ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রেমিট্যান্সের পতন ঠেকাতে দরকার স্থিতিশীলতা

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪২ এএম
রেমিট্যান্সের পতন ঠেকাতে দরকার স্থিতিশীলতা

চলমান আন্দোলন ও সহিংসতায় প্রবাসীদের অনেকেই রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের ডাক দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে ডলার বাজারে। বিনিময় হার আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। জুলাই মাসের ১৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহে একধরনের স্থবিরতা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ওই ৯ দিনে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৫-১৬ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিন গড়ে প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৮ কোটি ডলার।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশে বিরাজমান আন্দোলন-সহিংসতার পরিস্থিতিতে প্রবাসীরাও উদ্বিগ্ন। সরকারকে চাপে ফেলতে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের ডাক দিয়েছেন প্রবাসীদের একটি অংশ। রেমিট্যান্সপ্রবাহে স্বাভাবিক গতি ফেরাতে হলে তাই প্রবাসীদের আস্থা তৈরি করতে হবে।

ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্টের (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় দেড় কোটি বা ১৫ মিলিয়ন নাগরিক প্রবাসে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত। এর মধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেই রয়েছেন এক কোটিরও বেশি। এর বাইরে উচ্চ আয়ের প্রবাসী রয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়। 

গত ১৯ জুলাই থেকে দেশে কোটা প্রথার সংস্কার চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে প্রবাসীদের একটি অংশ রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারকে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রেমিট্যান্স আসে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের দুই অর্থবছরে (২০২২-২৩ এবং ২০২১-২২) দেশে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ও ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ৫ শতাংশ। প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স একদিকে আমদানি ব্যয় নির্বাহে কাজে লাগে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করতে ও তা স্থিতিশীল রাখতে কাজে লাগে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে দেশের বাজারে ডলারের সরবরাহ ও এর বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকে। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রবাসীরাও উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে একটি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ পরিস্থিতির উন্নতি দরকার। তা না হলে রেমিট্যান্সের এই পতন হয়তো ঠেকানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য যে কারণগুলো আমরা দেখি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে, যেমন হুন্ডি... সেগুলো আগেও ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও হয়তো থাকবে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট আস্থাহীনতা।’

দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ ডলারসংকটে ভুগছে। এ সংকট নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েও কাজ না হলে গত মে মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণ করতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে। ওই মাসেই প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ে।

ক্রলিং পেগ পদ্ধতির সূচনা করার মাধ্যমে ডলারের দর বাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারে তখনকার বিনিময় মূল্য ১১০ টাকা থেকে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে দেয়। দর বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দর পাচ্ছেন ১১৭ টাকার সঙ্গে বাড়তি আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা। এতে ব্যাংকিং ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে প্রেরিত প্রতি ডলারের দর পড়ছে ১২০ টাকার মতো। ফলে বৃদ্ধি পায় রেমিট্যান্সপ্রবাহ। মে-জুন মাসের রেমিট্যান্সের তথ্যও এর প্রমাণ দেয়। জুন মাসে এককভাবে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বা ২৫৪ কোটি মার্কিন ডলার দেশে আসে। মে মাসে এসেছে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ২২৫ কোটি ডলার।

বৈদেশিক খাতের চরম অস্থিতিশীলতার এ দুঃসময়ে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একধরনের ইঙ্গিত দেয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ দাবির পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।

কিন্তু মধ্য জুলাই থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী শুরু হওয়া আন্দোলন একপর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নিলে তা প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটি ও কারফিউয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের একটি পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়।

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের কথায় কান না দিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকেও রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
রাঙামাটির ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি এখন তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ফলে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই কারণে গত ২৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেতু এলাকায় ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। গত ২২ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় করে থাকে প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং এবং ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মিত হয়। রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় এসে পর্যটকরা প্রথমেই সেতুটি দেখতে যান। কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

পাবনা থেকে পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম। কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল, সেতুতে ছবি তুলবে। তা আর হলো না। এখন সবারই মন খারাপ।’ 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেতু ডুবে আছে। খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না।’

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি এবং পর্যটকরা টিকিট ছাড়াই ঘুরে যাচ্ছেন।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুর পাটাতন বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেতু ডুবতে শুরু করে। হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে পানি বের করা হয়। কিন্তু উজান থেকে পানি নামতে ধীরগতিতে চলায় হ্রদের পানির উচ্চতা কমছে খুবই ধীরে।

যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর)  খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান। 

তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জেনেভা ক্যাম্পে সম্প্রতি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ও দুজন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ওসি জানান, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তা সবই অবৈধ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন শুধু মোহাম্মদপুর থানা থেকেই লুট হয় ৭ শতাধিক ছোট-বড় অস্ত্র। মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা জানায়, এ পর্যন্ত এই দুই থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া ২২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আদাবর থানায় লুট হওয়া আরও ৬৮ আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

যৌথ অভিযানে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব।

হাসিনা সরকারের পতনের দিন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের (বিহারি ক্যাম্প) বেশির ভাগ বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় লুট করা হয় পুলিশের অস্ত্র, পুড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও গাড়ি। 

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্র দিয়ে প্রতিদিনই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে জেনেভা ক্যাম্পে। আধিপত্য বিস্তার আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গোলাগুলির ঘটনায় সম্প্রতি দুজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।

জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে মুরগি পট্টিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। বাসিন্দারা নিরাপত্তা চান। এ বিষয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্র আন্দোলন দমনে স্থানীয় কাউন্সিলর সৈয়দ হাসানুর ইসলাম রাস্টন ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন অস্ত্র। স্থানীয়রা দাবি করেন, ৫ তারিখে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র জেনেভা ক্যাম্পের লোকদের হাতে চলে এসেছে। এখন যে যার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে। 

এই ক্যাম্পের একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভূঁইয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বহু দিনের। তবে দেশীয় অস্ত্রের বদলে এখন সেখানে চলছে প্রকাশ্যে গোলাগুলি।

গত ৬ আগস্ট গোলাগুলিতে নিহত হন ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহেন শাহ। আর চলতি মাসের ৪ তারিখে মারা যান অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ সনু। সনুর স্ত্রী জানান, গুলি করে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার দাবি করেন। 

জেনেভা ক্যাম্পে গত ২৯ আগস্ট মাদক নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মিন্টুর গায়ে ছররা গুলি লাগে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। মাদক বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’ এ সময় তিনি ক্যাম্পের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ এএম
দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের ভেতর আমদানি করা পেঁয়াজ। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের মানুষ দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে এসব পেঁয়াজের দাম বেশি। দুই মাস ধরে খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান ও মিসরীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক দাম কম ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে দুই মাস আগে পাইকারিতে মিসরীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে দাম কমে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজে আগ্রহ নেই সাধারণ ক্রেতাদের।

নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. দিদারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে মুদির দোকান থেকে প্রতি কেজি মিসরীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯২ টাকায় এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে গেলে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা গুনতে হয়। এর চেয়ে পাকিস্তানি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভালো, দামও কেজিপ্রতি ২০ টাকা কম। এটাই বেশি কিনছি।’

নগরের ষোলশহর এলাকার আল আমিন স্টোরের মালিক মো. নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম একই থাকায় কয়েক মাস আগেও মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি কিনেছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কমে আসায় মানুষ এখন এদিকেই ঝুঁকেছেন। তাই আমিও এখন পাকিস্তানি পেঁয়াজ বেশি রাখছি।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাকিস্তান, চীন, মিসর, থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলে থাকেন আমদানিকারকরা। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে পাকিস্তান থেকে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেখতে সুন্দর ও ঝাঁজ থাকায় এ পেঁয়াজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল। কিন্তু দাম কমে আসায় ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজ ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে।’ 

পাকিস্তানি পেঁয়াজে পাথর পাওয়ার বিষয়টি ‘গুজব’ 
খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ সময় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে। গত দুই মাস ধরে বৃহত্তর বাজারটিতে আসতে শুরু করে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের পাথর পাওয়া যাচ্ছে- এমন গুজব চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পেঁয়াজের বস্তায় কোনো পাথর পাওয়া যায়নি। এটা গুজব। তবে মিসর ও তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় মাঝেমধ্যে পাথরের টুকরো পাওয়া যায়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে। সেটা আবার সব কনটেইনার বা পেঁয়াজের বস্তায় নয়। বড়জোর একটা কনটেইনারে দুই থেকে তিনটি বস্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এটা ইচ্ছাকৃত সেটাও বলা যাবে না। বিদেশের পাহাড়ি এলাকায় পেঁয়াজগুলো বস্তায় ভরা হয়। অনেক সময় ওই দেশি শ্রমিকদের গাফিলতি বা অসচেতনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু এতে করে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একটি মহল বিষয়টিকে বাড়িয়ে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ শুধু খাতুনগঞ্জে নয়, দেশের অন্যান্য পাইকারি বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। অন্য কোথাও থেকে অভিযোগ এল না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি পেঁয়াজের বস্তায় কিছু পাথর পাওয়া যায়। এটাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। আমরা নিজেরাও অবাক। কারণ পণ্যভর্তি একটি কনটেইনার যখন বিদেশ থেকে আমাদের বন্দরে আসে, আমরা কনটেইনার খুলে ওই পণ্যের গুণগতমান, পরিমাণ সবকিছু যাচাই করে দেখি। আমরা যখন পরীক্ষা করেছি, তখন আমাদের হাতে কোনো পাথর পড়েনি। এ রকম কিছু পেলে আমরাই সেটা আটকে দিতাম। তবে আমরা এখন থেকে পণ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হব।’

ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। রোগীর চাপ বাড়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রোগীর জন্য শয্যাসংখ্যা। তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৯০ শয্যার আলাদা (নারী ও পুরুষ) ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অথচ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই ভেঙে পড়েছে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর অধিকাংশ এডিস মশার বংশবৃদ্ধিপ্রবণ এলাকায় প্রায় দুই মাস ধরে স্প্রে (মশক নিধন ওষুধ) প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এবার অসময়েও ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর সিজন শেষ পর্যায় হিসেবে ধরা হয়। আর সিজন শুরু হয় এপ্রিল-মে মাসে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের ৪২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা আর ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে। চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ঢাকায় এবং ৩০ শতাংশ ঢাকার বাইরে। সবচেয়ে বেশি ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, এবার মশক নিধন কর্মসূচি ঠিকমতো না চলায় সিজনের শেষ দিকে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যেহেতু সিটি করপোরেশনের কাজে ব্যত্যয় ঘটেছে, সে কারণেই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ে ডেঙ্গু মশার হটস্পটগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে গত বছরের মতো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, বাড্ডা, বাসাবো, মাদারটেক ও মিরপুরের বেশ কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে না। ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনে বিশেষ কোনো অভিযানও তারা পরিচালনা করেনি বা করছে না।

মোহাম্মদপুরের মেট্টো হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. আমজাদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। এরই মধ্যে পরিবারের তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আগে মাসে-সপ্তাহে অন্তত এক দিন সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ স্প্রে করে যেতেন কর্মীরা। দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ নানা কারণে প্রায় ২ মাস ধরে তাদের দেখাও মিলছে না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন অফিসে যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি। রাত-দিন আমাদের কাটাতে হচ্ছে মশার যন্ত্রণা সহ্য করে।’

সলিমুল্লাহ রোডের চা বিক্রেতা মো. ওহিদুর রহমান। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই মহল্লায় তার বসবাস। তিনি বললেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আমরা টিভিতে কথা শুনি কিন্তু বাস্তবে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম চোখেই পড়ছে না। জনপ্রতিনিধিদের বদলে প্রশাসক দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার কোনো উপায়ই আমরা দেখছি না।’

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটিতেও প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। মশক নিধন কার্যক্রম কেন স্বাভাবিকভাবে চলছে না- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এ কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছি। তার পরও কেন তারা কাজ করছেন না তা খতিয়ে দেখা হবে। চেষ্টা আমাদের আছে, তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সব কার্যক্রম যথাসময়ে পরিচালনায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। পরিস্থিতির উত্তরণে আমরা নগরবাসীর সহযোগিতা চাই।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসাইনের মতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমাতে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। সরকার যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা শ্রেণিকরণ করে এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়- এই তিন ভাগে ভাগ করে তাহলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ও মৃত্যুহার কমানো সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন করাও জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের উচিত গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সুবিধার উন্নতি করা। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ে হাসপাতালগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকার বাইরে মৃত্যুহার বেশির কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার অভাব ও ডেঙ্গু শনাক্ত করতে না পারা বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আরও লোকবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৬১ জন। আর আগের দিন বুধবার ৪৬৫ জন রোগী শনাক্ত হলেও কেউ মারা যাননি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত দেশে (১ জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৩ জন। আর এ সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৪৫ জন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ জন রোগী মারা যান। যাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার এক দিনেই মারা যান পাঁচজন। মৃতের এই সংখ্যা ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ
স্বীসহ রণজিত কুমার রায়

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় আওয়ামী লীগের শাসন আমলে অবৈধভাবে কয়েক শ কোটি টাকা কামিয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে আধা পাকা ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু ১৫ বছরে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিস্তর জমির মালিক হয়েছেন। এমপির পদ ছিল তার জন্য আলাদিনের চেরাগ।

সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব উল্লেখ করছেন, সেই হিসাব অনুযায়ী ১৫ বছরে রণজিত রায়ের ১৩৩ গুণ ও স্ত্রী নিয়তি রায়ের ২৬৩ গুণ সম্পদ বেড়েছে। বাস্তবে রণজিত ও তার স্বজনদের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। রণজিত ও তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের

রণজিত কুমার ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যশোরের দুদক কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে রাজিব কুমার রায় প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কাজের জন্য ৫ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন। তার নিজ ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়ি রয়েছে। এই এমপির পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন।

নিয়োগ-কমিশন বাণিজ্য ও দখলদারিত্ব 

সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য। রণজিত কুমার রায়, স্ত্রী নিয়তি রানী এবং দুই ছেলে রাজীব রায় ও সজীব রায় অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্যই তারা সভাপতি হতেন বলেও অভিযোগ আছে। টানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকায় একচেটিয়া নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন রণজিত।

২২ লাখ টাকার বিনিময়ে বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে হাবুল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ৩২ লাখ টাকার বিনিময়ে রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে আগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে খাজুরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে অভয়নগরের বিসিসি মুজহিদা মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু এই প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হতো রণজিত কুমারকে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ও কলেজ সরকারিকরণের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন রণজিত। 

অবৈধ টাকা আয়ের আরেকটি উৎস ছিল টেন্ডার-বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কমিশন গ্রহণ। রণজিত রায়ের পক্ষে টেন্ডার ও প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য তদারকি করতেন স্থানীয় দুই পৌরসভার মেয়র ও এক শ্রমিক নেতা। 

রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে দলের নেতা-কর্মী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি জোরপূর্বক ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক হাসান আলীকে (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে ৫ বিঘা জমি তার অনুসারীর নামে লিখে নেন তৎকালীন এমপি রণজিত কুমার। তবে নির্বাচনে পরাজিত হন হাসান আলী। এরপর চাপে পড়ে সেই জমি হাসান আলীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন রণজিত রায়।

বন্দবিলা ইউনিয়নের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, খাজুরা শ্মশানের জমি কেনার কথা বলে হিন্দুদের কাছ ১ কোটি টাকা চাঁদা তুলে ৪২ শতক জমি নিজের নামে লিখে নেন রণজিত। বাঘারপাড়া উপজেলার চাপাতলা গ্রামের সুশীল মল্লিকের ১২ বিঘা জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন রণজিত রায়। ভুক্তভোগী সুশীলের স্ত্রী অনিমা মল্লিক ভয়ে এখনো এলাকা ছাড়া রয়েছেন। এ ছাড়াও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরকারি ও খাস জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে রণজিতের বিরুদ্ধে।

নামে-বেনামে যত সম্পদ 

নবম, দশম ও একাদশ সংসদে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন রণজিত কুমার রায়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় রণজিত রায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল সাকল্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার। এর মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪ বিঘা জমি, খাজুরায় ৪ শতক জমির ওপর ৫০ হাজার টাকা মূল্যের টিনের ঘর। 

বার্ষিক আয় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রী নিয়তি রানীর নগদ ৭০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ। আয়ের কোনো উৎস ছিল না। ১৫ বছরের ব্যবধানে রণজিত-নিয়তি রানী দম্পতির সম্পদ বেড়েছে বহু গুণ। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা দামের ১২ বিঘা কৃষিজমি, ঢাকার পূর্বাচলে ৩০ লাখ টাকা দামের রাজউকের প্লট, ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দালান এবং ১০ লাখ টাকার অকৃষি জমি। 

বর্তমানে রণজিত রায়ের নিজের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ (ডিপিএস) ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ২৩ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, ১ লাখ টাকার ৬০ তোলা সোনা, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাব।

২০২৪ সালের হলফনামায় রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানীর স্থাবর সম্পদ আছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার তিনটি বাড়ি ও ৫০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট, যা ২০০৮ সালে ছিল না। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রানীর নামে নগদ টাকা আছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার। 

২০০৮ সালে যা ছিল ৭০ হাজার। স্থায়ী আমানত হিসেবে (ডিপিএস) বিনিয়োগ আছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আরও আছে ৫৫ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার, যা আগে ছিল না। এ ছাড়া আছে ৪৫ হাজার টাকা দামের ১০ তোলা সোনা, ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১৫ হাজার টাকার আসবাব।

হলফনামায় দেওয়া সম্পদবিবরণীতে তথ্য গোপন করেছেন রণজিত কুমার রায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার সম্পদের চিত্র। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের যশোর শহরের রেল রোডে একটি পাঁচতলা ও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। 

যশোরের লোহাপট্টিতে একটি বাড়ি, যশোর নিউ মার্কেটে দুটি ফ্ল্যাট, বাঘারপাড়ায় একটি দোতলা বাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরায় একটি চারতলা বাড়ি, ঢাকার মিরপুরে দারুস সালাম রোডে দুটি ফ্ল্যাট, দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত ও সল্টলেকে দুটি বাড়ি আছে। যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২২৫ একর জমি, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৫০ একর জমির ওপর মাছের ঘের কিনেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১ কোটি টাকা দামের একটি পাজেরো, দুই ছেলের ৬০ লাখ টাকার প্রাইভেটকার, স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার ও ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। আরও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন রণজিত রায় ও তার পরিবারের সদস্যরা।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে জেস টাওয়ার শাখার জনতা ব্যাংকের একটি লকারে রক্ষিত ২০০ ভরি স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন রণজিত। ওই সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মালিকানা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।