ঢাকা ৭ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

বনখেকো হা-মীমের এ কে আজাদ

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২৮ এএম
আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২৯ এএম
বনখেকো হা-মীমের এ কে আজাদ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নে শালবনের বুক চিড়ে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে হা-মীম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বনের জমি জবরদখল করে গড়ে তোলা হা-মীমের এ সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে গ্রুপটির মালিক এ কে আজাদের সঙ্গে বন বিভাগের দ্বন্দ্ব চলছে প্রায় দুই দশক ধরে। বনখেকো এ কে আজাদের অর্থ, পেশিশক্তি আর রাজনৈতিক প্রভাব ও দাপটের কাছে সব সময়ই বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন অসহায়ত্ব স্বীকার করে এসেছে। হা-মীম গ্রুপের বেদখল করে নেওয়া বনের জমি উদ্ধার তো হয়ইনি বরং আরও নতুন জমি জবরদখল করা হয়েছে।

বন বিভাগ বলছে, এ শিল্প পার্কটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি অবজ্ঞা করা হয়েছে। হা-মীমের শিল্পপার্ক গড়ে উঠেছে বনের ভেতরে। এর বেশির ভাগই নিচু জমি, যা স্থানীয় ভাষায় ‘বাইদ’ নামে পরিচিত। বাইদ ভরাট করে গড়ে তোলা শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত (টক্সিক) রাসায়নিক পদার্থের উৎকট দুর্গন্ধ স্থানীয় জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। হা-মীমের ওই শিল্পপার্কটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বিস্তৃত। একপাশে দাঁড়িয়ে তাকালে অপর পাশ দেখা বা অনুমান করার উপায় নেই। শিল্পপার্কের অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতে হয় সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ি। এখানে প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলো হলো হা-মীম ডেনিমস লিমিটেড, হা-মীম স্পিনিং লিমিটেড এবং হা-মীম টেক্সটাইল লিমিটেড।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বন বিভাগ হা-মীম গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করে ২০০৭ সালে। সে মামলা আজ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এরপর দফায় দফায় বন বিভাগের আরও জমি দখলে নিলে ২০১৮ সালে আরেকটি মামলা করা হয়। অন্যদিকে বন বিভাগকে ঠেকাতে চারটি মামলা দিয়ে রেখেছে হা-মীম গ্রুপ।

বন বিভাগের দ্বিতীয় মামলাটির প্রেক্ষাপট ছিল হা-মীম গ্রুপের পুনরায় বনের জমি জবরদখল। এ সময় বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জের তত্ত্বাবধানে শিমলাপাড়া বিটের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা মিলে প্রায় আট একর জমি হা-মীমের জবরদখল থেকে উদ্ধার করে নতুন বাগান সৃজন করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। হা-মীম গ্রুপের পত্রিকা সমকাল-এর তৎকালীন সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে এ কে আজাদ এক রিপোর্টারের সহযোগিতায় দেখা করেন তৎকালীন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সঙ্গে। উপমন্ত্রী জ্যাকবের সমর্থন নিয়ে বনের জমি বেশি করে জবরদখল করা হয়। এর অসৎ উদ্দেশ্যটি ছিল কোনো কারণে যদি বনের জমি ছাড়তে হয় তাহলে যেন আগের দখল করা অংশটুকু থেকে যায়। একদিকে তৎকালীন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করে বন বিভাগের লোকজনকে বাড়াবাড়ি না করে চুপ রাখা হয়। অন্যদিকে ওই একই সময়ে শিমলাপাড়া বিটে সশস্ত্র মহড়া দেয় হা-মীম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এ কে আজাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। প্রায় ২০ জনের সেই দলের প্রত্যেকে অস্ত্রশস্ত্র উঁচিয়ে শাসিয়ে যায় শিমলাপাড়া বিটের সবাইকে।

একজন বন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, ওই সময় শিমলাপাড়া বিট থেকে একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সাইফুল ও তার সহযোগীরা। বন বিভাগ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আপসরফা করে অপহৃত ওই বনকর্মীকে ১৫ দিন পর উদ্ধার করে আনে। ওই ঘটনায় একটি মামলা করার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু বনের তৎকালীন কর্মকর্তারা পরবর্তী নিরাপত্তার স্বার্থে তা আর করেননি।

ওই বন কর্মকর্তা বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিট এবং রেঞ্জ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। ভয়ে কেউ হা-মীম গ্রুপের কাউকে কিছু বলতে যান না। কয়েক মাস আগে বনের জমি উদ্ধারে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নতুন করে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলেও তা পালন করতে ভয় পান সংশ্লিষ্ট বনকর্মীরা।

এক বন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি বা আমাদের কেউ এখন হা-মীমের আশপাশেও যাই না। ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বন বিভাগের মোট ১৬ একর (প্রায় ৫২ বিঘা) জমি হা-মীম গ্রুপ কর্তৃক জবরদখল করা আছে। ঠিকমতো রেকর্ড পরিমাপ করলে দেখা যাবে, জবরদখল করা জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সঙ্গে। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘এ কে আজাদের সঙ্গে বন বিভাগের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন সময়ে আমরা আইনগত পরিধি অনুযায়ী এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা কাজে আসেনি।’ 

গত জুলাইয়ে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও এলএ) সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘জবরদখলকারীর বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী বন বিভাগ থেকে একটা উচ্ছেদ প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের এই দপ্তরে পাঠানো হয়। সেটি হাতে পেলে আমরা উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। হা-মীম গ্রুপের বিরুদ্ধে কোনো উচ্ছেদ নোটিশ আমরা পাইনি।’ 

এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় বন বিভাগের বন সংরক্ষক হোসাইন মুহাম্মদ নিশাদ খবরের কাগজকে বলেন, নিয়মানুযায়ী মামলা বিচারাধীন থাকলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ প্রস্তাব পাঠানো যায় না।

এদিকে বনের অভ্যন্তরে হা-মীম গ্রুপের বিস্তৃত জমির সঙ্গে লাগোয়া ব্যক্তিমালিকানার জমি পেলেই তা কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন এ কে আজাদ। জমি কিনতে এলাকাভেদে তার একাধিক এজেন্ট কমিশন বা কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে লোক নিয়োজিত আছে। এমনই একজন স্থানীয় মুলাইদ গ্রামের নাজমুল। ব্যক্তিমালিকানার জমির সঙ্গে যুক্ত বন বিভাগের জমি বা খাস জমি শনাক্তকরণ করে কিনতে সহযোগিতা করেন ওই নাজমুল। এরপর ওই জমি কেনার লোভনীয় দরের প্রস্তাব দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয় জমির মালিককে। অভিযোগ আছে স্থানীয় জমির মালিকদের প্রথমে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বায়নাপত্র করা হয়। তারপর জমি দখলে নিয়ে আর অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করা হয় না। 

এ রকমই একজন স্থানীয় তেলিহাটি ইউনিয়নের ধনুয়া মৌজার ফরিদপুর গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লা। তিনি অভিযোগ করে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার জমি জবরদখল করে নিয়েছে হা-মীম গ্রুপ। বায়নাপত্র করার পর আর আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না ওই গ্রুপের লোকজন। আমি জমি ও অর্থ দুটিই হারিয়েছি। আমি তাদের গেট পর্যন্ত যেতে পারি। ভেতরে যেতে পারি না।’ এ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় দলিলাদিও দেখান তিনি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) মন্তব্য জানতে হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদের একাধিক ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সব সময় পরিবেশ সুরক্ষায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। অতীতে পরিবেশ সুরক্ষায় আপসহীন জোরালো ভূমিকার কারণে তাকে রাজনৈতিক ও বিত্তবান প্রভাবশালীদের বিরূপ আচরণ ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। বর্তমানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় দেশ ও জনগনের বৃহত্তর স্বার্থে তার সর্বোচ্চ আইনগত বিধিবিধান প্রয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান খবরের কাগজকে বলেন, দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে লিগ্যাল প্রসেস বা আইনগত প্রক্রিয়াটাই আমরা অনুসরণ করব। এত বছর ধরে যে বনের ভেতরে কারখানাগুলো চলছে, তার জন্য হয় রাজনৈতিক প্রভাব আছে, নয়তো বন বিভাগের লোকজনের যোগসাজশ আছে। আমাকে বুঝতে হবে যে ভূমির রেকর্ড টেম্পারিং হয়েছে কি না। যদি তা হয়ে থাকে এবং দেখা যায় যে দখলকারীর কোনো ভূমি রেকর্ড নাই বা যেটা আছে সেটা সঠিক নয়, তাহলে তো বনের জমি উদ্ধারে পদক্ষেপটা সহজ হয়ে যাবে। মূলত আইনগত দিকটাতেই জোর দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘অনেক সময় বন বিভাগের পক্ষে জমি দখল সম্পর্কিত অনেক মামলা আমি দেখেছি। প্রতিটি লিগ্যাল স্টেপেই বন বিভাগ হেরে যায়। যদিও গেজেট অনুযায়ী ভূমির রেকর্ড ও বাউন্ডারি লাইন করার ক্ষমতা বন বিভাগেরই রয়েছে। তারপরও বন বিভাগ হেরে যায়। প্রচলিত আইন অনুযায়ী যদি দেখি বন বিভাগের লিগ্যাল অবস্থান শক্ত আছে, তাহলে আমি অবশ্যই সে জমি রক্ষায় আমার আইনগত সব শক্তি প্রয়োগ করব।’ সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আইন মেনে সংস্কার করব। আইনি ধারায় সংস্কার করব। বন ও ভূমিসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যতক্ষণ পর্যন্ত না সংস্কার করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমি বিদ্যমান আইনেই কথা বলব।’ 

আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪০ এএম
আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে সরকার। গত আট মাসে (জুলাই ২০২৪-ফেব্রুয়ারি ২০২৫) পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ৫৮ হাজার ২৪২ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। এত বড় ঘাটতিতেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআর জোরালো আপত্তি জানিয়েছে। তবে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এ সময়ে এনবিআরে আদায় হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৭১ টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনবিআরের আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। 
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত এনবিআরও। রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা ও আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য এরই মধ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর কর বাড়িয়েছে সংস্থাটি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না ফেরা এবং বেশ কিছু নিত্যপণ্য আমদানিতে ছাড় দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব কমেছে। একই সঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মন্দাভাব থাকায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে যাওয়া কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়াকেও রাজস্ব কমার কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনবিআরের অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় পুরো অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। এ ধারা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআরের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে এনবিআরের ওপর লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা ঠিক না।’ 

আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আপত্তি জানিয়ে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে অর্থ বিভাগের সচিবকে এক চিঠি পাঠিয়ে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর আবেদন করা হয়েছে। এ চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সতর্ক করে বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। না হলে আগের বছরের মতোই লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ থাকবে, আর দায় চাপানো হবে এনবিআরের ওপর। অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা অর্জনে ব্যর্থতা এনবিআরের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ পরিস্থিতি এড়াতে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার প্রকৃত সংগ্রহের তুলনায় ১৫ শতাংশ রাখতে হবে।’ 

এই প্রথম কোনো এনবিআর চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিক ‘অবাস্তব’ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন। সরকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে খানিকটা বেকায়দায় আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আগামী তিন অর্থবছরের ২০ লাখ ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের জন্য বলেছে। এর মধ্যে শুধু এনবিআরের আওতায় আদায়ের পরিকল্পনা ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিতে এই বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর থেকে রাজম্ব আদায় বাড়াতে ইটিআইএনধারী এবং অনলাইনে রিটার্নের সংখ্যা বাড়ানোর কাজ করছে। অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সমগ্র রাজস্ব আদায়ের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এসব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আগামীতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে এনবিআর থেকে জানানো হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান: যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের ৯টি বাড়ি-ফ্ল্যাট

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০১:০৬ পিএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
দুদকের অনুসন্ধান: যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের ৯টি বাড়ি-ফ্ল্যাট
যুক্তরাষ্ট্রে আবদুস সোবহান গোলাপের ৯টি বাড়ি-ফ্ল্যাট। ছবি: খবরের কাগজ

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান মিয়ার (আবদুস সোবহান গোলাপ) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৯টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়েছে দুদক, যার বাজারমূল্য অন্তত ৩২ কোটি টাকা। দেশে থেকে টাকা পাচার করে তিনি বিদেশে ওই সব সম্পদ কিনেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এ ছাড়া তার নিজের ৫১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। বিদেশে থাকা ফ্ল্যাট ও বাড়ির বাজারমূল্য অন্তত ৩২ কোটি টাকা। তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব অর্থসম্পদ গোপনে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন; যা ২০০৪ সালের ৫(২) ধারায় ফৌজদারি অসদাচরণ এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অর্থ পাচারসংক্রান্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিজিএফসিলে সিন্ডিকেট, অদূরদর্শিতায় গচ্চা গেছে ৭৫ কোটি টাকা!

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
বিজিএফসিলে সিন্ডিকেট, অদূরদর্শিতায় গচ্চা গেছে ৭৫ কোটি টাকা!
বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় গচ্চা গেছে ৭৫ কোটি টাকা। ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্প গ্রহণে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় গচ্চা গেছে ৭৫ কোটি টাকা! দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপটি ওয়ার্কওভার শেষে মাত্র ৪৮ দিন গ্যাস তোলার পর কারিগরি ত্রুটির কারণে ফের বন্ধ হয়ে গেছে। কবে নাগাদ পুনরায় চালু করা যাবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে কূপ বন্ধের বিষয়ে জবাবাদিহির আওতায় আনা হয়নি সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগ উঠেছে, ভালো করে যাচাই না করেই ‘অর্থ লুটের উদ্দেশ্যে’ বন্ধ কূপটি ওয়ার্কওভার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ফলে দুই মাসও গ্যাস তোলা যায়নি কূপটি থেকে।

এদিকে তিতাসের প্রায় সব কটি কূপেই গ্যাসের মজুত এবং চাপ কমছে। ফলে জাতীয় গ্রিডের চাপের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস উত্তোলনে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় তিতাস গ্যাস ফিল্ডের কয়েকটি লোকেশনে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন করছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ‘ই’ এবং ‘জি’ লোকেশনে ৬টি কম্প্রেসর স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রকল্পের কাজ করছে সাবেক জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘জিকম ইক্যুইপমেন্ট পিটিই লিমিটেড’।

তবে অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘জিকম’কে দেওয়া ৫০০ কোটি টাকার কম্প্রেসর স্থাপন প্রকল্পের কাজ যাতে বন্ধ না করা হয় সে জন্য প্রকল্প পরিচালকসহ বিজিএফসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়েছে। মূলত, গ্যাসের মজুত এবং চাপ কমার কারণে তিতাসের ‘সি’ লোকেশনে ইতোপূর্বে বসানো ৩টি কম্প্রেসরের মধ্যে কাজে লাগছে ২টি। অপর কম্প্রেসরটি কাজে না লাগলেও এটির রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে কূপে গ্যাসের মজুত কম থাকলেও নতুন করে নেওয়া কম্প্রেসর স্থাপনের প্রকল্পটি বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষের অদূরর্শিতার জন্য ‘লস প্রজেক্ট’ হতে পারে। প্রকল্পের আওতায় তিতাসের লোকেশন ‘ই’তে ৩টি এবং ‘জি’তে ৩টি ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও বর্তমানে ‘ই’ এবং ‘জি’ লোকেশনের বেশির ভাগ কূপে গ্যাসের চাপ প্রায় ৭০০ পিএসআইজি রয়েছে, যা জাতীয় গ্রিডের চাপের সমপরিমাণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিএফসিএল পরিচালিত তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ২৭টি কূপের মধ্যে বর্তমানে ৫টি কূপ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২২টি কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। কূপগুলোতে মজুত কমতে থাকায় ক্রমাগত কমছে গ্যাসের উৎপাদন। গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ৫২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজিএফসিএল পরিচালিত বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ডের ওয়ার্কওভার প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপটির ওয়ার্কওভার শুরু হয় গত বছরের ১৯ মার্চ।

প্রথমদিকে ১৪ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ২৯ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন হতো। তবে গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি ওঠার কারণে ২০০৯ সালে কূপটি ওয়ার্কওভার করে দৈনিক ১৯ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা হয়। তবে গ্যাসের সঙ্গে পানি উৎপাদনের হার বৃদ্ধির কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে কূপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ার্কওভার শেষে গত বছরের ২১ মে কূপটি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এরপর ২৫ মে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় কূপটি থেকে।

জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জ্বালানি সচিব মো. নুরুল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক ইসমাইল মোল্লা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কূপটি থেকে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলেও জানানো হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তবে উদ্বোধনের পর সব মিলিয়ে ৪৮ দিনে মাত্র ২৫৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয় ১৪ নম্বর কূপ থেকে।

ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক মো. ইসমাইল মোল্লা জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৪ নম্বর কূপটি বন্ধ হয়ে গেছে। এত দ্রুত কারিগরি ত্রুটি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে অপরেশন বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিজিএফসিএলের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই প্রকল্প পরিচালক অপারেশন বিভাগে কথা বলার জন্য বলেছেন। ১৪ নম্বর কূপটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিয়ে ওয়ার্কওভার প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। কূপ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তাই অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। কূপটি থেকে ২৫৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা গেছে।

এদিকে ১৪ নম্বর কূপের ব্যর্থতার মধ্যেই ১৬ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার করেছে বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ। যদিও কূপটি আগে থেকেই সচল রয়েছে। এই কূপে আগে থেকেই প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হলেও ওয়ার্কওভার শুরুর পর তা এখন গড়ে ৪ মিলিয়নে নেমে এসেছে। ত্রুটিপূর্ণ ওয়ার্কওভারের কারণে এখন আবার ওয়ার্কওভারের জন্য নতুন করে আরও ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিজিএফসিএলের একটি সূত্র বলছে, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে জ্যেষ্ঠতা ভেঙে বাপেক্সের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা ফজলুল হককে বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়ার পর নিজের পছন্দের এবং আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তাদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। ৭টি কূপের ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কর্মকর্তা কার্ত্তিক চন্দ্র ঘোষকে বিজিএফসিলের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেন ফজলুল হক। কোম্পানিতে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতেই তিনি কার্ত্তিক চন্দ্র ঘোষকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখেছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। পাশাপাশি কম্প্রেসর স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন নিজের পছন্দের আরেক কর্মকর্তা- পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মামুন আজাদকে।

বিজিএফসিএলের সিবিএ সভাপতি নূর আলম বলেন, শুধু কোম্পানির এমডির অদক্ষতায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুফল মিলছে না। ১৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজটি ভালোভাবে করা হয়নি বলে বেশি দিন গ্যাস উত্তোলন করা যায়নি। এখানে বাপেক্সের অদক্ষতা রয়েছে। 

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘আমার সঙ্গে নসরুল হামিদ বিপুর কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিল না। আমি কোনো সিন্ডিকেট করিনি। আমার মাথাতে এগুলো কখনো আসেইনি। আমি এমডি হয়ে আসার পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা ব্যক্তিস্বার্থে কিছুই করিনি। এ ছাড়া কম্প্রেসর স্থাপনের প্রকল্প ২০১৮ সালে নেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০২১ সালে। কূপগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণে কম্প্রেসর ব্যবহার করতে হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়াই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়াই চ্যালেঞ্জ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

কোনোভাবেই যেন বাগে আনা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে। একের পর এক খুন-ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির ঘটনায় জনমনে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। পাশাপাশি ‘মব’ হামলা বা কথিত গণপিটুনির ঘটনাগুলোও সাধারণ মানুষের মনে উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে আবার আসন্ন ঈদুল ফিতরের উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলার এমন পরিস্থিতির সঙ্গে ঈদকেন্দ্রিক অপরাধীদের তৎপরতা ঠেকানোও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত সোমবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বলেছেন, পুলিশ ছাড়া রাষ্ট্রের অগ্রগতি সম্ভব নয়। পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা দেখা যায়। বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অজ্ঞানপার্টি-মলমপার্টি, জাল নোট তৈরির চক্র এই সময়ে বেশ তৎপরতা বাড়িয়ে থাকে। সেখানে আবার আইনশৃঙ্খলার চলমান নাজুক অবস্থার সুযোগ নিয়ে অপরাধী চক্রগুলো আরও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাল দেবে, সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার কথাও খবরের কাগজকে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার যে খারাপ অবস্থা ছিল, সেখান থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশা করি পর্যায়ক্রমে আরও উন্নতি হবে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে।’ 

আইজিপি বাহারুল আলম আরও বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে যে মব অপরাধ ঘটানো হচ্ছে এবং ভয়ানক আরও কিছু অপরাধ যারা ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সামনে ঈদুল ফিতরের উৎসব আছে, সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নে মাঠপর্যায়ে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাবে পুলিশ।’

ঘটনা বিশ্লেষণে জানা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ মব হামলার শিকার হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর ২৩০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় এক কিশোরকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। গণপিটুনি দিয়ে কিশোরকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে থানা-পুলিশের সদস্যরা সেখানে মব ঠেকাতে গেলে তারাও এলাকাবাসীর হামলার শিকার হন। অন্যদিকে একই রাতে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল থানায় মব হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে তিনজন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসব পরিস্থিতির মাঝে ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা এখন সামনে এসেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং মহাসড়কের শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা কতটুকু বজায় থাকবে সেটা এখন আলোচনার বিষয়। মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা সরকারসংশ্লিষ্টদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। 

ঈদের নিরাপত্তা ঘিরে ডিএমপিতে ‘অক্সিলারি পুলিশ’ নিয়োগ 

আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঢাকা মহানগরীতে বাসাবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপি সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে ৪২৬ জন ‘অক্সিলারি পুলিশ’ নিয়োগ করা হয়েছে। তারাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। 

তিনি আরও জানান, ডিএমপির পক্ষ থেকে নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরবাসীর প্রতিও কিছু অনুরোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগের আগে দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে এবং স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাসাবাড়ির মূল দরজায় অটোলক ও নিরাপত্তা অ্যালার্মযুক্ত তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে বাসা ও প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পর্যাপ্ত আলোকিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরেও আরও বেশ কিছু বিষয়ে নগরবাসীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

মহাসড়কের শৃঙ্খলা-নিরাপত্তায় ৩৬০০ ফোর্স, বিশেষ অ্যাপস চালু এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘ঈদের সময় মহাসড়কের শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানত আমরা এই সময়ে যানজটের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এ জন্য সড়কের অবস্থা তথা খানাখন্দ বা যানজট সৃষ্টি হতে পারে- এমন বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কোথাও কোথাও মহাসড়কের অংশ দখল ছিল, সেগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে মহাসড়কের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের নির্ধারিত ২ হাজার ৯০০ জন ফোর্সের সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে ঈদ উপলক্ষে আরও ৭০০ জন অতিরিক্ত ফোর্স আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কয়েক দিন আগে মহাসড়কে ডাকাতির যেসব ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো এখন অনেকটাই কমেছে। মূলত বাড়তি ফোর্স যুক্ত হওয়ায় টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জেলা পুলিশও সহায়তা করছে। এলাকা ভাগাভাগি করে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ অ্যাপস চালু করা হয়েছে, যা দিয়ে আমরা প্রযুক্তিগত সুবিধা পাচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা এবারের ঈদে মহাসড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা স্বাভাবিক রাখতে পারব বলেই দৃঢ়ভাবে আশা করছি।’

চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আসন্ন ঈদুল ফিতরের নিরাপত্তায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। এ ছাড়া পুলিশের টহল (প্যাট্রোলিং) এবং গোয়েন্দা তথ্য (খবর সংগ্রহ) বাড়াতে হবে। এই দুটি কাজ খুবই জরুরি। এ ছাড়া ঈদ কেনাকাটায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপণিবিতান, শপিংমল বা বাজার এলাকায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। পুলিশের তৎপরতা দৃশ্যমান করা জরুরি।’ 

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, চলতি বছরের এই আড়াই মাসে মব হামলার শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। এর মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারিতে সারা দেশের ১৬ জন মব হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭, খুলনায় ১, রাজশাহীতে ২, রংপুরে ২, সিলেটে ২, চট্টগ্রামে ১, বরিশালে ১ জন। ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির শিকার ১১ জনের মধ্যে ঢাকায় ৩, চট্টগ্রামে ৩, বরিশালে ৩ এবং ময়মনসিংহে ২ জন। তবে ৯ মার্চ এক দিনেই শুধু ঢাকাতেই ৮ জন গণপিটুনির শিকার হন। 

অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর-২০২৪ পর্যন্ত সারা দেশের ১২৮ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৫৭ জন, রাজশাহীতে ১৯, চট্টগ্রামে ১৭, খুলনায় ১৪, বরিশালে ৭, রংপুরে ৫, ময়মনসিংহে ৫ এবং সিলেটে ৪ জন। 

অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত সাত মাসে (আগস্ট-ফেব্রুয়ারি) সারা দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, গত জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ৩৯ জন নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন তিনজন। ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৬টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ১৬টি। এর বাইরেও আরও অন্তত আটজন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। এদিকে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৯ জন। তবে চলতি মার্চে মাসের গতকাল পর্যন্ত ধর্ষণ-নিপীড়নের কোনো জরিপ বা তথ্যগত সংখ্যা পাওয়া যায়নি। যদিও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত মাসের এই সময়ের তুলনায় চলতি মাসে অনেক বেশি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। 

পোস্টার-মিছিলে সক্রিয় নিষিদ্ধ সংগঠন

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
পোস্টার-মিছিলে সক্রিয় নিষিদ্ধ সংগঠন
নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর তাদের একটি কর্মসূচি সফল করতে নগরের আদালত পাড়ায় পোস্টায় সাটায়। সম্প্রতি তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের পোস্টারে চট্টগ্রাম নগর ছেয়ে গেছে। কোথাও আবার তাদের পক্ষে দেয়াল লেখা (চিকা) হয়েছে। রাতের আধারে কে বা কারা এসব করছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে গত ৭ মার্চ সংগঠনটির ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো নগরে কয়েক হাজার পোস্টার সাঁটানো হয়। অভিযোগ আছে, সংগঠনটির পক্ষ থেকে নগরীর একাধিক গণমাধ্যম অফিসে প্রেস রিলিজও পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পিছিয়ে নেই আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা সুযোগ বুঝে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঝটিকা মিছিল করছে। লিফলেট বিতরণ করছে। দেয়ালে চিকা মারছে। এত কিছুর পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনে ছাত্রলীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতার গ্রেপ্তারের খবর নেই। এমনকি হিজবুত তাহরীরের কোনো নেতাকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, অভিযান চলমান রয়েছে। নজরে এলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

দেখা গেছে, নগরের দুই নম্বর গেট কবরস্থান, ক্যাফে আলী রেস্তোরাঁসহ আশপাশ এলাকার দেয়ালগুলোতে হিজবুত তাহরীরের একই ধরনের অসংখ্য পোস্টার । এ ছাড়া নিমতলা, আদালত পাড়া, নিউ মার্কেট, রেলস্টেশন, টেক্সটাইল মোড়, টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় একই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে পোস্টারগুলো সম্প্রতি লাগানো হয়েছে।

কথা হয় দুই নম্বর গেট এলাকার কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, তিন-চার দিন আগেও তারা সেখানে পোস্টারগুলো দেখেননি। একদিন সকালে এসে দোকান প্রস্তুত করার সময় বড় আকারের অনেকগুলো পোস্টার একসঙ্গে দেখতে পান। তাদের ধারণা, রাতের আধারে এগুলো সাঁটানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ মার্চ ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে ঘিরে চট্টগ্রামে কয়েক হাজার পোস্টার সাঁটায় হিজবুত তাহরীর। অবস্থা এমন যে পুরো শহরের দেওয়াগুলো পোস্টারে ছেয়ে যায়। এর আগে নগরের আদালত পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় ’৭২-এর সংবিধান এবং তার ভিত্তি’ শিরোনামে পোস্টার সাঁটানো হয়। এসব পোস্টারে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকলেও একটি ই-মেইল আইডি দেওয়া হয়।

গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রামের আসকার দিঘীর পাড়ে থাকা একাধিক গণমাধ্যম অফিসে এসে দুজন তরুণ হিজবুত তাহরীরের প্রেস রিলিজ রেখে যায়। একটি গণমাধ্যমের অফিস সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তারা কাগজটি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।’

এদিকে নগরের ১৫টি থানা এলাকার দেয়ালে ছাত্রলীগের চিকা দেখা গেছে। এ ছাড়া ১৭ মার্চ মধ্যরাতে কর্ণফুলি থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের তালতলা থেকে টাওয়ারের গোড়া পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে একাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৩০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় নগরের জিইসি মোড়ে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। সংগঠনটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ওই মিছিলের ভিডিও পোস্ট করা হয়। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি নগরের পাঠানটুলী নাজিরপুল মিডপয়েন্ট হাসপাতাল সড়কে তারা মিছিল করে। এর আগে নগরের জামালখানে দুই দফায় তাদের মিছিল করতে দেখা যায়। এভাবে ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল আর হিজবুত তাহরীর ব্যানার, পোস্টার সাঁটিয়ে ও দেয়াল লিখে কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, ‘যখন আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাম, কোনো পোস্টার বা ব্যানার হাতে নিলেই পুলিশ হাজির হতো। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হতো। আর এখন নিষিদ্ধ সংগঠন দুটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটা পুলিশের গাফিলতি ছাড়া আর কিছু না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য জুবায়েরুল আলম মানিক বলেন, ‘ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। তারা একইভাবে চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি দাবি থাকবে, তারা যেন আরও সক্রিয় হয়। পুলিশের ভূমিকায় আমরা সন্তুষ্ট নই।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান আছে। এরপরও বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জোরালোভাবে কাজ করব।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলে আমরা মামলা নেব। এ ধরনের কাউকে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করব। কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা আমাদের নেই। বিষয়টি দেখব, ব্যবস্থা নেব।’