ঢাকা ১৭ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

মিথ্যা ঘোষণায় সুগন্ধি চাল রপ্তানির চেষ্টা

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
মিথ্যা ঘোষণায় সুগন্ধি চাল রপ্তানির চেষ্টা
সুগন্ধি চাল

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিথ্যা ঘোষণায় বিশ্বের তিন দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানির চেষ্টা করেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের প্রতিষ্ঠানগুলো চার কনটেইনারে ৪৬ টন চাল রপ্তানির চেষ্টা করে। দেশগুলো হলো- মালয়েশিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। 

অপরদিকে একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই মালয়েশিয়ায় রপ্তানির চেষ্টা করেছে বিপুল পরিমাণ ভিটামিন, ক্রিমসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। 

সূত্র জানায়, রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার রূপসী ফুডস লিমিটেড কাগজপত্রে খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির ঘোষণা দেয়। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১০ হাজার ৬৪৭ কেজি (১০ দশমিক ৬ টন) তীর ব্র্যান্ডের চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানির চেষ্টা করে। একই কৌশলে রাজধানী ঢাকার মতিঝিল এলাকার ফাদার ফুড অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি ৮ হাজার ৯০৯ কেজি (৮ দশমিক ৯ টন), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা কুতুবপুর এলাকার খান এগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর নামক প্রতিষ্ঠান একটি কনটেইনারে ১৫ হাজার ১৪০ কেজি (১৫ দশমিক ১৪ টন) ও আরেকটি কনটেইনারে ১১ হাজার ৩০০ কেজি (১১ দশমিক ৩ টন) প্রাণ ব্যান্ডের চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানির চেষ্টা করে।

অপরদিকে খান এগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর একটি কনটেইনারে চালের পাশাপাশি ঘোষণাবহির্ভূত ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ পিস সেকলো (২০ এমজি) ট্যাবলেট, ই-ক্যাপ (ভিটামিন) ৫৫ হাজার ৩২০ পিস ও ১ হাজার ৪৪০ পিস পেভিসন ক্রিম (১০ গ্রাম) রপ্তানির চেষ্টা করে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জ এলাকার প্রতিষ্ঠান আকন্দ ব্রাদার্স। রপ্তানি পণ্যচালানগুলোতে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য থাকায় চালানগুলোর খালাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। 

গত ৩০ মে সফি মোটরস লিমিটেড নামক ডিপোতে রূপসী ফুডসের রপ্তানি চালানটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, জেটি সরকার, কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। অপরদিকে ফাদার ফুড অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের একটি ও খান এগ্রোর দুটি পণ্যচালান গত ৩ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর জালিয়াতি ধরা পড়ে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য রপ্তানির ঘোষণা দিয়ে চাল রপ্তানির চেষ্টা করে তিন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর জালিয়াতি ধরা পড়ে। কারণ সুগন্ধী চিনিগুঁড়া চাল রপ্তানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো সে নিয়ম অমান্য করেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ রপ্তানি করতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু অনুমোদন ছাড়াই একটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ ওষুধ রপ্তানির চেষ্টা করে। তাদের এই জালিয়াতির কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। তাই তিন প্রতিষ্ঠানের চারটি কনটেইনার আটক করা হয়েছে। কাস্টমস আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন তো চাল রপ্তানির অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। সমস্যা হলো, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কনটেইনারে কী পণ্য আছে সেটা পরিষ্কারভাবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে জানায় না বা সত্য কথা বলে না। ফলে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীও তা জানতে পারেন না। তারা কাগজে যে তথ্য উল্লেখ করে, কনটেইনারের ভেতরে ওই পণ্যই আছে কি না সেটা দেখার সুযোগ নেই। একটা কনটেইনার খুলতে গেলে কাস্টমস, বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি লাগে। এরপর জেটি সরকারের উপস্থিতিতেই কনটেইনার খুলে পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। তখনই রপ্তানিকারকের জালিয়াতি ধরা পড়ে। তবে কিছু অসাধু মানুষ তো সব জায়গায় থাকেই। অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাজ পায় না বা কম থাকে। তখন তারা অনিয়মে জড়িত হয়। তবে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সব জেটি সরকারকে নিয়ম মেনে কাজ করতে বলি। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কিন্তু সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিকদের জানিয়ে দিয়েছি সততার সঙ্গে সংগঠনের নিয়ম মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। কেউ যদি অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা ও ১০ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় দেশ থেকে সুগন্ধি চালসহ যে কোনো প্রকার চাল রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম
বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সারা দেশের সুপারশপসহ কাঁচাবাজারে পলিথিন সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। তবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় পণ্যসামগ্রী বহনে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। গ্রাহকদের দাবি পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় পণ্যবহন ছিল সুবিধাজনক। কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় প্রয়োজনীয় পণ্য বা ছোটখাট কেনাকাটা করে পলিথিনে আনা সহজ ছিল। এখন পলিথিনের বিকল্প কী হবে, এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সুপারশপ, কাঁচাবাজারসহ সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করবে।

পলিথিনের বিকল্প কী হবে বা প্রয়োজনীয় ব্যাগের সংকট হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারিক খান বলেন, সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাট, কাপড় ও কাগজের পর্যাপ্ত ব্যাগের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ব্যাগের কোনো সংকট হবে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। কাজেই পলিথিনের বিকল্প থাকবে না, এটা অচিন্তনীয়। পাটপণ্য বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী। 

পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের সংকট প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পাটের ব্যাগের ব্যবহার ও সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।’ 

পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধ কার্যক্রম মনিটরিং করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম সচিব (পরিবেশ-১ অধিশাখা), উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ ও ২) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (পরিবেশ-৩)।

মনিটরিং টিম রাজধানীর বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সারা দেশের মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যসহ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তাদের মতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে। ফলে ক্যানসারের মত ভয়াবহ রোগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। তাছাড়া পলিথিনের রাসায়নিক উপাদান বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটস মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এর ধোঁয়া বায়ুদূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পলিথিন ও মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্র বিনষ্ট করে। ফলে প্রাণীদেহে অপুষ্টি, অনাহার, ক্ষুধামান্দ্য হওয়ায় দেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে।

পলিথিন মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে মাটির ঊর্বরতা হ্রাস করে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ে তেমনই এর বড় অংশ চলে যায় নদী, সাগরে। ফলে বিভিন্ন জলজপ্রাণীর খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে তাদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটায়। এমনকি শ্বাসতন্ত্র আটকে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এভাবে মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এসব কারণে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, কোনো সুপারশপ বা কাঁচাবাজারে পলিথিন শপিংব্যাগ সরবরাহ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। 

ইতোমধ্যে পরিবেশ উপদেষ্টা সারা দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি), জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ সুপারদের প্লাস্টিক পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মতে, পলিথিন বন্ধ হলে ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বাধ্য হয়েই ব্যবহার করবেন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তর ভবনে পলিথিনের বিকল্প পণ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় অংশ নেওয়া ২৪টি স্টলে পাট, কাগজ ও কাপড়ের মতো পচনশীল দ্রব্যের তৈরি ব্যাগ প্রদর্শিত হয়। ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সাইজ এবং কোয়ালিটির ব্যাগ প্রদর্শন করা হয়।

মেলায় অংশ নেওয়া জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মার্কেটিং হেড জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত বিভিন্ন সুপারশপ থেকে এক কোটির বেশি পাটের ব্যাগের কার্যাদেশ পেয়েছেন।

পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণসংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা পলিথিনের বিকল্প তৈরিতে আরও সক্রিয় হলে বাজারে ব্যাগের সংকট হবে না।’

বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব জানিয়ে বিজেএমএর পরিচালক বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত মিলগুলোর কাছে পাটের বস্তা-ব্যাগের চাহিদা দিলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতভাগ সরবরাহ করা সম্ভব।’ 

এখন প্রায় সব প্রয়োজনের পাটপণ্য দেশেই উৎপাদিত হয় জানিয়ে বিজেএমএর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারিক খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে ২৮২টি পাটপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। জনজীবনের প্রায় সব প্রয়োজনেই এসব পণ্য প্রয়োজন হয়। তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতেই হবে বা সহজ ও সুলভ, এমন দাবি করাটা ভিত্তিহীন।’

আরও পড়ুন

১ম পর্ব: থেমে নেই পলিথিন উৎপাদন

পলিথিন বিক্রি বন্ধ হয়নি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
পলিথিন বিক্রি বন্ধ হয়নি
সরকারের কড়াকড়ি সত্ত্বেও বন্ধ করা যাচ্ছে না পলিথিনের ব্যবহার। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতে বিকল্প সহজলভ্য ও টেকসই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই পদক্ষেপ কার্যকর করা কষ্টসাধ্য হবে।

মাছ কিনতে গিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেশ বিপাকে পড়েন রাজধানীর রামপুরার উলন রোড এলাকার বাসিন্দা সোহরাব চৌধুরী। মাছ কেনার পর বিক্রেতা স্বপন দাস কোনোভাবেই তাকে পলিথিনের ব্যাগ দিতে চাননি। মাছ কেটে কাগজের ঠোঙায় প্যাকেট করে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন তিনি। এ নিয়ে তার সঙ্গে বেশ কথা-কাটাকাটি হয় সোহরাব চৌধুরীর। কিন্তু স্বপনের সাফ কথা, ‘পুলিশ আইস্যা ঝামেলা বাধাইব। তারা বইল্যা গেছে, আমরা যেন পলিথিনে মাছ না দিই। এখন আইস্যা জরিমানা করলে, দোকান তুইল্যা দিলে দায়টা কার হইব?’ 

রামপুরা কাঁচাবাজারের এই চিত্র অবশ্য বেশি সময় ছিল না। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সরে যেতেই ক্রেতারা পীড়াপীড়ি শুরু করেন পলিথিনের ব্যাগে তাদের মাছ বা সবজি দেওয়ার জন্য। একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ অন্য কাঁচাবাজারেও। এই অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতার অসচেতনতায় গতকাল থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন বিক্রি বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি।

গতকাল বিকেলে রামপুরা কাঁচাবাজারে কথা হয় মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ রমজান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পলিথিন ব্যবহারের নোটিশ আমরা আগেই পাইছি। কিন্তু কাস্টমাররাই তো কোনো কথা শুনতে চায় না। তাদের কথা, মাছ নিতে হইলে পলিথিনেই নেব।’

রমজানের দোকানে মাছ কিনতে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মাছ কেটে নিয়ে যেতে হবে বাসায়। এখন যদি বিক্রেতা পলিথিন না দেয় তাহলে কি বাসা থেকে বাসন নিয়ে আসব? পরিস্থিতি তো সেই রকমই।’ 

মনোয়ারা বেগম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘পলিথিন পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সে জন্য পলিথিন বন্ধ সমর্থন করলাম। কিন্তু পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের পলিব্যাগ কি বাজারে অ্যাভাইলেবল?’

সরেজমিনে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে দেখা গেছে, সেখানে দেদার পলিথিন বিক্রি হচ্ছে। আনোয়ার নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘কাঁচাবাজার কি পলিথিন ছাড়া চিন্তা করা যায়? পলিথিনের চাহিদা সারা দিনই ছিল। আমার আয়ও বেশ ভালো।’ 

হামিদ স্টোরের বিক্রয়কর্মী মনোয়ার হোসেন ও চাটখিল স্টোরের রিয়াদ জানান, শুক্রবার থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন বিক্রি বন্ধে কোনো নোটিশ হয়নি। কিছুদিন আগে কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি মৌখিকভাবে পলিথিন নিষিদ্ধের কথা জানিয়েছিল। তবে বিক্রেতারা যে তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া দেননি, তা দোকান মালিকরাই জানিয়েছেন খবরের কাগজকে। চাটখিল স্টোরের কর্মী রিয়াদ বলেন, ‘হুট করে পলিথিন বন্ধ করা যাইব না। মানুষরে তো আগে থিকা সচেতন করা লাগব। মুদি দোকানের মালামাল আমরা ঠোঙায় করে দেওয়া শুরু করেছি।’ 

লক্ষ্মীপুর স্টোরের কর্ণধার মো. আবুল কাশেম খান বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প কী হইবে, সেটা জানতে চাইছিলাম মালিক সমিতির কাছে। কিন্তু তারা কোনো কিছু জানায় নাই। বেশ কিছু মুদি দোকানি পলিথিনেই মালামাল দিয়েছে। অনেক দিনের অভ্যাস। এটা বদলাইতে হইলে তো কিছু সময় লাগবে। হুটহাট কোনো অভিযান ব্যবসায়ীরা মানবে না।’

পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে আগামীকাল ৩ নভেম্বর থেকে উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে যাচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কমিটি। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে মনিটরিং কার্যক্রমে যায় এ কমিটি। টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর গঠিত মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্য যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপসচিব রুবিনা ফেরদৌসী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম, পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রাজস্ব খাতে পদ্ধতিগত সংস্কারে গুরুত্ব

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
রাজস্ব খাতে পদ্ধতিগত সংস্কারে গুরুত্ব
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

রাজস্ব খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘কমিটি’ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে কমিটির জন্য আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের বৈঠকে কমিটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সব সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সংস্কারে গুরুত্বারোপ করা হবে। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংস্কারের বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিটি পর্যায়ক্রমে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত চাইবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জামা দেবে কমিটি। প্রতিবেদনে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ তুলে ধরা হবে। 

ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিকসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে এনবিআরের সংস্কারে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই পরামর্শক কমিটির সবাই এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা। সদস্যদের মধ্যে দুজন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। তারা হলেন মো. আবদুল মজিদ ও নাসিরউদ্দিন আহমেদ। কমিটির বাকি সদস্যরা এনবিআরের সাবেক সদস্য। তারা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন (কর), ফরিদ উদ্দিন (শুল্ক) ও আমিনুর রহমান (কর)।

এই পরামর্শক কমিটি এনবিআরের সংস্কারে সরকারকে পরামর্শ দেবে। যেমন- রাজস্ব নীতি, রাজস্ব প্রশাসন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন, নাগরিক যোগাযোগ ও অংশীজন সম্পৃক্ততার কার্যক্রম। এ ছাড়া রাজস্ব সংস্কারসংশ্লিষ্ট যেকোনো নীতিগত পরামর্শ দেবে এই কমিটি।

রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়ানো যায়, তার কৌশল নির্ধারণ করবে কমিটি। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হবে। কোন কোন খাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে এগুলো তুলে ধরা হবে। প্রশাসনিক সংস্কারে জোর দেওয়া হবে। গুরুত্ব পাবে অটোমেশন। আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত বা ইন্টিগ্রেশনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে পদ্ধতিগত সংস্কারে। কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। এমনভাবে সিস্টেম গড়ে তোলা হবে, যাতে করদাতাদের কর অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজস্ব সংস্কারে গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য বর্তমানে সিডিএফের সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা পদ্ধতিগত সংস্কারে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করব। করদাতা এবং করগ্রহীতার মধ্যে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজস্ব সংস্কার একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ কাজগুলো করতে সময় লাগবে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি। এটি অব্যাহত থাকবে। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দিনক্ষণ বলতে পারব না। তবে চেষ্টা থাকবে যথাসম্ভব দ্রুত কাজ শেষ করা।’

সূত্র জানায়, এনবিআরের অভ্যন্তরে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা সংস্কার নিয়ে কী ভাবছেন সে বিষয়টি তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে। এ জন্য প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে লিখিত মতামত চেয়েছে কমিটি। অংশীজনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ প্রভাবশালী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে সংস্কার কমিটি। এ ছাড়া দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। 

কমিটির সদস্য মো. ফরিদউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। প্রতিবেদেন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে সুপারিশ করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে কীভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যায় তার কৌশল নির্ধারণ করা। এ জন্য জাতীয় ঐকমত্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

মোট রাজস্বের ৮৫ শতাংশ জোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার তার সঙ্গে রাজস্ব আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। এই অনুপাত বাড়াতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ অনেক বছর ধর বাংলাদেশের রাজস্ব খাতের আমূল সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছে।

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য প্রস্তুত লাউঞ্জ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য প্রস্তুত লাউঞ্জ
প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয় একাত্তর হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং মালয়েশিয়ার পার্কেসোর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান

পরবাসে পাড়ি দিয়ে দেশের জন্য মাসে মাসে রেমিট্যান্স পাঠান বহু বাংলাদেশি। এমন প্রবাসীদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাও আখ্যা দেওয়া হয়। তবে বিদেশে যাওয়া-আসার পথে অনেক সময়ই তাদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি বিমানবন্দরে অসম্মান করার অভিযোগও আছে অনেক। তবে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ঘোষণা দেন বিমানবন্দরে মাসখানেকের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকদের জন্য স্পেশাল লাউঞ্জ করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তৈরি হয়েছে প্রবাসী লাউঞ্জ।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই চালু হবে বিশেষ এই লাউঞ্জ। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সারওয়ার আলম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রবাসী লাউঞ্জ রেডি হয়ে গেছে। আমরা শুক্রবার (গতকাল) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কাজ শুরু করব। এ সপ্তাহের মধ্যেই এর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।’ তিনি জানান, বিমানবন্দরের ফুডকোর্টের সঙ্গের খোলা বসার জায়গাটিই এখন এই বিশেষ লাউঞ্জ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে সব প্রবাসীই বসতে পারবেন। তবে প্রাধান্য পাবেন ‘প্রবাসী কল্যাণ’ বা বিএমইটি কার্ডহোল্ডাররা।

এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। এমনিতেই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। এর সঙ্গে এবার প্রবাসীদের জন্য যে বিশেষ লাউঞ্জ চালু হবে তাতে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান আরও বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা ইমিগ্রেশনের পর এই লাউঞ্জে প্রবেশ করবেন। সেখানে খাবারের সুব্যবস্থা থাকবে। বিশেষ করে যাদের বিএমইটি বা ‘প্রবাসী কল্যাণ’ কার্ড থাকবে তারা অন্যদের থেকে কম মূল্যে এখান থেকে খাবার কিনতে পারবেন।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই তিনটি বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক রয়েছে। বিদেশগামী এবং বিদেশফেরত কর্মীরা এখানে বিভিন্ন ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন।

এর মধ্যে বিদেশগামী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে উপস্থিতির পর তাদের বোডিং কার্ড সংগ্রহ, বহির্গমন ফরম পূরণ, স্মাট কার্ড যাচাই, ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স গ্রহণসহ বিমানে ওঠার আগে পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি দেশে ফিরে আসা কর্মীদের বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করা হয়। 

এ ছাড়া বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মী এবং ফেরত আসা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে জরুরি প্রয়োজনে পরিবারের সঙ্গে ফ্রি কল করার সেবা দেওয়া হয়। সঙ্গে বিদেশ থেকে আগত আহত, অসুস্থ ও মৃত কর্মী পরিবহনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া হয়।

সাবেক এমপি হাবিব টাকা রাখতেন বেয়াই বাড়িতে

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ এএম
সাবেক এমপি হাবিব টাকা রাখতেন বেয়াই বাড়িতে
ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান।

২০২০ সালের নভেম্বরে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। ঢাকা-১৮ আসনে মাত্র তিন বছর দুই মাস সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যেই হাবিব হাসান ও তার পরিবারের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন উত্তরাবাসী। স্থানীয় এমপির ওপর তারা এতই অতিষ্ঠ ছিলেন যে, দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন তাকে না দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। সে অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার দুর্নীতি ও দখল-চাঁদাবাজির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, হাবিব নিজের বাড়িতে নগদ টাকা রাখতেন না। টাকা রাখার জন্য তার পছন্দের জায়গা ছিল ছেলের শ্বশুরবাড়ি বা বেয়াইয়ের বাড়ি। সরকার পতনের পর গত সেপ্টেম্বরে উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নগদ ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, সেটি হাবিব হাসানের ছেলে আবির হাসানের শ্বশুরবাড়ি। জব্দ করা টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও গাড়ি দুটি এমপি হাবিব হাসান ও তার পরিবারের সদস্যদের। 

এলাকাবাসীর মতে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাবিবের ফ্ল্যাট, প্লট, মার্কেট ও বিলাসবহুল বাড়ি থাকলেও তিনি অনেক কিছুইু গোপনে হ্যান্ডেল করতেন। উত্তরায় হাউজিং ব্যবসায় অংশীদার ও চাঁদাবাজিতে সর্বেসর্বা ছিলেন হাবিব। দুর্নীতির টাকার বড় অংশ কানাডায় পাচার করেছেন বলে উত্তরায় স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আলোচনা আছে। তারা জানান, কানাডায় হাবিব বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

বিদেশে বাড়ি ও অর্থ পাচার
ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার নামে থাকা অর্থ-সম্পত্তি, ভূমি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছে দুদক। এমপি ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের অপব্যবহার করে হাবিব হাসান বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রম জড়িয়ে পড়েন। তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের, স্ত্রী-ছেলে ও ভাইদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। হাবিবের ছেলে আবির হাসান তানিমের নামে কানাডার বেগমপাড়ায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

আধিপত্য ও দখলদারত্ব
২০২০ সালে উপনির্বাচনে এমপি হন হাবিব হাসান। নির্বাচনি হলফনামায় সম্পত্তিতে অকৃষি নাল জমি দেখিয়েছেন ১৫০ শতাংশ, যা তিন বিঘার চেয়ে কিছু বেশি। কিন্তু তুরাগ থানার বাউনিয়া এলাকায় বিমানের রানওয়ের পাশ থেকে শুরু করে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১১০ বিঘা সম্পত্তিতে নিজের নামে হাবিব সিটি ও বাবার নামে লতিফ সিটি ঘোষণা করেছেন। এই বিস্তীর্ণ এলাকা উঁচু ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ১৭ নম্বর সেক্টরের পাশের অংশে গেটের ওপর লতিফ সিটি নামে সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে ১০ বিঘা নিজে কিনেছেন। বাকি জমি হয় তিনি দখল করেছেন- না হলে নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এমপি ও তার ক্যাডার বাহিনীর দাপটের কারণে প্রকৃত মালিক তাদের জমির ধারেকাছে যাওয়ার সুযোগ পাননি। এর মধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা অভিযোগ করেন, কাঠাপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজ নামে লিখে নেওয়ার প্রস্তাব দেন হাবিব। কেউ বিক্রি করতে আপত্তি জানালে তাকে ভয়, হুমকি ও মামলা দেওয়ার কথা বলে জমি দখল করেন। অনেকের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করে নির্ধারিত টাকার অর্ধেক পরিশোধ করেন। বাকি অর্ধেক টাকা বাকি রেখে পরে পরিশোধ করবেন বলে সময় নেওয়া হয়। এরপর পাওনাদার সময়মতো টাকা চাইতে গেলে হয়রানি শুরু করতেন। 

উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক অবৈধ বার প্রতিষ্ঠা করা হয় হাবিবের পৃষ্ঠপোশকতায়। সেখানে রাত হলেই মিউজিকের সঙ্গে শুরু হতো উদ্যম নৃত্য ও মদ্যপান। চলত অসামাজিক কাজও। এসব বার থেকে প্রতি মাসে হাবিব হাসানের জন্য পার্সেন্টিজ (এমপি মানি) যেত। 

নামে-বেনামে বেড়েছে সম্পত্তি
এমপি হওয়ার এক বছরের মধ্যে উত্তরায় পৈতৃক বাড়িটিকে অনেকটা দোতলা রাজপ্রাসাদে রূপান্তর করেন হাবিব। পাশে থাকা সরকারি খাস জমিতে রিকশার গ্যারেজ, খাবার হোটেল ও নিম্নবিত্তদের টিনশেড ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেন। সে ঘরগুলো অবশ্য এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখলে। উত্তরা রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের পাশে পৈতৃক সম্পত্তিতে হাবিব হাসান নির্মাণ করেন আটতলাবিশিষ্ট একটি বিশাল মার্কেট।

২০২০ সালের নির্বাচনি হলফনামায় হাবিব হাসানের নিজের নামে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেন। আর আয়ের সূত্র বলেন দোকান ভাড়া। ওই খাতে তার বছরে আয় ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৭১২ টাকা। ২০২০ সালে তার ব্যাংকে ছিল ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৪ টাকা, ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে পৌনে ১১ গুণ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় দেখা যায়, দুটি থেকে ছয়টি প্লটের মালিক হয়েছেন হাবিব হাসান। এই সময়ে ২টি গাড়ি থেকে ৬টি গাড়ির মালিক হন হাবিব। ২০২০ সালে হাবিব হাসানের ব্যাংকঋণ ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে সেই ঋণ তিনি পুরোপুরি পরিশোধ করেছেন। ২০২০ সালে তুরাগে হাবিবের প্লট ছিল দুটি। ২০২৪ সালে মোট তিনটি প্লটের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার পল্লবীতে ১৫ শতাংশের আরেকটি প্লট রয়েছে তার। ২০২৪ সালে উত্তরায় আরেকটি ছয়তলা ভবনের সাড়ে ১৩ শতাংশের মালিক হয়েছেন তিনি।

এর বাইরেও উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে হাবিবের নিজস্ব ২০টির মতো ফ্ল্যাট রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। একাধিক বাড়ি রয়েছে হাবিবের। তবে এর মধ্যে অনেক বাড়ি লোকচক্ষুর আড়াল করতে নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে কিনিছেন তিনি।

হাবিবের বলপ্রয়োগ করতেন ভাই সোহেল
চার ভাইয়ের মধ্যে হাবিব হাসান ছিলেন মেজো। বড় ভাই মারা গেছেন। সেজো ভাই হাদিম, ছোট ভাই সোহেল। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জনকল্যাণমূলক কাজে মনোযোগ না দিয়ে চাঁদাবাজির দিকে মনোযোগী হন হাবিব। আর এমপি হাবিবের ক্ষমতা সমান তালে ব্যবহার করতেন তার ছোট ভাই সালাউদ্দিন সোহেল। হাবিবের এই ভাই যেসব জায়গায় থাবা দিয়েছেন সেগুলো হলো উত্তরায় অবৈধ কাঁচাবাজার, পরিবহনে চাঁদাবাজি (লেগুনা-অটোরিকশা), ডিশ-ইন্টারনেট অ্যান্টেনা, ফুটপাতের চাঁদা, পদ-বাণিজ্য, সেক্টর কল্যাণ সমিতির নির্বাচন না দিয়ে কমিটি ঘোষণা, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডেকোরেটরের কাজের টাকা না দেওয়া, হোটেল, রেস্তোঁরা, ফার্নিচার মার্কেট, স্কুল-কলেজে চাঁদাবাজি, অবৈধ বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ ভাড়া, ময়লা পরিষ্কারের পার্সেন্টেজ ইত্যাদি। স্থানীয় বাসিন্দারা জায়গা বিক্রি করলেও সেখান থেকে হাবিবের হয়ে সোহেল পার্সেন্টেজ নিতেন। উত্তরার বাউনিয়ায় ভূমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন হাবিব। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে সোনারগাঁও জনপথ রোডে রাজউকের খালি প্লটের ফার্নিচার মার্কেট প্রতিষ্ঠা করেন সোহেল। সেখানে প্রায় ২০০টি ফার্নিচারের দোকান থেকে মাসে ভাড়া নিতেন সোহেল, যা এখন স্থানীয় বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে।

হাবিব বাহিনীর দৌরাত্ম্য 
হাবিব ও তার ভাই সোহেলের পকেটে প্রতি মাসে টাকা পৌঁছে দিত তাদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় পর্যায়ে আলাদা ওয়ার্ড ও জায়গা বুঝে আলাদা বাহিনী তাদের পকেটে টাকা পৌঁছে দিত। জমি দখলে হাবিবের প্রধান হাতিয়ার ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন। ফার্নিচার মার্কেটের চাঁদাবাজিতে যুক্ত রয়েছেন ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা। আব্দুল্লাহপুর মাছবাজারের চাঁদাবাবাজিতে যুক্ত হাবিবের অনুসারী কাউন্সিলর মোতালেব।

উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন কাঁচাবাজার থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা পেতেন হাবিব ও ছেলে তানিম এবং ভাই সোহেল। এই বাজারের চাঁদা তুলতেন ‘আয়নাবাজ’খ্যাত নাজমুল। টাকার বিনিময়ে নিজের নামে অন্যকে জেল খাটান তিনি। এই নাজমুল স্থানীয়দের মাঝে পিস্তলবাজ হিসেবে পরিচিত। কথায় কথায় পিস্তল তাক করতেন তিনি। তার বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব বিপুল মাদক উদ্ধার করে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। 

তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘হাবিব হাসান একাই সব করতে মরিয়া ছিলেন। তার ভাইও তেমন ছিলেন। দলীয় এমপি হয়েও দলের নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু করেননি। স্থানীয় জনগণের কল্যাণের দিকে তার মনোযোগ ছিল না। দলীয় নেতাদেরও নানাভাবে হয়রানি করেছেন। জমি দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ মানুষ থানা-পুলিশে অনেক অভিযোগ করেছেন। হয়েছে অনেক বিচার-সালিশও। কোনো লাভ হয়নি। এখন তারা পলাতক। তবে সাধারণ নেতা-কর্মীদের ক্ষতি হয়ে গেল।’ 

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তার হাবিব ও তার ভাইয়েরা পলাতক। বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও সম্ভব হয়নি।