এনজিওর নাম ‘সীমান্তিক’। প্রান্তিক মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার কথা বলে সিলেটে যারপরনাই তৎপর এই এনজিওটির ‘চিফ পেট্রোন’ ড. আহমদ আল কবির। এ পরিচয়ে ১৫ বছর আগে সিলেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে অনেকটা অচেনা ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তার পরিচিতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। একের পর এক পদ ও পদবি পাওয়ায় তার নামের সঙ্গে লেগেছে নানা বিশেষণ। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সমাজ বিজ্ঞানীসহ নানা পদ ও পদবি। এর মধ্যে যখন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরেক পরিচিতির প্রকাশ ঘটে, তখন চারদিকে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। বলা হয়, লবিং-তদবিরে ‘বীর’ তিনি।
এ ছাড়া বীরদর্পে জাতীয় সংসদে যেতে ড. আহমদ আল কবির এমপি হতে চেয়েছিলেন। গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ী হতে পারেননি। তবে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে সর্বশেষ তদবিরে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি পদক প্রাপ্তির প্রচারে মশগুল ছিলেন।
সিলেটে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দুই মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে এভাবেই মশগুল সময় পার করেন ড. আহমদ আল কবির। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ভাগনির জামাতা। সীমান্তিক নামের এনজিওটির প্রতিষ্ঠাকালে পৃষ্ঠপোষকতা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক সচিব বিএনপির প্রয়াত নেতা হারিছ চৌধুরীর। বিএনপি ক্ষমতা হারালে আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ হন। দুই মন্ত্রীর জামাতার পরিচয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেনিফিশিয়ারি আহমদ আল কবির।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি মন্ত্রীর জামাই আদরে পদ ও পদবির সঙ্গে হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। ১৫ বছর আগে সিলেট নগরীতে তার বসার জায়গা ছিল না। এখন নিজ নামে কমপ্লেক্স-বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা-জমিসহ ফুলেফেঁপে হাজার কোটি টাকার মালিক। এনজিও সেবার নামে ব্যবসা থেকে প্রতি মাসেই কোটি টাকা লাভ গুনছেন। পাশাপাশি অনুগামীদের নানা পদে বসিয়ে নিয়ন্ত্রক বনে যান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের।
তবে এসবে ছেদ পড়ে ৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আহমদ আল কবির আত্মগোপনে চলে যান। কারণ ছাত্র-জনতার আক্রোশ। সীমান্তিকের চেয়ারপারসনের পদে থাকা যুবলীগ নেতা শামীম আহমদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে দমন-পীড়নে ভূমিকা রাখায় দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
নির্বাচন এজেন্ট থেকে উত্থান
সীমান্তিক নামের এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা হলেও তাকে কেউ চিনত না। নিজেকে চেনাতে ও এনজিওর প্রসারে ক্ষমতাসীন রাজনীতির দিকে ধাবিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্বাচনি এজেন্ট হিসেবে খাটেন। এই খাটুনির পুরস্কার পান মুহিত অর্থমন্ত্রী হলে। আহমদ আল কবির ২০০৯ সালে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর যুবলীগ থেকে আওয়ামী লীগের পদ বগলদাবা করে সিলেটের রাজনীতির ‘পাওয়ার লাইনে’ অবস্থান করেন। রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১২ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। এরপর আসীন হন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, তিনি সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়ান। তারা জানান, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান মুহিত। ওই সময় সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনায় প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন আহমদ আল কবির।
ব্যাংক চেয়ারম্যানেই বিত্তবান
দুই মেয়াদে টানা দীর্ঘ ছয় বছর তিনি রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। অর্থবিত্তের পথে ধাবিত হন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরিচয়ে। মন্ত্রীর জামাতা পরিচয় ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক চেয়ারম্যান পরিচয়টি তখন তার এনজিও পরিচয় আড়াল করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকটির একক অধিপতি হয়ে নিরাপত্তাকর্মী থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ হয় তার হাত ধরে। সরকারি এই চাকরির জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন। ব্যাংকঋণ-বাণিজ্য, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে হাজার কোটি টাকার লোন দেন। এতে করে তিনি নিজে অনায়াসে হয়েছেন অঢেল অর্থবিত্তের মালিক, আর সরকারি এই ব্যাংকটিকে নিয়ে গেছেন দেউলিয়ার পথে। একটানা দুবার চেয়ারম্যান হওয়ার পর আরও একবার তিনি এ পদে বসতে চেয়েছিলেন। তবে অর্থমন্ত্রী তার ওপর কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করায় রূপালী ব্যাংকের পর অন্য কোনো ব্যাংকে পদায়ন হয়নি।
বন্দোবস্তের আগে জবরদখল
রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে সীমান্তিকের ‘চিফ পেট্রোন’ পদটির সঙ্গে নানা নামে নানা পদ ও পদবি পরিচয় প্রকাশ করে তদবির শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে সিলেট নগরীর মাছিমপুর এলাকায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নামে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন করা হলে আহমদ আল কবিরের চোখ পড়ে পাশের জায়গার ওপর। বিরাট সাইনবোর্ড সেঁটে দেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির-সীমান্তিক কমপ্লেক্স’। এর আগে তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি কোথাও প্রকাশ হয়নি। একইভাবে নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকায় টিবি হাসপাতালের পাশে ছড়ার (চা-বাগানের নালা) স্থানে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা জবরদখলে নেন।
জবরদখলের এসব কাজ করেন তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রথম মেয়াদে। দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নির্বাচন না করায় এ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে তিনি আবার মন্ত্রীর জামাই আদরে ফেরেন। ‘আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’ ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে। নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন আহমদ আল কবির।
১৩০ শতক জমির বন্দোবস্ত, পরে শর্ত লঙ্ঘন
সীমান্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে সিলেট নগরীর অকৃষি খাতের ৯৭ শতক জায়গা নামমাত্র মূল্যে বন্দোবস্ত নিয়েছেন ২০১২ সালে। একইভাবে ৩৩ শতক জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ‘আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের’ নামে। অকৃষি খাতের জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় ২০১০ সালে। মোট ১৩০ শতক জমির বন্দোবস্তের শর্ত হিসেবে সম্পাদিত দলিলে উল্লেখ রয়েছে, জমি যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
বন্দোবস্তের জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে যে জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে আহমদ আল কবিরের নামে কমপ্লেক্স, সীমান্তিক এনজিও অফিস, সীমান্তিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সীমান্তিক নার্সিং কলেজ, সীমান্তিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সীমান্তিক শিক্ষা উন্নয়ন কেন্দ্র, সীমান্তিক আইডিয়াল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সীমান্তিক আইডিয়াল স্কুল নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অন্যদিকে নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকার বন্দোবস্ত নেওয়া সরকারি ভূমিতে আট তলাবিশিষ্ট ভবন করা হয়েছে। সেই ভবনে আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের পাশাপাশি আহমদ আল কবিরের নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আরটিএম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ও শিশুস্বাস্থ্য ক্লিনিক, সিলেট সদর উপজেলা ডায়াবেটিক সমিতি, আরটিএম নার্সিং কলেজ, আরটিএম ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড পুনর্বাসন কেন্দ্র, আরটিএমআই ম্যাটস ও আইএইচটি নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই ভবনে। এতে করে দুই জায়গা বন্দোবস্ত নেওয়ার শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে।
সীমান্তিক নিয়ে জোচ্চুরি
সীমান্তিক নামের এনজিওর কার্যক্রম নিয়েও জোচ্চুরির অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সিলেটের কানাইঘাটের বাসিন্দা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এনজিওতে প্রায় দুই হাজার লোকবল কর্মরত। চারটি স্কুল ও কলেজ এবং সিলেট শহর ও সিলেট বিভাগের ১৩টি উপজেলায় ২০টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে সিলেট, কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা ছাড়া এর কার্যক্রম কাগুজে। আর প্রভাব খাটিয়ে সীমান্তিক পরপর চারবার সিলেট বিভাগে ‘শ্রেষ্ঠ এনজিও’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার অর্জন করে।
আহমদ আল কবিরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে সীমান্তিক কমপ্লেক্সে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি। সীমান্তিকের চেয়ারপারসন শামীম আহমদকেও পাওয়া যায়নি। তাদের দপ্তর থেকে জানানো হয়, রাজনৈতিক কারণে তারা সশরীরে হাজির না থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দুজনের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ও অফিসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাত প্রার্থীর সমান সম্পদ
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়টি কিছুটা প্রকাশ পায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামার সূত্রে। আহমদ আল কবির সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা প্রার্থীর হলফনামার তথ্যে দেখা গেছে ওই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী তিনি। তার নিজের ও স্ত্রী অধ্যাপক মমতাজ শামীমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রতিদ্বন্দ্বী সাত প্রার্থীর চেয়েও দ্বিগুণ। তা ছাড়া সাত প্রার্থীর সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার স্ত্রীর।
হলফনামায় আহমদ আল কবির তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার ৩২৯ টাকার। এর মধ্যে তার স্ত্রীর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার। স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অথচ ওই আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ সাতজনের হলফনামায় তাদের মোট সম্পদ দেখা গেছে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ২১৯ টাকার। একক হিসাবে আহমদ আল কবিরের স্ত্রীর সমান সম্পদও ওই আসনে অন্য কোনো প্রার্থীর নেই। হলফনামায় কবির তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ৫২৪ টাকা।
হলফনামার এ তথ্য নির্বাচন চলাকালে আলোচিত হলে তখন এ বিষয়ে আহমদ আল কবির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তার আয়ের উৎস চাকরি।’
পদ ও পদকের কাঙাল
আহমদ আল কবিরের নামের সঙ্গে ব্যবহার করা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়টি ভুয়া। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই। অভিযোগ রয়েছে, এ পদটি তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিয়ে এসেছেন। তার নিজ এলাকা জকিগঞ্জ বা জেলার মুক্তিযোদ্ধারা এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সর্বশেষ আরেক পদক প্রাপ্তির পরিচিতি তুলে ধরে নিজেকে শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে ফেলার চেষ্টা-তদবির করেছিলেন। এটি হচ্ছে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ পদক’।
জানা গেছে, এই পদকের আগে আরও অন্তত ডজনখানেক পদক লাভ করেন তিনি। এগুলো লবিস্ট নিয়োগ করে ও তদবির করে এবং টাকা-পয়সা খরচ করে বাগিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুরুটা হয়েছিল রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১০ সালে। মহাত্মা গান্ধী রিসার্চ কাউন্সিল থেকে ‘মহাত্মা গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে চলে তার পদক লাভ। ২০১৪ সালে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটির কবি নজরুল পদক ২০১৪’ প্রাপ্তির এক দশক পর পান ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ পদক’।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পদ আঁকড়ে আরও কিছু পদ বাগিয়ে নেন আহমদ আল কবির। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পরিচালক ও সহসভাপতি, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির পরিচালক, রিসার্চ, ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি, আমেরিকার জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার। নিজের নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান পদটির সঙ্গে বিধি লঙ্ঘন করে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার পদেও আছেন তিনি।
সর্বশেষ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ পদক লাভের বিষয়টি বেশি প্রচার করেন আহমদ আল কবির। পদক গ্রহণ করে সংবর্ধনাও নেন। তার ঘনিষ্ঠরা জানান, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিজ এলাকায় ডামি প্রার্থী হয়ে লড়ার পর হেরে যাওয়ায় প্রভাব-প্রতিপত্তিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। মামা শ্বশুর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মন্ত্রী না হওয়ায় তখন মন্ত্রীর জামাই পরিচয়টি ফিকে হয়ে যায়। আহমদ আল কবির তখন নিজ থেকে প্রকাশিত হতে লবিং করে পদক লাভ করে এ নিয়ে জোর প্রচার চালান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদকটি গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। পদকদাতা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ উদযাপন কমিটি’। তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
পদক প্রাপ্তির পরই সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে সংবর্ধনাও গ্রহণ করেন আহমদ আল কবির। নগরীর মাছিমপুরে নিজের কমপ্লেক্সের হলরুমে সীমান্তিক পরিবার আয়োজিত সংবর্ধনায় তার ব্যাপক বন্দনা চলে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ পদক প্রাপ্তি ছিল আহমদ আল কবিরের সর্বশেষ সাড়ম্বর।