পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগে ‘নিরপেক্ষ শিক্ষক’ খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গণহারে পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ পদত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দলসমর্থিত শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে বসানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে। ফলে খুব শিগগির স্বাভাবিক হচ্ছে না অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আগে যে সুবিধা ছিল, বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের শিক্ষকদের একটা সংগঠন থাকে। সেখান থেকে টেনে একজনকে ভিসি বানিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষককে আমরা চিনি, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং প্রশাসনিক দক্ষতার দিক থেকে যারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, এরকম শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছি।’ দ্রুত সময়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো দলীয়-সরকার না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবার চাওয়া অনুযায়ী নিরপেক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেভাবে নিরপেক্ষ, যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যাদেরই পাওয়া যাচ্ছে, তারা দায়িত্ব নিতে সম্মত হচ্ছেন না। প্রস্তাবে যাদের নাম আসছে, তারা বিএনপি-সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব খবরের কাগজকে বলেন, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। সময় লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাবে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। বেশ কয়েকটিতে এখনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সরকার পতনের পর ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা পদ ছেড়েছেন, যা মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকার দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য দ্রুতই নিয়োগ দিতে আগ্রহী। সে অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পক্ষের তরফ থেকে নাম দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকেও উপাচার্য পদ পেতে আগ্রহী কেউ কেউ। তবে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসানের নাম প্রস্তাবিত হলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ধর্মীয় বিষয়সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্ট সামনে আসায় এটি নিয়ে সমালোচনা হয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশের পক্ষ থেকে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের নাম এসেছে। তিনি বর্তমানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ব্যানারে তাকে কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। অন্যদের চেয়ে অধ্যাপক নিয়াজের অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল সমৃদ্ধ বলে দাবি করা হচ্ছে।
সাদা দল সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হলে অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ, ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক সমিতিতে নেতৃত্বের বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখে। একদম নতুন কেউ দায়িত্ব নিলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, দলীয়ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ছাত্র রাজনীতি চালু থাকবে। সে কারণে তারা নিরপেক্ষ উপাচার্য দেখতে চায়।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যশূন্য
পদত্যাগজনিত কারণে চার স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাকৃবি, বুয়েট, ইবি, শাবিপ্রবি, খুবি, বিএসএমএমইউ, হাবিপ্রবি, মাভিপ্রবি, পবিপ্রবি, শেকৃবি, চুয়েট, কুয়েট, ডুয়েট, নোবিপ্রবি, জবি, কুবি, জাকাইনবি, সেকৃবি, যবিপ্রবি, পাবিপ্রবি, বেরোবি, বশেমুরবিপ্রবি, বশেফমুবিপ্রবি, ববি, রাবিপ্রবি, রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদশূন্য রয়েছে।