ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে হতাশা বাড়ছে

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম
আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে হতাশা বাড়ছে
মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা

মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে হত্যাশা আরও বাড়ছে। দীর্ঘ সাত বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এর মধ্যেই গত কয়েক মাসে নতুন করে আরও ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা এই হাতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সব উদ্যোগ এখন কার্যত থমকে আছে। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সম্প্রতি হতাশা ও উদ্বেগ জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে হাতাশার কথা জানিয়ে তিনি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ইস্যুটি তুলে ধরেন। তবে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ইউ কিয়াও সোয়ে এ বিষয়ে কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেননি। 

রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে বলেন, রাখাইনে আরসা ও আরাকান আর্মিসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস ধরে। এখনো সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে স্বাভাবিক হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ কারণে প্রত্যাবাসন ও নতুন করে রোহিঙ্গা আসার ব্যাপারে কোনো কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে। 

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের মধ্যস্থতার ভূমিকাও এখন কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন সরকারের মধ্যস্থতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই মুহূর্তে সেই উদ্যোগও নেই। চীন বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না। বিষয়টি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার কথা চলছে ঠিকই, তবে প্রতিক্রিয়া আসছে একেবারে দায়সারা গোছের। রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সংঘাত চলায় তাদেরও কিছু করার নেই বলে জানানো হয়েছে চীন সরকারের পক্ষ থেকে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে চীন সরকার সব সময় আছে এবং থাকবে বলে জানানো হয়েছে। 

এদিকে মায়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কক্সবাজারে যেসব অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মিত হয়েছে সেখানে ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। মাদকের বিস্তার ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এই অনিশ্চয়তার মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিবের নেতৃত্বে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে এবং রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের আহ্বানও জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো এবং তাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম
ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির কেজিতে কমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ফার্ম থেকে দাম কমায় বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করায় সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। তবে আলু, ডিম, চিনি, আটার দাম বাড়েনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্রয়লারের কেজি ১৭০ টাকা, সোনালিও ২৭০ টাকা

খামার পর্যায়ে মুরগির দাম হঠাৎ করে কমে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে (আড়ত) দাম কমেছে। এর প্রভাবে বাজারেও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ব্রয়লার গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন ও সোনালি চিকেন হাউসের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন ধরে হঠাৎ করে মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। খামার থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হাতিরপুল বাজারের রুহুল আমিনও খবরের কাগজকে বলেন, ‘দামের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০০ ও সোনালি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। গতকাল ব্রয়লার ১৯০ ও সোনালি ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রান্তিক খামারি তথা পোলট্রিশিল্পকে ধ্বংস করতেই করপোরেটরা কয়েক দিন ধরে কম দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করছে। কারণ খামারিরা শেষ হয়ে গেলে তারা ইচ্ছামতো বাড়তি দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করবে।’ তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

ডিমেও একটু স্বস্তি দেখা গেছে। আগের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে আগের মতোই রুই, কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বৈশাখের তাপ সবজিতে

রমজানের প্রথমদিকে বেগুন, শসা, লেবুর চাহিদা বাড়তে থাকায় সেগুলোর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। ঈদ শেষে দাম কমেছে। কিন্তু যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কমেনি। শীতের সবজি শেষ হওয়ায় বাড়তি দামে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার কমে ফুলকপি ও ৪০ থেকে ৫০ টাকার কমে বাঁধাকপির পিস মেলে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলী ও হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম শেখ বলেন, ‘শীতের সবজি শেষ। গরমের সবজি উঠেছে। তার পরও অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, শসা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে লেবুর দাম কমে হালি ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ 

চড়া দামেই চাল বিক্রি 

রমজান মাস থেকেই চালের দাম বাড়তি। হাওরে বোরো ধান উঠলেও বাজারে প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই বাড়তি দামে ভালো মানের মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯৬ টাকা কেজি, রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ ও মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

দাম বাড়ায় সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের

গত ডিসেম্বরে দাম বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৭৫ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা লিটার করা হলেও বাজারে সংকট থেকে যায়। এরপর ভোজ্যতেল মিলমালিকরা বারবার দাম বাড়ার প্রস্তাব করলে সরকার গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত তেলে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা, খোলা বা লুজ তেল এবং পাম তেলে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা লিটার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর পরই বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে গেলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বেড়েছে। তবে নতুন রেটের তেল এখনো বাজারে আসেনি। আগের রেটে তেল বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজির আটা ১২০ টাকা, ছোলার কেজি ১০৫, চিনি ১২০, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আগের মতোই আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভ্যাটের একক হার নির্ধারণে হিসাব কষছে এনবিআর

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ পিএম
ভ্যাটের একক হার নির্ধারণে হিসাব কষছে এনবিআর
ছবি: সংগৃহীত

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বহু স্তরবিশিষ্ট ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) হারের পরিবর্তে একক হার নির্ধারণে হিসাব কষছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এটি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট আদায় কয়েক গুণ বাড়বে, ফাঁকি কমবে। ভ্যাট আদায়ের হিসাব করাও সহজ হবে।

অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা হলে অনেক ক্ষেত্রে কম হারের ভ্যাট বাতিল হয়ে যাবে। এসব খাতে উচ্চহারের ভ্যাট আরোপ হবে। এতে অনেক পণ্য ও সেবা খাতের খরচ বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হবে।

এনবিআরের এ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে খতিয়ে দেখবেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এনবিআরের এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। অনুমোদন না দিয়ে সংশোধন করা বা বাতিল করাও হতে পারে।

এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বেশির ভাগ পণ্য ও সেবা খাতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট হার ধার্য করা আছে। এসব হার বাতিল করে একক হার নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আদায় কয়েক গুণ বাড়বে। ভ্যাট ফাঁকি কমবে। ভ্যাট আদায়ের হিসাব করা সহজ হবে। ভ্যাটের একক হার ১০ শতাংশের কম ও ১৫ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থাৎ ভ্যাটের হার ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ শতাংশ- যেকোনো একটি হার নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ভ্যাট রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বর্তমানে যে পরিমাণ ভ্যাট আদায় হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আদায় হবে। এর জন্য ভবিষ্যতে ভ্যাট আদায়ে একক হারের দিকেই যেতে হবে। এ জন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা নিয়ে অনেক আগে থেকেই আলোচনা চলছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে ভ্যাটের একক হার নির্ধারণ করা হলে ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। প্রযুক্তির সাহায্যে ভ্যাট আদায় সহজ হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এ হার যেন একক সংখ্যায় হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. আবুল বাশার মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ভ্যাট আইন, ২০১২তে একক ভ্যাটের হার রাখা হয়েছিল। এটি মূলত আইএমএফের সুপারিশ ছিল, যা তৎকালীন সরকার বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির মুখে বাধ্য হয়েছিল বাদ দিতে।

অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। কম হারের ভ্যাট বাতিল করে বেশি হারের ভ্যাট ধার্য করা হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট খাতে ভ্যাট বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাট যোগ করে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। অনেক ভোক্তা পণ্যমূল্যের কতটা ভ্যাট, তা না জেনেই পণ্যের দাম হিসেবে পরিশোধ করে থাকেন। তাই ভ্যাট বাড়লে দামও বাড়বে। ভোক্তাকেই বাড়তি দাম দিতে হবে। তাই সব খাতেই ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ হলে তা অনেকের জন্য অনেক বেশি হবে। ভ্যাটের একক হার অবশ্যই কম হতে হবে।

এনবিআর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগারেট, মোবাইল ফোন, তেল ও গ্যাস, গাড়ি, সিমেন্ট, ব্যাংকসহ বড় কয়েকটি খাতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর আছে। মোট আদায় করা ভ্যাটের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে এসব খাত থেকে। এসব খাতের বাইরেও আরও কিছু খাতে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ ধার্য করা আছে। এর বাইরে কিছু পণ্যের ওপর নির্দিষ্ট অঙ্কের ভ্যাট দিতে হয়, যা স্পেসিফিক ট্যাক্স নামে পরিচিত। অনেক খাতে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ ধার্য থাকলেও ভ্যাটের আপতন কমে ১৩ শতাংশ হয়। ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ বা ৭ শতাংশ ধার্য থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। এভাবে যা নির্ধারণ করা থাকে, তারচেয়ে পরিশোধ করা ভ্যাটের হার অনেক সময় কম হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে রাজস্ব খাতের সংস্কার করা হবে এমন শর্ত মেনেই দাতা সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। আইএমএফের সংস্কারের মধ্যে ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের কথা বলা আছে। আইএমএফ থেকে চার বছরে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূসক বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, ২০২৫ সালে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ও ২০২৬ সালে ২ লাখ ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করার জন্য বলা হয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, আইএমএফ এনবিআরের ওপর রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চাপ দিয়েছে। তারা লক্ষ্যমাত্রাও দিয়ে দিয়েছে। এনবিআর আদায় বাড়ানোর জন্য ভ্যাটের একক হার নির্ধারণের পথে হাঁটলে আদায় বাড়বে। তবে এটা ঠিক যে একক হার কার্যকর হলে অনেক পণ্য ও সেবা পেতে হলে বেশি খরচ করতে হবে, যা ভোক্তাকে পরিশোধ করতে হবে। এটি ধনী ব্যক্তিদের জন্য সমস্যা না হলেও সাধারণ আয়ের মানুষ চাপে পড়বেন।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাটের আওতা বাড়ানো সম্ভব হলে আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ভ্যাটের হার কত হবে, তা নিয়ে এনবিআরকে ভাবতে হতো না। তাই ভ্যাটের আওতা বাড়াতে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, অনেক সময় বেশি হারে ভ্যাট থাকলেও ব্যবসায়ীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কম হারে ভ্যাট পরিশোধ করে থাকেন। এভাবে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার ভ্যাট বঞ্চিত হচ্ছে। এনবিআর একক হারে ভ্যাট নির্ধারণ করতে পারলে ভ্যাট ফাঁকি কমে যাবে। অতীতেও এ চেষ্টা করা হয়েছে, তবে অনেক ব্যবসায়ীর বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

উত্তপ্ত কারিগরি শিক্ষাঙ্গন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেপথ্যে শিক্ষকদের একাংশ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৭ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ এএম
উত্তপ্ত কারিগরি শিক্ষাঙ্গন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেপথ্যে শিক্ষকদের একাংশ
চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, জনসাধারণের দুর্ভোগ। ছবি: খবরের কাগজ

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা দীর্ঘদিন পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এর ফলে আদালতে একটি মামলা করেছেন ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা। এ বিষয় নিয়ে অপর একটি শিক্ষক মহল কারিগরি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে আন্দোলনে নামিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরণের স্বার্থ না থাকলেও শিক্ষকদের প্ররোচনায় সড়ক দখল করে অবরোধ করছেন তারা। এদিকে গত ২০ মার্চ থেকে  ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করতে চান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সিন্ডিকেট। যদিও আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে কারিগরি অধিদপ্তর বিব্রত বলে জানা গেছে।  

সব শেষে বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে সারা দেশে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত রমজান মাসে আন্দোলন করে সড়ক অবরোধ করেছিলেন তারা। আদালতে মামলার রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বার বার জনদুর্ভোগ তৈরি করে সড়ক অবরোধ করছেন শিক্ষার্থীরা। 

জানা গেছে, সম্প্রতি আদালতের দেওয়া একটি রায়কে কেন্দ্র করে দেশের কারিগরি অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষের উপর। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর বা দক্ষ প্রশিক্ষক পদটি কারিগরি শিক্ষার অর্গানোগ্রাম, প্যাটার্ন, বাংলাদেশ সরকারের গেজেট, মন্ত্রণালয়ের আদেশ, বদলির আদেশ, প্রশিক্ষণ আদেশ অনুযায়ী শিক্ষক পদ। দেখা গেছে, কারিগরিতে যারা শ্রেণি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই নির্দিষ্ট মেয়াদ চাকরি করার পর ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পদোন্নতি পাচ্ছেন। কিন্তু সবার পদোন্নতি থাকলেও  ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদধারীদের কোনো পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। অন্যদের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা পাশ করে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর ১০ম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে পর্যায়ক্রমে ৪র্থ গ্রেডে অধ্যক্ষ পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ পেয়ে কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসর নিচ্ছেন। 

সম্প্রতি আদালতের রায়ে গত ৫০ বছরের একটি অমীমাংসিত বিষয় সমাধান হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে রাজপথে নামিয়ে দেন এ রায়ের বিরুদ্ধে থাকা পলিটেকনিক শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। ফলে সারাদেশে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে আদালতের রায় বাতিল করতে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বোঝানো হয়েছে, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদটি তাদের জন্য বরাদ্দ করা। পদটি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা ৫০ শতাংশ নিয়ে গেলে তাদের পদ কমে যাবে। অথচ তারা যে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের ৫০ শতাংশ পদ নিয়ে যায়, সেই ব্যাপারে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা কোনো প্রতিবাদ করেন না। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে বর্তমানে পদার্থ ও রসায়নে অনার্স পাসদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের সংখ্যা প্রায় ১০০০ জন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ৫০০ জন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ৫০০ জন। অল্প কিছু লোক আছেন, যারা এইচএসসি ভোকেশনাল পাশ। অর্থাৎ এই পদে অর্ধেকের বেশি লোকই কারিগরি শিক্ষা থেকে আসা। 

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর মীর মো. বায়জীদ হোসেন ও মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমরা পদোন্নতি পাই না। কেউ বঞ্চিত হলেও কি আদালতে যাওয়া যাবে না? কেউ আদালতে গেলে তাকে ছাত্র লেলিয়ে হেনস্থা করা কি বিবেকবান মানুষের কাজ? যারা আদালতে গিয়েছেন তাদেরসহ এই পদের সবাইকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিজের কর্মস্থলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যাদের যোগ্যতা আছে কেবল তারাই পদোন্নতি পাবেন। এখানে অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়নি। তবুও আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে।’ 

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী তকির আহমেদ শমীক খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষা থেকে এসে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর হয়ে এখন প্রমোশনের জন্য আদালতে মামলা করা হয়েছে। এদের প্রমোশন দিলে কারিগরি থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে কারিগরি থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরাও চাকরি করছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাদের প্রমোশন হচ্ছে না। এ পদ থেকে উপরের দিকে যেতে পারছেন না।’ তিনি শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘যোগ্যতা থাকলে চাকরিতে প্রমোশন পাওয়ার অধিকার সবার আছে। তাদের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি নেই। তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন করছেন।’ 

কারিগরি শিক্ষার এ অচলাবস্থা নিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক  শোয়াইব আহমাদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য খুবই বিব্রত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। কারিগরিতে নতুন করে চাকরি বিধি প্রণয়ন করতে হবে। যদিও এটি সময়ের ব্যাপার। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের দাবির বিষয়ে একটি মামলা চলমান আছে।’ এখানে শিক্ষার্থীদের জড়িত হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বুঝাবে কে? এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নয়। কিন্তু অপর শিক্ষকদের প্ররোচনায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নামছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে চাকরি করার অধিকার সবার আছে। প্রমোশন চাওয়ার অধিকারও সবার আছে। সবাইকে নিয়ে এক টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান করা হবে, সেই পরিস্থিতিও এখন নেই।  এ বিষয়ে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

পুরোনো রূপে ভোজ্যতেলের বাজার, ক্রেতার নাভিশ্বাস

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
পুরোনো রূপে ভোজ্যতেলের বাজার, ক্রেতার নাভিশ্বাস
চট্টগ্রামে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। ছবিটি চট্টগ্রাম মহানগরের খাতুনগঞ্জ-সংলগ্ন বকশিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের বাজার লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ৭ টাকা ২৩ পয়সা ও পাম অয়েলে ৮ টাকা ৬৮ পয়সা বেড়েছে। সবমিলিয়ে আবারও আগের রূপে ফিরে গেল ভোজ্যতেলের বাজার। এদিকে বাড়তি দরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

গত ২৭ মার্চ খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫ টাকা ৯০ পয়সা ও পাম অয়েল ১৩৫ টাকা ৫৩ পয়সায় বিক্রি হয়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ৭ টাকা ২৩ পয়সা ও পাম অয়েলে ৮ টাকা ৬৮ পয়সা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা ১৩ পয়সা ও পাম অয়েল ১৪৪ টাকা ২১ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান মাসে বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত ৩১ মার্চ এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। 

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিলমালিকদের কাছ থেকে বাড়তি দরে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল কিনে আনতে হচ্ছে। তাই পাইকারিতেও দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের বাজার কখন স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’ 

মিলমালিকরা তেলের দাম বাড়াতে সর্বপ্রথম গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) জানায়। পরে গত ১৩ এপ্রিল সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ১৪ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেদিন থেকে দাম কার্যকর করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। 

তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে গত ১৫ এপ্রিল। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে ১৪ টাকা বেড়ে ১৮৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলে ১২ টাকা বেড়ে ১৬৯ টাকায় বিক্রি হবে।  

এদিকে খুচরা বাজারে নির্ধারিত দামের বাইরে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। গত ৪ মার্চ দুপুরে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ দামে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেননি। 

নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘রান্নায় তেল লাগেই। না কিনেও উপায় নেই। কিন্তু এর চাহিদাকে পুঁজি করে যখন তখন দাম বাড়িয়ে দিলে আমাদের সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। হুট করেই বোতলজাত ভোজ্যতেলে ১৪ টাকা বাড়ানো হলো। কিন্তু আমাদের আয় তো নির্দিষ্ট। কাজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে এ ব্যাপারে সরকারের কড়া নজরদারি থাকা উচিত।’

গত বছরের ডিসেম্বরে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ায় গত চার মাসে (ডিসেম্বর-মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৫৩ টন, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৫২৭ টন এবং মার্চে ১ লাখ ৩৬ হাজার টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। সেগুলোই পরিশোধন করে বাড়তি দরে বিক্রি হবে বলে দাবি করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতির দিকে। অন্যদিকে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলোই এখন পরিশোধন করে চড়া দামে বিক্রি হবে। আমরা বলতে চাই, মিলমালিক ও ট্যারিফ কমিশন কীভাবে হিসাব করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াল, সেটা জনসমক্ষে আনা উচিত।’ 

এদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার উৎসব থামানো যাবে না বলে জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার  বিকেলে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বিবৃতি দিয়েছেন।  

ভারতীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ: খরচ বাড়বে শিল্পের অনেক খাতে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
ভারতীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ: খরচ বাড়বে শিল্পের অনেক খাতে
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যবসায়ীদের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অনেকটা বিনা নোটিশে ভারত থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানিতে দেওয়া হয়েছে শর্ত, স্থলপথ দিয়ে আনা যাবে না, আনতে হবে বিকল্প পথে।

দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, স্থলবন্দরের পরিবর্তে বিকল্প পথে আমদানি করা হলে দেশে সুতা পৌঁছাতে সময় বেশি লাগবে। আমদানি করা এসব সুতা দিয়ে পণ্য বানিয়ে বায়ারদের বেঁধে দেওয়া সময়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। সংকটে পড়বে তৈরি পোশাকশিল্প, যা সমগ্র রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। ভারত সরকারের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পাল্টা হিসেবে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ধরে নিয়ে বলা যায়, এভাবে পাল্টাপাল্টি চলতে থাকলে দুই দেশের কারোর জন্যই ভালো হবে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, সরকার বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে সুতা আমদানি সীমিত করেছে। সরকার তো ব্যবসা করে না। ব্যবসা করে বেসরকারি খাত। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যগুলো যেসব খাতের কাঁচামাল সেই সব রপ্তানি খাত চাপে পড়বে। তাই এ সিদ্ধান্ত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণ করা উচিত ছিল।

অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, ‘আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে সুতা উৎপাদন হলেও তা দামে ও মানে ভারতের সুতার বিকল্প কি না, তা দেখতে হবে। এর আগেও সুতা আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। আবার খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া অন্য যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেসব সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান সক্ষম কি না, তাও বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল।’

তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে ভূরাজনীতির কারণে দুই দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে দুই দেশকেই সরে থাকতে হবে। ভারত সরকারের নেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশ এটা করেছে এমন কথাও অনেকে বলছেন। ভারত থেকে বাংলাদেশকে যেমন অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়, একইভাবে বাংলাদেশের রপ্তানির বড় বাজার ভারত। পাল্টাপাল্টি আক্রমণ দুই দেশের জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি ও বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। করোনার পর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ডলারসংকটে আমরা বিপর্যস্ত। কোনোমতে টিকে আছি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা, ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানিতে এমন শর্ত কীভাবে দেয় তা আমরা জানতে চাই।’

তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে অল্প পরিমাণ সুতা ও ডুপ্লেক্স বোর্ড এনে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। পানিপথে বেশি পরিমাণে কাঁচামাল আনতে হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআরের স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুপারিশে টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি রাখতে ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এনবিআর এ কাজ করেছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তৈরি পোশাক খাতের আরেক ব্যবসায়ী রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ এবং শর্ত দিয়ে আমদানি করা পণ্যের সমজাতীয় পণ্য রাতারাতি তো আর দেশের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব না। আবার নতুন বাজার খুঁজে এসব পণ্য আমদানি করতে তো সময় লাগবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিনা নোটিশে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৈরি পোশাকসহ শিল্পের বিভিন্ন খাত চাপে পড়বে। বিশ্ববাণিজ্যের এমন পরিস্থিতিতে এসব শিল্প খাতে খরচ বাড়বে।’

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নতুন সভাপতি আবদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক খাতে কেবল রেডিও-টিভি, সাইকেল ও মোটরের যন্ত্রাংশ, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিকস ব্যবহৃত হয়। কোনো সময় না দিয়েই এসব পণ্য নিষিদ্ধ করায় পণ্য সংকট হবে। আগেই যারা পণ্য আমদানি করে রেখেছিলেন তাদের অনেকে সেই সব সমজাতীয় পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের জন্যই নেতিবাচক নয়।’

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সম্প্রতি ভারত থেকে সুতা, দুধ, গুঁড়া দুধ, মাছ, আলু, নিউজপ্রিন্ট, ডুপ্লেক্স বোর্ড, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব, টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিকসসহ একাধিক পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। ভারতীয় সস্তা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় স্থানীয় উৎপাদকরা দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়ছিলেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশীয় শিল্প বিশেষ করে সুতা, সিরামিক ও নির্মাণসামগ্রী খাতে আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথ সুগম হবে। এতে প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে দেশি শিল্প সক্ষম করতে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। কত দিনে সক্ষমতা তৈরি হবে, তাও ভেবে দেখা দরকার ছিল।

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, তবে এই পরিবর্তনের ফলে কিছু পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে, যা ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহৃত সুতার দাম বেড়ে গেলে রপ্তানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদুপরি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যারা ভারতীয় পণ্য নির্ভর ছিলেন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা, পর্যাপ্ত ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা, শুল্ক সুবিধা এবং সহজ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।