ঢাকা ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪

প্রতারক এক লন্ড্রি ব্যবসায়ীর গল্প

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম
প্রতারক এক লন্ড্রি ব্যবসায়ীর গল্প
ছবিতে ক্রেস্ট, বিলাসবহুল গাড়ি ও তার লন্ড্রি। খবরের কাগজ

হাসিনা সরকারের আমলে গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে সরকারি সব সেক্টরেই ভয়াবহভাবে বেড়েছিল দালালদের দৌরাত্ম্য। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও এসব দালালের কুকর্ম থেমে নেই। সুমন ইসলাম নামের এমনই একজন দালালের সন্ধান পেয়েছে খবরের কাগজ। যিনি নিজ এলাকায় মাহবুব নামে পরিচিত। সবাই জানত, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানার পিএস হিসেবে চাকরি করেন তিনি। কিন্তু আসলে তিনি তা নন। মিথ্যা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কোটিপতি হয়েছেন এই দালাল। 

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী সুমন ইসলামের তথ্য জানতে অনুসন্ধান চালায় খবরের কাগজ টিম। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। 

জানা গেছে, চাকরি দেওয়া ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন নেতাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার নাম করে সুমন ইসলাম বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারণা করেছেন নিজের ভাইয়ের ছেলের সঙ্গেও। বিভিন্ন পরিচয়ে দালালি করেন তিনি। কখনো রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর পিএস, কখনো বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ শীর্ষ পরিবহন নেতার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, কখনো সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের শ্যালক, আবার কখনো বা বঙ্গভবনের সহকারী মার্কেটিং অফিসারের পরিচয়ও দেন তিনি। এ ছাড়া সরকারি স্টিকার ব্যবহার করে পাজেরো জিপে ঘুরে বেড়ান সুমন ইসলাম। থাকেন জিগাতলার মিতালী রোডে ২৪/ডি-এর ৮ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায়। ওই বাড়ির নিচে পার্কিংয়ে রাখা হয় পাজেরো জিপটি। 

সুমনের যত সম্পদ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্ল্যাট, জিগাতলা মনেশ্বর রোডে পাবনা ড্রাই ক্লিনার্স নামের একটি লন্ড্রি দোকান ও একটি অফিস, নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ বাহার নামে চারজনের শেয়ারে প্রায় কোটি টাকার গার্মেন্ট ব্যবসা রয়েছে সুমন ইসলামের। এ ছাড়া পাবনায় রয়েছে নিজের বাড়ি ও ফসলি জমি। 

পাজেরো জিপের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটি) অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মেট্রো জি এইচএ-১১-৬৩১৬ নম্বরের গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২-০২০১৩৮২। রেজিস্ট্রেশন তারিখ ৪ এপ্রিল, ২০০৫। গাড়িটির প্রথম মালিক ছিলেন রাশেদ আহম্মেদ চৌধুরী। পরে তার কাছ থেকে গাড়িটি কেনেন কাজী মারুফ আহম্মেদ। এরপর মারুফ গাড়িটি বিক্রি করে দেন জারিফ ইকবাল সিদ্দিকি নামে এক ব্যক্তির কাছে। এরপর জারিফের কাছ থেকে গাড়িটি কেনেন ফাতেমাতুজ-জোহরা নামের একজন নারী।

বর্তমানে বিআরটিতে গাড়িটি ফাতেমাতুজ-জোহরার নামে নিবন্ধিত আছে। তার বাবার নাম আবুল কালাম। নথিতে ফাতেমার গ্রামের ঠিকানা- জগৎপট্টি, স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সুমনের ছবিসহ একাধিক ক্রেস্ট রয়েছে। ক্রেস্টে লেখা রয়েছে সৌজন্যে বঙ্গভবন, মো. সুমন ইসলাম, সহকারী মার্কেটিং অফিসার। 

সুমন ইসলামের বাড়ির দারোয়ান আমজাদ খবরের কাগজকে বলেন, স্যার রাজনীতি করে শুনেছি। আর একটি লন্ড্রির দোকান আছে। স্যারের দুই ছেলে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তামিম ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে সাকিল এখনো ছাত্র। বড় ছেলে এখানে থাকেন না। 

পাজেরো জিপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিপটি প্রায় ৮ মাস হলো এই গ্যারেজে রাখা হচ্ছে। সুমন পারিবারিকভাবে গাড়িটি ব্যবহার করেন বলেও জানান আমজাদ। 

একটি সামান্য লন্ড্রি দোকানের মালিক কীভাবে পাজেরো জিপে চড়েন, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে কানাঘুষা। স্থানীয়রা জানান, সুমন ইসলাম একজন লন্ড্রি দোকানদার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তার পড়াশোনা। তবে তার ওঠাবসা অনেক বড়লোকের সঙ্গে। দোকানের পাশেই তার একটি অফিস আছে। সেখানেই বসে তিনি দালালির কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন। এই টাকার জন্য প্রায়ই ওই অফিসে লোকজন আসেন ও তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। 

সুমন যে বাড়িতে থাকেন এই বাসার একজন ভাড়াটিয়া খবরের কাগজকে বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সুমন। তার নিজের ভাইয়ের ছেলে সাব্বিরের কাছ থেকেও চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই টাকার জন্য সম্প্রতি এই বাড়িতে সুমন ও সাব্বিরের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এই বিষয়ে এলাকার লোকজনও জানেন। সে মূলত একজন বাটপার। এ সময় তার শাস্তিরও দাবি জানান তিনি। 

সুমনের গ্রামের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার ইসলামপুরে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাবার নাম সলিম উদ্দিন বিশ্বাস। তবে তাদের আগের পুরান বাড়ি পাবনা শহর থেকে বেশ ভেতরে। ইসলামপুরে তারা কয়েক বছর হলো বাড়ি করেছেন। তারা ৩ ভাই ৪ বোন। বাড়ির চারপাশে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়িতে দিনের বেলায় কোনো পুরুষ থাকেন না। সুমন ইসলামের ভাইদেরও এলাকার কেউ তেমন ভালো চেনেন না। বাড়ির আশপাশের কারও সঙ্গে তাদের তেমন কথাবার্তা ও চলাফেরা নেই। 

এই এলাকার চায়ের দোকানি বাবু খবরের কাগজকে বলেন, সুমন ইসলাম বলে কেউ নেই। তাকে সবাই মাহবুব বলে চেনেন। তিনি নাকি রাষ্ট্রপতির ওখানে চাকরি করেন। কয়েক মাস আগে তিনি একটি পাজেরো জিপ নিয়ে এসেছিলেন। 

ওই চায়ের দোকানি আরও জানান, বাড়িতে এলে দিনের বেলায় তিনি বের হন না। কারও সঙ্গে কথাও বলেন না। গ্রামের সবাই জানে এই বাড়ি রহস্যঘেরা। 
সুমনের বড় ভাই খবরের কাগজকে বলেন, সুমন বছরখানেক আগে পাজেরো গাড়ি নিয়ে একবার বাড়িতে এসেছিল। কয়েক দিন থেকে চলে যায়। সুমনের আয়ের উৎস জানতে চাইলে তিনি জানান, কী করে, আমি কিছু বলতে পারব না। পরিবার নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকে এটুকু জানি। 

চাকরির জন্য অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কি? এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আমি দিনমজুর মানুষ, রাত পোহালেই পেটের চিন্তা, অন্য চিন্তা করার সময় নেই। 

সুমন ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে কথা বলে খবরের কাগজের এ প্রতিবেদক। এ সময় তিনি নিজেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক দলের প্রধান সমম্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে বলে পরিচয় দেন।

পাজেরো জিপের বিষয়ে সুমন খবরের কাগজকে বলেন, গাড়িটি তিনি ৮ মাস আগে ফাতেমাতুজ জোহরার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তবে জোহরার ভোটার আইডি না থাকায় এখনো গাড়িটি তিনি নিজের নামে বিআরটিতে নিবন্ধন করতে পারেননি। জিপে সরকারি স্টিকার লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়িতে স্টিকার লাগানো আমার ভুল হয়েছে। এখন স্টিকার খুলে ফেলেছি। তবে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। 

সুমন আরও জানান, নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ বাহার নামে চার জনের শেয়ারে তার একটি গার্মেন্ট আছে। তার এসব ব্যবসা ৫০ লাখ টাকার বেশি হবে না। আগে রাজনীতি করলেও এখন ছেড়ে দিয়েছেন। এখন গার্মেন্ট ব্যবসা, লন্ড্রির দোকান ও ছেলের চাকরির আয় দিয়ে সংসার চলছে।

সুমন সম্পর্কে জানতে ফোনে কথা হয় শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, তার চাচাতো ভাই সেলিম বিশ্বাস। সুমন নামে তার কোনো ভাই নেই। তিনি বলেন, সেলিম বিশ্বাসের বাড়ি পাবনার কুঠিপাড়ায়। তিনি ২০১৭ সালে মারা গেছেন। সেলিম বিশ্বাসের দুই মেয়ে। সোহানা বিশ্বাস ব্যাংকে চাকরি করেন এবং শারমিন বিশ্বাস গৃহিণী। এ ছাড়া একপুত্র আশরাফুল বিশ্বাস পাবনা কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী।

সুমন ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া জিগাতলার ১/২ সি, মনেশ্বর রোডে পাবনা অটো ড্রাই ক্লিনার্স নামে একটি লন্ড্রির দোকান আছে তার। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তামিম ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে সাকিল এখনো ছাত্র। সুমন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে তথ্য রয়েছে। তবে খবরের কাগজের কাছে সুমন দাবি করেন, রাজধানীর জিগাতলার মিতালী রোডের একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন তিনি।

ইলিশের দাম বাড়ায় দুষ্ট আড়তদার চক্র

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২০ পিএম
ইলিশের দাম বাড়ায় দুষ্ট আড়তদার চক্র
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মৌসুম হোক বা না হোক, ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। খুচরা পর্যায়ে এই ইলিশ আসছে সাত থেকে আটবার হাতবদল হয়ে। ফলে প্রতিবারই বাড়ছে দাম। অনেক ক্ষেত্রে এক স্থানেই তিন থেকে চারবার দাম বাড়ছে, যার পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করছেন আড়তদাররা। তাদের কারসাজির কারণেই জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত খুচরা পর্যায়েও দামের পার্থক্য নেই বললেই চলে। তাই ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে আড়তদারদের দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউছার দিদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইলিশ বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে যায়। জেলে থেকে আড়তদার, আড়তদার থেকে আড়তদার- এ বিষয়টি আছে। মার্কেট পলিসি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। মাছ যদি না থাকত, তাহলে কথা ছিল। শুধু একটি মাছ থাকলে বলা যেত, চাহিদা বেশি জোগান কম এ জন্য দাম বেশি। এখন কিন্তু মাছ কমবেশি আছে। তার পরও দাম বাড়ছে।’

দুষ্টচক্রের কারণে যেভাবে বাড়ছে দাম

রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন সাকিবুল আলম। ইলিশের মৌসুমে পুরোদমে এই মাছ বিক্রি করেন। জানালেন, ঢাকা, চাঁদপুর, ভোলা ও বরিশালে আড়তদাররা ইলিশের দাম কীভাবে বাড়ান। নদী থেকে যখন জেলেরা ঘাটে ইলিশ নিয়ে আসেন, তখন ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ মাছ কেনে। আরেক গ্রুপ সেটা কিনে একটি আড়তে নিয়ে যায়। সেই আড়ত থেকে আরেক আড়তে মাছ বিক্রি করা হয়। এভাবে তিন থেকে চারবার মাছ হাতবদল হয়। তারপর সেসব মাছ ঢাকায় আসে। ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, চকবাজার (সোয়ারী ঘাট), নিউ মার্কেট আড়তে আবার তিন থেকে চারবার বিক্রি হয়। সেখানে একটা দাম ধরে সেগুলো নিলামে তোলা হয়। যে বেশি দাম দেবেন, সেই কিনবেন। তারপর সেখান থেকে পাইকারি, তারপর খুচরা পর্যায়ে যায়। এই পর্যন্ত আসতে আসতে যে দাম হয়, সে অনুযায়ী যে জেলে তেল পুড়িয়ে প্রথমে মাছ ধরেছেন তিনি খুব কম দাম পান। এই ইলিশ সিন্ডিকেটে সবচেয়ে লাভবান আড়তদাররা।

এই সিন্ডিকেট কীভাবে বন্ধ করা যাবে জানতে চাইলে এই মাছ ব্যবসায়ী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আড়তদার ও ঘাটে যারা বসেন, তাদের আগে ধরতে হবে। যারা বেশি বেশি মাছ কিনছেন, আবার সাইজ অনুযায়ী আলাদা করে দাম বাড়াচ্ছেন তাদের ধরতে হবে। এই সিন্ডিকেটটা ভেঙে দিতে পারলে দাম অনেকটা কমে যাবে।’

অবৈধ পথে ভারতে মাছ পাঠানো বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন আরেক ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকার যে পরিমাণ মাছ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে তার থেকে আরও বেশি মাছ ভারতে যাচ্ছে। যেসব গাড়িতে করে ভারতীয় মাছ আসে, বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীতে। সেসব গাড়ি খালি যায় না। এখানকার ব্যবসায়ীরা ইলিশ মাছ কিনে স্টক করে রাখেন। তারপর অবৈধভাবে মাছ পাঠান। গতবার থেকে এবার বেশি মাছ জেলের জালে ধরা পড়েছে, সাইজও বড়। কিন্তু বাজারে মাছ কম। তাহলে এত মাছ যায় কোথায়?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীম আনোয়ার বেশ কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় গ্রাহকদের কাছে ইলিশ সরবরাহ করেছিলেন অনলাইনের মাধ্যমে। ইলিশের দাম বাড়ানোর চক্র সম্পর্কে খবরের কাগজকে বলেন, ‘জেলে থেকে কম দামে ইলিশ কেনা হয়। এখানে দাদনের একটা বড় সম্পর্ক আছে। বড় বিনিয়োগকারীরা আড়তদারদের মাধ্যমে জেলেদের দাদন দেন। ফলে জেলেরা কম দামে তাদের কাছে ইলিশ বিক্রি করতে বাধ্য হন। আর নিলামের মাধ্যমে আড়তদাররা ইলিশের দাম বাড়ান। প্রতিবার হাত বদলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে যায়।’ 

আড়তদারদের কারসাজির কারণে মাছ বিক্রি করে লাভ কম হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পলাশী মার্কেটে বিক্রির জন্য সাইদুল নামের ব্যবসায়ী গতকাল ৮৩ হাজার টাকার ইলিশ মাছ কিনেছেন চকবাজার (সোয়ারী ঘাট) আড়ত থেকে। সাইজভেদে কেজিপ্রতি ২ হাজার ১৫০ টাকা, ২ হাজার ২১৫ টাকা ও ২ হাজার ৩৫০ টাকায় এসব মাছ কিনেছেন। কেনার সময় আড়তদারকে কেজিতে ২০ টাকা, যারা মেপে দেন তাকে ৫০ টাকা, পাহারাদার ও বরফের জন্য ১ হাজার টাকা, তারপর ভ্যান ভাড়া ৩০০ টাকা দিতে হয়। 

সাইদুল বলেন, ‘সব হিসাব করলে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা আমরা লাভ করতে পারি।’ 

ভোলার সদর উপজেলার মেঘনাপাড়ের বশির মাঝি বলেন, ‘শুনেছি বাজারে ইলিশের দাম বাড়ছে। কিন্তু বাড়তি দামে আমরা আড়তে ইলিশ বিক্রি করতে পারি না। কারণ আড়তদারদের থেকে দাদন নিয়ে জিম্মি হয়ে আছি। আবার যত টাকার মাছ বিক্রি করি তার ওপর ১০ ভাগ কমিশন কেটে রাখেন আড়তদার, সব লাভ আড়তদারদের। আমরা জেলেরা সারা বছর দেনার ওপরেই থাকি।’

শেষ সময়ে দাম বাড়তি ইলিশের

১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় দাম বাড়তি বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের বৈশাখী মৎস্য বিতানের স্বত্বাধিকারী শরিফ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে দাম বেশি কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা। এক কেজির ওপর ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাজারে দাম দেখে লাভ নেই। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সেখানে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পাবর।’

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রাজু বলেন, ‘এবার মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। ১৩ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা ও বিক্রি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই শেষ সময়ে দামও একটু বাড়তি। কিছু করতে চাইলে বরিশাল, চাঁদপুর, পাথরঘাটায় যেতে হবে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে কমবে না দাম। তারা কমালে ভোক্তারা কম দামে খেতে পারবেন।’ 

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি মঈনুল ইসলাম সবুজ জানান, বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের পাইকারি বাজারে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজন সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। এ ছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে তার দাম ২ হাজার টাকার ওপরে। এলসি সাইজ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরা বাজারে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আধা কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া সবচেয়ে ছোট সাইজের জাটকাও বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। 

বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘সারা বছরই ইলিশের দাম চড়া ছিল। কয়েক দিন ধরে বরিশাল মোকামে ইলিশের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাজারেও ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’

পোর্ট রোড বাজারে আসা সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা মিলছে না। জাটকাও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। ফলে আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের পক্ষে তা কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই ইলিশের চিন্তা বাদ দিয়েছি।’ 

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জহির সিকদার বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই ইলিশের সরবরাহ অনেকটা কম। কিন্তু বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। যার কারণে দাম অনেক বেশি।’ 

ভোলায় পূজা ঘিরে দাম বাড়ায় ক্ষোভ

ভোলা প্রতিনিধি ইমতিয়াজুর রহমান জানান, পূজাকে ঘিরে ইলিশের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি সাইজের ইলিশের সরবরাহ তেমন একটা নেই। আর এতেই কৃত্রিম প্রভাব পড়ছে ছোট সাইজের ইলিশের দামের ওপর, হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। 

খুচরা বাজারে ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮০০ টাকা কেজি দরে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকার ওপর, আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া পরিমাণে কম হলেও এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা, যা গত কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে আকারভেদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকারও বেশি। 

একই বাজারে মাছ কিনতে আসা আদিল হোসেন বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করার ফলে ইলিশের বাজারে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। বিক্রেতারা সব সময়ই সুযোগসন্ধানী। তাদের অজুহাতের শেষ নেই। ভারতে সরকারিভাবে ইলিশ মাছ রপ্তানির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। সব মিলিয়ে ইলিশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একটা তামাশা শুরু করেছেন।’ 

স্কুলশিক্ষক রত্নেশ্বর হালদার বলেন, ‘মেয়ের আবদার রাখতে সকাল সকাল ঘাটে গিয়েছিলাম। বড় ইলিশ এলেও পাইকারদের দর-কষাকষিতে কিনতে পারিনি। এক কেজি ওজনের ইলিশের দর উঠেছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। এখন খুচরা বাজার থেকে চারটি ছোট ইলিশ কিনেছি তাও ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। কী করব, কষ্ট হলেও মেয়ের আবদার তো রাখতে হবে। ইলিশের জেলায় থেকেও আমরা ছেলেমেয়ের ছোট ছোট আবদার রাখতে পারি না।’

কলেজছাত্র সুজনকে নিতে হবে বিদেশে, নেই অর্থ

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
কলেজছাত্র সুজনকে নিতে হবে বিদেশে, নেই অর্থ
লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র সুজন। ছবি: খবরের কাগজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিতে আহত হন লক্ষ্মীপুরের কলেজছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন (১৯)। ঢাকায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৮টি গুলি নিয়ে এখন নিজবাড়িতে  যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। সুজনকে বাঁচাতে হলে দেশের বাইরে নিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি বের করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। না হলে অকালেই ঝরে যেতে পারে তার প্রাণ। 

যেখানে অর্থের অভাবে পরিবারের আহারই জোটে না, সেখানে সুজনকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারছে না তার হতদরিদ্র পরিবার। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে ২টি গুলি বের করা হলেও এখনো গলা, ঘাড়, মেরুদণ্ড, ফুসফুস ও লিভারের খুব কাছাকাছি স্থানে আরও ৮টি গুলি রয়ে গেছে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে গুলিগুলো বের করলে তার জীবন বাঁচানো সম্ভব। হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিন ধরে নিজবাড়িতে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন সুজন।

সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতদরিদ্র শাহীন কাদিরের বড় ছেলে সুজন। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখের আহার যোগাতে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি অধ্যয়নরত ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তার ছোট দুই ভাই সোহান হোসেন ও শিহাব হোসেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহানও বাবার মতো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। অপর ভাই শিহাব ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি খালেদ মাহমুদ সুজন। 

গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরও ছিল উত্তাল। সেদিন সকালে শহরের মাদাম ব্রিজ ও বাগবাড়িতে ছাত্রদের মিছিলে হামলা করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ খবরে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ছাত্র-জনতা। দুপুরের দিকে শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সহপাঠীদের সঙ্গে অংশ নেন সুজন।

এ সময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগ সভাপতি একেএম সালাউদ্দিন টিপুর বাড়ির ছাদ থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে খালেদ মাহমুদ সুজনসহ তিন শর বেশি শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন।

এ সময় মারা যান চার শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধ সুজনকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অপারেশনের মাধ্যমে তার শরীর থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। এখনো তার ঘাড়-গলায় ও ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৮টি গুলি রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার অসহায় পরিবার।

গত বুধবার বিকেলে চররুহিতার তাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কফিল উদ্দিন ও আজাদ চৌধুরী নামে দুইজনের কাঁধে ভর দিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন গুলিবিদ্ধ সুজন। কোনোভাবেই সুজন দাঁড়াতে পারছেন না। পাশে তার বাবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শাহীন কাদির ও ছোট ভাই সোহান দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দুজনকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

এ সময়, গুলিবিদ্ধ সুজন সেই দিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ৪ আগস্ট দুপুরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১০টি গুলি লাগে। টাকার অভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছে না পরিবার। এখনো সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি । স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে সরকারসহ সবার সহযোগিতা চান তিনি। 

সুজন বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেটাই বড় প্রাপ্তি। যতই কষ্ট বা যন্ত্রণা হোক, মনে প্রশান্তি রয়েছে। হাসিনার পতনে সব কষ্ট ভুলে গেছি। এ সময় তার স্বজন কফিল উদ্দিন ও আজাদ চৌধুরী বলেন, অসহায় এই পরিবারটির খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সুজন। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন একটি চাকরি করে পরিবার ও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখন কীভাবে সামনের দিনগুলো যাবে, সে চিন্তায় পরিবার। অভাবের কারণে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সমাজের বিত্তবানরা তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন স্বজনরা। 

সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, খালেদ মাহমুদ সুজনের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। প্রতিটি গুলি খুব ক্রিটিক্যাল স্থানে রয়েছে। গুলির কারণে শরীরে ইনফেকশন দেখা দেবে। তাই বিদেশেই উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে গুলি বের করলে তার জীবন বাঁচানো সম্ভব। 

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা ছাড় পাবে না। তাদের ধরতে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। 

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে হতাহত শিক্ষার্থীদের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে, থাকবে। পাশাপাশি যারা তাদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। উদ্ধার করা হবে অবৈধ সব অস্ত্র। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
বাতাঁবো চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হোসেন

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের (বাতাঁবো) চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হোসেন গত বছরের জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর মাত্র এক বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময়ে অর্থের বিনিময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বিচারে মোট ৮৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন- এমন অভিযোগও করেছেন বাতাঁবোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

মাহমুদ হোসেনের বিরুদ্ধে আর যেসব অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনেছেন, সেগুলো হলো অনুমোদিত প্রাপ্য সরকারি সুবিধা-সম্পর্কিত বিধি লঙ্ঘন করে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের মোট দুটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৫০৪২, গ-৪৩৮৫৬৫ ও গ-৪৭-৭৫২৩) ও দুজন গাড়িচালককে (হানিফ ও লিপু রেমা) নিজের দাপ্তরিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে আসছেন। সরকারি দুটি গাড়ি ছাড়াও একটি ব্যক্তিগত গাড়ির পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় তিনি বাতাঁবো থেকে নিয়ে থাকেন। এখন তিনি বাতাঁবোর আওতাধীন নরসিংদী জেলায় পরিচালিত বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীনে দিয়ে দিতে অপচেষ্টা করছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মাহমুদ হোসেন ব্যক্তিগত স্বার্থে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাতাঁবোতে তাকে নিয়োগকারী সরকারের পতন হলেও কমেনি তার দম্ভ ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা। মাহমুদ হোসেন সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর নরসিংদীতে তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এক সভায় সবার সামনে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে তেড়ে ওঠেন। এ সময় ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন খোদ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও সচিব মো. আব্দুর রউফ।

এসব অভিযোগের পাহাড় জমা হওয়ার প্রেক্ষাপটে মাহমুদ হোসেনের অপসারণ দাবিতে বাতাঁবোর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষকরা ঢাকা ও নরসিংদীতে গত মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো পৃথক পৃথক বিক্ষোভ করেছেন। 

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে মো. মাহমুদ হোসেনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা জানান, তিনি ৫ অক্টোবরের পর অফিসে আসছেন না। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিস থেকে জানানো হয়, মন্ত্রণালয় থেকে তার খোঁজ করা হচ্ছে; কিন্তু ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ গতকাল বুধবার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাতাঁবো কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদলকে আমি গত মঙ্গলবার ডেকেছিলাম। মাহমুদ হোসেন সাহেবের পদ ছোট হলেও তিনি আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তা। তার চাকরির মেয়াদ আছে আর অল্প কিছুদিন। এ বিবেচনায় আমি বাতাঁবো কর্মকর্তাদের দুটি অপশন দিয়েছি। তার একটি হলো মিলেমিশে মাহমুদ হোসেনকে নিয়ে থাকা। অন্যটি হলো সেটা করতে না পারলে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা বা সরিয়ে নিয়ে আসা। কোনটি তারা চান তা আমাকে জানাতে বলেছি।’

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হোসেনকে বাতাঁবোর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে চাকরির শেষ বছরে এসে তিনি এই নিয়োগ পান। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে বাতাঁবো চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বাতাঁবোর মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত অন্যদের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের প্রস্তাব উঠলে মাহমুদ হোসেন দম্ভ দেখিয়ে একতরফাভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

বাতাঁবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, মাহমুদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সরকার সংরক্ষিত আমদানির কোটায় নারায়ণগঞ্জের একটি বিশেষ ব্যবসায়ী গ্রুপকে অনৈতিক সুবিধা দিতে শুরু করেন। এতে বাতাঁবো অনুমোদিত কেমিক্যাল ও কাঁচামাল আমদানিতে প্রাপ্য সুবিধা থেকে সাধারণ তাঁতিরা বঞ্চিত হতে থাকেন। দিনের পর দিন মাহমুদ হোসেন ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে তার দপ্তর কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। দপ্তরের রুটিন বা নিয়মিত কাজ সম্পন্ন করতে তার দপ্তর কক্ষে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যেত না। প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করতে পারতেন না। তিনি নিজে এককভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে অফিস ত্যাগ করতেন। তিনি যোগদানের পরই বাতাঁবোতে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেন। এ নিয়োগে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া তিনি বাতাঁবোর দুটি গাড়ি নিজের প্রয়োজন দেখিয়ে একটি চালকসহ বাসায় সার্বক্ষণিক পরিবারের সেবায় নিযুক্ত করেছেন। এর বাইরেও তিনি আরও একটি ব্যক্তিগত গাড়ির খরচ অফিস থেকে নেন। 

এখন মাহমুদ হোসেনকে অপসারণের দাবিতে বাতাঁবোর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলন করছেন। গত মঙ্গলবারও তারা প্রতিষ্ঠানটির কারওয়ান বাজার অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। ওই সমাবেশ থেকে মাহমুদ হোসেনকে অপসারণে তিন দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তার পরও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বাতাঁবোর আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, মাহমুদ হোসেন গোপনে তাদের ব্যক্তিগত ফাইলে থাকা তথ্যাদি নিয়ে গেছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিচ্ছেন। 

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ বলেছেন, ‘আমি কোনো আলটিমেটাম বা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি পাইনি। নরসিংদীতে যা হয়েছিল তা একটি তুচ্ছ ঘটনা। তিনি আরও জানান, গত ৫ অক্টোবর নরসিংদীতে অবস্থিত তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এখানকার সমস্যা আমরা জেনেছি। উপদেষ্টাও বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জেনেছেন। এখন উপদেষ্টার পরামর্শক্রমেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্যের জন্য উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে গতকাল বিকেলে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম বন্দর চলত লতিফের ইশারায়

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দর চলত লতিফের ইশারায়
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম এ লতিফ

চট্টগ্রাম-১১ আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন এম এ লতিফ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তার কথাই ছিল শেষ কথা, এর বাইরে কেউ কিছুই করতে পারতেন না। জমি দখলেও তিনি ছিলেন বেপরোয়া।

জানা গেছে, দেশের লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস, ইপিজেড, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম চেম্বার, তেল শোধনাগারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার ওপর কথা বলতে পারতেন না। তিনি যা চাইতেন তাই করতে হতো এসব সংস্থাকে। বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি হয়ে বিগত ১৫ বছর স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন সুযোগসন্ধানী এই ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। এর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত লতিফ এখন একাধিক মামলায় কারাগারে।

চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্র 
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছিলেন এম এ লতিফ। একক আধিপত্যে তার পরিবারের সবাইকে চেম্বারের সদস্য করেছেন। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ ছিল তার কাছে। চেম্বারে বছরের পর বছর তার ইশারায় ভোটবিহীন কমিটি তৈরি হতো। যেখানে স্থান পেতেন কেবল তার ঘনিষ্ঠরা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে চেম্বারকে শতভাগ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন লতিফ। সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআই সভাপতি হলে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ডিঙিয়ে লতিফ তার ছেলে ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি ও ওমর মুক্তাদিরকে ভোট ছাড়াই পরিচালক নির্বাচিত করেন। 

লতিফের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে সর্বশেষ কমিটির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন সৈয়দ এম তানভীরসহ একাধিক পরিচালক। গত দেড় দশকে চেম্বারের যেকোনো ইস্যুতে কেউ লতিফের কথার বাইরে গেলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হতো। চেম্বারের অর্থায়নে নির্মিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণ, ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া, বাণিজ্যমেলার স্টল বরাদ্দ দেওয়া সবকিছুই ছিল এম এ লতিফ ও তার ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নুরুল হক বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের নিজের অল্পবয়সী ছেলেকে সভাপতি বানিয়েছেন এম এ লতিফ। কেউ তার ভয়ে কথা বলার সাহস করত না। ভোট ছাড়া টানা পাঁচটি কমিটি হয়েছে। তিনি যেভাবে চাইতেন সেভাবেই সবকিছু হতো। এর বাইরে কিছু হওয়ার সুযোগ ছিল না।’

বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসাবাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার 
চট্টগ্রাম বন্দরে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া, যন্ত্রপাতি সরবরাহ, নিয়োগ, বদলিতে সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ ছিল লতিফের বিরুদ্ধে। বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে তার একটি প্রতিষ্ঠানও নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া বন্দর ও কর্ণফুলী নদীতে লতিফের ছত্রছায়ায় অবৈধ মালামাল, চোরাই তেলসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন তার অনুসারীরা। 

চট্টগ্রাম বন্দরের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা রোটারিয়ান মো. ইলিয়াস বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন খেতেন এম এ লতিফ। নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া কাউকে বন্দরে ঠিকাদারি কাজ করতে দিতেন না। নিজের লোকজনকে কাজ পাইয়ে দিতে তিনি অন্য ঠিকাদারদের নানাভাবে হয়রানি করতেন।’

লতিফের ঘনিষ্ঠ অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান চৌধুরী জি এম ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন স্ক্র্যাপ কাঠ ও মালামাল বের করতেন। এসব মালামাল বের করার আড়ালে বন্দরের কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় অবৈধ ঘোষণায় আমদানি হওয়া বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ পণ্য ট্রাকে করে পাচার করত একটি সিন্ডিকেট। ২০১৪ সাল থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২৫-৩০টি ট্রাকে করে মালামাল বের করে আমদানিকারকের দেওয়া নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিত এই সিন্ডিকেটটি। এসব ট্রাকে হাজার কোটি টাকার পণ্য পাচার হলেও বোঝার সুযোগ ছিল না। এই সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন লতিফের দুই ভাতিজা সোহেল ও দস্তগীর। এদের সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখভাল করতেন নগর যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাজীবসহ আরও কয়েকজন। 

লতিফের ছত্রছায়ায় কর্ণফুলী নদীতে চোরাই তেলের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন শুক্কুর নামের এক চোরাই তেলের কারবারি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনার জন্য আমদানি করা তেল বোঝাই ট্যাংকারগুলো থেকে তেল চুরি করে সরিয়ে নিত এই সিন্ডিকেট। শুক্কুর একসময় কর্ণফুলী নদীতে মাঝি হিসেবে কাজ করলেও চোরাই তেলের বাণিজ্য করে কোটিপতি বনে যান। এই অবৈধ ব্যবসা থেকে শুক্কুর লতিফকে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি কমিশন দিত বলে দাবি করেছে একটি সূত্র।

জমি দখলে ছিলেন বেপরোয়া 
লতিফের প্রভাব কাজে লাগান তার অনুসারী ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ কলেজের সাবেক ভিপি জাহেদ হোসেন খোকন ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর। এ দুজন পতেঙ্গা এলাকার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পেছনে বন্দরের অন্তত ৪ একর জায়গা গত কয়েক বছর ধরে দখলে রেখেছিলেন। কর্ণফুলী নদী থেকে সংগ্রহ করা চোরাই তেল সেখানে নিয়ে মজুত করে পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। এখান থেকেও প্রতি মাসে লতিফ ১০ লাখ টাকার বেশি কমিশন পেতেন বলে দাবি করেছে আরেকটি সূত্র। 

এ ছাড়া ইপিজেড গেট থেকে কলসীর দিঘিরপাড় পর্যন্ত রেল বিটের পাশের বেশ কিছু খাস জায়গা দখল করে ২ শতাধিক অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিত আরেকটি সিন্ডিকেট। যার নেতৃত্বে ছিলেন লতিফের ঘনিষ্ঠ অনুসারী যুবলীগ নেতা হাসানুজ্জামান সোহেল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকের আহমেদ খোকন, আজিজ, রানাসহ কয়েকজন। 

এ ছাড়া ২০১৬ সালে মুন্সীগঞ্জের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় বেশ কিছু সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে গ্লোব শিপইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ আছে লতিফ পরিবারের বিরুদ্ধে।

হলফনামায় সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৫ বছর আগে ২০০৮ সালে লতিফের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মাত্র ৩০ লাখ টাকার। ২০২৪ সালে এম এ লতিফের বার্ষিক আয় ৭৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যদিও ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৮২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। 

২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। ৫ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিগত ১৫ বছরের ব্যবধানে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন। 

এম এ লতিফ আটক হন যেভাবে 
গত ৯ আগস্ট শুক্রবার পূর্ব মাদারবাড়ির নসু মালুম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এম এ লতিফ। এ সময় তাকে ঘিরে ধরেন স্থানীয়রা। অবস্থা বেগতিক দেখে মসজিদের কাছেই ভাগিনা আদনানুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় আশ্রয় নেন তিনি। এরপর স্থানীয়রা ওই বাড়ি ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গাড়িতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা এখনো ঘুষ খান সেই সাব-রেজিস্ট্রার

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪২ এএম
এখনো ঘুষ খান সেই সাব-রেজিস্ট্রার
রায়হান হাবিব

জুলাই বিপ্লবের পর সারা দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং সংস্কার কার্যক্রম চললেও একচুলও বদলাননি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাব-রেজিস্ট্রার। আগের মতোই তিনি ঘুষ নীতিতে অটল আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে দলিল লেখকরা বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার ভালো হননি। উল্টো বাড়িয়েছেন ঘুষের মাত্রা।’ 

এর আগে গত জুলাইয়ে তার বিরুদ্ধে সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে খোদ তার দপ্তরে কর্মরত দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে। এমনকি ঝাড়ুদারকে দিয়ে ঘুষের লেনদেন করানোর অভিযোগও আসে নানা মহল থেকে। এ নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব ও তার দপ্তরের কোটিপতি ঝাড়ুদারের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে ফলাও করে খবর প্রকাশ করা হয়। 

এবার হারুন উর রশিদ নামে এক দলিল লেখক (নিবন্ধিত) তার বিরুদ্ধে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ সামনে আনেন।

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, “আমি গত সোমবার ওয়ারিশ সূত্রের একটি জমির দলিল উপস্থাপন করলে আমাকে খাস কামরায় ডেকে পাঠান সাব-রেজিস্ট্রার। এরপর তিনি আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। না হলে আমার কাজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আমি উত্তরে বলেছি, স্বাধীন দেশে কোনো ঘুষ নয়। উনি বললেন, ‘এটা অফিস খরচ।’ আমি বললাম, কিসের অফিস খরচ? তিনি বললেন, ‘তুমি একটু বেশি বোঝো হারুন, চালাকি করলে আমি তোমার লাইসেন্স বাতিল করে দেব।’ আমি বললাম, কেন স্যার? আপনি আমার লাইসেন্স বাতিল করবেন কেন? আমি তো ন্যায় কথা বলেছি। তিনি আমাকে ধমকের সুরে বললেন, ‘বেশি নীতি মারাইয়ো না, বের হও আমার রুম থেকে।’” 

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপজেলার দলিল লেখকরা। এ পরিস্থিতিতে দলিল লেখক সমিতিতে হারুন উর রশিদকে ডেকে পাঠানো হয়। এ ঘটনার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সমিতির নেতারা।

অন্যদিকে এ ঘটনা হারুন উর রশিদ কয়েকজন সাংবাদিককে জানান। এরপর ফারহান সিদ্দিক ও আব্দুল মামুন নামে দুই সাংবাদিক সংবাদ করতে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যলয়ে ছুটে যান। 

ফারহান সিদ্দিক বলেন, “আমি একটি জাতীয় দৈনিক কাজ করি। মুঠোফোনে খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে ছুটে যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী মামুন। অফিসে গিয়ে জানতে পারলাম, সাব-রেজিস্ট্রার তার খাস কামরায় আছেন। সেই কামরায় গিয়ে আমরা তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি আমাদের ওপর চড়াও হন এবং রাগান্বিত স্বরে বলেন, ‘গেট আউট।’’’

এ বিষয়ে সাংবাদিক আব্দুল মামুন বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক, অপেশাদার আচরণ করেছেন। তার ব্যবহারে আমরা হতভম্ব হয়েছিলাম।’ 

সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের ঘুষ দাবি ও এমন উগ্র আচরণ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে এর আগেও চাহিদামতো ঘুষ আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার নিজ অফিসের বয়োবৃদ্ধ কর্মচারীর ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ আছে। চাকরি হারানোর ভয়ে ওই কর্মচারী মুখ খোলেননি। 

এর আগে গত জুলাইয়ে তার ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ডের দলিল লেখকরা ফুঁসে উঠেছিলেন। সে সময় নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (আইজিআর), জেলা রেজিস্ট্রার ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তার ঘুষ-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে আইজিআরের নির্দেশে জেলা রেজিস্ট্রারের হস্তক্ষেপে রায়হান হাবিব আর ঘুষ গ্রহণ না করার অঙ্গীকার করলে তাকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর সারা দেশে দুর্নীতিবাজ, অসৎ কর্মকর্তারা শোধরালেও ভালো হননি সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব। নানা অজুহাতে তিনি ঘুষ লেনদেন অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ আসছে। এ নিয়ে গত ৫ জুলাই দৈনিক খবরের কাগজে সীতাকুণ্ডে ‘সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কোটিপতি ঝাড়ুদার’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এতে উঠে আসে এয়াকুব নামে এক চা দোকানের কর্মচারী সেখানে ঝাড়ুদারের অস্থায়ী চাকরি নিয়ে ঘুষ লেনদেন শুরু করেন। তার সঙ্গে বনিবনা না হলে রায়হান হাবিব কোনো দলিল সম্পাদন করেন না। কয়েক বছরের ব্যবধানে চা দোকানের কর্মচারী থেকে কোটিপতি হয়ে যান এয়াকুব। তার বিরুদ্ধে বাড়ি, গাড়ি, জমিজমাসহ অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এখন সীতাকুণ্ডবাসীর মুখে মুখে। পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর কিছুদিন এয়াকুবকে বাইরে রাখেন রায়হান হাবিব। কিন্তু সম্প্রতি আবারও তাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পুনর্বাসন করার অভিযোগে এসেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দলিল লেখক জানান, সাব-রেজিস্ট্রার আইন দেখিয়ে ‘ওয়ারিশ সূত্রের দলিলগুলো সম্পাদন করা যাবে না’ এ কথাটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অথচ চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার সেই দলিল আবার নিবন্ধন করা যায়। গত এপ্রিলে রায়হান হাবিব যোগদানের পর থেকে এমন অসংখ্য দলিল সম্পাদিত হয়েছে তার হাত ধরেই। মূলত, তিনি ওই কথা বলে ঘুষের অঙ্ক বাড়ান। এ ছাড়া রায়হান হাবিব সব সময় বিসিএস কর্মকর্তা বলে ধমকান। যেন তার সঙ্গে সাবধানে কথা বলি। 

সীতাকুণ্ড দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত জুলাইয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের অনুরোধে আমরা কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছিলাম। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব ঘুষ নেওয়া বন্ধ করেননি। তিনি দলিল লেখকদের সঙ্গে অশালীন আচরণও থামাননি। তিনি নিজেকে আইন মন্ত্রণালয়ের অনেক বড় কর্তা মনে করেন। তার অপমানজনক আচরণ দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ কেউই তার আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে বাঁচতে পারছেন না। আমরা অবিলম্বে রায়হান হাবিবের অপসারণ দাবি করছি।’

নাদিয়া আক্তার নামে একজন নারী বলেন, ‘গত সোমবার আমি স্বচক্ষে দেখালাম সাব-রেজিস্ট্রার কীভাবে সাংবাদিক ও দলিল লেখকের সঙ্গে আচরণ করলেন। সেদিন তার আচরণ ছিল মারমুখী। তার অফিসের লোকেরাও চেষ্টা করে তাকে উগ্র আচরণ থেকে বিরত রাখতে পারেননি।’ 

এসব বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব বলেন, “ঘুষ লেনদেন কিংবা দাবির বিষয়টি সত্য নয়। আর আমি কেন আচরণ খারাপ করব? বরং দলিল লেখক হারুন অর রশিদ আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এ ছাড়া সাংবাদিকদের ‘গেট আউট’ বলে বের করে দিয়েছি, কারণ ওই সাংবাদিকরা হারুনের পক্ষে কথা বলছিলেন।”

এদিকে জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে তদন্ত না করে এসব বিষয়ে কথা বলতে পারব না।’ 

রায়হান হাবিব এর আগে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ দুই কর্মস্থলেও তার বিরুদ্ধে ওঠে ঘুষের অভিযোগ। তার মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ জুন রাজারহাট উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার থাকাকালে সেখানকার নির্বাহী অফিসার বরাবর রায়হান হাবিবের বিরুদ্ধে ভুয়া দলিল সম্পাদনের লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া ধোবাউড়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অপসারণ দাবি করেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।