রমজানে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার বেশির ভাগ পণ্যেরই দাম বেড়েছে। এমনকি কিছু কিছু পণ্যের দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। তবে আছে ভিন্ন চিত্রও। কোনো কোনো পণ্যের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) খবরের কাগজের প্রতিবেদকরা রাজধানীর ৫টি বাজার সরেজমিনে ঘুরে এমনটাই দেখতে পেয়েছেন। ১০টি পণ্যের দাম কোন বাজারে কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায় কেবল মুড়ি ও চিড়ার দামে কোনো হেরফের নেই। বাকি কয়েকটি পণ্যের দামে কম বেশি হেরফের রয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের অন্যতম উপকরণ খেজুর। তাই রমজান এলে বাজারে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। বাজারে জাত ও মানভেদে নির্ধারণ হয় খেজুরের দাম। তবে এবার সব ধরনের খেজুরই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। দেশের বাজারে খেজুরের দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাদের মাঝে এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া।
এদিকে সরকার অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে চিনির দামও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১৪০ টাকা। তবে প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ দাম হবে ১৪৫ টাকা। গতকাল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হাসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই খেজুরের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দামি খেজুরের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়নি মন্ত্রণালয়। সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে স্বস্তিতে আসার চেষ্টায় আছে। বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো স্বল্পতা নেই। চালের দাম নিয়েও কোনো অস্বস্তি নেই।’
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং হচ্ছে। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলমান। খুব শিগগির তা দেশে আসবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
কারওয়ান বাজার
এই বাজারের খুচরা বিক্রেতারা গতকাল মঙ্গলবার পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন কেজিতে ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০ টাকায়। শসার কেজি ১০০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, লেবুর হালি ৩০-৪০ টাকা, বেশি বড় লেবু ৫০ টাকা। ছোলাও আগের মতো ১১০ টাকা কেজি, মুড়ি ৮০ টাকা, প্যাকেটজাত মুড়ি ১২০ টাকা, চিনি ১৪০-১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে টমেটোর দাম বেড়ে কেজিতে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বরই, খেজুর কেজিতে ৪৫০ টাকা, তিউনিশিয়া ৬৫০ ও মরিয়ম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এখনো পেঁয়াজসহ এসব পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেড়েছে। সে তুলনায় দাম বাড়েনি, যা বাড়ার আগেই বেড়ে গেছে। ক্রেতারা বেশি করে না কিনলে সামনে আরও কমবে দাম। আগের তুলনায় প্রথম রমজানে তেমন বাড়েনি দাম। ক্রেতারা বলছেন, বেশি দাম হওয়ায় কম করে কেনা হচ্ছে।
দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা হালিম, সোহাগ খবরের কাগজকে বলেন, আগে পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। কিন্তু রমজানে কমতে শুরু করেছে। গতকাল ৮০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়, যা আগের দিন ৯০ টাকা ছিল। অন্য বিক্রেতারাও জানান, পেঁয়াজের দাম কমছে। ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। সামনে আরও কমবে। ইফতারির মধ্যে শসার চাহিদা বেশি থাকায় কয়েক দিন ধরে দাম বাড়তে থাকে এবং ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় ঠেকে। কিন্তু গতকাল প্রথম রমজানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিক্রেতারা বলছেন, ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। এ জন্য ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও বাড়ছে না দাম। ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি ফুটপাতেও বেশি দাম নিচ্ছে না। সেখানেও ১০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতা দেলোয়ার জানান।
অন্য পণ্যের মতো রমজানের আগে লেবুর দামও বেড়ে গেছে। তবে গতকাল রমজান শুরু হলেও দাম বাড়েনি। আগের মতোই ৩০-৪০ টাকা হালি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে সিলেটের বড় লেবু ৫০ টাকা হালি বলে হানিফ জানান। তিনি আরও বলেন, চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি সরবরাহও বাড়ছে। এ জন্য দাম বাড়ছে না, যা বাড়ার আগেই বেড়ে গেছে।
বেগুনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত সপ্তাহ থেকে দাম বাড়ছে। তবে সে তুলনায় প্রথম রমজানে বাড়েনি। বরং আগের চেয়ে কমেছে বলে বিক্রেতারা জানান। জমির নামে এক বিক্রেতা বলেন, প্রচুর চাহিদা। তারপরও সবকিছুর দাম কমেছে। কারণ সরবরাহ বাড়ছে। এই বাজারের সবজি বিক্রেতা কুদ্দুস বলেন, লম্বা লেন আর গোল লেন সব বেগুন ৭০-৮০ টাকা। অন্য বিক্রেতারাও বলেন, আগে বাড়লেও প্রথম রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় টমেটোর দাম একটু বাড়তি। আগে কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও দুই দিন থেকে ৭০-৮০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে ইফতারির পণ্যের মধ্যে ছোলার দামও বেড়ে গেছে। তবে গতকাল বাড়েনি এর দাম। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম খানসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা জানান, ছোলার কেজি ১০৫-১১০ টাকা। কয়েক দিন ধরেই এই দামে বিক্রি হচ্ছে। চিনির কেজি ১৪০-১৪৫ টাকা। তবে আগের চেয়ে চিনির সরবরাহ কম। অন্য খুচরা বিক্রেতারাও জানান, ছোলার কেজি ১০৫-১১০ টাকা। চিনি পাওয়া গেলেও দাম একটু বেশি। ১৪৫ টাকা কেজি।
রমজানে মুড়ির চাহিদাও হঠাৎ করে বেড়ে যায়। গতকালও আগের মতো বস্তার মুড়ি কেজি ৮০ টাকা। তবে গাজীপুর ও বরিশালের প্যাকেট মুড়ির কেজি ১২০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান। ভাই ভাই ট্রেডার্সের সজলসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, চিড়া, মুড়ি ৮০ টাকা কেজি। তবে বিভিন্ন এলাকার প্যাকেটের মুড়ির কেজি ১২০ টাকা।
রমজান মাস শুরুর আগে এবার সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে খেজুর। এর দাম কেজিতে দেড় গুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, শুল্ক বেশি আরোপ করায় এর দাম বেড়ে গেছে। এই সুযোগে বিভিন্ন ব্যবসায়ীও বেশি দাম আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানের জহির বলেন, যা বাড়ার ১০-১৫ দিন আগেই বেড়েছে। গতকাল কোনো খেজুরের দাম বাড়েনি। বস্তার জাইদি খেজুর ২৮০ টাকা, তিউনিশিয়া ৬৫০ টাকা ও মরিয়ম খেজুর কেজিতে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে হারুনসহ কয়েকজন ক্রেতা জানান, আগের চেয়ে অনেক দাম বেশি। তাই খেজুর কেনা কমিয়ে দিয়েছি। জাম্বু খেজুর ২১০০ টাকা কেজি। এত বেশি দাম। তা কেনা সম্ভব না।
নিউ মার্কেট
রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে। সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে মেডজেল খেজুর। এটার আবার তিন ধরনের রয়েছে। ভিআইপি মেডজেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা করে। বাকি দুই ক্যাটাগরি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা ও ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। এরপরেই ইরানি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। মরিয়মের সৌদি ও অন্য ক্যাটাগরির খেজুর ৯০০ টাকা ও এক হাজার টাকা কেজি। ‘লোকাল’ খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা করে। খেজুরের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিউ মার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটের মাঝখানে খেজুরের দোকানে খেজুর কিনতে এসে দাম জিজ্ঞাসা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির মিয়া। মরিয়ম খেজুরের দাম শুনে বলেন, গরিবের খেজুরের দাম বলেন। পরে তিনি প্রতি কেজি ৫০০ টাকার খেজুর থেকে ২৫০ গ্রাম খেজুর কেনেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘ ইফতারিতে একটু খেজুর খেতে মন চায়। কিন্তু দাম তো অনেক বেশি।’
খেজুরের দাম নিয়ে বিসমিল্লাহ স্টোরের সুজন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রমজানের কারণে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। আমরা তো চকবাজার থেকে কিনে আনি। এখন কেনা অনেক বেশি। তাই আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’
নিউ মার্কেটের রহমান স্টোরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়, চিড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। মুড়ির কেজি ৮০ টাকা। এ ছাড়া চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
সবজির দামও বেড়েছে কেজি ২০-৩০ টাকা করে। দুই দিন আগে টমেটো যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকা কেজি দরে, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা করে। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে। আকারে একটু বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকা । বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। শসার দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এক কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। রমজান উপলক্ষে অনেকে মৌসুমি ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের একজন লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা জামাল উদ্দীন। নিউ মার্কেটের গলির মুখে শসা, লেবু, টমেটো, কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজার থেকে শসা কিনেছি ১০০ টাকায়। এর বাইরে যাতায়াত খরচ আছে। আমাদের তো ১২০ টাকায় বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। মূল আড়তে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে রমজানের মাঝামাঝিতে দাম কমে যাবে।’
হাতিরপুল
গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের কেজি ১০০-১১০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, ছোলা ১২০, চিড়া ৮০, মুড়ি ৮০, খেজুরের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ৫০০ টাকা, খেজুরের সর্বোচ্চ দাম কেজিতে ২ হাজার টাকা, হলুদ কাঁচা খেজুর একদর ১ হাজার ৮০০ টাকা, চিনি ১৬০, শসা ১২০, খিরা ১০০ ১২০, লেবুর হালি ১০০, গোল বেগুন ১২০, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ১৪০ টাকা।
আঙ্গুর ৩৫০, কালো আঙুর ৪৫০ টাকা, পেয়ারা ১০০ টাকা, দেশি কমলা ২০০ টাকা, চায়না কমলা ৩০০ টাকা, আপেল ২৫০ টাকা।
সবকিছুর দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন ক্রেতারা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাকিম আলী বলেন, বাজারের বিষয়ে কী আর বলব। দুই বছরের মধ্যে চোখের পলকে সব পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। যত টাকাই নিয়ে আসি না কেন ফুরিয়ে যায়। এই বাজারে (হাতিরপুল) দাম আরও বেশি। যেকোনো জিনিসের দাম অন্য বাজারের তুলনায় কেজিতে ১০/২০/৫০ টাকাও বেশি।
রোজার প্রথম দিন পর্যন্ত দাম বেশি থাকলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে বলে মন্তব্য করেন বিক্রেতারা। মুদি ও কাঁচাবাজারের দোকানি আবু বক্কর বলেন, এই বাজারে নানা জায়গা থেকে পণ্য আসে। দোকানের ভাড়া বেশি, গাড়ি ভাড়াও আছে। তাই কিছু তো দাম বাড়বেই।
মালিবাগ
মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১৫ টাকায়, গত সপ্তাহে ছোলার দাম ছিল ১০০-১০৫ টাকা। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
এই বাজারে গতকাল চিনির দাম ছিল ১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ১৭০ টাকা। লম্বা বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়, গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এর অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। শসা বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়। পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে টমেটোর। এক সপ্তাহ আগেও ৩০-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া টমেটো বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে লেবুর দামও। প্রতি হালি লেবু ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা কয়েক দিন আগেও হালি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে আমদানির খবরে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি জিহাদি খেজুর বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায় । কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে তিউনিশিয়া খেজুর ৫৫০ টাকায় ও সুফরি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। এ ছাড়া সাধারণমানের এক কেজি জাইদি খেজুর বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এ বাজারে মুড়ির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। চিড়ার দামও সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়।
এ বিষয়ে মালিবাগ বাজারের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে কিনে আমরা সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করি।’
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম নামে একজন ভোক্তা বলেন, ‘রোজায় এসব পণ্য একটু বেশিই লাগে কিন্তু দাম বাড়ার কারণে আমাদের চার সদস্যের পরিবারের বাজার খরচ বাধ্য হয়ে কমাতে হয়েছে।’
সেগুনবাগিচা
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দুই দিন আগে এই বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
এদিকে গতকাল প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অন্যদিকে লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি বেগুনে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতি পিস লেবু বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এখানে বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগে প্রতিটি লেবুর দাম ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। রমজানকে সামনে রেখে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবু ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন এমন চিত্রও দেখা গেছে।
এদিকে প্রতি কেজি টমেটোতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। দুই দিন আগেও প্রতি কেজি টমেটোর দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি টমেটোর দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর যা ১১০ ছিল। রমজানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছোলা সকালে বিক্রি হচ্ছিল ১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ টাকা।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আধা কেজির প্যাকেটজাত মুড়ি ৬৫ টাকা করে বিক্রি হলেও তার দাম এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি কেজি মুড়ির দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
বাজারে গতকাল দুই ধরনের শসা বিক্রি করতে দেখা গেছে। হাইব্রিড প্রতি কেজি শসার দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি দেশি শসার দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি দেশি ও হাইব্রিড শসার দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি সাদা ও লাল চিড়ার দাম ছিল ১২০ টাকা। গত বছর এক কেজি চিড়ার দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে যেসব খেজুরের দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, সেসব খেজুরের কেজি এখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে এসব খেজুরের দাম সাত থেকে আট গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের খেজুর ‘জাইদি’ জাতের। এই খেজুর প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এই জাতের খেজুরের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে ‘জাইদি’ খেজুর বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জাহাঙ্গীর আলম, আনিসুর রহমান, শাহআলম নূর, জিয়াউদ্দিন রাজু ও সাজ্জাদুল কবীর