ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি
সিলেট সীমান্তে চোরাই চিনির রমরমা কারবার

সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা কারবার, তখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের তিনটি থানা এলাকায় চলছিল চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড় দেওয়ার আরেক কারবার। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর অভিযোগ ছিল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে।

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চলে গাড়ি ছাড়ের এই মহোৎসব। এর মধ্যে খবরের কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর ৭ জুন থেকে এসএমপির গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ের মধ্যেও চলেছে দক্ষিণের তিনটি থানায় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দেওয়ার ঘটনা।

সিলেট মহানগরীতে এসএমপির ছয়টি থানা। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটো ভাগে দায়িত্ব সাজানো রয়েছে। দুজন উপকমিশনারের মাধ্যমে ছয়টি থানা পরিচালিত হয়। দক্ষিণ ভাগে পড়েছে তিনটি থানা। ওই তিন থানা এলাকার সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত এলাকার রয়েছে সহজ সড়ক যোগাযোগ। চোরাই চিনির গাড়ি সরাসরি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌঁছাতে এসএমপির দক্ষিণের থানাগুলো অতিক্রম করতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে নগরী পাড় করে দেওয়ার কাজটি অধীনস্থদের দিয়ে একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি, সাউথ) সোহেল রেজা। গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এসএমপির দক্ষিণ বিভাগের থানাগুলোতে কর্মরত ২১ জন পুলিশ সদস্যের ফোন নম্বরে উপকমিশনার সোহেল রেজার অফিশিয়াল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কেবল চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে টাকা আদায়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এ রকম ২১টি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট খবরের কাগজের হাতে এসেছে।

‘ডিসি সাউথ স্যার’ লিখে সেভ করা ফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট ঘেটে দেখা গেছে, এক ঘণ্টায় ১২টি গাড়ি ছাড় দেওয়ার পর টাকা আদায় বিষয়টি ‘143K’ সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে ‘অল পেইড’। কিছু মেসেজে দেখা গেছে, চোরাই চিনির গাড়ি সিলেট নগরী পেরিয়ে ঢাকা পৌঁছানোর পর ছিনতাই বা ধরা পড়ার ঘটনা জানিয়ে টাকা আদায় কম-বেশি হওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি একটি মেসেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে এভাবে, ‘স্যার, সোহেল রানার দুইটা গাড়ি ছিনতাই হওয়াতে কম নিছে। আজ ডিবি লাইন ক্লিয়ার থাকলে ৫-৬টা কম নিবে।’ একই মেসেজে ‘50K+24K=74K’ সংকেতে হিসাব রয়েছে। উপকমিশনারের হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট সরবরাহকারী সূত্র জানায়, হাজার টাকা আদায়ের হিসাবে ‘K’ সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া সোহেল রেজার ছয়টি ফোনকল রেকর্ড খবরের কাগজের হস্তগত হলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত একটানা সাত মাস চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে সোহেল রেজা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা স্বীকার করেছেন। চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ে যেন ‘টাকার খনি’ পেয়েছিলেন তিনি। 

খবরের কাগজের হাতে আসা ছয়টি ফোনকলে প্রায় ২০ মিনিটের আলাপে শোনা যায়, অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তিনি কেবল চোরাই চিনির গাড়ির হিসাব নিচ্ছেন। ১০০ বস্তার চিনির গাড়ির জন্য ৭ হাজার টাকা ও ১০০ বস্তার বেশি থাকা গাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার্য করে আদায় করাতেন। গাড়ি ছাড় দেওয়ার বকেয়া টাকাও আদায়ে তাগাদা দিতেন। কথায় কথায় অধীনস্তদের ধমকের ওপর রেখেছেন। টাকা আদায় মনঃপুত না হলে অশ্লীল গালি ও নানা ভর্ৎসনাও করছেন। তার ফোনকলে থাকা এক পুলিশ সদস্য নিস্তার পেতে চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।

ছয় বছর পাঁচ মাস পুলিশে চাকরি করা সাবেক এই পুলিশ সদস্য এখন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। গত ৭ জুলাই তিনি নতুন চাকরিতে জয়েন করেন। সাবেক এই পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল পুলিশের ডিউটি বলতেই এসব করা। বদলি নিতে গিয়েও উনার (ডিসি সাউথ) বাধার মুখে পড়ি। অন্যত্র চাকরি পাওয়ায় আমি যেন নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছি।’

ফোনকল রেকর্ড নিয়ে এসএমপির সদর দপ্তরের প্রশাসনে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে ফোনকলগুলো উপকমিশনার মোহা. সোহেল রেজার কণ্ঠ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সোহেল রেজার বক্তব্য নিতে একাধিকার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমপির সদর দপ্তরে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি।

এসএমপি সূত্র জানায়, মোহা. সোহেল রেজা (বিপি নম্বর: ৭২০৫১১২৩৭৭) বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি এসএমপির উপকমিশনার পদে কর্মরত। সরকারের পট পরিবর্তনের পর পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু হলে গত ১০ আগস্ট তাকে এসএমপির দক্ষিণের সঙ্গে উত্তর বিভাগের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সময় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ের ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়লে ১৮ আগস্ট রাতারাতি আরেকটি আদেশে তাকে উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এসএমপির কমিশনারের কার্যালয়ে উপকমিশনার পদে রাখা হয়েছে।

ফোনকল রেকর্ড-১

ডিসি (সাউথ) মোহা. সোহেল রেজা: তা হলে কি ভুল হিসাব আমার।
অধীনস্থ পুলিশ: আমি তো স্যার আটটা ডিআই (চিনিবাহী মিনি ট্রাক) পাইলাম। আমার তো আটটা ডিআই।

ডিসি: তোমার ইয়া হবে কোথ থেকে। না হলে তোমার ধান্ধা হবে কোথ থেকে। তুমি তো দারোগা, তুমি তো এতে সন্তুষ্ট থাকতে পার। বিভিন্ন দিকে হিসাব কম দেখায়া আর ওই ৪৫টার হিসাব কই আমার।

পুলিশ: দিব স্যার, কনফার্ম দিয়ে দিব। 

ডিসি: ওই ৪৫টার হিসাব কই? এখন তো আর গাড়ি কমতেছে না। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কমতো। একটা একটা করে কমলে মাসে কত? ৩০টা। কাহিনি কী। তোমার কি কোথাও দেওয়া লাগে কিছু। তোমার তো কোথাও কিছু দেওয়া লাগে না। বল তোমার খরচ কী। কোথাও তো খরচ নাই। উপরের কোথাও তো খরচ নাই। তাইলে তোমার এত লোভ থাকবে কেন। সিনিয়রদের হক মাইরা খেয়ে ফেলতেছ। তোমারে আমি কাগজে-কলমে হিসাব দিয়ে ডে বাই ডে হিসাব দেখাইছি। এখন থেকে যদি চাও প্রত্যেকটা ডে বাই ডে হিসাব দেখাব। তুমি যদি মনে কর। এই যে আজকে বললাম ১২টা তুমি মিলাইয়া দেখ। সুতরাং হিসাব ঠিক কর, তা না হলে কিন্তু তোমাদের ব্যবসা আমি ডকে উঠাই দেব। আমি বলতেছি না পাবলিক (...অশ্লীল শব্দ)

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: এই সমস্ত চামচামি মিথ্যা ধান্ধাবাজি এগুলো বাদ দাও। একবারে অরজিনাল হিসাব দেও। আরে বেটা ১২টা গাড়ি গেলে তো তুমি ১২ হাজার টাকা পাও। তুমি… দারগার বাচ্চা ১২ হাজার টাকা মানে চাট্টিখানি কথা। আমি ডিসি পাচ্ছি ১২ হাজার, তুমি পাচ্ছো শালা ১২ হাজার। শালা বাটপার। তুমি সব ঠিক কর।

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: তা না হলে কাল থেকে আমি অন্য স্টাইলে যাব। আর এখন থেকে কার কয়টা গাড়ি গেল, ডিআই ৮টা না, ডিআই ৮টা কার গাড়ি গেছে তুমি লিখিত দিবা। আর যারগুলো হিসাব দিচ্ছ না সেগুলো আমি রাস্তায় ধরবো। ও ডিআই যে ৮টা গাড়ি গেছে কয়জনের, ৮ জনের না ৩ জন না ৪ জনের এই হিসাবও দিবা যে অমুকের গাড়ি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: মনিরের গাড়ি, অমুকের গাড়ি, ওইটা অমুকের গাড়ি। তা হলে আমার কাছে নামগুলোও হিসাব থাকবে। এই নামের বাইরে শালা যে গাড়ি যাবে, আমি ধরব। আমার ধরার তো অভাব নাই। মোগলাবাজার (এসএমপির থানা) গেলেও আমি ধরতে পারব। দক্ষিণ সুরমা (থানা) গেলেও ধরতে পারব। এখন শাহপরানের (থানা) এখানেও আমি ইয়া (চেকপোস্ট) বসাই দেব টিলাগড়ে। দিয়ে তোমার পাকনামু বাইর করে দেব। তুমি তো ওইটাই চাচ্ছ। তোমারে বইলা বইলা তো আমি সংশোধন করতে পারতেছি না। গাড়ির হিসাব একেবারে ঠিক দিচ্ছ না। শুধু নাঈমেরতে (...অশ্লীল শব্দ) দিছি, দেড় মাসের খতিয়ান ধরে টান দিছি, এখন আর নাঈমের কমেও না বাড়েও না। এখন তো ঠিক আছে। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কম দিত। যাই হোক, যা হইছে পেন্ডিং ক্লোজ কর। ওই ৪৫টার হিসাব দিবা, প্লাস এই যে বকেয়া এগুলো কাল-পরশুর মধ্যে ইয়া কর।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার দিয়া দিব স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-২

ডিসি: কোনো… বাচ্চার গাড়ি যাইতে দেব না আমি। যেটা পাব সেটা ধরব আর মামলা দেব। মামলা দেব আর অর্ধেক মাল বেইচা দেব। ২০ লাখ টেকার মাল ১০ লাখ ধরলে ৫ লাখ সরাই ফেলাব ডিবির মাল। তর মতো এই ফকিন্নি ১ হাজার, ২ হাজার, ৫ হাজার থাকানোর দরকার নাই। তর …। কেমনে ব্যবসা করিস কর।

পুলিশ: স্যার 

ডিসি: ওই … বাচ্চারে ডাক, এখন ডাক। … বাচ্চারে ডাক। ডাইকা বল তর এক্কারে ঠ্যাং ভাইঙ্গালামু … বাচ্চা। সিস্টেমে চলবি, আর না হলে তর কোনো গাড়ি যাবে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলতেছি স্যার।

ডিসি: এ জায়গার গাড়ির নাম্বার দেব কটা। কয়টা গাড়ির নম্বর নিবি বল। এই যে দেখ হাসিবুলের গাড়ি গেছে ঢাকা মেট্রো এত ১২ সিরিয়ালের ১৪৬৫। বাবুর গেছে ২০ সিরিয়ালের ৬৫৪। ইদ্রিসের ট্রাক ১২ সিরিয়ালের ১৩৩৮। বিল্লালের ট্রাক ২২ সিরিয়ালের ৩২৮। হারুনুর রশিদের ঢাকা মেট্রো ট ১৮৫০৪৫। সাইদের ... সোহাগ যশোর ট এত। পালের গাড়ি ৫৩৪ সবুজ। তাইলে তুমি …। আমি যদি মনে করি প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর পর্যন্ত দেব। আমার সেই কেপাসিটি আছে। আর তুমি এখানে বইসা…। তোমারে আমি হায়েস্ট বললাম, ২৫ তারিখ পর্যন্ত তোমার আয়ু। তারপরে কিন্তু আমি তোমারে সরাই দেব। এত দিন বলছি আমি কিন্তু এবার কাজ করব। 

ফোনকল রেকর্ড-৩

ডিসি: তুমি, যে গাড়ি যাবে যারই গাড়ি যাবে মেসেজ দেবে, নম্বর দেবে। আদারওয়াইজ গাড়ি আমি মারব। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। গাড়ির নাম্বারসহ দিব স্যার। 

ডিসি: নাম্বার ছাড়া কোনো … বাচ্চার গাড়ি যাবে না। এটা সোহেল হোক, মাছুম হোক, এক্স ওয়াই হোক যেডাই হোক। দিনের বেলায় রাতের বেলায়। আমারে মেসেজ দেয়া থাকবে। তোমাদের চৌদ্দ নাম্বারি আমি বাইর করতেছি দাঁড়াও। তুমি এক … জলিল এক… সব… আমারে ঠকাও না। 

পুলিশ: স্যার ওই যে হাইড্রেলিকে যে নাম্বার থাকে না। অন টেস্ট থাকে যেগুলা। 

ডিসি: অন টেস্টে টাইম দেবে। ওয়ান টু করে। আমি টাইম অনুযায়ী মিলাব। একটা টাইম দিলা ১১টায় সেই গাড়ি তিনটার সময় তো আমার দক্ষিণ সুরমায় দাঁড়ায়া থাকার কথা না।

পুলিশ: ঠিক আছে। আমি তা হলে ড্রাইবারের নাম আর মোবাইল নম্বর বলব দিয়ে দিতে স্যার।

ডিসি: এক্কেবারে প্রত্যেকটা বড় গাড়ি। তা না হলে আমি একটা গাড়ি যেতে দেব না। যেটা ধরব … দেব। শালা সোহেল … কালপিট। … গাড়ি নিচে ২২টা। হিসাব দিছে কালকে রাতে ৫টা। আজকে দিনে কয়টা। এই তোমার দিনে কয়টা গেছিল জিজ্ঞাস করছ। 
পুলিশ: জিজ্ঞাস করছি স্যার। দিনের পার্টিবুলে ২টা। কিন্তু সোহেল ভাই বলে একটা গাড়িও গেছে না। 

ডিসি:  তা হলে দিনের পার্টি মিথ্যা কথা বলতেছে?

পুলিশ: স্যার, সোহেল বলছে আমাকে ধরে ফোন দিতে। কার গাড়ি গেছে আমার নাম বলে গেছে। এখন আমাকে ফোন লাগাই দিত যে আমি বলতাম। আমিতো ভাই কোনো গাড়ি আজকে নেই নাই।

ডিসি: এ জন্য সোহেলরে বল যে… তুই ওই নাম্বার দিবি গাড়ির। তা না হলে একটা গাড়ি যাইতে দেব না। তর যে গাড়িগুলো যাবে তুই নাম্বার দিবি। সোজা কথা। ওই শালা ক্রিমিনাল। 

পুলিশ: ঠিক আছে ওইটার নাম্বার দিতে বলব। আর যেটার নাম্বার নাই স্যার ওইটা বলব যে ড্রাইভারের নাম্বার এবং নাম সেন্ড করার জন্য। যেন আটক করলে ড্রাইভারের নাম মোবাইল নাম্বার মিলে। না মিললে ওই গাড়ি আর ছাড়া হবে না। 

ডিসি: হ্যাঁ প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে এখন থেকে। প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে। আমি তিন থানায় বলে দিচ্ছি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। 

ডিসি: আমার নলেজ ছাড়া এখন কোনো গাড়ি যাবে না। শালা … বাচ্চারা সুযোগটা নিয়া একেবারে যা ইচ্ছা তাই করে। ৫২টা গাড়ি গেছে আর আমার হিসাবে পাই ৪টা ৩টা ২টা। এই কিরে। আমি দেব তোমারে পনের বিশটার নাম্বার দিয়া দেই গাড়ির। কোন কোন গাড়ি গেছে। তুমি ওইখানে নাটক…। পার্টি পার্টি পার্টি।… কোনো কাজ কর না তুমি। তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। ভাই শাহিন, আমি তোমারে বলতেছি না কয় দিন ধরে তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। আমি বিকল্প খুঁজে রাখছি কারে বসাব ওখানে। তোমারে সরাব মিল্টনরেও সরাই দেব। শুধু ২৫ তারিখটা আসতে দাও। তুমি আসলে বেশি খাইয়া ফালাইতেছে তো বদ হজম হয়ে গেছে। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলে দিতেছি স্যার। পার্টিগুলোরে সবগুলারে আজকে থেকে স্যার। 

ডিসি: আমি বললাম তো, আমার নলেজ ছাড়া যদি কোনো বড় গাড়ি আমি পাই। সেটারেই আমি মারব সে যেই হোক। আমার বাপের গাড়ি হইলেও আমি মামলা দেব। ওই শালাদের বলে দাও। 

পুলিশ: ঠিক আছে আজকে থেকে বড় গাড়ি যতগুলা আছে। 

ডিসি: …বাচ্চা তোমার পার্টি বলবে যে দুইটা গেছে আর ওই… বাচ্চা বলবে আসে নাই। আমার গাড়ি যায় নাই। তো তুমি কি … হিসাব নিচ্ছ। ... এখন একটা মৌসুম যাচ্ছে … পইরা থাকবে না তো … ঘরে বইয়া থাকে, … বেড়ায়। তলে তলে ঠিকই তো পার্টিগুলার সঙ্গে ধান্দাগিরি করে তুমি তোমার আখের ঘুছাইতেছ। আমি বলে দিলাম। আমার নলেজ ছাড়া যে গাড়ি আসবে আমি সেটা মারব।

 

ফোনকল রেকর্ড-৪

ডিসি: তুমি যে বড় ইয়া নিয়া যাও এগুলা তো কেউ জানে না। 

পুলিশ: স্যার।

ডিসি: এবাদুলের সঙ্গে কথা টেকনিকালি বল। আবার আমারে জড়াইয়ো না। তোমার তো বুদ্ধিশুদ্ধিও নাই। তুমি ডাইরেক্ট বলবা যে ভাই এত বুঝি না। যদি ১০০ বস্তার নিচে হয় তা হলে সাত করে যাবে উপরে। কি করবেন দেখেন। অন্যগুলা ৭ যাবে আর এদিকে তোমার যেটা সেটা দেবে। যদি ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে যায় তা হলে ১৫। আর ৩০০ বস্তা হলে তো কথাই নাই।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ৩০০ বস্তার কোনো গাড়ি আমি এলাউ করব না। আর এর বাইরে কিছু করলে শালারে ধইরা বসানি দিয়া দেও। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার ফোন দিয়া কথা বলতেছি স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-৫

পুলিশ: জি স্যার, মাসুম স্যার।

ডিসি: হ্যাঁ মাসুম। মাসুমের গাড়ি ছিল এটা।

পুলিশ: মাসুম আর হে তো একই স্যার। 

ডিসি:  বুঝছো ওদিক দিয়া কিছু গাড়ি নিছে। 

পুলিশ: ওইদিক দিয়া শ্যামপুর হইয়া বাদেশ্বর হইয়া যায় মনে হয় তাইলে। 

ডিসি: হুম তার মানে বুঝতেছি ওই গাড়ি দুয়েকটা ধরে মামলা দিতে হবে। ওটা ফাইজলামি…। শুধু ওসিরে দিয়া আমাদের ফাঁকি দিয়া চলে যাচ্ছে। বুঝছে।

পুলিশ: জি স্যার। ওই যে গোলাপগঞ্জ দিয়া যেগুলো বাইর হয় স্যার, শ্রীরামপুর পয়েন্টে জলিল ভাইরে দিয়া আটক করে স্যার ওইখানে একটা বসান দিলে ঠিক হবে স্যার। 

ডিসি: জলিলরে দিয়া হবে না। আমার অন্যভাবে ধরতে হবে। জলিল তো ওসির ভয়ে ধরবে না। ধরলেও ওসি ছেড়ে দেবে। ওসি এখানে মাস্তানি…। তাই আমার একটা বসানি দিতে হবে। 

পুলিশ: জি স্যার। তা হলে রাতেও মনে হয় ওদিকে যায় গাড়ি। 

ডিসি: আমি বললে তো ওই গাড়ি ছাড়ব না। একেবারে মামলা বসাই দেব। 

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই?

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই? 

পুলিশ: অন্যান্য গাড়ি গেছে স্যার। খাজা ভাইর গেছে স্যার। 

ডিসি: খাজার হিসাব তো আলাদা। ওরা তো মিথ্যা কথা বলে না। 

পুলিশ: ডিআই গেছে ২টা স্যার। সোহেলের আমি ৫টা পাইছি। আচ্ছা দেখি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা করাইতে পারি কি না। আমারে পার্টি ৫টার টাকা দিয়া গেছে স্যার। ড্রাইভার সোহেলের কথা বলে দিছে। ৫টা, ডিআই ২টা আর আদারস আছে ১টা স্যার। 

ডিসি: আদার এই পার্টি কার। 

পুলিশ: এই যে প্রদীপ নামে যে একটা... 

ডিসি: ওই শালা তো নাই। প্রদীপ নাই। ওরে এতো অল্পতে ছাড় কেন।

পুলিশ: স্যার নাইম তো আসে না স্যার। এই জন্য তো এখন...

ডিসি: নাইম আসে না। ওরে একবার …যে আমি। ৩০ হাজার টাকা বাকি রাখছিল। পরে… দিছি মামলা দিয়ে। ভয়ে আর আমার সামনে আসে না। 

পুলিশ: একটা লোক আসে। প্রদীপ বাবু বলে আমার একটা গাড়ি আছে। ওইটা যায়। এখন ওইদিন বাশারভাই বলছিল নাইম ভাই যোগাযোগ করে কি না। আমি বলছি যে নাইম তো আসে না। পরে বলল মাল কি নাইমের কি না। আমি বলছি সে তো আমার এখানো প্রথম থেকেই আসতেছে। প্রদীপ একটা হিন্দু লোক। এখন স্যার নাইম না আসলে তো আমি কমনে মালটা দেই।
ডিসি: আচ্ছা যাক ওইটা ইয়া ছাড়া ছাইড়ো না। আমার জন্য মিনিমাম ৫। দুই তিনের মধ্যে ছাইরো না। 

পুলিশ: আপনার জন্য তো পাঁচই রাখি স্যার। 

ডিসি: আর এদিকে তোমার ওসি তো …এখন ডির্স্টাব করা শুরু করছে। লোক ডেকে চার হাজার, পাঁচ হাজার করে নেওয়ার জন্য।

পুলিশ: জি স্যার। স্যারে তো সবারে ডাকাইতো। স্যার ওই যে সিক্স ফাইভটা বসাইছি ভালো করে। সিক্স ফাইভটা ইয়া করতেছে না। বড় গাড়ি তো স্যার বাইপাসে যায় ওই জন্য সিক্স ফাইভের মাধ্যমে সবগুলা গাড়ির নাম নাম্বার নিয়া যোগাযোগ করাইতেছি স্যার। 

ডিসি: মাল কোথায়। আবার গাড়ি পথে ধরছে। এতে তো পার্টি সব চলে যাবে।

পুলিশ: এমনি তো বর্ডার বন্ধ ছিল স্যার। যে মালগুলো স্টক ছিল সে মালগুলোই যাইতেছে। বর্ডার তো একেবারে বন্ধ। এখন যদি এমনি ইয়া করে তা হলে তো পার্টি মরে যাবে স্যার। 

ডিসি: যাক সোহেলরে বল কালকে ফুল পেইড করে দিয়ে যাবে। ওই …বাচ্চা কিন্তু খারাপ। ৬টা হচ্ছে ৩০ আর ওদিকে আগের তোমার ৭১ বাকি আছে। তার মানে এক লাখ ১৪০০ বাকি। ওটা কালকে ওই শালাদের কাছ থেকে নিবা। 

পুলিশ: স্যার ঠিক আছে। আমি রাতরে আসলে কথা বলব।

ডিসি: শালা মাসুমের গাড়ি এটা ধরব আমি। ধরে মামলা দেব। মামলা না দিলে গোলাপগঞ্জের ওইটা ঝামেলা শুরু করসে। আমি চিন্তা করছি গোলাপগঞ্জ ডুকলে তো আর ওদিকে তোমার দেয়া লাগতেছে না। আমার ওদিকে দেওয়া লাগতেছে না। শুধু ওসিকে হাত করলেই শ্রীরামপুর দিয়া বের হইয়া চইলা যাবে। ওসিও ওখান থেকে একা খাইতেছে। কিন্তু ওসি …বুঝে না ওর বাপ ডিসি ধরলে ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই গাড়ি ছাড়ার। আমারে ওইগুলা ধরতে হবে এই আরকি।

পুলিশ: জি স্যার, এই জন্য মনে হয় যে আপনাকে দিতে হবে। আর আমাদের তিনটা ডিউটি পার্টি পরে যে এদিকে দেওয়া লাগে এ জন্য গোলাপগঞ্জ দিয়ে চলে যায়। 

ডিসি: ওসি ওইদিকে ৮-১০ হাজার নিয়ে একা তার এপর দিয়া চালাই দিছে। …আমি মারতেসি দাঁড়াও। এখন তুমি বলতে পার। তোমরা গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলো নিচ্ছ মাসুমের নামে এতে কিন্তু বসানি খেয়ে যাবা। এইটা কিন্তু সোর্স লাইগা গেছে। তুমি বসানি খাবা ওই দিকে। আর ধরলে তোমার বাপ ওসি কেন কেউ ছাড়াতে পারবে না।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। আমি আজ থেকে আসলে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব স্যার। 

ডিসি: ঠিক আছে। 

ফোনকল রেকর্ড-৬

ডিসি: ওই সিস্টেমে আসবা তো হবে। আর না হলে নাই। আমি রাস্তায় মারব। যেভাবে পারি। ডিবি দিয়া পারি, দক্ষিণ সুরমা দিয়া পারি, মোগলাবাজার দিয়া পারি, আমি নিজে মারি মারব। সব…। সব এক হাজার, এক হাজার, এক হাজার। …হিসাব দেয়। কোনো পারফরমেন্স তো নাই। তুমি ওইখানে একটাবার ফাস্ট হইতে পারলা না। ওই তো ওইখানে দিয়া তোমারে কি লাভ। তুমি আছ ঝাড়ু দিয়া। ঝাড়ু নিয়া যাইও, ওখানে বসো ঝাড়ু দিতে।

আর চুরি-চামারি কইরা এগুলোর সাথে ছাড়ো আমারে জানাও না। যদি ২০০ বস্তা যায়, এইটা কার? তুমি আমারে কখনো কইছো যে বড় গাড়ি যায়। এত বড় গাড়ি। আমি তো নরমালি জানি ৫০/৬০ বস্তার গাড়ি। এখন থেকে ১০০ বস্তার কোনো গাড়ি গেলে এখানে আমার আলাদা ৭ রাখবা। আর ১০০-এর উপরে গেলে এখানে ১৫। তা না হলে কোনো গাড়ি ছাড়বা না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিস

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সরকার জানালেও নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তুতি চলছে ডিসেম্বরকে ঘিরে। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ের (বিজি প্রেস) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ সংস্থাটি মনে করছে সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করতে পারলে তাদের পক্ষে যেকোনো সময়ই নির্বাচন আয়োজন করা সহজতর হবে। 

বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন উপলক্ষে ব্যালট পেপার, মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন নির্বাচনিসামগ্রী ছাপাতে ইসির প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ; যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। যথাসময়ে এসব প্রস্তুত করতে সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাসহ ভোটের জন্য আনুষঙ্গিক ১০ ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এবারের সংসদ নির্বাচনে ইসিকে ইউএনডিপির সার্বিক সহযোগিতার পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বিজি প্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল- নির্বাচনি কাজে ব্যবহৃত কাগজপত্র কেনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; মুদ্রণ কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণের প্রস্তুতি; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণ পরিকল্পনা; সরবরাহ না হওয়া সামগ্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিবিধ। সভার লক্ষ্য ছিল- জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যালটসহ যত ধরনের সামগ্রী লাগবে সেসব মুদ্রণে কী পরিমাণ পেপার লাগবে, বাজেট কত হতে পারে এবং কেনাকাটা থেকে মুদ্রণে কত সময় লাগতে পারে এসব যাচাই করা।

পরে সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কী পরিমাণ কাগজ লাগবে, এ সংক্রান্ত বাজেটের সংস্থানের ব্যাপার এবং আগের নির্বাচনের কিছু কাগজপত্র বিজি প্রেসে রয়েছে সেগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকলে ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে জন্য কাজগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত পেপার প্রকিউরমেন্ট থেকে প্রিন্টিং পর্যন্ত কতটা সময় লাগতে পারে তা জানা। উনারা বলেছেন, ৩ মাস থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের শিডিউল সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটা হবে তখন যেন আমাদের ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশনটা থাকে।’ ইসি সচিব জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব কাজের অগ্রগতি জানতে একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনি সব ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিতে যা প্রয়োজন

গত ২ মার্চ প্রকাশিত ইসির সবশেষ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। অর্থৎ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্রচারপত্র, আচরণবিধি, ম্যানুয়্যালসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ইসিকে ছাপাতে হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে মোট ৪৩ ধরনের পেপার ছাপাতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে- ২১ ধরনের ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, ৫ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা। 

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের বর্তমান আসন সংখ্যা ৩০০। এসব আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ব্যালট ছাপাতে কাগজ ও কালি সংগ্রহ, ফর্ম, প্যাড, ব্যানার, পোস্টার, নির্দেশিকা, রেজিস্টার, হিসাবরক্ষণ খাতা ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুতের প্রয়োজন রয়েছে। এসব আসনের নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি সামগ্রীর মুদ্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে এসব কাগজ কেনা/সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকসংবলিত হয়ে থাকে। এ কারণে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেপার স্বল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রণ করে মাঠ কার্যালয় সমূহে বিতরণ করতে হবে। অন্যান্য ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার, ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা ইত্যাদি সম্ভাব্য সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুদ্রণ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দুই ধরনের তারিখ দিয়েছেন। তবে আমরা প্রথমটা (ডিসেম্বর) ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ আগে প্রস্তুতি থাকলে পরে আমাদের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন করা সহজ হবে। আর এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ও নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনা এবং মুদ্রণের যাবতীয় কাজ ভোটের আগে আগামী ৪ মাসের মধ্যেই শেষ করতে চাই। তবে যে জিনিসগুলো আমরা আগে সংগ্রহ করব তাতে কোয়ালিটিতে কোনো সমস্যা হবে কিনা- যেমন নির্বাচনে ব্যবহৃত কালি; তা শুকিয়ে যাবে কিনা সেসব বিবেচনা করে সময়কাল বিবেচনায় সংগ্রহ করা হবে।’ 

কে এম আলী নেওয়াজ আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য আমাদের ১০ প্রকার সরঞ্জাম প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে- ৩ প্রকার বস্তা, ৩ প্রকার সিল, ব্যালটবাক্সের জন্য লক ও গালা। এই ৮ ধরনের সরঞ্জাম এদেশের বিভিন্ন মার্কেট থেকে কেনা হয়। তবে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড- এ দুটি সরঞ্জাম আমাদের বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এবার দেশীয় ধরনের ভোটের সরঞ্জাম কেনায় ইসির বাজেট প্রায় ৯ কোটি টাকা। লোকাল মার্কেটের এসব আইটেম কেনার জন্য গত ১০ এপ্রিল টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আর অমোচনীয় কালি ও স্টাম্পপ্যাড ইমপোর্ট করতে খরচ হতো প্রায় ৩০ কোটি টাকা; যা এবার ইউএনডিপি আমাদের ইমপোর্ট করে এনে দেবে। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর ভোটার তালিকা কার্যক্রমের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে সহায়তা পাওয়া গেছে। তবে আমাদের মেইন টাকা পয়সাটা লাগবে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ট্রেনিং, ল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য ফুয়েলসহ অনেক খাতে। এ ছাড়া ট্রেনিং সেন্টার, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ও অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো আছে সেগুলোতে আমাদের টাকা বেশি লাগবে। সেসব ক্ষেত্রেও আমরা ইউএনডিপির সহায়তা পাব আশা করছি। 

এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির নির্বাচনি ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর জাতীয় ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসির এই বাজেট ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৪৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার সে সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংযুক্ত করা সম্ভব হলে এবার ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে হতে পারে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। 

বিজি প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনে (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) ২ লাখ ৩০ হাজার রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনের আগে এ পর্যায়ে কিনতে হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ। এ জন্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৩ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি কাগজগুলো বিজি প্রেসের কাছে সংরক্ষিত। এর আগে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন উপলক্ষে ২০২৩ সালে কেনা হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ রিম কাগজ।

কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ এএম
কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত
চাকরিচ্যুত ৪০ শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল ‘এক্সেল শিওর’ গার্মেন্টের শ্রমিকরা সিইপিজেট গেটের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: খবরের কাগজ

পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়ককে চট্টগ্রামের লাইফলাইন বলা হয়। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), বিমানবন্দর, পোর্ট, একাধিক কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কর্মকাণ্ড এই সড়ককে ঘিরে হয়ে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদের বাদামতলীতে এই পথ ব্যবহার করে যেতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য এই পথকে বেছে নিয়েছেন। বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবির মতো ইস্যুতে শ্রমিকরা এই সড়কে বসে পড়ছেন। এতে রপ্তানিপণ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড থমকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ব্যক্তিগত-দাপ্তরিক কাজে কোথাও যেতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা চাইলে সিইপিজেডের ভেতরে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা-বিক্ষোভ করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে মূল সড়কে উঠে আসছেন। এতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে সিইপিজেডের জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা এ সময় সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরদিন অন্য আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা একই কায়দায় নিজেদের দাবি নিয়ে ইপিজেড গেটের সামনে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া এক দিন বিরতি দিয়ে ২৪ মার্চ সকাল থেকে জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা আবারও রাস্তায় নামেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা জটিলতার কারণে জেএমএস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগেই লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ চলাকালে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে বিধি অনুযায়ী ২০ মার্চের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেতন পরিশোধ না করায় ২২ মার্চ শ্রমিকরা সড়কে আন্দোলনে নামেন। এতে পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৫ এপ্রিল সিইপিজেডের ‘এক্সেল শিওর’ নামে একটি কারখানার ৪০ শ্রমিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা সকাল থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা ইপিজেড মোড়ে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পরদিন ৬ এপ্রিল সকালে জে-ডব্লিউ অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা একই জায়গায় আবারও সড়ক অবরোধ করেন। যদিও শিল্প পুলিশ, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেন। 

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘সিইপিজেডে সড়ক অবরোধের কারণে কনটেইনার জাহাজে তুলতে পারিনি। এটাকে আমাদের ভাষায় সার্টআউট বলা হয়। যত বারই সড়ক অবরোধ হয়েছে, তত বারই সার্টআউট হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আর বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চান না।’

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে কালুরঘাট-পতেঙ্গা সড়কের দুদিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আগ্রাবাদ থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি পতেঙ্গার দিকে যেতে পারে না। অন্যদিকে পতেঙ্গা থেকে আসা যানবাহনগুলো স্টিলমিল এলাকায় আটকা পড়ে। এতে এই পথে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। আমদানি-রপ্তানির কনটেইনারবাহী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। পণ্য চালানের গাড়ি সিইপিজেডে ঢুকতে বা বের হতে পারে না। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কিছু হলেই শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। কোনো দাবি থাকলে তারা ইপিজেড পরিচালককে জানাতে পারেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারেন। এভাবে সড়কে নেমে রাস্তা বন্ধের মাধ্যমে অন্য নাগরিকের জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে সিইপিজেডের শ্রমিকদের কখনো সড়ক অবরোধ করতে দেখিনি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের তুলনায় চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার পরিবেশ অনেক শান্ত। কিন্তু কোনো পক্ষ এটিকে গরম করতে চাইছে। মনে হচ্ছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ শ্রমিক অসন্তোষ।’ 

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে শ্রমিকদের অন্য কেউ ব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। ইপিজেড শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কোনো মালিক পক্ষ আত্মসাৎ করতে পারে না। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কারখানা বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। কিন্তু এরপরও শ্রমিকরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সড়কে চলে যাচ্ছেন। এটা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়টি আগামীতে কঠোরভাবে দেখা হবে।’

সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নতুন অর্থবছরের বাজেট (২০২৫-২৬) হবে ব্যতিক্রমী। এবারের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকারের চেয়ে কম প্রাক্কলন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় ছোট বাজেট দিচ্ছে সরকার। সাধারণত নতুন বাজেটের আকার তার আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবারই আকার তুলনামূলক ছোট করে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দিয়ে গেছেন। বাজেটটি এখন বাস্তবায়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যেহেতু এবার সংসদ নেই, তাই অধ্যাদেশ জারি করে রেডিও-টিভির মাধ্যমে বাজেট দেবেন তিনি।

সূত্র জানায়, বাজেট ছোট করার প্রধানত কারণ তিনটি। প্রথমত, সম্পদের সীমাবদ্ধতা তথা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের ব্যাপক দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং তৃতীয়ত, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়া। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেটের পথে হাঁটছে।

সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটির বৈঠকে গতকাল সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠেকে বাজেটের আকার ছোট করার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সেই পরামর্শ অনুয়ায়ী বাজেট তৈরির নির্দেশ দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। এর আগে জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই খরচের জায়গাটাও কম হবে। বাস্তবতার আলোকে নতুন বাজেট সাজানো হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই। বাজেট বড় হলেই যে ভালো হবে তা নয়। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিত করা। তা হলেই বাজেটের সুফল সবাই পাবেন।

সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনীতির অবস্থা যে ভালো নয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে জিডিপি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে ধরা হয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সংশোধিত প্রবৃদ্ধিও অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা আভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে হবে।

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ। তবে আশার আলো হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে।

বাষির্ক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার এবার অনেক ছোট করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূলত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প পরিহার করা এবং মেগা প্রকল্প না নেওয়ায় নতুন এডিপির আকার ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআর থেকে বলা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা প্রাক্কলনের জন্য। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুবই নাজুক। চলতি অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বছরের বেশির ভাগ সময় পার হলেও রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি এনবিআর। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত।

সম্পদের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে কথা আইএমএফও জানে। সে জন্য সংস্থাটি আগামী বাজেট ছোট করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা নতুন বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা নিচে রাখার প্রস্তাব করেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করেছে সরকার। ফলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের মূল দুটি অংশ উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। সূত্র জানায়, এবার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁটের প্রায় পুরোটাই কমেছে উন্নয়ন অংশে। যার পরিমাণ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে।

নতুন বাজেটের আকার ছোট করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণসহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট করে তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না। অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ছোট বাজেটের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে অন্যতম নিম্ন, যা সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত করে রাখে। তিনি বলেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে কিছু আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে বাজেটের আকার কমানো, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা অন্যতম।

দ্বিতীয়ত, সরকার আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এটি অর্জনে সরকারকে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে।

আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিষয় বিনিময়, ভিসা সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৩ বছর পর ফের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। আলোচনার বিভিন্ন দিকনির্ধারণ করতে তিন দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বেলোচ। এরপর আগামী ২২ এপ্রিল তিন দিনের সফরে আসবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছর পর উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের দ্বার খুলছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সংলাপ হয়েছিল। এবার উভয় দেশ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সংলাপ হচ্ছে।

পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান খবরের কাগজকে জানান, ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফরকে বাণিজ্য, কূটনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে দুই দেশ। তার সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথ খোঁজা হবে।

ইকবাল হোসেন জানান, এই সফরের এক দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী একবছরে অন্তত ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি ৬২৭ মিলিয়ন (৬২ দশমিক ৭ কোটি) ডলার থেকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করা। আর বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। 

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা যৌথ কমিশন পুনর্বহাল করতেও প্রস্তাব দিতে পারে পাকিস্তান। এই কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এ ছাড়া সফরকালে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। এর ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব নতুন মাত্রা পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ৫৩ বছরের অমীমাংসিত বিষয় আছে। তবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা যদি ওই ইস্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। ওদেরও কোনো লাভ নেই। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্ধারের চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হিসেবেই দেখতে চাই।’

এদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমানযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি ফ্লাইট শুরুর ব্যাপারে একমত হয়েছে। পাকিস্তানের ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে একটি এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। শিগগিরই এই রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে বলে জানান হাইকমিশনার ইকবাল হোসেন খান। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-করাচি সরাসরি জাহাজ চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় পাকিস্তানের কোনো পণ্য বাংলাদেশে আনতে হলে তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আনতে হতো। গত ৫ আগস্টের পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল ফের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে করাচি থেকে দুটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। ফলে আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য হাসিনার প্রশাসনের ওপর দিল্লির তীব্র প্রভাবও ভূমিকা রাখে। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ কোন পন্থায় হবে, সেটাও ভারত থেকে ঠিক করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে চায় বাংলাদেশ। উভয় দেশই যেন ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশনে’ থাকে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে ঢাকা।

‘উই অল আর শেখ হাসিনাস মেন’ লিখেও সচিব পদে!

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৫ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
‘উই অল আর শেখ হাসিনাস মেন’ লিখেও সচিব পদে!
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। ছবি: সংগৃহীত

তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে ‘WE ALL ARE SHEIKH HASINA’S MEN’  লেখাসংবলিত স্টিকার সংযুক্ত ছিল। ঠিক যেন সেই আল-জাজিরার খবরের শিরোনামের মতোই। এমন কোনো অনৈতিক সুবিধা নেই, যা তিনি গত সরকারের সময়ে নেননি। পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকও। তার পরও শক্ত খুঁটির জোরে তিনি বহাল তবিয়তে বসে আছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই সচিবের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন থেকে ফেসবুকে তার প্রোফাইল পিকচার সম্পর্কে জানা গেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সেই প্রোফাইল পিকচার তিনি সরিয়ে ফেলেন। এখন তিনি ভোল পাল্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক সাজার চেষ্টা করছেন। আর এ কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী সচিব নাজমুল আহসান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনেও প্রভাবশালী।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত সরকারের সময়ে দলীয় পরিচয়ে সচিব পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন অঢেল অর্থবিত্ত ও সম্পত্তির মালিক। এমন অভিযোগ থাকার পরও আলোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সূত্রের দাবি, ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহযোগী ও সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একাধিকবার ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ নিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

অত্যন্ত করিৎকর্মা এই কর্মকর্তা গত সরকারের আমলে (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদোন্নতি ও নিয়োগ পেয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সংসদসদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ‘সচিব’ পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন প্রশাসনের ১৩তম ব্যাচের এই সরকারি কর্মকর্তা।

পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগ মতাদর্শের উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার সততা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

জানা গেছে, এই কর্মকর্তা এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে এবং বিদ্যুৎ বিভাগে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে কাজ করেছেন। 

অভিযোগ আছে, নাজমুল আহসান বিদ্যুৎ বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় নসরুল হামিদ বিপু ও ড. আহমদ কায়কাউস (তৎকালীন সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ) কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারি কোষাগার থেকে ২ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছিলেন। তিনিও ওই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন।

এ ছাড়া পেট্রোবাংলায় পরিচালক (প্রশাসন) ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় (২০২১, ২০২২, ২০২৩ সাল) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দুর্বল ব্যাংকগুলোতে অর্থসংকট দেখা দেয়। এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা ও তার অধীন ১৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সালমান এফ রহমানের আইএফআইসি ব্যাংকসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠিত দুর্বল ব্যাংকে জামানত রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থ জামানত রাখার বিনিময়ে বর্তমান পানি সম্পদ সচিব শতকরা শূন্য দশমিক ৫ ভাগ হারে কমিশন গ্রহণ করেন।

তা ছাড়া পেট্রোবাংলায় দায়িত্ব পালনকালে ভোলা ও সুন্দরবন গ্যাসফিল্ডের প্রাকৃতিক গ্যাস, পাইপলাইনের পরিবর্তে সড়ক ও নৌপথে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড নামে এক কোম্পানির সঙ্গে এই দুই গ্যাসফিল্ডের প্রাকৃতিক গ্যাস ঢাকায় সরবরাহের লক্ষ্যে একটি বিতর্কিত চুক্তিও করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান পানি সচিবের উদ্যোগে ওই চুক্তির ড্রাফট করা হয়েছিল। এখানেও নিজের জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন নিশ্চিত করেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারি মালিকানাধীন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) উচ্চমূল্যে পাথর উত্তোলনের এক বিতর্কিত চুক্তি নবায়ন করে নাজমুল আহসান (পরিচালক প্রশাসন ও চেয়ারম্যান (পেট্রোবাংলা) ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে উচ্চমূল্যে পাথর উত্তোলনের চুক্তি করায় বর্তমানে সরকারি কোম্পানি লাভের পরিবর্তে বিক্রয়শূন্য ও দেউলিয়া হয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে আছে।

পাশাপাশি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান থাকাকালে নতুন কূপ খনন ও পুরাতন গ্যাসকূপ সংস্কার না করে এলএনজি আমদানির মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট তৈরি হয়।

২০১৪ সালে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন দমনে বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন এই কর্মকর্তা। ডিসি হিসেবে ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পুরস্কার হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন এই কর্মকর্তা, এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তা ছাড়া ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও ডিসির নির্দেশে ফল ঘোষণায় গড়িমসি করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে বিএনপি সমর্থকদের ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের ফলে রাতে ফল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সাতক্ষীরার ডিসি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেকের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি যৌথবাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হত্যার ঘটনায় এই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান খবরের কাগজকে বলেন, এসব নিয়ে আলাপ করার কিছু নেই। কোনো অভিযোগ থাকলে আমার অথরিটি আছে, তারা জানে এই বিষয়ে।