গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের সব সুপারশপে নিষিদ্ধ হয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। আর ১ নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিনজাতীয় সব ধরনের ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আগেভাগে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলেও তেমন উদ্যোগ নেই কাঁচাবাজারগুলোতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকেই জানেন না ঠিক কোথায় কোথায় ও কোন ধরনের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই এখনো বিকল্প ব্যবস্থা নেননি।
পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের ওপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তা সত্ত্বেও দেশের প্রায় দোকান এবং স্টোরে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার চলেছে। ২২ বছরেও সরকারের নির্দেশ কার্যকর হয়নি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেন। নির্দেশ দেওয়া হয় ১ অক্টোবর থেকে দেশের কোনো সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ রাখা যাবে না। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। দেশব্যাপী পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন তিনি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের মীনা বাজার সুপারশপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পেমেন্ট কাউন্টারের সামনে রাখা হয়েছে পাটজাত নানা ধরনের ব্যাগ। তবে পণ্য বুঝিয়ে দিতে অনেক বিক্রেতাকেই ব্যবহার করতে দেখা যায় জালি ব্যাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রেতা নাবিলা জানান, অভ্যাসগত তিনি ব্যাগ আনেননি। তাই বিক্রেতাদের কাছে ব্যাগ চাইলে তারা জালিতে পণ্য দিয়েছেন।
তবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, অন্য ক্রেতাদেরও পণ্য দেওয়া হচ্ছে জালি ব্যাগে। তবে এ বিষয়ে সুপারশপটির বিক্রেতাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে একই এলাকার স্বপ্ন সুপারশপে গিয়ে দেখা যায়, তারাও পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ সাজিয়ে রেখেছেন পেমেন্ট কাউন্টারের সমনে। সেখানে পরিবার নিয়ে বাজার করতে এসেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের খুদে বার্তায় আগেই জানানো হয়েছে পলিথিন নিষিদ্ধের কথা। তাই আমরা এখানে এসে বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ কিনেছি।’
স্বপ্ন সুপার শপের রিজিয়নাল সেলস ম্যানেজার মো. আফজাল হোসাইন ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা পেমেন্ট কাউন্টারের সামনে পাটজাত ব্যাগের প্রদর্শনী করে রেখেছি। যেন যারা ব্যাগ সঙ্গে আনছেন না তারা এখান থেকে ব্যাগ কিনে নিজ পণ্য নিয়ে যেতে পারেন।’
এদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পলিথিনের বদলে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে জালি অথবা কাপড়ের ব্যাগে। কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পলিথিন নিষিদ্ধের কথা তারা শুনেছেন। তবে অনেকেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন না। ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে আসছেন না। ফলে বিকল্প হিসেবে তারা জালি অথবা কাপড়ের ব্যাগে পণ্য দিচ্ছেন। তবে এতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।
মেসার্স ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা বেলাল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার এখান থেকে ক্রেতারা মুরগি কিনে কেটে নিয়ে যান। তাই রক্ত পড়ে কাটা মুরগি থেকে। এ অবস্থায় আমি এখন ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছি জালি অথবা পাতলা কাপড়ের ব্যাগে। এতে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন। কিন্তু আমার কিছু করার নাই। এই বাজারে পুলিশ মনিটরিং করছে। ফলে পলিথিন দিলে আমাদের জরিমানা করবে। এমনকি দোকান বন্ধও করে দিচ্ছে। তাই দ্বিগুণ খরচ পড়লেও জালি অথবা পাতলা কাপড়ের ব্যাগে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
আরেক ব্যবসায়ী রেজাউল বলেন, ‘বহু আগে আমরা কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতাম। আর ক্রেতারা পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগে বাজার নিতেন। এখন আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে আমরা দোকানিরা আগের মতো তো ক্রেতাদের ব্যাগ দিতে পারব না। কারণ এ ধরনের ব্যাগের দাম পলিথিনের চেয়ে বেশি আর এগুলোর সরবরাহও কম।’
বিক্রেতা ইমদাদ মিয়া জানান, পলিথিন নিষিদ্ধের ব্যাপারে তিনি তেমন কিছু জানতেন না। তাই কোনো ব্যবস্থাই তিনি নেননি। কিন্তু এখন বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। এতে বিক্রিতেও প্রভাব পড়ছে বলে জানান এই বিক্রেতা।
লালমাটিয়া এলাকার মুদি দোকানদার বেলাল বলেন, ‘কিছুদিন ধরে শুনেছি পলিথিন বন্ধ হবে। তবে কোথায় কোন কোন ধরনের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হবে তা এখনো জানি না। তাই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করিনি, পলিথিনেই পণ্য দিচ্ছি। তা ছাড়া পলিথিনের তুলনায় পাটের ব্যাগের দাম বেশি। তাই ক্রেতাকেই তার ব্যাগ নিয়ে আসতে হবে পণ্য নিতে। আমি কাগজের ঠোঙার ব্যবস্থা করব ভেবেছি। যেন চাল ও ডালের মতো পণ্যগুলো তাতে দিতে পারি।’