ঢাকা ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রশাসনের শীর্ষ পদে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগে বিশেষজ্ঞদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার নজির থাকলেও এখন ‘ঢালাওভাবে’ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৮৩ সচিবের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ ২০ জনই চুক্তিতে কর্মরত। ফলে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তারা যথাসময়ে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে খোদ সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। 

তাদের মতে, একজন কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে গেলে সেই পদ খালি হয়। ওই পদে নতুন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি বা পদায়ন হয়। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে সরকার যতটা না উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের। 

অতীতে কোনো প্রকল্প বা বিশেষ কারণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ব্যক্তিগত সখ্য ও রাজনৈতিক বিশেষ তদবিরের কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে একাধিক সচিবকে এক বা দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে কারও কারও চুক্তির মেয়াদ আরও বেড়েছে।

বিএনপির আমলেও রেকর্ডসংখ্যক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। অনেকে মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে রেকর্ড গড়ে, তার জন্য অন্যতম প্রধান দায়ী এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আমলারাই। দুর্নীতি করতে তারা কোনো রকম রাখঢাক করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল ভুল বুঝিয়ে একের পর এক চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। তবে সরকার যদি কাউকে কোনো মন্ত্রণালয়ে অপরিহার্য মনে করে, সে ক্ষেত্রে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া স্বাভাবিক। তবে ঢালাওভাবে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ায় পদোন্নতিযোগ্য ও সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিগত কয়েক বছর জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমেছিল। বিশেষ করে নিয়মিত পদগুলোতে চুক্তিতে কম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু আগে থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়া শুরু হয়। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত কাউকে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। সে জন্য শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের বাড়তি ব্যয়ও হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে অবসর নিতে হয় ৫৯ বছর বয়সে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও এক বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পান। 

বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জনপ্রশাসনে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অবসরের সময় এগিয়ে আসছে, এখন তাদের অনেকেই চুক্তিতে নিয়োগ পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন। জনপ্রশাসনে এখন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৩ জন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচিব-পদ শূন্য হয়। যেহেতু নির্বাচন ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেন। সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন, তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষে সেখানে নতুন অনেককে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব সময় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও রয়েছে। কারণ একজনকে নিয়োগ দিলে এ ক্ষেত্রে যার সুযোগ ছিল তিনি বঞ্চিত হন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বিষয়টি খেয়াল রাখেন। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, বিশেষ কারণে ওই সময়ে (সংসদ নির্বাচনের আগে) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছিল। তার মতে, এটা করা হয়েছিল দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেন, তারা চাকরিতে থাকাকালে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিতেন। কারণ পদোন্নতিযোগ্যদের বঞ্চিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে প্রশাসনে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়। পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৪ সালে কমিশনের সুপারিশ ছিল শুধু কারিগরি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন, তাকে ছাড়া মন্ত্রণালয়ে গতি আসবে না -এমন অপরিহার্য হলে সেই ধরনের কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ঢালাওভাবে শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে তা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট করে দেয়। তাই যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া উচিত।’

সূত্র বলছে, প্রশাসনে অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের লাগাম টেনে ধরতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পরিহার করার জন্য ২০১৪ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের উদ্দেশ্যে একটি আধা সরকারিপত্রও (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন তিনি। 

লিখেছিলেন, ‘অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সরকার কাউকে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, সে ক্ষেত্রে ক্যাডারবহির্ভূত বিশেষ পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এটি কার্যকর হলে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রত্যাশী  কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে আসীন হতে পারবেন। কোনো পক্ষের আর হতাশা ও ক্ষোভ থাকবে না।’ 

তার প্রস্তাবটিও আমলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে দেওয়া পে-কমিশনের সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সেটিও আমলে নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী সময়ে চুক্তিতে নিয়োগ বেড়েছে।

জনপ্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এর মধ্যে মো. মাহবুব হোসেন গত বছরের (২০২৩) ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অবসর দিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের (২০২৩) ৪ জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছরের (২০২৩) ২৫ জুন অবসরোত্তর ছুটি এবং এ-সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে ৫ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এদিকে আরও এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে এ পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে গত ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক পদে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আলী হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার চুক্তিতে কর্মরত আছেন। 

তালিকায় আরও আছেন, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম। 

বর্তমানে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এর ফাঁকেও প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতিপ্রত্যাশী  বিসিএস ১৫তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে খবরের কাগজকে বলেন, সচিব পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একের পর এক চুক্তি দেওয়ায় তারা কবে সচিব পদোন্নতি পাবেন তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কারণ একজনকে চুক্তিতে দিলে আরও ৫ জনের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে তারাও পদোন্নতির আগে মনোকষ্ট নিয়ে অবসরে চলে যাবেন। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় আনেন না। সুবিধাভোগী আমলারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে প্রভাবিত করছেন। এটি প্রশাসনের জন্য আদৌ কাম্য নয়।

তাদের অভিমত, নিয়মানুযায়ী সচিবের পদ শূন্য হওয়ার পর যোগ্য কর্মকর্তারাই ওই পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু তা যেন অধরাই থাকছে। উল্টো ওই পদে থাকা সেই কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সচিব পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

ভিসা জটিলতায় আসতে পারছেন না আফ্রিকার ৫৫ দেশের নাগরিক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০৯ পিএম
ভিসা জটিলতায় আসতে পারছেন না আফ্রিকার ৫৫ দেশের নাগরিক
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশে নাইজেরিয়ান নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি চিঠি ইস্যু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার ৫৫ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া মহাদেশটির নাগরিকদের ভিসার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অনুমোদন নিতে বলা হয়। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে গত চার বছরে ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য হাজারও ভিসার আবেদন বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা পড়েছে। তবে এসবির অনুমোদন প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এবং অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বাংলাদেশে আসতে পারছেন না বহু আবেদনকারী। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে আফ্রিকার ৫৫টি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কার্যত থমকে আছে। 

বাংলাদেশের জন্য পোশাক, ওষুধ, কৃষিপণ্য, সিরামিক, প্লাস্টিক পণ্য, আইটি সেবা, পাটপণ্য এবং হালকা প্রকৌশল পণ্য আফ্রিকায় রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আফ্রিকা থেকে তুলা, খনিজ, গম, পশুখাদ্য, কাঁচামাল এবং বিভিন্ন কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের আগ্রহ বাড়ছে। ভিসা জটিলতা দূর হলে আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হবে এবং বাংলাদেশ নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় বাণিজ্যের বাজার গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকার ৫৫টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দেশেই রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা। তবে ভিসা জটিলতার কারণে সেখানকার আগ্রহী অনেকেই বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। এতে ৫৫টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ গতি পাচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আফ্রিকার একটি দেশের কারণে গোটা মহাদেশের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক থেমে থাকা কাম্য নয়। এতে ওই সব দেশের রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিকরা এখন বাংলাদেশের ভিসা পাচ্ছেন না। তাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশের ওষুধ ও গার্মেন্টস পণ্য সরাসরি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে বাংলাদেশের পণ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে পৌঁছায়। এতে খরচ বাড়ে এবং চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাঠানো সম্ভব হয় না। 

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ইস্যু করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আলজেরিয়া, মিসর, মরক্কো, মরিশাস, কমোরস, মাদাগাস্কার ও সিশেলস- এই সাতটি দেশের নাগরিকদের ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসকে ভালো করে বিবেচনা করে ভিসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরকারি ও শিক্ষার্থী ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আফ্রিকার বাকি দেশগুলোর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ভিসার ক্ষেত্রে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবির অনুমোদন নিতে বলা হয়। বাস্তবে দেখা গেছে, আফ্রিকার দেশগুলোর ভিসা আবেদনের ২ থেকে ৩ শতাংশেরও কম এসবি ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে। এতে আফ্রিকার ৫৫টি দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারী শেষ পর্যন্ত ভিসা পান না। এ ছাড়া আফ্রিকার ৯টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির কারণে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রতিবন্ধকতার চার বছর পেরিয়ে গেলেও জটিলতা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এই চিঠির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবহিত নন। জানা গেছে, এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মো. শাহরিয়াজ। চিঠিটি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়। শুধু নাইজেরিয়ার নাগরিকদের প্রতারণা ঠেকাতে ইস্যু করা এই চিঠির বিষয়টি গত চার বছরে আর পর্যালোচনা করা হয়নি। এতে আফ্রিকার মতো একটি বড় মহাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, ব্যবসা ও বিনিয়োগ পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশ মোটাদাগে পোশাকশিল্প ও কৃষিপণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তবে এখন নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে। এই প্রেক্ষাপটে আফ্রিকা মহাদেশ বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনাময় বাণিজ্যক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

আফ্রিকা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ, যেখানে ৫৫টি স্বাধীন দেশ এবং প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ বসবাস করেন। মহাদেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বাড়ছে জনসংখ্যাও। সেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ এবং নগরায়ণ উল্লেখ করার মতো। সে কারণেই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নতুন পণ্য ও সেবার চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

সততার জয় পেলেন দুদকের শরীফ

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:৩০ এএম
সততার জয় পেলেন দুদকের শরীফ
শরীফ উদ্দিন

দায়িত্ব পালনে ছিলেন নিষ্ঠাবান। অনৈতিকতাকে কাছে ভিড়তে দেননি। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সততাকেই পাথেয় করেছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়ে চাকরিচ্যুত হন। তিনি হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন।

তিন বছর আইনি লড়াই চালিয়ে অবশেষে জয় পেয়েছেন তিনি। তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুধু চাকরি ফেরত নয়, রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা, সব সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলা হয়েছে। রায়ে তার চাকরিচ্যুতির আদেশকে প্রথম থেকে বাতিল (ভয়েড অব ইনিশিও) ঘোষণা করা হয়েছে। যেন বিষয়টি এমন প্রতীয়মান হয় যে তাকে কখনো চাকরিচ্যুত করা হননি। ধরে নেওয়া হবে, তিনি সব সময় চাকরিতেই বহাল ছিলেন।

তার দায়ের করা রিটের নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) এই রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের বেঞ্চ।

শুনানিতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন দোলন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হাসান। 

রায়ের পর সালাহউদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা, সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।’

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শরীফ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘তিন বছরের আইনি লড়াই শেষে হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান না হলে হয়তো এই ন্যায়বিচার পেতাম না। চাকরি হারানোর পর অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছি। এখন সব দুঃখ-কষ্ট মুছে গেল। আর কোনো দুঃখ নেই।’

কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু বড় দুর্নীতির ঘটনায় ২০২১ সালে মামলা ও তদন্ত করেছেন বহুল আলোচিত দুদকের উপসহকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। এতেই তিনি প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েন। প্রভাবশালীদের অনৈতিক প্রস্তাব, হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একপর্যায়ে প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের প্রকাশ্য হুমকির প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় জিডি করেন তিনি। এই জিডি করার ১৬ দিনের মাথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরিচ্যুত করে কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে চাকরিচ্যুতির সুনির্দিষ্ট কারণ বলা না হলেও দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) ধারা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই সরাসরি চাকরিচ্যুত করা যায় বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

আকস্মিক এই চাকরিচ্যুতির ঘটনায় বিস্মিত হন তার সহকর্মীরা। তাকে পুনর্বহালের দাবিতে দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের কয়েকটি জেলা কার্যালয়ের সামনে প্রথমবারের মতো মানববন্ধন করেন দুদকের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় গঠন করা হয় দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (ডুসা)। এর পরও কোনো সুরাহা হয়নি। তবে হাল ছাড়েননি শরীফ উদ্দিন। চাকরিচ্যুতির আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১৭ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২৪ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি শেষে গতকাল রায় ঘোষণা করা হলো। 

চাকরিচ্যুতির পরও বিভাগীয় মামলা

শরীফ উদ্দিনকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত করার পর বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিতে তাকে নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশ পেয়ে ওই বছরের ১ মার্চ তিনি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজিরা দেন। পরে অবশ্য বিভাগীয় মামলাগুলো স্থগিত করে কমিশন। 

টিআইবিও এই চাকরিচ্যুতির প্রশ্ন তুলেছিল

শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি নিয়ে সংস্থার ভেতর ও বাইরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে ‘ধোঁয়াশা’ দূর করার আহ্বান জানিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ওই সময় টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে বিশাল অঙ্কের দুর্নীতি, রোহিঙ্গা নাগরিকদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু আলোচিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও মামলা পরিচালনায় মূল ভূমিকায় ছিলেন। এসব অভিযান ও মামলায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মধ্যে যাদের বিরাগভাজন হচ্ছিলেন এই কর্মকর্তা, তাদের চাপের কারণেই কি শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী বদলি করা এবং সর্বশেষ চাকরিচ্যুত করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে। দুদককে এ বিষয়টি স্পস্ট করতে হবে। দুদকের কাছ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।

শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা এনসিপির

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:১১ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম
শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা এনসিপির
খবরের কাগজ ইনফো

দেশের রাজনীতির মাঠে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। চলমান জুলাই পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দলটিকে নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সাম্প্রতিক জরিপে ১৫ শতাংশ ভোট এনসিপির পক্ষে যাওয়ার বিষয়টিও দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াচ্ছে। 

এদিকে দলটির সাম্প্রতিক সময়ে কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। তারা বলছেন, বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের মন জয় করতে পারলে এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খুব একটা মন্দ নয়। বিদ্যমান গণসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জায়গা করতে পারলে রাজনৈতিক পরিসরে বিভিন্ন ইস্যুতে এনসিপির দর-কষাকষির সুযোগ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনসিপি জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। মিটিং করে বক্তৃতা না দিয়ে তৃণমূলে গেলে জনসমর্থন পাওয়া যায়। জরিপে যদি তিন মাসে ১৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পায়, এটাকে আমি বলব সাংঘাতিক অগ্রগতি। সুতরাং এনসিপি নির্বাচনের সময় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। জুলাই সনদও তারা ঘোষণা করবে। আসলে বাংলাদেশে যে অভ্যুত্থানটি হয়েছে আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে যেখানে প্রান্তিক লোকজন সম্পৃক্ত হয়েছিল তারা এনসিপির মধ্যে নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে পায়। যেটা অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত দলে পাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এনসিপির তৃণমূলে গিয়ে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা- এটা আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক সংস্কৃতি।’ 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে তাদের দোরগোড়ায় যেতে হবে। এনসিপি তো কিছুটা ভুলভ্রান্তি করেছে। এখন মনে হচ্ছে তারা শোধরানোর চেষ্টা করছে। সময়ই তা বলে দেবে। পত্রিকার খবরের মাধ্যমে যা দেখতে পাচ্ছি, মনে হচ্ছে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে। মানুষের সমর্থন আছে তাদের প্রতি, এটা মনে হয়।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, “জুলাই আন্দোলনের ফসল হিসেবে দেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি হিসেবে এনসিপির অভ‍্যুদয় ‘নতুন বাংলাদেশে’ বহুমাত্রিক সম্ভাবনার অন‍্যতম ক্ষেত্র। যৌক্তিক কারণেই তাদের মূল চ‍্যালেঞ্জ দীর্ঘকালের পুঞ্জীভূত কলুষিত রাজনীতির রোল মডেল পরিহার করে দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ‍্য, গ্রেপ্তার বাণিজ‍্য, জামিন বাণিজ্য, ট‍্যাগতন্ত্র ও মবতন্ত্রের মতো অপশক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করানো। রক্তক্ষয়ী বৈষম‍্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার ধারক হিসেবে জনগণের মালিকানার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মশালধারী রাজনৈতিক শক্তির দাবিদার হলেই চলবে না, সব শ্রেণি, পরিচয় ও বৈচিত্র্যের মানুষের সমঅধিকার ও সহ-অবস্থানমূলক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভীষ্ট অর্জনের চালিকাশক্তি হিসেবে নতুন ধারার রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের অংশীদাররাই যেমন তাদের মূল সমর্থক গোষ্ঠী, তেমনি একই অংশীজন তাদের সবচেয়ে বড় ওয়াচডগ, যারা তাদের যেমন বরণ করার জন‍্য প্রস্তুত থাকতে পারে, তেমনি অতি সহজেই তাদের প্রত‍্যাখ‍্যানও করতে পারে।”

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি চলছে এনসিপির। গত ১ জুলাই শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি। 

বুধবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী দেশের তিন ভাগের এক ভাগ জেলায় (২২টি) জুলাই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

‘জুলাইয়ের সন্তানেরা আসবে দ্বারে দ্বারে, ক্ষমতা আসুক নেমে জনতার কাতারে’ শিরোনামে নির্মিত দলটির ১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। 

জুলাই পদযাত্রার সার্বিক বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনসিপিকে মানুষ সমর্থন দেবে এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। জুলাই পদযাত্রায় এসে আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যুবক, বৃদ্ধ, শিশু থেকে শুরু করে সবাই আমাদের সমর্থন জানাচ্ছেন। তারা পরিবর্তন চান। এনসিপিকে মাঠে আরও দৃশ্যমান দেখতে চান। গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা নাহিদ, হাসনাত, সারজিসদের সরাসরি দেখে মানুষ আরও উচ্ছ্বসিত। সবাই আমাদের আরও দম নিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’ 

এনসিপির একাধিক নেতা জানান, জুলাই পদযাত্রায় অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের পরিবারকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই সব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এনসিপির নেতারা মতবিনিময় করছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সমাবেশ। বিভিন্ন বাজার, চায়ের দোকান ঘুরে সর্বস্তরের লোকজনের সঙ্গে তারা ভাববিনিময় করছেন। অনেকে গণ-অভ্যুত্থানে তাদের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসছেন।

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (খ্রিষ্টান, সাঁওতাল) প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কথা বলছেন।

অন্যদিকে দলের নারীনেত্রীদের নিয়ে মানুষকে আলাদা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন বয়সের নারীরা। জুলাই পদযাত্রা নিয়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘পথসভাগুলোতে মানুষের ঢল নামছে সেটার ছবি ভিডিও পাচ্ছি আমরা কিন্তু মাইলের পর মাইল হাঁটার সময় বাসা-বাড়ির বারান্দায় ছাদে মা, কিশোর কিশোরী, বয়স্ক ও মুরব্বি শ্রেণির মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা, সালাম দেওয়া-নেওয়া, হাসিবিনিময়- এসবের অনুপ্রেরণা অনন্য লেভেলের। কারণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন যেন দুর্লভ হয়ে গিয়েছিল এই দেশে। অরাজনৈতিক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সমর্থন বহু বছর যেন বাংলাদেশের রাজনীতি দেখে না। এনসিপি ধন্য, শুধু নিজেদের প্রমাণ করে করে সামনে এগোনো।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাজধানীতে পয়লা বৈশাখসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে এনসিপির লোকসমাগম কিছুটা কম হওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। এই সময় কেউ কেউ এনসিপির পক্ষে রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান করা সম্ভব কি না, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে এনসিপির শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থান তৈরির পরামর্শ দেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে বলেন। তারপর থেকে এনসিপিকে দলের নিবন্ধন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে কাজ করতে দেখা যায়। তারই অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৯ জুনের তথ্য অনুযায়ী ৫টি মহানগর কমিটি, ৩৪ জেলা কমিটি, ১৯০ উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া গঠন করা হয়েছে ১৪টি সেল ও ১০টি উইং।

জুলাই পদযাত্রার আগে গঠিত এসব কমিটির সদস্যরা কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। নতুন নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে সংগঠনের পরিসর বাড়াচ্ছেন। কর্মসূচির ছবি, ভিডিও দেখে নতুন করে ভাবছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অনেকে বলছেন, ৬৪ জেলায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরে যাওয়া সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। জুলাই পদযাত্রা শেষ করে দলটি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে। তখন তাদের পক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করা অনেক সহজ হবে। 

গত ৭ জুলাই প্রকাশিত সানেম এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের ফলও এনসিপিকে আশা দেখাচ্ছে। সেই জরিপ অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জামায়াত ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং এনসিপি ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে।

দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পদযাত্রা আমাদের ব্যাপক আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন প্রমাণ করছে, তারা জুলাই হত্যার বিচার এবং সংস্কার চান। এই ইস্যুতে আমাদের কর্মসূচি আরও জোরালো হবে। নির্বাচনি জোট নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।’

রাজধানীতে টানা বৃষ্টি: বিক্রি কম, বিপাকে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
রাজধানীতে টানা বৃষ্টি: বিক্রি কম, বিপাকে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
ছবি: খবরের কাগজ

আষাঢ়ের শেষভাগে টানা বর্ষণে রাজধানী ঢাকা যেন পরিণত হয়েছে এক ভোগান্তির নগরীতে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টির ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা, যানজট এবং পরিবহনসংকটে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।

বুধবার (৯ জুলাই) ভোর থেকে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি ও ভারী বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ এবং পথচারীরা।

রাজধানীজুড়ে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, তেমনি বিপাকে পড়েছেন হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলচালকরা। ফুটপাত কিংবা অস্থায়ী দোকানে ব্যবসা করা হকারদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাদের আশঙ্কা, বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

মালিবাগে কথা হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিমর সঙ্গে। সে জানায়, প্রতিদিন টানা বৃষ্টিতে স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় পানি, কাদা, বাস পাওয়া যায় না, রিকশাও নেয় না। বই-খাতা সব ভিজে যাচ্ছে।

এমন ভোগান্তির ছবি দেখা গেছে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, রামপুরা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ অধিকাংশ এলাকায়। কোথাও কোথাও হাঁটুসমান পানি (অস্থায়ী) জমে থাকায় সাধারণ মানুষ হেঁটেই পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গণপরিবহনসংকটে অনেকেই বাধ্য হয়ে রিকশা-সিএনজিতে দ্বিগুণ ভাড়া গুনেছেন। গুলিস্তানে কর্মরত বেসরকারি কর্মকর্তা মো. রফিক বলেন, অফিসে পৌঁছাতে আগে যেখানে ৫০ টাকা লাগত, এখন সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাগছে। আর বিকেলে ফেরার সময় তো রিকশাও পাওয়া যায় না।

যদিও পাল্টা যুক্তিও রয়েছে রিকশাচালকদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানের ছাউনির নিচে রিকশা ফেলে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে চালকদের। রিকশাচালক আজম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে যাত্রীরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হয় না, তাই ভাড়া কম পাই। রিকশার চাকা না ঘুরলে খাওয়াও জোটে না।’ ভাড়া বেশির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশা চালানো বহু কষ্টের। তাই ভাড়া একটু বেশি হতেই পারে।’

পল্টনের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মতিউর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানজট বেশি। তাই আমরা একটু বেশি ভাড়া নিচ্ছি। সময় বেশি লাগে।’

এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফুটপাতে দোকান বসানো কঠিন হয়ে গেছে, বিক্রিও অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান তারা। বৃষ্টি আর কাদা জমে থাকায় ক্রেতারা আসছেন না, পণ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। রাজাবাজার এলাকার হকার রফিক বলেন, বৃষ্টিতে দোকান বসানোই যাচ্ছে না। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

শাহবাগ এলাকায় লোকাল বাসে চড়ে মোবাইল ফোনসংশ্লিস্ট সামগ্রী বিক্রি করেন হকার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই মানুষ বাইরে বের হয় না। তাই বেচাকেনাও হয় না। গত তিন দিনে ঠিকমতো চালান ওঠানো যায়নি। 

অন্যদিকে অলিগলিতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ব্যবসায় ধস নামার কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে খাবার, কাপড় ও মোবাইল অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ক্রেতা আসছে না বললেই চলে।

রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত মোটরসাইকেলচালকরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে তারা রাস্তায় বের হতে পারছেন না, আবার বের হলেও যাত্রী কম, আয়ও কম। রাইড শেয়ারিংচালক শাহিনুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাইক চালাতে হয়। রাস্তায় পানি, জ্যাম-সব মিলিয়ে একেকটা ট্রিপে সময় লাগে দ্বিগুণ। কিন্তু আয় তার অর্ধেক।’

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ কমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ টিম গঠন করে কাজ চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য অস্থায়ী পাম্প বসানো হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা কাজ করছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে জানানোর জন্য বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

একই ধরনের কাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সংস্থাটির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, বিরামহীন বৃষ্টিতে ডিএনসিসির মিরপুর-১০, ভাটারা প্রধান সড়ক, কাওলা বাসস্ট্যান্ড, এয়ারপোর্ট পুলিশ বক্স, উত্তরখানের বিভিন্ন সড়ক, দারুস সালাম রোড সড়কে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৌশল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ যৌথভাবে ডিএনসিসির আওতাধীন ১০টি অঞ্চলে খোলা নর্দমা, ঢাকনাযুক্ত নর্দমা, পাইপলাইন, নর্দমার আউটলেট পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা বৈঠক মৌলিক ইস্যুতে এখনো অনৈক্য

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৭ এএম
মৌলিক ইস্যুতে এখনো অনৈক্য
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে এ পর্যন্ত আলোচ্য ১৪টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র ছয়টিতে দলগুলো একমত হতে পেরেছে। তবে বারবার আলোচনার পরও রাষ্ট্রের মূলনীতি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিসহ এখনো অন্তত আটটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ ছাড়া কমিশনের আলোচনায় এখনো ওঠেনি আরও ছয়টি মৌলিক ইস্যু।

এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে জানান, সাংবিধানিক মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য গড়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। আর কমিশন সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদিকে চলতি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ কমিশন জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। 

তারা জানান, মতানৈক্য থাকা মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে অনেক দল আরও আলোচনার কথা বলেছে, কমিশন তাতে নমনীয়তা দেখিয়েছে, কয়েকটি প্রস্তাবে সংশোধনীও আনা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে গত ৩ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১০টি বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আমন্ত্রিত ২৮টি রাজনৈতিক দল ও দুটি জোটের প্রতিনিধিরা। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পেরেছে। সেগুলো হলো- সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ। তবে ছয়টি নতুন বিষয়সহ এখনো অমীমাংসিত আরও আটটি বিষয়।

বিগত বৈঠকগুলোতে আলোচনার পর এখনো ঐক্য না হওয়া বিষয়গুলো হলো- রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি (যার আগে প্রস্তাবিত নাম ছিল জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল- এনসিসি), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি) এবং সংসদে নারী আসন নির্ধারণ (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি)। 

চলতি দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এখনো অন্তত ছয়টি মৌলিক ইস্যুতে আলোচনা করতে পারেনি ঐকমত্য কমিশন। সেগুলো হলো- সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, সংসদ সদস্যদের একাধিক পদে থাকার বিধান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, এ দফায় কমিশনের আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পেরেছে। এটা খুবই ইতিবাচক। তবে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, সংবিধান যাতে কথায় কথায় পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। আসলে সাংবিধানিক মৌলিক বিষয়ের সংস্কারে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়া খুব দুরূহ ব্যাপার। তার পরও কমিশন দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

দ্বিতীয় দফায় আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত সবগুলো বিষয়ে আমরা হয়তো একমত হব না- এটাই বাস্তবতা। আর সেটা কখনোই আমাদের লক্ষ্য ছিল না। প্রথম দফায় যেগুলোতে তারা একমত হতে পারেনি তার মধ্যে কিছু বিষয় বাদও দিয়েছি। যেমন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে মূলনীতিতে বহুত্ববাদ ছিল। পরে এ বিষয়ে আলোচনায় আপত্তি ওঠায় এ দফায় সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় পরে সেটা নতুন নামে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি হিসেবে কমিশন সভায় পরিবর্তিত রূপে এই বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। 

তিনি বলেন, প্রথম দফার বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ২০টি মৌলিক বিষয় আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে আলোচিত ১৪টি বিষয়ের মধ্যে ঐকমত্য হলেও এখনো অমীমাংসিত রয়েছে আটটি বিষয়। এ ছাড়া অনালোচিত আরও ছয়টি বিষয়- যেমন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ ১০ বছর রাখা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে দলগুলো ঐক্যের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। আশা করি, পরবর্তী আলোচনায় এসব বিষয়সহ বেশির ভাগ বিষয়ে তারা একমত হতে পারবেন।’ 

জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ তৈরির কাজ কত দূর এগিয়েছে- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। দলগুলো আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে তারা এই জাতীয় সনদে সই করবে। এ দফায় কমিশনের বৈঠকে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনায় যতগুলো বিষয়ে দলগুলো একমত হবে, সেসব বিষয় সংযুক্ত রেখেই সনদ তৈরির কাজ এগোচ্ছে। সনদ তৈরি হওয়ার পর কমিশনের পক্ষ থেকে সব দলের কাছ থেকে তাতে স্বাক্ষর নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ 

চলতি দ্বিতীয় দফার বৈঠক কতদিন চলবে, জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি জানান, সেটা তারা নির্ধারণ করেননি। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশনের বৈঠককে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বৈঠক করা সম্ভব হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে দলগুলোর প্রতিনিধিদের পক্ষে প্রতিদিন সময় দেওয়া কঠিন। সে কারণে কিছুটা বিরতি রেখে বৈঠকে বসা হচ্ছে। তবে আশার ব্যাপার এই, দলগুলো অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কথা বলছে। প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব অবস্থান পরিষ্কার করছে, পাশাপাশি অন্যের মতও শুনছে। একই সঙ্গে ভিন্নমতের বিষয়গুলোতে এক জায়গায় আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। 

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবর সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব কমিশনের মধ্যে জনপ্রশাসন ছাড়া বাকি পাঁচ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাদের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো এবং একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা। 

সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ আগস্ট। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম ধাপের কার্যক্রম শুরু করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর কমিশনগুলোর ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩৩টি দল কমিশনকে মতামত জানায়। গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম ধাপের আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি জানান, প্রথম দফায় কমিশন ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি বৈঠক করেছে। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক করেছে কমিশন। তবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক অনেক বিষয়েই দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য ছিল। এরপর সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে গত ২ জুন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের বৈঠকের উদ্বোধন করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে শুরু হয় বৈঠক।