ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে আরও ২ নেতা জড়িত!

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে আরও ২ নেতা জড়িত!
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার

ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ খুনের জট খোলা শুরু হয়েছে। আনার হত্যার ঘটনায় মামলার পর জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম স্থানীয় নেতাদের নজরদারিতে রেখেছিল। কার কার সঙ্গে এমপি আনারের বিরোধ ছিল তাদের বিস্তারিত বায়োডাটাও সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তদন্ত সম্পন্ন করেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ ছিল পুলিশের। পরে এ খুনের সঙ্গে জড়িত তানভীর ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় একাধিক ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জড়িত হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। পরে তানভীর আদালতে জবানবন্দিতে ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুর নাম বলার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে বাবুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। 

তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তার দেওয়া কিছু তথ্যে পুলিশের পিলে চমকেছে। 

এ খুনের সঙ্গে আরও দুজন নেতা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন বাবু। তার মধ্যে একজন জেলা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। ওই নেতার বাড়ি কালীগঞ্জ এলাকায়। আরেকজন কালীগঞ্জ পৌরসভার ছাত্রলীগের নেতা। ওই ছাত্রলীগের নেতা আনারের সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ২ বছর আগে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে নিজ দল থেকে এমপি আনার বাদ দেন। তার বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যস্থতায় সালিশি বৈঠকে বিরোধ মিটে গেলেও ভেতরে ভেতরে তার এই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলেন কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী এক কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। তার আগে ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ এ মামলায়  গ্রেপ্তার করেন শিলাস্তি, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজিকে। পরে আদালত শিলাস্তিসহ মোট তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রথম দফায় রিমান্ডে কিছু তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ডিবি পুলিশ গত ৩১ মে পুনরায় আদালতে আসামিদের হাজির করে আবার রিমান্ডের আবেদন করে। শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে কাজী কামাল আহমেদের কথা বলেন। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী  আক্তারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারি বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ গতকাল সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে জানান, ‘আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডে কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুর সংশ্লিষ্টতা আসার পর পুলিশ মাঠপর্যায়ে আরও কাজ করা শুরু করেছে। বাবু দুই নেতার নাম বলেছেন। তবে ওই দুই নেতা কোন প্রক্রিয়ায় এ খুনের সঙ্গে জড়িত তা জানতে পারেনি পুলিশ। আনারের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতার বিরোধ থাকার কারণে গ্রুপভিত্তিক কিছু নেতাও এ খুনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তবে বাবু পুলিশকে জানিয়েছেন যে, এ হত্যাকাণ্ডে ওই দুই নেতা প্ররোচনা ও খুনিদের অর্থ প্রদান করে থাকতে পারেন।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু পুলিশকে জানিয়েছেন আনার ও শাহীনের দ্বন্দ ছিল প্রকাশ্যে। তাদের এই দ্বন্দ্বের কথা সবাই জানত। স্থানীয় নেতারা এই বিরোধকে মেটানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও তা কোনো কাজে আসেনি। একাধিক সালিশি বৈঠকেও এই বিরোধ মেটেনি। এই বিরোধের জেরে আনারকে খুন হতে হয়েছে। 

মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আনার বিএনপির রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগে আসার কারণে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতাও তাকে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরাতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু এরপরও আনার ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। আর হত্যাকারীদের নানাভাবে প্ররোচনা প্রদানে এই আনারের বিদ্রোহী গ্রুপ সক্রিয় ছিল বলে জানা গেছে। 

এনবিআরের নজরদারি আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০০ এএম
আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এবার বড় মাপের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ নথি তলব করা হয়। একই সঙ্গে গত ছয় মাসে কোন ব্যবসায়ী কী পরিমাণ কত দামে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন তার তথ্য সংগ্রহ করছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করা হলেও দাম বেড়েছে এমন সব পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছেন। এরা সিন্ডিকেট করে এ কাজ করছেন। এতে সাধারণ আয়ের মানুষ কষ্টে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে আমরা পেঁয়াজ ব্যবসায় যারা সিন্ডিকেট করছেন বলে সন্দেহ করছি, তাদের কর নথি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তাদের কর ফাঁকি খোঁজা হচ্ছে। এনবিআরের অন্যান্য গোয়েন্দা শাখা থেকেও একইভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি এসব সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বাজারে এর সুফল পড়বে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। সারা দেশের কর অঞ্চল থেকে এসব নথি ঢাকায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে আনা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা আছেন এ তালিকায়।

দীর্ঘ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ভরা মৌসুমেই বাড়ছে দাম। ঈদের আগে কেজিতে ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬৫-৭০ টাকার কমে মেলে না। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে এই অজুহাতে দেশের বাজারে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন বাজারেও বাড়ছে দাম। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কাজটা করেন। বাধ্য হয়ে সরকার গত বছর খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করে। এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলে দাম কমতে থাকে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করি তাদেরও দুর্নাম হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ালে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশা করছি।

দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই এই দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হারুন রশিদও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজার, নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হলেও পেঁয়াজের বাজারে চলে নৈরাজ্য। পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে থাকেন।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৬৫ টাকায়।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সূত্র মতে, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। তারপরও বছরে কমবেশি আমদানি করা হয় ৯ থেকে ১১ লাখ টন। পেঁয়াজের দাম গত অক্টোবরে লাগামহীন হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। এরপর থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ে। আবার দেশেও মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ে। এ জন্য দাম কমে। তবে হালি পেঁয়াজ উঠার পরও অধিকাংশ বাজারে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মিথ্যা তথ্যে ভোটার হয়ে ইসির হাতে ধরা খেয়েছে কিশোর মো. আরাফাত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নামাপুটিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় আরাফাত এবং প্রতিবেশী ভাই জহিরুল ইসলাম জুয়েলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট (তথ্য ব্যবস্থাপনা) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে তিনি জানান, আরাফাতের প্রকৃত জন্মসাল ২০১০, বয়স ১৫ বছর। তার বয়স ২২ বছর করতে ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে আপলোড করা হয় এবং ছবি, চোখের আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অন্য লোকের। এ বিষয়ে ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর খবরের কাগজকে জানান, ঘটনায় আটক ২ জনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় গিয়ে কাঁদতে দেখা যায় আরাফাতকে। জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, তার এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি আপলোড করা হয়েছে, যাকে তিনি চিনেন না। প্রতিবেশী ভাই জহিরুল তাকে ইসিতে ছবি পরিবর্তন করার জন্য নিয়ে এসেছেন। আরাফাতকে প্রশ্ন করা হয়, সে কীভাবে ভোটার হলো? জবাবে সে বলেছে, ‘আমার ফুপাতো বাইয়ে কইছে যে বিদ্যাশ (কাতার) নিব। আমি হেরে কইছি আইডি কার্ড করন লাগব? হেয় লগে লগে কইছে কইরা দিব।’

আকুতি জানিয়ে আরাফাত বলে, ‘আপা, আমি তারে জোরাজুরি করি নাই। আমি এইট পর্যন্ত পড়ছি। আমার বাবাও বিদ্যাশ থাকে, সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে গিয়ে সে এখনো কাজ পায়নি। আমরা ৩ ভাই এক বোন। অভাবের সংসারে মা আমারেও বিদ্যাশ পাঠাইতে চায়। তাই অই ভাইয়ের কথায় ভোটার হওয়ার আবেদন করি। কাতার পাঠাবে বইলা ভাই আমারে ভোটার হইতে বলে। কারণ এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারুম না, বিদ্যাশে যাইতে পারুম না।’

আরাফাত জানায়, এক মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদের আগেই পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিস থেকে তার ভাই ভোটার হওয়ার আবেদন করিয়ে দেন। তার আগে জহিরুল আরাফাতের ২২ বছরের ভুয়া জন্মসনদ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র বানিয়ে দেন। আরাফাতের এনআইডির আবেদন করাতে জহিরুল স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির সহায়তা নেন। এসব কাজের জন্য এ পর্যন্ত খরচ হিসেবে নেন ৯ হাজার টাকা। তবে পরে জহিরুল রকিকে ভাগের টাকা না দেওয়ায় সে আরাফাতের ছবি ও বায়োমেট্রিক না নিয়ে প্রক্সি হিসেবে অন্য লোকের এসব তথ্য ব্যবহার করে। পরে আরাফাত এনআইডিতে নিজের ছবির বদলে অন্য লোকের ছবি দেখতে পায়। 

এ ঘটনার ব্যাপারে জহিরুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আরাফাতের মায়ের কথায় তিনি এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন। দালাল নন এমন দাবি করে তিনি বলেন, পেশায় তিনি স্থানীয় ভূমি অফিসের আমিন। কৃষিকাজও করেন। আরাফাত সম্পর্কে তার বউয়ের মামাতো ভাই। বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ করতে টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির কাজটি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে আরাফাতের ছবির বদলে এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি বায়োমেট্রিকে আপলোড করা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জহিরুল। বিদেশে লোক পাঠাতে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তার কোনো কাজের সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন জহিরুল।

আইনে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার শাস্তি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো নাগরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি, কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলা করলে সেটা এই আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অনূর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আরাফাতের ভোটার হওয়ার বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ খবরের কাগজকে জানান, আরাফাত নামে কোনো কিশোর বা ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। 

আপনার অফিসের ঝাড়ুদার (রকি) এর মাধ্যমে কোনো কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নলেজে নেই। আমি জানিও না। ঢাকা অফিসে যেহেতু তথ্য চলে গেছে, সেখান থেকে নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও দায়িত্বে অবহেলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। গতকাল সোমবার তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরাফাত নামের ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি বয়স বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন অফিসে গতকাল সে তার ছবি পরিবর্তনের জন্য এলে এনআইডির তথ্য ও ছবি, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে থাকা বয়স আর সরাসরি তাকে দেখে আমাদের কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি জানায়, কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর আগেই আরাফাত ভোটার হওয়ার আবেদন করতে যায়। কিন্তু বয়স কম থাকায় কর্মকর্তা তাকে ভোটার বানানো যাবে না বলে জানান। পরে সে এক প্রতিবেশী ভাই জহিরুলের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে আবেদন করে। এ কাজ করিয়ে দিতে তার সেই ভাই দালালের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকিকে টাকা দেন। কিন্তু রকি সেই টাকা না পেয়ে অন্য লোকের ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে এনআইডির কাজ শেষ করেন।’ 

এনআইডি শাখার মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ইসিতে ছবি সংশোধন করতে আসা আরাফাতের ভোটার হওয়ার ঘটনা আমরা জানতে পারি। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অফিসে আসা দুজনের সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। আরাফাতের আবেদন এ পর্যায়ে লক করে রাখা হবে। অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের কারসাজিতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরাফাতসহ জালিয়াতিতে জড়িত তার প্রতিবেশী ভাই জহিরুল, স্থানীয় অফিসের ঝাড়ুদার এবং কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।

এমন চিত্র বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন।

তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। 

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি, কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি,  কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য
ফরিদপুরের শোভারামপুরে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্না করছেন এক গৃহিণী। ইনসেটে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। ছবি: খবরের কাগজ

কেঁচোসারের পর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সফল হয়েছেন ফরিদপুরের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন। জেলার শহরতলির কোমরপুরে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন তিনি। এখন তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ ঘনফুট গ্যাস। ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আরও ৪০টি পরিবারকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানান, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে তানিয়াকে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তানিয়া পারভীন একজন নারী উদ্যোক্তা। এর আগে তিনি ইউটিউব দেখে শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন। সেখানেও তিনি দেশের ভেতর একজন সফল উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত। এবার তিনি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। তার এই সফলতায় অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে এলাকার ৬০টি পরিবারের মাঝে দিয়েছেন বায়োগ্যাস। সরকার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা এবং নিজের ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে শুরু করেছেন এই গ্যাস প্ল্যান্ট। সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে কম দামে বায়োগ্যাস পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এদিকে তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। 

বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম জানান, প্রতি মাসে তাদের দুটি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগতো, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে সারা মাসে মাত্র ১১০০ টাকা দিয়ে সেই সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।

আরেক সুবিধাভোগী আকলিমা বেগম জানান, এই বায়োগ্যাস পাওয়াতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পরিবারে অনেক সদস্য হাওয়ায় প্রতি মাসে দুই-তিনটি সিলিন্ডার গ্যাস লাগতো। অনেক সময় কাঠখড় পুড়িয়ে রান্নার কাজ চলতো। এখন পুরো মাসে তিনি মাত্র ১১০০ টাকায় পুরো পরিবারের জ্বালানি পাচ্ছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা কে এম জাফর বলেন, ‘তানিয়া পারভীনই প্রথম এলাকায় কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এবার সরকারের সঙ্গে মিলে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস উৎপাদন। এর ফলে আমাদের এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার উপকৃত হবে।’

তানিয়ার প্ল্যান্টে কাজ করা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা বেকার ছিলাম। এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছর এখানে আমরা চার-পাঁচজন কাজ করছি। আমাদের পুরো পরিবার এখানকার কাজের ওপর নির্ভরশীল।’ 

নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছি। এখন এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বায়োগ্যাস ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৪০টি পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০ ভাগ টাকা নিজে বিনিয়োগ করেছি।’ 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীনের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ ভাগ টাকা এবং তানিয়া পারভীন নিজে ৬০ ভাগ টাকা দিয়ে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছেন। তিনি এখন ৬০টি পরিবারের মাঝে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছেন। সামনে আরও ৪০টি পরিবারের তিনি দেবেন। ব্যবহার নিরাপদ হওয়ায় বায়োগ্যাস উৎপাদনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।’

রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি
গরুবোঝাই একটি ভটভটিতে সওয়ার হয়েছেন অন্তত ছয়জন মানুষ। অবৈধ এ যানটি রাজশাহী থেকে নওগাঁর দিকে যাচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

তিন চাকার অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ রাজশাহীবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর অথবা উপজেলা কিংবা গ্রামীণ সড়ক, সব খানেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ভটভটি সমান তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধ এসব যানের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে। জেলাবাসী বলছেন, প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। 

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, কাটাখালী, শিরোইল স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা, চারঘাটসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে ঘুরে এসব অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। চালকদের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যানবাহনেরও নেই বৈধ কাগজ। অনেক জায়গায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের যান চালাতে দেখা গেছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রাস্তায় যানজট সৃষ্টিসহ নানা কারণে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। 

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, গত এক বছরে রাজশাহী জেলায় ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ (রামেক) বিভিন্ন হাসপাতালে সহস্রাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। যাদের বড় একটি অংশই অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। 

জেলাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকট নিরসনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালনেরও অনুরোধ জানান তারা। পাশাপাশি যথাযথ রোড-সেফটি পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ারও পরামর্শ নগরবাসীর। 

নগরের শিরোইল এলাকায় কথা হয় মোখলেছুর রহমান নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোট ও ছিমছাম নগরী হিসেবে রাজশাহী দেশব্যাপী প্রশংসিত। নগরীর পাশ দিয়ে বাস চলাচল করায় যানজটও তেমন ছিল না। তবে ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইজিবাইকের ক্ষেত্রে দুটি রং নির্ধারণ করে সকাল-বিকেল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আবার, রিকশার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই। তাই নগরবাসী যানজটে নাকাল।’ 

আবদুল লতিফ নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন না থাকলে তো চালকরা যে যার মতো চালাবেনই। ভাড়া বেশি পাওয়া দিয়ে কথা। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালক হতে পারেন। কিছু সিস্টেম চালু করা গেলে আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।’ 

পবা হাইওয়ে থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বেলপুকুর থেকে নাটোরের বেলঘরিয়া বাইপাস পর্যন্ত পবা হাইওয়ের আওতায় পড়ে। ওই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে এক-দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর বাইরেও ছোটখাটো ধাক্কা লাগার মতো ঘটনা ঘটে। মূলত অটোরিকশা, টেম্পু, ভটভটি, নছিমন-করিমনসহ থ্রি-হুইলার গাড়ির কারণেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত।’ 

রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুখপাত্র) রফিকুল আলম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা-সম্পর্কিত মামলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাজার এলাকায় এখন যে পরিমাণে যানজট, সেটা আগে আরও বেশি ছিল। অবৈধ রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। আমি সিটি করপোরেশন ও আরডিএকে বলেছি, তারা যেন আর নতুন করে অনুমোদন না দেয়। পাশাপাশি রিকশাগুলোকেও নির্দিষ্ট রঙের আওতায় আনার জন্য শক্তভাবে বলেছি, তারাও চেষ্টা করছেন। রিকশাগুলো দুটি কালারে হয়ে গেলে যানবাহনের পরিমাণ আরও কমে যাবে।’ 

চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটা আমাদের না। এটা সিটি করপোরেশনের দেখার বিষয়, যেহেতু তারা এত পরিমাণে গাড়ির অনুমোদন দেয়। আবার তাদের যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকত, তাহলেও একটা কথা ছিল। আমরা তাদের নিয়ে প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রোগ্রাম করছি।’ 

মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কাগজপত্রহীন রিকশা ও অটোরিকশা জব্দের নির্দেশনা দেওয়া আছে। অভিযান চলছে। পাশাপাশি চালকদের নির্ধারিত কোনো নিয়মের মধ্যে আনা যায় কি না সে বিষয়ে রাসিকের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’