সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা কারবার, তখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের তিনটি থানা এলাকায় চলছিল চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড় দেওয়ার আরেক কারবার। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর অভিযোগ ছিল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চলে গাড়ি ছাড়ের এই মহোৎসব। এর মধ্যে খবরের কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর ৭ জুন থেকে এসএমপির গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ের মধ্যেও চলেছে দক্ষিণের তিনটি থানায় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দেওয়ার ঘটনা।
সিলেট মহানগরীতে এসএমপির ছয়টি থানা। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটো ভাগে দায়িত্ব সাজানো রয়েছে। দুজন উপকমিশনারের মাধ্যমে ছয়টি থানা পরিচালিত হয়। দক্ষিণ ভাগে পড়েছে তিনটি থানা। ওই তিন থানা এলাকার সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত এলাকার রয়েছে সহজ সড়ক যোগাযোগ। চোরাই চিনির গাড়ি সরাসরি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌঁছাতে এসএমপির দক্ষিণের থানাগুলো অতিক্রম করতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এ সুবিধাকে পুঁজি করে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে নগরী পাড় করে দেওয়ার কাজটি অধীনস্থদের দিয়ে একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি, সাউথ) সোহেল রেজা। গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এসএমপির দক্ষিণ বিভাগের থানাগুলোতে কর্মরত ২১ জন পুলিশ সদস্যের ফোন নম্বরে উপকমিশনার সোহেল রেজার অফিশিয়াল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কেবল চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে টাকা আদায়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এ রকম ২১টি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট খবরের কাগজের হাতে এসেছে।
‘ডিসি সাউথ স্যার’ লিখে সেভ করা ফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট ঘেটে দেখা গেছে, এক ঘণ্টায় ১২টি গাড়ি ছাড় দেওয়ার পর টাকা আদায় বিষয়টি ‘143K’ সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে ‘অল পেইড’। কিছু মেসেজে দেখা গেছে, চোরাই চিনির গাড়ি সিলেট নগরী পেরিয়ে ঢাকা পৌঁছানোর পর ছিনতাই বা ধরা পড়ার ঘটনা জানিয়ে টাকা আদায় কম-বেশি হওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি একটি মেসেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে এভাবে, ‘স্যার, সোহেল রানার দুইটা গাড়ি ছিনতাই হওয়াতে কম নিছে। আজ ডিবি লাইন ক্লিয়ার থাকলে ৫-৬টা কম নিবে।’ একই মেসেজে ‘50K+24K=74K’ সংকেতে হিসাব রয়েছে। উপকমিশনারের হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট সরবরাহকারী সূত্র জানায়, হাজার টাকা আদায়ের হিসাবে ‘K’ সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া সোহেল রেজার ছয়টি ফোনকল রেকর্ড খবরের কাগজের হস্তগত হলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত একটানা সাত মাস চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে সোহেল রেজা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা স্বীকার করেছেন। চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ে যেন ‘টাকার খনি’ পেয়েছিলেন তিনি।
খবরের কাগজের হাতে আসা ছয়টি ফোনকলে প্রায় ২০ মিনিটের আলাপে শোনা যায়, অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তিনি কেবল চোরাই চিনির গাড়ির হিসাব নিচ্ছেন। ১০০ বস্তার চিনির গাড়ির জন্য ৭ হাজার টাকা ও ১০০ বস্তার বেশি থাকা গাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার্য করে আদায় করাতেন। গাড়ি ছাড় দেওয়ার বকেয়া টাকাও আদায়ে তাগাদা দিতেন। কথায় কথায় অধীনস্তদের ধমকের ওপর রেখেছেন। টাকা আদায় মনঃপুত না হলে অশ্লীল গালি ও নানা ভর্ৎসনাও করছেন। তার ফোনকলে থাকা এক পুলিশ সদস্য নিস্তার পেতে চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।
ছয় বছর পাঁচ মাস পুলিশে চাকরি করা সাবেক এই পুলিশ সদস্য এখন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। গত ৭ জুলাই তিনি নতুন চাকরিতে জয়েন করেন। সাবেক এই পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল পুলিশের ডিউটি বলতেই এসব করা। বদলি নিতে গিয়েও উনার (ডিসি সাউথ) বাধার মুখে পড়ি। অন্যত্র চাকরি পাওয়ায় আমি যেন নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছি।’
ফোনকল রেকর্ড নিয়ে এসএমপির সদর দপ্তরের প্রশাসনে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে ফোনকলগুলো উপকমিশনার মোহা. সোহেল রেজার কণ্ঠ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সোহেল রেজার বক্তব্য নিতে একাধিকার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমপির সদর দপ্তরে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি।
এসএমপি সূত্র জানায়, মোহা. সোহেল রেজা (বিপি নম্বর: ৭২০৫১১২৩৭৭) বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি এসএমপির উপকমিশনার পদে কর্মরত। সরকারের পট পরিবর্তনের পর পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু হলে গত ১০ আগস্ট তাকে এসএমপির দক্ষিণের সঙ্গে উত্তর বিভাগের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সময় চোরাই চিনির গাড়ি ছাড়ের ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়লে ১৮ আগস্ট রাতারাতি আরেকটি আদেশে তাকে উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এসএমপির কমিশনারের কার্যালয়ে উপকমিশনার পদে রাখা হয়েছে।
ফোনকল রেকর্ড-১
ডিসি (সাউথ) মোহা. সোহেল রেজা: তা হলে কি ভুল হিসাব আমার।
অধীনস্থ পুলিশ: আমি তো স্যার আটটা ডিআই (চিনিবাহী মিনি ট্রাক) পাইলাম। আমার তো আটটা ডিআই।
ডিসি: তোমার ইয়া হবে কোথ থেকে। না হলে তোমার ধান্ধা হবে কোথ থেকে। তুমি তো দারোগা, তুমি তো এতে সন্তুষ্ট থাকতে পার। বিভিন্ন দিকে হিসাব কম দেখায়া আর ওই ৪৫টার হিসাব কই আমার।
পুলিশ: দিব স্যার, কনফার্ম দিয়ে দিব।
ডিসি: ওই ৪৫টার হিসাব কই? এখন তো আর গাড়ি কমতেছে না। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কমতো। একটা একটা করে কমলে মাসে কত? ৩০টা। কাহিনি কী। তোমার কি কোথাও দেওয়া লাগে কিছু। তোমার তো কোথাও কিছু দেওয়া লাগে না। বল তোমার খরচ কী। কোথাও তো খরচ নাই। উপরের কোথাও তো খরচ নাই। তাইলে তোমার এত লোভ থাকবে কেন। সিনিয়রদের হক মাইরা খেয়ে ফেলতেছ। তোমারে আমি কাগজে-কলমে হিসাব দিয়ে ডে বাই ডে হিসাব দেখাইছি। এখন থেকে যদি চাও প্রত্যেকটা ডে বাই ডে হিসাব দেখাব। তুমি যদি মনে কর। এই যে আজকে বললাম ১২টা তুমি মিলাইয়া দেখ। সুতরাং হিসাব ঠিক কর, তা না হলে কিন্তু তোমাদের ব্যবসা আমি ডকে উঠাই দেব। আমি বলতেছি না পাবলিক (...অশ্লীল শব্দ)
পুলিশ: স্যার...।
ডিসি: এই সমস্ত চামচামি মিথ্যা ধান্ধাবাজি এগুলো বাদ দাও। একবারে অরজিনাল হিসাব দেও। আরে বেটা ১২টা গাড়ি গেলে তো তুমি ১২ হাজার টাকা পাও। তুমি… দারগার বাচ্চা ১২ হাজার টাকা মানে চাট্টিখানি কথা। আমি ডিসি পাচ্ছি ১২ হাজার, তুমি পাচ্ছো শালা ১২ হাজার। শালা বাটপার। তুমি সব ঠিক কর।
পুলিশ: স্যার...।
ডিসি: তা না হলে কাল থেকে আমি অন্য স্টাইলে যাব। আর এখন থেকে কার কয়টা গাড়ি গেল, ডিআই ৮টা না, ডিআই ৮টা কার গাড়ি গেছে তুমি লিখিত দিবা। আর যারগুলো হিসাব দিচ্ছ না সেগুলো আমি রাস্তায় ধরবো। ও ডিআই যে ৮টা গাড়ি গেছে কয়জনের, ৮ জনের না ৩ জন না ৪ জনের এই হিসাবও দিবা যে অমুকের গাড়ি।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।
ডিসি: মনিরের গাড়ি, অমুকের গাড়ি, ওইটা অমুকের গাড়ি। তা হলে আমার কাছে নামগুলোও হিসাব থাকবে। এই নামের বাইরে শালা যে গাড়ি যাবে, আমি ধরব। আমার ধরার তো অভাব নাই। মোগলাবাজার (এসএমপির থানা) গেলেও আমি ধরতে পারব। দক্ষিণ সুরমা (থানা) গেলেও ধরতে পারব। এখন শাহপরানের (থানা) এখানেও আমি ইয়া (চেকপোস্ট) বসাই দেব টিলাগড়ে। দিয়ে তোমার পাকনামু বাইর করে দেব। তুমি তো ওইটাই চাচ্ছ। তোমারে বইলা বইলা তো আমি সংশোধন করতে পারতেছি না। গাড়ির হিসাব একেবারে ঠিক দিচ্ছ না। শুধু নাঈমেরতে (...অশ্লীল শব্দ) দিছি, দেড় মাসের খতিয়ান ধরে টান দিছি, এখন আর নাঈমের কমেও না বাড়েও না। এখন তো ঠিক আছে। আগে তো প্রতিদিন একটা একটা করে কম দিত। যাই হোক, যা হইছে পেন্ডিং ক্লোজ কর। ওই ৪৫টার হিসাব দিবা, প্লাস এই যে বকেয়া এগুলো কাল-পরশুর মধ্যে ইয়া কর।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার দিয়া দিব স্যার।
ফোনকল রেকর্ড-২
ডিসি: কোনো… বাচ্চার গাড়ি যাইতে দেব না আমি। যেটা পাব সেটা ধরব আর মামলা দেব। মামলা দেব আর অর্ধেক মাল বেইচা দেব। ২০ লাখ টেকার মাল ১০ লাখ ধরলে ৫ লাখ সরাই ফেলাব ডিবির মাল। তর মতো এই ফকিন্নি ১ হাজার, ২ হাজার, ৫ হাজার থাকানোর দরকার নাই। তর …। কেমনে ব্যবসা করিস কর।
পুলিশ: স্যার
ডিসি: ওই … বাচ্চারে ডাক, এখন ডাক। … বাচ্চারে ডাক। ডাইকা বল তর এক্কারে ঠ্যাং ভাইঙ্গালামু … বাচ্চা। সিস্টেমে চলবি, আর না হলে তর কোনো গাড়ি যাবে না।
পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলতেছি স্যার।
ডিসি: এ জায়গার গাড়ির নাম্বার দেব কটা। কয়টা গাড়ির নম্বর নিবি বল। এই যে দেখ হাসিবুলের গাড়ি গেছে ঢাকা মেট্রো এত ১২ সিরিয়ালের ১৪৬৫। বাবুর গেছে ২০ সিরিয়ালের ৬৫৪। ইদ্রিসের ট্রাক ১২ সিরিয়ালের ১৩৩৮। বিল্লালের ট্রাক ২২ সিরিয়ালের ৩২৮। হারুনুর রশিদের ঢাকা মেট্রো ট ১৮৫০৪৫। সাইদের ... সোহাগ যশোর ট এত। পালের গাড়ি ৫৩৪ সবুজ। তাইলে তুমি …। আমি যদি মনে করি প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর পর্যন্ত দেব। আমার সেই কেপাসিটি আছে। আর তুমি এখানে বইসা…। তোমারে আমি হায়েস্ট বললাম, ২৫ তারিখ পর্যন্ত তোমার আয়ু। তারপরে কিন্তু আমি তোমারে সরাই দেব। এত দিন বলছি আমি কিন্তু এবার কাজ করব।
ফোনকল রেকর্ড-৩
ডিসি: তুমি, যে গাড়ি যাবে যারই গাড়ি যাবে মেসেজ দেবে, নম্বর দেবে। আদারওয়াইজ গাড়ি আমি মারব।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। গাড়ির নাম্বারসহ দিব স্যার।
ডিসি: নাম্বার ছাড়া কোনো … বাচ্চার গাড়ি যাবে না। এটা সোহেল হোক, মাছুম হোক, এক্স ওয়াই হোক যেডাই হোক। দিনের বেলায় রাতের বেলায়। আমারে মেসেজ দেয়া থাকবে। তোমাদের চৌদ্দ নাম্বারি আমি বাইর করতেছি দাঁড়াও। তুমি এক … জলিল এক… সব… আমারে ঠকাও না।
পুলিশ: স্যার ওই যে হাইড্রেলিকে যে নাম্বার থাকে না। অন টেস্ট থাকে যেগুলা।
ডিসি: অন টেস্টে টাইম দেবে। ওয়ান টু করে। আমি টাইম অনুযায়ী মিলাব। একটা টাইম দিলা ১১টায় সেই গাড়ি তিনটার সময় তো আমার দক্ষিণ সুরমায় দাঁড়ায়া থাকার কথা না।
পুলিশ: ঠিক আছে। আমি তা হলে ড্রাইবারের নাম আর মোবাইল নম্বর বলব দিয়ে দিতে স্যার।
ডিসি: এক্কেবারে প্রত্যেকটা বড় গাড়ি। তা না হলে আমি একটা গাড়ি যেতে দেব না। যেটা ধরব … দেব। শালা সোহেল … কালপিট। … গাড়ি নিচে ২২টা। হিসাব দিছে কালকে রাতে ৫টা। আজকে দিনে কয়টা। এই তোমার দিনে কয়টা গেছিল জিজ্ঞাস করছ।
পুলিশ: জিজ্ঞাস করছি স্যার। দিনের পার্টিবুলে ২টা। কিন্তু সোহেল ভাই বলে একটা গাড়িও গেছে না।
ডিসি: তা হলে দিনের পার্টি মিথ্যা কথা বলতেছে?
পুলিশ: স্যার, সোহেল বলছে আমাকে ধরে ফোন দিতে। কার গাড়ি গেছে আমার নাম বলে গেছে। এখন আমাকে ফোন লাগাই দিত যে আমি বলতাম। আমিতো ভাই কোনো গাড়ি আজকে নেই নাই।
ডিসি: এ জন্য সোহেলরে বল যে… তুই ওই নাম্বার দিবি গাড়ির। তা না হলে একটা গাড়ি যাইতে দেব না। তর যে গাড়িগুলো যাবে তুই নাম্বার দিবি। সোজা কথা। ওই শালা ক্রিমিনাল।
পুলিশ: ঠিক আছে ওইটার নাম্বার দিতে বলব। আর যেটার নাম্বার নাই স্যার ওইটা বলব যে ড্রাইভারের নাম্বার এবং নাম সেন্ড করার জন্য। যেন আটক করলে ড্রাইভারের নাম মোবাইল নাম্বার মিলে। না মিললে ওই গাড়ি আর ছাড়া হবে না।
ডিসি: হ্যাঁ প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে এখন থেকে। প্রত্যেকটা গাড়ি আটক হবে। আমি তিন থানায় বলে দিচ্ছি।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।
ডিসি: আমার নলেজ ছাড়া এখন কোনো গাড়ি যাবে না। শালা … বাচ্চারা সুযোগটা নিয়া একেবারে যা ইচ্ছা তাই করে। ৫২টা গাড়ি গেছে আর আমার হিসাবে পাই ৪টা ৩টা ২টা। এই কিরে। আমি দেব তোমারে পনের বিশটার নাম্বার দিয়া দেই গাড়ির। কোন কোন গাড়ি গেছে। তুমি ওইখানে নাটক…। পার্টি পার্টি পার্টি।… কোনো কাজ কর না তুমি। তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। ভাই শাহিন, আমি তোমারে বলতেছি না কয় দিন ধরে তোমার আয়ু ফুরাই গেছে। আমি বিকল্প খুঁজে রাখছি কারে বসাব ওখানে। তোমারে সরাব মিল্টনরেও সরাই দেব। শুধু ২৫ তারিখটা আসতে দাও। তুমি আসলে বেশি খাইয়া ফালাইতেছে তো বদ হজম হয়ে গেছে।
পুলিশ: ঠিক আছে আমি বলে দিতেছি স্যার। পার্টিগুলোরে সবগুলারে আজকে থেকে স্যার।
ডিসি: আমি বললাম তো, আমার নলেজ ছাড়া যদি কোনো বড় গাড়ি আমি পাই। সেটারেই আমি মারব সে যেই হোক। আমার বাপের গাড়ি হইলেও আমি মামলা দেব। ওই শালাদের বলে দাও।
পুলিশ: ঠিক আছে আজকে থেকে বড় গাড়ি যতগুলা আছে।
ডিসি: …বাচ্চা তোমার পার্টি বলবে যে দুইটা গেছে আর ওই… বাচ্চা বলবে আসে নাই। আমার গাড়ি যায় নাই। তো তুমি কি … হিসাব নিচ্ছ। ... এখন একটা মৌসুম যাচ্ছে … পইরা থাকবে না তো … ঘরে বইয়া থাকে, … বেড়ায়। তলে তলে ঠিকই তো পার্টিগুলার সঙ্গে ধান্দাগিরি করে তুমি তোমার আখের ঘুছাইতেছ। আমি বলে দিলাম। আমার নলেজ ছাড়া যে গাড়ি আসবে আমি সেটা মারব।
ফোনকল রেকর্ড-৪
ডিসি: তুমি যে বড় ইয়া নিয়া যাও এগুলা তো কেউ জানে না।
পুলিশ: স্যার।
ডিসি: এবাদুলের সঙ্গে কথা টেকনিকালি বল। আবার আমারে জড়াইয়ো না। তোমার তো বুদ্ধিশুদ্ধিও নাই। তুমি ডাইরেক্ট বলবা যে ভাই এত বুঝি না। যদি ১০০ বস্তার নিচে হয় তা হলে সাত করে যাবে উপরে। কি করবেন দেখেন। অন্যগুলা ৭ যাবে আর এদিকে তোমার যেটা সেটা দেবে। যদি ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে যায় তা হলে ১৫। আর ৩০০ বস্তা হলে তো কথাই নাই।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।
ডিসি: ৩০০ বস্তার কোনো গাড়ি আমি এলাউ করব না। আর এর বাইরে কিছু করলে শালারে ধইরা বসানি দিয়া দেও।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার ফোন দিয়া কথা বলতেছি স্যার।
ফোনকল রেকর্ড-৫
পুলিশ: জি স্যার, মাসুম স্যার।
ডিসি: হ্যাঁ মাসুম। মাসুমের গাড়ি ছিল এটা।
পুলিশ: মাসুম আর হে তো একই স্যার।
ডিসি: বুঝছো ওদিক দিয়া কিছু গাড়ি নিছে।
পুলিশ: ওইদিক দিয়া শ্যামপুর হইয়া বাদেশ্বর হইয়া যায় মনে হয় তাইলে।
ডিসি: হুম তার মানে বুঝতেছি ওই গাড়ি দুয়েকটা ধরে মামলা দিতে হবে। ওটা ফাইজলামি…। শুধু ওসিরে দিয়া আমাদের ফাঁকি দিয়া চলে যাচ্ছে। বুঝছে।
পুলিশ: জি স্যার। ওই যে গোলাপগঞ্জ দিয়া যেগুলো বাইর হয় স্যার, শ্রীরামপুর পয়েন্টে জলিল ভাইরে দিয়া আটক করে স্যার ওইখানে একটা বসান দিলে ঠিক হবে স্যার।
ডিসি: জলিলরে দিয়া হবে না। আমার অন্যভাবে ধরতে হবে। জলিল তো ওসির ভয়ে ধরবে না। ধরলেও ওসি ছেড়ে দেবে। ওসি এখানে মাস্তানি…। তাই আমার একটা বসানি দিতে হবে।
পুলিশ: জি স্যার। তা হলে রাতেও মনে হয় ওদিকে যায় গাড়ি।
ডিসি: আমি বললে তো ওই গাড়ি ছাড়ব না। একেবারে মামলা বসাই দেব।
পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে।
ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।
ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার।
ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই?
পুলিশ: দিনে যদি নিয়ে থাকে তা হলে শেষ রাতের দিকে মনে হয় ওইদিকে গাড়ি যায় গোলাপগঞ্জ হয়ে।
ডিসি: ও এই হচ্ছে কাহিনি বুঝছো। ওর আমাদের এদিক দিয়ে গেছে ৬টা। …বাচ্চারে বল কালকে থেকে সব পিক কর। তারপর গাড়ি নিবি। তা না হলে স্যার বলছে গাড়ি যাবে না। এও বলবা যে তোমার গাড়ি আর তোমার ব্যবসা করারই দরকার নাই। শালা তুমি বেশি মাস্তান হইছ। আর মাসুমের কথা বলে দিও যে, গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলা নিচ্ছ এগুলো স্যার কিন্তু নিজে বসানি দেবে।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।
ডিসি: ওইগুলা ধরা খেলে কিন্তু তুই কেন, তর চৌদ্দ পুরুষ রিকোয়েস্ট কইরা কিন্তু ছাড়বে না।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। দেখি ঘুমে আছে মনে হয় স্যার।
ডিসি: তোমার অন্যান্য গাড়ি যায় নাই?
পুলিশ: অন্যান্য গাড়ি গেছে স্যার। খাজা ভাইর গেছে স্যার।
ডিসি: খাজার হিসাব তো আলাদা। ওরা তো মিথ্যা কথা বলে না।
পুলিশ: ডিআই গেছে ২টা স্যার। সোহেলের আমি ৫টা পাইছি। আচ্ছা দেখি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা করাইতে পারি কি না। আমারে পার্টি ৫টার টাকা দিয়া গেছে স্যার। ড্রাইভার সোহেলের কথা বলে দিছে। ৫টা, ডিআই ২টা আর আদারস আছে ১টা স্যার।
ডিসি: আদার এই পার্টি কার।
পুলিশ: এই যে প্রদীপ নামে যে একটা...
ডিসি: ওই শালা তো নাই। প্রদীপ নাই। ওরে এতো অল্পতে ছাড় কেন।
পুলিশ: স্যার নাইম তো আসে না স্যার। এই জন্য তো এখন...
ডিসি: নাইম আসে না। ওরে একবার …যে আমি। ৩০ হাজার টাকা বাকি রাখছিল। পরে… দিছি মামলা দিয়ে। ভয়ে আর আমার সামনে আসে না।
পুলিশ: একটা লোক আসে। প্রদীপ বাবু বলে আমার একটা গাড়ি আছে। ওইটা যায়। এখন ওইদিন বাশারভাই বলছিল নাইম ভাই যোগাযোগ করে কি না। আমি বলছি যে নাইম তো আসে না। পরে বলল মাল কি নাইমের কি না। আমি বলছি সে তো আমার এখানো প্রথম থেকেই আসতেছে। প্রদীপ একটা হিন্দু লোক। এখন স্যার নাইম না আসলে তো আমি কমনে মালটা দেই।
ডিসি: আচ্ছা যাক ওইটা ইয়া ছাড়া ছাইড়ো না। আমার জন্য মিনিমাম ৫। দুই তিনের মধ্যে ছাইরো না।
পুলিশ: আপনার জন্য তো পাঁচই রাখি স্যার।
ডিসি: আর এদিকে তোমার ওসি তো …এখন ডির্স্টাব করা শুরু করছে। লোক ডেকে চার হাজার, পাঁচ হাজার করে নেওয়ার জন্য।
পুলিশ: জি স্যার। স্যারে তো সবারে ডাকাইতো। স্যার ওই যে সিক্স ফাইভটা বসাইছি ভালো করে। সিক্স ফাইভটা ইয়া করতেছে না। বড় গাড়ি তো স্যার বাইপাসে যায় ওই জন্য সিক্স ফাইভের মাধ্যমে সবগুলা গাড়ির নাম নাম্বার নিয়া যোগাযোগ করাইতেছি স্যার।
ডিসি: মাল কোথায়। আবার গাড়ি পথে ধরছে। এতে তো পার্টি সব চলে যাবে।
পুলিশ: এমনি তো বর্ডার বন্ধ ছিল স্যার। যে মালগুলো স্টক ছিল সে মালগুলোই যাইতেছে। বর্ডার তো একেবারে বন্ধ। এখন যদি এমনি ইয়া করে তা হলে তো পার্টি মরে যাবে স্যার।
ডিসি: যাক সোহেলরে বল কালকে ফুল পেইড করে দিয়ে যাবে। ওই …বাচ্চা কিন্তু খারাপ। ৬টা হচ্ছে ৩০ আর ওদিকে আগের তোমার ৭১ বাকি আছে। তার মানে এক লাখ ১৪০০ বাকি। ওটা কালকে ওই শালাদের কাছ থেকে নিবা।
পুলিশ: স্যার ঠিক আছে। আমি রাতরে আসলে কথা বলব।
ডিসি: শালা মাসুমের গাড়ি এটা ধরব আমি। ধরে মামলা দেব। মামলা না দিলে গোলাপগঞ্জের ওইটা ঝামেলা শুরু করসে। আমি চিন্তা করছি গোলাপগঞ্জ ডুকলে তো আর ওদিকে তোমার দেয়া লাগতেছে না। আমার ওদিকে দেওয়া লাগতেছে না। শুধু ওসিকে হাত করলেই শ্রীরামপুর দিয়া বের হইয়া চইলা যাবে। ওসিও ওখান থেকে একা খাইতেছে। কিন্তু ওসি …বুঝে না ওর বাপ ডিসি ধরলে ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই গাড়ি ছাড়ার। আমারে ওইগুলা ধরতে হবে এই আরকি।
পুলিশ: জি স্যার, এই জন্য মনে হয় যে আপনাকে দিতে হবে। আর আমাদের তিনটা ডিউটি পার্টি পরে যে এদিকে দেওয়া লাগে এ জন্য গোলাপগঞ্জ দিয়ে চলে যায়।
ডিসি: ওসি ওইদিকে ৮-১০ হাজার নিয়ে একা তার এপর দিয়া চালাই দিছে। …আমি মারতেসি দাঁড়াও। এখন তুমি বলতে পার। তোমরা গোলাপগঞ্জে যে গাড়িগুলো নিচ্ছ মাসুমের নামে এতে কিন্তু বসানি খেয়ে যাবা। এইটা কিন্তু সোর্স লাইগা গেছে। তুমি বসানি খাবা ওই দিকে। আর ধরলে তোমার বাপ ওসি কেন কেউ ছাড়াতে পারবে না।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার। আমি আজ থেকে আসলে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব স্যার।
ডিসি: ঠিক আছে।
ফোনকল রেকর্ড-৬
ডিসি: ওই সিস্টেমে আসবা তো হবে। আর না হলে নাই। আমি রাস্তায় মারব। যেভাবে পারি। ডিবি দিয়া পারি, দক্ষিণ সুরমা দিয়া পারি, মোগলাবাজার দিয়া পারি, আমি নিজে মারি মারব। সব…। সব এক হাজার, এক হাজার, এক হাজার। …হিসাব দেয়। কোনো পারফরমেন্স তো নাই। তুমি ওইখানে একটাবার ফাস্ট হইতে পারলা না। ওই তো ওইখানে দিয়া তোমারে কি লাভ। তুমি আছ ঝাড়ু দিয়া। ঝাড়ু নিয়া যাইও, ওখানে বসো ঝাড়ু দিতে।
আর চুরি-চামারি কইরা এগুলোর সাথে ছাড়ো আমারে জানাও না। যদি ২০০ বস্তা যায়, এইটা কার? তুমি আমারে কখনো কইছো যে বড় গাড়ি যায়। এত বড় গাড়ি। আমি তো নরমালি জানি ৫০/৬০ বস্তার গাড়ি। এখন থেকে ১০০ বস্তার কোনো গাড়ি গেলে এখানে আমার আলাদা ৭ রাখবা। আর ১০০-এর উপরে গেলে এখানে ১৫। তা না হলে কোনো গাড়ি ছাড়বা না।
পুলিশ: ঠিক আছে স্যার।