ঢাকা ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হত্যা-নাশকতার ২৪৬ মামলার রায় হয়নি ১০ বছরেও

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০২:০০ এএম
হত্যা-নাশকতার ২৪৬ মামলার রায় হয়নি ১০ বছরেও
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় নাশকতার ২৪৬টি মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ধীরে চলো নীতির পাশাপাশি নানা কারণ দেখিয়ে আসামিরা বারবার সময় নিচ্ছেন। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে চালানো তাণ্ডবের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে চালানো নাশকতার ঘটনায় পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এসব মামলা করে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মো. আব্দুল মতিন জানান, সব কটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। রায় হয়নি একটি মামলারও। এসব নাশকতার মামলার আসামি হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নতুন করে মামলা দিয়েছে। 

বগুড়া পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে- এমন গুজব ছড়িয়ে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ এবং তারপর বিভিন্ন সময় বগুড়ায় ১১টি পুলিশ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতার ঘটনায় মামলা হয় ১০৪টি। এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যাদের বেশির ভাগই জামায়াত-বিএনপির সমর্থক। ২০১৩ সালে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা নাশকতার ঘটনায় মামলা হয় ৬৬টি। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ জনের বিরুদ্ধে। বিচার চলছে সব কটি মামলারই। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে অন্যান্য মামলায় আসামি পক্ষের মতোই এসব মামলার আসামিরাও সময় নিচ্ছেন বারবার। আবার কখনো কখনো রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বিভিন্ন কারণে। ২০১৫ সালে বগুড়ার বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলা হয় ৭৬টি। এসব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বগুড়ার ১২টি থানা এলাকায় বিভিন্ন সময় নাশকতার মামলায় আসামি করা হয় প্রায় দেড় লাখ মানুষকে। তবে তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। 

বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা মামলাগুলোতে দেখা যায়, বগুড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা এরশাদুল বারী এরশাদ, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সিফার আল বখতিয়ার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা পরিমল চন্দ্র দাস, বিএনপি নেতা মাজেদুর রহমান জুয়েল নাশকতার অন্তত ৩০০ মামলায় নতুন করে আসামি হয়েছেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন বলেন, নাশকতার মামলাগুলোতে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক যারা নতুন করে আসামি হয়েছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ১০-১২ বছর আগের ১০ থেকে ৩০টি পর্যন্ত নাশকতার মামলা হয়েছে। 

বগুড়া বারের সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, নাশকতার মামলাগুলোর আসামিদের পক্ষে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সদস্য এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌঁসুলিরা পক্ষ নেওয়ায় বিচারকাজে প্রভাব পড়ছে। রাষ্ট্রপক্ষ ধীরে চলছে। এ ধরনের অভিযোগে ওই সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে কারণ দর্শনোর নোটিশও দেওয়া হয়। 

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মতিন স্বীকার করেছেন, ১০ বছর আগের করা নাশকতার কয়েকটি মামলায় সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনায় করা মামলায় কোনো সরকারি কৌঁসুলি আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি।

ঈদের ছুটিতে সজাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
ঈদের ছুটিতে সজাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঈদকেন্দ্রিক যাতায়াত, পশুবাহী যানবাহন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধ, চামড়া পাচার রোধ এবং ‘ফাঁকা’ ঢাকায় নগরবাসীর নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় তিন পর্যায়ের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

এ বিশেষ সময়ে সেনাবাহিনীর বাড়তি নজরদারি, টহল, চেকপোস্ট ও অভিযান অব্যাহত থাকছে। পাশাপাশি র‌্যাব, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশও বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে ঈদের ছুটিকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায়। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের শহর এলাকাতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 

বুধবার (৪ জুন) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে সব ইউনিটকে বিশেষ নজরদারিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঈদে ঘরমুখী মানুষের চলাচল, কোরবানির পশুর হাট ঘিরে যে ধরনের অপরাধ ঘটে থাকে, সেসব বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। বিশেষ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ পুলিশকে অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ সংঘবদ্ধ অপরাধী ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সজাগ রয়েছে। জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। 

ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম, মোবাইল প্যাট্রোল, ক্যাম্প, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, চেকপোস্ট এবং সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঈদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে র‌্যাব সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

রাজধানীতে তিন পর্যায়ের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা

এদিকে রাজধানীর নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্বে থাকা ডিএমপি নগরবাসীর ঈদকে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক করতে তিন পর্যায়ের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। 

সেগুলো হচ্ছে ঈদের আগে, ঈদের দিনে এবং ঈদ-পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা। 

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ওই তিন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। 

সাদাপোশাকে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল, প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ, চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযানসহ সার্বিকভাবে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ।

তিনি জানান, ঈদের আগের ব্যবস্থাপনায় রাজধানী ঢাকা থেকে বের হওয়ার বা প্রবেশপথগুলো যানজটমুক্ত রাখা, টার্মিনালকেন্দ্রিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, টার্মিনাল ও পশুর হাটকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও জাল নোটের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান চলছে।

অন্যদিকে ঈদের দিনের নিরাপত্তায় মূলত, ঈদের জামাতকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। বড় ঈদগাহে নিশ্চিত করা হবে বাড়তি নিরাপত্তা। পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র বা এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি ও টহল থাকবে। যাতে ইভ টিজিং, উচ্চ শব্দে ও বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল রোধ করা যায়। এ ছাড়া ঈদুল আজহার দিনে পুলিশ চামড়া পাচার রোধে চেকপোস্ট ও নজরদারি বাড়াবে।

এ ছাড়া ঈদ-পরবর্তী ‘ফাঁকা’ রাজধানীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও পুলিশ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল ও নজরদারি বাড়ানো হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। এ ছাড়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলমান আছে, সেটিও অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণের কবলে দেশ

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণের কবলে দেশ
ফাইল ছবি

দেশে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দুই যুগ পার হলেও এখন সঠিক ও কার্যকর বিকল্প তৈরি হয়নি। ফলে দৈনন্দিন জীবনে উল্টো বেড়েছে এর ব্যবহার। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভবিষ্যতে বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্লাস্টিক দূষণ অনেক বড় কারণ হয়ে উঠবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় আজ ৫ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘এন্ডিং প্লাস্টিক পলিউশন’ এবং স্লোগান হচ্ছে ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’।  পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এর ভাবানুবাদ করেছে ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এবং  ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ২০০২ সালে দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার দুই যুগ পার হলেও সেই নিষেধাজ্ঞাটা কার্যকর করা যায়নি। বর্তমান সরকারকে আমরা এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়ন নেই। পলিসি বাস্তবায়নে আমাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব প্লাস্টিক কারখানা তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সেখানেও অনেকের কর্মসংস্থান আছে। তাই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পলিসি নিতে হবে।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন নিয়ে জনগণ সচেতন আছে। কিন্তু প্লাস্টিকের বিকল্প বের করতে হবে। যেটা সহজে সবাই ব্যবহার করতে পারবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। রিসাইক্লিং করতে হবে। একবার ব্যবহার করা হয়, এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার দৈনন্দিন জীবন সাময়িক সহজ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় ক্ষতি করছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ দশকে বিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতিবছর আনুমানিক আট মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য মহাসাগরে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশেও নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার দ্রুতই বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানীতে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ বছরে গড়ে সাড়ে ২২ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করছে। যার বড় অংশ খাল, জলাশয় হয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে। চলতি বছর গবেষণা জার্নাল স্প্রিঞ্জারে প্রকাশিত প্রবন্ধ অনুযায়ী, আগামী ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অধিক ঝুঁকি তৈরি করবে। যার অন্যতম কারণ হবে প্লাস্টিক দূষণ।

অন্যদিকে প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে প্লাস্টিকের স্তর জমা হচ্ছে; যা আমাদের খাবারের চক্রে প্রবেশ করছে। সামনে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানবস্বাস্থ্য ও জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিচ্ছে, মহাসাগরকে দূষিত করছে এবং বন্য প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।’ প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আগামী দিনে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য বিএনপির বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান চরম অবনতিশীল জলবায়ু সংকট ও শিল্পদূষণের প্রেক্ষাপটে এখন একটি বাস্তবমুখী ও দূরদর্শী জাতীয় কৌশল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন। বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পায়, তাহলে আমরা নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়ার অঙ্গীকার করছি, যাতে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা করা যায়।’

জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন ৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ও প্রচার এবং পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ প্রদানের জন্য তিনজন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ব্যক্তিপর্যায়ে মনোনীতরা হলেন পঞ্চগড়ের মাহমুদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সিডিএ আবাসিক এলাকার মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ও প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ। আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকার ধামরাইয়ের ‘স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড’, পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট’ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মিতু হত্যার ৯ বছর: সাক্ষ্য দিতে আসেন না ৯৬ জনের কেউই

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
মিতু হত্যার ৯ বছর: সাক্ষ্য দিতে আসেন না ৯৬ জনের কেউই
মাহমুদা খানম মিতু

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো বুধবার (৫ জুন)। ২০১৬ সালের এই দিনে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মিতু। 

মিতু হত্যা মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন নিহতের স্বামী বাবুল আকতারসহ পাঁচজন। কিন্তু সরকার পতনের পর থেকে এ মামলার ৯৬ সাক্ষীর মধ্যে কেউই সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না। শুধু একজন সাক্ষী গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে আসেন। তাও তিনি সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এএসপি কামরুজ্জামান। 

গত রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে বাবুল আকতারের আইনজীবী কফিল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের পর থেকে ৯৬ সাক্ষীর মধ্যে একজন ছাড়া কেউ আসেন না। অথচ এর আগে পিবিআই সবাইকে হাজির করত। যারা এ মামলা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তাদেরও অনেকে পলাতক। 

আলোচিত মিতু হত্যা মামলা নিয়ে আরেক সাক্ষী ও পরে আসামি এহতেশামুল হক ভোলা একাধিকবার বক্তব্য দেন। 

সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে তিনি সাংবাদিকের বলেন, ‘এটা পুরোটাই পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার পরিচালিত নাটক। বাবুল আকতার রিয়াজউদ্দিন বাজারে চোরা স্বর্ণের মার্কেটে অভিযান চালান। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের একটি অংশ লেগে যায়। তিনি সৎ, যোগ্য কর্মকর্তা। বনজ বলেছিলেন সেই অভিযান না চালাতে। বাবুল স্যার শোনেননি। এটা প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব।’

তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী। বাবুল স্যারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় আমাকেও ফাঁসানো হয়েছে।’ মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী করতে তাকে হাত-চোখ বেঁধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানোর কথা উল্লেখ করে ভোলা বলেন, ‘আমার স্ত্রী-সন্তান সবাইকে জিম্মি করেছিল। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার আগে আমার বোন এ বিষয়ে জিডি করে। আমি আদালতকে জানিয়েছি আমাকে জোর করা হয়েছে।’ 

গত ৪ ডিসেম্বর পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আকতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। এর আগে ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট তাকে ৬ মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেন। তবে তার শ্বশুর সেই জামিন আবেদন বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। 

বাবুল আকতারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন খবরের কাগজকে রবিবার দুপুরে তার দপ্তরে বলেন, ‘২০১৬ সালের ৫ জুন এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হন। এ ঘটনায় বাবুল আকতার মামলা করেন। পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেছেন। এ সময়ে ৯ জনকে শনাক্ত করা হয়। সেখানে বাবুল আকতারের নাম ছিল না। ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দিন নিজ থেকে একটি আদেশ দেন। 

আদেশে বলেন, এই মামলার অগ্রবর্তী রিপোর্ট পরের বছর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দিতে হবে। ওই সময় মামলাটি তদন্ত করছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এএসপি কামরুজ্জামান। 

সূত্র জানায়, পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে চট্টগ্রাম পিবিআইয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১০ মে বাবুল আকতারকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ঢাকা থেকে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ মে তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে একটি অভিযোগ নেওয়ার পর তার ওপর ভিত্তি করে বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’ 

আইনজীবী আরও বলেন, ‘এ মামলায় ৯৬ সাক্ষীর মধ্যে কোনো সাক্ষীই এখন আসেন না। তার জামিনের পর থেকে ৪টা তারিখ পড়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এএসপি কামরুজ্জামান এসেছিলেন। সর্বশেষ তারিখ ছিল ২১ মে। মামলাটি বর্তমানে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আদালত পরবর্তী ১৯ জুন শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন’ এ বিষয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা তো প্রতিবেদন দাখিল করে দিয়েছি। এরপর প্রসিকিউশনের কাজ। আমাদের আর কোনো কাজ নেই।’ 

সরবরাহ বাড়ায় আগের দরেই মসলা বিক্রি

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
সরবরাহ বাড়ায় আগের দরেই মসলা বিক্রি
ফাইল ছবি

‘ঈদুল আজহার আর মাত্র তিন দিন বাকি। কিন্তু মসলার দাম এবার বাড়েনি। আগের দরেই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে মসলা। এলাচের কেজি ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা, দারুচিনি ৬০০ টাকা কেজি, লবঙ্গ দেড় হাজার টাকা। অন্য মসলার দামও বাড়েনি।’

রাজধানীর মোহম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা পলাশ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী পলাশ পাল মসলার দামের ব্যাপারে গতকাল বুধবার খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান। 

কৃষিমার্কেট, নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও একই একই কথা বলেছেন। তারা বলেন, কাস্টমাররা স্বস্তিতে মসলা কিনতে পারছেন। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, এবার সরবরাহ বাড়লেও কাস্টমার নেই। তাই দাম কম। 

কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ আলীসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে জানান, অন্য বছরে দাম বাড়লেও এবারে স্বস্তি দেখা গেছে। ঈদ ঘনিয়ে এলেও দাম বাড়েনি। আগের দরেই বিভিন্ন মসলা বিক্রি হচ্ছে। 

কৃষিমার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা এম এ তাহেরও বলেন, ‘এবার মানুষের টাকা কমে গেছে। আগের মতো বিক্রি হয় না। দাম বাড়বে কী করে। জিরার কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ 

আমদানিকারকরাও বলেছেন, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এবার দেশে পর্যাপ্ত মসলার আমদানি হয়েছে। ঈদের বাড়তি চাহিদা বিবেচনা করে তিন মাস আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে মসলা আমদানি করা হয়। তাই এবার মসলার দাম বাড়েনি।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার প্রচুর গরম মসলা আমদানি হয়েছে। কিন্তু কাস্টমার নেই। বিক্রি কম। এ ছাড়া চোরাইপথেও প্রচুর মসলা আসছে। তাই দাম বাড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার মৌলভীবাজারে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি, চায়না দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪১০, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৪৬০ থেকে ৪৬৫, লবঙ্গ ১ হাজার ২৫০, এলাচ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৮০০, কাঠবাদাম ১ হাজার ১৭৫, কাজুবাদাম ১ হাজার ৬০০, পেস্তাবাদাম ২ হাজার ৬০০, কিশমিশ ৬২০ ও আলুবোখারা ৪২৫ টাকা কেজি।’ 

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষ পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের চাহিদা বাড়লেও দাম বাড়েনি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। তারা বিভিন্ন বাজারে আগের মতোই ডালিতে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রির জন্য। 

টাউন হল বাজারের মো. অলি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাবনা ও রাজশাহীর ভালো পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। আর দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০, দেশি আদা ১৪০ থেকে ১৬০ এবং আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি।’

হাতিরপুলসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও জানিয়েছেন, এবারের ঈদে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম বাড়েনি। 

চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কঠোর সরকার

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ১১:১১ এএম
চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কঠোর সরকার
ফাইল ছবি

কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠকে বসেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এসব বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো ধরনের অজুহাত দেখিয়ে কম দামে চামড়া কেনা যাবে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে কিনলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বৈঠকে চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্য দিয়ে কেনার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা দুই দিনের জন্য ব্যবসা করতে আসিনি। ন্যায্যদামে চামড়া কিনে থাকি। তবে কেউ যদি সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা পর্যায় থেকে চামড়া কিনে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করে, তবে তা ঠিক হবে না। আমাদেরও চামড়া কিনে ব্যবসা করতে হবে। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। আমরা কোরবানির পশুর চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছি।’ 

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেট করে চামড়া কম দামে কিনলে তা ঠিক হবে না। আমরা সিন্ডিকেটের সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’ 

শাহিন আহমেদ বলেন, ‘এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই পুঁজিসংকটে আছেন। সরকারের কাছে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর আবেদন করা হলেও তা কাজে দেয়নি। ঋণ বাড়ানো হয়নি।’ 

ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া কেনা এবং কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ২৩২ কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা কম। ২০২৪ সালে চামড়া কেনার জন্য ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। চামড়া খাতে খেলাপি প্রবণতা বেশি হওয়ায় প্রতিবছরই কমছে ঋণের পরিমাণ।

চামড়া খাতের আরেক ব্যবসায়ী এপেক্স ফুট ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘চামড়া পাচাররোধে সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। এতে দেশে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’ 

এবার ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পশু আনা-নেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। 

এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোরবানির চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘দেশে কাঁচা চামড়ার চাহিদা না থাকলে প্রয়োজনে চামড়া রপ্তানি করা যাবে। চামড়া রপ্তানিসংক্রান্ত যে বিধিনিষেধ ছিল, সেটি প্রত্যাহার করেছে সরকার। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছর ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সরবরাহ করা হবে।

এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পশুর চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। 

কোনো সিন্ডিকেট বা অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত যেন না হয়, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিগত সময়ে চামড়া খাতের কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় অস্থিরতা তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের কম আয়ের মানুষরা। যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ 

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ইটিপির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে এবার কোরবানির পরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও কঠোর নজরদারি করার কথা বলেছে। 

সীমান্তে নজরদারি: এরই মধ্যে ট্যানারির মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কোরবানির পশুর চামড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচারের পাশাপাশি বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পাচারেরও আশঙ্কা করা হয়েছে। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে জোরালো আবেদন জানানো হয়েছে। 

লবণ মাখিয়ে কাঁচা চামড়া কিছুটা শুকিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পরিবহনে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে বলেও আবেদনে বলা হয়েছে। এ জন্য ঈদুল আজহার দিন থেকে পরের ১৫ দিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার বন্দরে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।