
বগুড়ায় নাশকতার ২৪৬টি মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ধীরে চলো নীতির পাশাপাশি নানা কারণ দেখিয়ে আসামিরা বারবার সময় নিচ্ছেন। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে চালানো তাণ্ডবের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে চালানো নাশকতার ঘটনায় পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এসব মামলা করে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মো. আব্দুল মতিন জানান, সব কটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। রায় হয়নি একটি মামলারও। এসব নাশকতার মামলার আসামি হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নতুন করে মামলা দিয়েছে।
বগুড়া পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে- এমন গুজব ছড়িয়ে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ এবং তারপর বিভিন্ন সময় বগুড়ায় ১১টি পুলিশ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতার ঘটনায় মামলা হয় ১০৪টি। এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যাদের বেশির ভাগই জামায়াত-বিএনপির সমর্থক। ২০১৩ সালে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা নাশকতার ঘটনায় মামলা হয় ৬৬টি। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ জনের বিরুদ্ধে। বিচার চলছে সব কটি মামলারই। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে অন্যান্য মামলায় আসামি পক্ষের মতোই এসব মামলার আসামিরাও সময় নিচ্ছেন বারবার। আবার কখনো কখনো রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বিভিন্ন কারণে। ২০১৫ সালে বগুড়ার বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলা হয় ৭৬টি। এসব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বগুড়ার ১২টি থানা এলাকায় বিভিন্ন সময় নাশকতার মামলায় আসামি করা হয় প্রায় দেড় লাখ মানুষকে। তবে তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা মামলাগুলোতে দেখা যায়, বগুড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা এরশাদুল বারী এরশাদ, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সিফার আল বখতিয়ার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা পরিমল চন্দ্র দাস, বিএনপি নেতা মাজেদুর রহমান জুয়েল নাশকতার অন্তত ৩০০ মামলায় নতুন করে আসামি হয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন বলেন, নাশকতার মামলাগুলোতে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক যারা নতুন করে আসামি হয়েছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ১০-১২ বছর আগের ১০ থেকে ৩০টি পর্যন্ত নাশকতার মামলা হয়েছে।
বগুড়া বারের সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, নাশকতার মামলাগুলোর আসামিদের পক্ষে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সদস্য এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌঁসুলিরা পক্ষ নেওয়ায় বিচারকাজে প্রভাব পড়ছে। রাষ্ট্রপক্ষ ধীরে চলছে। এ ধরনের অভিযোগে ওই সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে কারণ দর্শনোর নোটিশও দেওয়া হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মতিন স্বীকার করেছেন, ১০ বছর আগের করা নাশকতার কয়েকটি মামলায় সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনায় করা মামলায় কোনো সরকারি কৌঁসুলি আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি।