
ভোলার বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪০ বছরের পুরোনো সঞ্চালন লাইন দিয়ে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একটু বৃষ্টি বা ঝড়ো হাওয়া হলেই বিতরণ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুরোনো এই তার বন বিভাগের গাছের ভেতর দিয়ে আসায় ঝুঁকি এড়াতে বিদ্যুৎ বিভাগ বাধ্য হয়ে এ পদক্ষেপ নেয়। এতে শহরবাসী নিরবচ্ছিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
কিন্তু চাইলেই এ সমস্যার সমাধানের সুযোগ রয়েছে। এক বছর আগে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করা হয়। তবে বন বিভাগের গাছের কারণে এই লাইনটি চালু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যদিও বন বিভাগ জানিয়েছে, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বছর আগে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেবি ধারণ ক্ষমতার ৪২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। আধুনিক মানের এ লাইন ৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড নিতে পারবে। বর্তমানে এ লাইনের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার অংশ বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু জেলা সদরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসটার্মিনাল থেকে মাদ্রাসা বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশের সঞ্চালন লাইন গাছের ডালপালায় জড়িয়ে আছে। তাই পুরো লাইনটি চালু করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ৪০ বছরের পুরোনো লাইনের মাধ্যমে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনতে হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলা সদরের সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি বিকল হওয়ার পর ৪২ কিলোমিটার দূরের বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
সদরের আলী নগর মাদ্রাসা বাজার এলাকার গ্রাহক মো. শামসুদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সামান্য বাতাস হলেই গাছের ডাল ভেঙে তারের ওপর পড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ অফিস লাইন বন্ধ করে দেয়। তখন আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা দিনের পর দিন বিদ্যুৎবঞ্চিত হচ্ছি। আশা করি বন বিভাগ দ্রুত গাছগুলো অপসারণ করে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবে।’
ওই এলাকার আরেক গ্রাহক মাইনুল এহসান বলেন, ‘আমাদের দ্বীপের গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রথম দিকে ভালোই পেয়েছি। আজকে এক বছর ধরে আমরা বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যায় আছি। সঞ্চালন লাইন গাছের ভেতর দিয়ে গেছে, তাই সামান্য বাতাস হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাই না। দ্রুত গাছগুলো অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।’
বিদ্যুৎ অফিস জানিয়েছে, অত্যাধুনিক এ সঞ্চালন লাইনটি চালু না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছে না। আকাশে মেঘ জমলে বা সামান্য বিদ্যুৎ চমকালেই পুরো শহর বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে যায়। পুরোনো লাইন প্রয়োজনীয় লোডও নিতে পারে না। এ কারণেও শহরে লোডশেডিং দিতে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ের তাপদাহে বয়স্ক রোগী ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুনতে হচ্ছে লোকসান। তাই দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ওজোপাডিকোর (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানিয়েছেন, আমাদের রেন্টাল ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি বন্ধ হওয়ার কারণে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে। তবে লাইন পুরোনো হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য নতুন একটি লাইনও টানা হয়েছে। ওই লাইনটি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে মাদ্রাসা বাজার পর্যন্ত বন বিভাগের তিন কিলোমিটার অংশের গাছের কারণে চালু করতে পারছি না। এই গাছগুলো দ্রুত অপসারণ করা গেলে ভোলা শহরের বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা হলেও লাগব হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপকূলীয় বনবিভাগ ভোলার কর্মকর্তা জহিরুল হক বলেন, গাছগুলো অপসারণের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রির সব প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দ্রুত সেগুলো অপসারণের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।