন ইয়াছিন আলী। তার সহযোগিতায় নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, সোলার লাইট-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ-বাণিজ্য, থানায় তদবির, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণাসহ নানা অপরাধ-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন তিনি। 

ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা রয়েছে। ধর্ষণের মামলাটি এখনো অমীমাংসিত। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জগদল পুরাতন জেলখানা এলাকায় তারা মিয়া পাগলার ছেলেকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রভাব খাটানোর ফলে এসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এমপি গোপাল তার পক্ষে থাকায় বীরগঞ্জ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। তার দাপটে অসহায় ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও।

সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হওয়া প্রতিটি প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণ, বরাদ্দের কত শতাংশ প্রকল্পে ব্যয় এবং কত শতাংশ লুটপাট ও ভাগ-বাঁটোয়ারা হবে তা ঠিক করে দিতেন ইয়াছিন আলী। সাবেক এমপির আশীর্বাদ নিয়েই ইয়াছিন আলী বীরগঞ্জ হাটখোলা সলিডারিটি ক্লাব এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, ঘোড়াবান্দা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি হন। এ সময় বেশির ভাগ বরাদ্দ তার পকেটে ঢোকে। সরকারি ভবন মেরামত, টিআর, জিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ প্রত্যেক অর্থবছরে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ লুট করাই ছিল তার প্রধান কাজ। এমপি গোপালের মেয়াদকালে কেবল ক্রীড়া সংস্থার নামে বরাদ্দ নিয়ে ১ কোটি টাকা লোপাট করেছেন ইয়াছিন আলী। 

একইভাবে ইয়াছিন আলীর সলিডারিটি ক্লাব এবং ঘোড়াবান্দা দাখিল মাদ্রাসার নামে গত ১৬ বছরে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বরাদ্দের ৪০ শতাংশের বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। ইয়াছিন আলী সরকারি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য নিজে কালোবাজার থেকে অর্ধেক মূল্যে কিনতেন, যা ছিল ওপেন সিক্রেট।

জানা গেছে, সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল ও ইয়াছিনের অবৈধ প্রভাবে প্রকল্প সভাপতি-সম্পাদকরা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। প্রকল্পের মালামাল অর্ধেক দামে ইয়াছিনকে দিতে হতো। চলতি বাজারে চালের মূল্য টনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা হলেও ইয়াছিন নিতেন ১৫-২০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ ২ লাখ টাকার চালের ডিও বিক্রি হতো ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়।

ইয়াছিন আলীর দাপটে সিংহভাগ টিআর প্রকল্পের মালামাল কালোবাজারে বিক্রি করে প্রায় তার পুরোটাই লোপাট করা হয়েছে। কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প কোথাও অর্ধেক, আবার কোথাও অর্ধেকের কিছু কম বাস্তবায়ন করা হতো।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী অভিযোগ করে বলেন, সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল তার মেয়াদকালে ইয়াছিন আলীর সহায়তায় সরকারি প্রকল্পে ন্যূনতম ৭৫-৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে তার কথাই ছিল শেষ কথা। বীরগঞ্জ পৌরসভার স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে, বিশেষ করে এমপি গোপালের দাপটে সরকারের বিভিন্ন টেন্ডার ছিল ইয়াছিন আলীর নিয়ন্ত্রণে। তার কথার বাইরে গেলেই মামলার আসামি হতে হতো।’

বীরগঞ্জের মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ইয়াছিন আলী এমপি গোপালের একান্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যেত না। সরকারি সব অফিস তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। বীরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জমি কিনেছেন ইয়াছিন। অনেক জমি জোর করে দখল করারও রেকর্ড রয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো।

এসব বিষয়ে ইয়াছিন আলীর মন্তব্য জানতে তার মোবাইলে ফোন করা হলে ‘সাক্ষাতে কথা হবে’ বলে লাইন কেটে দেন তিনি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বদলে গেছে আদালতপাড়া

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
বদলে গেছে আদালতপাড়া
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা। ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায় পুরো আদালত চত্বর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছিলেন। কোর্টের ৩ তলার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা মেলে দুজন ভিআইপি আসামির। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। দুজনকে হাজিরা শেষে পুলিশি নিরাপত্তায় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছিল। এ সময় তাদের ঘিরে আইনজীবী ও সাধারণ মানষের ঠাসা ভিড় দেখা যায়। তারা দুজনে বয়সের ভারে নতজানু। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ভিআইপি আসামিদের হাজিরা এখন নিত্যদিনের। মক্কেল ও আইনজীবীদের আনাগোনা আগের মতোই। 

সরেজমিনে জজ কোর্ট ঘুরে দেখা যায়, সরকার পতনের পর বদলে গেছে সেখানকার চিত্র। একসময় যেখানে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের দাপটে টেকা দায় ছিল সেখানে এখন ভিন্ন চিত্র। আদালতপাড়া দখলে নিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। 

সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, স্পেশাল প্রসিকিউটর, জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার), অতিরিক্ত জিপি, সহকারী জিপিসহ সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগ আইনজীবী চেম্বার ছেড়ে পালিয়েছেন। এই পদগুলোতে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দিন আগে ঢাকার আদালতপাড়ায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুরের জেরে গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়। নতুন করে এসব চেম্বার মেরামত করা হয়েছে। তবে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারগুলো খোলা থাকলেও সেখানে তারা আসছেন না। 

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, যেসব দালাল একসময় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে কাজ করতেন বা মামলা এনে দিতেন, এখন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে এসব দালালের আনাগোনা বেড়েছে। এ ছাড়া আসামি ও আইনজীবীদের ওপর হামলা থেমে নেই। 

ঢাকা জজ কোর্টের একাধিক আইনজীবী জানান, আওয়ামীপন্থি প্রায় ২০০ আইনজীবী এখন কোর্টে আসেন না। তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারগুলো খোলা থাকলেও সেখানে আগের মতো মক্কেল ও মামলার ফাইলের চাপ নেই। এ ছাড়া সরকার পতনের পর রাজনৈতিক মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন অনেক আইনজীবী। বেশ কয়েকজনের চেম্বারও ভাঙচুর করা হয়েছে। কোর্টে না আসায় ও নিয়মিত শুনানিতে না থাকায় তাদের মামলাগুলো চলে যাচ্ছে বিএনপি আইনজীবীদের হাতে। এ ছাড়া দালালরাও তাদের চেহারা পাল্টেছে। বিএনপি আইনজীবীদের চেম্বারে তাদের আনাগোনা বেড়েছে। পুলিশের বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। 

সাবেক এক সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর খবরের কাগজকে বলেন, সরকারের পতনের এক দিন আগে ঢাকার আদালতপাড়ায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়। ওই দিন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদত শাওনের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে দুর্বৃত্তরা হেলমেট পরে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকটি চেম্বার ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুখ ফারুকীর চেম্বারও ভাঙচুর করা হয়। এর জেরে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই ভরাডুবির জন্য আইনজীবীরাও দায়ী। তারা আওয়ামী সরকারের দাসে পরিণত হয়েছিল। তাদের একচেটিয়া অন্যায়-অত্যাচারের কারণে আমার মতো অনেকে চাকরি হারিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে শ ম রেজাউল করিম, আব্দুল দুলাল, সাইদুর রহমান মানিক, ফিরোজ রহমান মিন্টু ও মিজানুর রহমান মামুনসহ অনেকে এখন চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। তাদের জুনিয়রদেরও এখন কোর্টে দেখা যায় না। এটা তাদের শাস্তি। এই পরিবেশ তারাই তৈরি করেছেন। আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। 

আইনজীবীদের ওপর হামলা-মামলা

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেক সুপরিচিত আইনজীবী আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ হামলার ভয়ে নিজ দলের গ্রেপ্তার নেতাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াবার সাহস পাননি। অনেক আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া একাধিক মামলার আসামিও হয়েছেন অনেকে। 

গত ২২ অক্টোবর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সামনে সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। হঠাৎ বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী এসে মোরশেদের মাথায় আঘাত করেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি যখন আবার কথা বলছিলেন, তখন আরেক আইনজীবী মোরশেদের সামনে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে জোর করে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেন। মোরশেদের ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে সিএমএম আদালতে দাঁড়িয়ে হামলার শিকার হন আইনজীবী শেখ ফরিদও। গত ১৭ অক্টোবর ফরিদ সিএমএম আদালত ভবন থেকে বের হওয়ার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাকে মারধর করেন, লাথি ও ঘুষি মারেন।

হামলার বিষয়ে আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে আমিসহ শেখ ফরিদ ও গত বৃহস্পতিবার স্বপন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী হামলার শিকার হয়েছেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমার ওপর হামলা করেছেন একজন আইনজীবী।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের ভাই। আমাদের সবারই বার কাউন্সিলের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। একজন আইনজীবী হয়ে অন্য আইনজীবীর ওপর হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার পতনের পর হামলা-মামলা ও চেম্বার ভাঙচুরের কারণে অনেকে এখন আদালতে যাচ্ছেন না। তিনি আইনজীবীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকার ও বার কাউন্সিলের প্রতি জোর দাবি জানান। 

এসব হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ বিষয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুখ ফারুকী (পাবলিক প্রসিকিউটর) খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট আমার চেম্বারসহ প্রায় ১০টি চেম্বার ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী আইনজীবীরা কোর্টে আসছেন না এটি সত্য নয়।’ 

ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আজমপুরে রাইদা পরিবহনের চালক আলমগীর হোসেনকে (৩৪) মাথায় গুলি করে হত্যার অভিযোগে অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদীকে গতকাল কোর্টে তোলা হয়। তিনি বলেন, মেহেদির জন্য প্রায় ২০০ আইনজীবী ছিলেন কোর্টে। তারা কোর্টে আসছেন না, হামলার শিকার হচ্ছেন, এটি মিথ্যা। ঘৃণা থেকে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ ও হামলা করেছেন, বিএনপির কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন। 

আসামিদের ওপর হামলা

গত ১৪ আগস্ট একটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। ওই দুজনকেও ডিম নিক্ষেপ করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর হামলা হয়। সিএমএম আদালতের লকআপে নেওয়ার সময় সাবেরকে অন্তত তিনজন ঘুষি মারেন। তাকেও ডিম ছোড়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশকে হামলাকারীদের ঠেলে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে গত ২৪ আগস্ট সিলেটের আদালতে হাজির করা হয়। তিনি পুলিশের গাড়ি থেকে নামার সময় একদল লোক তার মাথায় আঘাত করেন এবং কেউ কেউ তার দিকে জুতা ছুড়ে মারেন। তাকে মারধর করা হয় এবং তার সুরক্ষায় পুলিশের দেওয়া হেলমেটও খুলে ফেলা হয়।

আইন অনুযায়ী হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ রেগুলেশনের ৩২৮ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, থানা বা ফাঁড়িতে আনা সব বন্দির নিরাপদ হেফাজতের জন্য থানা বা ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন বিভাগ) তারেক জুবায়ের বলেন, ‘কোর্ট পুলিশের সদস্যরা নিরস্ত্র হওয়ায় তারা আদালত প্রাঙ্গণে মানবঢাল তৈরি করে আসামিদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া আইনজীবীদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করেন বার কাউন্সিল। এ ছাড়া কোনো অভিযোগ পেলে আমরা তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাই। তারাও ব্যবস্থা নেয়।’ 

তিনি বলেন, আদালতে ভিআইপিসহ অন্য আসামিদের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে। এ ছাড়া তাদের হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও পরিয়ে দেওয়া হয়। 

কপ২৯ সম্মেলন শুরু পরিবেশ রক্ষায় বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
পরিবেশ রক্ষায় বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি
কপ২৯ সম্মেলন

‘আমরা খুব কঠিন সময় পার করছি। আমাদের কাজগুলোও কঠিন হয়ে পড়ছে। আমি কোনো আশা অথবা স্বপ্ন দেখছি না।’ কথাগুলো কপ২৯ (কনফারেন্স ফর পার্টিজ) সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে বলেছেন সিমন স্টিয়েল। তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ প্রধান। সম্মেলনটি এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। 

স্টিয়েল এরপর ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ফ্লোরেন্সের কথা শোনালেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে তার ঘরবাড়ি ঝড়ে উড়ে গেছে। এরকম লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়ে স্টিয়েল বলেন, ‘পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে ফ্লোরেন্সের মতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। এখন দরকার বৈশ্বিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই সংকট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জেগে ওঠা। আসুন, আমরা সকলে জেগে উঠি।’

গতকাল জাতিসংঘের এই পরিবেশ সম্মেলনটি শুরু হয়। চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে আলাপ-আলোচনা-পর্যালোচনা হবে অর্থায়ন ও বাণিজ্য নিয়ে। অনুন্নত দেশগুলো কতটা অর্থ পাবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। 

সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন আজারবাইজানের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ। তিনি কপ২৯ সম্মেলনের সভাপতি। 

উদ্বোধনী ভাষণে তিনি জোর দেন প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণের ওপর। বেশ আবেগঘন ভাষণে তিনি বলেন, ‘প্রিয় সতীর্থ, আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। সমস্যা ভবিষ্যতের নয়, এখনই জলবায়ু বদলাচ্ছে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না, তবে অন্ধকারের মধ্যে মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা বিপর্যস্ত মানুষের কথা উল্লেখ করে মুখতার আরও বলেন, ‘এখন প্রার্থনা করে অথবা কাগুজে দলিলপত্র না তৈরি করে প্রয়োজন সহমর্মিতার। মানুষ এখন নেতারা কী করেন তা দেখার জন্যে রীতিমতো অশ্রুপাত করছে। নতুন পথ খুঁজে পাওয়া ছাড়া পৃথিবীর মানুষের আর গত্যন্তর নেই।’

কিন্তু কী করণীয়? কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানো যাবে? উপায় হচ্ছে একটাই- অর্থায়ন। পরিবেশবাদীরা দাবি করছেন বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার দিতে হবে। এই দাবিই জানিয়ে রেখেছে অনুন্নত দেশগুলো। কিন্তু এই অর্থের সংস্থান হবে না। কত অর্থায়ন করা যাবে, এবারের সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সেটাই। বলা বাহুল্য, এই অর্থ দেওয়ার সক্ষমতা আছে উন্নত দেশগুলোর। সেই আবেদনই জানাবেন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা ২০০টি দেশের বিশ্ব নেতারা। এই দেশগুলোই ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। বাংলাদেশ থেকে এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

দরিদ্র দেশগুলোর আক্রান্ত মানুষদের বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় যে অর্থের দরকার হবে তার পরিমাণ হিসাবে জাতিসংঘ বলছে, একদিনের জন্য এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই অর্থের সংস্থান একেবারেই হবে না। 

বলা হয়েছে অর্থ ব্যয় হবে তিনটি কাজে- সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বৈরী পরিবেশকে বাগে আনা। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পাওয়া যেতে পারে ওই অর্থের দশ ভাগের মাত্র এক ভাগ। অর্থাৎ আনুমানিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। এদিকে বিপর্যয়ের মাত্রা যে দ্রুতগতিতে বাড়ছে, তাতে এই অর্থ সিন্ধুতে বিন্দুর মতোই প্রতীয়মান হচ্ছে জাতিসংঘের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের কাছে। এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের কণ্ঠেও এক ধরনের হতাশার সুর শোনা গেল। ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় নতুন ধরনের বাস্তবতা, এবং আমরা তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না। ফলে, বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। সুরক্ষার বিষয়টি আমরা বাতিল করতে পারি না। আমাদের অবশ্যই মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

গুতেরেস যথার্থই চিহ্নিত করেছেন, পরিবেশের এই যে ধ্বংস, সেটা ঘটছে ফসিল ফুয়েল দ্বারা চালিত শিল্পকারখানার জন্যে। এসব কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয়, কিন্তু সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। উন্নত দেশগুলোই এই কারখানা চালায়, তারাই মুনাফা করে, কিন্তু অর্থব্যয়ে আগ্রহ নেই তাদের। অথচ টাকাটা দরকার বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার জন্যেই।

প্রথমত, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, বিপর্যস্ত পরিবেশের প্রশমন ঘটিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলা। তৃতীয়ত, যে ধ্বংস ও ক্ষতি হয় সেসব পুষিয়ে নেওয়া। 

২০২১ সালে গ্লাসগোর কপ২৬ সম্মেলনে ২০২৫ সালে পরিবেশ সুরক্ষা ও ক্ষতির মোকাবিলা করার জন্যে ৩৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। অর্থ হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু সেটা প্রয়োজনীয় ২৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেশি এবং ৪১৫ বিলিয়ন ডলারের চাইতে অনেক কম। এই বাস্তবতায় মুখ রক্ষা করার মতো কিছু অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যায় কি না, বাকু সম্মেলন থেকে সেটাই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ধনী দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়নের ব্যবস্থাও করতে পারবে না। অর্থাৎ তারা এই অর্থ দেবে না। অথচ তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার অর্থ দেওয়া উচিত। যুক্তিটা স্পষ্ট, তোমাদের প্রয়োজনে তোমরা ফসিল জ্বালানি ব্যবহার করছো, ক্ষতি হচ্ছে অনুন্নত দরিদ্র দেশগুলোর, সুতরাং তোমরাই অর্থ দেবে। এই দায় তোমাদের।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই সম্মেলনে শীর্ষ ধনী দেশগুলোর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান যোগ দিচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন বা ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকছেন না। যাননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, চীনের প্রেসিডেন্টও থাকবেন না। সম্মেলনটা তাই খুব একটা ফলপ্রসূ সম্মেলন হবে বলে মনে হচ্ছে না। 

এই প্রেক্ষাপটেই প্রখ্যাত সুইডিশ পরিবেশবাদী গ্রেটা থুনবার্গ আজারবাইজানের প্রতিবেশী দেশ জর্জিয়ার তিবিলিসিতে গতকাল রাতে প্রতিবাদ র‌্যালির আয়োজন করেছিলেন। শুধু থুনবার্গ নন, আরও বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সম্মেলন চলাকালে এই প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হবে বলে মনে হয়। থুনবার্গ প্রতিবাদের ডাক দিয়ে বলেছেন, গ্রিন এজেন্ডার নামে যে সম্মেলন হচ্ছে তা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। উন্নত দেশগুলো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে আর বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে। এটা হচ্ছে পশ্চিমের সম্মিলিত কর্তৃত্ববাদী কর্মকাণ্ড। আজ থেকে লক্ষণীয় হয়ে উঠবে সম্মেলনটিতে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়, কীভাবে অগ্রসর হয়।