ঢাকা ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক ছিলেন কবির বিন আনোয়ার

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক ছিলেন কবির বিন আনোয়ার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সিরাজগঞ্জে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল কবির বিন আনোয়োর (অপু)। তার ছিল ক্যাডার বাহিনী। অনেকে তাকে ডাকতেন ‘দাদা ভাই’ বলে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে এই দাদা ভাই ছিলেন সিরাজগঞ্জের শেষ কথা। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক থাকাকালে কবির বিন আনোয়োর বনে যান সিরাজগঞ্জের অঘোষিত মালিক। 

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে ক্ষমতা অপব্যবহার করে নিজ এলাকায় তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিসকে ব্যবহার করতেন নিজের অফিস হিসেবে। সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়ন ছিল তার নখদর্পণে। এ ইউনিয়নের যে জমিতে তার চোখ পড়ত, তিনি তা গ্রাস করতেন। মাদরাসা নির্মাণের কথা বলে কাওয়াখোলা চরের কৃষকদের শত বিঘা জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলেছেন গো-খামার ও তেলের মিল। একই ইউনিয়নের বড়ইতলাই ছিল তার আধুনিক মানের বিশাল একটি রিসোর্ট। রিসোর্ট থেকে যতদূর চোখ যায়, পুরো জায়গাটিই ছিল তার দখলে। এ রিসোর্টে অস্ত্রের পসরা সাজিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিলেন তিনি। 

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ এবং ড্রেজিং প্রকল্প ছিল কবির বিন আনোয়ারের দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৭ কিলোমিটার নদীপথ খনন আর ৬৫০ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ নিয়ে ইতোমধ্যে পাউবোকে চিঠি দিয়েছে দুদক।

কবির বিন আনোয়ার সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কালীবাড়ির আনোয়ার হোসেন রতুর ছেলে। তার বাবা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গ্রামের মানুষকে ইউরোপের স্বপ্ন দেখানো কবির বিন আনোয়ার ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। খোঁজ নেই তার পোষ্য বাহিনীর। সর্বশেষ দুই বিএনপি কর্মী ও এক যুবদল নেতা হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাওয়াখোলা চরের জমিতে চাষাবাদ করে স্থানীয় কৃষকরা একসময় জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে কবির বিন আনোয়ার মাদরাসা নির্মাণের কথা বলে এ চরের কৃষকদের শত বিঘা জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলেছেন গো-খামার, তেলের মিল ও বিলাসবহুল রিসোর্ট। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ দিয়ে ভরাট করা হয় এসব জমি। এ ছাড়া এতিমখানা নির্মাণের কথা বলে ১৯ জন ছাত্র দিয়ে পাউবোর বিআরই ডিভিশন অফিস দখল করেন তিনি।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে যমুনার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ এবং বাঙালি, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুড়াসাগর নদী ড্রেজিং এবং তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারের দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। তার মধ্যে ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৭ কিলোমিটার নদীপথ খনন আর ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে নেই কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন। এ সময় কবির বিন আনোয়ারের ইশারায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে নদী থেকে বালু উত্তোলন আর বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। এদিকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর তীরবর্তী সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, কাগজপত্রে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিজ লোকজনকে দিয়ে লোপাট করা হয় প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা। 

স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করে পাউবো। দীর্ঘ পাঁচ বছরে এ প্রকল্পের সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ঠিকাদারদের পরিশোধ করা হয়। অথচ সাড়ে ৩ হাত নদীর তীর পাড়ও দৃশ্যমান হয়নি এখনো। এদিকে এ প্রকল্পের কাজে অবহেলার কারণে গত কয়েক বছরে শত শত বাড়িঘর ও কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি হারিয়ে অনেক মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো ভাঙনে দিশেহারা হচ্ছেন নদীপারের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে এ প্রকল্পের টাকার নয়ছয় করেছেন সাবেক পানিসম্পদ সচিব।

হাটপাচিল গ্রামের যুবক ইয়াসিন চতুর বলেন, ‘সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার নদী তীর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের ১৭টি প্যাকেজের ঠিকাদার ছিলেন কবির বিন আনোয়ারের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। এমন কৌশলে টাকাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে, তা এলাকার মানুষ জানতেও পারেনি। অথচ নদীর কাজ না করায় আমরা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার মতো অনেকেই ভিটামাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’ 

আরেক বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘কবির বিন আনোয়ার যখন সচিব ছিলেন, তখন সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন সফিকুল ইসলাম। দুজনের যোগসাজশে ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজের ১৭টি প্যাকেজ থেকে শুধু টাকা উত্তোলন করে গেছেন। দু-চারটি বালুর বস্তা ফেলে ছবি তুলে নিয়ে যেতেন ঠিকাদারের লোকজন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাওয়াখোলা চরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের জমিতে মাদরাসা করার কথা ছিল, অথচ করছেন রিসোর্ট, গরুর ফার্ম ও তেলের মিল। একসময় এ জমিতে পাট ও ভুট্টার আবাদ করতাম। তা দিয়ে সংসার চলত। কিন্তু সচিব জমি দখল করার পর পরিবার নিয়ে কষ্ট করছি। তার বিরুদ্ধে কিছু বললেই মামলা দিয়েছে জেলে ঢুকিয়ে দিতেন। মাফিয়ারা আমাদের জমি জবরদখল করেছে। অথচ আমরা কিছু বলতে গেলে মামলা-হামলা করে ভয় দেখাতেন।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় আমাদের ড্রেজিং করার কোনো ক্ষমতা নেই। আগে কী হয়েছে তা আমি জানি না। তবে এখানে সব কাজ দরপত্র মেনেই করা হয়েছে বলে আমি জানি। এনায়েতপুর থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫২ ভাগ শেষ হয়েছে। এবার শুষ্ক মৌসুমে পুরো কাজ দৃশ্যমান হবে।’

স্কুলশিক্ষিকার ফ্ল্যাট ব্যাংকারের দখলে

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম
স্কুলশিক্ষিকার ফ্ল্যাট ব্যাংকারের দখলে
প্রতীকী ছবি

রেজিস্ট্রিবিহীন বায়না করেই ক্যাডার দিয়ে অবৈধভাবে মিরপুরের এক অসহায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকার ফ্ল্যাট অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. আলমগীর। ঘটনাটি রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় অন্তত ১০টি অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি ওই স্কুলশিক্ষিকা।

জানা গেছে, মিরপুর-১২-এর ‘সি’ ব্লকের ১১ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বর বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন ও তার চার বোন। ওই চার বোন অন্যত্র বসবাস করেন। তারা তাদের অংশের ফ্ল্যাটসহ বাড়িটির দেখভালের দায়িত্ব রাবেয়া খাতুনকে দিয়েছেন। রাবেয়ার সন্তানরা দেশের বাইরে থাকেন। তিনি ও তার স্বামী অধ্যাপক এস এম শফিউল ইসলাম ওই বাড়িতে বসবাস করেন। বাড়িটি এম্পায়ার এস্টেট বিল্ডার্স নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে নির্মিত। ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর ওই বাড়ির ষষ্ঠতলায় ডেভেলপার কোম্পানির অংশ থেকে ১ হাজার ২৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য রেজিস্ট্রিবিহীন বায়না দলিল করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. আলমগীর। এরপর একই বছরের ১৭ নভেম্বর বাড়ির মালিক রাবেয়া খাতুনের কাছে একইভাবে আরেকটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য রেজিস্ট্রিবিহীন বায়না করেন। বায়না চুক্তির শর্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ ও কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা করতে ব্যর্থ হন মো. আলমগীর। ফলে ডেভেলপার কোম্পানি ও বাড়ির মালিক রাবেয়া খাতুন শর্তভঙ্গের দায়ে বায়না চুক্তি দুটি বাতিল করেন। কিন্তু সব আইন অমান্য করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভবনটির দোতলায় ডেভেলপার কোম্পানির মালিকানাধীন একটি ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে অবৈধভাবে জবরদখল করেন মো. আলমগীর। এরপর একই বছরের মার্চ মাসে ষষ্ঠতলায় রাবেয়া খাতুনের ফ্ল্যাটটিও একইভাবে জোরপূবর্ক দখল করেন। 

এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক অভিযোগ করেন। কিন্তু মো. আলমগীর ওই সময়ের স্থানীয় এমপি ও দলের নেতা ইলিয়াস মোল্লা এবং তার অুনগত সন্ত্রাসী গ্রুপ ভাড়া করে উল্টো রাবেয়া খাতুন ও তার স্বামীকেই মারধর করে ওই ভবন থেকে তাড়িয়ে দেন। এ অবস্থায় রাবেয়ার অন্য চার বোনের মধ্যে হালিমা খাতুনসহ কয়েকজন থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হলে রাবেয়া খাতুন ও তার স্বামী ওই ভবনে ফের বসবাসের সুযোগ পান। কিন্তু মো. আলমগীর ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে চরম আতঙ্কে এখন দিন কাটাচ্ছেন তারা। শুধু তা-ই নয়, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য কমলেও মিরপুর-১২ এলাকায় তারা এখনো সক্রিয় আছে। এসব বিষয়ে রাবেয়া খাতুন, তার স্বামী এস এম শফিউল ইসলাম, বোন হালিমা খাতুনসহ পরিবারের কয়েকজন থানায় এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি অভিযোগ দিয়েছেন। এসব অভিযোগে ঘটনার বিস্তারিত উঠে এসেছে।

ফ্ল্যাট দুটির কবলা দলিলে রেজিস্ট্রেশন চেয়ে ডেভেলপার কোম্পানি, রাবেয়া খাতুন ও তার চার বোনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাও করেন মো. আলমগীর। এ মামলায় হেরে যান তিনি। বিচার শেষে মামলাটি খারিজ করে চলতি বছরের ২০ মার্চ রায় দেন ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ আদালত-১-এর বিচারক জাকির হোসেন। রায়ে বলা হয়, এ মামলায় মো. আলমগীরের প্রতিকার পাওয়ার কোনো রকম সম্ভাবনা নেই।

এদিকে ওই বাড়ির জমিটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন হওয়ায় হস্তান্তরের অনুমতি চেয়েও আবেদন করেন আলমগীর। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ হস্তান্তরের অনুমতি দিলেও আবেদনে জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় গত বছরের ১ অক্টোবর হস্তান্তরের অনুমতিপত্র (৩৯৩৯ ও ৩৯৪০ নম্বর) দুটি বাতিল করে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। 

এসব বিষয়ে মো. আলমগীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে ডেভেলপার কোম্পানি এবং রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধেও কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। সেসবের বিচার চলছে।’ তবে বায়না চুক্তির শর্তভঙ্গের বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

ডনের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া দেলো-মোজো

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পিএম
ডনের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া দেলো-মোজো
মোজাহার হোসেন মোজো ও দেলোয়ার হোসেন দেলো

খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন। শহরের দোলখোলা মোড়-বানিয়াখামার-ইসলামপুর-রায়পাড়া এলাকায় তার কথাই শেষ কথা! 

অপরাধজগতের কথিত গডফাদার ডনের সব অপকর্মের দোসর ছিল দোলখোলা এলাকার দুই ভাই দেলোয়ার হোসেন দেলো ও মোজাহার হোসেন মোজো। একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিশোর গ্যাং রয়েছে দুই ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে। এসব সন্ত্রাসীর কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে গেলে দেলো-মোজোর নেতৃত্বে চলত মাদক ব্যবসা। ডনের সব অপকর্মের দোসর হিসেবে ‘ছায়া শাসক’ হয়ে ওঠেন তারা। 

খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় দুই ভাই ভাঙারির ব্যবসা করতেন। কখনো বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভারতীয় শাড়ি বিক্রি করেছেন। তাদের বাবা আবুল হাসেম নৈশপ্রহরী ছিলেন ও বোনেরা পরের বাড়িতে কাজ করতেন। ডনের সঙ্গে সখ্য গড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন দুই ভাই। এর পরই মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসীদের সিন্ডিকেট গড়ে তোলা, ভূমি দখল, মাছ ফ্যাক্টরি দখল, বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এর মাধ্যমেই গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে ডন শাসনের অবসান হয়। ওই দিন খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকা থেকে ডনকে নিয়ে পালিয়ে যান দেলো। বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাড়িগুলোতে রয়েছে দিনরাত সতর্ক প্রহরা। ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ধরা না পড়ায় এখনো মানুষ দেলো-মোজোর অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পান। গত ১২ নভেম্বর এই অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য পূর্ব বানিয়াখামারে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। কিন্তু সেখানে তাদের পাওয়া যায়নি।

মেট্রোপলিটন পুলিশে প্রায় দুই বছর কর্মরত ছিলেন, এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, খুলনার মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী বাহিনী, জমি দখল, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করত দেলো-মোজো চক্র। আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নিজ দলের নেতা-কর্মীকেও খুনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান সাগরের মৃত্যুর সঙ্গেও দেলো জড়িত বলে প্রচার আছে। গত ৮ জুলাই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলামিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দেলোকে আসামি করা হয়েছে। 

এ ছাড়া ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে প্রকাশ্যে শটগান দিয়ে গুলি করেছেন দেলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের একজন সিনিয়র নেতা জানান, এলাকায় ভয়ে আতঙ্কে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলত না। দোলখোলা মোড়ে দেলো রাত হলেই বাড়িতে সন্ত্রাসী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের নিয়ে মদের আসর বসাতেন। এই বাড়িটি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও এখানে মদ্যপানে বিভোর থাকতেন। ৫ আগস্টের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন দেলোর বাড়ি ভাঙচুর করেন। এরপরই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন সুকৌশলী দেলো।

বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি: ডনের মাধ্যমেই দেলোয়ারের পরিচয় হয় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ জুয়েল ও শেখ সোহেলের সঙ্গে। তাদের আশীর্বাদে মাছ বিক্রি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দেলোয়ার। তার রয়েছে মাছের কোম্পানি, পণ্যবাহী জাহাজ, একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি। জানা যায়, খুলনা শহরে দেলোর বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ১০-১২টি। রায়পাড়া রোডের ইসলামপুর মসজিদের পাশে একটি ৫ তলা, নবারূণ সংসদের কাছে একটি ৬ তলা, রাজ্জাকের গলির মধ্যে একটি ৬ তলা, একটি ৪ তলা, ২টি দোতলা ও ৩টি জমি, রায়পাড়া মেইন রোডের মেট্রো ক্লিনিকের সামনে এক বিঘার ওপরে সিদ্দিক মঞ্জিলের জমি, মুসলমান পাড়া মেইন রোডের খোকা মোল্লা লেনে ৩ কাঠার একটি জমি ও আব্দুল গনি বিদ্যালয় লেনে ৫ কাঠার একটি জমি রয়েছে।

এ ছাড়া ডুমুরিয়া মৌজায় নামে-বেনামে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাগানবাড়ি। সেখানে মাঝেমধ্যে আয়োজন করা হয় পিকনিকের নামে মাদক সেবন ও জলসা। দেলোর ভাই মোজোর বাড়ি, হ্যানিমেন ফার্মেসি ভবনে দোকান রয়েছে। তাদের ৭-৮টি গাড়ি রয়েছে, যা দিয়ে মাঝেমধ্যে শহরে মহড়া দিত। 

দেলো-মোজোর ‘অবিশ্বাস্য’ উত্থান: ১৯৭৪ সালে কাজের সন্ধানে গোপালগঞ্জ থেকে খুলনায় চলে আসেন দেলো-মোজোর বাবা আবুল হাসেম। দিনে রিকশা চালাতেন ও রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। ছেলেমেয়েসহ ৯ জনের সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে তার দুই বোন পরের বাড়িতে কাজ নেন। একসময় বড়বাজারে কাপড়ের দোকানে সামান্য বেতনে কাজ শুরু করেন দেলো। পরে তিনি ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে নতুন বাজারে মাছ বিক্রি করতেন। পরবর্তী সময়ে মাছ কোম্পানির গ্রেডারের কাজ পান। গ্রেডার থেকে তিনি সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ এলাকায় রোজেলা ফিশের মালিক বনে যান। জানা যায়, ২০১০ সালে চার বন্ধুর যৌথ মালিকানায় মাছ কোম্পানিটি চালু করেন। পরবর্তী সময়ে শেখ পরিবারের দাপটে তিন বন্ধুকে হটিয়ে নিজেই মালিক বনে যান। অভিযোগ রয়েছে, মাছ ব্যবসার অন্তরালে চলত তার মাদকের ব্যবসা। কক্সবাজার থেকে মাছের আড়ালে আসত ইয়াবা। আর সেই ইয়াবা নগরীতে বিক্রি করতেন তার ভাই মোজাহার হোসেন মোজো। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন প্রভাবশালী নেতারা। অবৈধ আয়ের একটি অংশ পেতেন প্রশাসন থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতারা। 

অনুগত ক্যাডার বাহিনী, মূর্তিমান আতঙ্ক: খুলনার একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতেন দেলোয়ার হোসেন দেলো। অল্প সময়ে শেখ বাড়ির ছত্রচ্ছায়ায় তারা হয়ে ওঠেন খুলনায় মূর্তিমান আতঙ্ক। তাদের কাছে মজুত ছিল বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তাকে খুলনা বসুপাড়ায় মাদ্রাসায় দাফন না দিতে প্রকাশ্যে শটগান ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মাদ্রাসার মূল ফটকে অবস্থান নেন দেলো।

এ ছাড়া ২০২২ সালে মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান সাগরের মৃত্যুর সঙ্গেও দেলো জড়িত আছে জানাজানি হলেও ভয়ে সাগরের পরিবার এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে সাগরকে ওই রাতে ডনের অফিসে ডেকে এনে দেলোর নেতৃত্বে মারধর করার পর একটি রিকশায় তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকে। অপরদিকে আরেক যুবলীগ নেতা আমিন শেখ হত্যা মামলার বাদী শেখ মো. জাহাঙ্গীর জানান, ৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে সাবেক কাউন্সিলর ডনের নির্দেশে দেলোসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে আল আমিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। তিনি বলেন, আল আমিনের ভাই তৌহিদ থানায় মামলা করতে গেলে ডন তার মুখে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যায় জড়িত নয়, এমন লোকদের নামে মামলা দিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময় তারা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ডন ও তার দোসর দেলোসহ ৯ জনের নাম আসামি হিসেবে এজাহারে যুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে দোলোয়ার হোসেন দেলো ও তার ভাই মোজাহার হোসেন মোজোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

সপ্তম দফায় পেছাল বিআরটি প্রকল্প এখন গলার কাঁটা

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
বিআরটি প্রকল্প এখন গলার কাঁটা
ছবি : সংগৃহীত

প্রকল্পের অনেক কাজ অসমাপ্ত রেখে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত অংশে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটারের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প আংশিক চালু করে দিয়েছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই করিডরে বিআরটিসির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি বাস যাত্রীসেবা দিতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল শুরু করেছে এই করিডরে। 

রাজধানীবাসীর জন্য একটি সুলভ ও নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১১ সালে রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান-২০১৬ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ওই বছরই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে। পরে ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেকের সভায় বিআরটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। তবে নির্মাণ-জটিলতায় টঙ্গী থেকে গাজীপুর অংশে এই প্রকল্প সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

বিআরটি প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। শুরু থেকেই প্রকল্পের কাজে গতি ছিল না। চলতি ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও সপ্তম দফায় পিছিয়ে গেছে এই প্রকল্প। প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। দফায় দফায় পেছানোয় গত সাত বছরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৮ কোটি ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। 

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের ব্যবস্থাপক-১ আব্দুর রহমান নাহিয়ান গত মে মাসে খবরের কাগজকে জানিয়েছিলেন, এই বছরের ডিসেম্বরে পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে বিআরটি করিডর। কিন্তু প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প এখনই চালু হচ্ছে না পুরোদমে। এই করিডরে দুটি ফ্লাইওভার ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এ বছর শেষ হচ্ছে না। 

ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’ 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ও পরে বিআরটি প্রকল্পের কিছু জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার ঠিকাদারের সঙ্গেও কিছু ঝামেলা আছে। আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে এই খাতে। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। আসলে সড়ক খাতে এত বড় বিনিয়োগে এখন মানুষ কিছুই পাচ্ছে না।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এখন যাত্রীসেবার কথা বিবেচনা করে এই করিডরে বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। ব্যক্তিগত গাড়িও চলাচল করতে পারবে।’

তবে বিআরটি প্রকল্প নিয়ে টঙ্গী, বোর্ডবাজার এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা বলছেন, ফুটপাত বন্ধ করে বিআরটি স্টেশনের স্থাপনা নির্মাণ, বিশেষ লেনের দুই পাশে বিভাজক না রাখায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বিস্তর অভিযোগের মুখে এ বছর ঈদুল ফিতরের আগে প্রকল্পের ৯টি ফ্লাইওভারের ৭টি খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে যানজট কিছুটা নিরসন হলেও ব্রিজের নিচের অংশ বেহাল থেকেই গেছে। 

টঙ্গী বাজার, ফায়ার সার্ভিস গেট, টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, বোর্ডবাজার, বাইপাস ও চৌরাস্তা এলাকার বিআরটি ব্রিজের নিচে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে। মহাসড়কের তিন লেনের রাস্তা কমে দুই লেনে দাঁড়িয়েছে। বিআরটি প্রকল্পে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের কোথাও এক ইঞ্চিও ফুটপাত রাখা হয়নি। দীর্ঘ পথে কোথাও নেই ইউটার্ন। সমস্যা সমাধানে সড়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে গত আট মাসেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। 

বিশেষায়িত বাসসেবা নিয়ে নানা জটিলতা
প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফ্রান্সের ঋণ সহায়তায় বিআরটি প্রকল্পের জন্য ১৩৭টি বাস কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে বাস কেনার এই প্রক্রিয়া গত দুই বছরেও শেষ হয়নি। একবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও সেটি বাতিল হয়।

জানা যায়, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী ১৩৭টি বাস কেনার জন্য পছন্দের প্রতিষ্ঠান দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছিলেন। সেই দরপত্রের কারসাজি অভ্যন্তরীণ অডিটে ধরা পড়লে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। এরপর ‘কার্যকর প্রতিযোগিতা’ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে নতুন করে দরপত্র ডাকা হয়, যেখানে প্রথমবার ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও দ্বিতীয় দফায় মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। 

সেখানেই জটিলতার শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল মূল্যায়ন কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে। চীনের হাইগার বাস কোম্পানি লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করা হয়। তবে একই ব্যবসায়ী গ্রুপের আরও একটি প্রতিষ্ঠানও একই দরপত্রে অংশ নেয়। এটি বেআইনি হওয়ায় ওই দুই প্রতিষ্ঠানকেই অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপর নতুন করে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়।

‌মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাস এখনো কেনা হয়নি। কারণ দরপত্রের এখনো নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) কার্যাদেশ পাঠানো হয়নি। কার্যাদেশ পাঠানো হলে এরপর বাস আসবে। কার্যাদেশ পাঠানোর পাঁচ থেকে ছয় মাস পর বাস আসতে পারে। এবারের দরপত্রে অংশ নিয়েছে দুটি ভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক মূল্যায়ন চলমান রয়েছে। মূল্যায়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র কার্যাদেশ দেওয়া হবে।’

বাস কেনা নিয়ে জটিলতা থাকায় আপাতত বিআরটিসি বাস দিয়ে বিআরটি রুট চালু করা হয়েছে। যতদিন বিশেষায়িত বাস আসবে না, ততদিন বিআরটিসির বাস চলবে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে বিআরটিসির ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলবে। বিআরটি রুট ব্যবহার করে এই বাসটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে চলাচল করবে। শিববাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত রুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০ টাকা। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুরুতে আর্টিকুলেটেড বাস চলার কথা ছিল বিআরটি করিডরে। এই বাসগুলো ১৪০ জন করে যাত্রী ধারণ করতে পারে। এখন বিশেষায়িত বাসসেবা চালুর বদলে বিআরটিসির বাস নামানো হয়েছে। এতে করে আসলে বোঝা যাবে না বিআরটি করিডর কতসংখ্যক যাত্রীকে পরিবহনসেবা দিতে পারে।’ 

সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিশেষায়িত বাস চলাচলের জন্য একটি সফটওয়্যার লাগবে। সেটি চালু করতে সময় লাগবে কিছুটা।’

শুল্কছাড়ের পরও উল্টোপথে বাজার

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
শুল্কছাড়ের পরও উল্টোপথে বাজার
চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে তোলা ছবি। খবরের কাগজ

প্রতিবছর রমজানের দুই-তিন মাস আগে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোটা নিয়মে পরিণত করেছেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের বাকি আছে আড়াই মাস। রমজানের আগে ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালে আনতে সরকার শুল্ক প্রত্যাহার; চাল, পেঁয়াজ ও ডিম আমদানির অনুমতি; ন্যূনতম মার্জিন বা নগদ জমার বিপরীতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে ব্যবসায়ীরা এসব সুবিধা নিলেও কমেনি পণ্যের দাম। উল্টোপথে ঘুরছে ভোগ্যপণ্যের বাজারদর। এর জন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন সাধারণ ভোক্তা ও ক্যাব নেতারা। 

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন ও পাহাড়তলী। এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে মাসের ব্যবধানে এলাচের কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার পাম অয়েলে ২ টাকা ও সয়াবিন তেলে ১০ টাকা বেড়েছে। তা ছাড়া ছোলা, মসুর ডাল, খেসারিসহ বিভিন্ন ডাল গত বছরের এই সময়ের তুলনায় কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত এবং সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

সরকার চাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, আর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী ঘুরে জানা গেছে, এসব বাজারে মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেতি আতপ চাল ১৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া জিরাশাইলে ১০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, কাটারি আতপে ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৮০০ ও মিনিকেট আতপে ১৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি বস্তা পাইজাম আতপ ৩ হাজার টাকা, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৫৫০, নূরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৮০০, মিনিকেট সেদ্ধ ৩ হাজার, মোটা চাল ২ হাজার ৩০০ ও পাইজাম সেদ্ধ ২ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কোনো চাল আমদানি হয়নি। দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে যেসব চাল এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে উত্তরবঙ্গে মাঠে থাকতেই নতুন ধান কিনে ফেলেছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা সেই ধানের দাম বাড়িয়ে প্রতি মণ ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ ছাড়া মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। চট্টগ্রামে বিক্রি হওয়া চালের ৯০ শতাংশ আসে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। সেখানে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি এসব জেলা থেকে চাল আনতে আগে ভাড়া লাগত ২০-২২ হাজার টাকা। এখন লাগছে ২৫ হাজার টাকা। এসব কারণে চট্টগ্রামে চালের বাজার চড়া। 

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৮ হাজার টন চিনি, ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ টন পাম অয়েল, ৩ লাখ ৯১ হাজার টন সয়াবিন তেল, ২ হাজার ৬৬২ টন ছোলা, ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৬০ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে ৫২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। 

অথচ খাতুনগঞ্জে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা তেল। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ খোলা সয়াবিনে ২০০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ৪০০ টাকা ও পাম অয়েলে ৭০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ভোগ্যপণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। বাজারটিতে গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৩ হাজার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি মোটা মসুর ডালে ৬ টাকা বেড়ে ৯৬ টাকা, চিকন মসুর ডালে ১২ টাকা বেড়ে ১২২ টাকা, দ্বিগুণ দাম বেড়ে খেসারি ডাল ৯০ টাকায়, কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে মটর ডাল ৫৫ টাকায়, চিকন মুগডালের কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় বাজারটিতে প্রতি কেজি সাধারণ খেজুর ৮৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। 

তা ছাড়া গত অক্টোবরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয় ৩ হাজার ১০০ টাকায়। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। তবে সে সময় কোনো কোনো দোকানে ৩ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। 

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি বছরের গত জুলাই মাসে ৪৭৮ টন, আগস্টে ২২৭, সেপ্টেম্বরে ২৩৯, অক্টোবরে ১৩০ ও নভেম্বরে ১০০ টন এলাচ খালাস হয়েছে। 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলছেন, মূলত ডলার রেট বাড়ার কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গত আগস্টে এলসি খুলতে ডলার রেট ছিল ১১৮ টাকা। বর্তমানে খরচ পড়ছে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা। আর এর প্রভাব ভোগ্যপণ্যের দামের ওপর গিয়ে পড়ছে। তবে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ ক্রেতারা তো এর কোনো সুফল পাচ্ছি না। ভোগ্যপণ্যের দাম কমার পরিবর্তে উল্টোপথে ছুটছে। আমাদের দেশে রোজা শুরুর দুই-তিন মাস আগে থেকে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোজাকে টার্গেট করে অসাধু চক্র এখন থেকে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এটাকে তাদের দাম বাড়ানোর পূর্বপ্রস্তুতি বলা যায়। এখন অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে রোজার আগে অল্প পরিমাণ দাম কমিয়ে তারা সবাইকে জানাবে দাম কমেছে। এটা তাদের একটা পলিসি। আর আমরা ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকারের কোনো অভিযান দেখছি না। এটা খুব দুঃখজনক।’

অবৈধভাবে কাজে যুক্ত বিদেশিদের খোঁজে মাঠে এনবিআর

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পিএম
অবৈধভাবে কাজে যুক্ত বিদেশিদের খোঁজে মাঠে এনবিআর
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের খোঁজে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এনবিআরের দুই গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এবং ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একাধিক টাস্কফোর্স কমিটি। চলতি মাসের শুরু থেকে এসব কমিটি বিনা নোটিশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে দেখছে ঠিক কতজন বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন, তাদের তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জানানো হয়েছে কি না, কী পরিমাণ বেতন দেওয়া হয়, বেতনের অর্থ কীভাবে পরিশোধ করা হয়, তা থেকে সঠিক হিসাবে কর পরিশোধ করা হয়েছে কি না। 

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের কাজের বিষয়ে এনবিআর আন্তরিক। তবে তা অবশ্যই বৈধভাবে করতে হবে। অবৈধভাবে কাজ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। অবৈধভাবে কাজ করায় সরকারের অনেক টাকার রাজস্ব ক্ষতি ও অর্থ পাচার হচ্ছে। অবৈধভাবে কর্মরতদের খুঁজে বের করা হবে।’ 

অভিযান নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারা দেশেই এ অভিযান চালানো হবে। রাজধানী ও চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে অভিযানে নেমেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা শাখার সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কাগজপত্র ও কম্পিউটারের তথ্য দেখে এবং সরেজমিন প্রতিষ্ঠান ঘুরে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছেন। 

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকরা তথ্য গোপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মালিককেও অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেক বিদেশি নাগরিককে দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে মূল বেতনের অল্প কিছু দিয়ে বাকিটা বিদেশে লেনদেন করা হয়। অনেকের বেতনের বেশির ভাগ আবার হুন্ডিতে পাঠানো হয়। এভাবে অর্থ পাচার করা হয় ও কর ফাঁকি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে বিদেশি নাগরিকের তথ্য থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে গোপন করা হচ্ছে। হিসাবপত্র জব্দ করে তা খতিয়ে দেখে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত সপ্তাহে গুলশান এলাকার একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুজন বিদেশি নাগরিককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা জানানো হলেও এখানে কাজ করছেন পাঁচজন। প্রতি মাসে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হিসেবে দুজনকে, ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হিসেবে দুজনকে এবং একজনকে ৫ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে দুজন বিদেশি কাজ করেন। প্রতিজনের বেতন ৮০ হাজার টাকা করে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এক করবর্ষে বিদেশি নাগরিক খাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৯৭ হাজার টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্পের একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ হিসেবে গত জানুয়ারি থেকে চারজন বিদেশি ব্যক্তি কাজ করলেও তাদের বিষয়ে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়নি। এসব ব্যক্তির বেতন-ভাতা হিসেবে নগদ লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। 

১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এনবিআর পরিচালিত অভিযানে ১১৯টির বেশি প্রতিষ্ঠানে ৮৭ জন বিদেশি নাগরিকের খোঁজ পাওয়া গেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত অনেক বিদেশি নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা সঠিক বেতনের তথ্য গোপন করেন।
সরকারি হিসাবে এ দেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তাদের অর্ধেকই ভারতীয়। ভারতীয়দের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৮৬ এবং চীনা ১৩ হাজার ২৬৮ জন।

গত কয়েক করবর্ষে এনবিআরে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন গড়ে প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি। এদের বার্ষিক আয় গড়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এতে মোট কর পাওয়া গেছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। 

এর আগের সরকারের সময় কয়েক দফা দেশের মধ্যে কর্মরত প্রকৃত বিদেশি নাগরিকের তথ্য হালনাগাদ নিয়ে ডেটা ব্যাংক করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এবারে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মধ্যে অবৈধভাবে কর্মরত ও বসবাস করছেন, এমন নাগরিকদের তথ্য হালনাগাদ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত হলো, বিদেশিদের বাংলাদেশে নিয়ম মেনে বসবাস করতে হবে।

এর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান’ শীর্ষক গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুসারে, অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি কর্মীদের উপার্জিত ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এক বছরে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ন্যূনতম ১২ হাজার কোটি টাকা।

গবেষণায় বৈধ বিদেশি কর্মী প্রায় ৯০ হাজার এবং অবৈধ বিদেশি কর্মী কমপক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার পাওয়া গেছে।

গবেষণায় বিদেশি কর্মীর প্রতিজনের ন্যূনতম গড় মাসিক বেতন দেড় হাজার মার্কিন ডলার ধরে মোট বার্ষিক আয় ৪৫০ কোটি ডলার হিসাব পাওয়া গেছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদেশি কর্মী এবং তাদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে অবৈধভাবে কাজ করানো হচ্ছে। এভাবে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। 

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় ৪৪টি দেশ থেকে আসা বিদেশিরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত। সবচেয়ে বেশি ভারতের, এরপর চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে ও নাইজেরিয়ার নাগরিক। অন্যদিকে পর্যটক ভিসায় কাজ করা নিষিদ্ধ হলেও এই ভিসায় বিদেশিরা অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন।

পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ পর্যটক ভিসা নিয়েছেন। এসব ভিসা নিয়ে সর্বোচ্চ মেয়াদ তিন মাস পর ফেরত যাওয়ার কথা থাকলেও বছরে গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার বিদেশি পর্যটক দেশের মধ্যে অবৈধভাবে কাজ করছেন। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হিসাবে কর্মোপযোগী বিদেশি ভিসার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। আর বিডা, বেপজা ও এনজিও ব্যুরো- তিন সংস্থার কর্মানুমতির দেওয়া বিদেশির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });