ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

থানায় তালা, ফেরেনি পুলিশ

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৭ এএম
থানায় তালা, ফেরেনি পুলিশ
এখনো অনেক থানায় ফেরেননি পুলিশ সদস্যরা। ছবি : খবরের কাগজ

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর গত সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের থানাগুলোতে দফায় দফায় হামলা চালান বিক্ষুব্ধরা। পুলিশের ওপর হামলা ও থানায় অগ্নিসংযোগের কারণে অনেক পুলিশ হতাহত হন। এ সময় থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জীবন রক্ষা করতে গুলি চালিয়ে অনেকে পালিয়ে যান। এতে হতাহত হন অনেকে।

এরপর গত ৭ আগস্ট পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিটে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম। তবে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় ফেরেননি পুলিশ সদস্যরা। 

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা ঘুরে দেখা যায়, এসব থানার মূল ফটকে তালা ঝুলছে। এসব থানায় কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। আদাবর থানার মূল ফটকের সামনে পুড়িয়ে দেওয়া চারটি গাড়ি পড়ে আছে। থানাগুলোর ভবনের জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে এসব থানার গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে। 

শাহবাগ থানার গিয়ে দেখা যায় মূল ফটকে তালা। থানার ভেতরে রয়েছে একটি সাদা রঙের সাঁজোয়া যান ও বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি। ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে একজন আনসার সদস্য। জাহিদ হাসান নামের ওই আনসার সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, পাশে রয়েছে তাদের ক্যাম্প। এখানে তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। 

থানায় পুলিশ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো পুলিশ নেই। এ ছাড়া কবে ফিরবেন সে বিষয়ে কোনো নোটিশ তারা পাননি। 

মোহাম্মদপুর থানার একাধিক বাসিন্দা জানান, থানায় পুলিশ নেই। সোমবারের পর থেকে তারা থানায় কোনো পুলিশ দেখেননি। এ ছাড়া সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে রাজধানীর অনেক স্থানে ডাকাতির চেষ্টা এলাকাবাসী ও সেনাবাহিনী প্রতিহত করেছে।

আদাবরের ৯ নম্বর রোডের বাসিন্দা সরোয়ার্দী হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বুধবার রাত ১০টার দিকে আদাবর ৮ নম্বর রোডে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা একটি বাড়ি ঘিরে রাখে ও ভেতরে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের ধরতে সক্ষম হয়।’ 

তিনি আরও জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় জেনেভা ক্যাম্প অপরাধের স্বর্গরাজ্য। অধিকাংশ বিহারি কিশোররা এই চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। এই ক্যাম্পে সেনাটহল বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

একাধিক থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজে ফিরতে চাইলেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, তা অমানবিক। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। 

আইজিপির নির্দেশনার ২৪ ঘণ্টা শেষ হলেও এখনো থানায় তালা কেন, জানতে চাইলে একাধিক থানার ওসি জানান, আমাদের শতাধিক পুলিশ সদস্য গুরুতর অসুস্থ। অনেকে ভালোভাবে চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। অসুস্থ থাকার কারণে অনেকে ফিরতে পারছেন না।

কাজে ফেরার বিষয়ে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড অসুস্থ। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে অনেক সময় লাগবে। তাই কাজে ফিরতে পারছি না।’

ফটকে তালা ঝুললেও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান বললেন ভিন্ন কথা। তিনি খবরের কাগজের কাছে দাবি করেন, আজও তিনি অফিস করেছেন। এ সময় প্রতিবেদক থানায় তালা ঝুলছে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ডিউটি করছি। সবাই আসছেন না। অনেকে অসুস্থ।’ 

নির্দেশনার ২৪ ঘণ্টা শেষ হলেও থানার ফটকে এখনো তালা ঝুলছে, এ বিষয়ে জানতে আইজিপি ময়নুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। রোগীর চাপ বাড়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রোগীর জন্য শয্যাসংখ্যা। তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৯০ শয্যার আলাদা (নারী ও পুরুষ) ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অথচ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই ভেঙে পড়েছে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর অধিকাংশ এডিস মশার বংশবৃদ্ধিপ্রবণ এলাকায় প্রায় দুই মাস ধরে স্প্রে (মশক নিধন ওষুধ) প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এবার অসময়েও ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর সিজন শেষ পর্যায় হিসেবে ধরা হয়। আর সিজন শুরু হয় এপ্রিল-মে মাসে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের ৪২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা আর ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে। চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ঢাকায় এবং ৩০ শতাংশ ঢাকার বাইরে। সবচেয়ে বেশি ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, এবার মশক নিধন কর্মসূচি ঠিকমতো না চলায় সিজনের শেষ দিকে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যেহেতু সিটি করপোরেশনের কাজে ব্যত্যয় ঘটেছে, সে কারণেই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ে ডেঙ্গু মশার হটস্পটগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে গত বছরের মতো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, বাড্ডা, বাসাবো, মাদারটেক ও মিরপুরের বেশ কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে না। ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনে বিশেষ কোনো অভিযানও তারা পরিচালনা করেনি বা করছে না।

মোহাম্মদপুরের মেট্টো হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. আমজাদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। এরই মধ্যে পরিবারের তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আগে মাসে-সপ্তাহে অন্তত এক দিন সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ স্প্রে করে যেতেন কর্মীরা। দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ নানা কারণে প্রায় ২ মাস ধরে তাদের দেখাও মিলছে না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন অফিসে যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি। রাত-দিন আমাদের কাটাতে হচ্ছে মশার যন্ত্রণা সহ্য করে।’

সলিমুল্লাহ রোডের চা বিক্রেতা মো. ওহিদুর রহমান। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই মহল্লায় তার বসবাস। তিনি বললেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আমরা টিভিতে কথা শুনি কিন্তু বাস্তবে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম চোখেই পড়ছে না। জনপ্রতিনিধিদের বদলে প্রশাসক দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার কোনো উপায়ই আমরা দেখছি না।’

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটিতেও প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। মশক নিধন কার্যক্রম কেন স্বাভাবিকভাবে চলছে না- জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এ কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছি। তার পরও কেন তারা কাজ করছেন না তা খতিয়ে দেখা হবে। চেষ্টা আমাদের আছে, তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সব কার্যক্রম যথাসময়ে পরিচালনায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। পরিস্থিতির উত্তরণে আমরা নগরবাসীর সহযোগিতা চাই।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসাইনের মতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমাতে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। সরকার যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা শ্রেণিকরণ করে এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়- এই তিন ভাগে ভাগ করে তাহলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ও মৃত্যুহার কমানো সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন করাও জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের উচিত গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সুবিধার উন্নতি করা। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ে হাসপাতালগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকার বাইরে মৃত্যুহার বেশির কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার অভাব ও ডেঙ্গু শনাক্ত করতে না পারা বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আরও লোকবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৬১ জন। আর আগের দিন বুধবার ৪৬৫ জন রোগী শনাক্ত হলেও কেউ মারা যাননি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত দেশে (১ জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৩ জন। আর এ সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৪৫ জন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ জন রোগী মারা যান। যাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার এক দিনেই মারা যান পাঁচজন। মৃতের এই সংখ্যা ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
রণজিতের এমপি পদ ছিল আলাদিনের চেরাগ
স্বীসহ রণজিত কুমার রায়

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় আওয়ামী লীগের শাসন আমলে অবৈধভাবে কয়েক শ কোটি টাকা কামিয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে আধা পাকা ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু ১৫ বছরে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিস্তর জমির মালিক হয়েছেন। এমপির পদ ছিল তার জন্য আলাদিনের চেরাগ।

সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব উল্লেখ করছেন, সেই হিসাব অনুযায়ী ১৫ বছরে রণজিত রায়ের ১৩৩ গুণ ও স্ত্রী নিয়তি রায়ের ২৬৩ গুণ সম্পদ বেড়েছে। বাস্তবে রণজিত ও তার স্বজনদের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। রণজিত ও তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের

রণজিত কুমার ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যশোরের দুদক কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে রাজিব কুমার রায় প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কাজের জন্য ৫ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন। তার নিজ ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়ি রয়েছে। এই এমপির পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন।

নিয়োগ-কমিশন বাণিজ্য ও দখলদারিত্ব 

সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য। রণজিত কুমার রায়, স্ত্রী নিয়তি রানী এবং দুই ছেলে রাজীব রায় ও সজীব রায় অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্যই তারা সভাপতি হতেন বলেও অভিযোগ আছে। টানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকায় একচেটিয়া নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন রণজিত।

২২ লাখ টাকার বিনিময়ে বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে হাবুল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ৩২ লাখ টাকার বিনিময়ে রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে আগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে খাজুরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে অভয়নগরের বিসিসি মুজহিদা মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু এই প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হতো রণজিত কুমারকে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ও কলেজ সরকারিকরণের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন রণজিত। 

অবৈধ টাকা আয়ের আরেকটি উৎস ছিল টেন্ডার-বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কমিশন গ্রহণ। রণজিত রায়ের পক্ষে টেন্ডার ও প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য তদারকি করতেন স্থানীয় দুই পৌরসভার মেয়র ও এক শ্রমিক নেতা। 

রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে দলের নেতা-কর্মী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি জোরপূর্বক ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক হাসান আলীকে (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে ৫ বিঘা জমি তার অনুসারীর নামে লিখে নেন তৎকালীন এমপি রণজিত কুমার। তবে নির্বাচনে পরাজিত হন হাসান আলী। এরপর চাপে পড়ে সেই জমি হাসান আলীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন রণজিত রায়।

বন্দবিলা ইউনিয়নের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, খাজুরা শ্মশানের জমি কেনার কথা বলে হিন্দুদের কাছ ১ কোটি টাকা চাঁদা তুলে ৪২ শতক জমি নিজের নামে লিখে নেন রণজিত। বাঘারপাড়া উপজেলার চাপাতলা গ্রামের সুশীল মল্লিকের ১২ বিঘা জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন রণজিত রায়। ভুক্তভোগী সুশীলের স্ত্রী অনিমা মল্লিক ভয়ে এখনো এলাকা ছাড়া রয়েছেন। এ ছাড়াও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরকারি ও খাস জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে রণজিতের বিরুদ্ধে।

নামে-বেনামে যত সম্পদ 

নবম, দশম ও একাদশ সংসদে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন রণজিত কুমার রায়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় রণজিত রায়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল সাকল্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার। এর মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪ বিঘা জমি, খাজুরায় ৪ শতক জমির ওপর ৫০ হাজার টাকা মূল্যের টিনের ঘর। 

বার্ষিক আয় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রী নিয়তি রানীর নগদ ৭০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ। আয়ের কোনো উৎস ছিল না। ১৫ বছরের ব্যবধানে রণজিত-নিয়তি রানী দম্পতির সম্পদ বেড়েছে বহু গুণ। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা দামের ১২ বিঘা কৃষিজমি, ঢাকার পূর্বাচলে ৩০ লাখ টাকা দামের রাজউকের প্লট, ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দালান এবং ১০ লাখ টাকার অকৃষি জমি। 

বর্তমানে রণজিত রায়ের নিজের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ (ডিপিএস) ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ২৩ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, ১ লাখ টাকার ৬০ তোলা সোনা, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাব।

২০২৪ সালের হলফনামায় রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানীর স্থাবর সম্পদ আছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার তিনটি বাড়ি ও ৫০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট, যা ২০০৮ সালে ছিল না। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রানীর নামে নগদ টাকা আছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার। 

২০০৮ সালে যা ছিল ৭০ হাজার। স্থায়ী আমানত হিসেবে (ডিপিএস) বিনিয়োগ আছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আরও আছে ৫৫ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার, যা আগে ছিল না। এ ছাড়া আছে ৪৫ হাজার টাকা দামের ১০ তোলা সোনা, ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১৫ হাজার টাকার আসবাব।

হলফনামায় দেওয়া সম্পদবিবরণীতে তথ্য গোপন করেছেন রণজিত কুমার রায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার সম্পদের চিত্র। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রণজিত কুমার রায়ের যশোর শহরের রেল রোডে একটি পাঁচতলা ও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। 

যশোরের লোহাপট্টিতে একটি বাড়ি, যশোর নিউ মার্কেটে দুটি ফ্ল্যাট, বাঘারপাড়ায় একটি দোতলা বাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরায় একটি চারতলা বাড়ি, ঢাকার মিরপুরে দারুস সালাম রোডে দুটি ফ্ল্যাট, দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত ও সল্টলেকে দুটি বাড়ি আছে। যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২২৫ একর জমি, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৫০ একর জমির ওপর মাছের ঘের কিনেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১ কোটি টাকা দামের একটি পাজেরো, দুই ছেলের ৬০ লাখ টাকার প্রাইভেটকার, স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার ও ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। আরও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন রণজিত রায় ও তার পরিবারের সদস্যরা।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে জেস টাওয়ার শাখার জনতা ব্যাংকের একটি লকারে রক্ষিত ২০০ ভরি স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন রণজিত। ওই সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মালিকানা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

আমদানির পরও বাড়ল ডিমের দাম

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
আমদানির পরও বাড়ল ডিমের দাম
রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ডিমের দাম। ছবি: খবরের কাগজ

ভারত থেকে আমদানির পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। বাজারভেদে ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, আজব দেশে সব সম্ভব। ডিম আমদানি হলো। তার পরও বাড়ছে দাম। বাজারে হচ্ছে কী? সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৭০ টাকায় নেমেছে। তবে ব্রয়লারের দাম বেড়ে ১৯০ টাকা ছুঁয়েছে। 

অন্যান্য সবজির দাম না কমলেও কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমে ২০০ টাকায় নেমেছে। পেঁয়াজ, আলু, মাছ, চালের বাজার আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউন হল, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

ডিমের দাম বেড়ে ১৬০ টাকা ডজন

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কায়নসহ সাড়ে ৭ টাকা দরে গত সোমবার ২ লাখ ৩১ হাজার মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসে এ বন্দর দিয়ে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি হবে। ভারত থেকে প্রতিটি ডিম কেনা হয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা দরে। প্রতিটি ডিমের আমদানি শুল্ক ১ টাকা ৮৩ পয়সা। 

এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও দেশের ডিমের বাজারে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘আমরাও চাই ডিমের দাম কমুক। তাহলে বেশি বিক্রি হবে। কিন্তু মোকামে তো কমে না। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ 

দামের ব্যাপারে হাতিরপুল বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা মোহিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দাম বেড়ে গেছে। ১৬০ টাকা ডজন।’ আমদানির প্রভাব পড়েনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা চুনোপুঁটি। গোড়ার খরব কী জানি। যেভাবে কিনি। সেভাবে কিছু লাভ করে বিক্রি করি।’ টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে ডিমের ডজন ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লাতেও একই অবস্থা। বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এ সময় শফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজব এ দেশ। সব সম্ভবের বাংলাদেশ। ভারত থেকে কম দামে সাড়ে ৭ টাকা পিস ডিম আসছে সব পত্রিকা, টিভিতে দেখা গেল। কিন্তু বাজারে এসে দেখি উল্টো চিত্র। বাচ্চারা খায় বেশি। তাই ১৬০ টাকাতেই এক ডজন ডিম কিনলাম। কী আর করার আছে। টাকা না থাকলে বাজারে আসতে হবে না। খেতে হবে না। সরকার করছে কী?

কমেনি চালের দাম

আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাজারে। মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের অহিদুল ট্রেডিংয়ের অহিদ হোসেনসহ অন্য বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘যে যা-ই বলুক, কোনো কিছুতেই চালের দাম কমছে না। কমবে না। কারণ মিলেই বেশি দাম।’ 

এই বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার বলেন, আগের মতোই ছোলার দাম ১১০-১২০ টাকা কেজি, দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, পাঁচ লিটারের দাম ৭৯০-৮০০ টাকা। চিনির কেজি ১৩০-১৩৫ ও দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু ওই বাজারেই নয়, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। আগের মতোই দাম বেশি। 

এবার ভরা মৌসুমেও ভোগাচ্ছে আলু-পেঁয়াজ। বাধ্য হয়ে সরকার শুল্ক কমিয়েছে। শুল্ক হ্রাস করলেও বাজারে তার প্রভাব দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ ও রসুন ২০০-২৩০ টাকা, আদা ২৩০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। 

সোনালি ২৬০ টাকা, ব্রয়লার বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি

আগের সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৬০-২৭০ টাকায় নেমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা কম। এ জন্য কমছে দাম। তবে দেশি মুরগির কেজি আগের মতোই ৫০০-৫৫০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান। 

হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কমবেশি হচ্ছে। আমাদের করার কিছু নেই। কিছু থাকলে মোকামে করতে পারে। মুরগির দাম বাড়লে-কমলেও আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

কমেছে কাঁচা মরিচের দাম

খুচরা বিক্রেতারা জানান, এ সপ্তাহে তেমন ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ জন্য সবজির দাম বাড়েনি। আগের সপ্তাহের মতোই প্রায় সবজির দাম। তবে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা কমেছে। হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা জিহাদ ও টাউন হল বাজারের জাহিদ বলেন, ‘সবজির দাম কমেনি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কমে কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ 

বেগুনের কেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা ও ঝিঙ্গা ৭০-৮০, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও ধুন্দুল, ৫০-৬০, মুলা ও পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৬০-৮০, বরবটি ও কচুরলতি ৮০-৯০, টমেটো ও গাজর ১৩০-১৮০, শিম ২৫০, লাউ, চালকুমড়া, কপির পিস ৬০-৭০ টাকা। এ ছাড়া লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, কলমি শাক, লাল শাক, পালং এবং পাটশাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

কমেনি মাছের দাম

অন্য জিনিসের মতো মাছের দামও কমেনি। বিক্রেতারা বলেছেন, আগের মতোই রুই-কাতলার কেজি আকারভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা, চিংড়ির কেজি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৫০০-৭০০, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, শিং মাছ ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০ ও কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা ও পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। ইলিশও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ইলিশের সরবরাহ কম। এ জন্য দাম কমছে না। গত সপ্তাহের মতোই ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ছোটগুলোর কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। 

পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে দুদকের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে দুদকের দৌড়ঝাঁপ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ১৬ বছর ধরে কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এতে তেমন কোনো সফলতা আসেনি। তবে লবিস্ট নিয়োগ করে ২০১২ সালে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। অবশ্য এ জন্য লবিস্টকে দিতে হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখনো এমএলআরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

এর পাশাপাশি পাচারের টাকা ফেরাতে এবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই), জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনওডিসি) এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দুদক। এ নিয়ে গত সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এফবিআই ও ইউএনওডিসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়েছে। আইএমএফের সঙ্গে কয়েক মাস আগেও দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক হতে পারে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান মারকো টেক্সাইরার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখা ও লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধিদলটি দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এর আগের দিন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) অ্যাসিস্ট্যান্ট লিগ্যাল অ্যাটাশে রবার্ট ক্যামেরনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদকের একই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আঞ্চলিক প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে মানি লন্ডারিং শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিরা দুর্নীতি প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কী কী করা যায়, সেসব নিয়ে প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, প্রতিনিধিদলগুলো ফিরে গিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বাংলাদেশের অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তাব পাঠাবে বলে জানিয়েছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে এফবিআইসহ বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাদের (এফবিআই ও ইউএনওডিসি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে। তারা দুদককে এ ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ধরনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। এমএলএআর পাঠানো হয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে এবং এর জবাবও আসে একই মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় ওই সময় কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে এমএলএআর পাঠায় দুদক। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ তৎকালীন দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ খানকে কিছু দায়িত্ব দেন দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। কিন্তু ওই সময়ে কোনো সফলতা আনতে পারেননি ফেরদৌস। সরকার পরিবর্তনের পর ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হন ফেরদৌস আহমেদ খান। 

এ সময় তিনি দুদকের কাছে আবেদন করেন যে তাকে লবিস্ট নিয়োগ করা হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফেরত আনতে সহযোগিতা করতে পারবেন। এ জন্য তিনি রিওয়ার্ড হিসেবে ৩০ শতাংশ টাকা দাবি করেন। দুদক আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবুও পাচারের টাকা ফেরত আনার জন্য দুদক সে সময় ফেরদৌসের প্রস্তাবে রাজি হয়। অবশেষ ২০১২ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা দুদকের অ্যাকাউন্টে ফেরত আসে। শর্ত অনুসারে একই বছরের ২২ নভেম্বর ফেরদৌসের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেয় দুদক।

এরপর আর কোনো লবিস্ট নিয়োগের তথ্য জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন দেশে এমএলএআর পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনিসহ দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের পাচার করা টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, হংকং ও কানাডার কাছে এমএলএআর পাঠানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জবাব ও তথ্য-উপাত্ত এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবু হাল ছাড়েনি দুদক। চেষ্টা অব্যাহত আছে। 

এদিকে ভারতে পি কে হালদারের টাকা পাচারের ঘটনায় হাইকোর্টে দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে দেশে অর্থ পাচার আইনে পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ২০২০) কতটি মামলা হয়েছে এবং কতজনকে আসামি করা হয়েছে, সেসবের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী, সে সময় প্রতিবেদন আকারে একটি তালিকা হাইকোর্টে জমা দেয় দুদক। প্রতিবেদনে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত অর্থ পাচার আইনে ১৩৫টি মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে ৪৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল এবং বাকি ৮৮টি মামলা তদন্ত চলমান থাকার কথা বলা হয়। 

প্রতিবেদনে অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহিষ্কৃত কর্মচারী আবজাল, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল, ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান, শাহরিস কম্পোজিট টেক্সটাইলের এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান, যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঠিকাদার জি কে শামিম, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ইসমাঈল হোসেন সম্রাট, ক্যাসিনো সেলিম, এনটেক্সের কর্ণধার ইউনুস বাদল, এমএম ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন, এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি ও তার ছেলে, ভোলার সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি পাপুল, এনসিসি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, লর্ড ভিশনের চেয়ারম্যান হোসাইন মাহমুদ রাসেল, পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ কবীর, ডিএমপির হুমায়ুন কবীর বাতেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম, ইলিয়াস ব্রাদার্সের এমডি শামসুল আলম, ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাবেক এমডি আশরাফুল আলম, সাবেক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান সিকদার, টেলিটকের সাবেক ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ যোবায়ের, প্যারাডক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক এমডি রকিবুল হাসান রাজন, আমানত স্টিলের এমডি হারুনুর রশীদ, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, এএমসি টেক্সটাইলের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদ মিয়া, আইন কমিশনের ড্রাইভার শামসুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের একজন পরিচালক খবরের কাগজকে জানান, ২০২১ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। অর্ধশতাধিক মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসবের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে।

ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ এএম
ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি
সিলেট সীমান্তে চোরাই চিনির রমরমা কারবার

সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা কারবার, তখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের তিনটি থানা এলাকায় চলছিল চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড় দেওয়ার আরেক কারবার। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর অভিযোগ ছিল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে।

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চলে গাড়ি ছাড়ের এই মহোৎসব। এর মধ্যে খবরের কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর ৭ জুন থেকে এসএমপির গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ের মধ্যেও চলেছে দক্ষিণের তিনটি থানায় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দেওয়ার ঘটনা।

সিলেট মহানগরীতে এসএমপির ছয়টি থানা। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটো ভাগে দায়িত্ব সাজানো রয়েছে। দুজন উপকমিশনারের মাধ্যমে ছয়টি থানা পরিচালিত হয়। দক্ষিণ ভাগে পড়েছে তিনটি থানা। ওই তিন থানা এলাকার সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত এলাকার রয়েছে সহজ সড়ক যোগাযোগ। চোরাই চিনির গাড়ি সরাসরি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌঁছাতে এসএমপির দক্ষিণের থানাগুলো অতিক্রম করতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে নগরী পাড় করে দেওয়ার কাজটি অধীনস্থদের দিয়ে একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি, সাউথ) সোহেল রেজা। গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এসএমপির দক্ষিণ বিভাগের থানাগুলোতে কর্মরত ২১ জন পুলিশ সদস্যের ফোন নম্বরে উপকমিশনার সোহেল রেজার অফিশিয়াল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কেবল চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে টাকা আদায়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এ রকম ২১টি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট খবরের কাগজের হাতে এসেছে।

‘ডিসি সাউথ স্যার’ লিখে সেভ করা ফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট ঘেটে দেখা গেছে, এক ঘণ্টায় ১২টি গাড়ি ছাড় দেওয়ার পর টাকা আদায় বিষয়টি ‘143K’ সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে ‘অল পেইড’। কিছু মেসেজে দেখা গেছে, চোরাই চিনির গাড়ি সিলেট নগরী পেরিয়ে ঢাকা পৌঁছানোর পর ছিনতাই বা ধরা পড়ার ঘটনা জানিয়ে টাকা আদায় কম-বেশি হওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি একটি মেসেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে এভাবে, ‘স্যার, সোহেল রানার দুইটা গাড়ি ছিনতাই হওয়াতে কম নিছে। আজ ডিবি লাইন ক্লিয়ার থাকলে ৫-৬টা কম নিবে।’ একই মেসেজে ‘50K+24K=74K’ সংকেতে হিসাব রয়েছে। উপকমিশনারের হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট সরবরাহকারী সূত্র জানায়, হাজার টাকা আদায়ের হিসাবে ‘K’ সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া সোহেল রেজার ছয়টি ফোনকল রেকর্ড খবরের কাগজের হস্তগত হলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত একটানা সাত মাস চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে সোহেল রেজা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা স্বীকার করেছেন। চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ে যেন ‘টাকার খনি’ পেয়েছিলেন তিনি। 

খবরের কাগজের হাতে আসা ছয়টি ফোনকলে প্রায় ২০ মিনিটের আলাপে শোনা যায়, অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তিনি কেবল চোরাই চিনির গাড়ির হিসাব নিচ্ছেন। ১০০ বস্তার চিনির গাড়ির জন্য ৭ হাজার টাকা ও ১০০ বস্তার বেশি থাকা গাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার্য করে আদায় করাতেন। গাড়ি ছাড় দেওয়ার বকেয়া টাকাও আদায়ে তাগাদা দিতেন। কথায় কথায় অধীনস্তদের ধমকের ওপর রেখেছেন। টাকা আদায় মনঃপুত না হলে অশ্লীল গালি ও নানা ভর্ৎসনাও করছেন। তার ফোনকলে থাকা এক পুলিশ সদস্য নিস্তার পেতে চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।

ছয় বছর পাঁচ মাস পুলিশে চাকরি করা সাবেক এই পুলিশ সদস্য এখন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। গত ৭ জুলাই তিনি নতুন চাকরিতে জয়েন করেন। সাবেক এই পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল পুলিশের ডিউটি বলতেই এসব করা। বদলি নিতে গিয়েও উনার (ডিসি সাউথ) বাধার মুখে পড়ি। অন্যত্র চাকরি পাওয়ায় আমি যেন নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছি।’

ফোনকল রেকর্ড নিয়ে এসএমপির সদর দপ্তরের প্রশাসনে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে ফোনকলগুলো উপকমিশনার মোহা. সোহেল রেজার কণ্ঠ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সোহেল রেজার বক্তব্য নিতে একাধিকার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমপির সদর দপ্তরে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি।

এসএমপি সূত্র জানায়, মোহা. সোহেল রেজা (বিপি নম্বর: ৭২০৫১১২৩৭৭) বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি এসএমপির উপকমিশনার পদে কর্মরত। সরকারের পট পরিবর্তনের পর পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু হলে গত ১০ আগস্ট তাকে এসএমপির দক্ষিণের সঙ্গে উত্তর বিভাগের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সময় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ের ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়লে ১৮ আগস্ট রাতারাতি আরেকটি আদেশে তাকে উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এসএমপির কমিশনারের কার্যালয়ে উপকমিশনার পদে রাখা হয়েছে।

ফোনকল রেকর্ড-১

ডিসি (সাউথ) মোহা. সোহেল রেজা: তা হলে কি ভুল হিসাব আমার।
অধীনস্থ পুলিশ: আমি তো স্যার আটটা ডিআই (চিনিবাহী মিনি ট্রাক) পাইলাম। আমার তো আটটা ডিআই।

ডিসি: তোমার ইয়া হবে কোথ থেকে। না হলে তোমার ধান্ধা হবে কোথ থেকে। তুমি তো দারোগা, তুমি তো এতে সন্তুষ্ট থাকতে পার। বিভিন্ন দিকে হিসাব কম দেখায়া আর ওই ৪৫টার হিসাব কই আমার।

পুলিশ: দিব স্যার, কনফার্ম দিয়ে দিব। 

ডিসি: ওই ৪৫টার হিসাব কই? এখন তো আর গাড়ি কমতেছে না। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কমতো। একটা একটা করে কমলে মাসে কত? ৩০টা। কাহিনি কী। তোমার কি কোথাও দেওয়া লাগে কিছু। তোমার তো কোথাও কিছু দেওয়া লাগে না। বল তোমার খরচ কী। কোথাও তো খরচ নাই। উপরের কোথাও তো খরচ নাই। তাইলে তোমার এত লোভ থাকবে কেন। সিনিয়রদের হক মাইরা খেয়ে ফেলতেছ। তোমারে আমি কাগজে-কলমে হিসাব দিয়ে ডে বাই ডে হিসাব দেখাইছি। এখন থেকে যদি চাও প্রত্যেকটা ডে বাই ডে হিসাব দেখাব। তুমি যদি মনে কর। এই যে আজকে বললাম ১২টা তুমি মিলাইয়া দেখ। সুতরাং হিসাব ঠিক কর, তা না হলে কিন্তু তোমাদের ব্যবসা আমি ডকে উঠাই দেব। আমি বলতেছি না পাবলিক (...অশ্লীল শব্দ)

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: এই সমস্ত চামচামি মিথ্যা ধান্ধাবাজি এগুলো বাদ দাও। একবারে অরজিনাল হিসাব দেও। আরে বেটা ১২টা গাড়ি গেলে তো তুমি ১২ হাজার টাকা পাও। তুমি… দারগার বাচ্চা ১২ হাজার টাকা মানে চাট্টিখানি কথা। আমি ডিসি পাচ্ছি ১২ হাজার, তুমি পাচ্ছো শালা ১২ হাজার। শালা বাটপার। তুমি সব ঠিক কর।

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: তা না হলে কাল থেকে আমি অন্য স্টাইলে যাব। আর এখন থেকে কার কয়টা গাড়ি গেল, ডিআই ৮টা না, ডিআই ৮টা কার গাড়ি গেছে তুমি লিখিত দিবা। আর যারগুলো হিসাব দিচ্ছ না সেগুলো আমি রাস্তায় ধরবো। ও ডিআই যে ৮টা গাড়ি গেছে কয়জনের, ৮ জনের না ৩ জন না ৪ জনের এই হিসাবও দিবা যে অমুকের গাড়ি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: মনিরের গাড়ি, অমুকের গাড়ি, ওইটা অমুকের গাড়ি। তা হলে আমার কাছে নামগুলোও হিসাব থাকবে। এই নামের বাইরে শালা যে গাড়ি যাবে, আমি ধরব। আমার ধরার তো অভাব নাই। মোগলাবাজার (এসএমপির থানা) গেলেও আমি ধরতে পারব। দক্ষিণ সুরমা (থানা) গেলেও ধরতে পারব। এখন শাহপরানের (থানা) এখানেও আমি ইয়া (চেকপোস্ট) বসাই দেব টিলাগড়ে। দিয়ে তোমার পাকনামু বাইর করে দেব। তুমি তো ওইটাই চাচ্ছ। তোমারে বইলা বইলা তো আমি সংশোধন করতে পারতেছি না। গাড়ির হিসাব একেবারে ঠিক দিচ্ছ না। শুধু নাঈমেরতে (...অশ্লীল শব্দ) দিছি, দেড় মাসের খতিয়ান ধরে টান দিছি, এখন আর নাঈমের কমেও না বাড়েও না। এখন তো ঠিক আছে। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কম দিত। যাই হোক, যা হইছে পেন্ডিং ক্লোজ কর। ওই ৪৫টার হিসাব দিবা, প্লাস এই যে বকেয়া এগুলো কাল-পরশুর মধ্যে ইয়া কর।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার দিয়া দিব স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-২

ডিসি: কোনো… বাচ্চার গাড়ি যাইতে দেব না আমি। যেটা পাব সেটা ধরব আর মামলা দেব। মামলা দেব আর অর্ধেক মাল বেইচা দেব। ২০ লাখ টেকার মাল ১০ লাখ ধরলে ৫ লাখ সরাই ফেলাব ডিবির মাল। তর মতো এই ফকিন্নি ১ হাজার, ২ হাজার, ৫ হাজার থাকানোর দরকার নাই। তর …। কেমনে ব্যবসা করিস কর।

পুলিশ: স্যার 

ডিসি: ওই … বাচ্চারে ডাক, এখন ডাক। … বাচ্চারে ডাক। ডাইকা বল তর এক্কারে ঠ্যাং ভাইঙ্গালামু … বাচ্চা। সিস্টেমে চলবি, আর না হলে তর কোনো গাড়ি যাবে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলতেছি স্যার।

ডিসি: এ জায়গার গাড়ির নাম্বার দেব কটা। কয়টা গাড়ির নম্বর নিবি বল। এই যে দেখ হাসিবুলের গাড়ি গেছে ঢাকা মেট্রো এত ১২ সিরিয়ালের ১৪৬৫। বাবুর গেছে ২০ সিরিয়ালের ৬৫৪। ইদ্রিসের ট্রাক ১২ সিরিয়ালের ১৩৩৮। বিল্লালের ট্রাক ২২ সিরিয়ালের ৩২৮। হারুনুর রশিদের ঢাকা মেট্রো ট ১৮৫০৪৫। সাইদের ... সোহাগ যশোর ট এত। পালের গাড়ি ৫৩৪ সবুজ। তাইলে তুমি …। আমি যদি মনে করি প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর পর্যন্ত দেব। আমার সেই কেপাসিটি আছে। আর তুমি এখানে বইসা…। তোমারে আমি হায়েস্ট বললাম, ২৫ তারিখ পর্যন্ত তোমার আয়ু। তারপরে কিন্তু আমি তোমারে সরাই দেব। এত দিন বলছি আমি কিন্তু এবার কাজ করব। 

ফোনকল রেকর্ড-৩

ডিসি: তুমি, যে গাড়ি যাবে যারই গাড়ি যাবে মেসেজ দেবে, নম্বর দেবে। আদারওয়াইজ গাড়ি আমি মারব। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। গাড়ির নাম্বারসহ দিব স্যার। 

ডিসি: নাম্বার ছাড়া কোনো … বাচ্চার গাড়ি যাবে না। এটা সোহেল হোক, মাছুম হোক, এক্স ওয়াই হোক যেডাই হোক। দিনের বেলায় রাতের বেলায়। আমারে মেসেজ দেয়া থাকবে। তোমাদের চৌদ্দ নাম্বারি আমি বাইর করতেছি দাঁড়াও। তুমি এক … জলিল এক… সব… আমারে ঠকাও না। 

পুলিশ: স্যার ওই যে হাইড্রেলিকে যে নাম্বার থাকে না। অন টেস্ট থাকে যেগুলা। 

ডিসি: অন টেস্টে টাইম দেবে। ওয়ান টু করে। আমি টাইম অনুযায়ী মিলাব। একটা টাইম দিলা ১১টায় সেই গাড়ি তিনটার সময় তো আমার দক্ষিণ সুরমায় দাঁড়ায়া থাকার কথা না।

পুলিশ: ঠিক আছে। আমি তা হলে ড্রাইবারের নাম আর মোবাইল নম্বর বলব দিয়ে দিতে স্যার।

ডিসি: এক্কেবারে প্রত্যেকটা বড় গাড়ি। তা না হলে আমি একটা গাড়ি যেতে দেব না। যেটা ধরব … দেব। শালা সোহেল … কালপিট। … গাড়ি নিচে ২২টা। হিসাব দিছে কালকে রাতে ৫টা। আজকে দিনে কয়টা। এই তোমার দিনে কয়টা গেছিল জিজ্ঞাস করছ। 
পুলিশ: জিজ্ঞাস করছি স্যার। দিনের পার্টিবুলে ২টা। কিন্তু সোহেল ভাই বলে একটা গাড়িও গেছে না। 

ডিসি:  তা হলে দিনের পার্টি মিথ্যা কথা বলতেছে?

পুলিশ: স্যার, সোহেল বলছে আমাকে ধরে ফোন দিতে। কার গাড়ি গেছে আমার নাম বলে গেছে। এখন আমাকে ফোন লাগাই দিত যে আমি বলতাম। আমিতো ভাই কোনো গাড়ি আজকে নেই নাই।

ডিসি: এ জন্য সোহেলরে বল যে… তুই ওই নাম্বার দিবি গাড়ির। তা না হলে একটা গাড়ি যাইতে দেব না। তর যে গাড়িগুলো যাবে তুই নাম্বার দিবি। সোজা কথা। ওই শালা ক্রিমিনাল। 

পুলিশ: ঠিক আছে ওইটার নাম্বার দিতে বলব। আর যেটার নাম্বার নাই স্যার ওইটা বলব যে ড্রাইভারের নাম্বার এবং নাম সেন্ড করার জন্য। যেন আটক করলে ড্রাইভারের নাম মোবাইল নাম্বার মিলে। না মিললে ওই গাড়ি আর ছাড়া হবে না। 

ডিসি: হ্যাঁ প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে এখন থেকে। প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে। আমি তিন থানায় বলে দিচ্ছি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। 

ডিসি: আমার নলেজ ছাড়া এখন কোনো গাড়ি যাবে না। শালা … বাচ্চারা সুযোগটা নিয়া একেবারে যা ইচ্ছা তাই করে। ৫২টা গাড়ি গেছে আর আমার হিসাবে পাই ৪টা ৩টা ২টা। এই কিরে। আমি দেব তোমারে পনের বিশটার নাম্বার দিয়া দেই গাড়ির। কোন কোন গাড়ি গেছে। তুমি ওইখানে নাটক…। পার্টি পার্টি পার্টি।… কোনো কাজ কর না তুমি। তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। ভাই শাহিন, আমি তোমারে বলতেছি না কয় দিন ধরে তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। আমি বিকল্প খুঁজে রাখছি কারে বসাব ওখানে। তোমারে সরাব মিল্টনরেও সরাই দেব। শুধু ২৫ তারিখটা আসতে দাও। তুমি আসলে বেশি খাইয়া ফালাইতেছে তো বদ হজম হয়ে গেছে। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলে দিতেছি স্যার। পার্টিগুলোরে সবগুলারে আজকে থেকে স্যার। 

ডিসি: আমি বললাম তো, আমার নলেজ ছাড়া যদি কোনো বড় গাড়ি আমি পাই। সেটারেই আমি মারব সে যেই হোক। আমার বাপের গাড়ি হইলেও আমি মামলা দেব। ওই শালাদের বলে দাও। 

পুলিশ: ঠিক আছে আজকে থেকে বড় গাড়ি যতগুলা আছে। 

ডিসি: …বাচ্চা তোমার পার্টি বলবে যে দুইটা গেছে আর ওই… বাচ্চা বলবে আসে নাই। আমার গাড়ি যায় নাই। তো তুমি কি … হিসাব নিচ্ছ। ... এখন একটা মৌসুম যাচ্ছে … পইরা থাকবে না তো … ঘরে বইয়া থাকে, … বেড়ায়। তলে তলে ঠিকই তো পার্টিগুলার সঙ্গে ধান্দাগিরি করে তুমি তোমার আখের ঘুছাইতেছ। আমি বলে দিলাম। আমার নলেজ ছাড়া যে গাড়ি আসবে আমি সেটা মারব।

 

ফোনকল রেকর্ড-৪

ডিসি: তুমি যে বড় ইয়া নিয়া যাও এগুলা তো কেউ জানে না। 

পুলিশ: স্যার।

ডিসি: এবাদুলের সঙ্গে কথা টেকনিকালি বল। আবার আমারে জড়াইয়ো না। তোমার তো বুদ্ধিশুদ্ধিও নাই। তুমি ডাইরেক্ট বলবা যে ভাই এত বুঝি না। যদি ১০০ বস্তার নিচে হয় তা হলে সাত করে যাবে উপরে। কি করবেন দেখেন। অন্যগুলা ৭ যাবে আর এদিকে তোমার যেটা সেটা দেবে। যদি ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে যায় তা হলে ১৫। আর ৩০০ বস্তা হলে তো কথাই নাই।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ৩০০ বস্তার কোনো গাড়ি আমি এলাউ করব না। আর এর বাইরে কিছু করলে শালারে ধইরা বসানি দিয়া দেও। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার ফোন দিয়া কথা বলতেছি স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-৫

পুলিশ: জি স্যার, মাসুম স্যার।

ডিসি: হ্যাঁ মাসুম। মাসুমের গাড়ি ছিল এটা।

পুলিশ: মাসুম আর হে তো একই স্যার। 

ডিসি:  বুঝছো ওদিক দিয়া কিছু গাড়ি নিছে। 

পুলিশ: ওইদিক দিয়া শ্যামপুর হইয়া বাদেশ্বর হইয়া যায় মনে হয় তাইলে। 

ডিসি: হুম তার মানে বুঝতেছি ওই গাড়ি দুয়েকটা ধরে মামলা দিতে হবে। ওটা ফাইজলামি…। শুধু ওসিরে দিয়া আমাদের ফাঁকি দিয়া চলে যাচ্ছে। বুঝছে।

পুলিশ: জি স্যার। ওই যে গোলাপগঞ্জ দিয়া যেগুলো বাইর হয় স্যার, শ্রীরামপুর পয়েন্টে জলিল ভাইরে দিয়া আটক করে স্যার ওইখানে একটা বসান দিলে ঠিক হবে স্যার। 

ডিসি: জলিলরে দিয়া হবে না। আমার অন্যভাবে ধরতে হবে। জলিল তো ওসির ভয়ে ধরবে না। ধরলেও ওসি ছেড়ে দেবে। ওসি এখানে মাস্তানি…। তাই আমার একটা বসানি দিতে হবে। 

পুলিশ: জি স্যার। তা হলে রাতেও মনে হয় ওদিকে যায় গাড়ি। 

ডিসি: আমি বললে তো ওই গাড়ি ছাড়ব না। একেবারে মামলা বসাই দেব। 

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই?

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই? 

পুলিশ: অন্যান্য গাড়ি গেছে স্যার। খাজা ভাইর গেছে স্যার। 

ডিসি: খাজার হিসাব তো আলাদা। ওরা তো মিথ্যা কথা বলে না। 

পুলিশ: ডিআই গেছে ২টা স্যার। সোহেলের আমি ৫টা পাইছি। আচ্ছা দেখি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা করাইতে পারি কি না। আমারে পার্টি ৫টার টাকা দিয়া গেছে স্যার। ড্রাইভার সোহেলের কথা বলে দিছে। ৫টা, ডিআই ২টা আর আদারস আছে ১টা স্যার। 

ডিসি: আদার এই পার্টি কার। 

পুলিশ: এই যে প্রদীপ নামে যে একটা... 

ডিসি: ওই শালা তো নাই। প্রদীপ নাই। ওরে এতো অল্পতে ছাড় কেন।

পুলিশ: স্যার নাইম তো আসে না স্যার। এই জন্য তো এখন...

ডিসি: নাইম আসে না। ওরে একবার …যে আমি। ৩০ হাজার টাকা বাকি রাখছিল। পরে… দিছি মামলা দিয়ে। ভয়ে আর আমার সামনে আসে না। 

পুলিশ: একটা লোক আসে। প্রদীপ বাবু বলে আমার একটা গাড়ি আছে। ওইটা যায়। এখন ওইদিন বাশারভাই বলছিল নাইম ভাই যোগাযোগ করে কি না। আমি বলছি যে নাইম তো আসে না। পরে বলল মাল কি নাইমের কি না। আমি বলছি সে তো আমার এখানো প্রথম থেকেই আসতেছে। প্রদীপ একটা হিন্দু লোক। এখন স্যার নাইম না আসলে তো আমি কমনে মালটা দেই।
ডিসি: আচ্ছা যাক ওইটা ইয়া ছাড়া ছাইড়ো না। আমার জন্য মিনিমাম ৫। দুই তিনের মধ্যে ছাইরো না। 

পুলিশ: আপনার জন্য তো পাঁচই রাখি স্যার। 

ডিসি: আর এদিকে তোমার ওসি তো …এখন ডির্স্টাব করা শুরু করছে। লোক ডেকে চার হাজার, পাঁচ হাজার করে নেওয়ার জন্য।

পুলিশ: জি স্যার। স্যারে তো সবারে ডাকাইতো। স্যার ওই যে সিক্স ফাইভটা বসাইছি ভালো করে। সিক্স ফাইভটা ইয়া করতেছে না। বড় গাড়ি তো স্যার বাইপাসে যায় ওই জন্য সিক্স ফাইভের মাধ্যমে সবগুলা গাড়ির নাম নাম্বার নিয়া যোগাযোগ করাইতেছি স্যার। 

ডিসি: মাল কোথায়। আবার গাড়ি পথে ধরছে। এতে তো পার্টি সব চলে যাবে।

পুলিশ: এমনি তো বর্ডার বন্ধ ছিল স্যার। যে মালগুলো স্টক ছিল সে মালগুলোই যাইতেছে। বর্ডার তো একেবারে বন্ধ। এখন যদি এমনি ইয়া করে তা হলে তো পার্টি মরে যাবে স্যার। 

ডিসি: যাক সোহেলরে বল কালকে ফুল পেইড করে দিয়ে যাবে। ওই …বাচ্চা কিন্তু খারাপ। ৬টা হচ্ছে ৩০ আর ওদিকে আগের তোমার ৭১ বাকি আছে। তার মানে এক লাখ ১৪০০ বাকি। ওটা কালকে ওই শালাদের কাছ থেকে নিবা। 

পুলিশ: স্যার ঠিক আছে। আমি রাতরে আসলে কথা বলব।

ডিসি: শালা মাসুমের গাড়ি এটা ধরব আমি। ধরে মামলা দেব। মামলা না দিলে গোলাপগঞ্জের ওইটা ঝামেলা শুরু করসে। আমি চিন্তা করছি গোলাপগঞ্জ ডুকলে তো আর ওদিকে তোমার দেয়া লাগতেছে না। আমার ওদিকে দেওয়া লাগতেছে না। শুধু ওসিকে হাত করলেই শ্রীরামপুর দিয়া বের হইয়া চইলা যাবে। ওসিও ওখান থেকে একা খাইতেছে। কিন্তু ওসি …বুঝে না ওর বাপ ডিসি ধরলে ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই গাড়ি ছাড়ার। আমারে ওইগুলা ধরতে হবে এই আরকি।

পুলিশ: জি স্যার, এই জন্য মনে হয় যে আপনাকে দিতে হবে। আর আমাদের তিনটা ডিউটি পার্টি পরে যে এদিকে দেওয়া লাগে এ জন্য গোলাপগঞ্জ দিয়ে চলে যায়। 

ডিসি: ওসি ওইদিকে ৮-১০ হাজার নিয়ে একা তার এপর দিয়া চালাই দিছে। …আমি মারতেসি দাঁড়াও। এখন তুমি বলতে পার। তোমরা গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলো নিচ্ছ মাসুমের নামে এতে কিন্তু বসানি খেয়ে যাবা। এইটা কিন্তু সোর্স লাইগা গেছে। তুমি বসানি খাবা ওই দিকে। আর ধরলে তোমার বাপ ওসি কেন কেউ ছাড়াতে পারবে না।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। আমি আজ থেকে আসলে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব স্যার। 

ডিসি: ঠিক আছে। 

ফোনকল রেকর্ড-৬

ডিসি: ওই সিস্টেমে আসবা তো হবে। আর না হলে নাই। আমি রাস্তায় মারব। যেভাবে পারি। ডিবি দিয়া পারি, দক্ষিণ সুরমা দিয়া পারি, মোগলাবাজার দিয়া পারি, আমি নিজে মারি মারব। সব…। সব এক হাজার, এক হাজার, এক হাজার। …হিসাব দেয়। কোনো পারফরমেন্স তো নাই। তুমি ওইখানে একটাবার ফাস্ট হইতে পারলা না। ওই তো ওইখানে দিয়া তোমারে কি লাভ। তুমি আছ ঝাড়ু দিয়া। ঝাড়ু নিয়া যাইও, ওখানে বসো ঝাড়ু দিতে।

আর চুরি-চামারি কইরা এগুলোর সাথে ছাড়ো আমারে জানাও না। যদি ২০০ বস্তা যায়, এইটা কার? তুমি আমারে কখনো কইছো যে বড় গাড়ি যায়। এত বড় গাড়ি। আমি তো নরমালি জানি ৫০/৬০ বস্তার গাড়ি। এখন থেকে ১০০ বস্তার কোনো গাড়ি গেলে এখানে আমার আলাদা ৭ রাখবা। আর ১০০-এর উপরে গেলে এখানে ১৫। তা না হলে কোনো গাড়ি ছাড়বা না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।