ঢাকা ২৮ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রশাসনের শীর্ষ পদে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগে বিশেষজ্ঞদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার নজির থাকলেও এখন ‘ঢালাওভাবে’ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৮৩ সচিবের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ ২০ জনই চুক্তিতে কর্মরত। ফলে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তারা যথাসময়ে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে খোদ সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। 

তাদের মতে, একজন কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে গেলে সেই পদ খালি হয়। ওই পদে নতুন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি বা পদায়ন হয়। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে সরকার যতটা না উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের। 

অতীতে কোনো প্রকল্প বা বিশেষ কারণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ব্যক্তিগত সখ্য ও রাজনৈতিক বিশেষ তদবিরের কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে একাধিক সচিবকে এক বা দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে কারও কারও চুক্তির মেয়াদ আরও বেড়েছে।

বিএনপির আমলেও রেকর্ডসংখ্যক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। অনেকে মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে রেকর্ড গড়ে, তার জন্য অন্যতম প্রধান দায়ী এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আমলারাই। দুর্নীতি করতে তারা কোনো রকম রাখঢাক করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল ভুল বুঝিয়ে একের পর এক চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। তবে সরকার যদি কাউকে কোনো মন্ত্রণালয়ে অপরিহার্য মনে করে, সে ক্ষেত্রে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া স্বাভাবিক। তবে ঢালাওভাবে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ায় পদোন্নতিযোগ্য ও সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিগত কয়েক বছর জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমেছিল। বিশেষ করে নিয়মিত পদগুলোতে চুক্তিতে কম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু আগে থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়া শুরু হয়। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত কাউকে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। সে জন্য শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের বাড়তি ব্যয়ও হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে অবসর নিতে হয় ৫৯ বছর বয়সে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও এক বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পান। 

বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জনপ্রশাসনে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অবসরের সময় এগিয়ে আসছে, এখন তাদের অনেকেই চুক্তিতে নিয়োগ পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন। জনপ্রশাসনে এখন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৩ জন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচিব-পদ শূন্য হয়। যেহেতু নির্বাচন ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেন। সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন, তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষে সেখানে নতুন অনেককে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব সময় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও রয়েছে। কারণ একজনকে নিয়োগ দিলে এ ক্ষেত্রে যার সুযোগ ছিল তিনি বঞ্চিত হন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বিষয়টি খেয়াল রাখেন। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, বিশেষ কারণে ওই সময়ে (সংসদ নির্বাচনের আগে) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছিল। তার মতে, এটা করা হয়েছিল দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেন, তারা চাকরিতে থাকাকালে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিতেন। কারণ পদোন্নতিযোগ্যদের বঞ্চিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে প্রশাসনে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়। পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৪ সালে কমিশনের সুপারিশ ছিল শুধু কারিগরি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন, তাকে ছাড়া মন্ত্রণালয়ে গতি আসবে না -এমন অপরিহার্য হলে সেই ধরনের কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ঢালাওভাবে শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে তা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট করে দেয়। তাই যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া উচিত।’

সূত্র বলছে, প্রশাসনে অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের লাগাম টেনে ধরতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পরিহার করার জন্য ২০১৪ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের উদ্দেশ্যে একটি আধা সরকারিপত্রও (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন তিনি। 

লিখেছিলেন, ‘অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সরকার কাউকে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, সে ক্ষেত্রে ক্যাডারবহির্ভূত বিশেষ পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এটি কার্যকর হলে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রত্যাশী  কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে আসীন হতে পারবেন। কোনো পক্ষের আর হতাশা ও ক্ষোভ থাকবে না।’ 

তার প্রস্তাবটিও আমলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে দেওয়া পে-কমিশনের সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সেটিও আমলে নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী সময়ে চুক্তিতে নিয়োগ বেড়েছে।

জনপ্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এর মধ্যে মো. মাহবুব হোসেন গত বছরের (২০২৩) ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অবসর দিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের (২০২৩) ৪ জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছরের (২০২৩) ২৫ জুন অবসরোত্তর ছুটি এবং এ-সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে ৫ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এদিকে আরও এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে এ পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে গত ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক পদে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আলী হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার চুক্তিতে কর্মরত আছেন। 

তালিকায় আরও আছেন, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম। 

বর্তমানে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এর ফাঁকেও প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতিপ্রত্যাশী  বিসিএস ১৫তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে খবরের কাগজকে বলেন, সচিব পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একের পর এক চুক্তি দেওয়ায় তারা কবে সচিব পদোন্নতি পাবেন তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কারণ একজনকে চুক্তিতে দিলে আরও ৫ জনের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে তারাও পদোন্নতির আগে মনোকষ্ট নিয়ে অবসরে চলে যাবেন। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় আনেন না। সুবিধাভোগী আমলারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে প্রভাবিত করছেন। এটি প্রশাসনের জন্য আদৌ কাম্য নয়।

তাদের অভিমত, নিয়মানুযায়ী সচিবের পদ শূন্য হওয়ার পর যোগ্য কর্মকর্তারাই ওই পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু তা যেন অধরাই থাকছে। উল্টো ওই পদে থাকা সেই কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সচিব পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বাবা এমপি, প্রভাব খাটাতেন মেয়ে জ্যোতি

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
বাবা এমপি, প্রভাব খাটাতেন মেয়ে জ্যোতি
ডা. জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি ও তার বাবা টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম

ডা. জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি। তার বাবা অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম ওরফে ভিপি জোয়াহের টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জোয়াহের। তিনি এমপি হওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার বড় মেয়ে জাকিয়াকে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাবা এমপি হওয়ার পরই জাকিয়া চলে আসেন সখিপুরে। ক্ষমতার প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। এর আগে কখনো তাকে সখিপুর ও বাসাইলে তেমন একটা দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে টেন্ডারবাজি ও  পদ-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। একসময় স্থানীয় কলকারখানা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি। দলীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হতে থাকেন। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে সখিপুরের চিকিৎসকদের নেতা বনে যান। বাবার প্রশ্রয়ে সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগে খবরদারি শুরু করেন। বাসাইলে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি ও সখিপুর বনে পাহাড় কাটার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বাবার ক্ষমতার কারণে জাকিয়া ইসলাম জ্যোতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। কেবল তাই নয়, সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, টাঙ্গাইল জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সখিপুর উপজেলা ডক্টরস অ্যান্ড মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন তিনি।  এসব ক্ষেত্রে বাবা ভিপি জোয়াহের তাকে সহযোগিতা করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, জ্যোতি বিভিন্ন সময় দলবল নিয়ে সখিপুর ও বাসাইলের বিভিন্ন অফিসে চাঁদাবাজি করতে যেতেন। লোকজন নিয়ে পিকনিকের নাম করে বিশাল চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন বলেও কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বাসাইল উপজেলা পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে তার অফিস থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন জাকিয়া। টাকা না দিলে বদলির হুঁশিয়ারিও দেন। কী করবে এমপি সাহেবের মেয়ে বলে কথা। না দিয়ে উপায় ছিল না।’

সখিপুরের হাতিবান্ধার মজনু মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মাঝে মাঝে এমপি সাহেবের মেয়ে আসতেন দলবল নিয়ে। তিনি এসেই বলতেন বনের গাছ কাটার সময় কেউ যদি বাধা দেন, তাহলে তাকে দেখে নেওয়া হবে। আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি নাই।’

২০২৩ সালের মে মাসে বাসাইলে তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে লেক ভিউ নামে একটি রিসোর্ট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এমপি ভিপি জোয়াহের ও বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। এরপর কাজী অলিদ ইসলাম জোয়াহেরের বিরুদ্ধে বাসাইল উপজেলা পরিষদের হলরুমে ৮ মে সংবাদ সম্মেলন করেন। 

তিনি অভিযোগ করেন, তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে ‘লেক ভিউ’ নামে একটি ভুয়া প্রকল্পের বিরোধিতা করায় তার ওপর হামলা হলে এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান গাউস, সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম এবং বাদল এন্টারপ্রাইজের বাদল মিয়া দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন,  লেক ভিউ প্রকল্পের নামে বাসাইলের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। তথাকথিত লেক ভিউ প্রতিষ্ঠায় কাশিল ইউনিয়নের সায়ের মৌজার শতাধিক একর জমির মাটি ২০-৩০ ফুট গভীর করে কেটেছেন এমপিকন্যা। 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মাটিবাহী ২৫-৩০ টনের ড্রাম ট্রাকের চাকায় গ্রামীণ সড়ক বিনষ্ট হচ্ছে। লেক ভিউ নামক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেছেন এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম। ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা উপেক্ষা করে কীভাবে এমপি তিন ফসলি জমির মাটি কাটার কাজ উদ্বোধন করলেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কাজী অলিদ ইসলাম জানান, তিনি উপজেলা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

শুধু লেক ভিউ না, বাসাইলের বাথুলীতে ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে কাশিল এলাকায় চায়না কোম্পানির জন্য মাটি ভরাট করার প্রকল্প হাতে নেন এমপিকন্যা জাকিয়া। বালু উত্তোলনের ওই জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন জাকিয়া। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন ওই এলাকার কাজী বাদল নামে একজন। কাজী বাদল বিভিন্নজনের কাছ থেকে জমি দখল করে চায়না কোম্পানির কাছে হস্তান্তর ও বালু কেটে ভরাট করেন।

কাশিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘এখনো জাকিয়া ও বাদল বাহিনীর সদস্যদের নাম বলতে মানুষ ভয় পায়। তাদের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারি নাই। আমরা এখনো আতঙ্কে থাকি। আমাদের বাড়িঘরের ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ নিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে ফেলছে। আবাদি জমির ওপর দিয়ে পাইপ নেওয়ার ফলে ফসল ফলেনি। নদীর পাড়ে যাদের বাড়ি তাদের বাড়ি তো নদীতে চলেই গেছে। এখন তাদের হাত থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত সিকদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘জ্যোতি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন তাতে মনে হতো তিনি নিজেই সখিপুরের এমপি। এক কথায় সর্বমহলের ক্ষমতাবান ছিলেন তিনি। এমপি জোয়াহের সখিপুর-বাসাইলে বেশি আসতেন না। তবে তার মেয়েকে দিয়েই সব কাজ করাতেন। রাস্তা উদ্বোধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কাজেও মেয়ে উপস্থিত থাকতেন। এটি নিয়ে আমাদের আপত্তির কথা বারবার ঊর্ধ্বতন নেতা-কর্মীদের বলেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’ 

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, তখন তো তার বাবা ছিলেন এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক। যার ফলে তার ক্ষমতার দাপট সবাই দেখেছে। বলা যায় যে এই জ্যোতিই এমপি ছিলেন। তবে ৫ আগষ্টের পর তাদের আর দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম ওরফে ভিপি জোয়াহের ও তার বড় মেয়ে জাকিয়া ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত ৪ আগস্ট দুপুরে টাঙ্গাইল বিবেকানন্দ স্কুল ও কলেজের ছাদের ওপর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি ছোড়েন এমপি জোয়াহেরের লোকজন। এরপর স্কুলের ভেতরে থাকা এমপির গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে তাদের আর টাঙ্গাইলে দেখা যায়নি।

বালাইনাশকে মরছে না কীটপতঙ্গ, ক্ষতি মাটি-মানুষের

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
বালাইনাশকে মরছে না কীটপতঙ্গ, ক্ষতি মাটি-মানুষের
ধানখেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন কৃষক। ফাইল ছবি

কৃষি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আইন উপেক্ষা করে ভেজাল ও অকার্যকর বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে, আশানুরূপ কীটপতঙ্গ মরছে না। অন্যদিকে মাটির ঊর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে দেশে কৃষি খাতের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহে মনোপলি করা হচ্ছে। একইভাবে স্বল্পমূল্যের বালাইনাশক আমদানি করে চালানে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বেই এ ধরনের অপকর্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি সাবেক কৃষিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনুমোদনহীন বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহ করেছেন। ৯৯০ টাকা দামে ক্ষতিকর ওয়ান্ডার ৫ ডব্লিউডিজি আমদানি করে প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ৫ হাজার ৪০০ টাকায়। এভাবে বাজার থেকে লুটে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ এই কাজের জন্য জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন ও মাননিয়ন্ত্রণ) এস এম সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, এ কে এম হাসিবুল হাসান, উপপরিচালক (লিসাসা) প্রশাসন ও অর্থ এবং এস এম আলমগীর শফিউল্লাহ, পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার।

কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আজও তদন্তের অগ্রগতি জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক এস এম সোহরাব উদ্দীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। সম্ভবত ইতোমধ্যে স্যাম্পলের ল্যাবরেটরি টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত রবিবার তার বক্তব্য নিয়েছি। বুধবার (১৩ নভেম্বর) তার কারখানা পরিদর্শনে যাবে কমিটি। তদন্ত শেষ করে আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।

এর আগে সাইদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিকে লিগাল নোটিশ দিয়েছে আইনি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘লিগ্যাল ইরা’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা। ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সুনাম নষ্ট করতেই এসব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে গত রবিবার প্রয়োজনীয় বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেশ করেছি। মূলত বালাইনাশক উৎপাদনের একই ধরনের সহযোগী উপাদান যা আমার জন্য অননুমোদিত। কিন্তু কারও কারও জন্য তা অনুমোদিত। যে পণ্যটি নিয়ে কথা উঠেছে তা আমদানির জন্য ২০৪টি কোম্পানির অনুমোদন নেই। এই কোম্পানিগুলো ভিন্ন সোর্স থেকে আমদানি করায় ৩৭৬টি কন্টেইনারে আনা পণ্য কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। তখন আমরা সবাই সরকার নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধ করে পণ্যগুলো বুঝে নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে জরিমানা পরিশোধ না করার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে নিম্নমানের স্বল্পমূল্যের বালাইনাশক আমদানি ও বাজারে সরবরাহের অভিযোগও ঠিক নয়। যে বালাইনাশক পণ্যকে অকার্যকর ও ক্ষতিকর বলা হচ্ছে, প্রকৃত পক্ষে তা কোনো ক্ষতিকর নয় বরং ফসলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ওই সময়ে পণ্যটি আমদানি না করলে দেশের কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো।’

ভুক্তভোগীরা জানান, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া ছিলেন মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক এম সাইদুজ্জামান। বিগত সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকসহ প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ তিনি। 

সাধারণ কর্মচারী থেকে ‘বাংলাদেশ ক্রপস প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েই নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন সাইদুজ্জামান। কৃষিকাজে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য বালাইনাশক আমদানি ও সরবরাহে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তৈরি করেন বাংলাদেশ বালাইনাশক সিন্ডিকেট। প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে বালাইনাশক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করার কথা থাকলেও, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মালিক। 

এ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও সমস্যা সমাধানে অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীদের জন্য কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানি সহজ করতে সোর্স উন্মুক্ত করার আবেদন জানান। এই সংগঠনের দাবি, সোর্স উন্মুক্ত হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে সুলভে কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান সংগ্রহ করতে পারলে কৃষক উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

এর আগে মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন সনদে রেজিস্টার্ড বালাইনাশকের উৎপাদনকারী সোর্স উন্মুক্ত অথবা প্রতিটি উৎপাদনকারী দেশের ন্যূনতম পাঁচটি সোর্স কোম্পানির নাম উল্লেখ থাকবে। এভাবে বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। তবে এখনো বালাইনাশক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে গত মাসে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে ২২টি বালাইনাশক কোম্পানি দেশেই তাদের কারখানায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য উৎপাদন করছে। এখানেও পণ্য সংগ্রহের উন্মুক্ত সোর্সগুলো অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদনকারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অথচ বিদ্যমান আইনে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিদেশ থেকে পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে কৃষি, পরিবেশ, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষে আগামী বছর ৪ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে লুট আড়াই হাজার কোটি!

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ এএম
বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে লুট আড়াই হাজার কোটি!
প্রতীকী ছবি

মধ্যপ্রাচ্যগামী বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সাত সদস্যের একটি চক্র। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বছরে ৫ থেকে ৭ লাখ কর্মী নিলেও মেডিকেল পরীক্ষা করানো হচ্ছে অন্তত ২৫ লাখ কর্মীর। শুধুমাত্র গরিবের পকেট কাটতেই এই চক্রটি ভিসা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের দেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে। 

জানা গেছে, গালফ হেলথ কাউন্সিলের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দেশে প্রতি বছর অপ্রয়োজনে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের ব্যবস্থা করছে চক্রটি। এর বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে লাখ লাখ ডলার আদায় করছে চক্রটি। আবার এসব ঘুষের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশেও পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ কর্মী চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশ যান। এর মধ্যে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই যায় ৫ থেকে ৭ লাখ কর্মী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভিসা পেতে গালফ হেলথ কাউন্সিল অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারগুলো থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা অর্থাৎ মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। 

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট কার্যক্রম শুরু করে গালফ হেলথ কাউন্সিল। ওই বছরেই বাংলাদেশে ২৬টি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেয় কাউন্সিল। এরপর ২০১৮ সালে আরও ৩৭টি নতুন মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দেয়। দেশে ২০২২ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৩টি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশাল আয়তন ও জনসংখ্যা থাকলেও সেদেশে এ ধরনের মেডিকেল সেন্টার রয়েছে ১২২টি, পাকিস্তানে রয়েছে ৬৮টি ও ইন্দোনেশিয়ায় মাত্র ২৩টি। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এ ধরনের মেডিকেল সেন্টারের সংখ্যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন খোদ জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অসচ্ছল কর্মীদের পকেট কাটতেই এত বেশি সংখ্যক মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এই কাজে বাংলাদেশি চক্রটি যোগ দেয় ভারতীয় একটি চক্রের সঙ্গে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বাংলাদেশি চক্রের সদস্যরা বিগত আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল, সাবেক এমপি বিএইচ হারুন ও এইচ বি এম ইকবালের আশীর্বাদ নিয়ে জিসিসি অ্যাপ্রুভড মেডিকেল সেন্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (গামকা) বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এবং জেড ইউ সাইদ এই চক্রটি গড়ে তোলেন। এর মধ্যে জেড ইউ সাঈদ বর্তমানে সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাংলাদেশি চক্রটির সদস্যরা গামকার ভারতীয় অংশের প্রভাবশালী নেতা শিবামকর বলরাজ মিশ্রা, রাজেশ তিওয়ারি, ভিরান তিওয়ারি ও বিপিন জইনকে তাদের সঙ্গে ভেড়ান। গালফ হেলথ কাউন্সিলের রিয়াদ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে মাফিয়া চক্রটি এদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে আরও নিঃস্ব করতে নেমে পড়ে। এই চক্রটি বাংলাদেশে একটি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২ থেকে ৩ লাখ ডলার অর্থাৎ কয়েক কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকে। এভাবেই চক্রটি বাংলাদেশের একের পর এক মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যার পুরো অর্থই হুন্ডির মাধ্যমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেও আরও কিছু সেন্টারের অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে চক্রটি। 

জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের এই চক্রটিই ২০২২ সালে এক বছরেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় ৭০টি নতুন মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন করিয়ে দেয়। নামে-বেনামে যার বেশির ভাগের মালিকানাতেও রয়েছে এই চক্রের সদস্যরা। সূত্রের দাবি, বর্তমানে দেশের মোট ১৩৩টি মেডিকেল সেন্টারের মধ্যে অন্তত একশটি সেন্টারের শেয়ার রয়েছে চক্রটির সদস্যদের। এ ছাড়া ডিসেম্বরে নতুন করে যেসব সেন্টার অনুমোদন পাবে সেখানেও চক্রটির অংশীদারত্ব রাখার গোপন চুক্তি করেছে। 

সূত্র আরও জানিয়েছে, চক্রের বাংলাদেশি সদস্যদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের ৩১টি, নজরুল ইসলামের ১১টি এবং জেড ইউ সাঈদ-এর ২৫টি মেডিকেল সেন্টারের মালিকানা অথবা অংশীদারত্ব রয়েছে। এসব সেন্টার থেকে আয় করা অর্থের বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। 

সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশের ৭ সদস্যের এই চক্রটি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতেও এই চক্রটি অর্থায়ন করে, এখন তারা রাতারাতি ভোল পাল্টেছে। 

জানা গেছে, চক্রের ভারতীয় অংশের চার সদস্যেরই এদেশে মেডিকেল সেন্টার রয়েছে যা বেআইনি। এদেশে তাদের ২২টি সেন্টার রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এর মধ্যে আল বুস্তান মেডিকেল সেন্টার ও মোহাম্মদী হেলথ কেয়ার সিস্টেম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মেডিকেল সেন্টার নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে অনুমোদন করিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ট্রেড অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গালফ মেডিকেল সেন্টারস নামের একটি সংগঠন প্রতিবাদ জানালে চক্রটি প্রভাব খাটিয়ে গালফ হেলথ কাউন্সিল থেকে চিঠি এনে উল্টো ওই সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। 

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলেও চক্রটির মালিকানাধীন সেন্টারগুলো কর্মীদের কাছ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলে অতিরিক্তি আরও অর্থ নেয়। সেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পৌঁছালেও সেদেশের মেডিকেল পরীক্ষায় আনফিট বলে ধরা পড়ে। সেদেশে তাদের ভিসা থাকার পরও আনফিট রিপোর্টের কারণে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে হাজারও বাংলাদেশি কর্মী নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন। গরিবের রক্ত শোষণ করতেই বছর বছর নতুন মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। নতুন করে আর মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন না দিয়ে চক্রের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। 

উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ এএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়
সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আব্দুস শহীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সাতবারের এমপিসহ হন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। রাজনীতির ছোঁয়ায় তার উত্থান রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এমপি হয়েই বাগিয়ে নেন হুইপ, প্যানেল স্পিকারের পদ। সর্বশেষ ছিলেন সাত মাসের কৃষিমন্ত্রী। নামের আগে উপাধ্যক্ষ ও সর্বশেষ যুক্ত ডক্টরেট এবং মুক্তিযোদ্ধা উপাধি নিয়ে জেলাজুড়ে রয়েছে নানা আলোচনা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা বর্তমানে কারাগারে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৭৩ সালে কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৯১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সেই সময় দলের অনেক ত্যাগী ও দক্ষ নেতাকে পাশ কাটিয়ে ভাগিয়ে নেন দলীয় মনোনয়ন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে হুইপ, ২০০৬ সালে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চিফ হুইপ ও প্যানেল স্পিকার এবং ২০২৪ সালে ৭ মাসের কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী হওয়ার আগেই বিভিন্ন পদে বসে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হন আব্দুস শহীদ। জেলা ও উপজেলার রাজনীতিতে শহীদ পরিবারের ছিল একক আধিপত্য। নিজের ক্ষমতা বাড়াতে তিন ভাই ও বড় মেয়েকে দলীয় বিভিন্ন পদে আসীন করেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারসহ নিজ উপজেলা কমলগঞ্জে তার ও পরিবারের সদস্যদের ইশারা ছাড়া বাস্তবায়িত হতো না সরকারি কোনো প্রকল্প। এমন অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুস শহীদের ছোট ভাই মোসাদ্দেক আহমদ মানিক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদ দীর্ঘদিন দখলে রাখেন। আরেক ভাই ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুলকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুর রহমানের বিপরীতে বিদ্রোহী দাঁড় করিয়ে বিজয়ী করেন। অন্য ভাই ইফতেখার আহমেদ বদরুল একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতার দাপটে। বড় মেয়ে উম্মে ফারজানা ডায়নাকে পদ দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের। উদ্দেশ্য ছিল আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করার। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আব্দুস শহীদ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকাকালে জেলাজুড়ে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল চরমে। প্রয়াত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও প্রয়াত সমাজ কল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। সেই সময় দলের একটি বড় অংশকে কোণঠাসা করে রাখেন তিনি। শুধু জেলা শহরেই নয়, আব্দুস শহীদ নিজের স্বার্থে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব তৈরি করে রাখেন। নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চা-বাগান প্রতিষ্ঠার নামে বন বিভাগের জমি দখল, বাগানবাড়ি নির্মাণ, হাইল-হাওরে মৎস্য খামারসহ নানাভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আব্দুস শহীদ। ২০১৮ সালে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশে চার একর জমিতে ‘সাবারি টি প্ল্যান্টেশন’ করেন তিনি। পরে পাশে উদ্যানের ৫ একর পাহাড়ি জমি দখল করেন। সরকারি খরচে পুরো বাগানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন টেনে পানি সেচে ১৩-১৪টি ডিপ টিউবওয়েল বসান। এ ছাড়া কমলগঞ্জের কাঁঠালকান্দিতে ৮ একর পাহাড়ি জমিতে গড়ে তোলেন বাগানবাড়ি ‘সাবারি ফার্মহাউস’। সরকারি খরচে এখানেও একাধিক ডিপ টিউবওয়েল এবং বিদ্যুতের জন্য কয়েকটি সৌরপ্ল্যান্ট বসান। হাইল-হাওর ও বাইক্কা বিলের পাশে প্রায় ২৭ বিঘা জমিতে করেছেন মৎস্য খামার। স্থানীয়রা এসব সম্পদ উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলগঞ্জের এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৯৬ সালের আগে আব্দুস শহীদ কখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দ ব্যবহার করেননি। কিন্তু ওই বছর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা ব্যবহার শুরু করেন। পরে জামুকার সদস্যও হয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রভাব খাটিয়ে ভাই মোসাদ্দেক আহমদ মানিককে ২০২১ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধার’ স্বীকৃতি আদায় করে দেন। 

এই বিষয়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান গত বছর (আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন) এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এখন অনেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করছেন, যুদ্ধের সময় তাদের দেখিনি, এমনকি যাদের বয়স যুদ্ধের সময় ৫-৬ বছর ছিল, এখন নাকি তারাও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, এখন এগুলো নিয়ে আর কথা বলি না, অনেক নিকটাত্মীয় পরামর্শ দিয়েছেন এগুলো নিয়ে কথা না বলতে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দখলে থাকা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ৫ একর জমি উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এ জমিতে বন্য প্রাণীর খাবার উপযোগী প্রায় পাঁচ হাজার ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে।

বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান জানান, আগে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বহু চেষ্টা চালিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর দখল থেকে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাঁচ একর জমি জবরদখল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত বলেন, শুধু আব্দুস শহীদই না, সারা দেশে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবাধে লুটপাট করেছেন। নজিরবিহীন এ লুটপাটের বিচার করতে হবে।

বামফ্রন্ট নেতা বিশ্বজিৎ পাল বলেন, বিগত অবৈধ সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ মুখ খুলে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। সাবেক এ মন্ত্রী কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পর্যায়ে লুটপাটের বাহিনী তৈরি করেছিলেন। তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে। আমরা সব লুটপাটের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী বলেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী দীর্ঘ ১৬ বছর এলাকায় বিএনপিকে কোনো মিটিং ও মিছিল করতে দেয়নি। শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নন, সাধারণ মানুষও তার কাছ থেকে নিরাপদ ছিলেন না।

গত ২৯ অক্টোবর একাধিক হত্যা মামলায় ঢাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন আব্দুস শহীদ। এ সময় তার বাসায় পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি মুদ্রায় কয়েক কোটি টাকা ও স্বর্ণালংকার। এমন খবরে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তার গ্রেপ্তারের খবরে নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষ আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় অবৈধভাবে উপার্জিত তার সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

পাউবোর প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না স্থানীয়রা

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
পাউবোর প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না স্থানীয়রা
পানি উন্নয়ন বোর্ড

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্পে আর জমি দিতে চান না নীলফামারীর জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার মানুষ। এ কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বুড়ি তিস্তা রিজার্ভার পুনর্খনন প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

তবে কাজ হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পাউবো।

এ বিষয়ে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জুলফিকার রহমান বলেন, ‘জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার সীমায় ১ হাজার ২১৭ একরের মধ্যে ৬৬৭ একর পুনর্খননে ২০২২ সালের এপ্রিলে ৯৮ কোটি টাকায় নিয়োগ করা হয় ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে মে মাসেই বন্ধ হয়ে যায় খননকাজ। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় এক্সক্যাভেটর। মারধর করা হয় নিরাপত্তা কর্মীদের। এ ছাড়া হামলার শিকার হয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তাসহ অনেকে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী তিস্তা। পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা নদীর ৬৯ কিলোমিটারের পানিপ্রবাহ কাজে লাগাতে ১৯৬০ সালে শুরু হয় ‘বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন কাজ। দেশের প্রথম এ সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। এই বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পেরই অংশ ‘বুড়ি তিস্তা রিজার্ভার’।

এলাকাবাসী জানান, পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এলাকায় চাষাবাদ সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৬০ বছর আগে এ প্রকল্প বস্তবায়ন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের কথা বলে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জমিও নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেচের পানি নিশ্চিত করতে পারেনি। এ অবস্থায় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আর নতুন করে জমি দিতে রাজি নন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য যে জমি নেওয়া হচ্ছে, তা সরকারি। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, ‘যেসব জমি নেওয়া হচ্ছে তা ব্যক্তিমালিকাধীন। মালিকানা প্রমাণ করার মতো কাগজপত্রও আছে তাদের কাছে।’ এ নিয়ে দুই পক্ষের বিতর্ক। এর জেরে ধরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এরপর সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পাউবো ১০টি মামলা করেছে। এতে প্রকল্প এলাকার অন্তত ৯০০ মানুষকে আসামি করা হয়।

অন্যদিকে এলাকাবাসী পাউবোর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের পাশাপাশি গেছেন উচ্চ আদালতেও। এ হামলা-মামলার কারণে এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। পাউবোর কর্মকর্তারা এখন প্রকল্প এলাকায় যেতে পারছেন না।

পাউবোর দাবি, মূলত কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার ২১৮ জন দখলদার প্রকল্পভুক্ত সরকারি জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে।
 
এদিকে এলাকার মানুষের দাবি, এসব জমির খারিজ ও খাজনার রসিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। 
এ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘সফলভাবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। বছরে প্রায় ২৬ হাজার টন ফসল উৎপাদন করা যাবে। যার মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পানির গ্রাভিটি ইরিগেশন ১২ কোটি টাকার ফসল বেশি দেবে। এ ছাড়া জলাধার থেকে পাওয়া যাবে অতিরিক্ত মাছ। সেচের কাজে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সার বাবদ খরচ কমবে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হবে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমবে।’

তিনি দাবি করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সড়ক যোগযোগ উন্নত হবে। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ৯টি ব্রিজসহ বেশ কিছু পাকা অবকাঠামো।
 
মো. নাছির উদ্দিন নামের ডিমলা উপজেলার শালহাটি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এ প্রকল্পে আমার বাপ-দাদার ১৮ বিঘা জমি গেছে। তাতে নির্মাণ করা হয়েছে ৬টি গেট। কিন্তু এতে আমার কী উপকার হয়েছে?’

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরোধিতা করা একই উপজেলার সদরহাটা এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে মো. তৈহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে এ প্রকল্পে বাপ-দাদার ৩০ বিঘা জমি গেছে। কিন্তু তাতে আমাদের এলাকার তেমন কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আজও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেচ সুবিধা দিতে পারেনি। তারা এখন আবার জমি চাচ্ছে। আমরা তা দেব না।’
 
কিন্তু পাউবোর দাবি, প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ জমিই সরকারি এবং গত বছর পর্যন্ত তারা খাজনা দিয়েছে। ডিমলার কুঠির ডাঙ্গা গ্রামের মো. রজব আলীর ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় পাউবোর জায়গা আছে মাত্র ১০০ দশমিক ২৪ একর। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে ১ হাজার ২৬০ একর জায়গাই তাদের।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যে জায়গা দাবি করছে, সেসব জায়গা আমাদের বাপ-দাদার, কিছুদিন আগেও আমরা সরকারকে খাজনা দিয়েছি কিন্তু তারা হুকুম দখলের প্রস্তুতি নেওয়ার পর ‘লাল পতাকা’ লাগিয়ে দিলে ভূমি অফিস আমাদের খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’
 
এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব মামলা দিয়েছে সেগুলো হয়রানিমূলক। এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি তাদের একই সঙ্গে তারা ফিরে পেতে চান পূর্বপুরুষদের জমি।