আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ১৮ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পাশাপাশি উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টররাও পদ ছাড়েন। শীর্ষ পদগুলোতে সহসা নিয়োগ না দিলে স্থবির হতে পারে বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে যোগ্য ও নিরপেক্ষ শিক্ষকদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য না থাকলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি তো হবেই।’
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এদিন রাতেই মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বিভিন্ন সময়ে পদত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) উপাচার্য নিয়োগের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট প্রতিনিধিরা নির্বাচনের মাধ্যমে তিন সদস্যের নাম চূড়ান্ত করেন। সেই তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ (১১-এর ২ ধারা) অনুযায়ী সিনেট ছাড়াও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তিনজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় সব কাজ থেমে আছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমটা এমন করে রাখা, যেখানে কাজের শুরুতেও উপাচার্যের অনুমোদন লাগে আবার শেষেও অনুমোদন লাগে। ফলে এখন কোনো ফাইলই অনুমোদন হচ্ছে না। দ্রুত নিয়োগ না হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়বে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ না দিয়ে যার একাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগত্য ও দক্ষতা বেশি তাকে নিয়োগের পক্ষে তারা। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের একাডেমিক যোগ্যতা উল্লেখ করে উপাচার্য করার দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নেই। বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাদা দল থেকে এ বিষয়ে দলকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারদলীয় না হওয়ায় নিরপেক্ষ শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান প্রশাসনে যারা অধিকতর দল নিরপেক্ষ, যাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো রিপোর্ট নেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। তারা যেহেতু রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দীর্ঘ জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। এখন সেটা দূর করতেই ভালো শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’