ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
ছাড়লে চোরাই চিনির গাড়ি, টাকা মেলে কাঁড়ি কাঁড়ি
সিলেট সীমান্তে চোরাই চিনির রমরমা কারবার

সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা কারবার, তখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের তিনটি থানা এলাকায় চলছিল চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড় দেওয়ার আরেক কারবার। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর অভিযোগ ছিল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে।

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চলে গাড়ি ছাড়ের এই মহোৎসব। এর মধ্যে খবরের কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর ৭ জুন থেকে এসএমপির গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ের মধ্যেও চলেছে দক্ষিণের তিনটি থানায় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দেওয়ার ঘটনা।

সিলেট মহানগরীতে এসএমপির ছয়টি থানা। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটো ভাগে দায়িত্ব সাজানো রয়েছে। দুজন উপকমিশনারের মাধ্যমে ছয়টি থানা পরিচালিত হয়। দক্ষিণ ভাগে পড়েছে তিনটি থানা। ওই তিন থানা এলাকার সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত এলাকার রয়েছে সহজ সড়ক যোগাযোগ। চোরাই চিনির গাড়ি সরাসরি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌঁছাতে এসএমপির দক্ষিণের থানাগুলো অতিক্রম করতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে নগরী পাড় করে দেওয়ার কাজটি অধীনস্থদের দিয়ে একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি, সাউথ) সোহেল রেজা। গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এসএমপির দক্ষিণ বিভাগের থানাগুলোতে কর্মরত ২১ জন পুলিশ সদস্যের ফোন নম্বরে উপকমিশনার সোহেল রেজার অফিশিয়াল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কেবল চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে টাকা আদায়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এ রকম ২১টি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট খবরের কাগজের হাতে এসেছে।

‘ডিসি সাউথ স্যার’ লিখে সেভ করা ফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট ঘেটে দেখা গেছে, এক ঘণ্টায় ১২টি গাড়ি ছাড় দেওয়ার পর টাকা আদায় বিষয়টি ‘143K’ সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে ‘অল পেইড’। কিছু মেসেজে দেখা গেছে, চোরাই চিনির গাড়ি সিলেট নগরী পেরিয়ে ঢাকা পৌঁছানোর পর ছিনতাই বা ধরা পড়ার ঘটনা জানিয়ে টাকা আদায় কম-বেশি হওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি একটি মেসেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে এভাবে, ‘স্যার, সোহেল রানার দুইটা গাড়ি ছিনতাই হওয়াতে কম নিছে। আজ ডিবি লাইন ক্লিয়ার থাকলে ৫-৬টা কম নিবে।’ একই মেসেজে ‘50K+24K=74K’ সংকেতে হিসাব রয়েছে। উপকমিশনারের হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট সরবরাহকারী সূত্র জানায়, হাজার টাকা আদায়ের হিসাবে ‘K’ সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া সোহেল রেজার ছয়টি ফোনকল রেকর্ড খবরের কাগজের হস্তগত হলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত একটানা সাত মাস চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে সোহেল রেজা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা স্বীকার করেছেন। চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ে যেন ‘টাকার খনি’ পেয়েছিলেন তিনি। 

খবরের কাগজের হাতে আসা ছয়টি ফোনকলে প্রায় ২০ মিনিটের আলাপে শোনা যায়, অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তিনি কেবল চোরাই চিনির গাড়ির হিসাব নিচ্ছেন। ১০০ বস্তার চিনির গাড়ির জন্য ৭ হাজার টাকা ও ১০০ বস্তার বেশি থাকা গাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার্য করে আদায় করাতেন। গাড়ি ছাড় দেওয়ার বকেয়া টাকাও আদায়ে তাগাদা দিতেন। কথায় কথায় অধীনস্তদের ধমকের ওপর রেখেছেন। টাকা আদায় মনঃপুত না হলে অশ্লীল গালি ও নানা ভর্ৎসনাও করছেন। তার ফোনকলে থাকা এক পুলিশ সদস্য নিস্তার পেতে চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।

ছয় বছর পাঁচ মাস পুলিশে চাকরি করা সাবেক এই পুলিশ সদস্য এখন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। গত ৭ জুলাই তিনি নতুন চাকরিতে জয়েন করেন। সাবেক এই পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল পুলিশের ডিউটি বলতেই এসব করা। বদলি নিতে গিয়েও উনার (ডিসি সাউথ) বাধার মুখে পড়ি। অন্যত্র চাকরি পাওয়ায় আমি যেন নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছি।’

ফোনকল রেকর্ড নিয়ে এসএমপির সদর দপ্তরের প্রশাসনে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে ফোনকলগুলো উপকমিশনার মোহা. সোহেল রেজার কণ্ঠ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সোহেল রেজার বক্তব্য নিতে একাধিকার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমপির সদর দপ্তরে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি।

এসএমপি সূত্র জানায়, মোহা. সোহেল রেজা (বিপি নম্বর: ৭২০৫১১২৩৭৭) বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি এসএমপির উপকমিশনার পদে কর্মরত। সরকারের পট পরিবর্তনের পর পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু হলে গত ১০ আগস্ট তাকে এসএমপির দক্ষিণের সঙ্গে উত্তর বিভাগের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সময় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ের ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়লে ১৮ আগস্ট রাতারাতি আরেকটি আদেশে তাকে উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এসএমপির কমিশনারের কার্যালয়ে উপকমিশনার পদে রাখা হয়েছে।

ফোনকল রেকর্ড-১

ডিসি (সাউথ) মোহা. সোহেল রেজা: তা হলে কি ভুল হিসাব আমার।
অধীনস্থ পুলিশ: আমি তো স্যার আটটা ডিআই (চিনিবাহী মিনি ট্রাক) পাইলাম। আমার তো আটটা ডিআই।

ডিসি: তোমার ইয়া হবে কোথ থেকে। না হলে তোমার ধান্ধা হবে কোথ থেকে। তুমি তো দারোগা, তুমি তো এতে সন্তুষ্ট থাকতে পার। বিভিন্ন দিকে হিসাব কম দেখায়া আর ওই ৪৫টার হিসাব কই আমার।

পুলিশ: দিব স্যার, কনফার্ম দিয়ে দিব। 

ডিসি: ওই ৪৫টার হিসাব কই? এখন তো আর গাড়ি কমতেছে না। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কমতো। একটা একটা করে কমলে মাসে কত? ৩০টা। কাহিনি কী। তোমার কি কোথাও দেওয়া লাগে কিছু। তোমার তো কোথাও কিছু দেওয়া লাগে না। বল তোমার খরচ কী। কোথাও তো খরচ নাই। উপরের কোথাও তো খরচ নাই। তাইলে তোমার এত লোভ থাকবে কেন। সিনিয়রদের হক মাইরা খেয়ে ফেলতেছ। তোমারে আমি কাগজে-কলমে হিসাব দিয়ে ডে বাই ডে হিসাব দেখাইছি। এখন থেকে যদি চাও প্রত্যেকটা ডে বাই ডে হিসাব দেখাব। তুমি যদি মনে কর। এই যে আজকে বললাম ১২টা তুমি মিলাইয়া দেখ। সুতরাং হিসাব ঠিক কর, তা না হলে কিন্তু তোমাদের ব্যবসা আমি ডকে উঠাই দেব। আমি বলতেছি না পাবলিক (...অশ্লীল শব্দ)

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: এই সমস্ত চামচামি মিথ্যা ধান্ধাবাজি এগুলো বাদ দাও। একবারে অরজিনাল হিসাব দেও। আরে বেটা ১২টা গাড়ি গেলে তো তুমি ১২ হাজার টাকা পাও। তুমি… দারগার বাচ্চা ১২ হাজার টাকা মানে চাট্টিখানি কথা। আমি ডিসি পাচ্ছি ১২ হাজার, তুমি পাচ্ছো শালা ১২ হাজার। শালা বাটপার। তুমি সব ঠিক কর।

পুলিশ: স্যার...।

ডিসি: তা না হলে কাল থেকে আমি অন্য স্টাইলে যাব। আর এখন থেকে কার কয়টা গাড়ি গেল, ডিআই ৮টা না, ডিআই ৮টা কার গাড়ি গেছে তুমি লিখিত দিবা। আর যারগুলো হিসাব দিচ্ছ না সেগুলো আমি রাস্তায় ধরবো। ও ডিআই যে ৮টা গাড়ি গেছে কয়জনের, ৮ জনের না ৩ জন না ৪ জনের এই হিসাবও দিবা যে অমুকের গাড়ি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: মনিরের গাড়ি, অমুকের গাড়ি, ওইটা অমুকের গাড়ি। তা হলে আমার কাছে নামগুলোও হিসাব থাকবে। এই নামের বাইরে শালা যে গাড়ি যাবে, আমি ধরব। আমার ধরার তো অভাব নাই। মোগলাবাজার (এসএমপির থানা) গেলেও আমি ধরতে পারব। দক্ষিণ সুরমা (থানা) গেলেও ধরতে পারব। এখন শাহপরানের (থানা) এখানেও আমি ইয়া (চেকপোস্ট) বসাই দেব টিলাগড়ে। দিয়ে তোমার পাকনামু বাইর করে দেব। তুমি তো ওইটাই চাচ্ছ। তোমারে বইলা বইলা তো আমি সংশোধন করতে পারতেছি না। গাড়ির হিসাব একেবারে ঠিক দিচ্ছ না। শুধু নাঈমেরতে (...অশ্লীল শব্দ) দিছি, দেড় মাসের খতিয়ান ধরে টান দিছি, এখন আর নাঈমের কমেও না বাড়েও না। এখন তো ঠিক আছে। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কম দিত। যাই হোক, যা হইছে পেন্ডিং ক্লোজ কর। ওই ৪৫টার হিসাব দিবা, প্লাস এই যে বকেয়া এগুলো কাল-পরশুর মধ্যে ইয়া কর।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার দিয়া দিব স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-২

ডিসি: কোনো… বাচ্চার গাড়ি যাইতে দেব না আমি। যেটা পাব সেটা ধরব আর মামলা দেব। মামলা দেব আর অর্ধেক মাল বেইচা দেব। ২০ লাখ টেকার মাল ১০ লাখ ধরলে ৫ লাখ সরাই ফেলাব ডিবির মাল। তর মতো এই ফকিন্নি ১ হাজার, ২ হাজার, ৫ হাজার থাকানোর দরকার নাই। তর …। কেমনে ব্যবসা করিস কর।

পুলিশ: স্যার 

ডিসি: ওই … বাচ্চারে ডাক, এখন ডাক। … বাচ্চারে ডাক। ডাইকা বল তর এক্কারে ঠ্যাং ভাইঙ্গালামু … বাচ্চা। সিস্টেমে চলবি, আর না হলে তর কোনো গাড়ি যাবে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলতেছি স্যার।

ডিসি: এ জায়গার গাড়ির নাম্বার দেব কটা। কয়টা গাড়ির নম্বর নিবি বল। এই যে দেখ হাসিবুলের গাড়ি গেছে ঢাকা মেট্রো এত ১২ সিরিয়ালের ১৪৬৫। বাবুর গেছে ২০ সিরিয়ালের ৬৫৪। ইদ্রিসের ট্রাক ১২ সিরিয়ালের ১৩৩৮। বিল্লালের ট্রাক ২২ সিরিয়ালের ৩২৮। হারুনুর রশিদের ঢাকা মেট্রো ট ১৮৫০৪৫। সাইদের ... সোহাগ যশোর ট এত। পালের গাড়ি ৫৩৪ সবুজ। তাইলে তুমি …। আমি যদি মনে করি প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর পর্যন্ত দেব। আমার সেই কেপাসিটি আছে। আর তুমি এখানে বইসা…। তোমারে আমি হায়েস্ট বললাম, ২৫ তারিখ পর্যন্ত তোমার আয়ু। তারপরে কিন্তু আমি তোমারে সরাই দেব। এত দিন বলছি আমি কিন্তু এবার কাজ করব। 

ফোনকল রেকর্ড-৩

ডিসি: তুমি, যে গাড়ি যাবে যারই গাড়ি যাবে মেসেজ দেবে, নম্বর দেবে। আদারওয়াইজ গাড়ি আমি মারব। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। গাড়ির নাম্বারসহ দিব স্যার। 

ডিসি: নাম্বার ছাড়া কোনো … বাচ্চার গাড়ি যাবে না। এটা সোহেল হোক, মাছুম হোক, এক্স ওয়াই হোক যেডাই হোক। দিনের বেলায় রাতের বেলায়। আমারে মেসেজ দেয়া থাকবে। তোমাদের চৌদ্দ নাম্বারি আমি বাইর করতেছি দাঁড়াও। তুমি এক … জলিল এক… সব… আমারে ঠকাও না। 

পুলিশ: স্যার ওই যে হাইড্রেলিকে যে নাম্বার থাকে না। অন টেস্ট থাকে যেগুলা। 

ডিসি: অন টেস্টে টাইম দেবে। ওয়ান টু করে। আমি টাইম অনুযায়ী মিলাব। একটা টাইম দিলা ১১টায় সেই গাড়ি তিনটার সময় তো আমার দক্ষিণ সুরমায় দাঁড়ায়া থাকার কথা না।

পুলিশ: ঠিক আছে। আমি তা হলে ড্রাইবারের নাম আর মোবাইল নম্বর বলব দিয়ে দিতে স্যার।

ডিসি: এক্কেবারে প্রত্যেকটা বড় গাড়ি। তা না হলে আমি একটা গাড়ি যেতে দেব না। যেটা ধরব … দেব। শালা সোহেল … কালপিট। … গাড়ি নিচে ২২টা। হিসাব দিছে কালকে রাতে ৫টা। আজকে দিনে কয়টা। এই তোমার দিনে কয়টা গেছিল জিজ্ঞাস করছ। 
পুলিশ: জিজ্ঞাস করছি স্যার। দিনের পার্টিবুলে ২টা। কিন্তু সোহেল ভাই বলে একটা গাড়িও গেছে না। 

ডিসি:  তা হলে দিনের পার্টি মিথ্যা কথা বলতেছে?

পুলিশ: স্যার, সোহেল বলছে আমাকে ধরে ফোন দিতে। কার গাড়ি গেছে আমার নাম বলে গেছে। এখন আমাকে ফোন লাগাই দিত যে আমি বলতাম। আমিতো ভাই কোনো গাড়ি আজকে নেই নাই।

ডিসি: এ জন্য সোহেলরে বল যে… তুই ওই নাম্বার দিবি গাড়ির। তা না হলে একটা গাড়ি যাইতে দেব না। তর যে গাড়িগুলো যাবে তুই নাম্বার দিবি। সোজা কথা। ওই শালা ক্রিমিনাল। 

পুলিশ: ঠিক আছে ওইটার নাম্বার দিতে বলব। আর যেটার নাম্বার নাই স্যার ওইটা বলব যে ড্রাইভারের নাম্বার এবং নাম সেন্ড করার জন্য। যেন আটক করলে ড্রাইভারের নাম মোবাইল নাম্বার মিলে। না মিললে ওই গাড়ি আর ছাড়া হবে না। 

ডিসি: হ্যাঁ প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে এখন থেকে। প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে। আমি তিন থানায় বলে দিচ্ছি।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। 

ডিসি: আমার নলেজ ছাড়া এখন কোনো গাড়ি যাবে না। শালা … বাচ্চারা সুযোগটা নিয়া একেবারে যা ইচ্ছা তাই করে। ৫২টা গাড়ি গেছে আর আমার হিসাবে পাই ৪টা ৩টা ২টা। এই কিরে। আমি দেব তোমারে পনের বিশটার নাম্বার দিয়া দেই গাড়ির। কোন কোন গাড়ি গেছে। তুমি ওইখানে নাটক…। পার্টি পার্টি পার্টি।… কোনো কাজ কর না তুমি। তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। ভাই শাহিন, আমি তোমারে বলতেছি না কয় দিন ধরে তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। আমি বিকল্প খুঁজে রাখছি কারে বসাব ওখানে। তোমারে সরাব মিল্টনরেও সরাই দেব। শুধু ২৫ তারিখটা আসতে দাও। তুমি আসলে বেশি খাইয়া ফালাইতেছে তো বদ হজম হয়ে গেছে। 

পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলে দিতেছি স্যার। পার্টিগুলোরে সবগুলারে আজকে থেকে স্যার। 

ডিসি: আমি বললাম তো, আমার নলেজ ছাড়া যদি কোনো বড় গাড়ি আমি পাই। সেটারেই আমি মারব সে যেই হোক। আমার বাপের গাড়ি হইলেও আমি মামলা দেব। ওই শালাদের বলে দাও। 

পুলিশ: ঠিক আছে আজকে থেকে বড় গাড়ি যতগুলা আছে। 

ডিসি: …বাচ্চা তোমার পার্টি বলবে যে দুইটা গেছে আর ওই… বাচ্চা বলবে আসে নাই। আমার গাড়ি যায় নাই। তো তুমি কি … হিসাব নিচ্ছ। ... এখন একটা মৌসুম যাচ্ছে … পইরা থাকবে না তো … ঘরে বইয়া থাকে, … বেড়ায়। তলে তলে ঠিকই তো পার্টিগুলার সঙ্গে ধান্দাগিরি করে তুমি তোমার আখের ঘুছাইতেছ। আমি বলে দিলাম। আমার নলেজ ছাড়া যে গাড়ি আসবে আমি সেটা মারব।

 

ফোনকল রেকর্ড-৪

ডিসি: তুমি যে বড় ইয়া নিয়া যাও এগুলা তো কেউ জানে না। 

পুলিশ: স্যার।

ডিসি: এবাদুলের সঙ্গে কথা টেকনিকালি বল। আবার আমারে জড়াইয়ো না। তোমার তো বুদ্ধিশুদ্ধিও নাই। তুমি ডাইরেক্ট বলবা যে ভাই এত বুঝি না। যদি ১০০ বস্তার নিচে হয় তা হলে সাত করে যাবে উপরে। কি করবেন দেখেন। অন্যগুলা ৭ যাবে আর এদিকে তোমার যেটা সেটা দেবে। যদি ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে যায় তা হলে ১৫। আর ৩০০ বস্তা হলে তো কথাই নাই।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ৩০০ বস্তার কোনো গাড়ি আমি এলাউ করব না। আর এর বাইরে কিছু করলে শালারে ধইরা বসানি দিয়া দেও। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার ফোন দিয়া কথা বলতেছি স্যার। 

ফোনকল রেকর্ড-৫

পুলিশ: জি স্যার, মাসুম স্যার।

ডিসি: হ্যাঁ মাসুম। মাসুমের গাড়ি ছিল এটা।

পুলিশ: মাসুম আর হে তো একই স্যার। 

ডিসি:  বুঝছো ওদিক দিয়া কিছু গাড়ি নিছে। 

পুলিশ: ওইদিক দিয়া শ্যামপুর হইয়া বাদেশ্বর হইয়া যায় মনে হয় তাইলে। 

ডিসি: হুম তার মানে বুঝতেছি ওই গাড়ি দুয়েকটা ধরে মামলা দিতে হবে। ওটা ফাইজলামি…। শুধু ওসিরে দিয়া আমাদের ফাঁকি দিয়া চলে যাচ্ছে। বুঝছে।

পুলিশ: জি স্যার। ওই যে গোলাপগঞ্জ দিয়া যেগুলো বাইর হয় স্যার, শ্রীরামপুর পয়েন্টে জলিল ভাইরে দিয়া আটক করে স্যার ওইখানে একটা বসান দিলে ঠিক হবে স্যার। 

ডিসি: জলিলরে দিয়া হবে না। আমার অন্যভাবে ধরতে হবে। জলিল তো ওসির ভয়ে ধরবে না। ধরলেও ওসি ছেড়ে দেবে। ওসি এখানে মাস্তানি…। তাই আমার একটা বসানি দিতে হবে। 

পুলিশ: জি স্যার। তা হলে রাতেও মনে হয় ওদিকে যায় গাড়ি। 

ডিসি: আমি বললে তো ওই গাড়ি ছাড়ব না। একেবারে মামলা বসাই দেব। 

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই?

পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে। 

ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার। 

ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই? 

পুলিশ: অন্যান্য গাড়ি গেছে স্যার। খাজা ভাইর গেছে স্যার। 

ডিসি: খাজার হিসাব তো আলাদা। ওরা তো মিথ্যা কথা বলে না। 

পুলিশ: ডিআই গেছে ২টা স্যার। সোহেলের আমি ৫টা পাইছি। আচ্ছা দেখি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা করাইতে পারি কি না। আমারে পার্টি ৫টার টাকা দিয়া গেছে স্যার। ড্রাইভার সোহেলের কথা বলে দিছে। ৫টা, ডিআই ২টা আর আদারস আছে ১টা স্যার। 

ডিসি: আদার এই পার্টি কার। 

পুলিশ: এই যে প্রদীপ নামে যে একটা... 

ডিসি: ওই শালা তো নাই। প্রদীপ নাই। ওরে এতো অল্পতে ছাড় কেন।

পুলিশ: স্যার নাইম তো আসে না স্যার। এই জন্য তো এখন...

ডিসি: নাইম আসে না। ওরে একবার …যে আমি। ৩০ হাজার টাকা বাকি রাখছিল। পরে… দিছি মামলা দিয়ে। ভয়ে আর আমার সামনে আসে না। 

পুলিশ: একটা লোক আসে। প্রদীপ বাবু বলে আমার একটা গাড়ি আছে। ওইটা যায়। এখন ওইদিন বাশারভাই বলছিল নাইম ভাই যোগাযোগ করে কি না। আমি বলছি যে নাইম তো আসে না। পরে বলল মাল কি নাইমের কি না। আমি বলছি সে তো আমার এখানো প্রথম থেকেই আসতেছে। প্রদীপ একটা হিন্দু লোক। এখন স্যার নাইম না আসলে তো আমি কমনে মালটা দেই।
ডিসি: আচ্ছা যাক ওইটা ইয়া ছাড়া ছাইড়ো না। আমার জন্য মিনিমাম ৫। দুই তিনের মধ্যে ছাইরো না। 

পুলিশ: আপনার জন্য তো পাঁচই রাখি স্যার। 

ডিসি: আর এদিকে তোমার ওসি তো …এখন ডির্স্টাব করা শুরু করছে। লোক ডেকে চার হাজার, পাঁচ হাজার করে নেওয়ার জন্য।

পুলিশ: জি স্যার। স্যারে তো সবারে ডাকাইতো। স্যার ওই যে সিক্স ফাইভটা বসাইছি ভালো করে। সিক্স ফাইভটা ইয়া করতেছে না। বড় গাড়ি তো স্যার বাইপাসে যায় ওই জন্য সিক্স ফাইভের মাধ্যমে সবগুলা গাড়ির নাম নাম্বার নিয়া যোগাযোগ করাইতেছি স্যার। 

ডিসি: মাল কোথায়। আবার গাড়ি পথে ধরছে। এতে তো পার্টি সব চলে যাবে।

পুলিশ: এমনি তো বর্ডার বন্ধ ছিল স্যার। যে মালগুলো স্টক ছিল সে মালগুলোই যাইতেছে। বর্ডার তো একেবারে বন্ধ। এখন যদি এমনি ইয়া করে তা হলে তো পার্টি মরে যাবে স্যার। 

ডিসি: যাক সোহেলরে বল কালকে ফুল পেইড করে দিয়ে যাবে। ওই …বাচ্চা কিন্তু খারাপ। ৬টা হচ্ছে ৩০ আর ওদিকে আগের তোমার ৭১ বাকি আছে। তার মানে এক লাখ ১৪০০ বাকি। ওটা কালকে ওই শালাদের কাছ থেকে নিবা। 

পুলিশ: স্যার ঠিক আছে। আমি রাতরে আসলে কথা বলব।

ডিসি: শালা মাসুমের গাড়ি এটা ধরব আমি। ধরে মামলা দেব। মামলা না দিলে গোলাপগঞ্জের ওইটা ঝামেলা শুরু করসে। আমি চিন্তা করছি গোলাপগঞ্জ ডুকলে তো আর ওদিকে তোমার দেয়া লাগতেছে না। আমার ওদিকে দেওয়া লাগতেছে না। শুধু ওসিকে হাত করলেই শ্রীরামপুর দিয়া বের হইয়া চইলা যাবে। ওসিও ওখান থেকে একা খাইতেছে। কিন্তু ওসি …বুঝে না ওর বাপ ডিসি ধরলে ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই গাড়ি ছাড়ার। আমারে ওইগুলা ধরতে হবে এই আরকি।

পুলিশ: জি স্যার, এই জন্য মনে হয় যে আপনাকে দিতে হবে। আর আমাদের তিনটা ডিউটি পার্টি পরে যে এদিকে দেওয়া লাগে এ জন্য গোলাপগঞ্জ দিয়ে চলে যায়। 

ডিসি: ওসি ওইদিকে ৮-১০ হাজার নিয়ে একা তার এপর দিয়া চালাই দিছে। …আমি মারতেসি দাঁড়াও। এখন তুমি বলতে পার। তোমরা গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলো নিচ্ছ মাসুমের নামে এতে কিন্তু বসানি খেয়ে যাবা। এইটা কিন্তু সোর্স লাইগা গেছে। তুমি বসানি খাবা ওই দিকে। আর ধরলে তোমার বাপ ওসি কেন কেউ ছাড়াতে পারবে না।

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। আমি আজ থেকে আসলে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব স্যার। 

ডিসি: ঠিক আছে। 

ফোনকল রেকর্ড-৬

ডিসি: ওই সিস্টেমে আসবা তো হবে। আর না হলে নাই। আমি রাস্তায় মারব। যেভাবে পারি। ডিবি দিয়া পারি, দক্ষিণ সুরমা দিয়া পারি, মোগলাবাজার দিয়া পারি, আমি নিজে মারি মারব। সব…। সব এক হাজার, এক হাজার, এক হাজার। …হিসাব দেয়। কোনো পারফরমেন্স তো নাই। তুমি ওইখানে একটাবার ফাস্ট হইতে পারলা না। ওই তো ওইখানে দিয়া তোমারে কি লাভ। তুমি আছ ঝাড়ু দিয়া। ঝাড়ু নিয়া যাইও, ওখানে বসো ঝাড়ু দিতে।

আর চুরি-চামারি কইরা এগুলোর সাথে ছাড়ো আমারে জানাও না। যদি ২০০ বস্তা যায়, এইটা কার? তুমি আমারে কখনো কইছো যে বড় গাড়ি যায়। এত বড় গাড়ি। আমি তো নরমালি জানি ৫০/৬০ বস্তার গাড়ি। এখন থেকে ১০০ বস্তার কোনো গাড়ি গেলে এখানে আমার আলাদা ৭ রাখবা। আর ১০০-এর উপরে গেলে এখানে ১৫। তা না হলে কোনো গাড়ি ছাড়বা না। 

পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।

এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান এ বছর শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুদককে এবার সেই ভেন্যু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ শিল্পকলার নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। 

বিষয়টি জানতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কয়েকবার সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল আলম মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগের কারণ জানতে চান। 

শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদককে ‘না’ করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলে সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) দুদকের ডিজি পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা শিল্পকলার ডিজি স্যারের কাছে এসেছিলেন। স্যার (ডিজি) তাদের বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’ এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন সোহেল আলম। 

এদিকে শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলার ডিজি সেখানকার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদক কর্মকর্তাদের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করেছেন। দুদকের এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এসব শোনার পরও শিল্পকলার ডিজি বলেছেন, আল্লাহর ফেরেশতা নেমে এলেও মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন না পাওয়ায় দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা রবিবারেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের কয়েকটি মিলনায়তন পরিদর্শন করে এসেছেন। প্রতিবছর শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ জনের আয়োজন করা যায় এবং সেটি দুদক প্রধান কার্যালয়সংলঘ্ন ছিল।

আবুল কালাম আজাদ আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক অনেক মন্ত্রী-আমলা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কিছু কথা জানিয়েছেন।

সাবেক আমলা আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ এলাকায় ভুরিভোজের আয়োজন করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। 

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী বা এমপি অথবা কোনো উপদেষ্টার দলীয় প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করার সুযোগ ছিল না। দলীয় প্ল্যাটফর্মে কেউ খোলাখুলি মতামত দিলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হতো। এ জন্য কেউ মুখ খুলতেন না। শেখ হাসিনা দল ও সরকার পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটাই সবাই অনুসরণ করতেন। 

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমলারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন। তারা কোনো মন্ত্রীর কথা শুনতেন না। এমপিদের পাত্তা দিতেন না। একাধিক মন্ত্রী ও এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এতে দিন দিন সচিবরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আবুল কালাম আজাদের মামলার তদন্তের কাজে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গত শনিবার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে পল্টনে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করেন পল্টন থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘আবুল কালাম আজাদকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আবুল কালাম আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেননি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি সেগুলো জানার চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, ১৪ সালের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশের তদবির বেড়ে যায়। তার কাছেও কয়েকজন কর্মকর্তা ডিএমপিসহ আরও কয়েকটি জেলায় বদলির সুপারিশের জন্য এসেছিলেন। পরে ওই সব কর্মকর্তার সুপারিশের জন্য তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পুলিশ তদবিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের কাছে আসত। তিনি কয়েকজনের বদলির জন্য সুপারিশ করলেও ধনঞ্জয়ের জন্য তা হয়নি বলে দাবি করেন। গতকাল সচিবালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর ধনঞ্জয় আর সচিবালয়ে আসেন না। 

তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আবুল কালাম আজাদ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, পল্টন থানার যে হত্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক ছিলেন। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক বলে তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্মে তিনি তার মতামত বলতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। তবে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন যে অন্যদের মতো তার দেশ ছাড়ার কোনো উদ্যোগ ছিল না।

সুস্থ হতে যুদ্ধ চলছে এমদাদের

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
সুস্থ হতে যুদ্ধ চলছে এমদাদের
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চোখ হারিয়েছেন এমদাদ

‘আমার এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে আমার দুঃখ নেই। নিজের জন্য চিন্তা করি না। কষ্টের জায়গা হচ্ছে, আমার ভাইয়েরা এখন সরকারে আছে। তবুও আহত ভাইদের চিকিৎসার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরও সুরাহা পেলাম না। কষ্টের জায়গাটা এখানেই।’ 

আক্ষেপের সুরে সোমবার (৭ অক্টোবর) কথাগুলো বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান চোখ হারানো রাজধানীর সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ। তিনি চট্টগ্রামের চকবাজার ডিসি রোড এলাকার মো. বেল্লাল হোসেন ছেলে। 

আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে আঘাতপ্রাপ্ত বামহাতে গামছা পেঁছিয়ে পুলিশের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে তর্ক করছি। এ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন থেকেই পুলিশ আমাকে টার্গেট করে। পরে আমি চট্টগ্রামে চলে আসি। এরপর আমাকে আটকের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার মেসে এবং চট্টগ্রামের বাসায় কয়েকবার খোঁজ নেয়। তার পরও আমি চট্টগ্রামে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিউমার্কেট মোড়ে পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়া থেকে রক্ষা পেলেও রাবার বুলেট থেকে বাঁচতে পারিনি। বুলেটের আঘাতের পর একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। প্রাথমিক চিকিৎসায় আমার জ্ঞান ফিরে। তবে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বুলেটের ক্ষত সারাতে হাসপাতালে যাইনি। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এরপর ৫ আগস্ট বিজয়ের দিন আমি মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। বিকেলে দামপাড়া পুলিশলাইনস এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের এক দফা সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, এমনকি গুলিও করে। অনেক সাধারণ মানুষ ছিল যারা চায়নি পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘাত হোক। তারা গেটে গিয়ে হিউম্যান চেইন তৈরি করে, জনতাকে পুলিশলাইনসের ভিতরে যেতে বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ এগ্রেসিভ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গুলি করে। এ সময় আমি পাশের পেট্রলপাম্পের একটি পিলারের পাশে গিয়ে আশ্রয় নিই। লাইনস থেকে পুলিশ বের হয়ে আমাকে একা পেয়ে যায়। আমাকে লক্ষ্য করে পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর পুলিশের এক সদস্য গুলি করে। এতে আমি গুলিবিদ্ধ হই। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে আমি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। পরে ঢাকার পিজি হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ল্যাবএইড হাসপাতাল, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।

এমদাদ বলেন, ‘আমি এখন ডান চোখে দেখি না। চিকিৎসকরা চোখের বিষয়ে বলেছেন, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তুমি ডান চোখে দেখবে পাবে না। চিকিৎসকরা চান অন্তত চোখটি যেন কেটে ফেলে দিতে না হয়। তারা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।’

চিকিৎসা খরচ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে এক টাকাও না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ২০ সেপ্টেম্বর আমি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমার ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তবে টাকা পায়নি। এটা (টাকা) যদি সঠিক সময়ে দেওয়া না হয়, তাহলে কোনো কাজে আসবে না। আমি আমার কথা বলছি না। আমি বলছি আহত সব সহযোদ্ধার কথা। এখানে অনেক আহত আছেন, যাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো প্রয়োজন। তা না হলে তাদের অঙ্গহানি হবে। নতুবা মৃত্যুবরণ করবে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা সহযোগিতা করা অতীব জরুরি। আমার আহত ভাইরা যদি বিনা চিকিৎসায় হারিয়ে যায়, পরে হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা কি করব?’

স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা
ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পগুলো এখন হয়ে গেছে গলার কাঁটা।

কথা ছিল এ বছরের অক্টোবরে অর্থাৎ চলতি মাসেই ‘স্বল্প পরিসরে’ চালু হবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো বিগত সরকারের এই মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে ২০২৬ সাল লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল অঙ্কের বাজেটের এ প্রকল্পের বিদেশি ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে আগামী ডিসেম্বর থেকেই। তাই সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো এ মেগা প্রকল্পই যেন এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে তাড়াহুড়ো করে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং (একাংশের উদ্বোধন) করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন জানানো হয়েছিল, ২০২৩ সালের শেষে পরীক্ষামূলকভাবে আর ২০২৪ সালের শেষ ভাগে পুরোদমে শুরু হবে টার্মিনালের কার্যক্রম। পরে গত ৩০ মে সরেজমিন পরিদর্শন গিয়ে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছিলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে স্বল্প পরিসরে চালু হবে। ওই সময় পর্যন্ত টার্মিনাল ভবনের ৩ শতাংশের মতো কাজ বাকি আছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

বলা হয়েছিল, অত্যাধুনিক এই টার্মিনালে থাকবে যাত্রীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা, যা দেশের এভিয়েশন খাতের চিত্রই পাল্টে দেবে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই যেন বেরিয়ে আসছে প্রকল্পের পদে পদে পরিকল্পনার ভুল আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও প্রথমে অর্থসংকট এবং এখন চুক্তিগত নানা জটিলতা আর দক্ষ জনবলের অভাব দেখিয়ে টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হওয়া পেছাতে পেছাতে এখন ঠেকেছে ২০২৬ সালে। 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করে। টার্মিনালটি পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস ও ভেন্ডরের নাম সুপারিশ করার কথা ছিল আইএফসির। টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে পরিচালন ব্যয় নির্ধারণে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তিও করা যায়নি। 

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্পের শুরু থেকেই বলে এসেছি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে প্যারালালি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কীভাবে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যাবে, সে কাজগুলো যেন করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা শোনেনি। তারা বিল্ডিং নির্মাণে জোর দিয়েছে, কিন্তু এই যে পিপিপি চুক্তি করা, দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য কে কাজ করবে সেসব ঠিক করা, এগুলোতে জোর দেয়নি। ফলে এখন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার যদি এখন তাড়াহুড়ো করে অদক্ষ জনবল বা অদক্ষ প্রতিষ্ঠানের হাতে এই টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বে আমাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ফলে এই টার্মিনাল দিয়ে যে আমরা আমাদের সেবার মান উন্নত হয়েছে, এটা দেখিয়ে যে একটি বাজার তৈরি করতে চাচ্ছিলাম তা ব্যাহত হবে। আবার এটিকে এভাবে ফেলে রাখলে যদি ভালোভাবে মেইনটেইন না করা হয়, তবে এখানে যেসব যন্ত্রাংশ সেট করা হয়ছে, সেগুলো নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।’ 

২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাইকা। যে ঋণ পরিশোধের প্রথম কিস্তি আগামী ডিসেম্বর থেকেই দিতে হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিকল্পনার শুরু থেকেই কার্যক্রম কীভাবে চলবে তা নিয়ে প্যারালালি কাজ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ এই প্রকল্পের একটি বড় টাকা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যার কিস্তি আমাদের এ বছরের ডিসেম্বর থেকেই দেওয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে এখন যা হচ্ছে তাতে ডিসেম্বরে এখান থেকে কোনো টাকা তো আসা সম্ভবই না, বরং এটির মেনটেন্যান্সের জন্য সরকারকে টাকা গুনতে হবে। না হলে যা তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। পাশাপাশি ঋণের কিস্তির বোঝা তো আছেই।’

থার্ড টার্মিনালের কাজ কতটা শেষ হয়েছে এবং কবে কার্যক্রম শুরু হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাজ ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। থার্ড টার্মিনালের অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স কে করবে, আমরা এ সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে দফায় দফায় মিটিং হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায়।’ অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলেই মূলত কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তবে অপারেশন শুরু করতে করতে সামনের বছরটা অর্থাৎ ২০২৫ সাল চলে যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

বেবিচক জানায়, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর জনবল নিয়োগ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপর ট্রায়াল শুরু হবে, প্রণয়ন করা হবে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)। সব মিলিয়ে প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ। টার্মিনালে ৬ ঘণ্টা করে চার শিফটে মোট ছয় হাজার লোক কাজ করবেন। এর মধ্যে র‍্যাব-পুলিশ, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), এপিবিএন, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ নিরাপত্তা রক্ষাতেই কাজ করবেন প্রায় চার হাজার সদস্য। তাদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও কাজের জন্য প্রস্তুত করতেও প্রায় এক বছর সময় লাগবে।

এর আগে এ প্রকল্পের শেষ কিস্তির অর্থছাড়ে জটিলতা দেখা দিলে গত ১ জুলাই থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক-পিডি এ কে এম মাকসুদুর ইসলাম একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বেবিচককে। সেখানে বেবিচকের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে প্রকল্পটির জন্য। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পকাজের স্বার্থে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে জিওবি খাতে বরাদ্দ করা তহবিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের আয়কর ও ভ্যাট এবং আমদানি করা মালামালের কাস্টম ডিউটি পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ঋণ দেওয়ার জন্য এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঋণের অর্থ ছাড় করে বেবিচক। অর্থাৎ সে হিসেবে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা সম্পূর্ণ অর্থই প্রকল্পে চলে গেছে এবং তাদের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটাই শেষ হয়েছে। ফলে অর্থসংকটের কোনো বিষয় নেই এখন। 

এতকিছুর পরও প্রকল্পটির সুবিধা পেতে এত দেরির বিষয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের মেগা প্রকল্প হওয়ার পরও কেন এ প্রকল্পের শুরু থেকেই এর পরিকল্পনায় আয়-ব্যয় নির্ধারণ এবং এর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শুরু করার বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং যারা গাফিলতি করেছেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবিও জানান তারা। বলেন, এর জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হওয়া প্রয়োজন। যেখানে বেবিচকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশিষ্টজনরা থাকবেন। তারা মূলত এই প্রকল্পের বিভিন্ন ভাগের যারা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবেন। তাহলে হয়তো এর কার্যক্রম শুরু ত্বরান্বিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বর্তমানে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী বহনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের তৃতীয় টার্মিনালটি যুক্ত হলে বছরে ২ কোটি পর্যন্ত যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। টার্মিনালটিতে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। ১৬টি ব্যাগেজ বেল্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে নতুন এ টার্মিনালে।

মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম শরীরের ২৫৩ টি ছোররা গুলি লাগে আন্দোলনের সময়। ১০টি বের করা হলেও বাকিগুলো এখনো রয়ে গেছে শরীরে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন ১৮ বছরের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। চলতি বছরের নভেম্বরে তার সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এখন অনিশ্চিত। গত ৫ আগস্ট গুলিতে আহত হওয়ার পর নাজমুল সাকিব মাহিমের ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালের বিছানা। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হই। শরীরে আমার ২৫৩টি ছররা বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। একটি বুলেট পিঠের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে পেটের নাড়িভুঁড়িসহ বেরিয়ে আসে। আর শরীরে বিদ্ধ হওয়া বাকি বুলেটগুলোর মধ্যে মাত্র ১০টি এ পর্যন্ত অপারেশন করে বের করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে বের করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা আরও জানিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আমার অন্তত এক বছর সময় লাগবে। আগামী নভেম্বরে আমার শরীরে আরও একটি অপারেশন করা হবে। তাই এবার হয়তো সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।’ 

কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হোস্টেলে থাকার সময়ই আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। বিভিন্ন মিছিলেও অংশ নিই। পরে আমাদের ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হলে আমি কুমিল্লার দেবিদ্বারে আমার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয় বন্ধুবান্ধব ও বড় ভাইদের উৎসাহে মিছিল-সমাবেশে অংশ নিই। ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেবিদ্বার শহরের মিছিলে যোগ দিলে গুলি লাগে। শরীরের সামনের দিকে চারটা রাবার বুলেট, আর পেছন থেকে শটগানের ছররা গুলি লাগে। এতে আমি সড়কে লুটিয়ে পড়ি। সঙ্গে থাকা বন্ধুরা আমাকে তখন স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর থাকায় বিকেলে আমাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ইমার্জেন্সি ও পোস্ট অপারেটিভে থাকতে হয় ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। সে সময় আমার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। পরদিন ১৫ আগস্ট থেকে এই ওয়ার্ডে আমাকে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই আমার চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে। পরিবারকে বহন করতে হচ্ছে না।’ 

আন্দোলনে গিয়ে আহত হলেন এ পর্যন্ত ছাত্র সমন্বয়কদের কেউ কি আপনাদের দেখতে এসেছেন? এ প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, ‘হ্যাঁ এসেছেন। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সমন্বয়ক সারজিস আলম আমাদের দেখতে এসেছিলেন। তারা চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামের কয়েকজন নেতাও এসেছিলেন দেখতে।’ 

তারা কোনো আর্থিক সহায়তা করেছেন কি না জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘উপদেষ্টা নাহিদ, জামায়াতে ইসলাম ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। তবে ডাক্তাররা বলেছেন, আমার চিকিৎসা চালাতে হবে দীর্ঘদিন। ভালো লাগছে না। আমি পরীক্ষা দিতে চাই, ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই, হাসপাতাল আর ভালো লাগছে না।’ 

পরিবারে কে কে আছেন জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘তার বাবা হারুনুর রশীদ দুবাইপ্রবাসী। মা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। আমার আহত হওয়ার খবরে বাবা এসেছিলেন। এক মাস ছিলেন। পরিবারের সবাই আবার জন্য চিন্তিত। আমার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচ কীভাবে চালাবেন, আমার পড়ালেখা চালাতে পারব কি না- এসব ভেবে। আমি সুস্থ হয়ে পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের কতজন ভর্তি আছেন জানতে চাইলে ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ হান্নান জানান, প্রথমদিকে ওই ওয়ার্ডে ৮০ জনের মতো ভর্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭ জন আহত ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী আর বাকিরা বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ। শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. শফিউর রহমান খবরের কাগজকে জানান, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে আন্দোলনে আহত যারা এই হাসপাতালে এসেছেন তাদের ফান্ড এবং সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন। এসব রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে বলেও জানান তিনি।