
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আবাসিক ভবন জবরদখলে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভবন মালিককে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া দেয় না। ভাড়া পরিশোধ না করায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু সাঈদ সুমনের দাপটে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি দখলে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্রসহ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনাসংক্রান্ত কোনো লাইসেন্স ও সরকারি বৈধতা এবং ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগপত্রের কাগজপত্র নেই প্রতিষ্ঠানটির। সবকিছু ‘নাই’-এর মধ্যেও দাপটের সঙ্গে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি, যা ৪ জুলাই বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস।
২০১৫ সালে ৪ বছরের জন্য ভবনটি ভাড়া নেয় সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে সময় ১০ লাখ টাকা অগ্রিম ও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সই করেন ডা. মো. রেজাউল ইসলাম। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ভবনের ছাদে আরও একতলা নির্মাণ করেন তিনি। মালিকের ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) অনুমোদনবিহীন পঞ্চমতলায় ভারী যন্ত্রপাতি ও ডাক্তারদের চেম্বার নির্মাণ করা হয়।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ৩০ মাসের ভাড়া পরিশোধ না করায় তাগাদা দিতে থাকেন ভবনের মালিক মো. সৈয়দ মিয়া। ভাড়া পরিশোধ না করলে ভবন ছেড়ে দিতে বলেন তিনি। এতে ঘর ভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদালতে ২০১৮ সালের ৩০ মে একটি মামলা করেন ডা. রেজাউল। বাড়িওয়ালা সৈয়দ মিয়ার দাবি করা ৩০ মাসের ভাড়া না দিয়ে পরবর্তী সময়ে আদালতে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন তারা। পরে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলাটি খারিজ করে দেন ওই আদালত।
এদিকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। এতে ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলতে বলা হয়। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল ভবনের মালিক সৈয়দ মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রবর্তন মোড় এলাকায় খুবই কম টাকায় আমি ভবনটি ভাড়া দিয়েছিলাম। ডা. রেজাউল আর আমার বাড়ি হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়া এলাকায়। তাই নামে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় ভবনটি ভাড়া দিয়েছিলাম। আমার সরল বিশ্বাসকে তিনি দুর্বলতা ভেবে বারবার প্রতারণা করে যাচ্ছেন। আমাকে ৩০ মাসের ভাড়া না দিয়ে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই আদালতে যান তারা। এটি ছিল তাদের একটা কূটকৌশল। কিন্তু আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এরপরও তারা ভবনটি ছাড়ছেন না। আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হয়, আমি যেন ভবনের আশপাশে না যাই।’
তিনি আরও বলেন, ৪ বছরের চুক্তি থাকলেও প্রায় ১০ বছর ভবনটি দখলে রেখেছেন তারা। চুক্তির মেয়াদ ৪ বছর শেষে ২০১৯ সাল থেকে ২৫ শতাংশ বর্ধিতহারে ভাড়া দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। সেটিও তারা মানেননি।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী গত ৪ মার্চ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তিনি হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়ন পাননি। নোংরা পরিবেশসহ নানা অনিয়ম দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র হালনাগাদ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাগজপত্রসহ টাকা জমাদানের রসিদপত্র তারা হালনাগাদ দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি পরিদর্শন করার পর বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রবর্তক মোড়ের সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের জন্য নির্দেশনা এসেছে। বর্তমানে এটি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালটি খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম পুনরায় আবেদন করেছেন। কিন্তু বিষয়টি এখন আমার হাতে নেই। সবকিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে।’
সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. রেজাউল ইসলামকে অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত রয়েছি। আগামীকাল ফোন করেন বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরদিন একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’
সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালের ম্যানেজার অমিত বড়ুয়া রানার বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি খবরের কাগজকে জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সময় চেয়ে আবেদন করা হলেও সময় দেয়নি। ফলে হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে।