ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যু

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যু
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এ ছাড়া চলতি বছরে গত ৯ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়মতো এডিস মশা নিধনে এবার কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না। তাই চলতি অক্টোবরেই সংক্রমণ আরও বেড়ে সবচেয়ে ভয়ংকর হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষাকারীর তুলনায় রোগী কম ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের হার ছিল ১৪ শতাংশ। মাসের শেষ সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে, তা বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সেপ্টেম্বরের প্রথম সাত দিনে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ১১ জন। আর শেষ সাত দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩০ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ড. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, সাধারণত ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়ায় বর্ষাকালে। কারণ এ সময় এডিস মশার বিস্তার ঘটে। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এমন চিত্রই ছিল। আগস্টের পর কমে আসত আক্রান্তের হার। কিন্তু করোনাকালে ২০২১ সাল থেকে সেই সাইকেলে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় অক্টোবর ও নভেম্বরে। এবারও সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে সেপ্টেম্বরে। কাজেই এ মাসেও (অক্টোবর) ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি বেশি বলে মনে করছেন তিনি। কারণ গত মাসে ৮০ জনের মৃত্যু ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ছিল। শেষ সপ্তাহে পরপর দুই দিন সর্বোচ্চ ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ফলে জনমনে ডেঙ্গুভীতি ছড়িয়েছে। 

এবার অসময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। কিন্তু এবার জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। যদিও আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে মশক নিধনসংক্রান্ত সব কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। বন্ধ হয়ে যায় তাদের সব কার্যক্রম। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর মেয়র ও কাউন্সিলরদের ঢালাও অপসারণ করা হয়। ফলে জনপ্রতিনিধির অভাবে মশক নিধন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে এবং সংশ্লিষ্টদের নজরের বাইরে চলে যায়।

গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রায়হান আহমেদ (২২) এক যুবক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এলাকায় তার বসবাস। কেন বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন- প্রশ্ন করতেই রায়হান বলেন, ‘শনিবার থেকে প্রচণ্ড জ্বর-বমি ও পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। বিষয়টি সিজনাল ভেবে বাসায়ই ওষুধ খাচ্ছিলাম তাতে জ্বর-বমি বন্ধ হলেও শরীর খুব দুর্বল থাকায় সন্দেহ করে আজ (মঙ্গলবার) হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক আমাকে জানান, আমি ভর্তি হতে পারি অথবা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি গেলেও অসুবিধা নেই। কারণ দুর্বলতা ছাড়া ডেঙ্গুর বাকি লক্ষণগুলো তিন দিনে নেই। তাই আমি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করেছেন ১১৯ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত ১২ জনের আর নতুন ভর্তি হয়েছেন ৮ জন রোগী। আর গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন ২ হাজার ৩৫২ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩২৮ জনের আর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৮ জন রোগী। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গু শনাক্তের পরও ওই হাসপাতালে এক-তৃতীয়াংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। কারণ বেসরকারি এসব হাসপাতালে শয্যাস্বল্পতা ও চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি। একজন রোগীর বেড ভাড়া ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ এক দিনে ব্যয় করতে হয় অন্তত ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। ফলে পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত কম ঝুকিঁপূর্ণ রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পথ্য সেবন করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন। চিকিৎসকরা জানান, সাধারণ লক্ষণগুলোর পাশাপাশি শক সিনড্রোম বেশি না থাকলে কোনো রোগীকে তারা ভর্তি নিতে চান না। কারণ হাসপাতালে শয্যাস্বল্পতা রয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গু রোগী কম বলেও জানান তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে করা এক গবেষণায়ও দেখা যায়, এবার সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় এডিস মশা বেড়ে গেছে ১৫ শতাংশের বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় জরিপ করে তিনি এমন তথ্য পেয়েছেন। এটি বাড়ার আরও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এ বছর বর্ষাপূর্ব জরিপ হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী জরিপ হয়নি। গত বছর অক্টোবরের মধ্যে এই দুই পর্যায়ের জরিপ সম্পন্ন হয়েছিল। গত বছর দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়। সে বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন। মারা গিয়েছিলেন ৩৯৬ জন।

এদিকে গত সোমবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টজনরা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয় নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা খুব একটা নেওয়া হয় না। এডিস মশার বিস্তার প্রতিরোধ করা হয় না। প্রতিবছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা তিন দফায় ডেঙ্গুর লার্ভা জরিপ করে তা স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়।

মন্ত্রিপাড়ায় সুনসান নীরবতা এক কাপড়ে পালিয়েছেন মন্ত্রীরা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০০ এএম
এক কাপড়ে পালিয়েছেন মন্ত্রীরা
মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ার বাড়িগুলোতে এখন সরকারি কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ নেই। ছবি : খবরের কাগজ

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মন্ত্রিপাড়ার বাসা থেকে এক কাপড়ে পালিয়েছেন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। পালানোর সময় তারা কোনো জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারেননি। অনেকে গাড়িতে না চড়ে হেঁটে ছদ্মবেশে বাসা থেকে বের হয়েছেন বলে সেখানকার কর্মচারীরা জানিয়েছেন। তারা জানান, অনেকে পরে লোক পাঠিয়ে কিছু জিনিসিপত্র নিয়ে গেছেন। তবে ব্যবহার্য কিছু জিনিস এখনো পড়ে আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গত সাড়ে ১৫ বছর সরগরম থাকলেও মিন্টো রোড, হেয়ার রোড ও বেইলি রোডের বাসাগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। ফাঁকা বাড়িগুলোতে এখন কর্মচারীরা বসবাস করছেন। ক্যারম খেলে তারা সময় পার করছেন। 

তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা, বিচারপতির বাসভবন, বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবন, জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনসহ গোটা মন্ত্রিপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে যমুনায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার দুপুরে মন্ত্রীদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খবরের কাগজকে জানান মন্ত্রীদের বাড়িগুলোর মালি, ক্লিনার ও পাম্প মেশিন দেখভালের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মচারী। তারা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই প্রধান বিচারপতি বাসভবন থেকে বের হয়ে যান। তার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ওই রাতেই বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যান হাসিনা সরকারের মন্ত্রীরা। 

মিন্টো রোডের ২৯ নম্বর বাড়িটি বরাদ্দ থাকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার জন্য। দ্বাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরের বসবাসের জন্য এ বাসভবনটির সংস্কারের কাজ শুরু হলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। বাড়িটি প্রায় দুই যুগ ধরে ফাঁকা। জি এম কাদের ওই বাসভবনে উঠতে চাইলেও সরকার পতনের কারণে তা ভেস্তে যায়। এই বাড়িতে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন কামাল আকরাম ও লাল মিয়া। তারা গণপূর্তের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তারা জানান, বাড়িটির মেরামতের কাজ শুরু হলেও সরকার পতনের পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ব্রিটিশ আমলে আড়াই একর জায়গার ওপর বাড়িটি (২৯ নম্বর বাড়ি) তৈরি করা হয় তখনকার সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একসময় বাড়িটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার জন্য নির্ধারণ করা হয়। বাড়িতে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উঠেছিলেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত তার নামে বাড়িটি বরাদ্দ ছিল। এরপর আর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা এই বাড়িতে ওঠেননি।

ওই বাড়িতে বসবাস করেন গণপূর্তের কর্মচারী কামাল। তিনি এই বাড়ির ভেতরে পরিবার নিয়ে একটি টিনশেড ঘরে থাকেন। তিনি খবরের কাগজকে জানান, সরকার পতনের দিন সব মন্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের অনেকেই খুব ভয় পেয়েছিলেন। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে মন্ত্রীরা পালানো শুরু করলেও বেশির ভাগ পালান রাতে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ থাকতেন মিন্টো রোডের ৩৪ নম্বর বাড়িতে। তিনি সরকার পতনের দিন সন্ধ্যার পর ৯ নম্বর রোড দিয়ে পালিয়ে যান। তিনিসহ অনেকেই তাকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন।

কামাল আরও জানান, মিন্টো রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িতে থাকতেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সরকার পতনের পর ওই দিন সন্ধ্যায় তিনিও পালিয়ে যান। এ ছাড়া আরও পালিয়ে যান সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। 

মিন্টো রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িতে থাকতেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী, ৩৪ নম্বর বাড়িতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, হেয়ার রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে সাবেক কৃষিমন্ত্রী, বেইলি রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ও এই রোডের ২৫ নম্বর বাড়িতে থাকতেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী।

মিন্টো রোডের ৩৩ নম্বর বাসায় কাজ করেন আসমা ও ৩৪ নম্বর বাসায় কাজ করেন নিজাম। এ দুজন জানান, তারা সকালে এসে বিকেলের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যান। রাতে এখানে কেউ থাকেন না। 

বাড়িগুলোর নিরাপত্তায় থাকা একাধিক আনসার সদস্য খবরের কাগজকে জানান, বাড়িগুলোতে এখন কেউ থাকছেন না। তবে বাড়িগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যারা কাজ করেন তারা সকাল ৯টার মধ্যে চলে আসেন ও দুপুরের পর চলে যান।

বেইলি রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য জুনায়েদ। তিনি খবরের কাগজকে জানান, এক মাস হলো এই বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। বাড়িতে এখন কেউ থাকেন না।

একই রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হক খবরের কাগজকে বলেন, এই বাড়িতেও এখন কেউ থাকছেন না। কর্মচারীরা সকালে এসে কাজ শেষ করে বিকেলের মধ্যে চলে যান। 

মন্ত্রিপাড়ার নিরাপত্তার জোরদারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, বেইলি রোডসহ পুরো মন্ত্রিপাড়াতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

 

মুখ্য সচিব তোফাজ্জল আসন ভাগাভাগি বাস্তবায়ন করেন: জাহাংগীর

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১২ পিএম
মুখ্য সচিব তোফাজ্জল আসন ভাগাভাগি বাস্তবায়ন করেন: জাহাংগীর
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পিলে চমকানো তথ্য দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। একতরফা এ নির্বাচন আয়োজনে জাহাংগীর আলমের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। এ কারণে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে পুরস্কার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব পদ দেয়। 

জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মাঠপর্যায়ে তদারকির দায়িত্ব ছিল তার। জাহাংগীর আলম পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পুরো প্ল্যান মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোট কোন আসন পাবে, দেশের কোন আসনে কোন ডামি ক্যান্ডিডেট এমপি হবেন, সেটি জানতেন তোফাজ্জল। প্রধানমন্ত্রীর এই মুখ্য সচিব প্রশাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তবে বিষয়টি তিনি (ইসি সচিব জাহাংগীর আলম) পরে জানতে পারেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। দেশের অন্য জেলাগুলোতে আন্দোলন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ঢাকার আন্দোলন কোনোভাবেই দমন সম্ভব হচ্ছিল না। এতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তাকে সরানো যায়নি। 

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে জাহাংগীর আলমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে ধানমন্ডির জিগাতলায় আবদুল মোতালিব নামে এক কিশোর নিহতের মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এই সচিবকে পুলিশ ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে। 

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনা জোনের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম আদালতের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. বেলাল হোসেনের আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট নিহত মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭৬ জনকে আসামি করা হয়। 

সূত্র জানায়, জাহাংগীর বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবির হেফাজতে রয়েছেন। তাকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ 

জাহাংগীরের মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জাহাংগীর আলমকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের কিছু কথা তিনি অকপটে বলেছেন। আবার কিছু কথা গোপন করেছেন। সেগুলো জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আন্দোলনের শুরুতে পুলিশ নমনীয় ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে পুলিশকে নমনীয় আচরণ করতে বলা হয়েছিল। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো ছাত্রের লাশ পড়ে তাহলে গোটা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে। সে জন্য পুলিশকে পরামর্শ দেওয়া হয়। জাহাংগীর পুলিশকে জানান, দুই ইস্যু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন দমনে সরকার বড় ভূমিকা নেয়নি। দুই ইস্যু কী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার কাছে জানতে চান। এ সম্পর্কে জাহাংগীর আলম জানান, ওই সময় পুলিশসহ কয়েক আমলাকে নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছিল। এ নিয়ে তৎকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। সরকার মনে করেছিল যে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে বিষয়টি ঢাকা পড়বে। তবে ২ নম্বর কারণটি তিনি বলেননি। 

যাত্রাবাড়ীর আন্দোলনকারীদের নিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতাশ হয়েছিল বলে জানান জাহাংগীর। সেখানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করার পরও আন্দোলনকারীরা চলে যায়নি। ওই স্পটে সরেজমিন তিনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন বলে জানান। আন্দোলনকারীরা যাত্রাবাড়ীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ওভারব্রিজে ঝুঁলিয়ে রাখে। পুলিশ বারবার তাকে উদ্ধার করার জন্য একাধিক সাঁড়াশি অভিযান চালালেও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। স্থানীয় জনতা সেখানে রাতের বেলা অবস্থান গ্রহণ করেন। হত্যার বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এই বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায় বলে সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন। 

জাহাংগীর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেন, ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ওই আসনে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মহারাজ। এ নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও করেছিলেন বলে তিনি জানান।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলির সংকট শুরু হয়। বিশেষ করে ঢাকায় এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। যেসব জেলায় অতিরিক্ত গুলি ও টিয়ার শেল ছিল, সেগুলো ঢাকায় আনার পরিকল্পনা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

বিপ্লব-বিদ্যুৎ দুই ভাই, অপকর্মে জুড়ি নাই

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম
বিপ্লব-বিদ্যুৎ দুই ভাই, অপকর্মে জুড়ি নাই
গ্রাফিকস: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

তারা দুই ভাই। একজনের নাম বিপ্লব বড়ুয়া, আরেকজন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ছিলেন বিপ্লব। এখনো তিনি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। আর ভুয়া চিকিৎসক বিদ্যুৎ বড়ুয়া বিপ্লবের ক্ষমতার প্রভাবে অবৈধভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বিপ্লব বড়ুয়ার উন্নতিও হয় বিদ্যুৎগতিতে। এই দুই ভাইয়ের অপকর্ম নিয়ে আলোচনা শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগেও ছিল। আর এখন তারা পালিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর এই আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। 

বিপ্লব বড়ুয়ার বিরুদ্ধে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। বিপ্লব ও বিদ্যুৎ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিপদমুক্ত হয়েছেন উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পদের আগে দলের সহযোগী সংগঠনের কোনো রাজনীতি না করায় এবং সংশ্লিষ্টতায় না থাকায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতারা বিপ্লবকে ‘হঠাৎ নেতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদকের পদ পেয়ে নিজের প্রভাব খাটাতে শুরু করেন তিনি। বিপ্লব বড়ুয়ার অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে লোহাগাড়া উপজেলার স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদক কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা এখন মুক্ত হয়েছি, ভালো আছি।’ 

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হওয়ার পর থেকে নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলে নিজেকে গডফাদার ভাবতে শুরু করেন বিপ্লব বড়ুয়া। সব ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন তিনি। চট্টগ্রাম ও নিজ নির্বাচনি এলাকায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়াতেন তিনি। তার এমন একাধিক বিজ্ঞপ্তি খবরের কাগজের হাতে রয়েছে। যেখানে তিনি সফর করবেন এমন স্থানে স্থানীয় ইউনিয়ন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হতো। এমন একটি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, বিপ্লব বড়ুয়া নিজ এলাকা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রবেশের সময়সূচি, দুপুরের খাবার সময়, সভায় অংশ নেওয়ার সময় স্থানীয় ইউনিয়ন-উপজেলা চেয়ারম্যানদের যথাযথ সময় উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রামের দোহাজারী ব্রিজের পর থেকে ৪০ হাত দূরত্বে পরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিপ্লব বড়ুয়ার আগমন উপলক্ষে ‘বিপ্লব বড়ুয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ লিখে গেট ও তোরণ নির্মাণ করা বাধ্যতামূলক ছিল। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলেও বড়ুয়ার নির্দেশে রঙিন পোশাক পরে প্রতিটি গেটে ফুল দিয়ে তাকে রিসিভ করা বাধ্যতামূলক ছিল। এসবের ব্যবস্থা করতেন বিপ্লবের কথিত পিএস আরিফ। স্থানীয় উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারা তার আগমন উপলক্ষে গেট তৈরি ও রিসিভ না করলে আরিফকে দিয়ে ওই সব নেতাকে ঢাকায় এনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিপ্লব তার বাড়ির বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখতেন। পরে তাদের দিয়ে ফেসবুকে একাধিক প্রশংসামূলক স্ট্যাটাস দেওয়াতেন। এরপর ওই নেতারা ছাড়া পেতেন। কোনো নেতা এসবের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিপ্লব বড়ুয়া, তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়া এবং তাদের স্ত্রীদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। বিপ্লব ও বিদ্যুৎ সপরিবারে ভারত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় চলে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সপরিবারে কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে তার স্ত্রী অগ্নি বড়ুয়ার বড় বোনের বাসায় আছেন। স্ত্রীর বড় বোনের কাছে দেশ থেকে শতকোটি টাকা পাচার করেছেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। সেখানে ওই বোনকে দিয়ে মন্ট্রিয়ল শহরে বাড়ি কিনেছেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। 

আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিপ্লব বড়ুয়া

গেল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতা-কর্মী খুন হন। বিপ্লব বড়ুয়ার যোগসাজশে সন্ত্রাসীরা এ খুনগুলো করে বলে জানান নিহতদের স্বজনরা। এমন এক নৌকার এজেন্টের বাড়িতে বিপ্লব বড়ুয়ার ক্যাডারবাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে এজেন্টের এক চোখ চলে যায় এবং শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর  একটি ছবি ভেদ করে বুলেট বেরিয়ে যায়।

বিপ্লব বড়ুয়ার রোষানলে পড়ে একাধিক মামলার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতা। মিথ্যা মামলার শিকার এমন আটজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

২০২১ সালে বিপ্লব ও বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সাবেক ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন। সেই পোস্টে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন বাবলু। ১০ মিনিট পর তা মুছেও দেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট চলে যায় বিপ্লব ও বিদ্যুতের হাতে। ওই রাতে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলাটি করেন বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাতকানিয়ার সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের। বিপ্লব ও বিদ্যুৎ চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি এবং এসপিকে ফোন করে আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতাকে রাতারাতি গ্রেপ্তার করান। তাদের যেন কোনোভাবেই জামিন না হয় বিপ্লব বড়ুয়া সে জন্য জেলা জজকে প্রভাবিত করেন। শুধু তা-ই নয়, হাইকোর্ট থেকেও যেন জামিন নিতে না পারেন, সে জন্য নানা কারসাজিও করেন বিপ্লব বড়ুয়া। একপর্যায়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হস্তক্ষেপে ফখরুদ্দিনের জামিন হলেও সাজ্জাতের জামিন দিতে বাধা দেন বিপ্লব বড়ুয়া। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে জামিন পান সাজ্জাত। এ নিয়ে দীর্ঘ লড়াই হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বিপ্লব বড়ুয়ার এমন হিংস্রতার কথা শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছেন। এসব কথা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন ও ফখরুদ্দিন বাবলু। 

শুধু প্রটোকল না দেওয়ার অপরাধে বিপ্লব বড়ুয়ার রোষানলে পড়ে সাত মাস জেল খাটেন সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরী। হত্যা মামলাসহ দুই মামলায় জেল খাটেন তিনি। আওয়ামী লীগ করা থেকে বিরত থাকতে হয় এই নেতাকে। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও শহীদুল্লাকে বসতে দেননি বিপ্লব বড়ুয়া। তার বিরুদ্ধে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর অভিযোগ দিলে তা আর পৌঁছাতে দেননি বিপ্লব। অভিযোগের কারণে আরও হিংস্র ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। শহীদুল্লাহকে এলাকায় থাকতে দেবেন না বলেও হুমকি দেন। ইউনিয়ন নির্বাচনের মনোনয়ন কেনার জন্য ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গেলে শহীদুল্লাহকে বিপ্লব নিজের বাহিনী দিয়ে মেরে ধানমন্ডি ছাড়া করেন। 

শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ভাই বিদ্যুৎ ক্ষমতার বলে আমাদের বিরোধী দলে রেখেছেন। তোষামোদি করিনি বলে আওয়ামী লীগ করেও বিপ্লব বড়ুয়ার নির্দেশে নির্যাতন উপহার পেলাম। আমিসহ বাজালিয়ার ১৭ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। তার প্রভাবে কোনো বিচারকও ন্যায়বিচার করেননি। বড়ুয়া ও তার বাহিনী আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর মামলা-হামলা চালিয়েছেন, তাদের নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও বসতে দেননি, সব ব্যবসা কেড়ে নিয়েছেন। সরকার পতনের পর বড়ুয়ারা পালিয়েছেন। আমরা এখন ভালো আছি।’ 

বিপ্লবের অবৈধ ব্যবসা ও লাগামহীন পিএস

বিপ্লবের ক্ষমতার প্রভাবে তার কথিত পিএস মো. আরিফও অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আরিফ একসময় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রোডে বাসের হেলপার ছিলেন। পরে বাসের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন। ‘আরাকান সড়ক পরিবহন’ শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বাসের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আরিফ রেজিস্ট্রেশন করেন। তার প্রমাণ খবরের কাগজের হাতে রয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়া ও তার কথিত পিএস আরিফের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়। পরে আরিফ বিপ্লব বড়ুয়ার ঢাকার বাসায় কাজ করার চাকরি পান। তার চতুরতা দেখে বিপ্লব তাকে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-বাণিজ্য, সরকারি টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা কালেকশন করাতেন। এই সুযোগে স্থানীয় পর্যায়ে বিপ্লবের পিএস হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন আরিফ। সেই পরিচয় দিয়ে আরিফ ও সাতকানিয়া থানার আগের ওসি শাহজাহান মিলে কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট দখল করে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতেন। এমন একটি অভিযোগ ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে। অভিযোগের একটি কপি এ প্রতিবেদকের হাতেও এসেছে। আরিফের প্রভাব এতটাই বেশি যে একটা ছবিতে দেখা গেছে, স্থানীয় এমপি তার সামনে কুঁজো হয়ে বসে আছেন আর আরিফ পায়ের ওপরে পা দিয়ে এমপিকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিপ্লবের ক্ষমতাবলে আরিফ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিপ্লবের বাসার একসময়ের কাজের ছেলেটি নিজেই ‘প্রাডো গাড়ি’তে চলতে শুরু করেন। নিজের এলাকায় চারটি প্রাডো গাড়ি নিয়ে যেতেও দেখেছেন স্থানীয়রা। 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বিপ্লব বড়ুয়ার যোগসাজশে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা শুরু করেন আরিফ। সাতকানিয়ার দুবাইপ্রবাসী ব্যবসায়ী ইলিয়াসের মাধ্যমে দুবাইয়ে চারটি স্বর্ণের দোকানের মালিক হয়েছেন বিপ্লব ও আরিফ। এর মাধ্যমে দেশের টাকাও বিদেশে পাচার করেছেন তারা। আরিফ প্রতি মাসে একাধিকবার দুবাই যেতেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত স্বর্ণ চোরাচালান ও বিদেশি মদ আনতেন আরিফসহ আরও চারজন। একাধিকবার ধরা পড়েছেন তারা। তবে বিপ্লব বড়ুয়া নিজের ক্ষমতাবলে তাদের নিরাপদে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।

২০২১ সালে গাজীপুরে বিপুল পরিমাণ সিগারেটের নকল হলোগ্রাম জব্দ করা হয়। রাইস মিলের আড়ালে চলত অবৈধ এই সিগারেট কারখানা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন কারখানা চালাতেন বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের সরকারি কাজের টাকার পরিমাণ অনুযায়ী একটি ভাগ নিতেন বিপ্লব। 

বিদেশে বাড়ি ও ব্যবসা

নিজ এলাকার স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিপ্লব বড়ুয়ার শ্যালক অভিজিত বড়ুয়া লন্ডনে থাকেন। শ্যালকের মাধ্যমে টাকা পাচার করে লন্ডনে বাড়ি করেছেন বিপ্লব বড়ুয়া। রাশিয়ায় গড়ে তুলেছেন ব্যবসা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন বিপ্লব। সেখানে নিজের প্রোপার্টি গড়ে তোলার কথাও শোনা গেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ও চট্টগ্রামের খুলশী এবং কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিপ্লবের রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। 

মনোনয়ন-বাণিজ্য ও আওয়ামীবিরোধী বাহিনী

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীর পদ পাওয়ার পর দলীয় মনোনয়ন-বাণিজ্য শুরু করেন বিপ্লব বড়ুয়া। তৃণমূল থেকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ করা ব্যক্তির নাম পরিবর্তন করে আগে থেকে চুক্তি করা নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম মনোনয়ন বোর্ডে তুলে দিতেন বিপ্লব বড়ুয়া। চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নৌকার মনোনয়নের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া। আওয়ামী লীগের কেউ প্রতিবাদ করলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বাহিনী দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের এলাকাছাড়া করাতেন বিপ্লব। যাদের মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছিলেন বিপ্লব, সেসব নেতার অনেকেই শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ফেসবুকে লিখেছেন- তারা কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমন একাধিক পোস্টের স্ক্রিনশট এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও লোহাগাড়ার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ আসন গঠিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনের ২৬টি ইউনিয়নেই মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছেন আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও বিপ্লব বড়ুয়া। এর মধ্যে আটটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতারা নৌকার মনোনয়ন পেলেও বিপ্লব ও নদভীর পছন্দ না হওয়ায় সেই ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে লোক দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচিত করাতেন বিপ্লব ও নদভী। স্থানীয় প্রশাসনকে চুপ করাতে বিপ্লব বড়ুয়া সরাসরি ফোন করতেন। ওই সব ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর জন্য কেউ কাজ করলে তাকে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে এলাকাছাড়া করাতেন বিপ্লব। প্রতিটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে সম্পর্ক অনুযায়ী ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন নদভী ও বিপ্লব। 

নৌকার মনোনয়ন পান যুবদল নেতা

জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ করা নেতাদের নাম বাদ দিয়ে লোহাগাড়ার কালাউজান ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নৌকার মনোনয়ন ব্যবস্থা করে দেন বিপ্লব বড়ুয়া। এমন অনেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। তাদের অনেককেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে ছবি তোলার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া।

করোনার অনুদান লুট

দেশে করোনা মহামারিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করেন বিপ্লব ও বিদ্যুৎ বড়ুয়া। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে ফৌজদারহাট এলাকায় ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ নামে টাকা আত্মসাতের একটি কারখানা তৈরি করেন তারা। এই হাসপাতালে করোনার চিকিৎসার জন্য বিপ্লব বড়ুয়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে বলতেন। করোনা চলাকালীন সাধারণ মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে নগদ, বিকাশ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অন্তত ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়া। সরল মনে চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় এক মুক্তিযোদ্ধার। এর পরই শুরু হয় সমালোচনা, বন্ধ হয় তাদের টাকা কামানোর কারখানাটি। এসব কথা ফেসবুকে লিখে গ্রেপ্তার হন সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাত হোসেন।

বিপ্লবের নারী কেলেঙ্কারি

বিপ্লব বড়ুয়ার স্ত্রী সোমা বড়ুয়া বিমানবালা হওয়ায় বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে থাকতে হয় তাকে। তার স্ত্রীর এক সহকর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন বিপ্লব বড়ুয়া। বিষয়টি জানাজানি হলে স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিন্তু বিপ্লব বড়ুয়া নারীসঙ্গ ছাড়তে পারেননি। তার পিএস আরিফের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর দিকে নজর পড়ে বিপ্লব বড়ুয়ার। তাকে হাতছাড়া করতে চাননি এই ব্যারিস্টার। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কলেজগেটের পাশে আরিফের ফ্ল্যাটে তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতেন বিপ্লব বড়ুয়া। আরিফের তথাকথিত স্ত্রী হওয়ায় আরিফ কোনো বাধা তো দেননি, বরং সুযোগ করে দিতেন। এ ছাড়া গান বাংলা চ্যানেলের মালিক তাপসও বিপ্লব বড়ুয়ার জন্য হোটেল ওয়েস্টিনে নারী পাঠাতেন। তার মনোরঞ্জনের জন্য চট্টগ্রামে অবস্থিত হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতেও নারী পাঠানো হতো। সাতকানিয়া নিবাসী ব্যবসায়ী কেএসআরএমের এমডি শাহরিয়ার বিপ্লবকে আর্থিক সহায়তা দিতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যার সব ব্যবস্থা করে দিতেন আরিফ। এ জন্য আরিফকে দূরে সরাতে পারেননি বিপ্লব। বরং আরিফকে অবৈধ ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। 

বান্ধবীকে নিয়ে ভারত পালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ

বিপ্লবের পেশিশক্তিতে লাগামহীন ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়া: ২০০৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় রাজীব নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যার মামলায় ১ নম্বর আসামি হন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। মামলা থেকে বাঁচতে পড়ালেখা শেষ না করেই পালিয়ে বেলজিয়াম চলে যান। ২০১৯ সালে বিপ্লব বড়ুয়া যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হন, তখন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুৎকে দেশে ফেরান। এরপর বিদ্যুৎ ঘাঁটি গাড়েন চট্টগ্রাম শহরে। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অপকর্ম করে চলেন তিনি।

চট্টগ্রাম ও নিজ এলাকা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় সব ধরনের চাঁদাবাজির ভাগ পেতেন বিদ্যুৎ। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ভাই বিপ্লব বড়ুয়ার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতেন বিদ্যুৎ। কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে ৪৫ বছর বয়সে সরাসরি পঞ্চম গ্রেডে নিয়োগ পান বিদ্যুৎ বড়ুয়া। যদিও তার একাডেমিক সব সার্টিফিকেটই ছিল নকল। উপপরিচালক হয়েও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ বড়ুয়ার ‘ক্ষমতা’ যেন উপাচার্যের চেয়েও বেশি ছিল। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে আর্থিক বিষয়াদি, যানবাহন, রেস্ট হাউস ও গেস্ট হাউস সবকিছুই তার একক নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার ও কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণও শুরু থেকেই ছিল তার হাতে। আবার টাকার বিনিময়ে নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে বিদ্যুতের বিরুদ্ধে। সরকারি কাজের টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ২ থেকে ৩ শতাংশ টাকা বিদ্যুৎ পেতেন। এভাবে সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অল্প সময়ে কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর ভাই হওয়ায় কেউ ‘টুঁ’ শব্দ করার সাহস দেখাতেন না। কাউকে পথের কাঁটা মনে হলে দিতেন মামলা, নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে করাতেন মারধর।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছিলেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। কোনো কমিটির সদস্য না হওয়ার পরও প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজের সভা থেকে তিনি ভাতা নিতেন নিয়মিত। পাহাড়তলীর রোজ ভ্যালি আবাসিক এলাকায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসটিও বিদ্যুৎ বড়ুয়ার দখলে ছিল। ওই গেস্ট হাউসটির মালিক আবার উপাচার্য ইসমাইল খানের ভাই আজম খান। ভাইয়ের ফ্ল্যাট গেস্ট হাউস হিসেবে বেশি ভাড়া দিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। এত কিছুর পর আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২২-২৩ সালের শুদ্ধাচার পুরস্কারটিও উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া নিজের করে নিয়েছিলেন।

ফ্ল্যাট দখল করে জলসা ঘর

বিদ্যুৎ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে জোর করে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে তার বান্ধবী হিসেবে পরিচিত শারমিন আক্তার নামের এক নারীকে রাখা হয়। সেটি ছিল বিদ্যুৎ বড়ুয়ার জলসা ঘর। বিদ্যুৎ ও তার ঘনিষ্ঠজনরা সেই ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন। উঠতি বয়সের মেয়েদের এনে রাতভর গান-বাজনা ও মদের পার্টি চলত সেখানে। চট্টগ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়মিত যাতায়াত করতেন সে ফ্ল্যাটে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কিছুদিন আগে স্ত্রী অগ্নি বড়ুয়া বিষয়টি জানতে পারলে বিদ্যুৎ বড়ুয়া ফ্ল্যাটটি থেকে শারমিনকে অন্যত্র সরিয়ে নেন। 

বিপ্লব ও বিদ্যুৎ যেখানে গ্রুপিং সেখানে

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সহসভাপতির পদ পেয়ে সংগঠনকে তিন ভাগ করেছেন বিপ্লব বড়ুয়া। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঢুকে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে কার্যালয়সংশ্লিষ্ট বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি তৃণমূলের রাজনীতি করে আসেননি, তাই তার কানো কর্মী বা অনুসারী নেই। অনুপ্রবেশকারীদের দিয়েই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের হেনস্তা করতেন। আর নিজের এলাকার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেল খাটাতেন। তার ভাই বিদ্যুৎ যখন পালিয়ে ইউরোপে যান, তখন তৎকালীন ইউরোপ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনির সঙ্গে মিলে আওয়ামী লীগকে তিন গ্রুপে পরিণত করেন। চট্টগ্রামেও হাইব্রিডদের দিয়ে রাজনৈতিক বলয় তৈরি করে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। 

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে চলে যান এই দুই ভাই। তাদের মন্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে এবং মেসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হাসপাতালেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
হাসপাতালেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। বিগত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতি সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। আর চলতি অক্টোবরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও বাড়বে- মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশ্লেষকরা। রোগীরা ডেঙ্গুর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা তাদের।

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৭ জন ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৭৪ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৯ জন। চলতি বছরে বিগত ৯ মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এডিসের বিস্তার উপযোগী আবহাওয়া এখনো বিরাজ করায় এ মাসেও রয়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি।

ডেঙ্গু সংক্রমণের এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীই মানছেন না ডেঙ্গুর স্বাস্থ্যবিধি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নেই আলাদা কোনো ইউনিট। সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি বেডে রেখেই চালানো হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। রোগীদের বিছানায় নেই মশারি। আবার কোথাও মশারি থাকলেও তা টানিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন না প্রায় ৫০ ভাগ রোগী। ফলে একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মাঝে ডেঙ্গু সংক্রমিত হচ্ছে।

ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় ডেঙ্গু নিয়ে গত মঙ্গলবার ভর্তি হওয়া রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী (৫৭) আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারে তিনিসহ চারজন এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

কীভাবে আক্রান্ত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে আক্রান্ত হয়েছি তা বুঝতে পারছি না। আমার আগে দুই ছেলে এবং বড় মেয়েও ডেঙ্গুতে ভুগেছে। তবে ছেলেদের অবস্থা বেশি জটিল না হলেও মেয়ের অবস্থা বেশ গুরুতর ছিল। এখন তারা ভালো আছে। তিন দিন জ্বরে ভোগার পর এবার আমাকেও হাসপাতালে আসতে হলো।’

হাসপাতালটির ষষ্ঠ তলায় ৩০ শয্যার একটি জেনারেল ওয়ার্ডে (পুরুষ) আলাউদ্দিনসহ তিনজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। অথচ তাদের কাউকেই মশারি দেওয়া হয়নি। রোগীরা নিজ ব্যবস্থাপনায় মশারি ব্যবহার করছেন না। বাংলাদেশ মেডিকেলের আরেকটি নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও রায়েরবাজারের বাসিন্দা আলমতাজ বেগমসহ (৬৫) আরও তিনজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন সেখানেও রোগীদের নেই মশারি।

বাংলাদেশ মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার জসিম উদ্দিনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সব সময় তো আর ডেঙ্গু রোগীর চাপ থাকে না তাই আলাদা ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রেখেই তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে গেল দুই মাসে প্রতিদিনই গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রেখে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি’। রোগীর চাপ আরও বাড়লে ভবনের সপ্তম তলায় ২৪ বেডের আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট করার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গুর স্বাস্থ্যবিধিকে আমলে নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের রোগী ও তাদের স্বজনরা। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ইউনিটে রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বেড ছাড়া ভর্তি অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক রোগীকে হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মশারি ব্যবহার করছেন না। কেন মশারি ব্যবহার করছেন না জানতে চাইলে এক রোগীর স্বজন জানান, গরমে মশারির ভেতরে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই মশারি না টানিয়ে ঝুঁকি নিয়েই রোগীর সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানান, আমরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও অনেকে মশারি ব্যবহার করছেন না।

এডিস মশা নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নাই বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ড. মুশতাক হোসেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের রাখলে আর সেই হাসপাতালে এডিস মশা থাকলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি আরও বাড়তে থাকবে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্যই ভাবা উচিত। ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের রোগীদের আলাদা রাখাই ভালো। আর সেটা করা সম্ভব না হলে মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। তবে সব রোগী মশারির ভেতরে থাকতে পারেন না, গরম সহ্য করতে পারেন না। এ কারণে আমি মনে করি সব হাসপাতালেই এডিস মশামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত। আর সেই পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ হাসপাতালে রোগীরা যান সুস্থ হওয়ার আশায়।

ড. মুশতাক আরও বলেন, প্রতিবছরই ডেঙ্গুর বিস্তার (বর্ষা মৌসুমে) আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করলেও কয়েক বছর ধরে সে ধারাবাহিকতায় আমরা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। জলবায়ুর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখন সারা বছরই এডিস মশার বিস্তার উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করায় মশা নিধনকে এখন আর মৌসুমি কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের উচিত নয় বলে মনে করেন এই জনস্বাস্থ্যবিদ। তার মতে, এডিস মশার বিস্তার সমূলে ধ্বংস করতে হলে পরিবেশ-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি মশা নিধনের সব কার্যক্রম সারা বছরই চলমান রাখা উচিত। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজের মধ্যকার যেসব সমন্বয়হীনতা তা দূর করা উচিত।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে চিন্তিত বিএনপি

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০০ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে চিন্তিত বিএনপি
বিএনপি (লোগো)

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল এখনো স্পষ্ট না হওয়ায় শঙ্কা বা চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স দুই মাস পার হতে চলল। কিন্তু এ সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে এখনো তারা পরিষ্কার করেনি। রাষ্ট্র সংস্কারসহ তাদের এজেন্ডা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গ তোলেন একজন সদস্য। তখন আলোচনায় যোগ দিয়ে কয়েকজন সদস্য বলেন, ড. ইউনূস নিউইর্য়কে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিসকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আবার সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য তার একান্ত ব্যক্তিগত মত। এ নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের মেয়াদ হবে দেড় বছর। আবার কেউ বলছেন, দেড় বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করা হবে, এরপর নির্বাচন। বৈঠকে কোনো কোনো নেতা মত দেন, সরকারের একজনের বক্তব্যের সঙ্গে আরেকজনের বক্তব্য হুবহু মিলছে না। সবমিলিয়ে তাদের মেয়াদকাল নিয়ে জনমনে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এটা জনগণ যেমন জানতে চায়, তেমনি আমরাও জানতে চাই। আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছি, আমাদের চাহিদার কথাও তাদের (সরকারকে) বলেছি। তারা এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণা করেনি। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবাচন চাই, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। কারণ রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রের সব সংস্কার কাজ ভালোভাবে করতে পারবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দুই মাসের কাজের পর্যালোচনা প্রসঙ্গ তুলে একাধিক স্থায়ী সদস্য বিষয়টি আলোচনায় আনেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকার আগামী দিনের রাষ্ট্র বিনির্মাণে কী চিন্তা করছে তা বোঝা যাচ্ছে না, নির্বাচনি রোডম্যাপও এখনো ঘোষণা করা হয়নি, সরকার কখন নির্বাচন দেবে, রাষ্ট্র সংস্কার কীভাবে করবে তার রোডম্যাপও ঘোষণা করেনি। এ ছাড়া রাষ্ট্রের সব সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে হবে- এসব নিয়ে জনগণের মনে এখনো প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে জাতির সামনে দ্রুত পরিষ্কারভাবে দেওয়ার কথা বলেন কেউ কেউ।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত ৬টি কমিশনের কার্যক্রম আলোচনায় তোলেন দু-জন নেতা। তারা বলেন, ‘৬টি কমিশনের ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করার কথা ছিল। ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা কাজ করবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে। কিন্তু এখন আবার সুর পাল্টে বলছে, আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবেন। আগামী শনিবার থেকে সম্ভবত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কথাবার্তা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল থাকছে না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কোনো কোনো নেতা।’

রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবে গুরুত্ব পাচ্ছে ৩১ দফা

সূত্র জানিয়েছে, সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপের বিষয়টি আলোচনায় তোলা হয়। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। রাষ্ট্র সংস্কারের ৬টি কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট দলীয় অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে নেতারা মত দেন। এ ব্যাপারে বিএনপির ৩১ দফার রূপরেখার মধ্যেই সব সংস্কার প্রস্তাব আছে, সেই আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে সবাই মত দেন এবং দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় বৈঠকে।

রাষ্ট্র সংস্কারে দলীয় এজেন্ডা ঠিক করতে ইতোমধ্যে ৬টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি। বিষয়ভিত্তিক এই কমিটিগুলো দলের কর্মকৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। গঠিত ৬টি কমিটি হলো- রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন সংস্কার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য। এসব কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহকে।

বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে কী ধরনের সংস্কার বিএনপির আনা উচিত, নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন কোন খাতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা নিয়ে নেতারা মতামত দেন। 

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে নেতারা বলেন, মাহমুদুর রহমানকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কারাগারে পাঠিয়েছিল। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অনেক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এখন আবারও তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অথচ স্বৈরাচার সরকারের দুর্নীতিবাজ এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের গ্রেপ্তার বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনারও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন। বৈঠকে অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি জানানো হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।