এক মাস ধরে সবখানে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতির অনেকটাই অবসান হয়েছে। এবার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসছে দেশ। জনমনেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কদিন আগে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ। শুরু হয় ডাকাত-আতঙ্ক। এতে রাত জেগে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দেয় স্থানীয় ছাত্র-জনতা। বেশ কিছু এলাকায় ধরা পড়ে ডাকাতদের অনেক সদস্য। তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় ২৯টি থানাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের দাপ্তরিক কার্যক্রম গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। তবে তাদের মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা রক্ষায় নামতে দেখা যায়নি। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না পুলিশি-ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা স্ব-উদ্যোগে দল বেঁধে যান চলাচলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাস্তায় দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছেন। তেজগাঁও কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় স্ব-উদ্যোগে বাজার মনিটরিং করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
এতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করে বলে জানা গেছে। সব মিলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং মানুষের ভোগান্তি কমাতে ছাত্র-জনতা, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগে সরকার পতনের পর রাজধানীসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই অবস্থা কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে দেশ।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) ছুটির দিন হলেও বিভিন্ন সড়কে আগের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি ও যান চলাচল বেড়েছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে সেখানে ছাত্র-জনতা, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা: গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, উত্তরা, বনানী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতে ডাকাত-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যরাতে একাধিক আবাসিক এলাকার মসজিদ থেকে সতর্কতা জানিয়ে মাইকিং করা হয়। প্রতিরোধে রাস্তায় নেমে আসে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। ডাকাত দলের অনেক সদস্য জনতার হাতে আটক হয়। তাদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, পুলিশকে দায়িত্ব পালনে ফিরিয়ে এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা অতিব জরুরি।
সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা: শুক্রবার ছুটির দিনেও বিভিন্ন সড়কে ও বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল। অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলাচল করেছে। সড়কে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ। এই অবস্থায় রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি তারা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলো নির্দিষ্ট স্থানে থামার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তারা মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাচ্ছেন। এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। এতে মানুষের মাঝে অনেকটা স্বস্তিও ফিরেছে।
বাজারদরে স্থিতিশীলতা: সম্প্রতি কিছুদিনের টানা আন্দোলনের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বাজারে পণ্য সরবরাহে দেখা দিয়েছিল তীব্র সংকট। সেই সুযোগে বাড়তে থাকে দাম। সেই সংকট এখন অনেকটাই কেটে গেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর গত মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন ছোট-বড় বাজার আগের মতো সরগরম হয়ে ওঠে। সবজি, ডিম, মুরগি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। চাল, ডাল, তেলের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ ও ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির অনুরোধ জানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বাজারে বাজারে মাইকিংও করেছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাস্তায় ও বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। সে জন্য খরচ কমেছে। পাশাপাশি ন্যায্য দরে পণ্য বিক্রি করতে শিক্ষার্থীরা তদারকি করছেন। এসব কারণে পাইকারি পর্যায়ে সবজির দাম অনেকটা কমেছে। একইভাবে কমেছে জিনিসপত্রের দাম।