ঢাকা ২৮ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২ এএম
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে
মাঝারি বৃষ্টিতে মহাসড়কে জলাবদ্ধতা। ছবি: খবরের কাগজ

দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছরে শুধু পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়ে গেছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যাবতীয় কার্যক্রম। যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলোও কবে বাস্তবায়ন হবে তা বলতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। 

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন বুঝে নেওয়ার পর চার বছর পার হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার উন্নতি হয়নি বলেই মনে করেন নগরবাসী। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এখনো রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ফলে নগরবাসী নতুন করে জলাবদ্ধতার শিকার হতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দরকার। পূর্ণাঙ্গ ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সেটা না করে যেটুকু প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ছিল, তাও ধ্বংস করা হয়েছে।’

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসা খাল হস্তান্তরের সময় জানা যায়, রাজধানীতে মাত্র ২৬টি খাল রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ডিএনসিসির ৩০টি এবং ডিএসসিসির ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৬৯টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর দুই সিটি করপোরেশনের নর্দমা রয়েছে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার পর রুটিনমাফিক উচ্ছেদে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়। 

তবে দুই মেয়র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বাইরে নগরবাসীর দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, খালে বর্জ্য ফেলে নগরবাসী। নির্বিচারে খাল দখল করে। এগুলোর অবসান হওয়ার দরকার। 

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম খাল উদ্ধারে ‘কলাগাছ থেরাপি’র কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাড়ির বর্জ্য যেসব পাইপের মধ্য দিয়ে খালে ফেলা হয়, সেই প্রতিটি পাইপে কলাগাছ ঢুকাতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। আমার ব্যর্থতা এখানে। কারণ কীভাবে বারিধারা, গুলশানের লোকেরা খালের মধ্যে কালো বর্জ্য দিয়ে দিচ্ছে। এটি অত্যন্ত কষ্ট লাগে আমার।’

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘খাল দখলের সময় খেয়াল থাকে। জলাশয় আইন অনুযায়ী দখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করতে গেলে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যাবে। লাঠিপেটা বা তদারকি করে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া যায় না। একজন নাগরিক হিসেবে যদি দুর্নীতিমুক্ত হতে না পারি, তাহলে কিছুই হবে না।’

ডিএনসিসির যত পরিকল্পনা

খালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর প্রথমেই সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এই কাজ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সীমানা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়। সিএস, আরএস আবার কোথাও মহানগর জরিপ ধরে খালের সীমানা নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ অবস্থায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে ডিএনসিসি। টাস্কফোর্স কয়েকটি সভাও করেছে। এখনো সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়নি। 

ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল বুঝে নেওয়া পর ওয়াসার আগের কিছু জনবল নিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু অন্তর্কোন্দল দেখা দেওয়ায় এসব জনবল ওয়াসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরপর ড্রেনেজ সার্কেল গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয় ডিএনসিসি। সেই প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো ফিডব্যাক এখনো দেয়নি। এ ছাড়া ডিএনসিসি খালগুলোর আধুনিকায়নেও একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। 

ডিএসসিসির যত পরিকল্পনা

ডিএসসিসির ৩৯টি খালের মধ্যে ডিএনডি এলাকায় আছে ১৫টি। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই খালগুলোও ডিএসসিসিকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

ঢাকার বড় একটি অংশের বৃষ্টির পানি মান্ডা, জিরানী, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল হয়ে নিষ্কাশন হয়। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালগুলো আসলে বাস্তবে নেই। আছে কাগজে-কলমে। এসব খাল উদ্ধারে ৮৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ কোথাও কোথাও শুরুও হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ১৮টি খাল বুঝে নেওয়ার পর মাত্র চারটি খাল নিয়ে পরিকল্পনা করে এগিয়েছে সংস্থাটি। বাকি খালগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে রুটিন পরিচর্যা না হওয়ায় সেই খালগুলোও আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে উদ্ধার ও খনন ডিএসসিসির ভালো একটি কাজ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলমুক্তকরণ এবং অন্যান্য কাজ কবে শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না। 

ডিএসসিসি নর্দমা ও খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি প্রয়োজনের আলোকে মাস্টার ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রাথমিকভাবে নিউ মার্কেট থেকে পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তর প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, বংশাল এলাকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা, জুরাইন ও শ্যামপুর এলাকায় মাস্টার ড্রেন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

ডিএনসিসির মতো ডিএসসিসিও দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরেও ড্রেনেজ সার্কেল তৈরি করতে পারেনি। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।

রামেবির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রকল্প জমির ক্ষতিপূরণ পাননি ৫ শতাধিক মালিক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
জমির ক্ষতিপূরণ পাননি ৫ শতাধিক মালিক
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের উত্তরাঞ্চলের মেডিকেল শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রসারে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি)। প্রতিষ্ঠিতার পর থেকে অস্থায়ী ভবনে কার্যক্রম চলাচ্ছে রামেবি। তবে ২০২২ সালের ১৪ জুন রামেবির স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এরপর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে রাজশাহীর পবা উপজেলার সিটি হাটসংলগ্ন বাজে সিলিন্দা এলাকায় ৬৭.৬৭৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। শতক প্রতি ১৭ লাখ টাকা হারে ৭৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে গত ২৪ মার্চ জমির দখল বুঝে নেয় রামেবি কর্তৃপক্ষ। তবে রামেবি জমির সব টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করলেও এখনো ৫ শতাধিক জমির মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী মালিকরা অনেক আগে তাদের জমির টাকা বুঝে নিলেও নানা অজুহাতে সাধারণ মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

রামেবি প্রশাসন সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দেশের দ্বিতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলো রামেবি। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১ হাজার ২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি অনুষদের অধীনে ৬৮টি বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া দেয়া হবে। এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা সেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলবে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২৪ মার্চ অর্থ পরিশোধ করে জমির দখল বুঝে নিয়েছে রামেবি। এখন জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, উপাচার্যের বাংলো, ডাক্তার ও নার্সিং হোস্টেল, মরচুয়ারিসহ গুরুত্বপূর্ণ ২১টি ভবন নির্মাণ করা হবে। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বাজে সিলিন্দা এলাকায় ৩টি মৌজায় ৬৭.৬৭৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করেছে রামেবি কর্তৃপক্ষ। তবে জমির মালিকদের ধাপে ধাপে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯৪ মালিককে ক্ষতিপূরণের ৪৩২ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৭২৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখনো ৫ শতাধিক জমির মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের ৩৬৬ কোটি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৩ টাকা বুঝে পাননি। কারণ অধিগ্রহণ করা জমিগুলোর মধ্যে কয়েকটি দাগে ৩টা মামলা ছিল। ফলে যে দাগ-খতিয়ানে মামলা রয়েছে, সেগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়নি। এর বাইরে কয়েকজন মালিকের দুই-একটি কাগজ কম থাকায় তাদেরও ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে আছে। তবে সব কাগজপত্র ঠিক থাকা ২০-২৫ জন মালিকের বিল দ্রুতই দেওয়া হবে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জমির মালিক জানান, জমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ধীর গতিতে অর্থ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। একজন মালিকের জমিতে সমস্যা থাকলে ওই দাগের সব মালিকের অর্থছাড় আটকে রাখা হচ্ছে। আবার, রাজনৈতিক-প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়মের তোয়াক্কায় করা হয়নি। এ ছাড়া সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও অনেক মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এতে জমির মালিকানা ছেড়ে দেওয়ায় সাধারণ মালিকদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মো. রেজাউল করিম বলেন, ধাপে ধাপে টাকা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ মালিকই কোনো ভোগান্তি ছাড়াই তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পেয়েছেন। তবে তিনটি মামলায় যে দাগগুলো রয়েছে সেগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। আবার, কিছু ব্যক্তির দুই-একটা কাগজ কম থাকায় তারাও টাকা পাননি।
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভাড়া বাসাতেই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সফলভাবে এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) কোর্স সফলভাবে পরিচালনা করছে রামেবি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে রাজশাহী, রংপুরের সরকারি-বেসরকারি ৬৯টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, বিএসসি নার্সিং এবং মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ডেটা এন্ট্রি, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সব কার্যক্রম ডিজিটালভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীন পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর কোর্সও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ৭০০ চিকিৎসক বের হবেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ হলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

আসামি শেখ হাসিনাসহ ১৩০ ‘গুলিতে নিহত’ ব্যক্তি থানায় হাজির

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
‘গুলিতে নিহত’ ব্যক্তি থানায় হাজির
আল আমিন। ছবি: খবরের কাগজ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকায় গুলিতে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় ছিল অজ্ঞাত। সেই অজ্ঞাতকে নিজের স্বামী আল আমিন (৩৪) দাবি করে হত্যা মামলা করেন কুলসুম বেগম (২১) নামে এক নারী। গত ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করা হয়। 

এদিকে ওই মামলার এজাহারের একটি কপি হাতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান বাদী কলসুমের স্বামী আল আমিন। তিনি ‘গুলিতে নিহত’ হয়েছেন দাবি করে স্ত্রী মামলা করায় হত্যার শিকার হতে পারেন আশঙ্কায় আত্মগোপন করেন। এরপর আশুলিয়া থানার পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলে আল আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হন। ‘আমি মরি নাই...’ বলে পুলিশকে তিনি পুরো ঘটনা জানান।
 
গতকাল ভোরে আল আমিন দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হলে তাকে মামলার একজন ‘ভিকটিম’ হিসেবে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ওই দিনই আশুলিয়া থানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন। 

স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে জানিয়ে ওসি আবুল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আল আমিন দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা। জুলাই মাসে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। এর আগে আশুলিয়া এলাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকরি সূত্রে স্থানান্তরিত হয়ে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় বসবাস করছিলেন। এ সময় স্ত্রী কলসুমের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণে স্ত্রী বাবার বাড়ি থাকতেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আল আমিনকে নিহত উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়েছে।’ 

মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, বাদী কুলসুম মামলায় নিজের পরিচয়ের সঙ্গে স্বামী আল আমিনকে ‘মৃত’ উল্লেখ করেছেন। এজাহারে বাদী যে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন, তাতে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আল আমিন গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে আশুলিয়ার বাইপাস মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এজাহারে আল আমিনের লাশ শনাক্ত ও দাফনেরও বর্ণনা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর স্বামী আল আমিনকে খোঁজাখুঁজি করে ৬ আগস্ট লাশের সন্ধান পান আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে জানতে পারেন অনেক অজ্ঞাত পরিচয় লাশের সঙ্গে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার দরগারপাড় কবরস্থানে আল আমিনকেও দাফন করা হয়েছে। আল আমিনের ছবি, ভিডিও দেখে লাশ শনাক্ত করার পর আশুলিয়া থানায় যান মামলা করতে। পরে পুলিশের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন। ঘটনার প্রায় দুই মাস গড়িয়ে মামলা করা প্রসঙ্গে এজাহারে বলা হয়, ‘বাদিনী স্বামীশোকে কাতর থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে।’  

এদিকে আল আমিন পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমার ভাই তিন দিন আগে আমাকে বলেছে। বিষয়টি নিয়ে কুলসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু সে এড়িয়ে যায়। এরপর থানার পুলিশে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। এ সময়ের মধ্যে আমার ভাই পালিয়ে বেড়িয়েছে। শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তায় তাকে দক্ষিণ সুরমা থানায় আসতে বলি।’

পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের মামলার এজাহারে বাদীর নাম ও স্ত্রীর ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করেন।

আল আমিন বলেন, ‘আমি মরিনি। আমি বেঁচে আছি! আমার স্ত্রী এ ঘটনা ঘটাইছে!’ স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আল আমিন বলেন, দেশে আন্দোলনের পুরোটা সময় আমি স্ত্রীকে নিয়ে জুড়ীতে ছিলাম। সে সময় একবারের জন্যও আশুলিয়ায় যাইনি। অথচ আমাকে নিহত দাবি করে মিথ্যা মামলা করেছেন আমার স্ত্রী। কোন উদ্দেশ্যে তিনি আমাকে নিহত প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, পুলিশি তদন্ত তা বেরিয়ে আসবে।’

এ হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ কী, জানতে চাইলে সিলেটের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মামলার ভবিষ্যৎ বলতে নিষ্পত্তি। যাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলা করা হলো, তাকে যখন জীবিত পাওয়া গেছে, তাহলে মামলা আর নেই। আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে পুলিশের প্রধান কাজ হলো বাদীসহ সাক্ষীদের গ্রেপ্তার করে প্রতারণা মামলা করা। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ রকম কাজ করতে না পারে।’  

বাবা এমপি, প্রভাব খাটাতেন মেয়ে জ্যোতি

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
বাবা এমপি, প্রভাব খাটাতেন মেয়ে জ্যোতি
ডা. জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি ও তার বাবা টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম

ডা. জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি। তার বাবা অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম ওরফে ভিপি জোয়াহের টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জোয়াহের। তিনি এমপি হওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার বড় মেয়ে জাকিয়াকে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাবা এমপি হওয়ার পরই জাকিয়া চলে আসেন সখিপুরে। ক্ষমতার প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। এর আগে কখনো তাকে সখিপুর ও বাসাইলে তেমন একটা দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে টেন্ডারবাজি ও  পদ-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। একসময় স্থানীয় কলকারখানা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি। দলীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হতে থাকেন। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে সখিপুরের চিকিৎসকদের নেতা বনে যান। বাবার প্রশ্রয়ে সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগে খবরদারি শুরু করেন। বাসাইলে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি ও সখিপুর বনে পাহাড় কাটার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বাবার ক্ষমতার কারণে জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। কেবল তাই নয়, সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, টাঙ্গাইল জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সখিপুর উপজেলা ডক্টরস অ্যান্ড মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন তিনি।  এসব ক্ষেত্রে বাবা ভিপি জোয়াহের তাকে সহযোগিতা করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, জ্যোতি বিভিন্ন সময় দলবল নিয়ে সখিপুর ও বাসাইলের বিভিন্ন অফিসে চাঁদাবাজি করতে যেতেন। লোকজন নিয়ে পিকনিকের নাম করে বিশাল চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন বলেও কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বাসাইল উপজেলা পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে তার অফিস থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন জাকিয়া। টাকা না দিলে বদলির হুঁশিয়ারিও দেন। কী করবে এমপি সাহেবের মেয়ে বলে কথা। না দিয়ে উপায় ছিল না।’

সখিপুরের হাতিবান্ধার মজনু মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মাঝে মাঝে এমপি সাহেবের মেয়ে আসতেন দলবল নিয়ে। তিনি এসেই বলতেন বনের গাছ কাটার সময় কেউ যদি বাধা দেন, তাহলে তাকে দেখে নেওয়া হবে। আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি নাই।’

২০২৩ সালের মে মাসে বাসাইলে তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে লেক ভিউ নামে একটি রিসোর্ট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এমপি ভিপি জোয়াহের ও বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। এরপর কাজী অলিদ ইসলাম জোয়াহেরের বিরুদ্ধে বাসাইল উপজেলা পরিষদের হলরুমে ৮ মে সংবাদ সম্মেলন করেন। 

তিনি অভিযোগ করেন, তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে ‘লেক ভিউ’ নামে একটি ভুয়া প্রকল্পের বিরোধিতা করায় তার ওপর হামলা হলে এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান গাউস, সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম এবং বাদল এন্টারপ্রাইজের বাদল মিয়া দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন,  লেক ভিউ প্রকল্পের নামে বাসাইলের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। তথাকথিত লেক ভিউ প্রতিষ্ঠায় কাশিল ইউনিয়নের সায়ের মৌজার শতাধিক একর জমির মাটি ২০-৩০ ফুট গভীর করে কেটেছেন এমপিকন্যা। 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মাটিবাহী ২৫-৩০ টনের ড্রাম ট্রাকের চাকায় গ্রামীণ সড়ক বিনষ্ট হচ্ছে। লেক ভিউ নামক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেছেন এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম। ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা উপেক্ষা করে কীভাবে এমপি তিন ফসলি জমির মাটি কাটার কাজ উদ্বোধন করলেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কাজী অলিদ ইসলাম জানান, তিনি উপজেলা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

শুধু লেক ভিউ না, বাসাইলের বাথুলীতে ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে কাশিল এলাকায় চায়না কোম্পানির জন্য মাটি ভরাট করার প্রকল্প হাতে নেন এমপিকন্যা জাকিয়া। বালু উত্তোলনের ওই জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন জাকিয়া। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন ওই এলাকার কাজী বাদল নামে একজন। কাজী বাদল বিভিন্নজনের কাছ থেকে জমি দখল করে চায়না কোম্পানির কাছে হস্তান্তর ও বালু কেটে ভরাট করেন।

কাশিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘এখনো জাকিয়া ও বাদল বাহিনীর সদস্যদের নাম বলতে মানুষ ভয় পায়। তাদের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারি নাই। আমরা এখনো আতঙ্কে থাকি। আমাদের বাড়িঘরের ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ নিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে ফেলছে। আবাদি জমির ওপর দিয়ে পাইপ নেওয়ার ফলে ফসল ফলেনি। নদীর পাড়ে যাদের বাড়ি তাদের বাড়ি তো নদীতে চলেই গেছে। এখন তাদের হাত থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত সিকদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘জ্যোতি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন তাতে মনে হতো তিনি নিজেই সখিপুরের এমপি। এক কথায় সর্বমহলের ক্ষমতাবান ছিলেন তিনি। এমপি জোয়াহের সখিপুর-বাসাইলে বেশি আসতেন না। তবে তার মেয়েকে দিয়েই সব কাজ করাতেন। রাস্তা উদ্বোধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কাজেও মেয়ে উপস্থিত থাকতেন। এটি নিয়ে আমাদের আপত্তির কথা বারবার ঊর্ধ্বতন নেতা-কর্মীদের বলেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’ 

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, তখন তো তার বাবা ছিলেন এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক। যার ফলে তার ক্ষমতার দাপট সবাই দেখেছে। বলা যায় যে এই জ্যোতিই এমপি ছিলেন। তবে ৫ আগষ্টের পর তাদের আর দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম ওরফে ভিপি জোয়াহের ও তার বড় মেয়ে জাকিয়া ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত ৪ আগস্ট দুপুরে টাঙ্গাইল বিবেকানন্দ স্কুল ও কলেজের ছাদের ওপর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি ছোড়েন এমপি জোয়াহেরের লোকজন। এরপর স্কুলের ভেতরে থাকা এমপির গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে তাদের আর টাঙ্গাইলে দেখা যায়নি।

বালাইনাশকে মরছে না কীটপতঙ্গ, ক্ষতি মাটি-মানুষের

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
বালাইনাশকে মরছে না কীটপতঙ্গ, ক্ষতি মাটি-মানুষের
ধানখেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন কৃষক। ফাইল ছবি

কৃষি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আইন উপেক্ষা করে ভেজাল ও অকার্যকর বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে, আশানুরূপ কীটপতঙ্গ মরছে না। অন্যদিকে মাটির ঊর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে দেশে কৃষি খাতের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহে মনোপলি করা হচ্ছে। একইভাবে স্বল্পমূল্যের বালাইনাশক আমদানি করে চালানে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বেই এ ধরনের অপকর্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি সাবেক কৃষিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনুমোদনহীন বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহ করেছেন। ৯৯০ টাকা দামে ক্ষতিকর ওয়ান্ডার ৫ ডব্লিউডিজি আমদানি করে প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ৫ হাজার ৪০০ টাকায়। এভাবে বাজার থেকে লুটে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ এই কাজের জন্য জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন ও মাননিয়ন্ত্রণ) এস এম সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, এ কে এম হাসিবুল হাসান, উপপরিচালক (লিসাসা) প্রশাসন ও অর্থ এবং এস এম আলমগীর শফিউল্লাহ, পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার।

কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আজও তদন্তের অগ্রগতি জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক এস এম সোহরাব উদ্দীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। সম্ভবত ইতোমধ্যে স্যাম্পলের ল্যাবরেটরি টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত রবিবার তার বক্তব্য নিয়েছি। বুধবার (১৩ নভেম্বর) তার কারখানা পরিদর্শনে যাবে কমিটি। তদন্ত শেষ করে আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।

এর আগে সাইদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিকে লিগাল নোটিশ দিয়েছে আইনি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘লিগ্যাল ইরা’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা। ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সুনাম নষ্ট করতেই এসব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে গত রবিবার প্রয়োজনীয় বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেশ করেছি। মূলত বালাইনাশক উৎপাদনের একই ধরনের সহযোগী উপাদান যা আমার জন্য অননুমোদিত। কিন্তু কারও কারও জন্য তা অনুমোদিত। যে পণ্যটি নিয়ে কথা উঠেছে তা আমদানির জন্য ২০৪টি কোম্পানির অনুমোদন নেই। এই কোম্পানিগুলো ভিন্ন সোর্স থেকে আমদানি করায় ৩৭৬টি কন্টেইনারে আনা পণ্য কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। তখন আমরা সবাই সরকার নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধ করে পণ্যগুলো বুঝে নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে জরিমানা পরিশোধ না করার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে নিম্নমানের স্বল্পমূল্যের বালাইনাশক আমদানি ও বাজারে সরবরাহের অভিযোগও ঠিক নয়। যে বালাইনাশক পণ্যকে অকার্যকর ও ক্ষতিকর বলা হচ্ছে, প্রকৃত পক্ষে তা কোনো ক্ষতিকর নয় বরং ফসলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ওই সময়ে পণ্যটি আমদানি না করলে দেশের কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো।’

ভুক্তভোগীরা জানান, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া ছিলেন মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামান। বিগত সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকসহ প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ তিনি। 

সাধারণ কর্মচারী থেকে ‘বাংলাদেশ ক্রপস প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েই নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন সাইদুজ্জামান। কৃষিকাজে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তৈরি করেন বাংলাদেশ বালাইনাশক সিন্ডিকেট। প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে বালাইনাশক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করার কথা থাকলেও, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক। 

এ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও সমস্যা সমাধানে অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীদের জন্য কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানি সহজ করতে সোর্স উন্মুক্ত করার আবেদন জানান। এই সংগঠনের দাবি, সোর্স উন্মুক্ত হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে সুলভে কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান সংগ্রহ করতে পারলে কৃষক উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

এর আগে মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন সনদে রেজিস্টার্ড বালাইনাশকের উৎপাদনকারী সোর্স উন্মুক্ত অথবা প্রতিটি উৎপাদনকারী দেশের ন্যূনতম পাঁচটি সোর্স কোম্পানির নাম উল্লেখ থাকবে। এভাবে বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। তবে এখনো বালাইনাশক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে গত মাসে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে ২২টি বালাইনাশক কোম্পানি দেশেই তাদের কারখানায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য উৎপাদন করছে। এখানেও পণ্য সংগ্রহের উন্মুক্ত সোর্সগুলো অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদনকারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অথচ বিদ্যমান আইনে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিদেশ থেকে পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে কৃষি, পরিবেশ, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষে আগামী বছর ৪ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে লুট আড়াই হাজার কোটি!

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ এএম
বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে লুট আড়াই হাজার কোটি!
প্রতীকী ছবি

মধ্যপ্রাচ্যগামী বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সাত সদস্যের একটি চক্র। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বছরে ৫ থেকে ৭ লাখ কর্মী নিলেও মেডিকেল পরীক্ষা করানো হচ্ছে অন্তত ২৫ লাখ কর্মীর। শুধুমাত্র গরিবের পকেট কাটতেই এই চক্রটি ভিসা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের দেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে। 

জানা গেছে, গালফ হেলথ কাউন্সিলের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দেশে প্রতি বছর অপ্রয়োজনে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের ব্যবস্থা করছে চক্রটি। এর বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে লাখ লাখ ডলার আদায় করছে চক্রটি। আবার এসব ঘুষের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশেও পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ কর্মী চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশ যান। এর মধ্যে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই যায় ৫ থেকে ৭ লাখ কর্মী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভিসা পেতে গালফ হেলথ কাউন্সিল অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারগুলো থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা অর্থাৎ মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। 

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট কার্যক্রম শুরু করে গালফ হেলথ কাউন্সিল। ওই বছরেই বাংলাদেশে ২৬টি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেয় কাউন্সিল। এরপর ২০১৮ সালে আরও ৩৭টি নতুন মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দেয়। দেশে ২০২২ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৩টি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশাল আয়তন ও জনসংখ্যা থাকলেও সেদেশে এ ধরনের মেডিকেল সেন্টার রয়েছে ১২২টি, পাকিস্তানে রয়েছে ৬৮টি ও ইন্দোনেশিয়ায় মাত্র ২৩টি। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এ ধরনের মেডিকেল সেন্টারের সংখ্যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন খোদ জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অসচ্ছল কর্মীদের পকেট কাটতেই এত বেশি সংখ্যক মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এই কাজে বাংলাদেশি চক্রটি যোগ দেয় ভারতীয় একটি চক্রের সঙ্গে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বাংলাদেশি চক্রের সদস্যরা বিগত আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল, সাবেক এমপি বিএইচ হারুন ও এইচ বি এম ইকবালের আশীর্বাদ নিয়ে জিসিসি অ্যাপ্রুভড মেডিকেল সেন্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (গামকা) বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এবং জেড ইউ সাইদ এই চক্রটি গড়ে তোলেন। এর মধ্যে জেড ইউ সাঈদ বর্তমানে সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাংলাদেশি চক্রটির সদস্যরা গামকার ভারতীয় অংশের প্রভাবশালী নেতা শিবামকর বলরাজ মিশ্রা, রাজেশ তিওয়ারি, ভিরান তিওয়ারি ও বিপিন জইনকে তাদের সঙ্গে ভেড়ান। গালফ হেলথ কাউন্সিলের রিয়াদ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে মাফিয়া চক্রটি এদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে আরও নিঃস্ব করতে নেমে পড়ে। এই চক্রটি বাংলাদেশে একটি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২ থেকে ৩ লাখ ডলার অর্থাৎ কয়েক কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকে। এভাবেই চক্রটি বাংলাদেশের একের পর এক মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যার পুরো অর্থই হুন্ডির মাধ্যমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেও আরও কিছু সেন্টারের অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে চক্রটি। 

জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের এই চক্রটিই ২০২২ সালে এক বছরেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় ৭০টি নতুন মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন করিয়ে দেয়। নামে-বেনামে যার বেশির ভাগের মালিকানাতেও রয়েছে এই চক্রের সদস্যরা। সূত্রের দাবি, বর্তমানে দেশের মোট ১৩৩টি মেডিকেল সেন্টারের মধ্যে অন্তত একশটি সেন্টারের শেয়ার রয়েছে চক্রটির সদস্যদের। এ ছাড়া ডিসেম্বরে নতুন করে যেসব সেন্টার অনুমোদন পাবে সেখানেও চক্রটির অংশীদারত্ব রাখার গোপন চুক্তি করেছে। 

সূত্র আরও জানিয়েছে, চক্রের বাংলাদেশি সদস্যদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের ৩১টি, নজরুল ইসলামের ১১টি এবং জেড ইউ সাঈদ-এর ২৫টি মেডিকেল সেন্টারের মালিকানা অথবা অংশীদারত্ব রয়েছে। এসব সেন্টার থেকে আয় করা অর্থের বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। 

সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশের ৭ সদস্যের এই চক্রটি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতেও এই চক্রটি অর্থায়ন করে, এখন তারা রাতারাতি ভোল পাল্টেছে। 

জানা গেছে, চক্রের ভারতীয় অংশের চার সদস্যেরই এদেশে মেডিকেল সেন্টার রয়েছে যা বেআইনি। এদেশে তাদের ২২টি সেন্টার রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এর মধ্যে আল বুস্তান মেডিকেল সেন্টার ও মোহাম্মদী হেলথ কেয়ার সিস্টেম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মেডিকেল সেন্টার নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে অনুমোদন করিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ট্রেড অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গালফ মেডিকেল সেন্টারস নামের একটি সংগঠন প্রতিবাদ জানালে চক্রটি প্রভাব খাটিয়ে গালফ হেলথ কাউন্সিল থেকে চিঠি এনে উল্টো ওই সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। 

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলেও চক্রটির মালিকানাধীন সেন্টারগুলো কর্মীদের কাছ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলে অতিরিক্তি আরও অর্থ নেয়। সেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পৌঁছালেও সেদেশের মেডিকেল পরীক্ষায় আনফিট বলে ধরা পড়ে। সেদেশে তাদের ভিসা থাকার পরও আনফিট রিপোর্টের কারণে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে হাজারও বাংলাদেশি কর্মী নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন। গরিবের রক্ত শোষণ করতেই বছর বছর নতুন মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। নতুন করে আর মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন না দিয়ে চক্রের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।