ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘ছাড়’ দেবে সরকার

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১২:২৩ পিএম
আপডেট: ১৩ মে ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘ছাড়’ দেবে সরকার
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু

টানাপোড়েন দূর করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হচ্ছে সরকার। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দেশটির কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার তাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকা আসছেন। তার সফরকে কেন্দ্র করে সরকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল। এই সময় সরকার আর কোনো বিরোধে জড়াতে চায় না। চীন ও ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রবিবার (১২ মে) ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আসবেন। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হতেই পারে। শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। 

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম খবরের কাগজকে বলেন, মার্কিন প্রশাসন বুঝতে পেরেছে চাপ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কিছু আদায় করা যাবে না। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমাদের সরকারও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় একই আছে। সবার সঙ্গেই আমরা সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আর যুক্তরাষ্ট্রের কথা তো আলাদা। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরই সরকার এ ব্যাপারে সক্রিয় হয়। তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকায় আমি হলফ করে বলতে পারি, এখনো এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও ওয়াশিংটন সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব জেনে বিদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিতে পারে সরকার। এমনকি চীনকে মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের যে চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত রেখেছে, সে বিষয়েও সহযোগিতার ইঙ্গিত দেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে বিদ্রোহকবলিত অস্থির মায়ানমারে আসছে দিনগুলোতে অন্য পরাশক্তির ভূমিকা কী হতে পারে, তাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে অভিজ্ঞ মহলকে। এর বাইরে রাশিয়া ও চীনের ওপর থেকে সামরিক নির্ভরতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়েও ইতিবাচক আশ্বাস দিতে পারে সরকার। তবে সব কিছুর আগে আওয়ামী লীগ সরকার চায় র‌্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশ্বাস পেলেই তারা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানাবে। 

জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নির্বাচনের পর লুসহ মার্কিন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিকদের সঙ্গেও সরকারের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিক্ততা ভুলে সম্পর্ক উন্নয়নের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক খবরের কাগজকে জানিয়েছেন। 

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অতিমাত্রায় তৎপর এবং বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলে ক্ষুব্ধ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

বলা হচ্ছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এই দফা বাংলাদেশে আসছেন। তবে ঢাকায় সরকারি মহল এই সফরে বিশেষ কিছু দেখছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সম্পর্ক জোরদারের আগে তা স্বাভাবিক করা এখন দুই পক্ষের কাছেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে তারাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। সে ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ছাড় পেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হবে। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। 

র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ মানবাধিকার ইস্যুতে যখন তখন বিবৃতি এবং বিরোধী পক্ষ বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা দফারফাও করতে চায় সরকার। তা হলে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে হুমকি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছিল, তা দূর হবে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্রয়ের অভাবে সরকারের বিরোধী শক্তিরা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত ও শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ায় ছয় দিনের সফরের শেষ সময়টা ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে কাটাবেন। সেখানে তিনি জলবায়ুসংকট মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরকরণসহ মার্কিন-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন। দুই দিনের সফরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন তিনি। ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অবশ্যই এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে এবং প্রত্যাশিত ভূমিকার ফলে এ সম্পর্ক আগামীতে সুদৃঢ় হতে পারে।

সিলেটে শত বছর পর টিলাবান্ধব প্রকল্প

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
সিলেটে শত বছর পর টিলাবান্ধব প্রকল্প
সিলেটের বাইশটিলা এলাকায় স্থপতি চিহ্নিত ‘নিঃসঙ্গ টিলাটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এই রূপে দেখা যাবে। ইনসেটে চলমান প্রকল্পের কাজ। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেট নগরীর উত্তর-পূর্ব এলাকাজুড়ে টিলার বিরাট বেষ্টনী। পরিবেশবাদীদের চোখে এগুলো প্রাকৃতিক ঢাল। প্রকৃতির সেই ঢাল এখন আর আগের মতো নেই। নগরায়ণের প্রভাব ও সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামোয় কাটা পড়ছে টিলা। তবে এ প্রবণতার বিপরীত চিত্র ছিল শত বছর আগে। শতাব্দীর প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ টিলাগড় এলাকায় স্থানান্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল টিলা রক্ষা করে। টিলার চূড়ায় বা টিলার ঢালে বিভিন্ন স্থাপনা স্থাপনে ছিল টিলাবান্ধব প্রকল্প। 

প্রায় ১০০ বছর পর টিলা রক্ষা করে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে চলেছে সিলেট নগরীর বিমানবন্দরের পাশে বাইশটিলা এলাকায়। প্রকল্প প্রস্তাব থেকে শুরু করে নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে টিলা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ায় সিলেট জেলা পরিষদের এ প্রকল্পটি টিলাবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সিলেট অঞ্চলে টিলাবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নের ইতিহাস নেই বললেই চলে। তথ্য তালাশে জানা গেছে, এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৯২ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩০ বছর পর ১৯২১ সালে কলেজটি সিলেট শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে টিলাগড় এলাকার ‘থ্যাকারে টিলা’ নামক স্থানে স্থানান্তর হয়। স্থানীয় ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ১৭ শতকের শেষভাগে যখন ব্রিটিশ সরকার সিলেট প্রশাসনিক কার্যক্রম তথা কালেক্টরেট সাজায়, তখন টিলাভূমি বেছে নেওয়া হয়েছিল। সিলেটের প্রথম কালেক্টরেট (ডিসি) উইলিয়াম ম্যাইকপিস থ্যাকার তার দাপ্তরিক ভবন নির্মাণ করেছিলেন টিলার চূড়ায়। বর্তমানে এমসি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত সেই টিলাটি অবিকল থাকায় নাম হয়েছে ‘থ্যাকারের টিলা’।

এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের ১২৪ একর জায়গার পুরোটা টিলাভূমি। প্রথম অবকাঠোমো নির্মাণ হয় ১৯২১ সালে। নির্মাণরীতিতে সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নের স্থাপনা স্থাপন করার মূলে ছিল টিলা রক্ষা করা। মূল ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস। নির্মাণ শেষে ১৯২৫ সালে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রীড।
 
শত বছর আগে সরকারিভাবে টিলাবান্ধব সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও পরবর্তী সময়ে তা আর অনুসরণ হয়নি। টিলাগড় এলাকা থেকে শুরু করে সিলেট নগরীর উত্তর-পূর্ব-পশ্চিমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি দুগ্ধ খামার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনে অর্ধশত টিলা কাটা হয়েছে বলে প্রকল্পের নথিতেই উল্লেখ রয়েছে। বাইশটিলায় বাস্তবায়নাধীন সিলেট জেলা পরিষদের প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিলা কেটে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রবণতার মধ্যে জেলা পরিষদের প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে একটি টিলাবান্ধব প্রকল্পের দৃষ্টান্ত। যার পুরোটা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দৃশ্যমান হবে।

বাইশটিলার অবস্থান সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া। নিরিবিলি পরিবেশ ও প্রকৃতি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। সবুজ-পাহাড়-টিলা আর হাওর-বিলের জলরাশি সেখানকার প্রাকৃতিক আকর্ষণ। বাইশটিলার লালবাগ দক্ষিণপাড়ায় সিলেট জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গা ‘ন্যাচারাল পার্ক’ প্রস্তাবিত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

জেলা পরিষদ জানায়, বাইশটিলায় জেলা পরিষদের মোট ৫৬ একর জায়গা রয়েছে। এ জায়গার একটি অংশ বিমানবন্দরের রানওয়ের সংরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর সম্প্রসারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পাঁচটি টিলা ও একটি জলাশয় মিলিয়ে মোট ৪০ একর জায়গা রয়েছে। ন্যাচারাল পার্ক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে সেখানকার প্রকৃতিকে প্রাকৃতিক রাখতে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রকল্প হিসেবে কাজটি শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ খবরের কাগজকে বলেন, প্রকৃতিকে প্রকৃত রেখেই প্রকল্পের কাজ চলছে। বাস্তবায়নের পর গোটা বাইশটিলা এলাকা নতুনরূপে দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। 

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টিলার চূড়ায় ওপেন কটেজের পাশাপাশি ওয়াশরুম, লেকের ওয়াকওয়ে, ঘাট ও সৌন্দর্যকরণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থপতির স্থাপত্য ভাবনা হলো একটি টিলার চূড়ায় অবস্থান করে যাবতীয় সব কাজ সম্পন্ন করারে সুযোগ থাকা। যেমনটি হয়েছিল ১৭ শতকের শেষভাগে থ্যাকারের টিলায়। এর প্রায় ২০০ বছরের মাথায় তা অনুসরণ করে এমসি কলেজের অবকাঠামো নির্মাণে সরকারি কাজে প্রচলন হয়েছিল সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নের স্থাপত্য নির্মাণ। যার ধারাবাহিকতায় সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য সরকারি স্থাপনা হয়েছে সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নে।

পুরো প্রকল্পের নকশা করেছেন স্থপতি রাজন দাশ। টিলাকে অবিকল রেখে স্থাপনা নির্মাণের চ্যালেঞ্জ জয়ে টিলাভূমিতে এই স্থপতির প্রথম স্থাপত্যকর্ম রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি তার নকশায় স্থাপিত। তবে সেই টিলার পুরোটা সুরক্ষা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়জোড়ে। 

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের নাম বাইশটিলা ন্যাচারাল পার্ক। প্রকৃতিকে নষ্ট না করার প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্নে স্থপতির নকশা প্রণয়নের সময় পুরো এলাকা জরিপ করা হয়েছে। এখানকার টিলাগুলোর মধ্যে একটি টিলা আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন)। স্থপতির চোখে এটি ‘নিঃসঙ্গ টিলা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। টিলার চূড়ায় স্থাপনা স্থাপন করা হবে। টিলাটির চারপাশে রয়েছে জলাশয়। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে হাঁটুজল থাকে। জলাশয়ের গভীরতা বাড়িয়ে ছোট ছোট নৌকা চলাচলের সুযোগ তৈরি করা হবে, যা টিলায় যাতায়াতে সরাসরি পথ-সংযোগ প্রাকৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করবে। এতে এয়ারপোর্টসংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। প্রধান সড়কের দিকে একটি পারাপারের ঘাট বা বোট-ইয়ার্ড থাকবে। যেখান থেকে টিলাসংলগ্ন ঘাটে নৌকা ভিড়বে এবং টিলার ভাঁজে ভাঁজে থাকা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে হবে। টিলার গায়ে বসার ছাউনিও থাকবে।

সেকালে থ্যাকারের টিলা থেকে এ কালের বাইশটিলার ‘নিঃসঙ্গ টিলা’ নিয়ে স্থপতি রাজন দাশ তার স্থাপত্যকর্মের বাস্তবায়ন যেন দিব্য চোখে দেখছিলেন। ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট সম্পর্কে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকৃতির লীলাখেলা প্রাকৃতিকভাবে দেখতে আমরা নিঃসঙ্গ টিলার নিঃসঙ্গতা চিরতরে ঘোচাতে চাই। প্রথম ধাপের কাজ শেষে টিলার ঢালে ঋতুভিত্তিক গাছগাছালি রোপণ করা হবে। আলাদা করে চিহ্নিত করা থাকবে বর্ষার গাছ, বসন্তের গাছ। এর মধ্যে এমনও ভাবনার বাস্তবায়ন চিন্তা রয়েছে যে, বছরের ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম সাজে সজ্জিত হবে এলাকা। যাতে একেক ঋতুতে প্রকৃতির একেক সাজ দেখা যায়।’ 

এদিকে টিলাবান্ধব প্রকল্পটি নিয়ে পরিবেশবাদীরা কী ভাবছেন? জানতে চাইলে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালনের সময় বলেছি যে, সিলেট অঞ্চলের টিলাভূমি নিঃশেষ হচ্ছে প্রশাসনিক ব্যর্থতায়। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে এ রকম একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। সেখানে আগে প্রকৃতি রক্ষায় এলিয়েন বৃক্ষ (বিদেশি গাছ) লাগিয়ে বনায়নের নামে সবুজের ক্ষতি করা হয়েছে। সেই সব অপসারণ দরকার। প্রকল্পটির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। পাশাপাশি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে টিলা রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।’ 

হজ কার্যক্রম শুরু আজ থেকে

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
হজ কার্যক্রম শুরু আজ থেকে
কাবা ঘরে তাওয়াফ করছেন হাজিরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনার হজ ক্যাম্পে আবার প্রাণচঞ্চলতা ফিরেছে। বছর ঘুরে আবার সরব হজক্যাম্প। প্রতিবছর হজে যাওয়ার আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হজযাত্রীরা এই ক্যাম্পে ওঠেন। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ধরতে কয়েক দিন আগেই ক্যাম্পে আসতে শুরু করেছেন দূর-দূরান্তের হজযাত্রীরা। আগামীকাল ২৯ এপ্রিল শুরু হচ্ছে হজের প্রথম ফ্লাইট। এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) হজক্যাম্পে এ বছরের হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। 

নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হচ্ছে হজযাত্রীদের। তবে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন তারা ফ্লাইট নিশ্চিত করতে কয়েক দিন আগে থেকেই ক্যাম্পে আসতে শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকেই হজক্যাম্প মুখর হতে শুরু করেছে হজযাত্রীদের পদচারণে।

গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা হজক্যাম্প  ঘুরে দেখা যায়, ফ্লাইটের দুই দিন বাকি থাকায় এবং ক্যাম্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হওয়ায় এখনো খুব একটা ভিড় নেই হজক্যাম্পে। তাই আগত হজযাত্রীদের কাউকেই ক্যাম্পের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। গত কয়েক বছরের মতো এবারও হজযাত্রী ছাড়া কাউকে হজক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট করছেন। কেউবা আবার বাইরে যাচ্ছেন খাওয়া-দাওয়া করতে এবং শেষ সময়ের কেনাকাটা সারতে। 

কুষ্টিয়া থেকে আসা নাজমা আক্তার স্বামীর সঙ্গে এবার হজ করতে যাচ্ছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের ফ্লাইট আগামীকাল রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। তাই আমরা দুদিন আগে চলে এলাম। ক্যাম্পের পরিবেশ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের পরিবেশ অনেকটা পরিচ্ছন্ন দেখছি। চারপাশ পরিচ্ছন্ন না থাকলে এখানে মশার উৎপাত বেশি থাকে।’ নারীদের থাকার জায়গা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বেশ ভালো। আর খুব বেশি ভিড় নেই তাই ভালোই আছি।’

দিনাজপুর থেকে এসেছেন মো. মোসলেম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ভোরেই পৌঁছেছি হজক্যাম্পে। আমার ফ্লাইট ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।’ ক্যাম্পে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি খবরের কাগজকে বললেন, ক্যাম্পের ডরমেটরিতে আমরা অনেকে একসঙ্গে থাকছি। খাবার জন্য ক্যাম্পের মধ্যে ক্যানটিন আছে। তবে আমি আজ অন্যদের সঙ্গে বাইরে খাব। সঙ্গে কিছু জিনিস কেনাকাটা করতে হবে।’ এখানে থাকা-খাওয়ার তেমন সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে একসঙ্গে থাকলেও বাথরুম ও গোসলখানার সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো পরিচ্ছন্ন। তাই সেখানেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। 

হজক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, হজযাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতায় নিয়োজিত আছে অনেক স্কাউট সদস্য। ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার থেকেই তাদের তৎপর উপস্থিতি দেখা যায়। গেটে আইডি কার্ড চেক করে ক্যাম্পে হজযাত্রীদের প্রবেশ করিয়ে কে কোনদিকে যাবেন তাও দেখিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। 

এবারের হজ কার্যক্রম সম্পর্কে হজ অফিসের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি হওয়ায় এবার আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা বেশি। আমরা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করছি। প্রতিবছর ক্যাম্পে হজযাত্রীরা মশার উপদ্রবে কষ্ট করেন। এবার যেন এমন না হয়, সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। ওয়াশরুমগুলোর ব্যাপারেও আমরা তৎপর আছি। সেগুলো যেন পরিচ্ছন্ন থাকে সে জন্য আমরা নজর দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের কিছু ইনোভেশন করেছি। যেমন- এবার একটি অ্যাপ চালু করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে, হঠাৎ কোথাও অসুস্থ হয়ে গেলে তারা একটি ক্লিকেই তাদের লোকেশন জানিয়ে দিতে পারবেন। এতে তাদের আমরা দ্রুত সাহায্য করতে পারব। এ ছাড়া সুলভ মুল্যে রোমিং সিম দেওয়া হচ্ছে। এতে হজযাত্রীরা কানেকটেড থাকতে পারবেন এবং একটি ডেবিট কার্ডও দেওয়া হচ্ছে।’ 

সোমবার এ বছরের হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্যক্রম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও থাকবেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন।’

হজক্যাম্পের ভেতরে হজযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত আছেন অনেক পুলিশ সদস্যও। খোলা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট জোনের অফিসার ইনচার্জ তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘এবার হজ কার্যক্রমের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে হজ ক্যাম্পকে ঘিরে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্যাম্পসহ বিমানবন্দর ঘিরে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে থানাকেন্দ্রিক। আমাদের ৩০০-এর বেশি পুলিশ সদস্য এবার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।’ 

হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ ও বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী এবং ৬৫ শতাংশ পুরুষ রয়েছেন। পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মোট হজযাত্রীর ৮০ শতাংশের ভিসা হয়েছে। এ ছাড়া হজ ব্যবস্থাপনার জন্য এ বছর সরকারি ১১২ ও বেসরকারি গাইড থাকবেন ১ হাজার ৭৪৩ জন। ৭০ মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হজক্যাম্প থেকে রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ওই সময় পর্যন্ত ক্যাম্পে রিপোর্ট করেছেন ১৫৫৬ জন।

হজ ফ্লাইট

২০২৫ সালের পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী ২৯ এপ্রিল। ওই দিন ৪১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। 

হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশসহ তিনটি এয়ারলাইনস এবার কাজ করবে। ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে ৩১ মে হজের শেষ ফ্লাইট সৌদি আরব যাবে। ফিরতি ফ্লাইট ১০ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ১০ জুলাই। যাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ১১৮, সাউদিয়া ৮০ ও নাস এয়ারলাইনসের ৩৪ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এ ছাড়া বিমান ১০৮টি, সাউদিয়া ৭৯টি ও ফ্লাই নাস ৩৪টি ফিরতি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ বিমান জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টায় এবার বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট উড়বে। এবার আমরা আমাদের নিজস্ব এয়ারক্রাফটে যাত্রী পরিবহন করছি। মোট ৪টি এয়ারক্রাফট ব্যবহার করছি। এবার প্রায় ৪৪ হাজার হজযাত্রী বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে।   

সড়কে সবাই যেন রাজা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
সড়কে সবাই যেন রাজা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

রাজধানীর সড়কগুলো যেন মগের মল্লুক। কিসের ট্রাফিক আইন? আর কিসের সিগন্যাল? সড়কে সবাই যেন রাজা। কারণ ট্রাফিক আইন থাকলেও সেটি তোয়াক্কা করছেন না অধিকাংশ চালক-আরোহী; এমনকি পথচারীরাও। বেশির ভাগ সড়কের মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা ধরে রাখতে হচ্ছে লাঠি-বাঁশি কিংবা হাত উঁচিয়ে। কোথাও আবার সিগন্যাল কার্যকর করতে সড়কের মুখে দড়ি বা রশি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখতে হচ্ছে। সেখানেও পারলে সেই ব্যারিকেড ভেঙে ছুটে চলতে চান একশ্রেণির চালক। সিগন্যালে একটু অপেক্ষা করতে হলেই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন তারা। বাগবিতণ্ডা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে।

অন্যদিকে বিজয় সরণির মোড়, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগসহ প্রায় সব কটি ভিআইপি রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পথচারীরা কোনো নিয়মনীতির ধার ধারছেন না। রাস্তার চতুর্দিক থেকে তারা ছোটাছুটি করে রাস্তা পার হচ্ছেন। পুলিশ, ট্রাফিক, দায়িত্ব পালনরত ছাত্র কারও কথার তোয়াক্কা করছেন না তারা। ফলে কোনো যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এর ফলে প্রচণ্ড জট লেগে যাচ্ছে এসব সড়কে। 

খবরের কাগজের অপরাধ বিভাগের একাধিক প্রতিবেদক গত এক সপ্তাহে রাজধানীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবস্থান করে দেখেছেন- অধিকাংশ সড়কে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে প্রধান সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য এখন ট্রাফিকের সব যেন আইন বা শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। গাড়িচালক, রিকশাচালক, পথচারী- প্রায় সবাইকেই ট্রাফিক আইন বা নিয়ম ভেঙে চলতে দেখা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার, বেপরোয়া গতিতে চলাচল, সংকেত (ইন্ডিকেটর) না দিয়ে লেন পরিবর্তন, অহেতুক হর্ন বাজানো, যত্রতত্র রাস্তায় যানবাহন দাঁড়ানো, সড়কের মাঝে গণপরিবহনে যাত্রী তোলা-নামানো, আঁকা-বাঁকাভাবে বা বিশৃঙ্খলভাবে সড়কে গণপরিবহন দাঁড়ানো, ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা, উল্টোপথে গাড়ি চলাচলসহ অসংখ্য বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। 

বিজয় সরণিতে ঝুঁকিপূর্ণ পারপার 

গত শনিবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর বিজয় সরণি সিগন্যালে অবস্থানকালে দেখা যায়, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যানবাহনের ভিড়ে একজন ব্যক্তি তার দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখনো কোনো সিগন্যাল পড়েনি। তাদের পাশ দিয়েই দ্রুতগতিতে দুটি মোটরসাইকেল চলে যায়। পেছনে সারি সারি গাড়ি হর্ন দিচ্ছিল, আর থেমে থেমে চলছিল। পেছন দিয়ে দ্রুতগতিতে অটোরিকশা যাচ্ছিল। এতে তিনি দু-একবার আতঙ্কে থমকে দাঁড়ান। পরে হাতের ইশারা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি পার হন। 

পরে ওই পথচারী ব্যক্তি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাই দ্রুত রাস্তা পার হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় যেতে এই ঝুঁকি নিয়েছিলাম। রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়েও গাড়ি উঠে আছে, পথচারী পার হওয়ার জায়গা নেই। তাই গাড়ির সামনে দিয়েই পার হচ্ছিলাম। কিন্তু এটা ঠিক হয়নি। পার হতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছি।’ 

এ সময় বিজয় সরণি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট কাজল কুমার বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘সবার প্রথমে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না এলে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকরী ফলাফল আসবে না। সবাই যদি সচেতন হন, দুর্ঘটনার হার অনেক কমে যাবে।’ 

কারওয়ান বাজার-গ্রিন রোড সিগন্যালে বাইক ও রিকশার ভোঁ দৌড় 

গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের ব্যাপক বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এখানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা একদিকে আটকালে আরেক দিক দিয়ে সবাই নিয়ম ভেঙে চলতে থাকে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে কারওয়ান বাজারের অদূরে গ্রিন রোড সিগন্যালেও দেখা যায় প্রায় অভিন্ন চিত্র। এখানে মোড়ের চারদিকেই তখন যানবাহনের বেশ চাপ। এ সময় কারওয়ান বাজারের দিক থেকে পান্থপথমুখী অংশে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল (অনুপ) শৃঙ্খলা রক্ষায় মোড়ের আরও কিছুটা আগেই গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সামনের দিকে থাকা কিছু মোটরসাইকেল এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার যেন তর সইছিল না। চাকা ঘুরিয়ে একটু একটু করে একপর্যায়ে মোড়ের একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাইক ও রিকশাগুলো। এর মাঝে ওই কনস্টেবল হাত উঠিয়ে তাদের আর না এগোতে নিষেধ করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উল্টো দিকের অন্য একটি সিগন্যাল ছেড়ে দিতেই সামনে থাকা দুটি বাইক ও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভোঁ দৌড় দিয়ে ছুটতে থাকে। ঠিক এমন সময় পেছনের দিক থেকে আরেকটি বাইক এগোনোর চেষ্টা করলে ওই মোটরসাইকেলকে (ঢাকা মেট্রো হ ৫৯-৫৩৪০) সামনে থেকে হাত দিয়ে জোর করে আটকে রাখেন ট্রাফিক কনস্টেবল অনুপ। এই নিয়ে ওই বাইকচালক ও আরোহীর সঙ্গে দায়িত্বরত ওই পুলিশ সদস্যের খানিকটা বাগবিতন্ডাও হয়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও রিকশা সিগন্যাল অমান্য করে মোড় পার হয়ে চলে যায়। 

উত্তরায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট 

শনিবার দুপুর সোয়া ১টায় উত্তরা হাউস বিল্ডিং সিগন্যালে চারদিক থেকেই যানবাহন ও পথচারীর চাপ দেখা যায়। আব্দুল্লাহপুর থেকে মহাখালীগামী সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল পরিস্থান পরিবহন ও রাইদা পরিবহনের দুটি বাস। এতে পেছনে থাকা গাড়িগুলো আটকে যানজটে পড়েছিল। তার মাঝে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো সড়কে অর্ধেক অংশ দখল করে এলোপাতাড়ি ছুটছিল। পাশে সড়কের খানিকটা দখলে রেখেছিল রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলগুলো। এলোমেলোভাবে পার হচ্ছিলেন পথচারীরা। 

ওই দিন দুপুরে টঙ্গী-উত্তরা ফ্লাইওভার থেকে যানবাহনগুলো নেমে এই সিগন্যালে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। কারণ সামনের দিকে নানা ধরনের যানবাহনের জটলা। সড়কে চলন্ত বাস থামিয়েও পথচারীরা দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। যদিও সেখানে ফুটওভার ব্রিজ ছিল, তবুও পথচারীদের সেটিতে উঠতে অনীহা দেখা গেছে। মূল সড়ক থেকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল অ্যাভিনিউ সড়কের প্রায় পুরোটি ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে ছিল। আজমপুর থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে জসীমউদ্‌দীন মোড়। সেখানেও রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল দেখা যায়। উত্তরা থেকে বিমানবন্দন সিগন্যাল পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় অভিন্ন চিত্র।

এ সময় আজমপুর ট্রাফিক বক্সের দায়িত্বরত সার্জেন্ট এস এম নকীব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এরা কোনো আইন মানতে চায় না। প্রতিদিন অনিয়মের কারণে এই বাহনটি ডাম্পিং করা হচ্ছে, তার পরও শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না।’ 

মিরপুরের সড়কগুলোতে উল্টোপথে চলাচল 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর-১২ নম্বর (পল্লবী) মোড় থেকে মিরপুর-১১ নম্বর হয়ে সোজা ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়কেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বেপরোয়া চলাচল করছে। এই সড়কের উভয় পাশে উল্টোপথেও চলছিল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। সড়কের মোড়ে মোড়ে জটলা করে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের। এই সড়কে গণপরিবহনগুলোও কাউন্টার ছাড়াই যত্রতত্র যাত্রী ওঠাচ্ছিল ও নামাচ্ছিল। এ ছাড়া মোটরসাইকেলচালকরাও যে যার মতো সড়কে চলাচল করছিলেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর-১০ নম্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত সার্জেন্ট আনিচুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। সবাই কমবেশি আইন মানছেন, কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা বেপরোয়া চলাচল করছেন।’
ফার্মগেটে রাস্তা-ফুটপাত যানবাহনের দখলে 

রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেট-খামারবাড়ি মোড়েও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উল্টোপথে চলছিল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, পথচারীসহ প্রায় সবাই। কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে, পথচারী পারপারের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন। এসব এলাকার সড়কগুলোর ফুটপাতজুড়ে দোকান বসতে দেখা যায়। ফার্মগেটে মোড়ের আগে রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে জটলা করে রাখা হয় লেগুনা, ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে ফার্মগেট-খামারবাড়ি পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশার বেশ চলাচল। যার বেশির ভাগ আবার উল্টোপথেই চলছিল। মূল সড়কে বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও অনেকটা যেন নির্বিকারভাবে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় এসব পয়েন্টে।

শ্যামলীর শিশুমেলার সামনে সড়কে পথচারীরা নেমেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও শিশুমেলার মুখে বিড়ম্বনায় পড়েন। শাওন নামে এক পথচারী খবরের কাগজকে বলেন, ফুটপাতজুড়ে দোকান আর রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা। হাঁটার জায়গা নেই। পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনার দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ কী বলছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে মিরপুরে পথচারীদের জন্য সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সহায়তা পেলে এসব সিগন্যাল বাতি পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব পয়েন্টে বসানো হবে। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিং বাইকারদের বিশৃঙ্খলা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো মূল সড়কে চলাচলের জন্য চালক ও যাত্রী উভয়ের সমান দোষ। এ ছাড়া পথচারীদের জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের প্রবণতা খুব কম। এ জন্য ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান 

গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ দিনে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এই সময়ে মোট ২৫ হাজার ৩০৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন হাজার ১০১টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১ হাজার ৩২৭টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১২৯টি গাড়ি ডাম্পিং এবং ৫৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৫ এএম
দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৮৪৭টি সম্পদের (প্রপার্টি) খোঁজ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব সম্পদের মধ্যে আলিশান ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি, দোকান, বাণিজ্যিক স্থাপনা, অফিস আছে। এসব সম্পদের মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে হিসাব কষা হয়েছে। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে এসব সম্পদ কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর একযোগে তদন্ত করছে। গত আট মাস তদন্তের পর এসব ব্যক্তির নাম ও তাদের সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ তালিকায় আরও ব্যক্তি ও তাদের সম্পদের হিসাব যোগ হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এনবিআর থেকে এসব ব্যক্তি ও তাদের সম্পদের তালিকা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতি এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে অর্জিত অর্থ দেশে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এফসিএমএ খবরের কাগজকে বলেন, অর্থ পাচার করে বিদেশে অর্থ জমানো, সম্পদ করার দিন শেষ হতে চলেছে। অতীতে এসব অপরাধ করে পার পাওয়া গেলেও বর্তমান সরকারের সময় তা পার পাওয়া যাবে না। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তদন্ত চলছে। অর্থ পাচারকারীদের ধরতে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করছে।

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অর্থ পাচারকারীর মধ্যে সাবেক সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সবচেয়ে বেশি ১৩৬টি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট, ভিলা, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এসবের মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে হিসাব কষা হয়েছে। 

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আশিকুর রহমান লস্করের ৩০টি ফ্ল্যাট, আজিজ আল কায়সারের ১৪টি ফ্ল্যাট, হাসান মাহমুদ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের চারটি করে ফ্ল্যাট, আবু ইউসূফ এমডি আবদুল্লাহর ছয়টি ফ্ল্যাট, আহমাদ ইমরান চৌধুরীর ১০টি ফ্ল্যাট, মিজানুর রহমানের চারটি ফ্ল্যাট, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর পাঁচটি ফ্ল্যাট, আঞ্জুমান আরা সাইদির পাঁচটি ফ্ল্যাট, আনোয়ারা বেগমের চারটি ফ্ল্যাট, ফারহানা মোনের চারটি ফ্ল্যাট, ফারজানা চৌধুরীর সাতটি, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও হাজি মোস্তফা ভূঁইয়ার যৌথ নামে ১০টি, এইচ বি এম ইকবালের এক নামে আটটি ফ্ল্যাট এবং এ কে এম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যৌথ নামে আরও আটটি ফ্ল্যাট আছে, আবদুল মজিদ আল মো. মকবুলের নামে ১০টি ফ্ল্যাট, মির্জা সায়মা মাহমুদের নামে ১০টি ফ্ল্যাট, কাজী মো. ওসমানের ১২টি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খালিদ হেকমত আল ওবাইদির নামে ১৩টি ভিলা, ইফতেখার রানার নামে দুটি ভিলা ও দুটি বাণিজ্যিক স্থাপনা, এম সাজ্জাদ আলমের নামে আটটি ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট, হাসান রেজা মাইদুল ইসলামের নামে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট, হুমায়রা সেলিম ও সেলিমুল হক এশার নামে যৌথভাবে বুর্জ খলিফায় চারটি ফ্ল্যাট, মনোজ কান্তি পালের নামেও বুর্জ খলিফায় ১৪টি, আরমান হোসেনের নামে আটটি দোকান ও দু্টি অফিস, মো. সালমানের ১১টি ভিলা, মো. সাইফুল আলমের নামে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট, মো. ইদরিস শাকুরের নামে ১৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, ছয়টি ভিলা ও একটি হোটেল, মোস্তফিজুর রহমানের নামে ২০টি ফ্ল্যাট, ১৩টি ভিলা ও ১১টি বাড়ি, নজরুল ইসলাম আনু মিয়ার আটটি ভিলা, রুবাইত লস্করের ৩৮ প্রপার্টির খোঁজ পাওয়া গেছে; এর মধ্যে ফ্ল্যাট, ভিলা ও বাড়ির খোঁজও পাওয়া গেছে। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এসব ব্যক্তি বেশির ভাগ অর্থ হুন্ডিতে পাচার করেছেন। অনেকে আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে মিথ্যা তথ্য দিয়েও পাচার করেছেন। নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (হিসাব) অর্থ জমা না রেখে অন্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ সময়ে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) থেকে বেশির ভাগ অর্থ তুলে নিয়েছেন, যা হুন্ডিতে পাচার করে দিয়েছেন। বিগত সরকারের সময়ে গত ১৫-১৬ বছর বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব অর্থের প্রায় সবটা পাচার করে দিয়েছেন।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব ব্যক্তির দেশেও প্রচুর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের বেশির ভাগই বেনামে করা। অভিযোগ আছে, এসব ব্যক্তি দুবাই ছাড়াও অন্যান্য দেশেও সম্পদ করেছেন। তবে দুবাইয়ে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, এ পর্যন্ত বিগত সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এক হাজারের বেশি ব্যক্তির অর্থ পাচারের তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ব্যক্তি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এদের আয়ের বৈধ উৎস না থাকায় অর্থ পাচার করেছেন। এদের অনেকে পাচার করা অর্থের চেয়ে অনেক কম পরিমাণ দেশে রেখেছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন বাড়তে থাকে, তখন অনেকে নিজের অ্যাকাউন্টে যা ছিল তার প্রায় সবটা তুলে পাচার করে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) ফ্রিজ (হিসাব জব্দ) করলেও ফাঁকি দেওয়া করের সমান টাকা পাওয়া যায়নি। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থার (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, বিগত সরকারের এসব ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাদের অবৈধ ও বৈধ সব অর্থ পাচার করে দিয়েছেন। পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে যে দেশে পাচার হয়েছে, সে দেশে এসব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে ওই দেশে ল’ফার্ম নিয়োগ দিয়ে আইনি পথে পাচারের অর্থ আদায় করতে হবে। বিদেশের সম্পদের দলিল জোগাড় করে বিক্রি করে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। তবে সরকার জোর দিয়ে কাজ করলে পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। 

অন্যদিকে ৪৫৯ বাংলাদেশির অর্থ পাচার করে গোল্ডেন ভিসায় দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ৭০ জনকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এলেঙ্গা-রংপুর চারলেন ও হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প: বর্ধিত মেয়াদেও অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
এলেঙ্গা-রংপুর চারলেন ও হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প: বর্ধিত মেয়াদেও অনিশ্চয়তা
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল চত্বর থকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

কাজের গতি কম থাকাসহ নানা কারণে ১৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলেঙ্গা-রংপুর চারলেন সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কাজের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়। একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ প্রকল্পের। রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলগামী ব্যস্ততম এই সড়কের কাজ ধীর গতিতে চলায় বিভিন্ন জায়গায় যানজট দেখা দিচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে গাড়ির চালকের পাশাপাশি এই পথের যাত্রীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে যান চলাচলে সময় ও ব্যয় উভয়ই বেড়েছে। নির্মাণ কাজ চলার কারণে বেশ কিছু স্থানে মূল লেনের পরিবর্তে পাশের লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কাজের শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাব এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বারবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। 

যদিও হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ এবং সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রাসেল দাবি করছেন, ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কাজ ৫২ শতাংশ এবং সাসেক-২ চারলেন প্রকল্পের কাজ ৮২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। 

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলমান এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন সড়ক এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ উভয় প্রকল্পই সাসেক-২ এর অংশ। যদি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা যায় তাহলে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও যোগাযোগ উন্নয়নের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়কের নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল। শুরু থেকে ৯ বছরে প্রকল্পের ব্যয় কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সময়সীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। 

প্রকল্পটির প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তবে কাজ শুরু করতে বিলম্ব এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সঙ্গে সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে ২০১৯ সালে আনা প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি প্রকল্পের বরাদ্দ ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেই সূচি অনুযায়ী কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয়। তখন সময়সীমা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দও ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের সময়, খরচ ও বরাদ্দ বাড়ানোর পেছনে জমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং বিভিন্ন স্থানে অধিগ্রহণের জটিলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে ফ্লাইওভার, সেতু, আন্ডারপাস, সার্ভিস লেন, ইন্টারচেঞ্জ (হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ), যাত্রী আশ্রয়কেন্দ্র, বৃক্ষরোপণ এবং আলোকসজ্জাসহ অতিরিক্ত কাজও যুক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল মোড়, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াঘাতী, বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ছোনকা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এবং রংপুর জেলার পলাশবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ ছাড়াও, এলেঙ্গা মোড় থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বেশ কিছু কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে।

এদিকে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালে শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে প্রায় দেড় বছর নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের কাজের সময়কাল ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও কিছুটা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ এবং সাসেক-২ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান রাসেল বলেন, ‘বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ এবং জমির মালিকদের অর্থ পরিশোধ ছিল প্রধান কারণ। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই ১৬ মাস সময় লেগেছে। আশা করছি আমরা দ্রুত কাজটি সমাপ্ত করতে পারব।

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং সাসেক-২-এর প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘যেকোনো নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কাজ শুরু করতে একটু বেশি সময় লাগে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’