আসন্ন ঈদুল আজহায় বন্দরে সীমিত পরিসরে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা রাখলেও এ কাজের সঙ্গে জড়িত অন্যরা ছুটিতে থাকায় পণ্য খালাস হয় না বললেই চলে।
ডলারসংকটের কারণে বছর দুয়েক ধরে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। আর এতে দেশে চাহিদানুযায়ী পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ফলে দেশের পণ্যসংকট রয়েছে। চাহিদামতো পণ্য না থাকায় দেশের বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আসন্ন ঈদের ছুটির ফাঁদে বন্দর থেকে পণ্য খালাস না হলে পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) মো. মাসুদ সাদিক খবরের কাগজকে বলেন, দেশের সব বন্দর খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুল্ক শাখার কর্মকর্তা থাকলেও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ছুটিতে থাকবেন। পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত অন্যরাও ছুটিতে থাকবেন। তবে দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস সচল রাখতে বেশি জোর দেওয়া হয়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো দেশের সব বন্দর খোলা থাকার কথা। তবে ঈদের মতো বড় ধর্মীয় আয়োজনে লোকবলের সংকটে স্বাভাবিকভাবে পণ্য খালাস হয় না। এতে অনেক সময় ব্যবসায়ীদের পণ্যের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকাররি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মো. গোলাম মাওলা খবরের কাগজকে বলেন, ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় উৎসবে দেশের সব বন্দর বিশেষ ব্যবস্থায় চালুর কথা থাকলেও তা হয় না। বন্দরেও লোবলের সংকট থাকে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, শুধু ঈদের দিন সকালের শিফটে আট ঘণ্টা কনটেইনার হ্যান্ডলিং ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ঈদের দিন বিকেল থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করার চেষ্টা করা হয়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেক সময় বন্দরের লোকজন ছুটিতে থাকেন। পণ্য খালাস ঠিক সময়ে করা যায় না। ফলে ভোগ্যপণ্য আনতে কিছুটা অসুবিধা হয়।
পণ্যের সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হয়। কাজেই আমাদের দাবি হলো, অন্তত শনিবার (১৫ জুন) পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রমে সহযোগিতা করলে খাতুনগঞ্জে পণ্যের সাপ্লাই চেইনে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হবে না। আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনুরোধটা করব।’
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, পঞ্চগড়ে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে চার দেশের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি- রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, ঈদুল আজহা ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ মোট ৭ দিন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে স্থলবন্দর কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় ভারতের সঙ্গে সকল প্রকার পণ্য আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও যাত্রী পারাপারের সুযোগ থাকবে।
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বুড়িমারী স্থলবন্দর ৬ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ভারত-ভুটানসহ স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন জানান, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন। এ ছাড়া অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে না আসা পর্যন্ত কোনো পণ্যও খালাস নেবেন না।
তিনি আরও বলেন, টানা ছুটির কারণে সীমান্তের দুই পাশের বন্দরে ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বেনাপোলের মতোই পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাকজট রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা ও গার্মেন্টসের কাঁচামাল আটকে থাকবে এবং উৎপাদন ব্যাহত হবে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, অন্যদিকে সরকার এই পাঁচ দিনে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানান, ১৬ জুন রবিবার থেকে ১৯ জুন বুধবার পর্যন্ত বন্দরে আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বিষয়টি দুই দেশের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে টানা ৮ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এতে বাজারে জিনিসের দাম ঊর্ধ্বগতি হতে পারে।
[এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক তারেক মাহমুদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি রনি মিয়াজী, বেনাপোল প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম, আখাউড়া প্রতিনিধি জুটন বনিক, হিলি ও পাটগ্রাম সংবাদদাতা]