ফ্লাইটের টিকিট না পেয়ে মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর পাওনা আদায় এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে গেছে। অথচ মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রত্যেক কর্মী ৫ থেকে ৬ লাখ করে টাকা দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই হিসাবে এসব কর্মীর প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা এখন দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির পকেটে। অর্থ ফেরতের জন্য কয়েকবার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও বেশির ভাগ কর্মী কোনো টাকা বুঝে পাননি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় এসব টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা জমা দেওয়া কর্মীরা প্রতারিত না হন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কর্মীর পাওনা আদায়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তাদের পাওনা ফেরত না দিলে লাইসেন্স বাতিলের কথাও জানানো হয়। কিন্তু তারা নিজেরা আলোচনায় কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। বাকি ১২ হাজারের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কর্মী আর মালয়েশিয়া যেতে চান না অথবা তারা তাদের কোনো নিকটাত্মীয়কে পাঠাতে চান। আর ১০ হাজারের মতো কর্মী আছেন যারা এখনো মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কারণ গত মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রীও আশ্বাস দেন যে সে দেশে যেতে না পারা বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কর্মী নিয়োগ নিয়ে শিগগিরই যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হতে যাচ্ছে। সেখানে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সব বিষয়ে আলোচনা হবে। ভিসাসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ফ্লাইট স্বল্পতার কারণে যে ১৭ হাজার কর্মী যেতে পারেননি সেটা নিয়েও জোরালো আলোচনা হবে। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিচ্ছেন। চিঠিতে বঞ্চিত এসব কর্মীর ভিসা নবায়ন করার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।
মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ড. আসিফ নজরুল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক দফা জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জনশক্তি ব্যবসায়ীরা ১৭ হাজার কর্মীর পাওনা ফেরত দিতে সময় চান। তাদের অর্থ ফেরত দিতে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে এজেন্সির কাছে পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, সেই এজেন্সি টাকা ফেরত দেবে।
সূত্র আরও জানায়, গত ৩১ মে পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে মালয়েশিয়া যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। এসব কর্মীর সম্পূর্ণ অর্থ রিক্রুটিং এজেন্টদের পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো সেটি নিষ্পত্তি হয়নি।
জানা গেছে, রিক্রুটিং এজেন্সিদের সংগঠন বায়রার অধিকাংশ নেতা ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে আছেন। এসব নেতার এজেন্সিকে যেসব কর্মী টাকা দিয়েছেন তা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না কর্মকর্তারা। আর যারা দেশে আছেন এবং মন্ত্রণালয়ের শুনানিতে এসেছেন তাদের কাছ থেকে পুরো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না কর্মীরা। কারণ মালয়েশিয়ার যাওয়ার জন্য মোট খরচ ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু একজন কর্মী ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই হিসাবে সরকার নির্ধারিত ৭৯ হাজার টাকা বেশি দিতে না চাইলে মন্ত্রণালয়েরও খুব বেশি কিছু করার থাকে না। এ কারণে যারা টাকা ফেরত চান তারা এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি ফেরত পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিস্ট সূত্র জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কর্মীরা বিদেশ যেতে দালালদের মাধ্যমে অনেকেই রিক্রুটিং এজেন্সির শরণাপন্ন হন। আবার কেউ কেউ সরাসরি দালালকে পুরো টাকা দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে অর্থ বিনিময়ের কোনো প্রমাণ থাকে না। অর্থাৎ টাকা যে দেওয়া হয়েছে তার কোনো ডকুমেন্ট দেওয়া হয় না। এখন সরকার নির্ধারিত ফি হচ্ছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগই দিয়েছেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তাহলে ওই টাকার ডকুমেন্ট বা প্রমাণ যদি না থাকে তাহলে ৭৮ হাজার টাকার বাইরে বাকি টাকা কর্মীরা কীভাবে পাবেন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।