চট্টগ্রামে সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা চালে নতুন করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ধানের দাম কমলেও উত্তরবঙ্গের মিলমালিকদের কারসাজি, আউশের ভরা মৌসুমে বড় শিল্প গ্রুপ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের ধান মজুত, সুষ্ঠু তদারকির অভাব এবং শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি না হওয়ার কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামে চালের পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা বেতি আতপে ১০০ টাকা, পাইজাম আতপে ১০০, গুটি স্বর্ণায় ৫০ ও মোটা চালে ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে নূরজাহান স্বর্ণা চালের বস্তায় ১৫০ টাকা কমেছে। মিনিকেট সেদ্ধ, জিরাশাইল, পাইজাম সেদ্ধ ও মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই।
বর্তমানে পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বেতি আতপ ৩ হাজার ১০০ টাকা, পাইজাম আতপ ৩ হাজার ২০০, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৭০০, নূরজাহান স্বর্ণা ৩ হাজার, মিনিকেট সেদ্ধ ৩ হাজার, মোটা চাল ২ হাজার ৪০০, জিরাশাইল ৩ হাজার ৫০০, পাইজাম সেদ্ধ ৩ হাজার ও মিনিকেট আতপ ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত ২৪ অক্টোবর এই দুই পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা বেতি আতপ ৩ হাজার টাকা, পাইজাম আতপ ৩ হাজার ১০০, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬৫০, নূরজাহান স্বর্ণা ৩ হাজার ১৫০, মিনিকেট সেদ্ধ চাল ৩ হাজার, মোটা চাল ২ হাজার ৩০০, জিরাশাইল ৩ হাজার ৫০০, পাইজাম সেদ্ধ ৩ হাজার ও মিনিকেট আতপ ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার কারণে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বর্তমানে আউশ ধানের মৌসুম চলছে। প্রতি মণ ধানের দাম ৮০ টাকা কমেছে। সামনে ধানের দাম আরও কমবে। ধানের দাম কমলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় বড় শিল্প গ্রুপ ধান মজুত করছে। তার ওপর চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করলেও আমদানিকারকরা চাল আমদানি করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পান। সে চিঠিটা এখনো কেউ পাননি। তাই এখনো চাল আমদানি শুরু হয়নি। কারা ধান মজুত করছেন, মিলাররা চালের দামে কারসাজি করছেন কি না, সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদারকি নেই। এসব কারণে চালের বাজার চড়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে চালের বস্তায় ১০০ টাকা হারে বেড়েছে। চাল আমদানির জন্য সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করলেও কেউ এখনো এলসি খোলেননি। তাই মায়ানমার বা ভারত থেকে চাল আসছে না। অথচ এলসি খোলার তিন দিনের মধ্যে এসব চাল দেশে আসার কথা। চাল আমদানি না হওয়ার সুযোগে উত্তরবঙ্গের মিলাররা দাম বাড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে শিল্প গ্রুপ ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ধান মজুত করছেন। এসব জায়গায় কোনো তদারকি নেই। তাই বাজার চড়া।
চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আউশ ধানের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ধানের বাজার চড়া ছিল। তখন প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এখন দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫২০ টাকায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চাল আমদানি হচ্ছে না। অথচ আমদানি শুরু হয়ে গেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা ধান মজুত অথবা মিলাররা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগটা পেতেন না। তবে এখন আউশ ধানের মৌসুম চলছে। আশা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে চালের বাজারদর কমে আসবে।’
চট্টগ্রাম রাইস মিল সমিতির সভাপতি মো. ফরিদ খবরের কাগজকে বলেন, চট্টগ্রামে চালের পাইকারি বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ চট্টগ্রামে অধিকাংশ চাল আসে উত্তরবঙ্গ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর থেকে। তাই এসব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে আউশের ভরা মৌসুম চলছে। এখন তো ধান-চালের দাম কমে আসার কথা। কিন্তু কারসাজি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। দেশের যেসব অঞ্চল থেকে চাল চট্টগ্রামে আসে সেখানকার জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘সীমিত জনবল দিয়ে আমরা প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। তবে চট্টগ্রামে চাল আসে উত্তরবঙ্গ, বগুড়া, দিনাজপুরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে। সেখানে আমাদের টিম কাজ করছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগে ২ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন
চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৩ হাজার ৩৫৭ হেক্টর জমিতে এবার আউশ ধানের আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে ২ লাখ ১৩ হাজার ১৮৩ টন ধান উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় এবার ৩২ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে ৮৮ হাজার ৪৩৫ টন, কক্সবাজারে ৩ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৯৪৪ টন, নোয়াখালীতে ২৭ হাজার ৪১৮ হেক্টর জমিতে ৫৯ হাজার ৪৪৫ টন, ফেনীতে ৫ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৮১৮ টন ও লক্ষ্মীপুরে ১৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমিতে ৩৮ হাজার ৫৪১ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে।