ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

দিনে মিলন খান, রাতে ‘চিনি খান’!

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
দিনে মিলন খান, রাতে ‘চিনি খান’!
বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান ও ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান

সুনামগঞ্জের বোগলাবাজার ও ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যানেরই নাম মিলন খান। শুধু চেহারা ও শারীরিক গঠন ছাড়া আর আনুষঙ্গিক সব বিষয়ে তাদের মিল রয়েছে। দুজনই প্রবাসফেরত। ২০২১ সালে উভয়ই প্রথমবার ভোটে জিতে চেয়ারম্যান হন। বর্ডার হাট ও গরুর হাটের ব্যবসার সঙ্গে দুজনই জড়িত। তবে তাদের একটি গোপন পরিচয় রয়েছে। দুজনই সীমান্ত পেরিয়ে আসা চোরাই চিনির কারবারে ভাগ বসিয়েছেন। একই নামের দুজনকেই নিজ নিজ এলাকার বাসিন্দারা আড়ালে ‘চিনি খান’ বলে ডাকেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুরের সীমান্তবর্তী এই দুই ইউনিয়নে দুটি বর্ডার হাট রয়েছে। বর্ডার হাট বসার সূত্র ধরে চোরাচালান বিস্তৃত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দুটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে সীমান্ত পথ দিয়ে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার চিনি চোরাচালান হয়েছে। তখন ছিল চিনি চোরাচালানের পিক টাইম। ঘটনাস্থল ঘুরে সিলেট ব্যুরোপ্রধান উজ্জ্বল মেহেদীর বিশেষ রিপোর্ট

মিলন খান। এক নামের দুই ইউপি চেয়ারম্যান। এক মিলন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আরেকজন বিশ্বম্ভরপুরের ধনপুর ইউপির। নামের মতো তাদের ইউনিয়নের ভৌগোলিক অবস্থানেও মিল রয়েছে। দুটি ইউনিয়ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী। ওপারে মেঘালয় রাজ্যের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে পড়েছে বোগলা-ধনপুর। দুজনের নামের মিল কাকতালীয় হলেও তাদের কাজেও অনেক মিল। এসব মিলমিশের সর্বশেষ নজির হচ্ছে, দুজনের বিরুদ্ধে রয়েছে একই অভিযোগ। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট সীমান্তপথে চিনির চোরাচালানে মিলন খান নামের এ দুই ইউপি চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

দুজনই প্রবাসফেরত। ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ধনপুরের মিলন খান আফ্রিকাপ্রবাসী ছিলেন। আর বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান ছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন দুজন। নিজ ইউনিয়নে উভয়েরই গরুর হাটের ব্যবসা আছে। বর্ডার হাট পরিচালনায়ও সম্পৃক্ত দুজন। সেখানেও রয়েছে দুজনের একচ্ছত্র আধিপত্য।

দুই মিলন একই রাজনৈতিক আদর্শের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদে আছেন বোগলার মিলন। ধনপুরের মিলন দলীয় কোনো পদে নেই। দুজনই পরিচয় দেন তারা সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের ‘লোক’।

অভিযোগ রয়েছে, দুই মিলন তাদের এলাকায় চোরাচালান ঠেকানোর নামে দিনের বেলায় নানা রকম প্রচার চালান। আর রাতে চোরাচালানে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন। ইউনিয়ন পরিষদের নামে চোরাচালানের বস্তাপ্রতি উৎকোচ নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারা। ‘ইউপি-ফি’ নামে সেই টাকা উত্তোলন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চিনি চোরাচালানে দুই মিলনের সমান সক্রিয়তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে। গোয়েন্দা তালিকায় দুটি ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের নামও রয়েছে। নিজ এলাকায় দুজন ‘মিলন চেয়ারম্যান’ নামে পরিচিত হলেও চোরাচালান ও প্রভাব বিস্তারে তাদের ইউনিয়নের বাসিন্দারা কটাক্ষ করে আড়ালে দুজনকে ‘চিনি খান’ নামে ডাকেন!

রুট টু বোগলা-চিনাকান্দি
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১১ ও সুনামগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নে ৫৭টি চোরাচালানের রুট রয়েছে। চোরাচালান চক্রে পুরো ইউনিয়ন বিস্তৃত কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাতটি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের দুটি হচ্ছে বোগলা ইউনিয়নের বোগলাবাজার ও ধনপুরের চিনাকান্দি। গত ৯ মাসের চোরাচালান পর্যবেক্ষণ পরিস্থিতি সূত্রে জানা গেছে, বোগলা থেকে চিনাকান্দি রুটটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালাটের সঙ্গে যুক্ত। বোগলার ওপারে ভারতের রেঙ্গা সীমান্ত এলাকা। চিনাকান্দির ওপারে রয়েছে রাঙাছড়া। ভারতের দুই এলাকা থেকে নেমে এসেছে দুটি সীমান্ত নদী। বোগলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খাসিয়ামারা, ধনপুরে মনাইছড়া। 

জানা গেছে, এ দুটি নদী ঘিরেই চোরাচালানির রুট। এ পথে পশুসহ নানা ধরনের পণ্য বছরজুড়ে নামে। এর মধ্যে চিনি চোরাচালান শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, ধনপুর ইউনিয়ন থেকে রাজাপুর, মাছিমপুর, তাহিরপুরের লাউড়েরগড় ও দিঘারতলা সীমান্তের চোরাই পথ নিয়ন্ত্রিত হয়। বোগলা ইউনিয়ন থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় পেকপাড়া, ইদিকুনা, কইয়ারাজুরি, কলাউড়া, বাঁশতলা, মুকামছড়া, লক্ষ্মীপুরের ভাঙাপাড়া, মাঠগাঁও এলাকা। দুই ইউনিয়নে দুটি বর্ডার হাট বসার সূত্র ধরে চোরাচালান বিস্তৃত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দুটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের হিসাবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে সীমান্তপথ দিয়ে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার চিনি চোরাচালান হয়েছে।

‘চিনি খান’ যেভাবে
সুনামগঞ্জ জেলায় তিনটি বর্ডার হাট রয়েছে। প্রথমটি সুনামগঞ্জ সদরের ডলুরা। এই হাটের সঙ্গে ভারতের বালাট সীমান্ত এলাকা সংযুক্ত। দ্বিতীয় বর্ডার হচ্ছে বোগলার বাগানবাড়ি। এ হাটের সঙ্গে যুক্ত মেঘালয় রাজ্যের রিংকু এলাকা। তৃতীয় বর্ডার হাট তাহিরপুর সীমান্তের লাউড়েরগড়। এ হাটে ভারতের পশ্চিম হিল সীমান্তের সায়েদাবাদ যুক্ত। অবস্থানগত কারণে লাউড়েরগড় ও ডলুরা হাটের একাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় ধনপুর ইউনিয়ন থেকে। আর বাগানবাড়ি হাট পুরোটাই বোগলা থেকে।

স্থানীয় ইউপি সদস্যরা বলছেন, বর্ডার হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে ধনপুর ও বোগলার মিলন জড়িয়ে পড়েন চোরাই কারবারে। সরেজমিন অনুসন্ধানে বিভিন্ন মাধ্যমে চিনি চোরাচালানের একাধিক ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এসব ভিডিওর মধ্যে অধিকাংশ বোগলা ও চিনাকান্দি এলাকার। প্রতি বৃহস্পতিবার বর্ডার হাটবার শেষে রাতভর চলে চোরাই পণ্যের লেনদেন। এ সময় চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের মধ্যে কেবল চিনির আদান-প্রদান হয়।

বর্ডার হাটের জন্য কাভার্ড ভ্যানে থাকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্যের প্রতিটি কনটেইনারে ‘ইউপি-ফি’ নামে ৮০ টাকা নেওয়া হয়। চিনির বস্তাপ্রতি ‘লাইন খরচ’ বাবদ যে ৩০০ টাকা উত্তোলনের রেওয়াজ রয়েছে, সেখান থেকে ৭০ টাকা রাখা হয় ইউপি চেয়ারম্যানের নামে। নিজ ইউনিয়নে পশুর হাটে নিজের ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দুজনের। বর্ডার হাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই চেয়ারম্যানের লোকদের মধ্যে প্রায়ই বিবাদ হয়।

গত ১৪ এপ্রিল দিনে ও রাতে বিশ্বম্ভরপুরের পলাশ থেকে চিনাকান্দি হয়ে ধনপুরের স্বরূপগঞ্জ বাজারে গিয়ে সরেজমিনে চোরাচালান-চিত্র দেখা গেছে। এ সময় চোরাই চিনি পরিবহনের জন্য পলাশবাজারে রাতের বেলা রীতিমতো ট্রাকের যানজট লেগে যায়। স্বরূপগঞ্জ ও পলাশবাজারে সরেজমিন অবস্থানকালে একাধিক ব্যক্তিকে তখন মিলনকে ‘চিনি খান’ বলে অভিহিত করতে দেখা গেছে। 

২৮ মে ছাতকের নোয়ারাই হয়ে বাংলাবাজার ও বোগলাবাজার ঘুরে ‘ইউপি-ফি’ উত্তোলন-চিত্র প্রায় প্রকাশ্যেই দেখা গেছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দুটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের নির্ধারিত কক্ষ। বিভিন্ন সূত্রসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জানা গেছে, দুই ইউপি চেয়ারম্যান সপ্তাহান্তে ১৫ থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কেবল চোরাচালানের নিরাপদ পথনির্দেশনা থেকে। এর মধ্যে বোগলা ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খানের একটি সমবায় সমিতির মাধ্যমে চোরাই কারবারে আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে। গত ৯ মাসে সমিতির মাধ্যমে ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে টাকা আদায় হয়েছে। চোরাই চিনি খাতে আর্থিক বিনিয়োগের জন্য মিলন খানের আরেক পরিচিতি ‘চিনি খান’।

পছন্দ ‘ক্যাশ’ টাকা
দুই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, তাদের হাতে প্রচুর ক্যাশ টাকা রয়েছে। চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণে যখন তখন টাকার দরকার পড়ে বলে ক্যাশ টাকা নিয়েই ঘোরেন তারা। বোগলার মিলন খানের ক্যাশ টাকার কিছু অংশ সংরক্ষিত রয়েছে সমবায় সমিতিতে। এ সমিতি চক্রবৃদ্ধি সুদের সমিতি। নাম ‘স্বপ্ন’। ২০২১ সালের নির্বাচনে মিলন খান বোগলা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়ে হেরে যান। ২০১৬ ও ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ‘স্বপ্ন’ নামের সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন অবশ্য এটা অনেকটা গুটিয়ে রেখেছেন। ‘স্বপ্ন’সংশ্লিষ্ট দুজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে ‘স্বপ্ন’ কার্যক্রমকে ‘সুদের জাল’ বলে চিহ্নিত করেন। তারা বলেন, ‘মিলন চেয়ারম্যান ভোটে জিতেছেন স্বপ্নের জাল ফেলে। এখন এটি গুটিয়ে এককভাবে চোরাচালানে নিমজ্জিত করে রেখেছেন। তার ক্যাশ টাকার শক্তি এটিই।’
 
‘আমার ইউনিয়ন চোরাচালানমুক্ত’
দিনের বেলা অনেক চেষ্টা করেও দুজনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বোগলা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খানের ফোন নম্বরে কল ঢুকলেও ফোন রিসিভ হচ্ছিল না। স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ফোনের মাধ্যমে সরাসরি কথা হয়।

গরু নিয়ে জানতে চাইলে মিলন বিস্তারিত মন্তব্য করলেও চিনি প্রসঙ্গ তুললেই তার কথা বলার ধরন পাল্টে যায়। জবাব দেন সংক্ষিপ্ত। ফোন রেখে দেওয়ার তাগাদা দিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে এলাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান। ‘চিনি খান’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কতজনই তো কত কথা কয়! এসব শুনলে কাজ করা যায় না।’ 

বর্ডার হাট ও স্থানীয় গরুর হাটে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি মিলন অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, দেশি গরু প্রতিপালন করে আমাদের হাটে গরু তোলা হয়। একটা গরুও ইন্ডিয়ান পাবেন না। আমার ইউনিয়ন চোরাচালানমুক্ত আছি, এটাই। এর বেশি কিছু নাই।’ 

কথা বলার সময় মিলন তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এড়িয়ে যান। ‘স্বপ্ন’ নামের সমিতির বিষয়টিও এড়িয়ে যেতে কথা বলার মধ্যেই তিনি ফোন কেটে দেন।

‘কে কয় চিনি খাই?’
ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খানও দিনের চেয়ে রাতে বেশি ব্যস্ত থাকেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ফোন করলে তিনি জরুরি একটি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ১০ মিনিট পর ফোন দিতে বলেন। এরপর ১০ মিনিট গড়িয়ে আধা ঘণ্টা পর ফোন দিলে তাকে ব্যস্ত পাওয়া যায়। শেষে রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়। 

বোগলার মিলনের মতো ধনপুরের মিলনেরও দাবি, তার এলাকায় আগে চোরাচালান হতো, এখন হয় না। কেন হয় না? এ প্রশ্নে বলেন, ‘মুক্ত করে রাখছি!’ তিনি জানান, এক-দুই মাস তার ইউনিয়নে চিনির চোরাচালান হয়েছিল। এরপর চিনির সঙ্গে মাদক ও অস্ত্র আসার বিষয়টি তিনি নিজে দেখে এসব বন্ধ করে দিয়েছেন। লোকমুখে ‘চিনি খান’ প্রসঙ্গে মিলন বলেন, ‘কে কয় আমি চিনি খাই? খাই না বইলাই কয়। আপনি এত কিছু কই থাকি পাইলেন! সব ভুয়া কথা।’

বর্ডার হাট দেখিয়ে চোরাচালান হচ্ছে- এ প্রশ্নে তিনি কিছুটা রেগে যান। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ধরে বলেন, ‘এগুলো তারাই বিভ্রান্ত করে। কিছু চোরাচালান হইতেছে, এসব রাইতের দুইটা-তিনটায়। আমি তখন ঘুমিয়ে থাকি। প্রচুর চেষ্টা করতাছি ভাই! পারতাছি না। এই কদিন আগে ডলুরায় মারামারি পর্যন্ত অইছে।’

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কড়া হুঁশিয়ারি
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের সঙ্গে দুই মিলন খানের বিষয়ে কথা হয়। তিনিও জানান, এ দুজনের বিরুদ্ধে সীমান্তে চোরাচালানসহ নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিতে দুই মিলন তার ‘লোক’ পরিচয় প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলা পরিষদের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের যোগাযোগ তো থাকেই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক কারণে সব জনপ্রতিনিধিই তো আমার লোক। তবে এই পরিচয়ে কোনো ক্রাইম বরদাশত করব না। কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় আমি বহন করব না। আওয়ামী লীগও বহন করবে না।’

দেশ ছাড়ছেন মেধাবীরা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৪ এএম
দেশ ছাড়ছেন মেধাবীরা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ধনী ও উচ্চবিত্ত পরিবারের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের বিদেশে পড়াশোনার ঝোঁক সব সময়ই কম-বেশি ছিল। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ন্যূনতম মেধা ও সামর্থ্য রয়েছে, এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা আজকাল দেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। একটা সময় মাস্টার্স করতে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাওয়ার চিন্তা করলেও এখন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতেই বিদেশমুখী হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। নানা কারণে তারা দেশে থাকার বিষয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। তা ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক মানদণ্ডে অবস্থান ক্রমেই নিম্নমুখী হওয়ার কারণেও বিদেশমুখী প্রবণতা বাড়ছে ছাত্রছাত্রীদের। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা, উপযুক্ত মর্যাদা ও চাকরির সংকট থাকায় বিদেশে গিয়ে অনেকে ফিরছেন না। ফলে দেশ থেকে ডলার যেমন চলে যাচ্ছে, আবার ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে ফেরত না আসার প্রবণতাও বাড়ছে। এ কারণে দক্ষ ও মেধাবীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দায়িত্ব নেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনে দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর কথা বলছিলেন। এ ক্ষেত্রে বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ কয়েকজন ফিরে এলেও সেটি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বছরে ৫০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী দেশ ছাড়ছেন, যা ১০ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই প্রবণতার জন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কমে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে দেশপ্রেমের নিম্নগতি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করলাম, দেশ স্বাধীন করলাম, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা শাসনক্ষমতায় গেছেন তারা ধনী লোক। বুর্জোয়া শ্রেণি। দেশপ্রেম দেখা গেল না। তারা ধনী হওয়ার জন্য অসৎ উপায় দুর্নীতি, লুটপাট- এগুলো করতে থাকলেন।’

তিনি বলেন, ‘তিন ধারার শিক্ষা তো এক ধারায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং তিন ধারা আরও বিভক্ত হলো। তার কারণ হলো ইংরেজি মাধ্যমে যারা ধনী তাদের ছেলেমেয়েরা পড়বে, মধ্যবিত্তরা বাংলা মাধ্যমে এবং গরিবরা মাদ্রাসায় পড়বে এ রকম একটা শ্রেণি বিভাজন দাঁড়িয়ে গেল। যারা উচ্চবিত্ত তারা কিন্তু দেশের শিক্ষার মান উন্নত করার ব্যাপারে আগ্রহী না। কেননা, তাদের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। এই মাধ্যমে পড়ার পরে তারা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আর যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিদেশে পাঠিয়ে দেন। এটা দেশের সম্পদ পাচারের মতো ব্যাপার। ধনীরা বিদেশে বাড়িঘর করছেন। দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই। কাজেই তাদের সব বিনিয়োগ এই অর্থে সন্তানের ভবিষ্যৎ, নিজেদের বাড়িঘর এগুলো তারা বিদেশে করতে থাকবেন।’ 

বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘যারা মধ্যবিত্ত তারাও এই উচ্চবিত্তদের দেখে এই রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা করল। যেহেতু বিত্তবানদের ছেলেমেয়েরা বাংলা মাধ্যমে পড়বে না। ফলে মূলধারাকে উন্নত করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ দেখা যাবে না। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত তাদের ছেলেমেয়েরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। ধনীদের সন্তানরা প্রাইভেটে যাবে বা বাইরে যাবে। এখন যারা প্রাইভেটে ভালো পড়ালেখা হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারাই সন্তানদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন। এটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাষ্ট্র যেভাবে সম্পদ পাচারে বাধা দিচ্ছে না, একইভাবে তারা ছেলেমেয়েদের বিদেশ পাঠাতে বাধা দিচ্ছে না।’ 

মেধাবীদের এই বিদেশমুখী প্রবণতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে উপযুক্ত চাকরির অনিশ্চয়তা এবং অত্যধিক প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ইদানীং আরও অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপর থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে সেটি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

রাজনীতিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার সূত্র ধরে আবার গুম-খুন বা মামলার ঝুঁকি থাকে। সব মিলিয়ে অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে থাকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এ কারণে মধ্যবিত্তরা তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও সন্তানদের বিদেশে পড়ানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন। জুলাই আন্দোলনে শুধু রাজধানী ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৯৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হন। এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ‘ফেসবুকে সন্তান কী লিখছে,’ ‘জঙ্গিবাদের অভিযোগ উঠল কি না’, এমন আতঙ্কের পাশাপাশি গুম-খুনের আতঙ্কে থাকতে হতো অভিভাবক মহলকে। 

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, কোনো সরকার তাদের (মেধাবীদের) ফেরাতে চায়নি। এখনো চায় না। যারা বাইরে চলে যেতে চায় এটা তাদের অধিকার। আমাদের রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধান ঠিকমতো হয় না। আইনের শাসনের ঘাটতি রয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার মতো অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে। আমাদের দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত বছরের জুলাইয়ে চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে আন্দোলনে নামেন তরুণরা। পরিসংখ্যান বলছে, পর্যাপ্ত চাকরির অভাবে দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। বাংলাদেশ শ্রমশক্তির রিপোর্ট অনুযায়ী বেকারদের মধ্যে ৩১ শতাংশই অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্নকারী। ২০১৭ সালে যেখানে উচ্চশিক্ষিত বেকার ছিল ৪ লাখ, তা দ্বিগুণ হয় পাঁচ বছরে। এই পরিসংখ্যানের সত্যতা পাওয়া যায় সরকারি চাকরিতে আবেদন দেখলে। সর্বশেষ বিসিএস ৪৭তম প্রিলিমিনারিতে অংশ নিতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন। আগের দুই বিসিএসও এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখের বেশি। 

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এখনো গ্রহণযোগ্য কোনো পদ্ধতিই নেই। নিজেদের অনুগত ও পছন্দের লোকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে। উপযুক্ত শিক্ষক না থাকার এ আলোচনা সর্বত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করায় অনেক মেধাবীই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনা করে পরবর্তী সময়ে তারা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু তারা এই দেশে শিক্ষক হওয়ার জন্য বিবেচিত হন না। অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের শিকার হন। আবার যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে গবেষণাসহ অন্য কাজ যথাযথভাবে করতে পারেন না। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ও মান দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অনেকে শিক্ষাছুটি নিয়ে বিদেশে পড়তে গিয়েও ফেরত আসেন না। যার কারণে তাদের পেছনে করা রাষ্ট্রের বিনিয়োগও বিফলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেকেই গুগল, নাসা, মাইক্রোসফটসহ বিদেশে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পাচ্ছেন, যাদের বেতনকাঠামো বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির যেকোনো চাকরির তুলনায় কয়েক গুণ। এর সুবিধা হলো পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েরা বিদেশে সফলভাবে দাঁড়াতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজনকে সে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান। সব মিলিয়ে নিশ্চিত জীবনের আশায় মেধাবীরা দেশ ছাড়ছেন। 

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতেও বিদেশে

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ল্যাব ও গবেষণাসহ অন্য সুবিধাগুলো কম। একাধিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেগুলোর মান তলানিতে। নতুন স্থাপিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখনো ভাড়া বাসায়। নেই দক্ষ শিক্ষক। অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কম সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। অন্যদিকে বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাগ্রহণ শেষে উচ্চ বেতনে তারা চাকরি লাভ করেন। অনেকে এমন বেতন পান যেটি বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় চাকরির তুলনায় বহু গুণ বেশি। এর সঙ্গে আরকটি সুবিধা হলো সন্তান বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি করলে অনেক ক্ষেত্রে দেশ থেকে তার অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজনরা সেখানে বসবাসের সুযোগ পান। এসব কারণে সামর্থ্যবানরা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতেই ছেলেমেয়েদের আজকাল বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। মান কমে যাওয়ায় রাজধানীর অনেক কলেজে এখন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। তারা ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি শিক্ষাব্যবস্থার মান বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ, চাকরির সুযোগ বাড়ানো হয়, তাহলেই বিদেশমুখী প্রবণতা কমে আসবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। এটাকে জাতীয় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

মেধাবীদের ফেরাতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন

সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর একটি প্রেজেন্টেশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। অনেকেই মনে করছেন, আশিক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু আশিক চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকেও ডিগ্রি নেন। কর্মরত ছিলেন সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ফোন কল পেয়ে দেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেন।

শুধু আশিক চৌধুরীই নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন ও মেধাবী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা চাইলে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। সচেতন সমাজ মনে করছে, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়, তেমনি মেধাবীদেরও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাহলে যোগ্যরা দেশ গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মেধা পাচারের বিষয়টা পৃথিবীর উন্নয়নশীল বেশির ভাগ দেশেই কম-বেশি আছে। ফিলিপিন্স থেকে শুরু করে মধ্যম আয়ের দেশেও আছে। তবে কেউ কেউ রিভার্স করেছে। ভারত কিন্তু এটা করছে। তাদের বেশির ভাগ ফেরত আসছে। যারা পড়তে গিয়েছিলেন তারা যোগ্য হয়েই দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টো চিত্র।’ 

তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা শুধু লেখাপড়া বাইরে ভালো বলে যান না, উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া শেষে কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করেন। দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তারা ভাবছেন বাইরে গেলে কিছু একটা করতে পারবেন। শিক্ষার মান এবং কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা তো রয়েছে। এখন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটাতেও পর্যাপ্ত সুযোগ কিংবা পরিবেশ নেই। এই পরিবেশ যদি আমরা তৈরি করতে পারি তাহলে আগামীতে ভালো কিছু হবে।’

করিডর সুবিধা দেওয়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৫ এএম
করিডর সুবিধা দেওয়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মায়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে ত্রাণ-সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্ত সাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দলটি। সোমবার (২৮ এপিল) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

নির্ভযোগ্য সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, করিডর সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। একদিকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় তারা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আবার করিডর সুবিধা দিলে নতুন সংকট তৈরি হবে, যা দেশের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হবে। এই সরকারের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।

সূত্র আরও জানায়, এই সরকার অনির্বাচিত সরকার, তারা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়ে এত বড় চুক্তির করার কে? করিডর চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই সরকার কোনো রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রের বিষয়ে কথা বলা তো কোনো সরকারের বিরুদ্ধে বলা নয়, এটা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়। মৌলিকভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি- বাংলাদেশের ভূখণ্ড তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভঙ্গ করেছে এই সরকার।

৬০টি শর্তে করিডর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আজ একটা খবর দেখে চিন্তিত হলাম। বাংলাদেশের যে বৈদেশিক উপদেষ্টা তৌহিদ সাহেব, তিনি বলছেন, ‘আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা একটা হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ, মানবিক একটা প্যাসেজ দিতে চাচ্ছি।’ অনেক কঠিন কথা, বোঝানো মুশকিল হচ্ছে। অর্থাৎ ওখানে (রাখাইন) যাওয়া যায় না তো, এখন আমাদের বাংলাদেশের চিটাগাং দিয়ে যাওয়া যাবে। ওখানে গিয়ে যোগাযোগ করা যাবে। এখন যোগাযোগ করার জন্য তারা এখন ওখানে হিউম্যানিটরিয়ান প্যাসেজ দিচ্ছে।”

বৈঠকে দুজন সদস্য বলেছেন, ‘যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম থেকে রাখাইন রাজ্যে করিডর দেওয়ার বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছেন না। এটার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর ফলে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ রাখাইন রাজ্য নিয়ে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই বিদেশি শক্তির একটা পরিকল্পনা রয়েছে। ওই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার ভাবনা রয়েছে তাদের। একদিকে আমরা মায়ানমারে রোহিঙ্গা ফেরত দেব, অন্যদিকে রাখাইনে করিডর সুবিধা দেব। এটা তো হতে পারে না। করিডর ইস্যুতে শিগগিরিই সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।’

বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েল যে শুধু বোমা ফেলছে, তা-ই না? ওখানে জাতিসংঘ থেকে খাবার, ওষুধ- এসব পাঠাতে হলে জর্দান অথবা মিসর থেকে রাস্তা তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা, এটা মানবিক কারণে দরকার আছে। তবে আমাদের প্রশ্ন, আজ বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো কেন যে বাংলাদেশকে একটা মানবিক প্যাসেজ দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। আমরা আরেকটা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। বাংলাদেশে এসে কেউ এসে গোলমাল করুক, সেটিও আমরা চাই না। একে তো আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় আছি, তার ওপর মানবিক প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আলোচনা করে চুক্তিতে যাওয়া উচিত ছিল।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব ছিল এই বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা। কথা না বলে তারা (সরকার) এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে।’

এ ছাড়া বৈঠকে আগামীকাল পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ সফল করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়বস্তুও তুলে ধরা হয়।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান (ভার্চুয়ালি), নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ (ভার্চুয়ালি), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (ভার্চুয়ালি)। 

এনবিআরের নজরদারি আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০০ এএম
আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এবার বড় মাপের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ নথি তলব করা হয়। একই সঙ্গে গত ছয় মাসে কোন ব্যবসায়ী কী পরিমাণ কত দামে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন তার তথ্য সংগ্রহ করছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করা হলেও দাম বেড়েছে এমন সব পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছেন। এরা সিন্ডিকেট করে এ কাজ করছেন। এতে সাধারণ আয়ের মানুষ কষ্টে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে আমরা পেঁয়াজ ব্যবসায় যারা সিন্ডিকেট করছেন বলে সন্দেহ করছি, তাদের কর নথি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তাদের কর ফাঁকি খোঁজা হচ্ছে। এনবিআরের অন্যান্য গোয়েন্দা শাখা থেকেও একইভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি এসব সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বাজারে এর সুফল পড়বে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। সারা দেশের কর অঞ্চল থেকে এসব নথি ঢাকায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে আনা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা আছেন এ তালিকায়।

দীর্ঘ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ভরা মৌসুমেই বাড়ছে দাম। ঈদের আগে কেজিতে ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬৫-৭০ টাকার কমে মেলে না। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে এই অজুহাতে দেশের বাজারে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন বাজারেও বাড়ছে দাম। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কাজটা করেন। বাধ্য হয়ে সরকার গত বছর খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করে। এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলে দাম কমতে থাকে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করি তাদেরও দুর্নাম হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ালে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশা করছি।

দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই এই দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হারুন রশিদও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজার, নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হলেও পেঁয়াজের বাজারে চলে নৈরাজ্য। পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে থাকেন।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৬৫ টাকায়।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সূত্র মতে, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। তারপরও বছরে কমবেশি আমদানি করা হয় ৯ থেকে ১১ লাখ টন। পেঁয়াজের দাম গত অক্টোবরে লাগামহীন হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। এরপর থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ে। আবার দেশেও মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ে। এ জন্য দাম কমে। তবে হালি পেঁয়াজ উঠার পরও অধিকাংশ বাজারে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মিথ্যা তথ্যে ভোটার হয়ে ইসির হাতে ধরা খেয়েছে কিশোর মো. আরাফাত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নামাপুটিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় আরাফাত এবং প্রতিবেশী ভাই জহিরুল ইসলাম জুয়েলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট (তথ্য ব্যবস্থাপনা) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে তিনি জানান, আরাফাতের প্রকৃত জন্মসাল ২০১০, বয়স ১৫ বছর। তার বয়স ২২ বছর করতে ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে আপলোড করা হয় এবং ছবি, চোখের আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অন্য লোকের। এ বিষয়ে ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর খবরের কাগজকে জানান, ঘটনায় আটক ২ জনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় গিয়ে কাঁদতে দেখা যায় আরাফাতকে। জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, তার এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি আপলোড করা হয়েছে, যাকে তিনি চিনেন না। প্রতিবেশী ভাই জহিরুল তাকে ইসিতে ছবি পরিবর্তন করার জন্য নিয়ে এসেছেন। আরাফাতকে প্রশ্ন করা হয়, সে কীভাবে ভোটার হলো? জবাবে সে বলেছে, ‘আমার ফুপাতো বাইয়ে কইছে যে বিদ্যাশ (কাতার) নিব। আমি হেরে কইছি আইডি কার্ড করন লাগব? হেয় লগে লগে কইছে কইরা দিব।’

আকুতি জানিয়ে আরাফাত বলে, ‘আপা, আমি তারে জোরাজুরি করি নাই। আমি এইট পর্যন্ত পড়ছি। আমার বাবাও বিদ্যাশ থাকে, সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে গিয়ে সে এখনো কাজ পায়নি। আমরা ৩ ভাই এক বোন। অভাবের সংসারে মা আমারেও বিদ্যাশ পাঠাইতে চায়। তাই অই ভাইয়ের কথায় ভোটার হওয়ার আবেদন করি। কাতার পাঠাবে বইলা ভাই আমারে ভোটার হইতে বলে। কারণ এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারুম না, বিদ্যাশে যাইতে পারুম না।’

আরাফাত জানায়, এক মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদের আগেই পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিস থেকে তার ভাই ভোটার হওয়ার আবেদন করিয়ে দেন। তার আগে জহিরুল আরাফাতের ২২ বছরের ভুয়া জন্মসনদ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র বানিয়ে দেন। আরাফাতের এনআইডির আবেদন করাতে জহিরুল স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির সহায়তা নেন। এসব কাজের জন্য এ পর্যন্ত খরচ হিসেবে নেন ৯ হাজার টাকা। তবে পরে জহিরুল রকিকে ভাগের টাকা না দেওয়ায় সে আরাফাতের ছবি ও বায়োমেট্রিক না নিয়ে প্রক্সি হিসেবে অন্য লোকের এসব তথ্য ব্যবহার করে। পরে আরাফাত এনআইডিতে নিজের ছবির বদলে অন্য লোকের ছবি দেখতে পায়। 

এ ঘটনার ব্যাপারে জহিরুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আরাফাতের মায়ের কথায় তিনি এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন। দালাল নন এমন দাবি করে তিনি বলেন, পেশায় তিনি স্থানীয় ভূমি অফিসের আমিন। কৃষিকাজও করেন। আরাফাত সম্পর্কে তার বউয়ের মামাতো ভাই। বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ করতে টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির কাজটি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে আরাফাতের ছবির বদলে এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি বায়োমেট্রিকে আপলোড করা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জহিরুল। বিদেশে লোক পাঠাতে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তার কোনো কাজের সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন জহিরুল।

আইনে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার শাস্তি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো নাগরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি, কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলা করলে সেটা এই আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অনূর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আরাফাতের ভোটার হওয়ার বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ খবরের কাগজকে জানান, আরাফাত নামে কোনো কিশোর বা ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। 

আপনার অফিসের ঝাড়ুদার (রকি) এর মাধ্যমে কোনো কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নলেজে নেই। আমি জানিও না। ঢাকা অফিসে যেহেতু তথ্য চলে গেছে, সেখান থেকে নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও দায়িত্বে অবহেলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। গতকাল সোমবার তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরাফাত নামের ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি বয়স বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন অফিসে গতকাল সে তার ছবি পরিবর্তনের জন্য এলে এনআইডির তথ্য ও ছবি, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে থাকা বয়স আর সরাসরি তাকে দেখে আমাদের কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি জানায়, কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর আগেই আরাফাত ভোটার হওয়ার আবেদন করতে যায়। কিন্তু বয়স কম থাকায় কর্মকর্তা তাকে ভোটার বানানো যাবে না বলে জানান। পরে সে এক প্রতিবেশী ভাই জহিরুলের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে আবেদন করে। এ কাজ করিয়ে দিতে তার সেই ভাই দালালের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকিকে টাকা দেন। কিন্তু রকি সেই টাকা না পেয়ে অন্য লোকের ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে এনআইডির কাজ শেষ করেন।’ 

এনআইডি শাখার মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ইসিতে ছবি সংশোধন করতে আসা আরাফাতের ভোটার হওয়ার ঘটনা আমরা জানতে পারি। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অফিসে আসা দুজনের সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। আরাফাতের আবেদন এ পর্যায়ে লক করে রাখা হবে। অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের কারসাজিতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরাফাতসহ জালিয়াতিতে জড়িত তার প্রতিবেশী ভাই জহিরুল, স্থানীয় অফিসের ঝাড়ুদার এবং কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।

এমন চিত্র বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন।

তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। 

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।