ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভাঙা দেয়াল দিয়ে লাখো চোখ গণভবনে

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
ভাঙা দেয়াল দিয়ে লাখো চোখ গণভবনে
ছবি: খবরের কাগজ

মঙ্গলবার (গতকাল) দুপুর সাড়ে ১২টা, গণভবনের মূল ফটকের পাশে তখনো হাজারও মানুষ। এদিন সকাল থেকেই জড়ো হন তারা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। 

ভাঙা দেয়াল দিয়ে গণভবনের ভেতরের অংশ দেখছিলেন জেসমিন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, গতকাল লুটপাটের ঘটনা টিভিতে দেখেছেন। এখন নিজ চোখে দেখতে এসেছেন। এসে দেখেন মূল গেট বন্ধ। ভেতরে নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাই দেয়ালের ভাঙা অংশ দিয়েই দেখার চেষ্টা করছেন।  

গত সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন লাখো মানুষ। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে লুটপাট। এরপর গতকাল রাত থেকে গণভবন হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী। 

এ ছাড়া সংসদ ভবনের মূল সড়কটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া মূল সড়কে কোনো পুলিশ ছিল না। ছিল গাড়ির জটলা। সড়কে ছাত্রদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

বাবা সরোয়ার্দীর সঙ্গে গণভবন দেখতে এসেছেন পুতুল। ৭ বছরের পুতুল বলে, ‘বাবার সঙ্গে এসেছি। ঘুরছি, ভালো লাগছে।’ 

সরোয়ার্দী খবরের কাগজকে বলেন,  ‘দেশের এসব পরিস্থিতিতে টিভি দেখেই বাচ্চাদের সময় কাটে। গতকাল বাইরে বের হওয়ার জন্য মেয়ে অস্থির ছিল। তাই আজ একটু দেখাতে নিয়ে আসছি।’ 

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষার্থীরা। রেসিডেনসিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আদনান জানায়, অনেক দিন পর স্কুলে খুলেছে। খুব ভালো লাগছে। এ ছাড়া ক্লাস শেষে সে গণভবন দেখতে এসেছে। ভালো লাগছে বলেও জানায় সে। 

গণভবনের সামনের সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিসান। তিনি খবরের কাগজকে জানান, সড়কে কোনো পুলিশ নেই। তাই দায়িত্ব পালন করছেন। ওই শিক্ষার্থী জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতির জন্য পুলিশই বেশি দায়ী। যে কারণে তাদের পালাতে হয়েছে। 

সড়কে বাসচালক ইমরান জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। দেখে ভালো লাগছে। তিনি বলেন, ‘আমি ধামরাই থেকে গণভবন এলাম। সব জায়গাই শিক্ষার্থীদের দেখা পেয়েছি। তারা খুব ভালোভাবেই কাজ করছেন।’ সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও তেমন যানজট নেই বলেও জানান তিনি।

দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ এএম
দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের ভেতর আমদানি করা পেঁয়াজ। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের মানুষ দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে এসব পেঁয়াজের দাম বেশি। দুই মাস ধরে খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান ও মিসরীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক দাম কম ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে দুই মাস আগে পাইকারিতে মিসরীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে দাম কমে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজে আগ্রহ নেই সাধারণ ক্রেতাদের।

নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. দিদারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে মুদির দোকান থেকে প্রতি কেজি মিসরীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯২ টাকায় এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে গেলে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা গুনতে হয়। এর চেয়ে পাকিস্তানি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভালো, দামও কেজিপ্রতি ২০ টাকা কম। এটাই বেশি কিনছি।’

নগরের ষোলশহর এলাকার আল আমিন স্টোরের মালিক মো. নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম একই থাকায় কয়েক মাস আগেও মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি কিনেছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কমে আসায় মানুষ এখন এদিকেই ঝুঁকেছেন। তাই আমিও এখন পাকিস্তানি পেঁয়াজ বেশি রাখছি।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাকিস্তান, চীন, মিসর, থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলে থাকেন আমদানিকারকরা। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে পাকিস্তান থেকে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেখতে সুন্দর ও ঝাঁজ থাকায় এ পেঁয়াজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল। কিন্তু দাম কমে আসায় ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজ ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে।’ 

পাকিস্তানি পেঁয়াজে পাথর পাওয়ার বিষয়টি ‘গুজব’ 
খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ সময় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে। গত দুই মাস ধরে বৃহত্তর বাজারটিতে আসতে শুরু করে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের পাথর পাওয়া যাচ্ছে- এমন গুজব চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পেঁয়াজের বস্তায় কোনো পাথর পাওয়া যায়নি। এটা গুজব। তবে মিসর ও তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় মাঝেমধ্যে পাথরের টুকরো পাওয়া যায়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে। সেটা আবার সব কনটেইনার বা পেঁয়াজের বস্তায় নয়। বড়জোর একটা কনটেইনারে দুই থেকে তিনটি বস্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এটা ইচ্ছাকৃত সেটাও বলা যাবে না। বিদেশের পাহাড়ি এলাকায় পেঁয়াজগুলো বস্তায় ভরা হয়। অনেক সময় ওই দেশি শ্রমিকদের গাফিলতি বা অসচেতনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু এতে করে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একটি মহল বিষয়টিকে বাড়িয়ে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ শুধু খাতুনগঞ্জে নয়, দেশের অন্যান্য পাইকারি বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। অন্য কোথাও থেকে অভিযোগ এল না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি পেঁয়াজের বস্তায় কিছু পাথর পাওয়া যায়। এটাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। আমরা নিজেরাও অবাক। কারণ পণ্যভর্তি একটি কনটেইনার যখন বিদেশ থেকে আমাদের বন্দরে আসে, আমরা কনটেইনার খুলে ওই পণ্যের গুণগতমান, পরিমাণ সবকিছু যাচাই করে দেখি। আমরা যখন পরীক্ষা করেছি, তখন আমাদের হাতে কোনো পাথর পড়েনি। এ রকম কিছু পেলে আমরাই সেটা আটকে দিতাম। তবে আমরা এখন থেকে পণ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হব।’

ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। রোগীর চাপ বাড়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রোগীর জন্য শয্যাসংখ্যা। তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৯০ শয্যার আলাদা (নারী ও পুরুষ) ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অথচ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই ভেঙে পড়েছে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর অধিকাংশ এডিস মশার বংশবৃদ্ধিপ্রবণ এলাকায় প্রায় দুই মাস ধরে স্প্রে (মশক নিধন ওষুধ) প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এবার অসময়েও ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর সিজন শেষ পর্যায় হিসেবে ধরা হয়। আর সিজন শুরু হয় এপ্রিল-মে মাসে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের ৪২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা আর ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে। চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ঢাকায় এবং ৩০ শতাংশ ঢাকার বাইরে। সবচেয়ে বেশি ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, এবার মশক নিধন কর্মসূচি ঠিকমতো না চলায় সিজনের শেষ দিকে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যেহেতু সিটি করপোরেশনের কাজে ব্যত্যয় ঘটেছে, সে কারণেই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ে ডেঙ্গু মশার হটস্পটগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে গত বছরের মতো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, বাড্ডা, বাসাবো, মাদারটেক ও মিরপুরের বেশ কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে না। ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনে বিশেষ কোনো অভিযানও তারা পরিচালনা করেনি বা করছে না।

মোহাম্মদপুরের মেট্টো হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. আমজাদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। এরই মধ্যে পরিবারের তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আগে মাসে-সপ্তাহে অন্তত এক দিন সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ স্প্রে করে যেতেন কর্মীরা। দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ নানা কারণে প্রায় ২ মাস ধরে তাদের দেখাও মিলছে না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন অফিসে যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি। রাত-দিন আমাদের কাটাতে হচ্ছে মশার যন্ত্রণা সহ্য করে।’

সলিমুল্লাহ রোডের চা বিক্রেতা মো. ওহিদুর রহমান। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই মহল্লায় তার বসবাস। তিনি বললেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আমরা টিভিতে কথা শুনি কিন্তু বাস্তবে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম চোখেই পড়ছে না। জনপ্রতিনিধিদের বদলে প্রশাসক দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার কোনো উপায়ই আমরা দেখছি না।’

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটিতেও প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। মশক নিধন কার্যক্রম কেন স্বাভাবিকভাবে চলছে না- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এ কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছি। তার পরও কেন তারা কাজ করছেন না তা খতিয়ে দেখা হবে। চেষ্টা আমাদের আছে, তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সব কার্যক্রম যথাসময়ে পরিচালনায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। পরিস্থিতির উত্তরণে আমরা নগরবাসীর সহযোগিতা চাই।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসাইনের মতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমাতে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। সরকার যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা শ্রেণিকরণ করে এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়- এই তিন ভাগে ভাগ করে তাহলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ও মৃত্যুহার কমানো সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন করাও জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের উচিত গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সুবিধার উন্নতি করা। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ে হাসপাতালগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকার বাইরে মৃত্যুহার বেশির কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার অভাব ও ডেঙ্গু শনাক্ত করতে না পারা বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আরও লোকবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৬১ জন। আর আগের দিন বুধবার ৪৬৫ জন রোগী শনাক্ত হলেও কেউ মারা যাননি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত দেশে (১ জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৩ জন। আর এ সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৪৫ জন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ জন রোগী মারা যান। যাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার এক দিনেই মারা যান পাঁচজন। মৃতের এই সংখ্যা ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ
স্বীসহ রণজিত কুমার রায়

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় আওয়ামী লীগের শাসন আমলে অবৈধভাবে কয়েক শ কোটি টাকা কামিয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে আধা পাকা ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু ১৫ বছরে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিস্তর জমির মালিক হয়েছেন। এমপির পদ ছিল তার জন্য আলাদিনের চেরাগ।

সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব উল্লেখ করছেন, সেই হিসাব অনুযায়ী ১৫ বছরে রণজিত রায়ের ১৩৩ গুণ ও স্ত্রী নিয়তি রায়ের ২৬৩ গুণ সম্পদ বেড়েছে। বাস্তবে রণজিত ও তার স্বজনদের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। রণজিত ও তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের

রণজিত কুমার ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যশোরের দুদক কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে রাজিব কুমার রায় প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কাজের জন্য ৫ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন। তার নিজ ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়ি রয়েছে। এই এমপির পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন।

নিয়োগ-কমিশন বাণিজ্য ও দখলদারিত্ব 

সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য। রণজিত কুমার রায়, স্ত্রী নিয়তি রানী এবং দুই ছেলে রাজীব রায় ও সজীব রায় অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্যই তারা সভাপতি হতেন বলেও অভিযোগ আছে। টানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকায় একচেটিয়া নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন রণজিত।

২২ লাখ টাকার বিনিময়ে বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে হাবুল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ৩২ লাখ টাকার বিনিময়ে রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে আগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে খাজুরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে অভয়নগরের বিসিসি মুজহিদা মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু এই প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হতো রণজিত কুমারকে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ও কলেজ সরকারিকরণের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন রণজিত। 

অবৈধ টাকা আয়ের আরেকটি উৎস ছিল টেন্ডার-বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কমিশন গ্রহণ। রণজিত রায়ের পক্ষে টেন্ডার ও প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য তদারকি করতেন স্থানীয় দুই পৌরসভার মেয়র ও এক শ্রমিক নেতা। 

রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে দলের নেতা-কর্মী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি জোরপূর্বক ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক হাসান আলীকে (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে ৫ বিঘা জমি তার অনুসারীর নামে লিখে নেন তৎকালীন এমপি রণজিত কুমার। তবে নির্বাচনে পরাজিত হন হাসান আলী। এরপর চাপে পড়ে সেই জমি হাসান আলীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন রণজিত রায়।

বন্দবিলা ইউনিয়নের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, খাজুরা শ্মশানের জমি কেনার কথা বলে হিন্দুদের কাছ ১ কোটি টাকা চাঁদা তুলে ৪২ শতক জমি নিজের নামে লিখে নেন রণজিত। বাঘারপাড়া উপজেলার চাপাতলা গ্রামের সুশীল মল্লিকের ১২ বিঘা জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন রণজিত রায়। ভুক্তভোগী সুশীলের স্ত্রী অনিমা মল্লিক ভয়ে এখনো এলাকা ছাড়া রয়েছেন। এ ছাড়াও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরকারি ও খাস জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে রণজিতের বিরুদ্ধে।

নামে-বেনামে যত সম্পদ 

নবম, দশম ও একাদশ সংসদে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন রণজিত কুমার রায়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় রণজিত রায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল সাকল্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার। এর মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪ বিঘা জমি, খাজুরায় ৪ শতক জমির ওপর ৫০ হাজার টাকা মূল্যের টিনের ঘর। 

বার্ষিক আয় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রী নিয়তি রানীর নগদ ৭০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ। আয়ের কোনো উৎস ছিল না। ১৫ বছরের ব্যবধানে রণজিত-নিয়তি রানী দম্পতির সম্পদ বেড়েছে বহু গুণ। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা দামের ১২ বিঘা কৃষিজমি, ঢাকার পূর্বাচলে ৩০ লাখ টাকা দামের রাজউকের প্লট, ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দালান এবং ১০ লাখ টাকার অকৃষি জমি। 

বর্তমানে রণজিত রায়ের নিজের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ (ডিপিএস) ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ২৩ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, ১ লাখ টাকার ৬০ তোলা সোনা, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাব।

২০২৪ সালের হলফনামায় রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানীর স্থাবর সম্পদ আছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার তিনটি বাড়ি ও ৫০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট, যা ২০০৮ সালে ছিল না। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রানীর নামে নগদ টাকা আছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার। 

২০০৮ সালে যা ছিল ৭০ হাজার। স্থায়ী আমানত হিসেবে (ডিপিএস) বিনিয়োগ আছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আরও আছে ৫৫ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার, যা আগে ছিল না। এ ছাড়া আছে ৪৫ হাজার টাকা দামের ১০ তোলা সোনা, ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১৫ হাজার টাকার আসবাব।

হলফনামায় দেওয়া সম্পদবিবরণীতে তথ্য গোপন করেছেন রণজিত কুমার রায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার সম্পদের চিত্র। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের যশোর শহরের রেল রোডে একটি পাঁচতলা ও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। 

যশোরের লোহাপট্টিতে একটি বাড়ি, যশোর নিউ মার্কেটে দুটি ফ্ল্যাট, বাঘারপাড়ায় একটি দোতলা বাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরায় একটি চারতলা বাড়ি, ঢাকার মিরপুরে দারুস সালাম রোডে দুটি ফ্ল্যাট, দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত ও সল্টলেকে দুটি বাড়ি আছে। যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২২৫ একর জমি, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৫০ একর জমির ওপর মাছের ঘের কিনেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১ কোটি টাকা দামের একটি পাজেরো, দুই ছেলের ৬০ লাখ টাকার প্রাইভেটকার, স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার ও ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। আরও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন রণজিত রায় ও তার পরিবারের সদস্যরা।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে জেস টাওয়ার শাখার জনতা ব্যাংকের একটি লকারে রক্ষিত ২০০ ভরি স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন রণজিত। ওই সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মালিকানা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

আমদানির পরও বাড়ল ডিমের দাম

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
আমদানির পরও বাড়ল ডিমের দাম
রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ডিমের দাম। ছবি: খবরের কাগজ

ভারত থেকে আমদানির পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। বাজারভেদে ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, আজব দেশে সব সম্ভব। ডিম আমদানি হলো। তার পরও বাড়ছে দাম। বাজারে হচ্ছে কী? সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৭০ টাকায় নেমেছে। তবে ব্রয়লারের দাম বেড়ে ১৯০ টাকা ছুঁয়েছে। 

অন্যান্য সবজির দাম না কমলেও কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমে ২০০ টাকায় নেমেছে। পেঁয়াজ, আলু, মাছ, চালের বাজার আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউন হল, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

ডিমের দাম বেড়ে ১৬০ টাকা ডজন

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কায়নসহ সাড়ে ৭ টাকা দরে গত সোমবার ২ লাখ ৩১ হাজার মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসে এ বন্দর দিয়ে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি হবে। ভারত থেকে প্রতিটি ডিম কেনা হয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা দরে। প্রতিটি ডিমের আমদানি শুল্ক ১ টাকা ৮৩ পয়সা। 

এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও দেশের ডিমের বাজারে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘আমরাও চাই ডিমের দাম কমুক। তাহলে বেশি বিক্রি হবে। কিন্তু মোকামে তো কমে না। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ 

দামের ব্যাপারে হাতিরপুল বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা মোহিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দাম বেড়ে গেছে। ১৬০ টাকা ডজন।’ আমদানির প্রভাব পড়েনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা চুনোপুঁটি। গোড়ার খরব কী জানি। যেভাবে কিনি। সেভাবে কিছু লাভ করে বিক্রি করি।’ টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে ডিমের ডজন ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লাতেও একই অবস্থা। বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এ সময় শফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজব এ দেশ। সব সম্ভবের বাংলাদেশ। ভারত থেকে কম দামে সাড়ে ৭ টাকা পিস ডিম আসছে সব পত্রিকা, টিভিতে দেখা গেল। কিন্তু বাজারে এসে দেখি উল্টো চিত্র। বাচ্চারা খায় বেশি। তাই ১৬০ টাকাতেই এক ডজন ডিম কিনলাম। কী আর করার আছে। টাকা না থাকলে বাজারে আসতে হবে না। খেতে হবে না। সরকার করছে কী?

কমেনি চালের দাম

আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাজারে। মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের অহিদুল ট্রেডিংয়ের অহিদ হোসেনসহ অন্য বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘যে যা-ই বলুক, কোনো কিছুতেই চালের দাম কমছে না। কমবে না। কারণ মিলেই বেশি দাম।’ 

এই বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার বলেন, আগের মতোই ছোলার দাম ১১০-১২০ টাকা কেজি, দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, পাঁচ লিটারের দাম ৭৯০-৮০০ টাকা। চিনির কেজি ১৩০-১৩৫ ও দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু ওই বাজারেই নয়, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। আগের মতোই দাম বেশি। 

এবার ভরা মৌসুমেও ভোগাচ্ছে আলু-পেঁয়াজ। বাধ্য হয়ে সরকার শুল্ক কমিয়েছে। শুল্ক হ্রাস করলেও বাজারে তার প্রভাব দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ ও রসুন ২০০-২৩০ টাকা, আদা ২৩০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। 

সোনালি ২৬০ টাকা, ব্রয়লার বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি

আগের সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৬০-২৭০ টাকায় নেমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা কম। এ জন্য কমছে দাম। তবে দেশি মুরগির কেজি আগের মতোই ৫০০-৫৫০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান। 

হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কমবেশি হচ্ছে। আমাদের করার কিছু নেই। কিছু থাকলে মোকামে করতে পারে। মুরগির দাম বাড়লে-কমলেও আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

কমেছে কাঁচা মরিচের দাম

খুচরা বিক্রেতারা জানান, এ সপ্তাহে তেমন ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ জন্য সবজির দাম বাড়েনি। আগের সপ্তাহের মতোই প্রায় সবজির দাম। তবে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা কমেছে। হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা জিহাদ ও টাউন হল বাজারের জাহিদ বলেন, ‘সবজির দাম কমেনি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কমে কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ 

বেগুনের কেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা ও ঝিঙ্গা ৭০-৮০, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও ধুন্দুল, ৫০-৬০, মুলা ও পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৬০-৮০, বরবটি ও কচুরলতি ৮০-৯০, টমেটো ও গাজর ১৩০-১৮০, শিম ২৫০, লাউ, চালকুমড়া, কপির পিস ৬০-৭০ টাকা। এ ছাড়া লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, কলমি শাক, লাল শাক, পালং এবং পাটশাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

কমেনি মাছের দাম

অন্য জিনিসের মতো মাছের দামও কমেনি। বিক্রেতারা বলেছেন, আগের মতোই রুই-কাতলার কেজি আকারভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা, চিংড়ির কেজি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৫০০-৭০০, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, শিং মাছ ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০ ও কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা ও পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। ইলিশও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ইলিশের সরবরাহ কম। এ জন্য দাম কমছে না। গত সপ্তাহের মতোই ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ছোটগুলোর কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। 

পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে দুদকের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে দুদকের দৌড়ঝাঁপ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ১৬ বছর ধরে কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এতে তেমন কোনো সফলতা আসেনি। তবে লবিস্ট নিয়োগ করে ২০১২ সালে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। অবশ্য এ জন্য লবিস্টকে দিতে হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখনো এমএলআরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

এর পাশাপাশি পাচারের টাকা ফেরাতে এবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই), জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনওডিসি) এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দুদক। এ নিয়ে গত সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এফবিআই ও ইউএনওডিসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়েছে। আইএমএফের সঙ্গে কয়েক মাস আগেও দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক হতে পারে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান মারকো টেক্সাইরার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখা ও লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধিদলটি দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এর আগের দিন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) অ্যাসিস্ট্যান্ট লিগ্যাল অ্যাটাশে রবার্ট ক্যামেরনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদকের একই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আঞ্চলিক প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে মানি লন্ডারিং শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিরা দুর্নীতি প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কী কী করা যায়, সেসব নিয়ে প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, প্রতিনিধিদলগুলো ফিরে গিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বাংলাদেশের অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তাব পাঠাবে বলে জানিয়েছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে এফবিআইসহ বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাদের (এফবিআই ও ইউএনওডিসি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে। তারা দুদককে এ ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ধরনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। এমএলএআর পাঠানো হয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে এবং এর জবাবও আসে একই মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় ওই সময় কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে এমএলএআর পাঠায় দুদক। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ তৎকালীন দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ খানকে কিছু দায়িত্ব দেন দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। কিন্তু ওই সময়ে কোনো সফলতা আনতে পারেননি ফেরদৌস। সরকার পরিবর্তনের পর ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হন ফেরদৌস আহমেদ খান। 

এ সময় তিনি দুদকের কাছে আবেদন করেন যে তাকে লবিস্ট নিয়োগ করা হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফেরত আনতে সহযোগিতা করতে পারবেন। এ জন্য তিনি রিওয়ার্ড হিসেবে ৩০ শতাংশ টাকা দাবি করেন। দুদক আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবুও পাচারের টাকা ফেরত আনার জন্য দুদক সে সময় ফেরদৌসের প্রস্তাবে রাজি হয়। অবশেষ ২০১২ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা দুদকের অ্যাকাউন্টে ফেরত আসে। শর্ত অনুসারে একই বছরের ২২ নভেম্বর ফেরদৌসের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেয় দুদক।

এরপর আর কোনো লবিস্ট নিয়োগের তথ্য জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন দেশে এমএলএআর পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনিসহ দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের পাচার করা টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, হংকং ও কানাডার কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জবাব ও তথ্য-উপাত্ত এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবু হাল ছাড়েনি দুদক। চেষ্টা অব্যাহত আছে। 

এদিকে ভারতে পি কে হালদারের টাকা পাচারের ঘটনায় হাইকোর্টে দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে দেশে অর্থ পাচার আইনে পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ২০২০) কতটি মামলা হয়েছে এবং কতজনকে আসামি করা হয়েছে, সেসবের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী, সে সময় প্রতিবেদন আকারে একটি তালিকা হাইকোর্টে জমা দেয় দুদক। প্রতিবেদনে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত অর্থ পাচার আইনে ১৩৫টি মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে ৪৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল এবং বাকি ৮৮টি মামলা তদন্ত চলমান থাকার কথা বলা হয়। 

প্রতিবেদনে অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহিষ্কৃত কর্মচারী আবজাল, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল, ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান, শাহরিস কম্পোজিট টেক্সটাইলের এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান, যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঠিকাদার জি কে শামিম, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ইসমাঈল হোসেন সম্রাট, ক্যাসিনো সেলিম, এনটেক্সের কর্ণধার ইউনুস বাদল, এমএম ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন, এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি ও তার ছেলে, ভোলার সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি পাপুল, এনসিসি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, লর্ড ভিশনের চেয়ারম্যান হোসাইন মাহমুদ রাসেল, পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ কবীর, ডিএমপির হুমায়ুন কবীর বাতেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম, ইলিয়াস ব্রাদার্সের এমডি শামসুল আলম, ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাবেক এমডি আশরাফুল আলম, সাবেক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান সিকদার, টেলিটকের সাবেক ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ যোবায়ের, প্যারাডক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক এমডি রকিবুল হাসান রাজন, আমানত স্টিলের এমডি হারুনুর রশীদ, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, এএমসি টেক্সটাইলের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদ মিয়া, আইন কমিশনের ড্রাইভার শামসুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের একজন পরিচালক খবরের কাগজকে জানান, ২০২১ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। অর্ধশতাধিক মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসবের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে।