ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দ্রোহের দেয়ালে জীবনের জয়গান

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪০ এএম
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:০২ এএম
দ্রোহের দেয়ালে জীবনের জয়গান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল চত্বর। ছবি: খবরের কাগজ

আইজুদ্দিনের কথা মনে আছে? বাংলার জনপ্রিয় দেয়ালচিত্রের চরিত্র আইজুদ্দিন। একটা সময় ‘কষ্টে আছি আইজুদ্দিন’ বাক্যটি দেয়াল থেকে উঠে দেশের মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে। মুখ থেকে মনে জায়গা করে নেওয়া এ রকম দেয়াললিখন বহু বছর মানুষ দেখেনি। দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সেই নিষিদ্ধ সময়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের দেয়ালের বুকে হাজির হয়েছিল ‘সুবোধ’ চরিত্রটি। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’, ‘সুবোধ কবে হবে ভোর’ বা ‘সুবোধ এখন জেলে’র মতো স্লোগান শহরের অলিতে-গলিতে কারা যেন লিখে যেত রাতের অন্ধকারে। 

সোশ্যাল মিডিয়ার তুমুল জনপ্রিয়তায় মানুষের মনের কথা লেখার আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছিল সোশ্যাল হ্যান্ডেলগুলো। কিন্তু সরকারের কড়া নজরদারি আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে যখন কণ্ঠরোধ শুরু হয়, মানুষ যখন কথা বলার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে, কথা বলতে না পাড়ার যন্ত্রণায় মানুষ দেয়ালে দেয়ালে লিখতে থাকে ‘উই ওয়ান্ট টু টক’-এর মতো গ্রাফিতি। 

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেয়ালে গ্রাফিতির চর্চা মূলত বাম রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এই দেয়াললিখন চর্চা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে নীরব দেয়ালগুলোও বুক টান করে সরব ছিল প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে। পুলিশ আর গোয়েন্দাদের ভয়ে দেয়াললিখনের কোড নেম ‘চিকা মারা’ হিসেবে একটা সময় পর্যন্ত ব্যবহার হলেও এখন এটাকে গ্রাফিতি হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে চান চিত্রশিল্পীরা। 

সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই গ্রাফিতি বা দেয়াললিখন শিল্পকর্মের এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে গোটা দেশে। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, বিশ্ববিদল্যায়গুলোর আশপাশের দেয়ালে, রাস্তায় লেখা হতে থাকে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, দেশের মেধা দেশে থাক’-এর মতো স্লোগান। 

৭ জুলাই থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে আন্দোলনকারীদের দেয়াললিখনের ভাষা। ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘ছাত্র যদি ভয় পাইত বন্দুকের গুলি, উর্দু থাকত রাষ্ট্রভাষা, উর্দু থাকত বুলি’, ‘আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানাল’, ‘দেশ স্বাধীন হলে আমরা আবার ছাদে উঠব’, ‘তুমি কে আমি কে, বিকল্প বিকল্প’, ‘লোহার টুপি মানুষের মগজ খায়’। যেন দেয়ালগুলোও ছাত্র-জনতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কথা বলা শুরু করে।