নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিথ্যা ঘোষণায় বিশ্বের তিন দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানির চেষ্টা করেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের প্রতিষ্ঠানগুলো চার কনটেইনারে ৪৬ টন চাল রপ্তানির চেষ্টা করে। দেশগুলো হলো- মালয়েশিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র।
অপরদিকে একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই মালয়েশিয়ায় রপ্তানির চেষ্টা করেছে বিপুল পরিমাণ ভিটামিন, ক্রিমসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।
সূত্র জানায়, রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার রূপসী ফুডস লিমিটেড কাগজপত্রে খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির ঘোষণা দেয়। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১০ হাজার ৬৪৭ কেজি (১০ দশমিক ৬ টন) তীর ব্র্যান্ডের চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানির চেষ্টা করে। একই কৌশলে রাজধানী ঢাকার মতিঝিল এলাকার ফাদার ফুড অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি ৮ হাজার ৯০৯ কেজি (৮ দশমিক ৯ টন), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা কুতুবপুর এলাকার খান এগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর নামক প্রতিষ্ঠান একটি কনটেইনারে ১৫ হাজার ১৪০ কেজি (১৫ দশমিক ১৪ টন) ও আরেকটি কনটেইনারে ১১ হাজার ৩০০ কেজি (১১ দশমিক ৩ টন) প্রাণ ব্যান্ডের চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানির চেষ্টা করে।
অপরদিকে খান এগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর একটি কনটেইনারে চালের পাশাপাশি ঘোষণাবহির্ভূত ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ পিস সেকলো (২০ এমজি) ট্যাবলেট, ই-ক্যাপ (ভিটামিন) ৫৫ হাজার ৩২০ পিস ও ১ হাজার ৪৪০ পিস পেভিসন ক্রিম (১০ গ্রাম) রপ্তানির চেষ্টা করে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জ এলাকার প্রতিষ্ঠান আকন্দ ব্রাদার্স। রপ্তানি পণ্যচালানগুলোতে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য থাকায় চালানগুলোর খালাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
গত ৩০ মে সফি মোটরস লিমিটেড নামক ডিপোতে রূপসী ফুডসের রপ্তানি চালানটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, জেটি সরকার, কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। অপরদিকে ফাদার ফুড অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের একটি ও খান এগ্রোর দুটি পণ্যচালান গত ৩ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর জালিয়াতি ধরা পড়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য রপ্তানির ঘোষণা দিয়ে চাল রপ্তানির চেষ্টা করে তিন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর জালিয়াতি ধরা পড়ে। কারণ সুগন্ধী চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো সে নিয়ম অমান্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ রপ্তানি করতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু অনুমোদন ছাড়াই একটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ ওষুধ রপ্তানির চেষ্টা করে। তাদের এই জালিয়াতির কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। তাই তিন প্রতিষ্ঠানের চারটি কনটেইনার আটক করা হয়েছে। কাস্টমস আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন তো চাল রপ্তানির অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। সমস্যা হলো, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কনটেইনারে কী পণ্য আছে সেটা পরিষ্কারভাবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে জানায় না বা সত্য কথা বলে না। ফলে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীও তা জানতে পারেন না। তারা কাগজে যে তথ্য উল্লেখ করে, কনটেইনারের ভেতরে ওই পণ্যই আছে কি না সেটা দেখার সুযোগ নেই। একটা কনটেইনার খুলতে গেলে কাস্টমস, বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি লাগে। এরপর জেটি সরকারের উপস্থিতিতেই কনটেইনার খুলে পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। তখনই রপ্তানিকারকের জালিয়াতি ধরা পড়ে। তবে কিছু অসাধু মানুষ তো সব জায়গায় থাকেই। অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাজ পায় না বা কম থাকে। তখন তারা অনিয়মে জড়িত হয়। তবে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সব জেটি সরকারকে নিয়ম মেনে কাজ করতে বলি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কিন্তু সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিকদের জানিয়ে দিয়েছি সততার সঙ্গে সংগঠনের নিয়ম মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। কেউ যদি অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা ও ১০ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় দেশ থেকে সুগন্ধি চালসহ যে কোনো প্রকার চাল রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।