ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

টাঙ্গাইলে ঢুকছে ভারতীয় অবৈধ চিনি

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
টাঙ্গাইলে ঢুকছে ভারতীয় অবৈধ চিনি
ময়মনসিংহের ধুবরিয়া সীমান্ত পার হয়ে টাঙ্গাইলে আসার পর জব্দ করা হয় ট্রাকভর্তি ভারতীয় চিনি। সম্প্রতি তোলা ছবি। খবরের কাগজ

‘ময়মনসিংহের কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকা থেকে আমরা মাল হাতে পাই। সেখানে স্থানীয়রা ভারত থেকে চিনি এনে তাদের গোডাউনে রাখেন। তারপর আমরা গোডাউন থেকে মাল নিয়ে যার যার গন্তব্যে রওনা হই। রাস্তায় কোথাও কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। আর সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকেও আসে। টাঙ্গাইলের অংশে বেশি চিনি আসে ময়মনসিংহ জেলার ধুবরিয়া সীমান্ত দিয়ে। এই চিনি বর্ডার পার হয় বাংলাদেশ ও ভারতীয় দালাল চক্রের লাইনম্যানের মাধ্যমে।’ চিনি চোরাচালানের এসব তথ্য দিচ্ছিলেন কালিহাতী উপজেলার দুদু মিয়া।

দুদু মিয়া আরও বলেন, ধুবরিয়া বাজারে গোডাউন আছে ময়মনসিংহ শহরের চিত্র বাবু নামে এক লোকের। তিনি মূলত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকায়। এই চিত্র বাবুকে প্রতি বস্তা চিনিতে ১০০ করে চাঁদা দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। এই চিত্র বাবু প্রশাসন ম্যানেজ করেন। তাকে লাইনম্যান বললে সবাই চিনে। ময়মনসিংহে চিত্র বাবুকে লাইনবিল দিয়ে এলে সব কিছু সমাধান, ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত এসেছি কোনো বাধার মুখে পড়িনি। তবে আমরা শ্রমিক হিসেবে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা পাই। আসলে ভারতীয় চিনি আসলে চিনির দাম কমে যাবে এ জন্য সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তারা তেমন বাধার সৃষ্টি করে না। 

দুদু আরও বলেন, সপ্তাহে প্রায় ৭ থেকে ৯ ট্রাক চিনি টাঙ্গাইলে ঢোকে। আর বেশি চিনি ঢোকে ভালুকার দিকে। মাঝে মাঝে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে চিনি আসা বন্ধও থাকে। তখন আধা বস্তা করে এনে সাপ্লাই দেই। এই অংশের মালিকের সঙ্গে সীমান্ত এলাকার মালিকের ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়। ভারতীয় চিনির বস্তা বদলিয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে তীর চিনি বা ফ্রেস চিনির খালি বস্তা ক্রয় করে বাজার জাত করা হয়। প্রতি বস্তা চিনিতে প্রায় ২০০-৩০০ টাকা লাভ থাকে বাজারে আনার পর। ৫০ কেজির বস্তায় খুচরা বাজারে ২০০ টাকার উপরে লাভ থাকে। টাঙ্গাইলে বেশি মালামাল আসে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে। 

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ভারতীয় চিনির মূল হোতা টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এলাকার উজ্জল, ফরহাদ, সাখাওয়াত, দুলাল সাহাসহ বেশ কিছু ব্যবসায়ী। 

টাঙ্গাইলের ছয়আনী বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আছুরুদ্দিন আছুর ছত্রছায়ায় এ চিনির ব্যবসা চলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। 

টাঙ্গাইল পুলিশের অভিযানে একবার এক ট্রাক চিনি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তায় ২ ট্রাক চিনি জব্দ করে প্রশাসন। তারপরও টাঙ্গাইলে অহরহ চিনি ঢুকছে। 

টাঙ্গাইল জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্বাধীনের নেতৃত্বে টাঙ্গাইল ছয়আনী পুকুর পারে গোডাউনে ভারতীয় চিনি নামে ভোরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৪ শত বস্তা চিনি একটি ট্রাকে লোড করা। পরে ট্রাক থেকে নামিয়ে ভ্যানে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান শ্রমিকরা। সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দেখে ম্যানেজ করার চেষ্টাও করেন এই নেতা। 

এই সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্বাধীন বলেন, বিষয়টি সবাই জানে। আপনি যদি কিছু করতে পারেন করেন, সমস্যা নাই। আসছেন চা খান। টাকা নিয়ে চলে যান। 

টাঙ্গাইল ছয়আনী বাজারে সাখাওয়াত স্টোরের মালিক সাখাওয়াত হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, বাজারে সবাই ভারতীয় চিনি বিক্রি করে, তাদের ধরেন। আপনি কেন আমাকে ধরতে আসছেন। আমি সব ম্যানেজ করেই চিনি বাজারে নিয়ে আসি। আমার কোনো সমস্যা নাই। আপনার মতো সব সাংবাদিক ম্যানেজ করা আছে। কিছুই হবে না। আপনাকেও মাসোয়ারা দিব, চলে যান। 

অপর চিনি ব্যবসায়ী দুলাল সাহা বলেন, আপনারা অযথা ব্যবসায় ডিস্টার্ব করেন। আমরা তো প্রশাসন ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করছি। তাদের তো কোনো সমস্যা হয় না, তা হলে আপনাদের সমস্যা কী। 

টাঙ্গাইলে ভারতীয় চিনির মূল হোতা উজ্জল বলেন, সীমান্ত এলাকা থেকে সব কিছু ম্যানেজ করে আমরা এই টাঙ্গাইল পর্যন্ত চিনি নিয়ে আসি। এই কয় বছর কোনো সমস্যা হয়নি, হঠাৎ আপনারা সমস্যা সৃষ্টি করছেন। কখনো এই ধরনের সমস্যা হয়নি। যে সীমান্ত দিয়ে চিনি নিয়ে আসি সেখানকার সাংবাদিকও ম্যানেজ করা। আপনারাও আমাদের ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়ে যান তা হলে দেখবেন সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে। এই নিউজ করে কী করবেন, সরকার যেখানে বাঁধা দিচ্ছে না আপনারা অযথা নিউজ করবেন। আপনারা জানেন না যে এই চিনি দেশে আসায় কতটা চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই চিনি না আসলে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যেত। 

টাঙ্গাইল ছয়আনী বাজারের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আছিরুদ্দিন আছু মিয়া বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা অযথা এই চিনির পেছনে দৌড় পারতাছেন। আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। বেশি বুঝলে পুলিশ ডেকে এনে ধরিয়ে দিব। বিশ হাজার টাকা দিচ্ছি, নিয়ে যান ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করেন। 

গত ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার শুলাকুড়া এলাকা থেকে ৪৩০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ ও ৭ জনকে আটক করে কালিহাতী থানা-পুলিশ। 

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার খবরের কাগজকে বলেন, কোনো প্রকার অবৈধ চিনি টাঙ্গাইলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এই ভারতীয় চিনির সঙ্গে যারাই রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২৪ সালে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ১ কোটি কেজি

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
২০২৪ সালে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ১ কোটি কেজি
চা বাগানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের চায়ের উৎপাদন কমেছে কিন্তু বিদেশে চা রপ্তানি বেড়েছে। ২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পর ২০২৪ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে চা উৎপাদন কমেছে এক কোটি কেজি। 

তবে ২০২৪ সালে চা রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন কেজি, ২০২৩ সালে চা রপ্তানি হয়েছিল ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি। চা রপ্তানি করে ২০২৪ সালে আয় হয়েছিল ৪৫৯ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন টাকা। আগের বছর রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৭২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন টাকা। 

বাংলাদেশ টি বোর্ড থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

এদিকে গত সোমবার চায়ের সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আগামী ৫ মে থেকে নতুন মৌসুমের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চা নতুন নিলামের সময়সূচি ঘোষণা করেছে টি বোর্ড। 

২০২৪ সালের উৎপাদিত চায়ের ৪৯টি নিলাম আয়োজন করা হয়েছিল। সর্বশেষ নিলামে ৭২ হাজার ৮৭৮ প্যাকেটে ৩৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়। 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০২৪ সালে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০ কোটি দুই লাখ কেজি।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন কম হলেও দেশের বাজারে চায়ের সংকট হবে না। কারণ ২০২৩ সালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন এই ঘাটতি পূরণ করবে। 

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে উত্তর অঞ্চলের বেশ কিছু চা বাগান বন্ধ ছিল। এতে প্রভাব পড়েছে চায়ের উৎপাদনের। এছাড়া চা শিল্প বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। চা চাষের জন্য নিয়মিত ও মাঝারি বৃষ্টি প্রয়োজন। ২০২৪ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে দুই দশমিক আট লাখ একরেরও বেশি এলাকায় ১৬৯ চা বাগান আছে। এর মধ্যে, মৌলভীবাজারের ৯০ বাগান থেকে দেশের মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হবিগঞ্জ থেকে আসে ২২ শতাংশ চা, চট্টগ্রামের চা বাগান থেকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ যোগ হয়। 

এদিকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ চা রপ্তানি করেছে। প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রধান রপ্তানিকারকদের তুলনায় বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সাড়ে ২৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় ছিল চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছিল ছয় লাখ কেজি। এর পর ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। তবে ২০২১ সালে কমে হয় ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে রপ্তানি বেড়ে হয় ৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যে সব দেশে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বেশি বলে জানান চা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত এক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা। 
এ ছাড়া বাংলাদেশের চায়ের কদর রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে। নতুন দেশ হিসেবে এবার রপ্তানি হচ্ছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া সিংগাপুর, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফ্রান্সে, স্পেনে রপ্তানি হয় বাংলাদেশি চা। 

বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্ট লিমিটেড, সিটি টি স্টেট, ইস্পাহানি টি লিমিটেড অন্যতম প্রতিষ্ঠান।  

২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদ করে নতুন রেকর্ড হয়েছিল। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়েছে। এবার সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি বাগান গুলোর। ২০২২ সালের চা উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন রেকর্ড ছিল। ২০১৯ সালে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। সেসময় তাও রেকর্ড পরিমাণ ছিল। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন (এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি) খবরের কাগজকে বলেন, ‘চা বোর্ড, বাগানমালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি সবার দলগত পরিশ্রমের ফলে গত বছর চা উৎপাদানের রেকর্ড হলেও এবার তা ধরে রাখা যায়নি। তবে এবার চা রপ্তানিতে রেকর্ড হয়েছে। এবার যা উৎপাদন হয়েছে তাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারা একটা বড় সাফল্য। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। রপ্তানির বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে।  দেশের প্রায় ১২টি চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়েছে মোট উৎপাদনের উপর। 

আবদুস সাত্তার/পপি/ 

কমছে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচ, বাড়ছে সক্ষমতা

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
কমছে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচ, বাড়ছে সক্ষমতা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দ্রুত বিমানের কার্গো অবকাঠামো বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। বিশেষভাবে রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য তৈরি পোশাকের নিরবচ্ছিন্ন রপ্তানি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য কার্গো সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ ও পরিবহন খরচ কমানোর জন্য সব পর্যায়ের অংশীজন- বিমান, সিভিল অ্যাভিয়েশন, প্রাইভেট সেক্টর সবার সঙ্গে বৈঠক করে জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সেবা বাড়াতে ঢাকাসহ সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট বাড়ানো এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও অ্যারোনটিক্যাল চার্জসহ অন্যান্য ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কার্গো ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে কার্গো হ্যান্ডলিং পরিষেবার ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ দেওয়া সত্ত্বেও ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্যক্রম পরিচালনা করা এয়ারলাইনসগুলোকে এর জন্য নিজস্ব খরচে কর্মী নিয়োগ দিতে হয়। যার ফলে খরচ বাড়ে। 

এয়ারলাইনস অপারেটর কমিটির (এওসি)  ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হিসাবমতে, এই বিমানবন্দরের একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট বাংলাদেশ বিমানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার জন্য প্রতি ফ্লাইটে ২ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ডলার এবং কার্গো অপারেশনের জন্য প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত দশমিক শূন্য ৭ সেন্ট দেয়। এসব ফি দেওয়ার পরও সেবাগ্রহীতা প্রতিটি এয়ারলাইনসকে মাত্র দুই থেকে তিনজন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্মী দেওয়া হয়, যা তাদের ফ্লাইট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়- বলছে এওসি।

যদিও প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং (যাত্রীদের ফ্লাইটে ওঠানো-সংক্রান্ত কার্যক্রম), ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, কার্গো ব্যবস্থাপনা ও উড়োজাহাজ সচল রাখার বিভিন্ন সহায়ক কার্যক্রম রয়েছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার মধ্যে, যা বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই দিয়ে থাকে। আগামী ২৭ এপ্রিল সিলেট বিমানবন্দর থেকে যে কার্গো ফ্লাইট শুরু হবে সেটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবাও এই সংস্থা দেবে।  

রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুধু এয়ারপোর্টের চার্জ কমানো হলেই আগের মতো চাঙা হয়ে যাবে আকাশপথের রপ্তানি। তখন ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। 

এ বিষয়ে টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, গত বছর ঢাকা বিমানবন্দরের প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টন হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ৯৮ হাজার টন। অথচ প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বছরে ১৫ হাজার টনের মতো রপ্তানি পণ্য ভারত হয়ে যেত। এটি কেন হতো? কারণ ফরওয়ার্ডার ও আমাদের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে শূণ্য দশমিক ৮০ ডলার থেকে ১ ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হতো, যা সড়ক পরিবহন ও সীমান্তে শুল্ক খরচ বহন করার পরও লাভজনক ছিল।

ঢাকা থেকে খরচ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত- একক হ্যান্ডলিং এজেন্ট বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের চার্জ অনেক বেশি। বিমান প্রতি কেজিতে হ‍্যান্ডলিং বাবদ একটি উচ্চ চার্জ আরোপ করে। দ্বিতীয়ত- দ্বৈত হ্যান্ডলিং ব্যয়। এই চার্জ দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস না পাওয়ার কারণে এয়ারলাইনসগুলোকে তাদের বড়সংখ‍্যক স্টাফ রাখতে হয়, যার ফলে খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম যেমন- ট্রলি, ডলি বা লোডিং যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। রয়েছে স্ক্যানিং মেশিনের ঘাটতি। এ ছাড়া স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সময়মতো পণ্য হস্তান্তর করতে না পারার কারণে প্রায়ই বুকিং মিস হয়। এ ছাড়া স্ক্যানিং করাতে হয়রানিমূলক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খরচ তো গুনতে হয়ই। খরচ বাড়ার একটি বড় কারণ হলো ঢাকা বিমানবন্দরে ফুয়েলের দাম আশপাশের দেশের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া সিভিল অ্যাভিয়েশনের অত্যধিক ফ্লাইট অপারেশন চার্জ এই খরচ বাড়ার অন্যতম আরেকটি কারণ। এ ছাড়া এয়ারলাইনসগুলো তাদের আয় দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। ফলে ফ্লাইট কমিয়ে দেওয়া বা অতিরিক্ত পরিচালনায় অনীহা খরচ বাড়ায় রপ্তানিকারকদের। পাশাপাশি কার্গো ভিলেজে চুরি ও পণ্য খোয়া যাওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রতিযোগিতা আনার ওপর জোর দিয়ে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের একচেটিয়া হ‍্যান্ডলিং ব্যবস্থার পরিবর্তে বেসরকারি অপারেটর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইক্যুইপমেন্ট ও স্ক্যানিং অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে শুধু আধুনিকায়ন নয়, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে ইক্যুইপমেন্টগুলোর। অপারেশনাল চার্জ পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।’ ফুয়েল ও ফ্লাইট চার্জ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এক্সপ্রেস ফ্যাসিলিটেশন সেল বা রপ্তানি প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ওয়ান স্টপ সেবা চালু করতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং একমাত্র গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং এজেন্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিরবচ্ছিন্ন কার্গো কার্যক্রম সহজতর করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে, জানিয়েছে বেবিচক ও বিমানের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে অনেক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমান অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ এবং যন্ত্রপাতি কিনেছে। যার কিছু ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে এবং কিছু ক্রয় প্রক্রিয়ায় আছে। এ ছাড়া ফ্লাইট ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ কমাতেও জোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে, বেবিচক ও বিমান থেকে জানান কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে সিলেটের কার্গো ফ্লাইটের সব সুবিধা যেন ঠিকভাবে দেওয়া যায় তার জন্য আমরা ঢাকা থেকে কিছু ইক্যুইপমেন্ট পাঠিয়েছি। সিলেটের প্রথম কার্গো ফ্লাইটে গ্যালিস্টেয়ার অ্যাভিয়েশনের এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ পণ্যবাহী বিমান ২৭ এপ্রিল স্পেনে ৬০ টন তৈরি পোশাক পরিবহন করবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭০০ জনেরও বেশি কর্মীর বর্তমান দলের পাশাপাশি পরিপূরক হিসেবে ৪০০ জন অতিরিক্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার নিয়োগ করছে বিমান।’ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে দেশে বাংলাদেশ বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচই সবচেয়ে কম। আর সেবার মান বাড়াতে এবং থার্ড টার্মিনালের জন্য আমরা নতুন অনেক ইক্যুইপমেন্ট কিনেছি এবং আরও কিছু কেনা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।’

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘কার্গো সেবার সমস্যা সমাধানে বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ একসঙ্গে বিমানের কার্গোকে আরও সাশ্রয়ী করার জন্য বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল ও গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং শুল্ক সংশোধন করতে এখন কাজ করছি। যেকোনো বাধা-বিপত্তির পরেও যেন বিমানে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, সে জন্য  আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কার্গো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত ফি ও খরচ সহজতর ও হ্রাস করতে সরকার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে। আমরা খুব শিগগিরই হ্রাসকৃত হ্যান্ডলিং চার্জ ঘোষণার আশা করছি।’ 

বর্ষা এলেই বাড়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তোড়জোড়

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০২ পিএম
বর্ষা এলেই বাড়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তোড়জোড়
চট্টগ্রামে পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে হাজারও পরিবার। নগরীর মতিঝর্ণা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাজ সারা বছর তেমন দেখা যায় না। মাঝে মাঝে অভিযান হলেও আইনের নানা ফাঁকফোকরে পাহাড়খেকোরা গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। ফলে ততদিন বিলুপ্ত হয়ে যায় শহরের রক্ষাকবচগুলো। সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, কেবল বর্ষা এলেই তোড়জোড় বাড়ায় কমিটি। সভা, মাইকিং, প্রচার, সাইনবোর্ড স্থাপন ইত্যাদি। এরপর আবারও আগের মতো অবস্থা হয়ে ওঠে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরও একই গতিতে চলেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। গত ২৭ জানুয়ারি কমিটির একটি সভা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ৫টি জোনে শহরকে ভাগ করেন। এগুলো হচ্ছে- জোন-১, আগ্রাবাদ সার্কেল; জোন-২, বাকলিয়া সার্কেল; জোন-৩, চান্দগাঁও সার্কেল; জোন-৪, কাট্টলী সার্কেল; জোন-৫, হাটাহাজারী সার্কেল। এসব জোনের আহ্বায়ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডকে। আর এর সদস্য করা হয়েছে সিডিএ, পরিবেশ, চসিক, বেলা, বাপা, ওসিদের।

চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি (চান্দগাঁও) ইউসুফ হাসান বলেন, ‘আমাদের জোনে তেমন কোনো পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেনি। আমরা সব সময় খোঁজখবর রাখছি। কোথাও পাহাড়-টিলা কাটার ঘটনা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে রুখে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আসলে সারা বছর পাহাড় কমিটির তেমন প্রয়োজন পড়ে না। বর্ষা এলে পাহাড় ধসে। এই সময় কাজ বেড়ে যায়। অবৈধ বসতিগুলো সরানোর কাজ থাকে।’

কেন এই কাজ অন্য সময় করা হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া।’

এ বিষয়ে কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা অসংখ্য অভিযান করেছি। মামলা, জরিমানা হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মুনীরা পারভীন নিতু বলেন, ‘বর্তমান পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে কোনো অভিযান হয়নি। তবে চিঠি পেয়েছি। অন্যান্য বিষয়েও আমার কাছ থেকে পাক্ষিক কোনো প্রতিবেদনও নেওয়া বা কোথাও যেতে বলা হয়নি।’

এদিকে নগরের বেশির ভাগ জায়গায় পাহাড় কেটে বাড়ি, রাস্তা বানানোর খবর পাওয়া গেলেও নির্বিকার প্রশাসন। নগরের বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড় কাটার ছড়াছড়ি। সেখানে সড়কের পাশে পাহাড়ে রয়েছে অন্তত তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনার বেশির ভাগ দোকান ও বসতি। পাশের জঙ্গল সলিমপুরে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পাহাড় কাটা চলছে। সেখানে পাহাড় কেটে বিশাল রাস্তা করলেও জানে না প্রশাসন।

এমনকি সেখানকার পুলিশ বক্সও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার সীতাকুণ্ডে আবুল খায়ের গ্রুপ, মিরসরাইয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটছে। এ ছাড়া নগরের টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়সংলগ্ন জিলাপীর পাহাড়, মতিঝর্ণা পাহাড়ে অসংখ্য অবৈধ বসতি রয়েছে। অথচ সেসব বসতি সরাতে কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা ও পাহাড় কাটা হয় খুলশী, আকবরশাহ, পাহাড়তলী, বেলতলীঘোনা এলাকায়। মাঝেমধ্যে সেখানে অভিযান হলেও সেসব অভিযানের টেকসই ফল আসে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানা বা মামলা করলেও আসামিরা থাকেন অধরা। 

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নগরে বৃষ্টি হচ্ছে। এ উপলক্ষে আবারও হতে পারে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। অতিবৃষ্টিতে অরক্ষিত খাল, নালায় প্রাণহানি রোধে পত্রিকায় জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে চসিক, যা করা হয় উন্মুক্ত খালে পড়ে ৬ মাসের শিশু সেহেরিশের মৃত্যুর পর। 

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা অভিযান, জরিমানা, মামলা করে থাকি। বাকি কাজগুলো কমিটির অন্যরা করবেন।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পাক্ষিক প্রতিবেদন, অবৈধ বসতির তালিকা, টহলের তথ্য তাদের কাছে নেই। 

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ‘আমরা সব সময় খোঁজখবর রাখি পাহাড়ে কোথায় কী হচ্ছে। তেমনভাবে প্রতিবেদন নেওয়া হয়নি। সারা বছর কাজ করি না, শুধু বর্ষা এলে কাজ করি, কথাটি সত্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জোন করে দিয়েছি। নিয়মিত পাহাড়ে কাজ করছে।’

ঢাকা কাস্টম হাউস ভল্টের সুরক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম
ভল্টের সুরক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ
প্রতীকী ছবি

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু জব্দের পর হিসাব রাখা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি চলছে এখনো কাগজে-কলমে। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে যে ধরনের ভল্টে জব্দ করা স্বর্ণ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যাপ্ত ও অত্যাধুনিক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দেড় বছর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের গুদামের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি হওয়ার পর প্রশ্নবিদ্ধ হয় ভল্টে স্বর্ণ সংরক্ষণের পুরো ব্যবস্থাপনা। এমন ঘটনার পরও ঢাকা কাস্টম হাউস থেকে এখনো নেওয়া হয়নি যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রায়ই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রী ও চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণ কাস্টম হাউসের ভল্টে হেফাজতে রাখা হয়। মাস শেষে এসব স্বর্ণ নিয়ম অনুযায়ী চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে। কিন্তু ভল্টের নিরাপত্তায় নেই কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ফলে চুরি হলেও তা ঠেকানো কঠিন । অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাঝেও বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া স্বর্ণের হিসেব এখনো রাখা হয় কাগজে-কলমে। এতে করে সংঘবদ্ধভাবে চাইলে জব্দ স্বর্ণের হিসেবও ‘নয়ছয়’ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার সুমন দাস খবরের কাগজকে বলেন, দেড় বছর আগে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার পর থেকে ভল্টের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি লকারের সামনে একজন গার্ড দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া লকারে অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো হয়েছে । কেউ লকারে হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এখন ৫ কেজির বেশি স্বর্ণ ভল্টে রাখা হয় না। ৫ কেজির বেশি স্বর্ণ জব্দ করা হলেই তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভল্ট এখন খালি পড়ে থাকে। ফলে চুরি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।

ভল্টে চুরি ঠেকাতে কোনো ডিজিটাল যন্ত্র রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কিছু নেই। প্রতিদিন জব্দ করা স্বর্ণের হিসাবে রাখা হয়। মাস শেষে তা নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে চলে যায়।

ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও দুবাইভিত্তিক একটি চক্র গড়ে উঠেছে। বিমানের যাত্রীরা স্বর্ণ আনেন। যাত্রীদের আনা স্বর্ণের মধ্যে পরিমাণ বেশি থাকা ও শুল্ক পরিশোধ না করার কারণে প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি স্বর্ণ জব্দ করে কাস্টম হাউসের ভল্টে রাখা হয়। এই জব্দ করা স্বর্ণ জমা রাখার হিসাব রাখা হয় কাগজে-কলমে (ম্যানুয়ালি)। ফলে নয়ছয়ের সুযোগ থেকে যায়। স্বর্ণের পরিমাণ কম-বেশি লেখার সুযোগ থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল-আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (ডিএম) সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বর্ণ চুরি ঠেকানো সম্ভব নয়। দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণের চোরাচালান ধরতে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে স্বর্ণ আসল-নকল, পরিমাপ, কত ক্যারেট- এসব শনাক্ত করা হয়। তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে ডিএম সফটওয়্যার চালু রয়েছে। তবে ভারতের কাছ থেকে নেওয়া এই সফটওয়্যারে বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে। এই সফটওয়্যারের আপডেট ভার্সন চালু করতে হবে। এ জন্য কাজ চলছে।

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাস্টম হাউস যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বর্ণ জমা না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু করার থাকে না। আমরা কখনো বলব না যে, কখন কোথায় কত স্বর্ণ ধরা পড়েছে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। স্বর্ণ জব্দের পর তারা তা নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কাছে নিয়ে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। জব্দ করা স্বর্ণ নিয়ে আসার পর হেফাজতের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভল্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। ভল্টে টাকা, স্বর্ণ, দলিল ও জরুরি কাগজপত্র যাই থাকুক, ব্যাংকে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। প্রত্যেকটা জিনিসের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বিমাবন্দরের কাস্টম হাউসের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার প্রেক্ষাপটে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয় তাদের নিজেদেরই বোঝা উচিত। আমার বাসায় চুরি হওয়ার পর অবশ্যই আমি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। কাউকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। তারা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করবে। তাদের প্রয়োজনে তারা পদক্ষেপ নেবে।’

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উমর ফারুক এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, এত বড় একটা চুরির ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও কোনো জোরালো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ধরে নিতে হবে কোনো অশুভ চক্র এটির সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করেছে।

ভল্টের নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার করার ওপর জোর দেন অধ্যাপক ড. উমর ফারুক। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার ছাড়া ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। এ ছাড়া চুরি ঠেকাতে সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি।

উন্নত দেশের ভল্টের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত দেশে ভল্টের নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। চুরি হলে এসব ডিভাইস সংকেতের মাধ্যমে দায়িত্বরতদের অবগত করে। ফলে সহজে চুরি ঠেকানো যায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখলে চুরি ঠেকানো সহজ হবে।

পুষ্টি নিয়ে সংস্কার কমিশনে ১০ প্রস্তাব

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৫ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
পুষ্টি নিয়ে সংস্কার কমিশনে ১০ প্রস্তাব
ছবি: সংগৃহীত

দেশে লাখ লাখ মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগছেন। উল্লেখযোগ্য়সংখ্যক শিশু খর্বকায় এবং কৃশকায়। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশ খর্বকায়। এদের বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম। একই বয়সের ১১ শতাংশ শিশু কৃশকায় অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম। আবার শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকের অতিরিক্ত ওজন। যার কারণে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরনের রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে এসব ঘটলেও সব ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়টি অবহেলিত।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, পুষ্টি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সঠিক ধারণা খুবই কম, বেশির ভাগ মানুষই জানেন না কী খাবেন, কী খাবেন না কিংবা ওজন-উচ্চতা অনুযায়ী আমাদের দৈনিক কত ক্যালোরি খাবার খাওয়া উচিত। খাদ্য ও বিভিন্ন রোগের মধ্যে জটিল সম্পর্কগুলো সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা তো আরও পরের বিষয়। এই বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিলে রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু স্বাস্থ্য সংস্কারে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেগুলোয় পুষ্টির বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে পুষ্টি গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে পুষ্টিবিদদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গত ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে শহিদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী পুষ্টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের সমন্বয়ক ডা. মো. ফজলে রাব্বি খান ‘বলেন, ওই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে মোট ১০টি বিষয় উঠে আসে। সেগুলো প্রস্তাব আকারে সংস্কার কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রস্তাবটি হচ্ছে- সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিতে মূল স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে পুষ্টিব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করা; প্রয়োজনে এই বিষয়ের অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করে একজন পরিচালক নিয়োগ করে দায়িত্ব দেওয়া।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে- সবাইকে স্বাস্থ্যকর খাবার, সঠিক ক্যালোরি পরিমাপ, জাঙ্ক ফুডের প্রভাব এবং খাদ্য ও রোগের মধ্যে জটিল সম্পর্কে সম্য়ক ধারণা প্রদানে সব পক্ষের সমন্বয়ে একটা দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকরী উদ্য়োগ নেওয়া। এ ধরনের পুষ্টি কর্মসূচিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা / সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা যেতে পারে।

তৃতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে, পুষ্টির সঙ্গে জড়িত বর্তমান ও ভবিষ্য়ৎ উদীয়মান পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য-পুষ্টি শিক্ষাবিদদের জন্য আধুনিক পুষ্টির হালনাগাদ ও সমন্বিত জ্ঞান, পুষ্টি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং স্থানীয় খাদ্য-পুষ্টি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের পুষ্টি খাতকে আরও প্রাণবন্ত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের স্নাতক পর্যায়ে পাঠ্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। পাঠ্যক্রমে পুষ্টির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অন্য সাতটি প্রস্তাব হচ্ছে- ১.পুষ্টিবিদদের পেশাদার মান বৃদ্ধি ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং নৈতিক অনুশীলনের ব্যবস্থা করে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের (জাতীয় লাইসেন্সিং এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা) মাধ্যমে নিবন্ধনের/ স্বীকৃতির দ্রুত ব্যবস্থা করা। নিশ্চিত করতে হবে, শুধু যোগ্য/স্বীকৃত ব্যক্তিরাই যেন পুষ্টি পরিষেবা প্রদান করেন এবং সব পরিষেবার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

২. পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও পুষ্টি শিক্ষাবিদদের জন্য পেশাদারত্ব বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি কাঠামোগত কর্মজীবনের পথ বা ধাপ দৃশ্যমান করা।

৩.স্বাস্থ্যকর খাবার ও জাঙ্ক ফুড সংস্কৃতির বিস্তার রোধে শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং খাদ্য় বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। এ জন্য স্কুল পাঠ্যক্রমে বয়স অনুযায়ী পুষ্টিবিষয়ক লেখা/প্রবন্ধ/গল্প অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিশুকে দৈনিক একবার হলেও সঠিক পুষ্টিমানের আদর্শ খাদ্য সরবরাহ করা ও সুপরিকল্পিত উপায়ে জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপনের ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণ করা।

৪.প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, জেলা হাসপাতালে এবং সম্ভব হলে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুষ্টিবিদ/স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদদের পদ সৃষ্টির জন্য সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কম ওজনের/অতি ওজনের/ স্থূল ব্যক্তিদের এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন সাপেক্ষে পুষ্টিবিদের কাছে রেফার করার জন্য চিকিৎসকদের উসাহিত করা।

৫.দেশের মানুষের পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে একটি নিজস্ব ও গ্রহণযোগ্য তথ্যভান্ডার তৈরি করা, যাতে মহামারি সংক্রান্ত তথ্য অন্বেষণ করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক নকশার ওপর ভিত্তি করে যথাযথ গবেষণা করা যায় এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল দ্বারা কৌশলগত নীতি গ্রহণ করা যায়।

৬.সাধারণ খাদ্য আউটলেটে প্রতিটি খাদ্য আইটেমের ক্যালোরি ও মান এবং অন্যান্য পুষ্টির তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। খাদ্য বিপণন প্রবিধানের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময়, স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলোকে প্রচার করা, পুষ্টি-সংবেদনশীল সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রয়োগ করা এবং স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিক্ষা জুড়ে আন্তক্ষেত্রীয় সমন্বয় জোরদার করা।

৭.সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তৈরি উপরোক্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে গৃহীত নানা কর্মসূচি নিরীক্ষণ এবং পরিমাপ করার জন্য একটি পুষ্টি তত্ত্বাবধান সংস্থা স্থাপন করে কার্যকর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বর্তমান সময়ে স্বল্প ওজন যেমন সমস্যা, তেমনি স্থূলতা কিংবা মুটিয়ে যাওয়াও সমস্যা। অন্যদিকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট কমে যাওয়া- এটা এখন আরও বড় সমস্যা। যথাযথ পুষ্টিজ্ঞান না থাকাই এর কারণ। তিনি পুষ্টিবিদদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির কথাও বলেন। প্রয়োজনে এর জন্য আলাদা কাউন্সিল তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।